১০. গাড়ির দরজা খুলে

১০.

ওলেগ গাড়ির দরজা খুলে অ্যালেক্সিকে বলল, উঠে এসো চটপট।

অ্যালেক্সি গাড়িতে ওঠার আগে চারপাশটা ভালো করে দেখে নিল।

ওলেগকে দেখতে বিশ্রী, মুখটা একেবারে গোল। বৃষস্কন্ধ চেহারা, হাত দুটো মোটা মোটা আঙুলগুলো থ্যাবড়া।

কিছুক্ষণ বসে থেকে অ্যালেক্সি জিজ্ঞাসা করল, আমরা কোথায় যাচ্ছি?

ওলেগ বলল, এই একটু বেরিয়ে নেব।

অ্যালেক্সি বলল, সকালে ওভাবে আমাকে ফোন করা উচিৎ হয় নি তোমার। কেউ আড়ি পাততে পারত।

ওলেগ চেঁচিয়ে উঠল, ওরা চারিদিকেই জাল বিস্তার করেছে।

ওলেগ হঠাৎ জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা টম কেলসো চার্লস কেলসোর ভাই, তাই না?

অ্যালেক্সি ওলেগের এই হঠাৎ প্রশ্নে থমকে গেল, বলল তা হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?

ওলেগ বলল, যদি চার্লস কেলসো ওর ভাইকে বলে যে সেই রাতে হোলজাইমারের সঙ্গে কথা বলার সময় তুমিও উপস্থিত ছিলে?

অ্যালেক্সির ভয় দ্বিগুণ হয়ে গেল। তবুও সে বলল, বলেই যদি থাকে তাতে কী আসে যায়?

ওলেগ বলল, অনেক কিছুই হতে পারে। টম কেলসোর এমন অনেক বন্ধু আছে যারা পেন্টাগন এমনকি ন্যাটোর সঙ্গে যুক্ত। তাহলে বুঝতেই পারছ বললে কিছু ঘটা অস্বাভাবিক নয়।

অ্যালেক্সি জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা ওরা কী গোয়েন্দা দপ্তরের লোক?

হতেই পারে, ওলেগ বলল,তখন ওরা চার্লস কেলসোকে ছেড়ে তোমার দিকে বেশীমনোযোগ দেবে।

অ্যালেক্সি বলল, চার্লস জানেই না, আমি কখনো ওই মেমোরেন্ডামে হাত দিয়েছি। ওর এ রকম কোনও সন্দেহ কখনো হবেও না।

অ্যালেক্সি কিছুক্ষণ চুপ করে গেল। ও চার্লসের ভয় দেখানো চিঠিগুলোর কথাই ভাবছিল। এই কদিনে চার্লসের মধ্যে একটা বিরাট পরিবর্তনঅ্যালেক্সি লক্ষ্য করেছে। তাহলে কীচার্লস টনিকে কছু বলেছে? নাহলে ওদের বন্ধুত্ব এমন নষ্ট হয়ে যাবে কেন?

ওলেগ বুঝতেই পেরেছে যে অ্যালেক্সি কিছু একটা দুঃশ্চিন্তা করছে। বলল, মনে হচ্ছে তুমি একটু চিন্তার মধ্যে আছে। আচ্ছা মিশচার তোমায় বলেছিল মেমোরেন্ডামের মাইক্রোফিলমটা তৈরী হয়ে গেলে ওটা আমার হাতে দিতে। তা ওটা এনেছ তো?

অ্যালেন্সি জানত ওলেগ এই প্রশ্ন করবে। অ্যালেক্সি ওলেগকে এখনও সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারে নি। ও একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, আমি ওটা ইতিমধ্যে মস্কো পাঠিয়ে দিয়েছি।

ওলেগ চেঁচিয়ে উঠল, মস্কো পাঠিয়ে দিয়েছ? কখন পাঠিয়েছ? কই এখনও তো মস্কো থেকে খবর পাই নি যে ওরা মাইক্রোফিলমটা পেয়েছে।

অ্যালেক্সি দেখলে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায় নেই। এখন মিশচার পরে ওলেগই হল আমেরিকায় কেজিবির প্রধান হর্তাকর্তা।

অ্যালেক্সি আস্তে আস্তে বলল, তিন চার দিন আগে আমার সঙ্গে চার্লসের দেখা হয়েছিল। ওর হাব ভাব খুব একটা সুবিধার ছিল না। ওর মনে হচ্ছে ন্যাটোর মেমোরেন্ডাম শ্যানডন হাউস থেকে নিয়ে আসা তার খুব ভুল হয়েছে, একটা অপরাধ বোধ তাকে ঘিরে রেখেছে।

ওলেগ চুপচাপ ওর কথা খুব মন দিয়ে শুনছে।

অ্যালেক্সি বলে চলেছে–চার্লস আমাকে একটা অদ্ভুত প্রস্তাব দিল বলল, হয় আমি নিউইয়র্ক ছড়ে চলে যাই নয় তো ও শ্যানডন হাউসে জানিয়ে দেবে এই মেমোরেন্ডাম সরানোর পেছনে মামার কোনও অসৎ উদ্দেশ্য আছে।

ওলেগ জিজ্ঞাসা করল, ও কী চিঠি লিখেছে?

অ্যালেক্সি বলল, হ্যাঁ একটা ড্রাফট্‌ আমায় দেখিয়েছে, ফাইনালটা আমায় দেখায় নি।

ওলেগ বলল, হতে পারে এতক্ষণে ও ফাইনাল করে ফেলেছে।

অ্যালেন্সির ভয় ক্রমশঃ বাড়তে লাগল। ও চুপ মেরে গেল।

ওলেগ বলল, আমরা কোন ঝুঁকি নিতে পারি না।

অ্যালেক্সি চুপচাপ বসে আছে। একবার সে ওলেগের মুখটা চুরি করে দেখে নিল। ওলেগ কি বাঝাতে চায় তা বোঝার চেষ্টা করল।

মিনিট খানেক কেউ কোনও কথা বলল না। অ্যালেক্সির মনে হল ম্যাজেন্টা আলোয় রাস্তার–পাশের গাছপালা গুলো যেন লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটে পালাচ্ছে আদ্যিকালের ভয়ঙ্কর জীবের মত।

ওলেগের মনের কথা অ্যালেক্সি কিছুতেই ধরতে পারছিল না। নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে ওলেগ হঠাৎ লে উঠল, কেটির খবর কি? ওর কোনও খবর রাখো?

অ্যালেক্সি একেবারে আকাশ থেকে পড়ল। কেটি? কেন কেটির কি হয়েছে?

ওলেগ ভীষণ তিক্ত ভাবে বলে উঠল, তোমার কী ধারণা ছিল মাইক্রোফিলম নিয়েই তোমার কাজ শেষ?

অ্যালেক্সি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। সত্যি কেটির একটা খোঁজ নেওয়া দরকার ছিল। মাইক্রোফিল্মটা পেয়ে সে যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছিল। ওলেগের পরের কথায় অ্যালেক্সি রীতিমত চমকে উঠল।

কেটি এখন জেলে।

কেটি জেলে কেন? অ্যালেক্সি বলল, ম্যারিজুয়ানার আড্ডায় ধরা পড়েছে বুঝি?

ওলেগ বলল, তুমি দেখছি কোন খবরই রাখো না। তোমার ছুটি নেওয়া উচিত। গ্রীনউইচ ভিলেজের গোপন বোমা তৈরীর কারখানায় হাতে নাতে ধরা পড়েছে। বুঝতেই পারছ ওর মুখ থেকে পুলিশ সব কিছু বেরকরেই ছাড়বে। তখন তোমার অবস্থাই বাকী হবে আর আমার অবস্থাই বা কী হবে আন্দাজ করতে পারো?

ওলেগ ভিতরে ভিতরে খুবই অশান্ত হয়ে উঠেছিল। অ্যালেক্সি সাহস করে উঠতে পারছিল না ওলেগের সঙ্গে কথা বলার। সে চুপ করে বসে রইল।

ওলেগ অ্যালেক্সিকে কথা বলার সুযোগ করে দিল। ওলেগ জিজ্ঞাসা করল, কেটি কেমন মেয়ে?

অ্যালেক্সি কথা বলার সুযোগ পেয়ে খুব তাড়াতাড়ি বলল, ও খুবই শক্ত মেয়ে। ওর কাছ থেকে ওরা সহজে কথা বের করতে পারবে না।

ওলেগ অ্যালেক্সিকে ধমক দিয়ে সাবধান করে দিল বলল, তুমি এই দু তিনদিন তোমার ফ্ল্যাট ছেড়ে কোথাও নড়বেনা।কারো সঙ্গে দেখাও করবেনা। তোমার মুখ যেন কেউ দেখতে না পায়। তারপর আমার নির্দেশ পাচ্ছো, অপেক্ষা করবে ফোন করবে না, বুঝেছ?

অ্যালেক্সি কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল।

ওলেগ জিজ্ঞাসা করল, চার্লস কোথায় থাকে, তোমার ওখানেই তো?

অ্যালেক্সি বলল, না, আমার সঙ্গে একটু কথা কাটাকাটি হওয়াতে ও শ্যানডন হাউসে ফ্ল্যাট নিয়েছে।

ওলেগ নিজের মনেই বলতে লাগল শ্যানডন হাউস? ওখানকার নিরাপত্তা ভীষণ কঠোর। আমাকে একটু চিন্তা ভাবনা করতে হবে।

ওলেগ অ্যালেক্সিকে বলল, তুমি তাহলে এখানে নেমে যাও। গিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে ফ্ল্যাটে চলে যাও। আর মনে রেখো আমার ফোনের অপেক্ষা করবে।

দরজা খুলে ওলেগ অ্যালেক্সিকে মাইল কুড়ি দূরে শহরের শেষে নামিয়ে দিল। আর নিজে দ্রুত বেগে গাড়ি ছুটিয়ে মিলিয়ে গেল।

.

১১.

প্রিয় টম, আমি চার্লসের সঙ্গে কিছু কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ও আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছিল না। আমাকে একদম গুরুত্ব দিচ্ছিল না। কিন্তু অনেক চেষ্টা চরিত্র করে আমি বোধহয় ওকে একটু বোঝাতে পেরেছি। ও এখন মনে করছে এমন একটা বোকামির কাজ তার করা ঠিক হয়নি।

যদি ন্যাটো মেমোরেন্ডাম প্রকাশের আগে আমার সঙ্গে ওর দেখা হয়ে যেত তাহলে এমন একটা ঘটনা মনে হয় ঘটত না। যা যা হবার হয়ে গেছে। এমন কিছু নতুন ঘটনা ঘটেছে তার। জন্য চার্লস খুবই বিচলিত হয়ে পড়েছে। ঘটনাটি হলো কেটি কোলিয়ার নামে একটি মেয়ে ধরা পড়েছিল এখন সে জামিনে মুক্তি পেয়ে আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে গেছে এটা খুবই চিন্তার কারণ।

এদিকে হোলজাইমার পুলিশের জেরায় হাবুডুবু খাচ্ছে। উপাঁচকের মত এই চিঠি লিখলাম বলে কিছু মনে করো না। তবে আমার উপর ভরসা রাখতে পারো। চার্লসের জন্য আমরা যথা সম্ভব চেষ্টা করবো। তবে বুঝতেই পারছ আমরা অন্য একটা ব্যাপারে ভীষণ চিন্তিত। তোমার ব্রাড জিলন।

চিঠি খানা প্রায় এক নিঃশ্বাসে শেষ করল টম। ডরোথির দিকে তাকিয়ে দেখল সে দুহাতে মুখ ঢেকে বিবর্ণ হয়ে বসে আছে।

এই চিঠিটা পড়ার আগে ওরা ভাবতেও পারে নি আজকের দিনটা এমন খারাপ বার্তা বয়ে নিয়ে এসে অন্ধকার করে দেবে।

