দশ
রাখী বুঝে উঠতে পারে না, পারভিন আসাতে ভালো হল, না খারাপ। সে নিজেও কেমন একটা অস্থিরতা বোধ করছে। বুঝতে পারছে না কেন, কিন্তু স্বস্তি লাগছে না কিছুতেই। অফিসের কাজ করছে নিয়মমাফিক, মনোযোগ দিতে চেষ্টা করছে- কিন্তু কোথায় যেন বারবার মনের মধ্যে গোঁজামিল এসে যাচ্ছে।
পুরনো প্রশ্নটা এখনো বারবার খোঁচায়। এই কি সে হতে চেয়েছিল? কখনো কি ভেবেছিল, তাকে ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করতে হবে? সামনে বসে প্রশ্ন করবে আর তাকে জানাতে হবে সিডনি থেকে ক্যানবেরার দূরত্ব কত, এয়ার কানেকশান কী, কী পরিমাণ খরচ পড়বে। ধরুন, আমি যদি রোমে নেমে যাই তারপর আমি বাই ল্যান্ড যেতে চাই, প্যারিসে তিনদিনের স্টপ ওভার, ব্যবস্থা হবে কি? কায়রোতে কোন্ হোটেলে আপনারা থাকবার ব্যবস্থা করেন- স্যাভয়, নাকি হিলটন? বেইরুটে এন্টারটেনমেন্টের কী ব্যবস্থা আছে, নাইটক্লাব ছাড়া? ঢাকা থেকে দার্জিলিং যেতে হলে কোন্ রাস্তায় যাব? কলকাতা হয়ে না ডাইরেক্ট ফ্লাইটের ব্যবস্থা আছে…
মাথা খারাপ হয়ে যায়। পাঁচটা সাতটা এয়ারলাইনের নাড়িনক্ষত্র ঘাঁটতে হয়। একশোবার টেলিফোন তুলে বিরক্ত করতে হয় মাজহার সাহেবকে। এদিকে আবার স্টেনোকে ডিক্টেশন দিতে হয়। ডিক্টেশন দিলে আবার টাইপ-করা কাগজটা দেখতেও হয়। এক শব্দ বললে আর এক শব্দ টাইপ করে নিয়ে আসে। অ্যাংলো মেয়ে ইংরেজি উচ্চারণ শুধরে দিতে চেষ্টা করে। আর এই স্টেনো মেয়েটা কেন যে তার পেছনে লেগেছে, বুঝতে পারে না। য়ু মিন সিট্যুয়েটেড, বাট আই থিংক আই হার্ড ইট স্যাচুয়েরেটেড— অপমানে রাখীর কান লাল হয়ে ওঠে, ঐ ইতর বজ্জাতির শিক্ষা দিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু শেষপর্যন্ত কিছু বলে না, বলতে ইচ্ছে করে না।
এইসব ঝামেলা এবং পরিশ্রমের মধ্যে থেকে-থেকে প্রশ্নটা মনের ভেতরে জেগে ওঠে—এই কি সে হতে চেয়েছিল? মনে-মনে হাতড়ায়, খুঁজে পায় না। আসলেই তো, সে কখনো কিছু হতে চায়নি। পড়াশোনার সময় মনে হত সে রিসার্চ করবে, কখনো ভাবত হয়তো শিক্ষকতা করতে হবে—কিন্তু এখন চিন্তা করে দেখে, আগাগোড়া সবটাই ছেলেমানুষি। ইস্কুলে পড়বার সময় যেমন কখনো মনে হত ডাক্তার হবে, কখনো মনে হত নামকরা কবি হবে, আবার কখনো ভাবত, নামকরা গায়িকা হবে- এও সেইরকমের ছেলেমানুষি কল্পনা। সত্যিকারভাবে কোনোদিন সে কিছুই হতে চায়নি। তাহলে এখন যে কাজটা সে করছে সেটাই বা মন্দ কী?
