৮. বেরোলে ঝুঁকিটা বেশি

বেরোলে ঝুঁকিটা বেশি হয়ে যাবে, গান গাওয়া ডাক্তার বলল। অনুষ্ঠানটা নির্ভেজাল রাখতে হবে। অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে আমাদের এখানে।

বুড়ো হতে হতে কুঁচকে গেছে শামানের মুখের চামড়া। যেতে পারছে না বলে সত্যিই দুঃখিত, এটা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না তিন গোয়েন্দার। কিন্তু তার এই দুঃখিত হওয়ায় মিস্টার মিলফোর্ডের কোন উপকার হচ্ছে না।

তোমরা এখানে থেকে গেলেই ভাল করবে, পরামর্শ দিলেন মোড়ল ডুম সবল। কাল গাড়িতে করে দিয়ে আসা যাবে তোমাদের।

আজই যেতে হবে আমাদের, রবিন বলল। আমার বাবা নিশ্চয় ভীষণ বিপদে পড়েছে।

বিশাল এলাকা এটা, মোড়ল বলল। কল্পনাও করতে পারবে না কতটা বড়। ডায়মণ্ড লেক কি করে খুঁজে বের করবে?

রাস্তা ধরে যাব, মুসা জবাব দিল।

চল্লিশ মাইল হাঁটতে হবে তাহলে।

 চল্লিশ মাইল! ঢোক গিলল মুসা।

নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। স্থির দৃষ্টিতে মোড়লের দিকে তাকিয়ে রইল এক মুহূর্ত। বলল, আপনাদের একটা পিকআপ ভাড়া নিতে পারি আমরা।

গাঁয়ে আসার পর এই প্রথম উজ্জ্বল হলো রবিনের মুখ। এই না হলে কিশোর পাশা! আসল কথাটা ঠিক তার মাথায় এসে যায়। অথচ এই সহজ কথাটাই মনে। পড়েনি রবিন কিংবা মুসার।

তাড়াতাড়ি রবিন বলল, আমাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে।

টাকাও আছে, বলতে বলতে পকেট থেকে টাকা বের করে ফেলল রবিন। ডায়মণ্ড লেকে গিয়ে খরচ করার জন্যে রেখেছিল। ভাড়া দিতে পারব।

আপনি যেখানে রেখে যেতে বলবেন, আমাদের কাজ শেষ হয়ে গেলে সেখানেই রেখে যাব গাড়িটা, কিশোর বলল। খুব যত্ন করে চালাব, কিচ্ছু নষ্ট করব না। এই যে নিন, আমাদের কার্ড। লোকে আমাদের বিশ্বাস করে রকি বীচে। একটা উপকার চাইছি, করবেন না?

একটা করে তিন গোয়েন্দার কার্ড মোড়ল আর শামানের হাতে গুঁজে দিল কিশোর।

কার্ডটার দিকে তাকিয়ে রইলেন মোড়ল। শামান তাকালেনও না, তুলে দিলেন জনের হাতে। জোরে জোরে পড়ল জন।

মাথা নেড়ে মোড়ল বললেন, প্রস্তাবটা ভাল মনে হচ্ছে না।

ভ্রূকুটি করল গান গাওয়া ডাক্তার। তা ঠিক। তবে তাতে কোন ক্ষতি হবে না। প্রশংসার দৃষ্টিতে ছেলেদের দিকে তাকাল শামান। ঘোলা হয়ে আসা চোখে বুদ্ধির ঝিলিক। এই তিনজন এমনিতেই চলে যাচ্ছে, থাকছে না, যা নিতে চায়। দিয়ে দিতে পারি আমরা।

ঠোঁট গোল করলেন মোড়ল। ব্যাপারটা তার পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু শামানের সিদ্ধান্তের ওপর কথাও বলতে পারেন না। বললেন, বেশ, ব্যবস্থা করছি। বলে খাবার খেতে বসা লোকগুলোর দিকে চলে গেলেন তিনি।

থ্যাংক ইউ, শামানের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞ গলায় বলল রবিন।

বুড়ো মানুষটাও হাসল। একটা মুহূর্তের জন্যে নেচে উঠল তার চোখের তারা। আজকালকার ছেলেছোকরাগুলোকে নিয়ে এই এক অসুবিধে। সব সময় একটা না একটা গণ্ডগোল বাধাবেই, বিড়বিড় করে বলল সে। জনের দিকে তাকিয়ে বলল, তাই না?

