ত্রয়ী উপন্যাস -প্ৰথম পৰ্ব
ত্রয়ী উপন্যাস - দ্বিতীয় পৰ্ব
ত্রয়ী উপন্যাস - তৃতীয় পৰ্ব

দক্ষিণায়নের দিন – ১৪

চৌদ্দ

রাখীর অফিসে একদিন সত্যি সত্যিই সেজান এল।

রাখী হাতের কাজ সরিয়ে রাখল তাকে দেখে। সেজান মুখোমুখি বসে রাখীর মুখের দিকে তাকাল। রাখী লক্ষ করে, সেজানকে বড্ড কাহিল দেখাচ্ছে। জামা-কাপড় অবশ্যি ফরসা- কিন্তু সেই শাদা জীনের টাউজার্স, গেরুয়া খদ্দরের বুশ-শার্ট। কনুইয়ের হাড়, কণ্ঠার হাড় বড় বেশি স্পষ্ট, চোখের কোণে গাঢ় কালি লেগে দিয়েছে কেউ।

অনেকক্ষণ চুপ করে থাকল রাখী। সেজান ইতিমধ্যে হেসেছে একটুখানি। মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করছে, ভালো ছিলে?

রাখী কিছুই বলেনি।

হঠাৎ, জানে না কেন, রাখীর রাগ হচ্ছিল! সরিয়ে রাখা ফাইলটা আবার সামনে টেনে নিল সে। তারপর একটা চিঠির ওপর নজর রেখে বলল, আজ এভাবে, হঠাৎ?

এমনি এসে গেলাম, তোমার সময় হবে?

রাখী ঘড়ির দিকে তাকায়। তারপর বলে, হাতে সময় কম, অনেক কাজ, কেন কিছু দরকার ছিল?

সেজান কিছুটা হতাশ হয় বোধহয়। তারপর বলে, না তেমন কিছু নয়। শোনো আমাকে কিছু টাকা ধার দিতে পারো?

রাখী কী হল কে জানে, সে মাথা নাড়াল, না।

তার তখন বিশ্রী লাগছিল। সেজানের এইরকম টাকা চাওয়ার ব্যাপারটাকে জঘন্য মনে হল। স্পষ্ট গলায় বলে উঠল, না এখন আমার কাছে টাকা নেই।

সামান্য টাকা, গোটা পঞ্চাশেক, সেজান যেন প্রতিজ্ঞা করে আছে, অপমানিত বোধ করবে না। তার গলায় মিনতি শোনা গেল। বলল, দ্যাখো না, পারো কি না।

রাখী মাথা তোলে না। সেজান তখনো বলেই চলেছে, টাকাটা খুবই দরকার হয়ে পড়েছে— পেলে বড় উপকার হত।

একটু পরই যেন কিছু আন্দাজ করে সেজান। বলে, যাক টাকার কথা, তোমাদের বাড়ির সবাই ভালো?

হ্যাঁ ভালো, আপনি কি এখন খবরের কাগজেই-

না, সেজানের মুখে কেমন করে যে হাসি ফোটে, রাখীর অবাক লেগে যায়। সে লক্ষ করে, সেজান অত্যন্ত সহজ আর সাবলীলভাবে কথা বলে যাচ্ছে। বলল, না কাগজের অফিস থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে—এখন এখানে- ওখানে ফ্রি ল্যান্সিং করে কোনোভাবে—

রাখী চুপ করে থাকে। কথা বার হয় না তার মুখ দিয়ে। সেজান একসময় বলে ওঠে, বাসা কিন্তু বদলাইনি, ঐ গোপীদত্ত লেন-এই আছি।

তারপর আবার যেন আপন মনে বলে, টাকাটা পেলে খুব ভালো হত-আমাদের একটি ছেলের অসুখ, রক্ত দিতে হবে। এদিকে ডাক্তার আমার রক্ত নিতে চায় না— কী যে ফ্যাসাদ হয় একেক সময়— টাকাটা এখন কোথায় পাই।

সেজান চলে যায়। আর রাখী বিমূঢ় হয়ে বসে থাকে। সে না সেজানকে অপমানিত করার জন্যে খেপে উঠেছিল? কিন্তু কী হল? কার অপমান হল? একসময় তার লজ্জা বোধ হতে লাগল। ছি ছি, ছি ছি- এ কী করল সে? কোনো মানে হয়? নিশ্চয়ই ওর টাকাটা ভীষণ দরকার ছিল। ঐ পঞ্চাশটা টাকা কি আর সে দিতে পারত না? ছি ছি- এ কী করে ফেলল সে। মৃত্যুশয্যাশায়ী একটা ছেলের জন্যে টাকা চাইতে এসেছিল, ওর নিজের রক্ত দিয়ে যদি কাজ হত, তাহলে সে টাকাটা চাইতে আসত না— ছি ছি। রাখী অস্থির হয়ে উঠল। নিজেরই ওপর রাগল! অমন করে চটে ওঠার কোনো অর্থ খুঁজে পায় না সে। মিছিমিছি কেন ঐরকম অর্থহীন রেগে গেল। পঞ্চাশ কেন, তার চাইতে অনেক বেশি টাকা তো তার ব্যাগেই আছে। কেন সে ঐভাবে মিথ্যে কথাটা বলল- এমন কী অন্যায় করেছে সেজান? রাখী তারপর সারাক্ষণ ছটফট করতে লাগল।