কিন্তু এই যুক্তির ওপরও সে নির্ভর করতে পারে না। ভালো লাগে না তার। সবকিছু অর্থহীন মনে হয় একেক সময়। টেবিল চেয়ার, কর্মরত মানুষগুলো, ফাইলের স্তূপ, ক্লায়েন্টের ভিড়-সবকিছু অহেতুক লাগে। একেক সময় আব্বার কথা মনে হয়। আব্বা না বলেছিলেন, তোর মন কী বলে?
আর এইখানে তাকে থেমে যেতে হয়। মন? মন বলে তার কিছু আছে কি? কে জানে- সে বলতে পারবে না।
এইরকম যখন অবস্থা, রাখী তখন একদিন যুনিভার্সিটিতে গেল। উদ্দেশ্য, পারভিনের ভর্তির ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করবে আর ঐসঙ্গে জামান সাহেবের বই তিনখানাও দিয়ে আসবে।
জামান সাহেব টিচার্স ক্লাবে ছিলেন, রাখীকে দেখে বেরিয়ে এলেন, কী ব্যাপার, কখন এসেছ?
এই তো, কিছুক্ষণ, রাখী মাথা নিচু করে জবাব দিয়েছে।
আজ অফিসে যাওনি?
হ্যাঁ গিয়েছিলাম, ওখান থেকে আসছি। আমার মামাতো বোনের ভর্তির ব্যাপার ছিল একটা।
হয়েছে?
হ্যাঁ, মোটামুটি, ইংরেজিতেই বোধহয় হয়ে যাবে।
জামান তারপর যেন কথা খুঁজে পান না। ছোট্ট চাপা প্যাসেজটাতে কেমন ছায়াছায়া অন্ধকার। মনে হচ্ছিল, সারা য়ুনিভার্সিটিতে বোধহয় আর কেউ নেই। শেষে জামান হঠাৎ জিজ্ঞেস করেন, তারপর আর কী খবর? ভালো আছ?
এবার জামানের চোখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয় রাখী। জামানের কি অসুখ করেছে? নইলে অমন ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেন? প্যাসেজ ছেড়ে বারান্দায় আসে দুজনে। পাশাপাশি কয়েক পা হাঁটে রাখী। জামানকে তখনও অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে। একবার শুধাল, আপনি কি এখনই চলে যাবেন? না, কেন, কিছু বলবে? জামান দাঁড়ায়।
না কিছু বলব না, বইগুলো নিয়ে এসেছি।
বইগুলো হাত বাড়িয়ে নেয় জামান। তারপর সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে বলে, অফিস কেমন লাগছে?
ভালো, স্বল্প জবাব রাখীর।
সিঁড়ি বেয়ে দুজনে নিচে নামল। আমতলায় ভিড়, ছেলেদের মধ্যে কী একটা চাপা উত্তেজনা। রাখী গাড়িবারান্দার বাইরে এসে ওপরে দোতলার দিকে নজর রাখল, মেয়েরা রেলিঙে ঝুঁকে পড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখছে। কিছু ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে? রাখী বলল।
খবরের কাগজ দ্যাখোনি?