আপনার কথা অমান্য করি না আমি, জন জবাব দিল।

 কি করে এসেছ বলো ওদের, আদেশ দিল গান গাওয়া ডাক্তার। শোনাও।

তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরে বলল জন, দৈব আদেশ পাওয়ার জন্যে বেরিয়েছিলাম আমি। ভিশন কোয়েস্টে। চব্বিশ ঘণ্টা বনের ভেতরে ছুটে বেড়িয়েছি। কেবল প্রার্থনার জন্যে থেমেছি। রাতে ঘুমিয়েছি ঈশ্বরের নির্দেশ পাওয়ার জন্যে।

কি স্বপ্নে দেখলে, নাতি? জিজ্ঞেস করল শামান।

 নাতি? সবাই তোমার আত্মীয় নাকি এখানে, জন? মুসার প্রশ্ন।

 হেসে উঠল জন আর শামান।

আমরা এভাবেই বড়দের সম্মান জানাই, জন জবাব দিল। মাথা ঝাঁকিয়ে তার কথায় সায় দিল শামান।

তার মানে মোড়ল তোমার চাচা নন, রবিন বলল।

না। আর শামানেরও আমি নাতি নই। তবে তিনি এখানে আমার বয়েসী সবার কাছেই দাদার মত।

মাথা ঝাঁকাল তিন গোয়েন্দা। বুঝেছে।

 অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি আমি, দাদা, শামানের প্রশ্নের জবাবে বলল জন। শুরু হলো হ্রদ দিয়ে। দেখি, সবুজ একটা হৃদের ধারে গিয়ে পড়েছি আমি। ঝাঁপিয়ে পড়লাম তাতে। দাপাদাপি করতে লাগলাম। একটা মাছ আপনাআপনি এসে হাতে ধরা দিল। ভাগ্যবান মনে হলো নিজেকে। মাছটা দিয়ে চমৎকার খাবার হবে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলাম। আরও অনেক মাছ এসে পড়তে লাগল আমার হাতের কাছে, এত বেশি, ধরলে হাতে রাখার জায়গা পাব না। ওরা কেবলই আমার গায়ে এসে পড়তে লাগল, আমার পিঠে, আমার বুকে, আমার মুখে লাফিয়ে পড়তে লাগল। আরও এল, আরও, আরও জোরে জোরে গুতো মারতে লাগল আমাকে। ঠোকর মারতে লাগল।

কি মনে হলো তোমার? শামান জিজ্ঞেস করল, তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছে?

মাথা ঝাঁকাল জন। হাতের মাছগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে এলাম পানি থেকে।

ঠিক কাজটাই করেছ। কি শিখলে?

শিখলাম, বিনা কষ্টে যা হাতে আসবে তার কোন মূল্য নেই। মাঝে মাঝে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে ওসব জিনিস।

খুশি হয়ে মাথা ঝাঁকাল গান গাওয়া ডাক্তার। ঈশ্বর তোমাকে কি নির্দেশ দিলেন?

ঠিক জায়গায়, কিন্তু আর্শীবাদ ছাড়া!

মানে বুঝেছ?