এমনিতেই টম ভীষণ ক্লান্ত ছিল। কিছুক্ষণ আগে সে টাইমসের পরবর্তী সংস্করণের জন্য প্রায় পঞ্চাশ পাতা টাইপ করেছে। তার ওপর কাল কি পরশু ব্রাসেল যেতে হবে। কিসিংগার যাচ্ছে ন্যাটোর গোপন বৈঠকে যোগ দিতে। তাকে টাইমসের হয়ে সেক্রেটারী অব স্টেটের এই দুরূহ এবং অতি প্রয়োজনীয় বৈঠকের মালমশলা জোগাড় করে পর্যায়ক্রমে পাঠাতে হবে। এর মধ্যে আবার এসে গেল চার্লসের ব্যাপার।

টম একটা চুরুট ধরিয়ে ডরোথির দিকে তাকালো। সে সেই একইভাবে নিথর পাথরের মত বসে আছে। ডরোথি এই আঘাত সহ্য করতে পারছে না।

টমও কিছু কম আঘাত পায় নি। সে জানে তার ভেঙ্গে পড়া চলবে না। তাকে শক্ত হতেই হবে। সে নিজেকে যথা সম্ভব সংযত করে রাখলো।

টম ধীরে ধীরে ডরোথির দিকে এগিয়ে গেল। ডরোথি দুহাতে টমকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। টমও নিজেকে সামলাতে পারল না।

টমকে জড়িয়ে ধরে ডরোথি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, টম, আমি আর সহ্য করতে পারছি না তুমি যেভাবেই হোক চার্লসকে একবার এখানে নিয়ে এসো। আমি শান্ত হতে পারছি না।

টম ডরোথিকে আরো কাছে টেনে নিয়ে ওর চুলে, কপালে চুমু খেয়ে বলল, আমি জানি তুমি চার্লসকে কতখানি ভালোবাসো। আমার থেকেও বেশী। কিন্তু আমাদের তো এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। আমাদের অনেক ভেবেচিন্তে কাজ করতে হবে। চার্লস তো আর ছেলেমানুষ নয় ওকে বকে বেঁধে এখানে নিয়ে আসবো। আর ব্রাড যে চিঠি লিখেছে তা যদি সত্যি হয় তাহলে চার্লসের ওখানে থাকাই নিরাপদ। কেননা ওটা একটা দুর্গের মত।ওর নিরাপত্তা ব্যবস্থা উইন্ডসর প্যালেসের থেকে কোনও অংশে কম নয়। তাই লক্ষ্মীটি তুমি একটু শান্ত হবার চেষ্টা করো।

ডরোথি বলল, সরি টম, আমি সত্যি ভীষণ অবুঝ হয়ে পড়েছিলাম।

 টম মুখে মিথ্যে হাসি এনে বলল, না না, তা নয়। আমি এখন ভাবছি কেটি কোলিয়ারের কথা।

টম ইচ্ছে করেই চার্লসের প্রসঙ্গ থেকে কেটির প্রসঙ্গে চলে এলো। কেননা চার্লসের কথা যত হবে ডরোথি তত কষ্ট পাবে।

ডরোথি চোখ তুলে বলল, আচ্ছা এটা সেই মেয়েটি না যে ডাউন–টাউনে বোমা তৈরীর কারখানার বিস্ফোরণে মরতে মরতে বেঁচে গেছে?

টম বলল, বুঝতে পারছি না, ওর সঙ্গে চার্লসের কী সম্পর্ক আছে!

ডরোথি বলল, আমিও তো ভাবছি ওর সঙ্গে চার্লসের কী সম্পর্ক? তাছাড়া চার্লস কেন একবারও আসছে না আর ফোনও করছে না বুঝতে পারছি না।

টম কফির কাপে চুমুক দিল। চুরুটে একটা টান দিয়ে বলল, তাহলে তোমার সেই হোলজাইমার। ওকে আমি অনেক দিন থেকে চিনি।

কিন্তু ওই বা চুপ করে আছে কেন? পুলিশকে সব কিছু জানাচ্ছে না কেন?

হোলজাইমারের কথা শুনেই ডরোথি তিক্ততার সঙ্গে বলল, ওই বদমাশটার জন্যই আজ ওদের এতো বিপদ।

এমন সময় দরজায় বেল বেজে উঠলো। টম ও ডরোথি আতঙ্কে সিটিয়ে গেল। কেননা একটু আগেই ব্রাডের চিঠি যেভাবে অশুভ বার্তা নিয়ে এসেছিল। আবার কে কি খবর নিয়ে এলো কে জানে!

টম দরজা খুললো, ওদের ভূত দেখার মত অবস্থা হলো। একী টনি লটন। ও আবার এখন এখানে কেন?

টনি ঘরে ঢুকে হাসতে হাসতে তাদের দেখে বলল, কী ব্যাপার? তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে এখুনি তোমরা হিচককের কোনও ছবি দেখে উঠলে।

ডরোথিকে টনি বলল, ম্যাডাম এমন একটা সুন্দর সকালে এইরকম গোমড়া মুখে থাকবেন না। চীয়ার আপ! তারপর মিঃ কেলসো কবে ব্রাসেলস রওনা হচ্ছেন?

টনিকে বসতে বলে, জোর করে মুখে হাসি টেনে ডরোথি বলল, কী নেবেন স্কচ না মার্টিনি?

 টনি খুবই রসিকতা প্রিয়, বলল, সুন্দরী কোন মহিলা আমায় বিষ দিলেও আমি তা খেতে রাজি।

 ডরোথি একটু লজ্জিত হল, এবং পানীয়ের বন্দোবস্ত করতে উঠে গেল।

টনি এবার আসল কথায় এলো। টমকে জিজ্ঞাসা করলো, চার্লসের খবর কী?

না কোন খবর নেই, টম বলল, তবে ব্রাডের একটা চিঠি পেয়েছি।

টনি বলল, ওটা আমিই ওকে লিখতে বলেছি। তা আপনারা ভয় পেয়ে যান নি তো?

টম বলল, না! তবে চার্লসের জন্য ভীষণ চিন্তা হচ্ছে।

টনি বলল, ওহ আপনিও দেখছি ব্রাডের মতই অস্থির। আচ্ছা মিঃ কেলসো আপনি ডর–বি ম্যারিয়েটের নাম শুনেছেন?

টম নিজের মনে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ আমেরিকান রাইটার। তিনি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পটভূমিকায় ফ্রান্সের ওপর একটা বই লিখেছেন। মনে হচ্ছে ওটা সিনেমাও হয়েছে।

টম বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও ওর সম্বন্ধে এই রকমই শুনেছি। আচ্ছা আপনি ওর আর কোন খবর জানেন?

টম বলল, দেখুন, আমি একজন রিপোর্টার, গোয়েন্দা নই।

টনি সহাস্যে বলল, তা আমি জানি বৈকি। আচ্ছা রিক নীলেকে নিশ্চয়ই চেনেন?

টম বলল, হ্যাঁ চিনি ও চার্লসের বন্ধু। খুবই ভালো ছেলে। তবে মনে হয় ওদের বন্ধুত্বে এখন একটু ভাঙন ধরেছে।

টনি বলল, আমার কাছে খবর আছে এই রিকের সঙ্গে ম্যারিয়েটের বেশ ভালো যোগাযোগ আছে। চার্লস কী আপনাকে কখনো বলেছিল?

টম বলল, কই না, তো।

টনি বলল, স্বাভাবিক, চার্লসেরও না জানারই কথা।

ইতিমধ্যে ডরোথি তিন গ্লাস মার্টিনি নিয়ে এলো। ডরোথিকে দেখে টনি বলল, ধন্যবাদ মিসেস কেলসো। সেদিন হোটেলে ওই সুন্দর যুবকটির পরিচয় দেবার জন্য। সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ দেবার জন্য এখানে এসেছি।

ডরোথি কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না।

টনি বলল, কেন চার্লসের সেই বন্ধু রিক নীলে

ডরোথি বলল, ও তাই বলুন, আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।

টনি বলল, না না মিসেস কেলসো এখুনি ভয় পাবেন না।

 ডরোথি বলল, আরো কিছু আছে নাকি?

টম দেখলো ডরোথির মুখ আবার আতঙ্কে ভরে উঠছে। তাই টম টনিকে বলল

আচ্ছা মিঃ লটন এসব কথা এখন বন্ধ করলে হয় না?

টনি বলল, না ওর সম্বন্ধে আপনাদের জেনে রাখা ভালো, কেননা কখন কি বিপদ এসে যায়।

ডরোথি উদ্বেগের সঙ্গে বলল,বলুন,। চার্লসের ভালোর জন্য আমাদের সব কিছু জানা দরকার।

টনি বলল, দ্যাটস্ রাইট। অন্ধকারে থাকলে অনেক বিপদের আশঙ্কা।

ডরোথি বলল, তাহলে আপনি বলছেন, রিক নীলে একজন বিপদজনক ব্যক্তি।

টনি বলল, আর কিছুদিনের মধ্যে আমরা ওর সম্বন্ধে আরো সঠিক করে বলতে পারবো। তবে এই পর্যন্ত যা খবর পেয়েছি তাতে রীতিমত চমক আছে।

এই রিক নীলে ছিল প্রথমে একজন ডকু–সি পিকারিং এর সাহায্যকারী। তারপর হঠাৎ তাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। কোনও কিছুতে থাকে না তাই এফ বি আই এর ফাইলেও ওর সম্বন্ধে বিশেষ কিছু নেই। পূর্ব জার্মানীতে সিয়ার যে এজেন্ট আছে সেও রিক নামে কাউকে চেনে না। সেখানেও তাকে পাওয়া গেল না। উনিশ শ তেষট্টি থেকে পঁয়ষট্টিতে ও সোজাসুজি এসে ভর্তি হয়ে গেল ইউ. এস সৈন্যদলে। সে সিভিলিয়ান দোভাষীর কাজ করত। এই ভাবে সে পূর্ব থেকে পশ্চিম জার্মানীতে পালিয়ে আসে। ওর জন্ম ব্রুকলীনে।

ফাইল ঘেঁটে জানা গেছে ব্ল্যাঙ্ক নীলে নামে যে ভদ্রলোকের কাছে এসে নিজেকে তার প্রপৌত্র রূপে পরিচয় দিয়েছে তাতে সাতাশ বছর পরে চুরাশি বছরের বৃদ্ধের পক্ষে তার প্রপৌত্রকে চেনা সম্ভবনয়। তবে ও এমন কিছু কাগজ পত্রের প্রমাণ এনেছিল তাতে বৃদ্ধ ওকে মেনে না নিয়ে পারেনি।

এখন যা জানা গেছে তাতে ওর মা জার্মান ও বাবা আমেরিকান হলেও ও আমাদের লোক নয়।

 ডরোথি চেঁচিয়ে উঠল, তাহলে ও শত্রু পক্ষের এজেন্ট।

হ্যাঁ, টনি বলল, গত নয় বছর ধরে ও আমাদের চোখে ধুলো দিয়ে চলেছে।

ডরোথি বলল, বিশ্বাসঘাতক! ওকে আমাদের এক বারের জন্যও সন্দেহ হয়নি। আশ্চর্য!

 টনি একটু হেসে কৌতুক করে বলল, তাহলে বলতে হয় যে রিক খুব কাজের ছেলে।

ডরোথি রাগে ফেটে পড়ল,কাজের ছেলে?রাবিশ,একটা মস্তো বড় শয়তান চার্লসকে কিভাবে ফাঁদে ফেলেছে। ওহ্ আমি ভাবতে পারছি না।

টনি হেসে বলল, কিন্তু মিসেস কেলসো রিক আমাদের কাছে শয়তান হলেও ওদের কাছে ও কিন্তু একজন সফল হিরো। যে পক্ষের হয়ে ও কাজ করছে তারা তাকে সোনার চেয়েও দামী মনে করে।

ডরোথি বলল, কিন্তু আপনি কি ওকে সমর্থন করেন?