রাখী অপ্রস্তুত হয়। সত্যিই তো, খবরের কাগজটা আজ দেখা হয়নি। আমাদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। বোধ হয় নতুন টিচারদের ছাঁটাই করবে।
রাখী কিছুটা চমকায়। জামানের চেহারার ঐরকম অবস্থা তাহলে সেই কারণেই। মনে পড়ে, কিছুদিন ধরেই একটা গোলমাল চলছে। একজন টিচারকে বরখাস্ত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কয়েকজন শিক্ষক একটা বিবৃতিও দিয়েছেন—জামান সাহেবেরও নাম ছিল সেখানে। রাখীর গোটা ব্যাপারটা মনে পড়ল। অনুমান করল, আজকের এই উত্তেজনা সেই পুরনো ঘটনারই জের।
গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ডাইনে বায়ে তাকায় জামান- সম্ভবত রিকশর জন্য। তারপর বলে, আমি বাসা ভাড়া করে থাকি এখন, এলে খুশি হব।
রাখী সহজ হতে চেষ্টা করে। তার খারাপ লাগছিল তখন। জামানকে দারুণ অসহায় দেখাচ্ছে। ঘড়িতে তখন বেলা দুটোর দুপুর। জামানকে কী বলবে ভেবে পায় না সে। রিকশ এলে জামান ডাকে, রাখী আসবে তুমি? এসো না, আমার কিছু কথা আছে তোমার সঙ্গে।
জামানের বাসা বক্সিবাজারে। ছোট একতলা বাড়ি। দরজা খুললে রাখী দেখল ঘরের ভেতর সবকিছু এলোমেলো। বাইরে জামান এত ছিমছাম গোছানো, কিন্তু থাকে কীরকম এলোমেলো দ্যাখো! রাখীর অবাক লাগে। ঘরের ভেতরে চাপা গুমোট আর অন্ধকার। জামান ফ্যান ছেড়ে দিয়ে খাটে বসে। চেয়ার টেনে এগিয়ে দেয় রাখীর জন্য। রাখী বসে চারদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে।
তুমি খেয়েছ?
হ্যাঁ, খেয়েই বেরিয়েছি।
আমার চাকরটা আবার পালিয়েছে-এখন হোটেলে খাচ্ছি। জামান হাসে অকারণ। তারপর রাখীর দিকে নজর ফেরায়। ঐসময় রাখীর চোখ পড়ে জামানের চোখের ওপর। আর কীরকম যেন কষ্ট হয়। জামানের দুচোখের ভেতরে যেন সীমাহীন একটা বেদনা ধূসর হয়ে আছে।
রাখীর মনে হল, কিছু বলা দরকার তার। কিন্তু কথা খুঁজে পায় না। কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করে, আপনার কি শরীর খারাপ যাচ্ছে? জামান এবারও হাসে— না, আমি সুস্থই আছি। কিন্তু জানো, সবকিছু খারাপ লাগছে আমার। য়ুনিভার্সিটিতে নিজেকে অ্যাডজাস্ট করতে পারছি না, ফ্যামিলিতে না, বন্ধুদের সঙ্গে না। আমি ক্রমেই সবকিছু থেকে আলগা হয়ে যাচ্ছি। জানো রাখী, একটু পরে ফের বলে জামান, আমার বাবা মারা গেছেন, অথচ আমি তার কোনো খবরই পাইনি।
রাখী বিমূঢ় চোখে তাকায়, সে কী! কবে?
কবে তা আমিও ঠিক জানি না। আমার বড়ভাইরা আমাকে জানাননি। সম্পত্তির বিলিব্যবস্থা ঠিক করতে তারা ব্যস্ত, অন্য লোকের কাছ থেকে খবর পেলাম।
গেলেন না?
বিষণ্ণ হাসে জামান, গিয়ে কী লাভ! বাবাকে তো আর দেখতে পাব না। বাবা দ্বিতীয় পক্ষে বিয়ে করেছিলেন আমার মাকে। গরিব ঘরের মেয়ে আমার মা, আমাকে জন্ম দিয়েই মারা যান। বাবাই বহুকষ্টে মানুষ করেছেন আমাকে। আমার বড়ভাইরা তাঁদের বড়লোক মামাদের কাছে থেকে মানুষ হয়েছেন। তারা কেউ আসতেন না তখন। বাবাই ছিলেন আমার একমাত্র
আশ্রয়, সেই বাবা মারা গেলেন, কিন্তু আমি জানতে পারলাম না। এ যে কীরকম একটা ব্যাপার-
রাখী স্থির হয়ে শোনে। মমতায় তখন তার সারা মন একাকার হয়ে যাচ্ছে। এই মানুষটা, যে তার সামনে এখন বসে রয়েছে, যাকে এতকাল মনে হয়েছে ফাঁপা, যার আচরণ একেক সময় হাস্যকর মনে হত—আজ, এই মুহূর্তে, মনে হচ্ছে সে যেন অন্য মানুষ। সেই বৃষ্টির দিনে যেমন দেখেছিল, আজ তার চাইতেও গভীর বলে মনে হচ্ছে। এই জামানকে সে চিনত না। ঘরের বিষণ্ণ মৃদু আলোয় মানুষটাকে ভারি আপন ভাবতে ইচ্ছে করল তার। মনে হল যেন অসহায় একটা শিশু তার সামনে বসে আছে। আপনি তবু একবার যান, একবার হলেও আপনার যাওয়া উচিত। জামান মাথা নিচু করেছিল। ঐ অবস্থাতেই মাথা নাড়াল। ধীরে ধীরে বলল, না, যাব না। জমিজমা সম্পত্তির কোনো দরকার নেই আমার। আমি এসব নিয়ে কী করব?