না।

কৌতূহলী হয়ে জনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তিন গোয়েন্দা।

কিছুই তো বুঝলাম না, বিষণ্ণ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল জন। তার দেখাই পাইনি।

যা-ই হোক, ঈশ্বর তোমার প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, শামান বলল। সেটাকে কাজে লাগাবে।

চোখ নামিয়ে ফেলল জুন। লাগাব, দাদা।

 পরের অনুষ্ঠানে অবশ্যই উৎসবের পোশাক পরবে তুমি।

পরব, দাদা। তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরে হাসল জন। ঝকঝকে উজ্জ্বল হাসি। গুড লাক। বলেই রওনা হয়ে গেল সে। দৌড়ে চলে গেল, দমকা হাওয়ার মত।

গুড বাই, তরুণ যোদ্ধারা, তিন গোয়েন্দাকে বলল শামান। পৃথিবীতে। কেবল নিজেকে বিশ্বাস করবে, আর কাউকে না।

ভিড়ের দিকে চলে গেল সে। হাসিমুখে কথা বলতে লাগল তার ভক্তদের।

ওই দেখো, মোড়ল, পঞ্চাশ গজ দূরের একটা টিনের কুঁড়ে দেখাল মুসা।

ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে হালকা-পাতলা এক ইনডিয়ানের সঙ্গে কথা বলছেন, ডুম। জিনসের সামনের দিকে হাত মুছছে লোকটা। মাথা ঝাঁকাচ্ছে। তারপর মোড়ল চলে এলেন খাবার টেবিলের দিকে, লোকটা চলে গেল ঘরের ভেতরে।

জোনস ট্রাকিং কোম্পানি লেখা বাক্সগুলোর সামনে থেকে সরেনি এখনও কিশোর। তার সামনের বাক্সটায় প্লেট রাখা। তাতে কিছু আলুভাজি রয়ে গেছে। শেষ করে ফেলার জন্যে চামচ দিয়ে তুলতে যাবে এই সময় চোখে পড়ল। সিগারেটের গোড়াটা। একটা বাক্সের কাছে পড়ে আছে। মাটিতে।

ঝুঁকে গোড়াটা তুলে নিল সে। হলদে হয়ে গেছে কাগজ, দোমড়ানো। একই রকমের সবুজ রঙের বন্ধনী লাগানো ফিল্টারের জোড়ার কাছে, সকালে যেটা পেয়েছিল সেরকম।

কিশোর, মুসা জিজ্ঞেস করল, কি ওটা?

দেখো। সকালের পাওয়া গোড়াটা পকেট থেকে বের করে ফেলেছে। কিশোর। পরে যেটা পেয়েছে সেটাও একই সাথে হাতের তালুতে রেখে বাড়িয়ে ধরল।

খাইছে!

এর মানে কি? রবিনের প্রশ্ন।

জানি না, জবাব দিল কিশোর। রেখে দিই। কাজে লেগেও যেতে পারে। কখন যে কোন জিনিসটা দরকার হয়ে পড়ে, আগে থেকে বলা যায় না।

ভিড় থেকে বেরিয়ে কিশোরদের দিকে এগিয়ে এল এক কিশোরী। আমি মালটি জনজুনস। জনের বোন। হেসে একটা চাবি বের করে ফেলে দিল রবিনের হাতে, মোড়ল বললেন পিকআপটা পাবে। চালানোর জন্যে তৈরি করা হচ্ছে। খেয়েছ তো ভালমত?

খেয়েছি, জবাব দিল রবিন। মেয়েটাকে দেখছে। চেহারাটা খুব সুন্দর। লম্বা। চুল। ঢিলাঢালা সাদা পোশাক পরেছে। গলায় নীলকান্তমণির মালা। তার চোখও লাল। আসলেই কি তুমি জনের বোন? না এটাও সম্মান দেখানোর জন্যে বলা?

একটা মুহূর্ত অবাক হয়ে রবিনের দিকে তাকিয়ে রইল মালটি। তারপর বুঝতে পেরে হাসল। না না, আমি সত্যিই তার বোন।

আর কোন অনুষ্ঠান হবে তোমাদের?

এবার শামান গান গাইবে আর নাচবে। তারপর প্রার্থনা করবে। ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলার জন্যে তৈরি হচ্ছে। ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করবে, কি কারণে অসুখ হয়েছে আমাদের। কি করলে সারবে। সেই মত কাজ করে আমাদের সারিয়ে তুলবে তখন।

আবার নিশ্চয় নাচ-গান?

হ্যাঁ। ওষুধের ব্যবস্থাও আছে।

কিশোর জানতে চাইল, ভিশন কোয়েস্টটা কি জিনিস?