জামান ফোনে ডেকেছিল, কথাও দিয়েছিল সে যাবে। সেদিন সন্ধ্যায় সেই যে পালিয়ে এসেছে, তারপর আর সে জামানের বাসায় যায়নি। খানদুই চিঠি পেয়েছে জামানের ইতিমধ্যে। আজ ঠিক করে এসেছিল, সে যাবে। কিন্তু সেজান এসে সব এলোমেলো করে দিয়ে গেল। রাখী বিকেল হতে- না-হতেই হাসপাতালে খুঁজতে গেল সেজানকে। মরণাপন্ন রোগীকে নিশ্চয় সেজান দেখতে আসবে। সবগুলো ওয়ার্ড খুঁজল— কিন্তু কোথাও দেখা গেল না যে কোনো রোগীর শিয়রের কাছে সেজান দাঁড়িয়ে আছে। অনেকক্ষণ, সন্ধ্যা পর্যন্ত রাখী হাসপাতালে চষে বেড়াল। সুমিতার সঙ্গে দেখা হয়েছে ইতিমধ্যে— দুজনে নার্সদের কাছে খোঁজ পর্যন্ত নিল। শেষে সুমিতা জানাল, আমার মনে হয়, মিটফোর্ডে আছে তোর রোগী।

সুমিতাকে বিদায় দিয়ে গেটের কাছে অনেকক্ষণ সে দাঁড়াল। কোনো মানে হয় না- সেজানকে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই জেনেও সে দাঁড়িয়ে থাকল। রাস্তায় সন্ধ্যার বাতিগুলো জ্বলে উঠেছে ততক্ষণে। সামনে রাত্রির অন্ধকার ধেয়ে আসছে, সেজানকে খুঁজতে যাবে কি না— এই চিন্তা তার। গেলে কোথায় যাবে? মিটফোর্ডে নাকি সেই গোপীদত্ত লেন-এ। শেষে রাখী একাকী হাঁটতে আরম্ভ করে দিল।

হাঁটতে হাঁটতে নিজের দিকে মন ফেরাল রাখী। কোন্ দিকে যাবে সে? ঘড়িতে এখন সাড়ে ছ’টা— গেলে জামানকে এখন য়ুনিভার্সিটিতে পাওয়া যাবে। যাবে সেখানে, না যাবে সেজানকে খুঁজতে? গোপীদত্ত লেন, নাকি য়ুনিভার্সিটি? কোন্ দিকে যাবি তুই এখন রাখী?

হঠাৎ সামনে ব্রেক কষে দাঁড়াল একখান গাড়ি। দেখা গেল জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়েছে মাজহার! কী খবর, এখানে এভাবে হেঁটে কোথায় যাচ্ছেন?

রিকশ না পেয়ে হাঁটছি।

কোথায় যাবেন? লিফ্ট দিতে পারি নিশ্চয়- যদি আপত্তি না থাকে।

না, আপত্তি কী, আপনার অসুবিধে হবে মিছিমিছি।

না, কিছু অসুবিধে নয়, ইট্স এ প্লেজার, আসুন। মাজহার দরজা খুলে ধরল।

রাখী পাশে বসে বলল, আমি লক্ষ্মীবাজারের দিকে যাচ্ছিলাম।

লক্ষ্মীবাজার মানে? মাজার কিছুটা বিমূঢ়, বাসায় যাবেন না?

না।

লক্ষ্মীবাজারটা ঠিক কোন্ দিকে-

ভিক্টোরিয়া পার্কের পেছনে, পুরনো ঢাকায়।

ভ্রূ কুঁচকে মাজহার একটু হাসল, ও-কে, তাই যাচ্ছি।

রাস্তায় ভিড়। ধীরে ধীরে গাড়ি চলল। লক্ষ্মীবাজারের মোড়ে পৌঁছে গাড়ি থামল, এবার কোন্ দিকে?