ঐ পর্যন্তই বলে জামান। তারপর জানালার বাইরে তাকায়। শেষে ডাকে, রাখী, তোমাকে আমি অন্য কথা বলার জন্যে ডেকেছি। শুনবে?
রাখী কী বলবে? কেমন করে বলবে যে শুনবে না। সে চুপ করে থাকে। দেখে জামানের দুচোখে বিষাদের ওপারে কোথায় যেন একটুখানি আলোর উদ্ভাস জেগে উঠেছে।
আজ নয়, জামান বলে, গত দুবছর ধরে ভাবছি কথাটা তোমাকে বলব। কিন্তু বলা হয়নি। না-বলার কারণ আমার নিজেরই অক্ষমতা, আমার নিজেরই ভেতরে পাপ ছিল। সব গ্লানি, সব অক্ষমতা অতিক্রম করে যখন তৈরি হলাম, কথাটা তোমাকে জানাতে যাব, ঠিক তখনই শুনলাম তুমি চাকরি নিয়েছ। আমি জানি না, নিজের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তুমি কী ভেবে রেখেছ, আমার সম্পর্কেই বা তোমার কী ধারণা। তবু বলছি, যখন আমি পৃথিবীতে একা, নিঃসঙ্গ আমার ভবিষ্যৎ, কোথাও কেউ নেই আমার, তখনই কথাটা তোমায় বলতে হচ্ছে। রাখী, আমি তোমাকে ভালোবাসি। রাখী চমকাল না।
জামানের চোখের কোণে তখনও পানি চিকচিক করছে। রাখী দেখে জামান তার হাত দুখানা নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। আঙুলগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে নিজের গাল ছোঁয়াচ্ছে রাখীর হাতের পিঠে।
তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই রাখী, বিশ্বাস করো, কেউ নেই।
যেন অন্য কোনো লোক থেকে ভেসে আসা কণ্ঠস্বর। অন্য কোনো বিষাদময় নিঃশব্দতার ওপার থেকে, অন্য কোনো আলো কিংবা অন্ধকার থেকে ভেসে আসা কথা। সামনে বসে থাকা মানুষটি নয় যেন। রাখী আরেকবার শোনে-এই কথাটি বলবার জন্যে আমি নিজেকে অনেক চেষ্টায় তৈরি করেছি রাখী। অনেক পাপ থেকে পরিশুদ্ধ হবার চেষ্টা করেছি-তুমি বিশ্বাস করো।
রাখীর কিছু বলার নেই তখন। তার বুকের ভেতরে কীরকম একটা কষ্ট উদ্বেল হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছে, তার সামনে একটি অসহায় শিশু আর্তনাদ করে কাঁদছে। কেমন করে যে জানে না, সে জামানের চুলভর্তি মাথার ওপর একটা হাত রাখে।
একবার মনে হয়, জামান নয়, এ যেন মনি ভাই। শেষদিকে যেমন ঘরের ভেতরে অসহায় হয়ে ছটফট করত, ঘুমোত না-রাখী তখন তার মাথা হাত বুলিয়ে দিয়েছে-আজ এই মুহূর্তে সেইরকম মনে হয় তার। মনে হয়, জামান যেন তার জন্ম জন্মের চেনা।
তারপর জামান যখন আবেগ কাটিয়ে উঠে মুখ ঘুরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসেছে, তখন রাখী কথা বলল। হ্যাঁ বলল। ভাবতে পারেনি যে বলতে পারবে, তবু বলল- এভাবে কষ্ট পাও কেন, সহজ হও একটু। মানুষকে বেঁচে থাকতে হবে তো।
জামান কিছু বলে না, উঠে দাঁড়ায়। রাখীর মুখের দিকে ভীরু চোখে তাকিয়ে দেখে একবার। তারপর চুপচাপ। রাখীর দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ পর জামান জিজ্ঞেস করে, কই তুমি তো কিছু বললে না?