টনি বলন, ডেফিনেটলি নট, আমরা কেউই তাকে সমর্থন করতে পারি না।

ডরোথি জিজ্ঞাসা করল, আপনি কী সেইদিন থেকে ওর সম্বন্ধে আগ্রহী হলেন মিঃ লটন?

টনি বলল, হ্যাঁ তা বলতে পারেন। আপনার কাছ থেকে ওর পরিচয় পাবার পর বিশেষ করে যখন জানলাম ও চার্লসের বন্ধু তখনই আমি ওর সম্বন্ধে খোঁজ নিতে শুরু করি। তাছাড়াও আরও কিছু ব্যাপার আছে।

টম এতক্ষণ চুপচাপ ওদের কথা শুনছিল, এবার সে টনিকে বলল, আচ্ছা মিঃ লটন আপনি কেন ওর সম্বন্ধে এফ বি আইকে জানাচ্ছেন না?

টনি বলল, দেখুন সব কিছুর জন্যই সাক্ষ্য প্রমাণ দরকার। আমার কথার সত্যতা বিচার না করেই তো আর তদন্ত কমিশন বসবে না। তাই আমিও পেছনে লেগে আছি। কিন্তু ব্যাটা এত চালাক কী বলব, সেই দিন থেকে আর পাত্তা নেই। ওর মুখই দেখা যাচ্ছে না, বার বা রেস্তোরাঁয় পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না এমন কি ফোনেও কারো সঙ্গে যোগাযোগ করছে না। একেবারে ঘরে খিল এটে বসে আছে। কিন্তু আমি যখন ধোঁয়া দেখতে পেয়েছি তখন আগুনের উৎস আমি বার করবই।

এমন সময় ঘরের ফোনটা বেজে উঠল। টম উঠে গিয়ে রিসিভার তুলে নিল। তারপর টনির। দিকে তাকিয়ে বলল ইটস্ ইওর কল মিঃ লটন। ব্রাড ফোন করেছে। আরজেন্ট।

টনি লাফিয়ে উঠল, ব্রাড় আবার এখানে ফোন করল কেন? কোন জরুরীখবর…

 টনি রিসিভার তুলে বলল হ্যালো টনি বলছি। কী ব্যাপার?

ওপাশ থেকে ব্রাড বলল শুনছে টনি, তোমার সেই ম্যারিয়ট কাল রাতে খুন হয়েছে। ব্রাডের গলায় রীতিমত উত্তেজনা।

টনি চমকে উঠল,বল কী? এটা কীকরে সম্ভব? আমি দুজনকে পাহারায় রেখেছিলাম। ব্রিজিট আর বারনারড।

ব্রাড জানালো, গভীর রাতে ব্যাপারটা ঘটেছে।

 টনি জিজ্ঞাসা করল, তুমি ম্যারিয়েটের ওখানে গিয়েছিলে।

ব্রাড বলল, হ্যাঁ, আমি তো ওখান থেকেই আসছি।

টনি জিজ্ঞাসা করল, তাকে কি গুলি করে মারা হয়েছে?

ব্রাড বলল, না, ডাক্তারের মতে হার্টফেল করে মারা গেছে।

 টনি বলল, কী করে বলছে? পোস্টমর্টেম তো এখনও হয় নি।

প্রাথমিক পরীক্ষা করে ডাক্তার মন্তব্য করেছে, ব্রাড জানালো।

 টনি আবার জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা তিনি কী বিছানাতেই ছিলেন?

ব্রাড বলল,না, আমরাও ডাক্তারের মন্তব্যকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছি না। কারণ ওর ঘর একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে।

টনি উত্তেজিত হয়ে বলল, তাহলে বুঝতেই পারছে যে ম্যারিয়ট হার্টফেল করে মারা যায়নি। লেনেক্সি হসপিটালে কোনোভ যেভাবে মারা গেছে এটাও ঠিক সেই একই কেস। আমার সন্দেহ তাহলে মিলে যাচ্ছে। ম্যারিয়েট কেজিবির সঙ্গে যুক্ত ছিল।

ব্রাড অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করল, তাহলে ম্যারিয়টকে খুন করা হল কেন?

টনি বলল,এমনসিক্রেট এজেন্টদের জীবনের কোনও ভরসা থাকে না, তাদের যে কোন মুহূর্তে মেরে ফেলা হতে পারে।

টনি বলল, আচ্ছা ম্যারিয়ট–এর ঘরে কোন সন্দেহজনক জিনিস কিছু কী পাওয়া গেছে?

 ব্রাড জানালো, সামান্যতম সন্দেহ করার মতও কোন জিনিস এখানে পাওয়া যায় নি।

টনি গম্ভীর হয়ে বলল, আপনি ম্যারিয়েটের খুন সম্বন্ধে খোঁজ খবর নিন। আমি দুদিনের জন্য ডুব দেব। হ্যাঁ, গোপনীয়। গুড বাই

টনি ফোন রেখে টমের দিকে ঘুরে বলল, এইমাত্র যার কথা বলছিলাম ম্যারিয়েট, তিনি খুন হয়েছেন।

টনি টুপিটা মাথায় দিয়ে বলল, তাহলে চলি, আপনারা সাবধানে থাকবেন, আর পারলে চার্লসকে এখানে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। আমরাও ওর নিরাপত্তা আরও জোরদার করছি।

টম জিজ্ঞাসা করল, আমি ম্যারিয়েটের সঙ্গে চার্লসের সম্পর্কটা কি বুঝতে পারছি না।

ডরোথি ভয়ে টমের হাত চেপে ধরেছে।

 টনি বলল, ওই সিঁড়ি ভাঙ্গা অঙ্কের মত। চার্লস–রিক–ম্যারিয়েট। আচ্ছা চলি গুড বাই

.

১২.

 পার্ক অ্যাভির একটা অলিভ গাছের নীচে সন্ধ্যার অন্ধকারে মনে হচ্ছে যেন একটা দৈত্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটু দূরে পায়ের হাল্কা শব্দে সে চমকে ঘুরে দাঁড়ালো। হাতে খোলা ছোরা। চোখে হিংস্র দৃষ্টি। পরিচিতের মুখ দেখে শান্ত হলো।

অ্যালেক্সি বলল, ব্যাপার কী ওলেগ? এভাবে এখানে আমাকে ডেকে পাঠালে কেন? ওলেগ জিজ্ঞাসা করল, ম্যারিয়টের কোনও খবর শুনেছো? অ্যালেক্সি বলল, ম্যারিয়ট, মানে ওয়াশিংটনে আমাদের…। ওলেগ ওকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল, এখানে ওর পরিচয় আর উল্লেখ না করাই ভালো। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি তুমি কী ওর কোনও খবর পেয়েছ?

অ্যালেক্সির সঙ্গে কেটি আছে। সত্যি এই মেয়েটির যে কত ক্ষমতা তা ভাবা যায় না। পুলিশের জেরার সামনে ও টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি।

অ্যালেক্সি রাগত স্বরেই ওলেগকে বলল, কি করে আর রাখব। তুমি তো আমায় ঘরে বন্দি করে রেখেছিলে। এখন কেটি গিয়ে ডাকলো বলে বেরুতে পারলাম।

ওলেগ খুব শান্ত গলায়, যেন কিছুই হয় নি এমনভাবে বলল, ম্যারিয়েট মারা গেছে।

অ্যালেক্সি চমকে উঠল, মারা গেছে! ম্যারিয়েট মারা গেছে? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। কি করে? কবে?

ওলেগ অ্যালেক্সির প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে, খুশীতে বলে উঠল, তাহলে মাইক্রোফিলমটা। এখন আমার হাতে।

অ্যালেক্সি চমকে উঠল, ওহ মাই গড, তাহলে মাইক্রোফিলমটা এখনও মস্কোয় পাঠানো হয়, নি?

ওলেগ বলল, আমি আগেই জানতাম ও একজন বিশ্বাসঘাতক। হি ইজ এ ট্রেইটর। কিন্তু এখনও এমন কিছু দেরী হয় নি।

অ্যালেক্সি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করল, তাহলে তুমি ওটা কালই মস্কোয় পাঠিয়ে দিচ্ছ তো?

ওলেগ জোরের সঙ্গে বলল, নিশ্চয়ই ওটা আমায় কালই পাঠিয়ে দিতে হবে।

অ্যালেক্সি ওলেগকে বোঝার চেষ্টা করল। সে কোনও চালাকি করবেনাতো? কিন্তু ওলেগের কথায় ও স্বস্তি পেল কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারল।

কেটি ছটফট করছিল। ওদের কথা থামতেই বলল, না এখানে আর বেশী সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।

ওলেগ সঙ্গে সঙ্গে সাবধান হয়ে গেল। কেটিকে বলল তুমি একটু চারিদিকে নজর রাখো। আমি ততক্ষণ চটপট অ্যালেক্সিকে কয়েকটা ফটো দেখিয়ে নি।

ওলেগ অ্যালেক্সিকে নিয়ে একটা ল্যাম্পপোস্টের নিচে গিয়ে দাঁড়ালো। মাথার টুপি দিয়ে তারা তাদের নিজেদের মুখ প্রায় ঢেকে ফেললো। কেটি একটা গাছের নীচের ছায়ায় নিজেকে আড়াল করে চারিদিকে নজর রাখতে থাকল।

পকেট থেকে একটা খাম বের করতে করতে ওলেগ বলল, যদি সেদিন সেন্ট্রাল পার্কে তোমরা একটু সাবধান হতে তাহলে এত ঝামেলা হতো না।

সন্ধের সময় সেন্ট্রাল পার্কে যে লুটেরাদের উপদ্রব হয় তা মিশচার–এর জানা উচিত ছিল।

যাক গে, বাদ দাও বলে ওলেগ একটা খাম থেকে তিনটে ফটো বের করে অ্যালেক্সির হাতে দিল। ওলেগ ওই ফটো তিনটির মধ্যে একজন টুইড জ্যাকেট পরা লোককে দেখিয়ে অ্যালেক্সিকে বলল, দেখো তো এই লোকটিকে কখনো চার্লস কেলসোর সঙ্গে দেখেছ কিনা?

অ্যালেক্সি ফটোগুলো নিয়ে দেখলো জ্যাকেট পরা লোকটির মুখ কোনও ফটোতেই স্পষ্ট নয়। কোথাও লোকটা রুমাল দিয়ে নাক ঢেকে আছে, কোথাও এমনভাবে হাত তুলে আছে যে তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। আবার আরেকটাতে মুখ নিচু করে আছে।

অ্যালেক্সি অনেকক্ষণ দেখে বলল, না! বুঝতে পারছি না। কে এই ভদ্রলোক?

ওলেগ ছোট্ট করে বলল, অ্যান, এক্সপার্ট। অ্যালেক্সি জিজ্ঞাসা করল, বাকি দুজন কে?

ওরা নিউইয়র্কের গোয়েন্দা বিভাগের লোক, ওলেগ জানালো।

আচ্ছা ওরা কি এই এক্সপার্ট লোকটাকে অ্যারেস্ট করেছে? অ্যালেক্সি জিজ্ঞাসা করল। আর তুমি এই ফটো কোথায় তুললে? তাহলে কিছু বলা যেতে পারে হয়ত।

ওলেগ খুব গম্ভীর হয়ে বলল, আমি এই লোকটাকে চিনি। এ হলো টনি লটন। মিশচার–এর মৃতদেহ যে মর্গে পড়েছিল, সেখানে এই ম্যাপ শট নেওয়া হয়েছে।

অ্যালেক্সির বুকটা ধড়াস করে উঠল। মিশচার–এর ওখানে? মর্গে?

অ্যালেক্সি খুব ভয়ে ভয়ে বলল, আমি তো এর নাম কখনো শুনিনি। কে এই টনি লটন?