এখানেই, রাখী নামল। বলল, ধন্যবাদ, কষ্ট হল আপনার।

কোন্ দিকে যাবেন এখন? মাজহার তবু প্রশ্ন করে।

এই দিকেই কোথাও গোপীদত্ত লেন, চিনে নিতে পারব, কাছাকাছি কোথাও হবে।

আমিও না-হয় আসি, জায়গাটা বিশ্রী মনে হচ্ছে, কার কাছে যাবেন? কত নম্বর? মাজহার আন্তরিক হতে চাইল।

না না, কোনো দরকার নেই, আমিই পারব।

আহা বলুন না, কার কাছে যাচ্ছেন, মাজহারের অবিচল আগ্ৰহ।

কার কাছে? রাখী চমকাল, কার কাছে যাচ্ছে সে? শেষে জানাল, আমাদের পরিচিত মানুষ, আমার ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন ভদ্রলোক, আপনি চিনবেন না।

কথাটা বলেই রাখী বাঁ-দিকের গলিতে ঢুকে পড়ল। এটাই গোপীদত্ত লেন। কয়েক পা এগিয়ে ৪২ নম্বর পাওয়া গেল। সেজান ঘরেই ছিল।

একটাই ঘর বেশ বড়, বাতি জ্বলছে। কয়েকটি তরুণ ছেলে বসে রয়েছে মেঝেতে। তক্তপোশের ওপর সেজান শুয়ে। রাখীর গলা শুনে উঠে বসল।

একটি ছেলে একটা কাঠের ফোল্ডিং চেয়ার পেতে রাখীকে বসতে বলল। সেজান জানাল, শরীরটা ভালো লাগছে না বলে শুয়ে আছি, কিছু মনে কোরো না।

রাখী লক্ষ করল তরুণ ক’টি উদগ্রীব হয়ে কিছু শুনছিল, বোধহয় কোনো জরুরি আলাপের মাঝখানে সে এসে পড়েছে। ছেলে ক’টির মুখে অস্বস্তি আর বিব্রত ভাব। সেজান বলল, রাখী, মিনিট পাঁচেক বসো, আমরা ক’টা কথা সেরে নিই।

ঠিক আছে, রাখী মাথা নেড়ে সায় দেয়। তারপর বসে বসে শোনে ওদের আলাপ।

সব কথা সে বোঝে না। রাজনীতির কতগুলো পুরনো স্লোগান শুনল। সম্ভবত কোনো সাংগঠনিক সমস্যা নিয়ে কথা হচ্ছে। একটি ছেলে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠল। রাখী লক্ষ করল, সেজান ছেলেটির দিকে তাকিয়ে অল্প অল্প হাসছে। ছেলেটি সম্ভবত সেজানকেই আক্রমণ করে থাকবে— না হলে তার কথায় সেজানের প্রতিক্রিয়া কেন হবে? ঐ সময়ের মধ্যেই লক্ষ করল কখনো সেজানের দুচোখ জ্বলজ্বল করে উঠছে, কখনো আবার ধারালো একটা ভাব মুখের দৃপ্ত ভঙ্গিতে ঝলকাচ্ছে। একেকবার মনে হচ্ছে— এই বুঝি সে প্রতিবাদ করে উঠবে। কিন্তু সেজান ঐভাবে প্রতিবাদ করল না। বরং স্পষ্ট ভাষায় নিজের কথা বলে গেল। রাখীকে কান পাততে হল সেজানের কথা শোনার জন্যে। সেজান বলছিল, ভুল তোমাদের ধারণা— থিয়োরেটিক্যাল কথাবার্তা যারা তোমাদের শোনাচ্ছে তাদের ফিল্ড- এ কাজ করতে বলো আগে। বইপড়া তত্ত্ব দিয়ে রাজনীতি হল অধ্যাপকরা বড় রাজনীতিবিদ হতেন। তোমাদের কাছে এখন ব্ৰডবেড্ য়ুনিটির কথা বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বুর্জোয়া পার্টিগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করে কাজ করার জন্য— তাতেই নাকি বিপ্লব হবে। এসব কথা ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়। কেননা বলা হচ্ছে যে, সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী বুর্জোয়াদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে জাতীয় ধনতন্ত্রের বিকাশ হলে, দেশে শিল্পায়ন হবে এবং তখনই সম্ভব সুস্থ সবল শ্রমিকশ্রেণী গড়ে ওঠা এবং তাদের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। ইতিহাস দলিল ঘেঁটে দ্যাখো, এরকম হয় না। আগে হয়নি, এখনো হচ্ছে না। সাম্রাজ্যবাদ কখনোই শ্রমিকশ্রেণীর বিকাশ বা শ্রমিকশ্রেণীর সংহত হওয়ার সুযোগ দেয় না-এজন্যে ফিউডালিজম জিইয়ে রাখে, কলোনিয়ালিজম কায়েম করে। এজন্যে প্রয়োজন হলে দুচারটা ভিয়েতনামও তৈরি করে ফেলে। সেজন্যেই বিপ্লবের বিকাশ বুর্জোয়াদের শান্তির মধ্যে দিয়ে হয় না; বিপ্লবের বিকাশ বিপ্লবী কাজকর্মের মধ্যদিয়েই ঘটে। এ ব্যাপারে আমার শেষ কথা, এদেশে সত্যিকার অর্থে প্রলেতারিয়েত যদি কেউ থাকে তো সে হল এদেশের কিষাণ-ওদের সংগঠিত যদি করা না যায়, ওরা যদি নেতৃত্বে এগিয়ে না আসে, তাহলে কোনো বিপ্লবী আন্দোলনই সফল হবে না। সুতরাং পার্টির নীতি সম্পর্কে আমরা প্রশ্ন নিশ্চয়ই করব।