মনোযোগী হলো মালটি। জনের কোয়েস্টের কথা শুনেছ তাহলে? কি মেসেজ দিলেন ঈশ্বর?

ভাবল কিশোর। বলল, ঠিক জাগায়, কিন্তু আশীর্বাদ ছাড়া। এ কথাগুলোর মানে বুঝতে না পেরে মাথা নাড়ল মালটি। ঈশ্বরই জানেন কি বলেছেন। জন বুঝতে পেরেছে?

 না। গান গাওয়া ডাক্তার তাকে এটা নিয়ে ভাবতে বলেছে, রবিন বলল। কেন, এমন কি জরুরী, এটা?

কারণ… চুপ হয়ে গেল মালটি। চোখ মুদল। খুলল। আমাদের চাচা, আমাদের সত্যিকারের চাচা হারিয়ে গেছে। বাবা চলে যাওয়ার পর আমাকে আর জনকে বড় করেছে এই চাচাই। বাবা হারিয়ে গেছে বহু বছর আগে। এখন হারাল আমাদের চাচা। এক মাস হয়েছে। সমস্ত জঙ্গলে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে বের করতে পারেনি জন।

 অদ্ভুত কিছু একটা ঘটছে এই এলাকায়, রবিন বলল। আমার বাবাও হারিয়ে গেছে।

মাথা ঝাঁকাল মালটি। চোখে বিষণ্ণতা। জনতার দিকে চোখ পড়তে তাকিয়ে রইল সেদিকে। হালকাপাতলা সেই লোকটা, যার সঙ্গে কথা বলেছিলেন মোড়ল, হাত নেড়ে মালটিকে ইশারা করছে।

তোমাদের পিকআপ রেডি, লাল চোখ ডলতে ডলতে বলল মালটি।

পথ দেখিয়ে গায়ের আরেক প্রান্তে তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে এল সে। পথে। কয়েকটা বেঁধে রাখা কুকুর দেখতে পেল ওরা, আর উঁচু উঁচু মাটির দেয়ালে একটা জায়গা ঘেরা। ওটা হলো শোধনাগার। দেহকে ওখান থেকে পবিত্র করে আনে লোকে।

একটা কথা বলতে পারবে? পকেট থেকে সিগারেটের গোড়া দুটো, বের। করে মালটিকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর, এই জিনিস এখানে কে খায়?

না, অবাক হয়েছে মেয়েটা।

হতাশ হয়ে আবার ওগুলো পকেটে রেখে দিল গোয়েন্দাপ্রধান।

পুরানো ট্রাক আর জীপের মাঝে ঝকঝকে নতুন লাল একটা পিকআপ দেখে ওটা কার জিজ্ঞেস করল মুসা।

মোড়ল চাচার, মালটি বলল। খুব ভাল মানুষ। রাইফেলে দারুণ নিশানা। নতুন কাপড়, কাজের যন্ত্রপাতি আর গাড়ির পার্টস ভেঙে গেলে এনে দেন। আমাদের।

টাকা পান কোথায়? কিশোরের প্রশ্ন।

ত্যাগ করল মালটি। জানি না। ডায়মণ্ড লেকে পার্ট-টাইম কোন কাজ করেন বোধহয়। ওসব আমার ব্যাপার নয়, মাথাও ঘামাই না। রঙচটা, মরচে পরা একটা পুরানো ফোর্ড ফ-১০০ গাড়ির ফেণ্ডারে চাপড় দিল সে। এটাই তোমাদের দেয়া হয়েছে। যত্ন করবে। কাজ শেষে ডায়মণ্ড লেকে রেঞ্জার স্টেশনে রেখে যেও, তাহলেই হবে।

 জিনিসপত্র যা সঙ্গে আনতে পেরেছে সেগুলো গাড়ির পেছনে রেখে সামনের সীটে উঠে বসল তিনজনে। সীটবেল্ট নেই। স্টিয়ারিঙে বসল মুসা। তিনজনের মাঝে সব চেয়ে ভাল ড্রাইভার সে।