ওলেগ ভীষণ উত্তেজিত হয়ে বলল, এখানে আছে অথচ কোন খবর রাখোনা। এই টনি লটন একজন ন্যাটোর এজেন্ট।

অ্যালেক্সি ভয়ে ঠাণ্ডা হয়ে গেল, সে আস্তে আস্তে ওলেগকে জিজ্ঞাসা করল, এই লোকটা মর্গে গিয়েছিল কেন?

ওলেগ ফটো তিনটে পকেটে রাখতে রাখতে বলল, দে ইউ সী হোয়্যার ইউ স্ট্যান্ড। যা ওসব কথা রাখো। আমাদের অনেক কাজ বাকি আছে। গাছের ছায়ায় এসো।

ওলেগ ও অ্যালেক্সি কেটি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে এলো।

ওলেগ ভালো করে চারপাশটা দেখে নিয়ে বলল, শ্যানডন হাউসের নিরাপত্তা কর্মী ম্যাকলেহোস–এর বাড়ি তুমি কি চেনো?

অ্যালেক্সি উত্তর দিল, হ্যাঁ চিনি।

ওলেগ জিজ্ঞাসা করল, ওর কি স্ত্রী পুত্র আছে?

আছে।

ওলেগ বলল, খুব ভালো। বলে হঠাৎ যেন খুশীতে চকচক করে উঠল। অ্যালেক্সি এই খুশীর কারণ বুঝতে পারল না।

ওলেগ বলল, আমাদের এবার ম্যাকলেহোসের বাড়ি যেতে হবে।

অ্যালেক্সি জিজ্ঞাসা করল কেন?

 ওলেগ বলল, প্রশ্ন পরে করবে, এখন যা বলছি মন দিয়ে শোন।

ওলেগ বলতে লাগল। আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকবো, হ্যাঁকেটি তোমাকে ম্যাকলেহোস চেনে না তো?

কেটি বলল, না, আমার সঙ্গে পরিচয় নেই।

ওলেগ খুশীতে ডগমগ করতে লাগল। অ্যালেক্সিকে জিজ্ঞাসা করল, তোমাকে নিশ্চয়ই ম্যাকলেহোস চেনে?

অ্যালেক্সি ঘাড় নাড়লো।

ওলেগ বলল, শোন কেটি ম্যাকলেহোসকে বলবে যেও নতুন নিউইয়র্ক এসেছে। এবং চার্লসের পূর্ব পরিচিত। একবার চার্লসের সঙ্গে দেখা করতে চায়।

অ্যালেক্সি বলল, এটা খুবঝুঁকির ব্যাপার হয়ে যাবেনা? তাছাড়া কেটি জামিনে ছাড়া পেয়েছে। যদি জানাজানি হয়ে যায়?

ওলেগ বলল, না না এত সময় আমার প্রয়োজন হবে না। আই শ্যাল সী টু ইট। আমাদের ম্যাকলেহোসকে প্রয়োজন। আমার একটু সময় দরকার যাতে ম্যাকলেহোসের কোয়ার্টার থেকে শ্যানডন হাউসের নিরাপত্তার বহরটা দেখে নেব।

ওলেগ অ্যালেক্সির উদ্দেশ্যে বলল, বোকামি করো না। উই অল আর ইন ডেঞ্জার! সামনেই ভীষণ বিপদ। তাই আমি যা বলি তাই কর।

অ্যালেক্সি ওলেগের মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ও ধরতে পারছেনা। ওলেগ মনে মনে নতুন কী ফন্দি বানাচ্ছে। এদিকে টনি লটনের পরিচয় পেয়ে অ্যালেক্সি নিজে ভীষণ ভয় পাচ্ছিল। তাই ভাবল এনিয়ে সে আর কিছু ভাববে না। ওলেগ যখন এখন হর্তাকর্তা তখন ও যা ভালো বোঝে করুক।

ওলেগ যাবার জন্য তৈরী হয়ে নিয়ে অ্যালেক্সি ও কেটিকে তাড়া দিল। তারা তিনজনে ম্যাকলেহোস–এর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

.

১৩.

পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টার ঘটনা আকস্মিক অথচ বেশ দ্রুত গতি…

 টনি লটন ঠিক করল ব্রাড জিলনের সঙ্গে ম্যারিয়টের খুন হওয়ার ঘটনা নিয়ে আলোচনা শুরু করার আগে শ্যানডন হাউসের চারদিকে যে জাল বিস্তার করা হয়েছে সেই সম্বন্ধে একটু খোঁজ খবর নেওয়া যাক। টনির ধারণা ভুলনয়।বরিস গেরস্কি যেভাবে এগুচ্ছে তাতে ন্যাটো মেমোরেন্ডাম ফাঁস হয়ে যাবার কোন প্রমাণই সে তার আয়ত্বের বাইরে যেতে দিতে রাজি নয়। ওর সামনে এখন দুটো সমস্যা। এক হচ্ছে চার্লস কেলসো। দুই হচ্ছে জিন প্যারাকিনির নিরাপত্তা বজায় রাখা। শ্যানডন হাউসে নজর রাখার জন্য ওকে সেই দ্য ব্রেইনের–ই একজন করে রেখেছে। এর জন্য ব্রাড জিলনকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

কিন্তু চার্লস কেলসো যে কেন এখনও শ্যানডন হাউসে রয়েছে তা টনি লটন বুঝতে পারছে না। ওতো এখন ওর দাদা টম কেলসোর ওখানে থাকতে পারে। চার্লসকে নিয়ে এখন ভীষণ চিন্তা।

টনির শরীরটা ক্লান্ত লাগছিল। সে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে সামান্য কিছু খেয়ে নিল। তারপর একটা টেলিফোন বুথে গেল।

টেলিফোন বুথে ঢুকে সেভাবলোকাকে ফোন করা উচিত। নিকোলে–কেনা বিল কে? দুজনের সঙ্গে কথা বলাই রিস্ক।

টনি ডায়াল করল। ওপাশ থেকে বিল ফোন তুললল। টনি বলল–হ্যালো বিল। আমি টনি বলছি জিনের উপর ঠিকমত নজর রাখবে।

বিল বলল, ভালই আছে। এখন লাঞ্চ সেরে নিচ্ছে।

টনি জিজ্ঞাসা করল, কোথায়?

বিল জানাল, বারনার্ডের সঙ্গে যেমন রোজ কিচেনে খায় তেমন।

 ফিরল কখন?

এই আট মিনিট আগে হবে। আমি এসেছি বারোটা পনেরোয়।

টনি বলল, খুব খারাপ।

কেন?

আমি ওকে বারোটা বাজতে পাঁচ মিনিটে রিক নীলেকে অনুসরণ করতে দেখেছি, টনি বলল।

বিল বলল, হয়তো হতে পারে।

টনি উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, হয়তো হতে পারে মানে? রিক সম্বন্ধে আমি সঠিক খবর জানতে চাই। জিনের ওকে ছেড়ে দেওয়া উচিত হয় নি। জিন তার নিজের কাজে অবহেলা করছে। যাক খেয়ে নিয়েই যেন জিন বেরিয়ে পড়ে। রিক নীলের প্রতিটা পদক্ষেপ আমার জানা প্রয়োজন।

এমনকী ও যখন নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে বিশ্রাম করবে তখনও ও কী করছে তা আমাকে জানাতে হবে, টনি বলল।

টনি বিলকে আরও বলল, শোন তুমি আর নিকোলে একটা কাল্পনিক গল্প ফেঁদে চার্লস কেলসোর সঙ্গে দেখা করো। তাকে জানাবে যে নিকোলে কোনও এক কাগজের রিপোর্টার। সে চার্লসের সঙ্গে রিক নীলের সম্পর্কে কিছু আলোচনা করবে। রিকের একটা খোঁজ পেলে ওর সঙ্গী–সাথীদের খুঁজে বের করা কঠিন হবে না।

টনি খুব আফসোস করে বলল, কাল রিক তার ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেল আর জিন তার কোনও খোঁজ রাখতে পারলো না। হোপলেস।

টনি আর কোনও কথা না বাড়িয়ে ফোন ছেড়ে দিল। দিয়ে আবার ডায়াল করলো।

টনি জিজ্ঞাসা করল, হ্যালো জর্জেস? আমি টনি বলছি। শোন তোমাকে আর বিলের সঙ্গে দেখা করতে হবে না, আর শ্যানডনে কী এখনও কাজ চলছে?

জর্জেস বলল, ইয়েস স্যার। শ্যানডনে কোথাও কেবল ফল্ট হয়েছে। তার কাজ চলছে।

আচ্ছা এমিল কাছে আছে তো? টনি জিজ্ঞাসা করল।

হ্যাঁ ও চারদিকে নজর রাখছে।

একটা ধন্যবাদ জানিয়ে টনি জিজ্ঞাসা করল, চার্লস কেলসো নিজের কোয়ার্টারে আছে তো? বুঝতেই পারছ কেন এত প্রশ্ন করছি। কারণ হি ইজ দ্য ভাইটাল উইটনেস। হোলজাইমার না বললেও চার্লসের কাছ থেকেই আমাদের কথা বের করতে হবে।

জর্জেস বলল, স্যার, আমি নিজেও ওর উপর নজর রাখছি। আজ ও শ্যানডন হাউসের ডিরেক্টরের সঙ্গে লাঞ্চ করেছে। এখন তারই সঙ্গে এই চত্বরের মধ্যে কোথাও আছে। কদিন পরে এখানে কনফারেন্স হবে তারই প্রস্তুতি চলছে। বহুলোক কাজ করছে।

হ্যাঁ আমি জানি। তাই বলছি তুমি কিন্তু খুব সতর্ক থাকবে। টনি বলল।

 হা স্যার।

বিকেলের দিকে আমি ব্রাড জিলনকে নিয়ে শ্যানডন হাউসে যেতে পারি। একথা কাউকে বলতে হবে না, সিক্রেট।

না, স্যার আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।

 থ্যাঙ্ক ইউ।

 টনি ফোন রেখে দিল।

টনি পেন্টাগনের সিক্রেট ব্রাঞ্চে ব্রাডের অফিস ঘরে ঢুকলো। ব্রাড তাকে বসতে বলে জিজ্ঞাসা করল, তা তুমি কোথাও যাচ্ছ নাকি? কোন এনগেজমেন্ট আছে?

টনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, সে সময় আর পাচ্ছি কোথায় যে তদন্ত ফেলে ফুর্তি করব? তা ম্যারিয়েট–এর ঘটনার ব্যাপারে আর কোন খবর পাওয়া গেল?

ব্রাড বলল একটা সত্যি কথা তোমায় বলি, এখন আমার কাউকেই বিশ্বাস হয় না। এমন কী নিজেকেও মনে হয় মস্কোর লোক। কিছুই আর বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই ম্যারিয়েটের কথাই ভাবছি। এত সুন্দর নিরীহ চেহারা দেখলে ভক্তিশ্রদ্ধা হয়। সেকিনা বিশ্বাসঘাতকের কাজ করল! আমেরিকা তাকে কী না দেয়নি তবুও আরও অর্থের লোভে…

 এখন যা লেটেস্ট খবর তাহলে এই ম্যারিয়েটের মাধ্যমেই কেজিবি–র এজেন্টরা গোপন খবর পাচার করত।

টনি বলল, ব্রাড আমি কিন্তু সে কথা ভাবছিনা। আমি ভাবছি এই যে এত ঘটনা ঘটছে নিশ্চয়ই দেয়ার ইজ সাম নিউক্ৰিয়াস মানে একটা মধ্যমণি নিশ্চয়ই আছে।

ব্রাড বলল হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আর এই মধ্যমণি–কেবার করতে না পারলে আমাদের কোন কাজই সফল হবে না। তা তুমি এর কোন হদিশ পেয়েছ নাকি?