রাখীর হাসি পাচ্ছিল। কেমন ছেলেমানুষি হচ্ছিল আগাগোড়া ব্যাপারটা। ছেলেমানুষি আর অর্থহীন।

আরো কিছুক্ষণ ওরা তর্ক করল। ঘুরেফিরে ঐ একই ধরনের শব্দ আর স্লোগান উচ্চারিত হল একেক জনের গলায়। কেউ আলাদা দল গড়ার প্রস্তাব তুলল- কেউ মিলেমিশে থেকে কাজ করার কথা বলল- কেউ এক্ষুনি সশস্ত্র সংগ্রাম এবং শ্রেণীশত্রু চিহ্নিত করার দায়িত্ব নেয়ার কথা বলল। সব কথা একের পর এক হয়ে যাচ্ছে— বাধা দিচ্ছে কেউ কেউ, কেউ কেউ ফোড়ন কাটছে কিন্তু কথাগুলো তবু হয়ে যাচ্ছে। রাখীর মনে হল ডিবেটিং সোসাইটির মিটিঙে এসেছে বোধহয়। শুধু তর্ক আর কথা। পাঁচ মিনিটের জায়গায় পঁচিশ মিনিট পার হয়ে যায় অথচ ওদের কারো ভ্রূক্ষেপ নেই সেদিকে।

একসময় রাগী ছেলেটি উঠে দাঁড়াল। বলল, তাহলে আপনি ব্রডবেড্ য়ুনিটিতেও আমাদের সঙ্গে আসছেন না?

সেজান মাথা নাড়ায়, না, যে য়ুনিটি সুবিধাবাদে শেষ, সরকার গঠন যে য়ুনিটির লক্ষ, যে য়ুনিটিতে-

ছেলেটি তাকে কথা শেষ করতে দিল না। তার আগেই রুখে উঠে বলল, তাহলে জেনে রাখুন, আপনার কথা আমরাও কেউ শুনতে যাচ্ছি না। আপনার আন্দোলন হচ্ছে না এবং সেই আন্দোলনের ভিত্তিতে কোনো সংগঠনও গড়তে আপনাকে আমরা দেব না।

ছেলেটি তার সঙ্গীদের নিয়ে চলে গেলে, অন্য দুটি ছেলে সেজানের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আমরাও এবার যাই তাহলে? যাবার মুহূর্তে ছেলে দুটি বলল, আপনি ঠিক করেছেন-দেখব পার্টি কোথায় দাঁড়ায় এবার। সবাই চলে গেলে সেজান চুপচাপ চিৎ হয়ে শুয়ে রইল কিছুক্ষণ। রাখীর তখন অসহ্য লাগছিল। ভাবছিল উঠে যাবে- এরকম তর্কাতর্কির মধ্যে থাকতে বিশ্রী লাগছে তার, ঠিক তখনই সেজান ডাকল। তারপর, রাখী, তুমি একেবারে এখানে, হঠাৎ?

আপনি টাকা চেয়েছিলেন, ব্যাগ থেকে টাকাটা বার করে এগিয়ে দিল রাখী।

সেজান হেসে ফেলল, ও সেই ব্যাপার- তুমি টাকা নিয়ে এতদূরে চলে এলে?

রাখী বিব্রত বোধ করে। বলে আপনার অমন দরকার তখন জানালেন।

তোমার মাথা খারাপ দেখছি, এমন কেউ করে? ও টাকা এখন তোমার কাছেই রেখে দাও, যেজন্য চেয়েছিলাম সেটা মিটে গেছে।

বাহ্, তখন যে বললেন, কার সিরিয়াস অসুখ, রক্ত দিতে হবে?

হ্যাঁ, রক্তের ব্যবস্থা শেষপর্যন্ত হয়েছে।

কে দিল?