উত্তর দিকে যাবে, বলে দিল মালটি। কিছু দূর গেলে একটা দোরাস্তা দেখতে পাবে, কাঠ ব্যবসায়ীরা তৈরি করেছে। পশ্চিমের কাঁচা রাস্তাটা ধরবে, তাহলেই পৌঁছে যাবে হাইওয়েতে। ডানে যাবে, ডায়মণ্ড লেকে চলে যেতে পারবে।

মালটিকে ধন্যবাদ দিল ওরা। ইঞ্জিন স্টার্ট দিল মুসা। হেসে, হাত নেড়ে ওদেরকে বিদায় জানাল মেয়েটা। রওনা হয়ে গেল ওরা। ব্যাকফায়ার করছে। পুরানো ইঞ্জিন। তবে চলছে। চাকার পেছনে ধুলো উড়ছে। ঘেউ ঘেউ করছে কুকুর।

যাক, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল মুসা, একটা গাড়ি পেলাম শেষ পর্যন্ত। পায়ে না হেঁটে চাকার ওপর গড়ানো।

হ্যাঁ, রবিন বলল। ধন্যবাদটা কিশোরেরই পাওনা। ও কথাটা মনে করেছিল। বলেই পেলাম।

সীটে হেলান দিয়ে আছে কিশোর। চুপচাপ।

 পথের দিকে নজর দিল মুসা। সরু রাস্তা। উঁচু-নিচু। যেখানে-সেখানে মোড়। একটু অসতর্ক হলেই বিপদে পড়তে হবে। রেডউডের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পাইনের বনে ঢুকল গাড়ি। পাহাড়ী উপত্যকায় ঢেউ খেলে যেন এগিয়ে গেছে পথ, একবার উঠছে একবার নামছে, একবার উঠছে একবার নামছে।

মোড়ল আমাদের পছন্দ করেনি, একসময় মুসা বলল।

শামান করেছে, বলল কিশোর। ও রাজি হওয়াতেই গাড়িটা পেলাম আমরা। ওর চেহারা দেখেছ, ভাবসাব, যখন দৈব নির্দেশ পাওয়ার কথা বলল জন? মেসেজের মানে বুঝতে পেরেছে, এবং বুঝে খুশি হতে পারেনি।

মালটির চাচার কি হয়েছে, বলো তো?

এক মাস অনেক সময়। রহস্য বলা চলে। আরেকটা রহস্য হলো ওই মানুষগুলোর আজব অসুখ। ভাইরাসের আক্রমণ হতে পারে, কিন্তু ভাবছি… আচমকা নীরব হয়ে গেল কিশোর। চিমটি কাটতে লাগল নিচের ঠোঁটে। কোন কিছু ভাবিয়ে তুলেছে ওকে।

যেখান থেকে রওনা হয়েছে, তার মাইল দুয়েক আসার পর চড়াই বাড়তে লাগল। অনেক খাড়া হয়ে এখানে উঠে গেছে পথ। সুগন্ধী পাইনের বনে ঝলমল করছে বিকেলের রোদ।

পাহাড়ের ওপরে উঠে জোরে জোরে ব্যাকফায়ার করতে লাগল ইঞ্জিন। থামল না। ঢাল বেয়ে নামতে শুরু করল গাড়ি। চড়াইটা যেমন খাড়া ছিল উতরাইটা তেমনি ঢালু। দ্রুত গতি বাড়ছে গাড়ির।

ব্রেক চাপল মুসা। গতি কমল গাড়ির। ব্রেক ছেড়ে দিতেই আবার বাড়তে লাগল, দ্রুত, আরও দ্রুত। পাশ দিয়ে সাঁ সাঁ করে সরে যাচ্ছে গাছপালা ঝোপঝাড়।

ব্রেক চাপল আবার মুসা। গতি কমল গাড়ির। হঠাৎ মেঝেতে গিয়ে লেগে গেল ফুট পেডাল। নিচের দিকে ছুটতে লাগল আবার গাড়ি। অকেজো হয়ে গেছে। ব্রেক।

খাইছে! চিৎকার করে উঠল মুসা, ব্রেকটা গেল?