টনি একটু চিন্তিত ভাবে বলল, না ওটা এখনও ঠিক ধরতে পারছি না। তবে আমি যে কোন কাজ শেষ থেকে শুরু করি। প্রথমে হচ্ছে ন্যাটো মেমোরেন্ডাম ফঁস হলো। তার আগে ওটা টাইপ হলো। কোন মেসিনে টাইপ হয়েছে তার হদিস মিলল। মেশিনটা টমের কাছ থেকে চার্লস একদিনের জন্য ধার নিয়েছিল।

সুতরাং চার্লসের হাত থেকে মেমোরেন্ডাম ফাসহয়েছে। তাহলে চার্লসই হলো ওদের এজেন্ট। তবুও প্রশ্ন থেকে যায় এই রিকনামের ছেলেটি কে? ও ক্যুনিকেশন ডিপার্টমেন্টে ভালো মাইনের চাকরি করে অথচ আশ্চর্য ও নিউইয়র্কে চার্লসের সঙ্গে একই অ্যাপার্টমেন্টে থাকে। আবার কেটি কোলিয়ার নামের ওই রহস্যময় মেয়েটি সেও একই অ্যাপার্টমেন্টে থাকে। গোপন বোমা তৈরীর সঙ্গে ওর সম্পর্ক কী?

ব্রাড ওর কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে। টনি কী বলতে চাইছে তা আন্দাজ করার চেষ্টা করছে।

টনি বলল, তাহলে বুঝতেই পারছ চার্লস, রিক ও কেটি তিনজনের পরিচয় আছে।

 ব্রাড ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো।

টনি একটা চুরুট ধরিয়ে এক মুখ ধোয়া ছেড়ে বলল, এবার লেনেক্সি হসপিটালের ঘটনা ভাবো। একদল মাগারের হাতে কোনোভ আক্রান্ত হয়ে পুলিশের সাহায্যে হসপিটালে যায়। হাসপাতালে সে নিজের অজান্তে দুটো নাম উচ্চারণ করে এক ওলেগ দুই অ্যালেক্সি।

এখন কথা হল সেন্ট্রাল পার্কে এই দুজন ছিল কী? আমার মনে হচ্ছিল, পুলিশের কথা অনুযায়ী পার্কের বাইরে গাড়ি পার্ক করা ছিল। সেখানে তারা একজন মুস্কো জোয়ানের ছায়া দেখেছে। আর আরেক জন ইয়াংম্যান কোনোভের কাছাকাছি ছিল। পুলিশ তাকে সাহায্যের জন্য ডেকেছিল কিন্তু সে পালিয়ে গেছিল।

বরিস গেরস্কিকে আমি চিনি। লেনেক্সি হসপিটালে যে লোকটা বন্ধুকে খোঁজার নাম করে কোনোভের খোঁজে এসেছিল, পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী বরিস গেরস্কির সঙ্গে তার সাদৃশ্য আছে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে সেন্ট্রাল পার্কে কোনোভের সঙ্গে যে দুজন ছিল তাদের মধ্যে একজন ওলেগ, অন্যজন অ্যালেক্সি। এ বিষয়ে আমার আর কোন সন্দেহ নেই।

এবার আসছি রিক নীলে প্রসঙ্গে। ওর সম্পর্কে যতটুকু জানতে পেরেছি তা হল পূর্ব জার্মানীতে আমাদের একজন এজেন্ট সত্যিই ছিল যার নাম হাইনরিক নীলে। কিন্তু বর্তমানে এই রিক নীলের চেহারার সঙ্গে তার চেহারার কোন মিল নেই।

ব্রাড একেবারে অভিভূত হয়ে পড়ল।হাতের মার্টিনিটা এক নিঃশ্বাসে শেষ করে বলল, ওয়ান্ডার ফুল। ইউ আর জিনিয়াস উনি তুমি আমাকে একেবারে অবাক করে দিচ্ছ।

টনি একটু থেমে বলল, চার্লসের এই বন্ধু রিকনীলেকে আমরা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নিশ্চয়ই রাখতে পারি না।

ব্রাড বলল, অবশ্যই না।

তাহলে আমার মনে হয় সেন্ট্রাল পার্কে সেদিন যে দুজন ছিল তার একজন রিক নীলে হওয়া। অসম্ভব নয়।

ব্রাড ভেতরে ভেতরে খুব উত্তেজিত বোধ করছিল। বলল, তুমি ওলেগকে তো আইডেন্টিফাই করেছ। কিন্তু আরেকজন ব্যক্তি যে এই রিক নীলে তা আইডেন্টিফাই হবে কী করে?

টনি বলল, জর্জেস। ও বেশ কিছুদিন ইস্ট জার্মানীতে ছিল। ওর ইনফরমেশন অনুযায়ী ওয়াশিংটনে কেজিবির যে এজেন্ট কাজ করছে তার কোড নাম হল অ্যালেক্সি।

ব্রাড বলল, সত্যি আমার শুনতে শুনতে মনে হচ্ছে এ কোন মনের মত করে বানানো গল্প।

টনি বলল, আমি আমার নোক লাগিয়ে দিয়েছি এই দেখার জন্য যে অ্যালেক্সি আর রিক নীলে একই লোক কিনা। এই একটা কাজ আমার বাকি।

ব্রাড বলল, টনি তোমার কর্মকুশলতা ও বিচক্ষণতা সম্বন্ধে আমার গর্ব হয়। এবার মনে হয় আমরা এই ন্যাটো মেমোরেন্ডাম ফাসের একটা কিনারা করতে পারব। এটাই হবে আমাদের শ্রেষ্ঠ কাজ। তার আগে একবার চার্লসকে ভালো করে বাজিয়ে নিতে হবে।

টনি বলল, হ্যাঁ, সেইজন্য আমরা একবার শ্যানডন হাউসে যাবো। তা তোমার এখন কোন কাজ নেই তো?

ব্রাড বলল, না! তেমন কোন কাজ হাতে নেই। তোমার সঙ্গে যাওয়াটা যদি জরুরী মনে করো তো, আমার তোমার সঙ্গে যেতে এখন কোন অসুবিধা নেই।

টনি বলল, হ্যাঁ গেলে ভালো হয়।

ওকে–চলো।

.

শ্যানডন হাউসের লোহার দরজা যেন বর্ম পরা কোন সেপাই। দরজা সূর্যের আলোয় চকচক করছে। দরজায় সঙ্গীনধারী সেপাই।

একটি শান্ত, নির্জন প্রকৃতির কোলে পাহাড় ঘেরা অ্যাপলেটন ভিলার পাশে শ্যানডন হাউসের এই শ্বেত শুভ্র দুর্গের মত বিশাল চেহারা দেখে ব্রাড জিলন বলে উঠল…টনি দেখো, ঠিক যেন স্বর্গোদ্যান! তাই না! টনির এখন প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার মত অবস্থা ছিল না।

গাড়ি শ্যানডন হাউসের সামনে এসে দাঁড়াতেই পাহারারত সেপাই ছুটে এলো। ব্রাড নিজেকে। স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মকর্তারূপে পরিচয় দিল এবং প্রমাণ স্বরূপ কার্ড দেখালো।

ব্রাড সেপাইকে জিজ্ঞাসা করল, এখন সিকিউরিটি অফিসার কে?

সেপাই বলল, ম্যাকলেহোস স্যার।

ব্রাড বলল, তাকে খুব তাড়াতাড়ি ডেকে পাঠান।

এখুনি ডেকে আনছি স্যার, বলে সে ভেতরে চলে গেল।

এদিকে টনি ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। জিন প্যারাকিনি রিক নীলের উপর ঠিকমত নজর রাখতে পারছে তো? বিল আর নিকোলে চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করায় সফল হয়েছে তো? রিক নীলে গতরাতে বেড়িয়ে কোথায় গেছিল? কার সঙ্গে দেখা করতে গেছিল? আর একদিন মাত্র সময় আছে ব্রাসেলসে বৈঠক বসতে। মেমোরেন্ডাম কী মস্কোর আয়রন সেফে নিরাপদে পৌঁছে গেছে? টনির মাথায় নানা চিন্তা ঘোরাফেরা করছে।

ম্যাকলেহোস ছুটতে ছুটতে এসেবলল, আসুন স্যার আসুন। নিরাপত্তাকর্মীদের ইন–চার্জ হবার মত চেহারা ম্যাকলেহোসের নয়। একটু নাদুস নুদুস চেহারা।

ম্যাকলেহোস ভেবেছিল ব্রাড জিলন একাই এসেছে। তার পাশে টনিকে দেখে এক অজানা ভয়ে সে শিউরে উঠল। ব্রাড তা বুঝতে না পারলেও টনির চোখে সেটা ধরা পড়েছে। টনি নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না–তার এই ভয়ের কারণ! ম্যাকলেহোস যেদিন ডিউটিতে ছিল সেদিন ন্যাটোর মেমোরেন্ডাম হাত বদল হয়েছে। তাহলে কী ম্যাকলেহোস এর সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তাই বা কী করে হবে? পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী ম্যাকহোেসকে সন্দেহ করার কোন যুক্তি নেই।

 ম্যাকলেহোস ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। টনিকেও বলল, আসুন স্যার আসুন। টনি ও ব্রাড গাড়ি থেকে নেমে পড়ল।

ম্যাকলেহোস প্রহরীকে দরজা খুলে দিতে বলল। দুপাশে পাম গাছ আর মাঝে বাঁধানো রাস্তা। আধুনিক হাল ফ্যাশনের বাড়িগুলো দেখলে প্রাচীন রোমের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়।

ব্রাড চারিদিক দেখতে দেখতে অভিভূত হয়ে গেল। বলল, অপূর্ব!

কিছুদূর যাবার পর একটি প্রহরী ঘেরা বাড়ি দেখিয়ে ম্যাকলেহোস বলল, এখানেই সব কম্পিউটর মেশিন আছে। এখানে বিশেষজ্ঞরা কাজ করে থাকে। আপনারা ভিতরে যাবেন না কী?

টনি বলল, না না, আমরা সমস্তটা একটু ঘুরে দেখবো।

ম্যাকলেহোস বলল, তাহলে চলুন। কিছুদূর এগিয়ে একটা প্রাসাদের মত বাড়ি দেখিয়ে বলল এইখানে সাইমন শ্যানডন সাহেব থাকতেন। এখন এখানে বিশিষ্ট অতিথিদের থাকতে দেওয়া হয়। তা কেমন লাগছে আপনাদের?

টনি বলল, অতুলনীয়। টনির দৃষ্টি তখন শান বাঁধানো বড় দীঘির চারিদিকে অনেক লোক কাজ করছে সেদিকে।

ম্যাকলেহোস বলল, এই বাড়িগুলোর পিছনে একটাবড় হ্রদ আছে। সেখান থেকে এই দীঘিতে জল আসে। পাম্প করে জল বের করে দেওয়া হয়েছে। ওই দীঘির নীচ দিয়ে সব বৈদ্যুতিক তার গেছে। সেখানে বোধহয় কোন গণ্ডগোল হয়েছে তাই কনট্রাক্টররা কাজ করছে। আর ঐ যে বিরাট সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে ওখানে কনফারেন্স হবে।

ব্রাড টনিকে জিজ্ঞাসা করল, আমরা কোনদিকে যাবো?

টনি বলল, আমরা একটু চার্লস কেলসোরসঙ্গে দেখা করতে চাই। তার কোয়ার্টার কোন দিকে?