নিল শেষপর্যন্ত আমার শরীর থেকেই। তাই তো অবেলায় শুয়ে থাকতে হচ্ছে। সেজান আপন মনে যেন হাসে- বলে, এই রক্ত নিয়ে কি কম ঝামেলা? ব্লাড ব্যাঙ্কের ডাক্তার কোনোমতেই রাজি হয় না, চেনা ডাক্তার তো! শেষে অনেক বলে রাজি করালাম।

রাখী শোনে আর চেয়ে চেয়ে দেখে। দুর্বল একটা মানুষ নোংরা বিছানায় শুয়ে আছে। দুর্বল নোংরা- কিন্তু স্বাভাবিক স্বরে কথা বলে যাচ্ছে। বলছে আর হাসছে। রাখীর বলবার কিছু নেই। তার কেবলই দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল। ঘরের ভেতরটা অসহ্য লাগছে তখন তার।

রাখী, আমার একটা কাজ করে দেবে? সেজানের কথায় রাখীকে মনোযোগ দিতে হল।

আমি বোধহয় কাল হাসপাতালে যেতে পারব না। বেলা এগারোটার দিকে একবার হাসপাতালে টেলিফোন করে একটু খোঁজ নিও অপারেশন হল কিনা। সাত নম্বর ওয়ার্ডের এগারো নম্বর বেড- ডিউডোনিয়াল আলসারের কেস! রোগীর নাম মনসুর। আমি বিকেলে তোমাদের বাসায় যেতে চেষ্টা করব। বিকেলে বাসায় থাকবে তো?

রাখী মাথা পর্যন্ত নাড়ায় না। সে কেবলি ভাবছে, কীজন্যে সে এসেছে? কী ছেলেমানুষিতে তাকে পেয়েছিল যে এতখানি পথ ছুটে আসতে হল তাকে? রাখী উঠল, আমি চলি তাহলে।

এখনই যাবে? সেজান বিছানায় উঠে বসল।

হ্যাঁ, রাত হচ্ছে, অফিস থেকে বাসায় ফিরিনি।

ও, সেজান কী বলতে গিয়ে থামে। তারপর বলে, তুমি আজ প্রথম আমার বাসায় এলে, কিন্তু এক কাপ চা পর্যন্ত—

.

রাখীর গা জ্বলে যেতে লাগল, সেজানের কথা শুনে! সে সাধারণ ভদ্রতাটুকু পর্যন্ত রাখতে পারল না। বলল, ধন্যবাদ, এখন আর চা খাব না। মিছিমিছি কষ্ট হবে আপনার।

আবার কবে আসছ? সেজান রাখীর মুখের দিকে তাকায়।

শিগির বোধহয় পারব না, রাখী সহজ হয়ে উঠতে চাইল। জানাল, আমার বিয়ের কথা শুনেছেন বোধহয়।

বিয়ে! সেজান আকাশ থেকে পড়ে, কই শুনিনি তো?

হ্যাঁ, শিগিরই হচ্ছে, য়ুনিভার্সিটিতে হিস্ট্রী পড়ান, জামান সাহেবকে চেনেন?

সেজান কিছু বলল না। বিমূঢ় ক্লান্ত চোখে শুধু তাকিয়ে থাকল।

আর রাখী যত দ্রুতপায়ে পারে সেজানের ঘর থেকে বেরিয়ে এল।

ছুটতে ছুটতে, অন্ধকারে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে, পায়ে হোঁচট লাগিয়ে রাখী গলি থেকে বার হল। কেবলি কেউ যেন তাকে ধিক্কার দিচ্ছে মনের ভেতরে। রাখী, কেন এসেছিলি তুই? কে আসতে বলেছিল এখানে তোকে? কেবলি মনে হতে লাগল, সেজান তাকে নিদারুণ অপমান করেছে। এমন অপমান জীবনে কেউ তাকে কখনো করেনি। সারাটা পথ সে নিজেকে ধিক্কার দিতে দিতে এল। এত বোকা কেন সে? কী দরকার ছিল বাড়ি বয়ে টাকা দিতে যাবার? যে মানুষের চিকিৎসার জন্যে টাকার দরকার ছিল, তাকে চেনা তো দূরের কথা, চোখেও দেখেনি সে। রাখী বাসায় ফিরে শুনল, জামান তাকে খুঁজতে এসেছিল। আব্বার সঙ্গে অনেকক্ষণ বসে গল্প করে গিয়েছে।

পারভিন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বর্ণনা করে আগাগোড়া। বলল, জানো রাখী আপা, ভদ্রলোক কিন্তু বেজায় কাহিল হয়ে পড়েছেন। দেখে ভারি মায়া লাগে। যা করবার হয় তাড়াতাড়ি করা উচিত তোমার। বেচারা আর কত ঘুরবে।

রাখী কী বলবে, পারভিন চূড়ান্ত ফাজিল হয়েছে। তাকে কিছু বলতেই দিচ্ছে না, নিজেই বলে চলেছে। বলল, ফুফাজানের সঙ্গে কথা বলবেন কী- সর্বক্ষণ শুধু অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করছেন, রাখী কখন ফিরবে? কেন রাখী আমাকে ফোন করেছিল? ফোনে বলেছিল দেখা করবে, কিন্তু দেখা করল না কেন? কোথায় গেল? বিপদ-আপদ হয়নি তো!