কী বলব, আমি তো জানতাম তুমি কী বলবে।
তুমি জানতে?
হ্যাঁ, রাখী মাথা নিচু করে অস্পষ্ট মাথা নাড়ায়।
কিন্তু আমি কক্ষনো বুঝতে পারিনি, এতক্ষণ পর এই প্রথম জামানের মুখ উজ্জ্বল দেখাল। বলল, তবু এতদিনে প্রথম আমার ঘরে এলে।
রাখী বিচিত্র হাসে। তারপর প্রসঙ্গ ফেরায়। বলে, আচ্ছা এবার অন্য কথা হোক, য়ুনিভার্সিটিতে টিচারদের ওপর কৈফিয়ত তলবের ব্যাপারটার কী?
আর বোলো না, কর্তাদের বুদ্ধি। তাঁদের ধারণা আমরাই ছেলেদের খ্যাপাচ্ছি, তাই কিছুটা শায়েস্তা করার জন্য এই ব্যবস্থা।
কী মনে হয়, ক্ষতি হবে কিছু? রাখীকে কিছুটা চিন্তিত দেখায়।
কিছু বলা যায় না, কারো কারো চাকরি নিয়ে টানাটানি হতে পারে। রাখী কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে উঠে দাঁড়ায়। তারপর চারদিকে তাকিয়ে বলে, চিন্তা করে কী লাভ? যা হবার হবে— আর ঘরের এ অবস্থা কেন? বাইরে এত ঝকঝকে পরিষ্কার, ভেতরে এমনি এলোমেলো আর নোংরা?
জামান বিব্রত হয় কিছুটা। তারপর বলে, পরের বার এসে দেখো, সব গোছানো থাকবে।
রাখী রাস্তায় নামল বিকেল চারটারও পরে। আর রাস্তায় নেমে বারবার নিজেকে শুধাল। এ কী হল? এই কি আমি চেয়েছিলাম? আমার জীবনে কি তাহলে প্রেম এল? আমি কখনো যা ভাবিনি, তাই হতে যাচ্ছে। নাকি ভেবেছিলাম? নিজেকে জিজ্ঞেস করে জবাব পায় না রাখী। সে জানে না। তারপর ফের মনে হয়, নিশ্চয়ই সে ভেবেছিল, নইলে ঐ মুহূর্তে কেন জামানের জন্যে তার কান্না পাচ্ছিল। রাখী ফেরার পথে আকাশের দিকে তাকায়। অক্টোবর শেষ হয়ে আসছে। জামানের কথাগুলো স্মরণে আনতে চায়, তার মুখটা মনে আনতে চেষ্টা করে। কিন্তু বারবার তার মনের ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে।
শেষে একসময় সব দ্বিধা সে ঝেড়ে ফেলতে চাইল। ভাবল, বেশ তো, অধ্যাপক স্বামী— মন্দ কী। বিয়ে যদি হয় তাহলে ভালোই— একদিন-না- একদিন সবাইকে তো বিয়ে করতে হয়। বরং ব্যাপারটা তাড়াতাড়ি চুকে গেলেই সে বাঁচে।