ম্যাকলেহোস বলল, আমি আজ ওকে দেখিনি। শুনেছি ডিরেক্টরের সঙ্গে লাঞ্চ সেরে তার সঙ্গে বাইরে যাবে। ওই পাহাড়ের দিকে তার কোয়ার্টার।

হঠাৎ দীঘির দিক থেকে একসঙ্গে অনেক লোকের চিৎকার ভেসে এলো। সবাইকে সেইদিকে ছুটে যেতে দেখা গেল।

ম্যাকলেহোস প্রায় লাফিয়ে উঠে, এক্সকিউজ মী বলে, সেইদিকে ছুটে গেল।

টনি ও ব্রাড কখন সেইদিকে হাঁটতে শুরু করেছে তা নিজেরাও টের পায়নি।

এদিকে টনি বিল ও নিকোলে কে দেখতে না পেয়ে অস্থির হচ্ছিল।

দীঘির কাছাকাছি যেতে তারা দেখলো সব লোক জলের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে।

তারা দেখলে দীঘিতে জলকমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিতরে বৈদ্যুতিক তারগুলো সাপের মত জড়িয়ে আছে। ওপাশে যেখানে জল খুব কম সেখানে একজন ভাসছে। মুখ দেখা যাচ্ছে না,কারণ মুখ জলের দিকে। টুইড জ্যাকেট পরা। দু–হাত দু–পাশে ছড়ানো।

ব্রাড আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল, এ কে?

ভয়ে ম্যাকলেহোসের কণ্ঠস্বর কেঁপে গেল। বলল, আমি সবাইকে সাবধান করে দিয়েছিলাম কেউ যেন ওদিকেনা যায়। মেন সুইচ অফ থাকলেও কনট্রাকটরদের মাঝে মধ্যেই বিদ্যুৎ চালিয়ে নিতে হচ্ছিল।

টনি কঠোর দৃষ্টিতে ম্যাকলেহোসকে দেখছিল। ম্যাকলেহোস থতমত খেয়ে থেমে গেল। টনির চোখ মুখ আরও কঠিন হয়ে গেল।

ব্রাড আবার জিজ্ঞাসা করল, ও কে?

 ম্যাকলেহোস বলল, আমার মনে হচ্ছে মিঃ কেলসো।

ব্রাড চকিতে ম্যাকলেহোসের দিকে ফিরে বলল, মানে চার্লস কেলসো!

ম্যাকলেহোস মৃদু মাথা নাড়লো।

টনির মুখ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গেল। বলল, তাহলে আপনি এতক্ষণ আমাদের বোকা বানিয়েছিলেন। মিথ্যে বলেছিলেন, তাই না?

ম্যাকলেহোস রীতিমত ভয় পেয়ে বলল, কেন স্যার?

টনি বলল, আপনি বলেছিলেন চার্লস কেলসো বাইরে গেছে, তাহলে ও এখানে এলো কী করে? প্লীজ মিঃ ম্যাকলেহোস আপনি সোজা কথা বলুন। কোনরকম কিছু ঢাকার চেষ্টা করবেন না। তাহলে আপনি ভীষণ বিপদে পড়বেন

ম্যাকলেহোস ভীষণ ভয় পেয়ে বলল, দেখুন স্যার, আমি সাধারণতঃ বাইরের নিরাপত্তা দেখি। ভিতরের নয়।

টনি বলল, তাহলে ভিতরের নিরাপত্তা কে দেখে?

 ম্যাকলেহোস আমতা আমতা করে বলল, ভিতরে চারদিকেই তো প্রহরা। তাই…

টনি ও ব্রাড নিজেদের মধ্যে কিছু আলোচনা করে নিল। তারপর ম্যাকলেহোসকে টনি জিজ্ঞাসা করল, চার্লস দীঘিতে নামতে গেল কেন?

ম্যাকলেহোস বলল, হয়তো তিনি কাজের তদারকি করতে এসেছেন। কোন কারণে বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে জড়িয়ে যান।

টনি বলল, আমরা একটু মেইন সুইচটা পরীক্ষা করে দেখতে চাই। কোন্ দিকে সেইটা?

ম্যাকলেহোস বলল, মেইন বিল্ডিং–এ। আসুন আমি নিয়ে যাচ্ছি।

টনি বলল, আমি একাই দেখে নিতে পারবো। পুলিশে ফোনও আমি করছি। আপনি মৃতদেহ তোলার ব্যবস্থা করুন।

.

১৪.

 অ্যাপলেটন প্রিসিঙ্কট–এর ফার্স্ট অফিসার ব্রাড জিলনকে একটা স্যালুট করে বিদায় জানালো। বলল, আমাদের দিক থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আপনার কথামত ম্যাকলেহোসকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ব্রাড সেডানে চেপে একেবারে ফেটে পড়ল, টনি আমরা এভাবেশয়তান গুলোকে ছেড়ে দিতে পারি না। তারা এইভাবে একের পর এক মানুষ মারবে! আমি ভেবে পাচ্ছি না, টমকে কিভাবে সান্ত্বনা দেব

টনি বলল, ওরা একের পর এক সাক্ষীকে মেরে ফেলছে। চার্লস আমাদের শেষ ভরসা ছিল।

টনি ও ব্রাড দুজনেই চিন্তাক্লিস্ট।অ্যাপলেটন থেকে নিউইয়র্কের দিকে সেডান ছুটে চলেছে।

অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকার পর উনি বলল, ব্রাড, আমি যে মেইন সুইচ দেখতে চেয়েছিলাম সেটা আমার আসল উদ্দেশ্য ছিল না।

ব্রাড বলল, তাহলে?

আমি আসলে ম্যাকলেহোসের অফিস ঘরটা দেখতে গেছিলাম। ওই লোকটাকে আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল। পুলিশ জেরা করে হয়তো আরো অনেক কথা বার করতে পারবে। আমি যা দেখেছি সেই সম্বন্ধে পরে পুলিশকে জানাবো।তারআগে আমার লোকজনকে খুঁজে বের করতে হবে। ওরা হয়তো রিক নীলের পিছনে ছায়ার মত ধাওয়া করছে।

ব্রাড বলল, কিন্তু টনি তুমি ম্যাকলেহেঁসের অফিস ঘরে কি এমন দেখলে যা সন্দেহজনক?

টনি বলল, একটা বিছানা। যা অফিস ঘরে কখনোই শোভা পায় না।

ব্রাড বলল, কী বল? অফিস ঘরে বিছানা!

টনি বলল, এটাই আশ্চর্য, মনে হয় এই ঘরেই কাজ হয়েছে।

ব্রাড বলল, তাহলে তুমি এখনি পুলিশকে সব জানিয়ে ওকে অ্যারেস্ট করলে না কেন? ওকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করতে বললে, আর বেশী হৈ চৈ না হয় তা দেখতে বললে।

টনি বলল, আমি আসল শয়তানকে ধরতে চাইছি।

ম্যারিয়েটকে যারা খুন করেছে, তারাই চালসকে খুন করেছে। টনি বলল,ব্রাড তুমি লক্ষ্যকরেছ চার্লসের দেহে আপাতদৃষ্টিতে কোন ক্ষত চিহ্ন নেই। ম্যারিয়েটের দেহেও ছিল না। সবই একই পদ্ধতিতে হয়েছে।

ব্রাড জানতে চাইল। পদ্ধতিটা কি?

টনি বলল, ইঞ্জেকশন। আর এই কাজটা হয়েছে ম্যাকলেহোসের ঘরে। এই কাজে এক্সপার্ট একজন, বরিস গেরস্কি।

ব্রাড উত্তেজিত হয়ে বলল, এখানেও সেই গেরস্কি!তাহলে সে ম্যাকলেহোসকে হাত করেছে।

 টনি বলল, হ্যাঁ এটাই জানতে হবে ম্যাকলেহোস কিভাবে এর মধ্যে জড়িয়ে পড়ল।

ব্রাড বলল, তাহলে বলতে হবে এখন শ্যানডন হাউসে নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই।

টনি উত্তেজিত হয়ে পড়ল, যাই হোক আর এভাবে চলছেনা, এভাবে তাদের আর ছেড়ে দেওয়া চলবে না। দরকার হলে ওলেগ আর অ্যালেক্সি যেই হোক বিনা প্রমাণে তাদের অ্যারেস্ট করতে। হবে। ব্রাড একটু চিন্তিত ভাবে বলল, কিন্তু টনি, তুমি ওদের পাচ্ছো কোথায়?

টনি বলল, না আমার লোকজন সর্বদা ওদের চোখে চোখে রাখছে। কেবলমাত্র হাতে প্রমাণ, পাচ্ছি না বলে ওদের এখনও ছেড়ে রেখেছি।

পেন্টাগনের বাড়ির সামনে সেডান আসতেই একজন লোক ছুটতে ছুটতে এসে টনিকে বলল, একজন জর্জেস নামে লোক আপনাকে ফোনে চাইছিল। আমি তার ফোন নাম্বার চাইতে সে বলল প্রয়োজন নেই আপনাকে বললেই আপনি সব বুঝতে পারবেন।

টনি প্রায় ছুটতে ছুটতে অফিস ঘরে চলে গেল। হাতের সামনে যে ফোন পেল সেটাই তুলে নিয়ে নির্দিষ্ট নাম্বারে ডায়াল করল। ওপাশ থেকে জর্জেসের কণ্ঠস্বর আসতেই টনি রাগে ফেটে পড়ল। তোমরা সব মরে গেছিলে নাকি? জিন কী হাওয়া লাগাতে বেড়িয়েছে। নিকোলে কী করছিল? ব অপদার্থ, ননসেন্স।

ওপাশ থেকে জর্জেস চুপচাপ সব শুনে বলল, আমি আপনার রাগের কারণ বুঝতে পারছি স্যার। কিন্তু আমাদেরও কিছু বলার ছিল।

টনি সেই উত্তেজিত ভাবেই বলল, তা চুপ করে আছ কেন? বল কী বলার আছে?

জর্জেস বলল, বিল আর নিকোলে আপনার কথা মতই চার্লসের সঙ্গে দেখা করেছিল। চার্লসের ঘরে যখন তারাবসেকথা আরম্ভ করতে যাচ্ছে এমন সময় ফোন বেজে ওঠে। ফোন তুলেই তারপর চার্লস ক্ষিপ্র বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। বিল তাকে অনুসরণ করে দেখে। চার্লস ম্যাকলেহোসের অফিস ঘরের দিকে ছুটে চলে গেল। তারপর চার্লস বেপাত্তা হয়ে যায়। তারা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে চলে আসে।

আর জিন রিকনীলের পিছনে ফলো করে। রিক শ্যানডন হাউসের দিকেই আসছিল। তারপর হঠাৎ নিজের গাড়িতে উঠে টাউনের দিকে রওনা হয়। জিনও ওকে ফলো করতে থাকে।

টনি বলল, ম্যাকলেহোস, ওই শয়তানের পক্ষে। আর জিন এখন কোথায়?

 জর্জেস ফিসফিস করে বলল, আমার মনে হয় স্যার ওদের আরো কিছু মতলব আছে।

টনি চেঁচিয়ে উঠল, সব ভণ্ডুল করতে হবে। এখন তুমি কোন্ মতলব এর কথা বলছ?

জর্জেস বলল, চার্লস কেলসোর খবর তো আপনি জানেন স্যার। পুলিশ টম কেলসোকেও ডেকে পাঠিয়েছে।

উনি বলল, ওহ পুলিশ তাহলেটমকে খবরটা জানিয়েছে। যা ভালোই হল, আমরা ভাবছিলাম কীভাবে টমকে এই খবরটা জানাবো! ভেরি স্যাড়।

জর্জেস জানালো, চার্লসের কোয়ার্টারে যে সব জিনিস পত্র ছিল তা টমের ওখানে পুলিস পাঠিয়ে দিয়েছে শুনলাম।

উনি বলল, জিন এখন কোথায়?