রাখী ওকে থামাবার জন্যে কিছু বলতে যাচ্ছিল। পারভিন শুনল না। বলল, আরো কী কাণ্ড শোনোই না। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছেন। ফুফাজানের সামনেই কত রকমের কথা। বুবুর সঙ্গে কথা বলবার সময়ে অন্তত একশোবার তোমার নাম উচ্চারণ করলেন। কোন্ জাদুতে যে গুণ করেছ ভদ্রলোককে রাখী আপা, আমি এখন তাই ভাবছি।

একটু পর পারভিন বাজেকথা ছেড়ে শান্তস্বরে বলল, দ্যাখো রাখী আপা, তুমি সুখী হবে, ভদ্রলোককে খুব ভালো লাগল আমার।

রাখী তখনও কোনো কথা বলে না। ভারি বিরক্ত লাগছে তখন ওর। নিজের ওপর, পারভিনের ওপর, জামানের ওপর। কেন এসেছিল বাসায়?

এমন কী দরকার পড়েছিল যে একেবারে বাসায় চলে আসতে হবে? সে নাহয় জানিয়েছিল যে যাবে- যেতে পারেনি বলে একেবারে বাসায় পর্যন্ত চলে আসবে? কী আশা করেছিল জামান তার কাছে?

রাখীকে বুবুর মুখোমুখি পড়তে হল। বুবু কাছে এসে শুধাল, কি রে, তোর কি শরীর খারাপ?

রাখী পাশ কাটাতে চাইল। আজ খুব খাটুনি গেছে বুবু, তাই—

বুলু তবু গেল না। রাখীর মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসল।

রাখী লক্ষ করল চাপা একটা কৌতুক, একটা গোপন খুশিতে বুবু ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে রয়েছে। রাখী লক্ষ করল, কিন্তু তার কোনো কৌতূহল হল না। সে চোখ বুজল।

রাখী, বেশ কিছুক্ষণ পর বুবু ডাকে।

বলো, রাখী বালিশে মুখ ডুবিয়ে সাড়া দেয়।

জামান এসেছিল তোকে খুঁজতে।

হ্যাঁ, শুনলাম পারভিনের কাছে।

আব্বা তোর জন্যে আজকাল খুব ভাবছেন।

রাখী সজাগ হল, মাথা তুলল না। অপেক্ষা করল, বুবু আরো কী বলে সেজন্যে।

দ্যাখ্, আব্বা সামনের মাসে রিটায়ার করছেন- জানিস তো, আব্বা আমাদের জন্যে কীরকম ভাবেন। তুই চাকরি করছিস কিন্তু চাকরি তো আমাদের দেশে মেয়েদের জন্য নিশ্চিত কোনো ব্যবস্থা নয়। আব্বা তোকে সেটেল্ড দেখতে চান।

রাখী ইতিমধ্যে চিৎ হয়ে শুয়েছে। বুবুর মুখের দিকে চেয়ে দেখছে। বুবু এখন গম্ভীর, একেবারে অন্যরকম দেখাচ্ছে। কেমন বেদনা-কাতর আর করুণ। কিছুক্ষণ আগের চাপা কৌতুক আর খুশির লেশমাত্র নেই বুবুর চোখে।

তোর জন্যে আমারও একেক সময় ভাবনা হয়। তোর কী হবে? যে-ধরনের চাকরি তুই করছিস— ও চাকরি তুই বেশিদিন করতে পারবি বলে মনে হয় না। আর চাকরিতেই তো সব নয়। আমাদের আপন বলতে কেউ নেই। ভবিষ্যতের কথা কেউ কিছু বলতে পারে না। সবদিক ভেবে আমার মনে হয়েছে, তোর বিয়ে হওয়া দরকার। আব্বাও তাহলে কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারতেন।

রাখী শুনল। শুনতে শুনতে এলোমেলো কতগুলো প্রশ্ন থেকে-থেকে তার মনের ভেতর থেকে জেগে উঠল, বিয়ে হলেই কি মেয়েদের জীবন সেটেল্ড হয়? সুখ কাকে বলে বুবু, তুমি কি সুখী হয়েছ? আব্বা কি সুখী হয়েছেন? হাসান ভাই কী বলে এই সুখের ব্যাপারে? সব প্রশ্ন এলোমেলো আর বিক্ষিপ্ত— রাখী একটাও মুখে উচ্চারণ করে না। শুধু বড়বোনের কথা শুনে যায়।

বুবুর কথা তখনও ফুরোয়নি। সে আবার জামানের প্রসঙ্গে ফিরে আসে। বলে, জামান আব্বার সঙ্গে অনেকক্ষণ আলাপ করে গেল। বাইরে কিছু বলেননি, তবে আমার মনে হয়, ওকে আব্বার পছন্দ হয়েছে। এখন তোর মতটা জানা দরকার। আমার ধারণা, জামানকে তুই অনেকদিন ধরে চিনিস— এখন তোর যদি আপত্তি না থাকে, তাহলে জামানের সঙ্গে কথাটা আলাপ করব বলে ভাবছি। এ ব্যাপারে তোর কী মত?