জর্জেস বলল, ওর খবর এখনো পাইনি। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে যাবে। স্যার, একটু ধরুন ওঘরে ফোন বাজছে। আপনি লাইন ছাড়বেন না আমি দেখে আসছি।

ব্রাড টনির পাশেই ছিল, বলল এবার মনে হয় আমাদের হোলজাইমারের দিকে নজর দেওয়া দরকার। ন্যাটোর মেমোরেন্ডাম সংক্রান্ত ব্যাপারের ওই এখন একমাত্র জীবিত ব্যক্তি।

টনি বলল, হ্যাঁ তুমি ঠিকই বলেছ। আজই এফ বি আই–এর সঙ্গে যোগাযোগ করে ওকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করো।

এদিকে ফোনে আবার জর্জেসের কণ্ঠস্বর শোনা গেল, হ্যালো স্যার, সেন্ট্রাল পার্কে যেখানে কোনোভের ঘটনা ঘটেছিল সেখানে রিক এবং গেরস্কি নামের যে দুজনের কথা বলেছিলেন, হতে পারে সেই লোকটি এবং সঙ্গে একটি মেয়ে।

টনি উত্তেজনায় কেঁপেউঠল, জর্জেস তুমি লোজন নিয়ে তৈরী থাকো। আমার মনে হচ্ছে, যতদূর সম্ভব ঐ মেয়েটি কেটি কোলিয়ার। আমি তোমার ওখানে যাচ্ছি, জিনকে জানিয়ে দাও ও যেন ওখানেই থাকে, আমরা গিয়ে পৌঁছচ্ছি। এবার আমাদের সুযোগ এসেছে। টনি নিজের হাত ঘড়িটা দেখে নিল, ব্রাডকে বলল, এখন সাড়ে আটটা বাজে আমি বেরিয়ে পড়ছি। তুমি এখানেই থাকো আমার ফোনের জন্য অপেক্ষা করবে। হোলজাইমারের ব্যবস্থা করবে।

১০. গাড়ির দরজা খুলে

১০. গাড়ির দরজা খুলে

গাড়ির দরজা খুলে মাটিতে লাফিয়ে নেমেই আবার চেঁচাল কিশোর, পালাও!

একপাশে আগুন ধরেছে গাড়ির, ভাগ্য ভাল, ওদের কিছু হয়নি। মথা নিচু করে ছুটে পালিয়ে যেতে লাগল দুজনে গাড়িটার কাছ থেকে। ছুটতে ছুটতেই একবার ফিরে তাকিয়ে কিশোর দেখল, লাল আর কমলা রঙের আগুন দাউ দাউ করে উঠছে ওপরে। কুণ্ডলী পাকিয়ে রাতের আকাশে উঠছে কাল ধোয়া। আতঙ্কিত মেহমানরা এদিক সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেছে।

গেছিলাম আরেকটু হলেই! গলা কাঁপছে রবিনের।

ট্যাক রুম থেকে দৌড়ে বেরোল লুক বোলান, হাতে একটা ফায়ার এক্সটিংগুইশার। পথ থেকে চিৎকার করে লোকজনকে সরিয়ে দিতে লাগল, সরুন, সরে যান! গাড়ির কাছে গিয়ে যন্ত্র থেকে রাসায়নিক পদার্থ ছিটাতে লাগল আগুনের ওপর। চেঁচিয়ে নির্দেশ দিল কয়েকজন শ্রমিককে। জ্বলন্ত গাড়িটার কাছে এগিয়ে আসছিল ওরা।

কিশোর! রবিন! চিৎকার করতে করতে ছুটে এল মুসা। তোমরা ভাল আছ?

আছি, জবাব দিল রবিন।

 কি হয়েছিল? উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইল মুসা।

বলতে পারব না, বিহুলের মত মাথা নাড়তে লাগল কিশোর। আরেকটা আগুন নেভানর যন্ত্র নিয়ে দৌড়ে আসতে দেখল ব্রডকে। বাগানে পানি দেয়ার মোটা একটা হোসপাইপ এনে পানি ছিটাতে শুরু করল জন।..

গ্যাস পেডালে চাপ দিতেই কি যেন গড়বড় হয়ে গেল, আবার বলল কিশোর। বোমাটোমাই হবে!

তিন গোয়েন্দার দিকে দৌড়ে এল লিলি। পেছনে রয়েছেন কেরোলিন।

তোমরা…ভাল আছ? হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করল লিলি।

আছি, জবাব দিল কিশোর।

কপাল ভাল আরকি তোমাদের। কেন এমন হলো কিছুই তো মাথায় ঢুকছে না। বিকেলে যখন গাড়িটা নিয়ে দোকানে গিয়েছিল ব্রড তখনও তো ভাল ছিল।

তারপর আর কেউ চালিয়েছে?

মাথা নাড়ল লিলি। না। চাবি আমার কাছেই এনে দিয়েছিল সে।

কমে এসেছে আগুন। সেদিকে তাকিয়ে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। মনে হয় কেউ বোমা লাগিয়ে রেখেছিল।

সর্বনাশ! কে তোমাকে মারতে চাইল?

আমাকে নয়, ধীরে ধীরে বলল কিশোর, তাকে, যে সব সময় গাড়িটা চালায়।

চালাই তো আমি, চমকে গেছে লিলি, কিন্তু…

তাহলে আপনাকেই মারতে চেয়েছে।

ও মাই গড! চোখ বন্ধ করে ফেলল লিলি।

পোড়া গাড়িটার দিকে হাত তুলে রবিন বলল, মারতে যে চেয়েছে ওটাই তার প্রমাণ।

মুসা বলল, বেপরোয়া হয়ে গেছে লোকটা।

 পুলিশকে ফোন করা দরকার, কিশোর বলল।

গাড়িটাকে জ্বলতে দেখেই করে দিয়েছি আমি, কেরোলিন বললেন। দমকলকেও করেছি। এসে যাবে।

কয়েক মিনিট পর সাইরেন শোনা গেল। দমকলের একটা ট্রাক আর শেরিফের একটা গাড়ি ঢুকল চত্বরে। লাফিয়ে মাটিতে নেমে পোড়া গাড়িটার দিকে ছুটল দমকল কর্মীরা। শেরিফের গাড়ি থেকে নামল গোয়েন্দারা। যাকে সামনে পেল তাকেই প্রশ্ন করতে লাগল।

হ্যারিসন ফোর্ড নামে একজন লালমুখো ডেপুটি জিজ্ঞেস করলেন লিলিকে, গাড়িটার কাছে কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছ?

না…ব্রডকে দেখে থেমে গেল লিলি।

ব্রড এসে বলল, গাড়িটা নিয়ে বিকেলে শহরে গিয়েছিলাম। আসার পর ওখানেই রেখেছিলাম।

চালানর সময় কোন গোলমাল করেনি? জিজ্ঞেস করলেন ফোর্ড। টের পাওনি?

না, একটুও না, ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ব্রডের মুখ।

বাজি দিয়ে একাজ করা হয়েছে, ডেপুটির কাছে এসে দাঁড়াল একজন দমকল কর্মী। হাতে একটা কালো খোসা। গাড়ির নিচে লম্বা ফিউজ লাগিয়ে মাথায় জুড়ে দেয়া হয়েছিল বাজিটা। ইঞ্জিনের গড়িয়ে পড়া তেলে লেগে আগুনটা ধরেছে।

তার মানে অ্যাক্সিডেন্ট নয়? আতঙ্কিত স্বরে জিজ্ঞেস করল লিলি।

মাথা নাড়ল লোকটা। না। আমার তা মনে হয় না। ওখানে এভাবে বাজি যাবে কি করতে?

কিশোরের দিকে তাকাল লিলি, কিশোর, আর দরকার নেই। তদন্ত বাদ দাও। আর কোন ঝুঁকি নিতে দেব না তোমাদের।

তদন্ত? ভুরু কোঁচকালেন ডেপুটি। কিসের তদন্ত?

হারানো ঘোড়াটার কথা বলল লিলি।

নাক দিয়ে শব্দ করলেন ফোর্ড। ওটা এমন কোন ব্যাপার নয়। মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে পালায় ঘোড়ারা।

কিশোর বলল, আমার ধারণা ওটা চুরি হয়েছে।

 ভোতা গলায় ব্রড বলল, সেটা প্রমাণ করতে পারবে না।

পারব। মিলির দিকে তাকাল কিশোর। এখন থেকে খুব সাবধানে। থাকবেন। ভয়ানক শত্রু আছে এখানে আপনার। ওরা আপনাকে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করবে না।

না, কি যে বলো? আমাকে কেউ মারবে না।

সব কথা লিখে নিচ্ছেন ডেপুটি। নোটবুকের দিকে তাকিয়ে বললেন, একজন। মেহমানের কাছে শুনলাম, একটু আগে ব্যাংকের একজন লোক এসে হুমকি দিয়ে গেছে তোমাকে?

ফিলিপ নিরেক আর হারনি পাইকের কথা বলল লিলি। লিখে নিলেন ডেপুটি। কয়েক মিনিট পর চলে গেলেন অন্যদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। আরেকজন ডেপুটি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে আস্তাবল আর বাড়িতে।

তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরে লিলি বলল, তোমাদেরকে এতে জড়িত করে ভাল করিনি আমি। তোমরা আমার মেহমান। মেহমানের মতই থাকো এখন। থেকে। ওসব তদন্ত-ফদন্ত বাদ দাও।

অসম্ভব! জোর গলায় বলল কিশোর। এত কিছুর পর আর চুপ থাকতে পারব না আমি। এর একটা সুরাহা করেই ছাড়ব। বুঝতে পারছেন না কেন মরিয়া হয়ে উঠেছে শয়তানটা? আমরা অনেক এগিয়ে গেছি, বুঝে ফেলেছে সে। তার। জারিজুরি ফাঁস হওয়ার পথে।

কিন্তু ভয়ঙ্কর লোক ও, জোরে নিঃশ্বাস ফেলল লিলি। আমার জন্যে তোমরা কেন মরতে যাবে? সমস্যাটা আমার, তোমাদের নয়। তোমরা ছুটি কাটাতে এসেছ, ছুটি কাটাও।

বললামই তো, এর পর আর থেমে থাকতে পারব না আমি। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ইউনিকর্নের চোর। যেভাবেই হোক ঠেকাতে চাইছে এখন, যাতে ধরা না, পড়তে হয়। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।

পোড়া গাড়িটার কাছে গিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছে একজন ডেপুটি। সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিলি বলল, বেশ। বাধা দেব না। তবে খুব সাবধান। দয়া করে আর বদনাম করো না আমার!

***

পরদিন সকালে এসে ভাল করে পোড়া গাড়িটাকে দেখল কিশোর, যদি কোন সূত্রটুত্র পেয়ে যায় এই আশায়। পেল না। সেরাতে মেহমানদের ক্যাম্পিঙে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কাজেই সারাটা দিন জিনিসপত্র গোছগাছ আর পশ্চিমের পাহাড়ে ইউনিকর্নকে খুঁজে বেড়াল তিন গোয়েন্দা।

কোন চিহ্ন পেল না।

বিকেলে বাড়ি ফিরে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে আবার বেরোনোর জন্যে তৈরি হলো ওরা।

 দল বেঁধে বেরিয়ে পড়ল মেহমানেরা। পাহাড়ের ভেতরে নদীর ধারে ছোট এক চিলতে খোলা জায়গায় ক্যাম্পিঙের ব্যবস্থা হয়েছে।

উফ, এক্কেবারে ব্যথা হয়ে গেছে শরীর, ঘোড়ার পিঠ থেকে বেডরোল নামাতে নামাতে বলল রবিন। টেনে নামাল জিনটা। সারাটা দিন ঘোড়ার পিঠে থেকে থেকে একেবারে শেষ হয়ে গেছি।

হাসল মুসা। বাড়ি গিয়ে একবারে ঘুমিও। এখানে মজার জন্যে এসেছ মজা। লোট। রাতে পাহাড়ে কাটানর মজাই আলাদা। আগুনের ধারে বসে সাওয়ারডো বিস্কুট খাওয়া, গল্প করা, তারপর কম্বলের তলায় গুটিসুটি হয়ে পড়ে থেকে নানারকম শব্দ শোনা, নিশাচর পাখি আর জন্তু জানোয়ারের ডাক, বাতাসের। ফিসফিসানি, নদীর কূলকুল….

বাপরে! একেবারে কবি হয়ে গেলে দেখি?

মালপত্রগুলো নিয়ে গিয়ে মাটিতে ছড়িয়ে থাকা পাইন নীডলের ওপর রাখল দুজনে। কিশোরও তারটা নিয়ে গিয়ে রাখল ওদেরগুলোর পাশে। আশেপাশে জটলা করে রয়েছে পাইন গাছ।

এজটার পরিবার আর কয়েকজন মেহমানকে নিয়ে ক্যাম্প সাজায় লাগল ব্রড। কাপলিংকে নিয়ে তিন গোয়েন্দা আগুন জ্বালানোর জন্যে শুকনো কাঠ জড় করতে লাগল।

মিসেস ব্যানার সাফ মানা করে দিল, কোন কাজ করতে পারবে না। একটা গাছের গুঁড়িতে গিয়ে বসে বলল, আমি এখানে এসেছি আরাম করতে, কাজ করতে নয়।

এটা কাজ নয়, ঘোড়া বাধতে বাঁধতে বলল লুক, মজা।

থাকো, হাত উল্টে জবাব দিল মিসেস ব্যানার, ওরকম মজার আমার দরকার নেই।

মুচকি হাসল রবিন। নিচু গলায় বলল, স্বামী বেচারাকে নিশ্চয় জ্বালিয়ে খায় মহিলা।

মাথা থেকে চাপড় মেরে একটা মাছি তাড়াল মুসা। বলল, মহিলা ঠিকই। করছে। কে যায় অত কাজ করতে?

তাহলে গিয়ে বসে থাক মহিলার সঙ্গে..

মিসেস ব্যানার বলছে, জঙ্গলের মধ্যে রাত কাটান! দূর! ভাল লাগবে বলে মনে হয় না। আছে তো যত হতচ্ছাড়া জিনিস, বোলতা, মাছি, মশা, কয়োট! ঈশ্বরই জানে, আরও কি কি আছে!

মুখ তুলে রবিন বলল, অনেক কিছু আছে। কুগার, ভালুক, নেকড়ে।

মুসা বলল, যা খুশি থাকুক। হাতি-গুণ্ডার থাকলেও আপত্তি নেই আমার, ভূত না থাকলেই হল…

বলে কি! আঁতকে উঠল মহিলা, ভূতও আছে নাকি! বাপরে! তাহলে বাপু আমি এখানে নেই! সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারব না!

হেসে আবার নিচু গলায় মুসাকে বলল রবিন, যাও, একজন দোসর পেলে।

তাড়াতাড়ি কিশোর বলল, আরে না না, ভূত বলে কিছু নেই। অহেতুক ভয় পাচ্ছেন…

তুমি কিচ্ছু জান না, রেগে গেল মহিলা। কিশোর যে ওদের মানিব্যাগ চুরি করেছে, কথাটা ভুলতে পারেনি মিসেস ব্যানার। সেই যে সেবার, গিয়েছিলাম আমাদের বাড়ির কাছের এক বনে, রাতে থাকতে। তারপর…

হয়েছে কাজ! বলল কিশোর, শুরু হল এবার ভূতের গল্প। চলো, পালাই।

সবাই মিলে কাজ করল, মিসেস ব্যানার ছাড়া। ক্যাম্প করল, আগুন জ্বালল, রান্না করল। ডিনারের পর বাসনপেয়ালা কে ধোবে এটা নিয়ে কথা উঠল। সমাধান করে দিলেন মিস্টার এজটার। টস করা হোক। টসে তাঁরই ওপর দায়িত্ব পড়ল ধোয়ার। কিছুই মনে করলেন না তিনি। শার্টের হাতা গুটিয়ে কাজে লেগে গেলেন। নিজের ইচ্ছেতেই স্বামীকে সাহায্য করতে গেলেন জেনি এজটার।

থালাবাসন ধুতে ভালই লাগে আমার, কিশোরের চোখে চোখ পড়তেই হেসে বললেন মহিলা।

খাওয়ার পরেও কাজ আছে অনেক। সেগুলো করতে লাগল সবাই। বলা বাহুল্য এবারেও মিসেস ব্যানার কিছু করলেন না। রেগে গিয়ে মুসা বলল, বেটিকে খেতেই দেয়া উচিত হয়নি।

চুপ! শুনবে! থামিয়ে দিল ওকে রবিন।

বনের ভেতর লম্বা হতে লাগল ছায়া। গিটার বের করল ব্রড। সাঁঝের গান ধরল ঘরেফেরা পাখিরা, শান্ত একটানা সুরে কুলকুল করে চলেছে পাহাড়ী নদী। গাছের ডালে ডালে ফিসফিস করে গেল একঝলক হাওয়া। গোধূলির আকাশে প্রথম তারাটা মিটমিট করতে দেখল কিশোর।

রাত নামল। আগুনের লাল আলো বিচিত্র ছায়া সৃষ্টি করল। চাঁদ উঠল একটু পরেই। উজ্জ্বল জ্যোৎস্নার বন্যায় ভেসে গেল যেন বন, পাহাড়, নদী। মুসার মনে হতে লাগল, ডালপাতার ফাঁকফোকর দিয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে গলে পড়ছে হলুদ আলো।

আরেক কাপ করে কফি সরবরাহ করা হল, আর কেরোলিনের তৈরি চমৎকার ওটমিল কুকির একটা করে প্যাকেট।

 যাই বল, রাতটা বড় সুন্দর, কফিতে চিনি মেশাতে মেশাতে বলল মুসা। আসনপিড়ি হয়ে বসেছে আগুনের ধারে।

কয়েক মিনিট পরে হাতমুখ ধোয়ার জন্যে আঁকাবাকা বুনো পথ ধরে নদীতে চলল কিশোর আর মুসা। সাথে টর্চ নিয়েছে কিশোর। আগে আগে নেচে নেচে চলেছে তার টর্চের আলো।

হঠাৎ আলো নিভিয়ে দিয়ে মুসার বাহুতে হাত রাখল সে। চুপ থাকার ইঙ্গিতটা। বুঝতে পারল গোয়েন্দা সহকারী। দাঁড়িয়ে গেল দুজনেই। শব্দ করল না।

গাছের ফাঁক দিয়ে দেখল ওরা, একটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলছে ব্রড জেসন। ডালের ফাঁক দিয়ে এসে পড়া জ্যোৎস্নায় মেয়েটার চুল রুপালি লাগছে। বেনি কুপারকে চিনতে অসুবিধে হলো না ওদের। এখানে কি করছে সে? তাকে আসতে দাওয়াত করা হয়নি।

মুসার হাতে আলতো চাপ দিয়ে পা টিপে টিপে এগোল কিশোর। পাইন। নীডল ঢেকে দিল তার জুতোর শব্দ। কান খাড়া করে আছে। কিন্তু ক্যাম্পের কথাবার্তা আর নদীর গুঞ্জনে দুজনের কথা ঠিকমত শুনতে পেল না। বেনির বলা কয়েকটা শব্দ বুঝতে পারল, হারিকেন, রোডিও।

বেশি ভাবছ, ব্রড বলল। বেনির কাঁধ চাপড়ে দিল।

দম বন্ধ করে রেখে আরও কয়েক পা এগোল কিশোর। গাছের আড়াল থেকে সামনে মাথা বের করে দিল। …আমার খারাপ লাগতে শুরু করার আগেই চলে যাও, ব্রডের কথা শোনা গেল। আর দাঁড়াল না সে। গাছপালার ভেতর দিয়ে ছুটে চলে গেল।

বেনির পিছু নিল কিশোর। আশা করল, ইউনিকনের কাছে তাকে নিয়ে যাবে। মেয়েটা। ওটার পিঠে চড়েই এল নাকি?

নদীর সরু অংশে একটা গাছ পড়ে আছে আড়াআড়ি, সাঁকো তৈরি করে দিয়েছে। সেটা দিয়ে নদী পেরিয়ে ওপারে চলে গেল বেনি। ইউনিকর্ন নয়, অন্য একটা ঘোড়া নিয়ে এসেছে সে। সেটার পিঠে চেপে রওনা হয়ে গেল ওদের র‍্যাঞ্চটার দিকে।

আবার মুসার কাছে ফিরে এল কিশোর।

কিছু দেখলে? জানার জন্যে অস্থির হয়ে আছে মুসা।

তেমন কিছু না। কথাও ঠিকমত শুনতে পারলাম না। তবে যা মনে হল, অনেক কথা চেপে রেখেছে ব্রড আর বেনি। রোডিও খেলা আর হারিকেনকে নিয়ে। আলোচনা করছিল ওরা।

জানতাম! যত শয়তানী ওদেরই।

প্রমাণটমাণ থাকলে এখন ধরতে পারতাম, নিজেকেই যেন বলল কিশোর।

ক্যাম্পে ফেরার পথে দেখা হয়ে গেল রবিনের সঙ্গে। ওদের দেরি দেখেই দেখতে আসছিল কিছু হলো কিনা। বলল, লুক আমাকে পাঠিয়েছে দেখার জন্যে।

চলতে চলতে সব কথা তাকে জানাল কিশোর।

পাইক আর নিরেকের ব্যাপারটা কি তাহলে? রবিনের প্রশ্ন। ওরাও কি ব্রড আর বেনির সঙ্গে জড়িত? নাকি ওদের সঙ্গে এরা দুজন গিয়ে হাত মিলিয়েছে?

জানি না, আসলেই কিছু বুঝতে পারছে না কিশোর। ওই ঘোড়া চুরির ব্যাপারে হয়ত কিছুই জানে না পাইকেরা। ব্রড আর বেনিই করেছে।

তবে মোটিভ দুই দলেরই আছে। হতে পারে, না জেনেই একদল আরেক। দলের সাহায্য করে চলেছে।

এর মানে, মুসা বলল, ব্রড আর বেনি দুজনেই চাইছে লিলি রোডিওতে যোগ দিতে না পারুক, যাতে বেনির জেতাটা নিশ্চিত হয়…

কিংবা নিরেক আর পাইক চাইছে, রবিন বলল, গোলমাল বাধিয়ে দিয়ে লিলিকে সরাতে, যাতে র‍্যাঞ্চটা ওরা দখল করতে পারে।

কিশোর কিছু বলছে না। চিমটি কাটছে নিচের ঠোঁটে।

ওদেরকে দেখে লুক বলল, অনেক দেরি করে ফেললে। দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইল চোখে সন্দেহ নিয়ে। তারপর বলল, রাত হয়েছে। এবার শুতে যাও।

স্লীপিং ব্যাগটা যেখানে রেখেছিল সেখানে পেল না কিশোর। টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে খানিক দূরে, গাছের জটলার ভেতরে। আশ্চর্য! বিড়বিড় করল,

কি? জিজ্ঞেস করল মুসা।

আমার স্লীপিং ব্যাগ। মালপত্র থেকে খুলে নিয়ে গিয়ে ওখানে ফেলে রেখেছে।

ভুলে নিজের মনে করে কেউ খুলেছিল হয়ত। চলো, নিয়ে আসি।

চলো।

ব্যাগ তোলার জন্যে হাত বাড়িয়েই থমকে গেল কিশোর। পরিচিত একটা শব্দ। তবে কোথায় শুনেছে ঠিক মনে করতে পারছে না। ছোট ছোট নুড়ি থলেতে রেখে ঝাঁকালে যেমন শব্দ হয় অনেকটা তেমনি।

ধুকধুক করছে তার বুক। কি আছে ব্যাগের ভেতরে? খুব সাবধানে ব্যাগটা খুলে দুই কোণ ধরে উপুড় করল, ঝাঁকি দিল জোরে জোরে।

ভেতর থেকে পড়ল একটা সাপ। মাটিতে পড়েই হিসহিস করে ফণা তুলল। ছোবল মারার জন্যে। মারাত্মক বিষাক্ত র‍্যাটল স্নেক।