রাখী বুবুর মুখের দিকে চেয়েছিল। ঐভাবেই থাকল কিছুক্ষণ। মনে-মনে ভাবল, তার কি কিছু বলার আছে? কেবলি মনে হচ্ছে এই তো স্বাভাবিক, আর সবার জীবনে এ-ই তো হয়। সব মেয়েই তো এমনি স্বাভাবিক পরিণতিতে পৌঁছায়।

চিন্তাভাবনা করে দ্যাখ্।

বুবুর কথা কতক্ষণে যে শেষ হবে, রাখীর আর ভালো লাগছে না। বুবু বলেই চলছে, বলেই চলেছে, বলেই চলেছে— জামানকে যদি তোর পছন্দ না হয়, তাহলে বল্, কাকে তোর ভালো লাগে? আমরা কথা বলে দেখি।

রাখী তখনও চুপ।

বুবু তারপর উঠল। যাবার মুখে বলল, এক্ষুনি কিছু বলতে বলছি না। ভেবে, চিন্তা করে, তারপর বলবি। তোর জীবনের দায়িত্বটা তোর নিজের কাছে— এ ব্যাপারে কিছুটা সিরিয়াস না হলে চলবে কেন? ভেবেচিন্তে একসময় জানাস।

বুবু চলে গেলে ঘরময় একটা শূন্যতার মধ্যে পড়ল রাখী। বুবুর কথাগুলো একসময় অদ্ভুত বলে মনে হল তার কাছে। অদ্ভুত এবং অবান্তর। নিদারুণ রকমের অবান্তর কিন্তু মজার। সেই অবান্তর কথাগুলোই তার মনের ভেতরে হানা দিয়ে ফিরতে লাগল।

আব্বা বোধহয় কোথাও জামানের সঙ্গে তাকে দেখেছেন। তাই সহজেই বুঝে নিয়েছেন যে রাখীর খুব পছন্দ জামানকে। কিন্তু সে নিজে? রাখী নিজেকে শুধাল, সে নিজে কি কখনো ভেবেছে এ সম্বন্ধে?

জামান তাকে ভালোবাসে— একেক সময় তাকে কাছে পাবার জন্যে পাগল হয়ে ওঠে। কিন্তু সে নিজে? নিজে কি সে ভালোবাসে? আর সেই ভালোবাসা কি সারাজীবনের ভালোবাসা? জামানের সান্নিধ্য ভালো লাগে, তার কাছে যতবার গিয়েছে, ততবারই জামান তাকে নতুন করে আকর্ষণ করেছে, নিশ্চয়ই করেছে। নইলে সে এতবার করে কেন গিয়েছে জামানের কাছে। এর নাম নিশ্চয়ই ভালোবাসা- এইরকমের ভালোবাসার জন্যেই কি মেয়েরা ঘর বাঁধতে চায় না? তাহলে সংশয়টা আর কিসে? রাখী মনে-মনে খোঁজে, তার কি কোনো সংশয় আছে কোথাও? শক্তিমান কর্মচঞ্চল স্বামী, স্বাস্থ্যবান শিশু আর সম্পন্ন গৃহ- এ ছাড়া আর কী চায় মেয়েরা? সে নিজে কি আর কিছু চেয়েছিল কখনো? কে জানে, মনে তো পড়ে না। আসলেই সে কিছু কখনো চেয়েছিল কি না বলতে পারে না।

রাখী একাকী ভাবে, ভেবে কূল পায় না। কেমন মনে হয়, সুখী হতে পারাটাই আসল। সবারই সুখের বাসনা থাকে। জামান নিশ্চয়ই সুখ দেবে তাকে। না-পারলেও আপ্রাণ চেষ্টা করবে অন্তত। অধ্যাপক স্বামী, নিরুদ্বিগ্ন শান্ত জীবন, মন্দ কী— এই বা ক’জনের জীবনে আসে।

জামানের বাসা থেকে সেদিন ফেরার পথে যেমন মনে হয়েছিল, আজও তেমনি রাখীর মনে হল। শুয়ে শুয়ে আজ কল্পনাও করতে পারল। সংসার- চাল ডাল নুনের হিশেব, ধোপা বাড়িতে ক’খানা কাপড় গেল, একখানা গাড়ি না কিনতে পারলে আর চলছে না, একজনের মেয়ের বিয়েতে যেতে হবে সেজন্য কী প্রেজেন্টেশন কেনা হবে- এইসব চিন্তায় জড়ানো সংসার- রাখীর চিন্তা করতে খারাপ লাগল না। এবং ঐসঙ্গে সে একটি শিশুর মুখ ও দেখতে পেল কল্পনায়।

রাখীর মন্দ লাগে না কল্পনা করতে। কিন্তু ঐ পর্যন্তই, সংসারের মানুষটার কথা আর কল্পনায় আসে না। জামানকে ঐ কল্পনার সঙ্গে সে মেলাতে পারে না।

এ এক মুশকিল, হিশেবে ভালোবাসাকে মেলানো যায় না। রাখীর অবাক লাগে। ঘনিষ্ঠতার আকর্ষণ, সংসারের কল্পনা এসবের সঙ্গে মেলে, কিন্তু ঐ পর্যন্তই। তারপর আর মেলে না।

অথচ তার জীবনে প্রথম পুরুষ জামান। নাকি আর কেউ? তার সন্দেহ হয়, অন্য কেউ কি এসেছিল তার জীবনে? মাজহারের কথা মনে পড়ে। তার চিঠির লাইন পর্যন্ত স্মরণে আসে। কিন্তু তবু সে জানে, মাজহার নয়। মাজহারের কথা মনে হলে তার হাসি পায়। তাহলে আর কে? নাকি সেই ছেলেটি যে গেঁয়ো আবেগে তার হাত চেপে ধরেছিল য়ুনিভার্সিটিতে- সেই ফার্স্ট না সেকেন্ড ইয়ারে? ছেলেটার মার খাওয়া মুখটা মনে পড়লে এখনো কষ্ট হয়। মায়া হওয়া মানেই কি ভালোবাসা? হায় রে, যদি সে নিশ্চিত হতে পারত!

মানুষ সম্পর্কে সে নিশ্চিত নয়, কিন্তু ভালোবাসা? ভালোবাসা বলে কি কিছু নেই, কাউকে কি ভালোবাসা যায় না? রাখীর মন এই প্রশ্নে রুদ্ধশ্বাস হয়ে আসে। সে জানে, আছে সেই লোক, যার সামনে একটা অপরিচয়ের দেয়াল মাত্র, সেই দেয়ালটা পার হলেই সে তাকে দেখতে পাবে। লোকটা বারেবারেই তার মনের কাছাকাছি এসেছিল। আর একটু হলেই তাকে সে স্পষ্ট করে চিনে নিতে পারত। কখনো বিস্ময়, কখনো ক্ষোভ, কখনো শ্ৰদ্ধা আর কখনো অবোধ একটা ভয় নিয়ে যার অস্তিত্ব। সে নিজের অজ্ঞাতে টের পেয়ে যায়, যে লোকটা তার মনের পেছনে চিরকাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে, অথচ তাকে তার চেনা হল না। হায় রে!

নাকি সেজান। রাখী এবার নিজের মুখোমুখি হতে চায়। পষ্টাপষ্টি ফয়সালা হয়ে যাক এবার, সে ভাবে। কিন্তু কীভাবে? একটা অবোধ রাগ ছাড়া অন্য কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না মনে। বুঝতে পারে, সেজানকে ভালোবাসা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সেজানের কথা মনে আসার একটা কারণও সে আবিষ্কার করে। সেজানকে ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছে মনি ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে। কিছুটা শ্রদ্ধা, কিছুটা ভয়, আর কিছুটা অপরিচয়ের রহস্য- এইসব মিলিয়েই সেজান সম্পর্কে একটা ধারণা গড়ে উঠেছে তার মনে। যদি সেজান না হয়ে অন্য কেউ হত মনি ভাইয়ের বন্ধু, তাহলে তার সম্বন্ধেও এই একই রকম ভাবত সে। সেজান বেশি কিছু নয়, বিশিষ্ট কিছু নয়। সেজান সম্পর্কে রাখী প্রায় একটা নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে চায়। রাখী অনেক রাত পর্যন্ত জাগে সেদিন। সব ভাবনা এলোমেলো হয়ে যায় ক্রমে ক্রমে। তারপর সে প্রকাণ্ড একটা শূন্যতার মধ্যে গিয়ে পড়ে। কান পাতে একবার। না, কোনো শব্দ নেই, জগৎ ভয়ানক নিঃশব্দ। চোখ মেলে, কোনো আলো নেই। বিশাল অন্ধকার আর নিঃশব্দ শূন্যতার মধ্যে সে বসে রয়েছে। কোনো কল্পনা নেই তার। অন্তবিহীন শূন্যতার মাঝখানে সে ভয়ানক একাকী।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *