৫. মিউনিখের রাস্তায়

মিউনিখের রাস্তায় ম্যানফ্রেড উন্মত্তের মতো গাড়ি চালাচ্ছিল। কালো চশমায় দু-চোখ ঢাকা, মাথায় টুপী। সীটের পাশে ব্যাগের মধ্যে লুকোনো রিভালভার।

দিয়েত্রিচের এস্টেটের আধমাইল দূরে ও গাড়িটা থামালো। সামনেই একটা জীর্ণ গাড়ি। ওখানেই ভিনজের সঙ্গে গোপন আলোচনা হয়েছিল। গেটের ভেতরে উঁচু পাহাড়ের মত এলাকা, যেখান থেকে স্বচ্ছন্দে গুলি চালানো যায়। গাড়িটা আবার চালিয়ে গেটের সামনে নিয়ে গেল। ম্যানফ্রেডের দৈহিক শক্তি প্রচণ্ড গাড়ি দিয়ে রাস্তাটাকে আড়াল করে দিল। পরক্ষণেই কি ভেবে আবার রাস্তার অর্ধেকটা ফাঁকা করে দিল। নিজের গাড়িটা গাছের আড়ালে রেখে দিল। ফোনে দিয়েত্রিচের সঙ্গে কথামত হাতে বন্দুক নিয়ে উঁচু জায়গায় গিয়ে বসল। ওকে কেউ দেখতে পাবেনা। এরপর অপেক্ষার পালা।

খানিক বাদেই একটা গাড়ির শব্দ শোনা গেল। দূরে মার্টেলের নীল গাড়িটা ওর চোখে পড়ল। বন্দুক তাক করে স্থির লক্ষ্যে…।

ব্যাপারটা ঠিক হয়নি মনে হচ্ছে। গাড়ির ভেতর ক্লেয়ার মার্টেলের দিকে তাকালো। মার্টেল– মুগ্ধ চোখে জায়গাটা দেখছিল। ম্যাপ দেখে মার্টেল বুঝলো যে ওরা মূল প্রবেশপথের দু-মাইলের মধ্যে এসে পড়েছে। ব্যাভেরিয়ার উঁচু প্রান্তর জুড়ে সবুজ ঘাস বিছানো রয়েছে। মার্টেল বলল, তোমার ওখানে যাওয়াটা ঠিক হবেনা।তুমি এখানেই গাড়িটা নিয়ে লুকিয়ে অপেক্ষা কর। একঘণ্টার মধ্যে যদি না আসি সোজা গিয়ে মিউনিখে স্টোলারকে খবরটা দেবে।

–কোন ভয় নেই। আমি তোমার সঙ্গে যাবো।

–তাহলে বিপদে পড়লে খবর দেবার যে কেউ থাকবেনা।

হঠাৎ সামনেই সেই জীর্ণ গড়িটা অর্ধেক রাস্তা জুড়ে পড়ে আছে। আয়না দিয়ে পেছনে তাকালো মাৰ্টেল। চারিদিক খাঁ খাঁ মরুভূমির মত। গেটটা বন্ধ। ভেতরে দেখা যাচ্ছে উঁচু পাহাড়ের মতো অঞ্চল। এতই উঁচু যে ও পাশের জিনিস চোখে পড়েনা। ও খুব আস্তে গাড়িটা এগোতে লাগল।

ক্লেয়ার কালো চশমা খুলে সামনের দিকে তাকালো। হঠাৎ উঁচু জায়গাটায় চোখ আটকে গেল। মনে হচ্ছে কেউ রয়েছে ওখানটায়। সঙ্গে সঙ্গে মার্টেলকে বলল, ঐ জায়গাটায় কেউ রয়েছে।

ম্যানফ্রেডের নাগালের মধ্যে এসে পড়েছে গাড়িটা। মার্টেলের নীল গাড়িটা একেবারে নিশানার মধ্যে। ও ট্রিগারটা টিপল।

–একেবারে নড়োনা।

 মার্টেল সজোরে ধাক্কা মারল জীর্ণ গাড়িটায়। ঠিক সেই ফাঁকে একটা শব্দ হলো। বুলেটটা সোঁ করে ঘাড়ের পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেল। ও নীচে নেমে পড়ে থাকা গাড়িটাকে সামলাতে চেষ্টা করল। তারপর একাই এগোল।

ম্যানফ্রেডের প্রথম গুলি ব্যর্থ। ব্যাপারটা অভাবনীয়।শত্রুপক্ষ নিশ্চয়ই পজিশন নিয়ে ফেলেছে। ও দ্রুত জায়গা ছেড়ে পালাতে আরম্ভ করলো। গন্তব্য মিউনিখ।

***

মঙ্গলবার, দোসরা জুন :

নাম : ফ্রেডরিক অ্যান্টনী হাওয়ার্ড।

জাতি : ব্রিটিশ।

জন্ম তারিখ : বারই অক্টোবর, ঊনিশশ তেত্রিশ।

জন্মস্থান : চেলসা, লন্ডন।

ক্যারিয়ার রেকর্ড : ঊনিশশ আঠান্ন–তে বিদেশ দপ্তরে যোগ দেয়। ইনটেলিজেন্স সেকশনে যোগ দেয় ঊনিশশ বাষট্টির মে-তে। এরপরে ঊনিশশ চুয়াত্তর সালের মে মাসে ইনটেলিজেন্স অফিসার হিসেবে প্যারিস দূতাবাসে যোগদান। ঊনিশশ আটাত্তর জানুয়ারি মাসে ছ-সপ্তাহের স্পেশাল লিভ। শেষে ঊনিশশ আশির মে মাসে এস. আই. এন–এর প্রধান হিসাবে কার্যভার নেয়।

ম্যায়ডা ভ্যালে-তে নিজের ফ্ল্যাটে টুইড সমস্ত বিষয় খুঁটিয়ে দেখছিল। পাশেই ম্যাকনেইল।

টুইড বলে উঠলো, এই বিশেষ ছুটি নিয়ে ও ভিয়েনাতে কাটিয়েছিল।

ভিয়েনার ব্যাপারেই ওর মনে পড়ল কিম ফিলবির কথা। ভিয়েনার এক মহিলার সংশ্রবে ফিলবি সংক্রামক একটা রোগে আক্রান্ত হয়। এখানেই।

 সমস্ত ফাইল দেখলেই বোঝা যাবে।

***

রেইনহার্ড দিয়েত্রিচের অট্টালিকায় প্রবেশের মুখে চীৎকারটা ছড়িয়ে পড়ল। একপাল শেফার্ড কুকুর মার্টেলের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে। প্রহরী–বেষ্টিত থাকায় তা সম্ভব হচ্ছেনা।

মার্টেলের দিকে তাকিয়ে ধূসর চোখজোড়া প্রশ্ন করল, কি চাই?

–আমি টাইম পত্রিকার ফিলিপ জনসন। মিঃ দিয়েত্রিচের সঙ্গে দেখা করতে চাই। উনি এখানে আসতে বলেছেন।

ভিনজ বললো, পায়ে হেঁটে এলে কেন?

ও জানালো, গাড়ি রাস্তায় খারাপ হতেই এই অবস্থা। এরপর মার্টেল ওর পরিচয়পত্র দেখাল।

দূরের আকাশে তখন হেলিকপ্টারের মৃদু শব্দ। ভিনজ ওর কার্ডটা দেখে ফেরৎ দিলো।

–আমরা এখন মূল জায়গায় যাবো।

 এরপর ওরা সামনের দিকে এগোল। প্রথম গেটটা পেরোতেই সেটা বন্ধ হয়ে গেল।কুকুরগুলো ওখানেই রয়ে গেল। সবার কোটের পকেটে ডেলটা আঁকা।

ভিনজের গাড়ি এগোল। সামনে ও আর মাৰ্টেল। মার্টেল দ্রুত পেছন ফিরে দেখল, দুজন সশস্ত্র প্রহরী ঘড়ি দেখল। উঁচুতে হেলিকপ্টারের বিচরণ।

পাঁচ মিনিট স্বাভাবিক কাটলো। চোখে পড়ল মূল অট্টালিকা।

প্রবেশ পথটা ধনুকাকৃতি। গাড়িটা এগিয়ে অবশেষে মূল বিল্ডিংটার কাছে থামলো। সামনে দাঁড়িয়ে দুজন। একজন পুরুষ অন্যজন রমণী।

রেইনহার্ড দিয়েত্রিচ চমৎকার পোষাকে, মুখে সিগারেট নিয়ে যেন ওর জন্যেই অপেক্ষায় রয়েছে। কঠিন দৃষ্টি। মহিলাটি অন্যরকম। মৃদু হাসলো। ইনিই স্বয়ং ক্লারা বেক।

সবাই মিলে হলঘরে প্রবেশ করল। ভিনজ আর ওর দুজন সশস্ত্র প্রহরী বেষ্টিত হয়ে মার্টেল এগোতে থাকল। নিজের অস্ত্রগুলোর কথা মনে করার চেষ্টা করল। সমস্ত ব্যাপারটা দেখেশুনে হিটফলারের কথা মনে পড়লো। দিয়েত্রিচ ও ভিনজকে দাঁড়াতে বললো। একটা সিগারেট ধরিয়ে বললো, ঐ দুজনকে বাইরে পাঠিয়ে দাও।

ভিনজের হাতেও পিস্তল। মার্টেল তাকালো চারিদিকে, একটা বিরাট ডেস্ক সামনের অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে।  

 দিয়েত্রিচের মুখে ব্যঙ্গেরা হাসি। গমগমে কণ্ঠস্বরে বলে উঠল, তুমি বসতে পারো মাৰ্টেল। ফিলিপ জনসনের রহস্যটা সমাধান করা যাক। বরং আমি পরামর্শ দিই…।

ক্লারা বেক ওর দিকে তাকিয়ে ছিল। মার্টেল চেয়ারে হেলান দিয়ে বসতে বসতে দেখল ক্লারা অপূর্ব সুন্দরী। শেষে দিয়েত্রিচ ওর বিশেষ চেয়ারে বসে বলল, তুমি এখানে এলে কেন? এতো আত্মহত্যার সামিল। এরপর আবার আমাকে বোলনা যেন আধঘণ্টা কেটে গেলে স্টোলার দলবল নিয়ে আসবে তোমাকে উদ্ধার করতে।

দিয়েত্ৰিচ থামলো। মনে মনে ভাবলো। আবার বললো, আমি কাগজপত্র পড়েছি। বি. এন. ডি. কমিশনার বন-এ উড়ে যাচ্ছে। নির্বাচনে আমার জেতার সাক্ষী।

–তোমার পরাজয়। মার্টেল বলল।

–এই যে বেজন্মা শখের গোয়েন্দা, জার্মানীর রাজনীতি তুমি কি বোঝ? তুমি আশা করোনা এখান থেকে বেঁচে ফিরবে, কোন প্রমাণ আছে তুমি এখানে আছো? আমি ভেবে পাচ্ছিনা কেন তুমি এখানে…?

মার্টেল ওর চোখে চোখ রেখে বলল, তুমি কিছুই পারবেনা দিয়েত্রিচ…।

ঘরের আবহাওয়া পাল্টে গেল। ঘরের প্রত্যেকের ওপর ও নজর রাখছিল। ভিনজ যেন নার্ভাস হয়নি এরকম ভাব দেখিয়ে পায়চারী করছিল। ক্লারাকে নার্ভাস দেখাচ্ছিল। দিয়েত্রিচ আবার ফেটে পড়ল, বেজন্মা, তুমি কি বলছে…।

মার্টেল স্বাভাবিক কণ্ঠস্বরে বলল, তুমি এমন একজনকে বিশ্বাস কর যে তোমার সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। তা না হলে স্টোলারের পক্ষে ডেলটা অস্ত্রাগার খুঁজে পাওয়া সম্ভব ছিল না। ইনফরমার…।

ভিনজ উত্তেজিত হয়ে, হাতে লুগার, মার্টেলের দিকে লক্ষ্য করে বলল, তোমার দাঁতগুলো আমরা একটা একটা করে।

দিয়েত্রিচ গ্রাহ্য না করে ভিনজের গালে একটা থাপ্পড় কষিয়ে বলল, বেরিয়ে যাও।

ভিনজ কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। মার্টেল আবার আরম্ভ করলো, দিয়েচি, এমন একজন লোক তোমার অস্ত্রাগার চেনে, যে স্টোলারের ইনফরমার। সুতরাং ও তোমার নির্বাচনের আগে ক্ষতি করতে পারে।

হঠাৎ দরজা খুলে একজন প্রহরী ঢুকলো, দিয়েত্রিচ জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার কার্ল?

–গেটের সামনে একটা কনভয় এসেছে। সম্ভবতঃ পুলিশ।

 দিয়েত্ৰিচ দুজনকে ডেকে বললো, একে সার্চ করে গুপ্তঘরে ঢুকিয়ে দাও। সাবধান, এর কণ্ঠস্বর যেন কারোর কানে না যায়।

বলেই সামনের বুককেসের দিকে এগিয়ে বোম টিপল। একটা অংশ তৎক্ষণাৎসরে গেল।

–ওঠো। কার্ল রিভলভার ঠেকিয়ে বলল। মার্টেল লক্ষ্য করেছে ঐ ফাঁকা অন্ধকার জায়গায় একটা গুপ্তঘর আছে আর তার সামনে একটা সিঁড়ি নেমে গেছে।

মার্টেল এগোল। দুপাশে গার্ড।

দিয়েত্রিচ বলল, এখন তোমাকে ঐ গর্তের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে, কাল কথা হবে।

সিঁড়ির নীচে পাথরের গুপ্তঘরে ধাক্কা মেরে কার্ল ওকে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

বি. এন. ডির কনভয়। তিনটে কালো মার্সিডিসের ভেতরে সাদা পোষাকের সশস্ত্র কিছু লোক। প্রহরী ভয় পেয়ে কুকুরগুলোকে ছেড়ে দিতেই কুকুরগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ার অবস্থা। কুকুরগুলোকে গুলি করার নির্দেশ দিল স্টোলার। গুলি চলল।কুকুরগুলো রাস্তার ধারে পড়ে রইল। স্টোলার গাড়ি থেকে নেমে বলল, গেটের যোগাযোগ ছিন্ন করে দাও।

দুজন দৌড়ে ভেতরে গেল। একজন প্রহরীর হাতে রিসিভার দিয়েত্রিচকে মূল বিল্ডিং-এ ফোন করছিল। স্টোলার এর লোকেরা হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে আছড়ে ফেলল। স্টোলারের লোকজন অঞ্চলটা দাপিয়ে বেড়াতে লাগল।

এরপরে স্টোলারের গন্তব্যস্থল দিয়েত্রিচের মূল বাসস্থান। তিনটে গাড়ি এগোতে লাগল। দিয়েত্রিচ একেবারে ওপরে দাঁড়িয়েছিল। ওখান থেকে চীৎকার করল, আমি যদি নির্বাচিত হই, তবে তোমাকে আমি লাথি মেরে ব্যাভেরিয়া থেকে তাড়াবো।

–তোমার নামে ওয়ারেন্ট…।

দিয়েত্রিচ হলে ফিরে এলো। পেছনে স্টোলার। ও দেখল ডানদিকের দরজা দিয়ে লাইব্রেরিতে ঢোকা যায়। সোফায় একজন মহিলা বসে আছে। স্টোলার ওর নাম জিজ্ঞেস করল। দিয়েত্রিচ দ্রুত ওকে গিয়ে বলল, তোমার নামে আমি মিনিস্টার প্রেসিডেন্টের কাছে অভিযোগ করবো জানো?

–ফোন তো নেই। স্মিত হাস্যে আবার মহিলাটির দিকে তাকিয়ে, আমাদের সার্চ করার ক্ষমতা আছে। তোমার নামটা যদি…।

দিয়েত্রিচের নিষেধ অমান্য করে মহিলাটি বলল, আমার নাম ক্লারা বেক। আমি মিঃ দিয়েত্রিচের সেক্রেটারী আর পি. এ.। বলো তোমাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি।

–এখানে ফিলিপ জনসন নামে একজন এসেছে। সে কোথায় জানাতে পারো?

 ক্লারা বেকের নাম ও শুনেছে। হাউস্টব্যানহফের ফোন বুথে। ওর ফাইল আছে।

 ক্লারা বলল, ও নামের কাউকে জানিনা।

দিয়েত্রিচ চীৎকার করল, কি ব্যাপার, এসব বন্ধ হবে কিনা।

 স্টোলার গ্রাহ্য না করে সারা ঘর দেখতে লাগল, তল্লাসী চলতে থাকল আর ক্লারাকে মাঝে মাঝে জেরা করতে লাগলো। উত্তরে ক্লারা জানালো, ওর স্টার্টগাটে একটা অ্যাপার্টমেন্ট ছিল।

ক্লারার ঠোঁটে সিগারেট। মৃদু হাস্যে ও যেন স্টোলারকে আহ্বান জানাচ্ছে।

একজন ঘরে ঢুকতেই স্টোলার জিজ্ঞেস করল, পিটার কিছু পাওয়া গেল। ও মাথা নাড়াল আর বলল, ক্যামেরা, এছাড়া সহকারী পাইলটের ফিল্ডপ্লাস। ফিল্ম, নেওয়া গেছে। ডেভেলপ করলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে।

তুমি কি উন্মাদ হয়ে গেছ?

-হেলিকপ্টারের ভেতরে জনসন ছিল। সিনে ক্যামেরাতে সব কিছুই উঠেছে। সিগারেট খাবে দিয়েত্রিচ? তুমি কি সিগারেট খাও?

–হাভানা। ছটফট করতে করতে উত্তর দিল।

স্টোলার বুক কেসের দিকে এগোল। কার্পেটে আধপোড়া সিগারেট দেখে তুলে দেখল। এটা একেবারে আলাদা। এটা এখানে কেমন করে এলো।

বুককেস থেকে বইগুলো মেঝেতে ফেলতে লাগল। হঠাৎ চোখে পড়ল একটা লাল বোতাম। বোতামটা টিপতেই খানিকটা অংশ নেমে গেছে। পিটারকে নামার নির্দেশ দিলো। ঘরটা ভালভাবে দেখতে লাগল পিটার কিছু পরে ফিরে এলো। বললো, একটা ঘরের মধ্যে ওকে জঘন্য ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। বাইরে থেকে তালা।

স্টোলার দিয়েত্রিচের দিকে তাকিয়ে বললো, কি ব্যাপার দিয়েত্রিচ?

–ও, একজন প্রতারক। আমি নিশ্চিত ও আমাকে খুন করতে এসেছিল। আমি খোঁজ নিয়েছি। শত্রু আমার অনেক।

মার্টেলকে সেই গুপ্তঘর থেকে মুক্ত করা হলো। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।

বি. এন. ডির তিনটে গাড়ি গেটের সামনে এসে পৌঁছালো। এখন গন্তব্যস্থল মিউনিখ।

স্টোলার মার্কেলের দিকে তাকিয়ে বলল, হফারকে তুমি, যেখানে ছেড়ে দিলে ওখানে আমার সঙ্গে দেখা হয়। ও সব বলল আমাকে। কিন্তু তুমি এখানে এলে কেন?

-ওকে বোঝাতে যে, ওর দলের লোকেরাই বিশ্বাসঘাতক। এতে করে ওদের অপারেশন ক্রোকোডাইল এলোমেলো হয়ে যাবে। এখন ঈশ্বরের ইচ্ছা।

মার্টেল মিউনিখে ক্লেয়ারকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে চলেছে। স্টোলারের সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয়নি। ওরা বনে যাবার প্লেন ধরতে গেল।

সম্ভাব্য খুনীর তালিকা থেকে স্টোলারকে বাদ দিতে পারিনা এখন?

ক্লেয়ার বলল, কেন বলতো?

 দিয়েত্রিচের খপ্পর থেকে তোমাকে বাঁচিয়েছে বলে?

মার্টেল বলল, এও তো হতে পারে আসল খুনীর দিক থেকে আমার চোখ সরিয়ে দেবার জন্যে এসব ওর সাজানো ঘটনা। যাতে ওকে এব্যাপারে সন্দেহ…। এখনও আমার তালিকায় এরিখ স্টোলার রয়েছে। গাড়ির গন্তব্যস্থল মিউনিখ বিমানবন্দর।

***

মঙ্গলবার, দোসরা জুন

বেলা দুটো থেকে দশটা।

 নাম : এরিখ হেইনজ স্টোলার।

জাতি : জার্মানি।

 জন্মতারিখ : সতেরই জুন, উনিশশ পঞ্চাশ।

 জন্মস্থান : পলিজিতে।

উনিশশ চুয়াত্তর বি. এন. ডিতে, তারপরে পূর্বজার্মানীর মধ্যে আন্ডারভার এজেন্ট হিসেবে উনিশশ পঁচাত্তর-সাতাত্তর পর্যন্ত। উনিশশ আটাত্তর-এ বি. এন. ডির প্রধান।

টুইড কালচে লাল ফাইলটা ভালভাবে পড়ে ম্যাকনেইলকে জিজ্ঞেস করল, স্টোলার সম্পর্কে তোমার কি ধারণা? তুমি কি কখনই ওকে দেখনি, এটা একটা সুবিধে, সুতরাং…।

–ও হচ্ছে চারজনের মধ্যে সবচাইতে তরুণ। বি. এন. ডি তে খুবই অল্প বয়েসে তাই না?

-চ্যান্সেলার ল্যাংগার প্রমোশন দিয়েছিল। ওর মতো ব্রিলিয়ান্ট।

সামনের একটা ফোল্ডারে সমস্ত কিছু প্রস্তুত করে রেখেছিল ম্যাকনেইল। মার্টেল হয়ত এর মধ্যেই অনেক কিছুর হদিশ পাবে। মিউনিখে ফোল্ডারটা নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। সবগুলোই গোপনীয় ও জরুরী। টুইড ম্যাসনকে ফোন করে বলে দিল ওর ওপর নির্ভর করা চলে। স্পেশাল সিকিউরিটি ব্রিফকেসে ম্যাকনেইল সমস্ত ফাইলগুলো ঢুকিয়ে রাখলো। ওর ছোট্ট ব্যাগটাতে আগেই জিনিষপত্র ঢোকানো হয়ে গেছে।

***

ঠিক ছটা বেজেছে।

স্থানঃ মার্কিন দূতাবাস, গ্ৰসতেনর স্কোয়ার। তিনতলার অফিসে টিম ও’মিয়েরা দাঁড়িয়ে পাশে ডেপুটি জেমস ল্যান্ডিস রিসিভার হাতে কার সঙ্গে যেন কথা বলছে। রিসিভার রাখতেই মিয়েরা জিজ্ঞেস করল, ঠিক আছে?

আটলান্টিকের ওপরে এয়ার ফোর্স ওয়ান ঠিক সময়েই থাকছে। তারপর ঠিক সময়েই ওরলিতে পৌঁছাবে। ওখান থেকে প্রেসিডেন্ট সোজা গেয়ার দ্য-ইস্ট। তারপর সামিট এক্সপ্রেস…।

–তাহলে আমাদের এখন ওরলিতে যাওয়া জরুরী প্রয়োজন।

 ডেপুটি বলল, স্যার, ক্লিন্ট লুমিসের ঘুমের ব্যাপারে একটা সন্দেহজনক রিপোর্ট…

ওর কথার মাঝখানে ও’মিয়েরা বলল, এখন চল…।

***

ঠিক ছটা। এলিসি প্রাসাদ, প্যারিস।

প্রবেশ পথের বাইরের চত্বরে দাঁড়িয়ে অ্যালেন ফ্ল্যান্ড্রেস সমস্ত কিছু তীক্ষ্ণ নজরে রাখছে। এন্টিবোম্ব স্কোয়াডের দিকে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাড়িতে ফরাসী প্রেসিডেন্ট গেয়ায়-দ্য-ইস্টে যাবে। ফ্ল্যান্ড্রের কাউকে বিশ্বাস করেনা।হঠাৎ আয়নায় দুজনকে দেখা গেল। একজনকে চেঁচিয়ে বলল, গাড়ির সবকিছু তল্লাসী কর, এমনকি নীচেও।

এরপরে ও নিজে ছুটে এলিসি প্রাসাদের অপারেশন রুমে ঢুকে গেল। দুজন লোক শক্তিশালী ট্রানসিভারের ওপর ঝুঁকে আছে আর তৃতীয়জনের দৃষ্টি ক্রিপটোগ্রাফারের দিকে। সংকেত আদান প্রদান হচ্ছে।

ফ্ল্যান্ড্রেসকে দেখেই ওর হাতে খবরের কয়েকটা গোছা দেবার চেষ্টা করলো। ওকে জানানো হলো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এগারোটায় ওরলিতে পৌঁছেছেন।

–তাহলে বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে যেতে দেড় ঘন্টার মত সময় লাগবে। সব চেয়ে ভাল হবে রুটগুলো সমস্ত বন্ধ করে দিলে। তাহলে ব্যাপারটা এলোমেলো হয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে আমেরিকান স্টাইল।

–ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্পেশাল ফ্লাইটে চার্লস শ্যেগল-এ পৌঁছোচ্ছে ঠিক দশটার সময়।

একটু থেমে বলল, আগামীকাল সকাল নটা তেত্রিশে জার্মান চ্যান্সেলার মিউনিখের হাউপ্টব্যানহফে এক্সপ্রেসে…।

–এটা আমি জানি। ফ্ল্যান্ডেস বলল।

–কিন্তু বন থেকে একটা অদ্ভুত সিগন্যাল আসছে। ব্যাপারটা দুর্বোধ্য। কিপটোগ্রাফার ওকে জানাল।.

ফ্ল্যান্ড্রেস ঘর ছেড়ে করিডোরে গেল। বনের সিগন্যাল…সিগন্যাল। ওর উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে।

***

ঠিক ছটা। স্থান চ্যান্সেলারী বনশহরের কিছুটা দূরে ছোট্ট শহরের আধুনিক বিল্ডিং। ল্যাংগারের সব দেখা শেষ হতে স্টোলারের মুখে প্রশান্তির হাসি।

মিউনিখ থেকে হেঁটে আসছে। অসুবিধা হয়নি।

স্টোলার এলিসি প্রাসাদে কোড সিগন্যাল পাঠিয়েছে। হেড কোয়ার্টার ওখানেই। রয়েছে ফ্ল্যান্ড্রেস। সুতরাং চিন্তার কারণ নেই। এরপর ট্রেন যখন ছাড়লো দ্বিতীয় সংকেত পাঠালো।

স্টোলার ভাবল, কাজ প্ল্যানমাফিকই এগোচ্ছে…।

ট্রেন তখন চলেছে গন্তব্য অভিমুখে।

ছটা। হিথরো বিমান বন্দর। ফ্লাইট এল এইচ তিনশ সাঁইত্রিশ মিউনিকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। শেষ মুহূর্তে দুজন যাত্রী প্রথম শ্রেণীর সীটে বসেছে। স্পেশ্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট।

ম্যাকনেইল আর ম্যাসন সাধারণ চ্যানেলেই যাচ্ছিল। ওরা অফিসের মধ্যে ছিল। এরপর যখন ওরা এয়ারপোর্টের দিকে এগোলো, একজন মহিলা ওদের সীটের কাছে নিয়ে গেল। ভি. আই পি দের এটাই ভাল। ম্যাকনেইল বিড়বিড় করে বলল। বিমান উড়ে চলেছে।

ঠিক সাড়ে সাতটা। হিথরো বিমানবন্দর। নির্ধারিত সময়েই ফ্লাইট বি. ই ০২৬ প্যারিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ম্যাকনেইল জেনেছে হাওয়ার্ডও একই ফ্লাইটে প্রথম শ্রেণীতে ভ্রমণ করছে।

শেষ মুহূর্তে টুইড বিমান ধরতে পেরেছে। সামনে তাকালো টুইড। হাওয়ার্ড-এর মাথার পেছনটা দেখা যাচ্ছে।

বিমান এল. এইচ, ০৩৭ ফ্লাইটের বিমান যে মুহূর্তে জার্মানীর সীমা অতিক্রম করছে ম্যাসন ম্যাকনেইলকে বলে উঠল, আমরা এই ফ্লাইটে যাচ্ছি এটা মাৰ্টেলকে জানানো প্রয়োজন। পাইলট রেডিওতে…।

–কিন্তু ও তো আমাদের আশা করছে। ম্যাকনেইল বলল।

–হ্যাঁ। কিন্তু ব্যাপারটা জানানোই উচিত। কোন সুযোগ, ম্যাসন বলল। পরিচয়পত্র দেখিয়ে পাইলট কেবিনে ঢুকে ওয়ারলেস অপারেটরের দিকে তাকালো। পাইলট ঠিক আছে জানাল। এজেন্ট প্যাডে খবরটা লিখতে বলল। মিউনিখ টেলিফোন নাম্বারে ফোন করতে হবে। কোড নামে সই করা আছে। অপারেটর সবটা পড়ল। ও কেবিন থেকে বেরিয়ে এল।

– টেলিফোন নাম্বার মিউনিখ। ম্যাকনেইল আর আমি…গুস্তাভ?

 সংকেত সম্ভবতঃ ঠিক জায়গাতে পৌঁছেচ্ছে। সেই সঙ্গে বিমানও।

মিউনিখের অ্যাপার্টমেন্টে একটা গ্লাভস পড়া হাত রিসিভারটা তুলল।ও প্রান্তের মহিলা কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে। ম্যাকনেইল আর আমি ফ্লাইট…।

ধন্যবাদ জানিয়ে ম্যানফ্রেড ফোন রেখে, আবার তুলে ডায়াল করল। ও প্রান্তে এডুইড ভিনজ

–তুমি এয়ারপোর্টে একটা টীম নিয়ে যাও।

সংক্ষিপ্ত নির্দেশ দিল। এরপর ও ঘড়ি দেখল। ভি নিশ্চয় ঠিকসময়ে পৌঁছে যাবে। ম্যাসন এখন কুড়ি হাজার ফুট উঁচুতে। দুজনের শেষ হওয়া দরকার।

–পুরুষ নারী দুজনকে হত্যা করো।

***

মিউনিখ বিমানবন্দরের বেরোবার মুখে একটা বুকস্টলে মার্টেল দাঁড়িয়েছিল। অন্যপ্রান্তেকালো চশমা চোখে ক্লেয়ার।

অবশেষে বিমান নেমেছে। সুটকেশ হাতে ম্যাকনেইলকে মার্টেল দেখতে পেল। পাসে ম্যাসন। খানিকটা এগিয়ে দুজনে আলাদা হয়ে যেতেই মার্টেল বিস্মিত হলো। সঙ্গে সঙ্গে ক্লেয়ারকে ও সংকেত করলো। ম্যাকনেইলকেও চিনতে পেরেছে। ক্লেয়ার মার্টেলকে দেখে বুঝল কোথাও একটা গণ্ডগোল হয়েছে।

ব্যাগের পিস্তলটা বাগিয়ে ধরলো। সুটকেস হাতে ম্যাকনেইল এগিয়ে আসছে। পাইলটের ইউনিফরম পরা লোক হঠাৎ সাইলেন্সার পিস্তল বের করেছে। মার্টেল চীৎকার করে ম্যাকনেইলকে শুয়ে পড়তে বলল। ক্লেয়ার সতর্ক। সঙ্গে সঙ্গে ও শুয়ে পড়ল। মার্টেলের বুলেট ভিনজের পিস্তল লক্ষ্য করে কয়েকবার ছুরতে ভিনজ মেঝেতে পড়ে স্থির হয়ে গেল। পাইলটের ইউনিফরম পরা লোকটার লক্ষ্য ম্যাসন। সিগারেট মেশিনের কাছে ও দাঁড়িয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে বুলেট ছুটে এসে অ্যালেনের পেছনে লাগলো। মেশিনের ওপর পড়ে ম্যাসন নিশ্চল হয়ে গেল। ক্লেয়ারের পিস্তলের গুলি ম্যাসনের হত্যাকারীকে শেষ করে দিল। মার্টেলের চীৎকার শোনা গেল ম্যাকনেইল শুয়ে থাকো।

তিনজনের টীম, প্রত্যেকের হাতে হ্যান্ডগান। সমস্ত জায়গাটায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল। হঠাৎ পরপর গুলির শব্দে তিনজন লুটিয়ে পড়ল।

***

ক্লসল হোটেলে ওরা তিনজন। ম্যাকেনেইল, ক্লেয়ার আর মাৰ্টেল। ম্যাকনেইলের দেওয়া ফটোকপি মার্টেল দেখছিল।

মার্টেল জানালো ম্যাসনই ম্যাকনেইলকে গুম করাতে চেয়েছিল। নিজের ফঁদে নিজেই পড়ল। ও নিশ্চয়ই টুইডের অফিসে গিয়েছিল। ওর পরনেই উইচিটারের পোষাক ছিল। তারপর অস্টিন রীডের চেয়ারে সবকিছু ফেলে রেখে…।

আসলে সমস্ত কিছুই আমাদের বিভ্রান্ত করার জন্যে। ম্যাসন বরাবর টুইডকে অনুসরণ করে ম্যানফ্রেড়কে জানিয়েছে। ফাইল দেখা শেষ করে মার্টেল কাগজে একটা কিছু লিখে ম্যাকনেইলকে দেখালো। ও পড়ে ছিঁড়ে ফেলল। তারপরে বললো, তুমি নিশ্চয়ই টুইডকেও বিশ্বাস করো না।

–দেখা যাক। আমি এখন একটু অন্য জায়গায় যাবো। দরজায় পাহারা আছে। ভয় নেই।

***

দোসরা জুন

রাত সাড়ে আটটা থেকে এগারোটা পঁয়ত্রিশ।

চার্লস দ্যগল বিমানবন্দর। সাড়ে আটটা। বি. ই ০২৬ ফ্লাইট সঠিক সময়ে অবতরণ করলো।

 হাওয়ার্ড নামলো। গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে ফ্ল্যান্ড্রেস।

ফ্ল্যান্ড্রেসের নির্দেশেই ফরাসী নিরাপত্তা বিভাগ ও রিলি আর চার্লস দ্যগলে চেকিং জোরদার করেছে। চেনা মুখও বাদ পড়ছে না। কিন্তু একজনকে ওরা মিস করে গেল। সে এল. এইচ ৩৭ ফ্লাইটে মিউনিখ থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট হয়ে আসছিল। চার্লস দ্যগলে নামল দশটা পনেরোতে। প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের সিকিউরিটি বিনা তল্লাশীতেই ছেড়ে দিল।

মহিলাটির পোষাক কালো। গলায় মুক্তোর হার, মাথায় টুপী। মহিলাটির গোটা মুখ আবৃত। পাসপোর্ট কন্ট্রোল একবার আবরণটা খুলে দেখল। তারপর ও বেরিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে লক্ষ্য করে বলে উঠলো, এমিল ট্রেন ছাড়ার একঘণ্টা বাকি। আস্তে চালাও। সামিট এক্সপ্রেস ছাড়ার ঠিক পাঁচমিনিট আগে আমি পৌঁছতে চাই।

মহিলাটি স্বয়ং ক্লারা।

গেয়ার দ্য ইস্ট।এগারোটা। স্টেশনে বারো কোচের এক্সপ্রেসটা দাঁড়িয়ে আছে। এর প্রধান ইঞ্জিন ড্রাইভার চেক করে নিচ্ছিল। কেবিনও চেক করে নিল।

ইঞ্জিনের পেছনের ছটা কোচ সংরক্ষিত। গ্রেট বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী লোকোমোটিভের পেছনের কোচে।

দ্বিতীয়টায় রয়েছে ফরাসী প্রেসিডেন্ট।

অ্যালেন ফ্ল্যান্ড্রেস দাঁড়িয়েছিল। প্রেসিডেন্ট ঢোকার পরে ওর মুখমণ্ডলে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।

ফ্ল্যান্ড্রেস পাশের বুজারকে উদ্দেশ্য করে বলল, সামনের রাতটা অত্যন্ত দীর্ঘ, বুঝেছো।

তিন নম্বর কোচ অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্টের জন্য সংরক্ষিত। ওরলি থেকে ওর ওঠার কথা। চার নম্বরটা চ্যান্সেলার ল্যাংগারের জন্যে। তার পরেরটা যোগাযোগ রক্ষাকারী। একটা সেকশান পুরোটাই হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যে রাখা হয়েছে। নিউক্লিয়ার সংযোগ ব্যবস্থা সুরক্ষিত। একটা রেস্তোরাঁ কারও যুক্ত আছে। সবারই একসঙ্গে আলোচনা করার কথা। চতুর্দিকে কড়া পাহারা।

খানিক পরেই ও’মিয়েরা এসে নামলো। স্টেশনে ঢুকতে না ঢুকতেই আমেরিকান নিরাপত্তার লোকেরা গাড়িটাকে ঘিরে ফেলল।

ট্রেন ছাড়তে মিনিট তিনেক বাকি। ঠিক সেই সময়ে একটা লিমুসিন গাড়ি দ্রুতবেগে স্টেশনে ঢুকল। এক মহিলা নেমে টিকিট দেখিয়ে ঢুকলো। পাসপোর্টটা ভুলে গেছিল। শোফার নিয়ে এল ওটা। মহিলাটি জাতিতে সুইস। হাওয়ার্ড দূর থেকে মহিলাটিকে লক্ষ্য করছিল। কেতাদুরস্ত মহিলা ট্রেনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে কোচে। ঠিক তারপরেই হাওয়ার্ড ঢুকলো।

এরপরেই একটা ক্যাব এসে থামল। একজন চশমা, টুপী পরিহিত ব্যক্তি নেমে ভাড়াটা মিটিয়ে দিল। হঠাৎ সেই যাত্রীকে দেখে ট্রেন থেকে প্ল্যাটফরমে নেমে বলল,

টুইড। তুমি এখানে কেন, এখানে তোমার আসা নিষিদ্ধ, তা বুঝি জানো…।

–তোমার বলার কোন অধিকার নেই, টুইড কার্ডটা দেখাল। ততক্ষণে ও’মিয়েরা এসে দাঁড়িয়ে বলল, কি হচ্ছে এখানে?

দূর থেকে ফ্ল্যান্ড্রেসও এগিয়ে আসছে, মিয়েরা পাসপোর্ট দেখে অবাক। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর। হাওয়ার্ড ফেটে পড়ল। আমি তো এসব জানি না।

টুইড বললো, কারণ জানানো নাও হতে পারে।

ফ্ল্যান্ড্রেস ততক্ষণে টুইডকে হাত ধরে নিয়ে যেতে উদ্যত হলো। ওর সঙ্গে টুইড প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করলো।

ফ্ল্যান্ড্রেস বলল, স্লিপিং কামরা। একজন সুইস মহিলা আছে।নাম ইরমা রোমার। তুমি একবার বার্নেতে ফার্দি আরন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেনে নাও এই মহিলার পাসপোর্ট ও দিয়েছে কিনা কিংবা আদৌ ঐ নামের কেউ আছে কিনা।

সামিট এক্সপ্রেস দুলে উঠলো। গেয়ার-দ্য ইস্ট ছেড়ে এবার পূর্ব দিকের পথে।

 এবারে ঐতিহাসিক ভ্রমণের শেষ পর্যায় অর্থাৎ ভিয়েনা। আর সাতশো মাইল দূর।

***

তেসরা জুন : একটা থেকে আটটা দশ

 টুইড জানলো হেইসের কাছে কোনরকম অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে কিনা।

টুইডের প্রশ্নে সহকারী হেইস খানিকটা বিব্রত বোধ করল।

এক্সপ্রেস প্যারিস থেকে নব্বই মাইল দূরে। গতি ঘণ্টায় আশি। টুইডকে প্রথমটায় উপেক্ষা করতে হেইসকে ও পরিচয় জানালো।

হেইস ওকে জানাল, স্টোলার নাকি নিরুদ্দেশ। যখন ও এলিসিতে ছিল তখন ফ্ল্যানড্রেসের কাছে বন থেকে এই সতর্কবার্তা এসেছে।

হেইস আবার জানালো, কোথায় ওকে পাওয়া যাবে কে জানে। টেলিপ্রিন্টারে নিশ্চয়ই।

হাওয়ার্ড এদিকে টেলেক্সে পাওয়া খবর অকস্মাৎটুইডকে জানালো, তোমার খবর পাওয়া গেছে ফার্দি আরন্ডের কাছ থেকে। ইরমার পাসপোর্ট চারবছর আগে ওখানে ইস্যু করা হয়েছে।

ও’মিয়েরা ততক্ষণে ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। হাওয়ার্ড ওকে দেখে চীৎকার করে উঠল, তুমি কেন এখানে?

ও’মিয়েরা একবার জিজ্ঞেস করল, ব্রিটিশ সিকিউরিটির চার্জে কে আছে? হাওয়ার্ড না টুইড?

টুইড বলল, এই মুহূর্তে চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণভার ফ্ল্যাড্রেসের হাতে। আমরা ফরাসী অঞ্চল অতিক্রম করছি।

ট্রেন ছুটে চলেছে। কেউই ঘুমোয়নি। ও’মিয়েরা সিগারেট টানছে। টুইড স্টোলারের নিরুদ্দেশ নিয়ে ভাবছে।

ট্রেন জার্মানীর কেল-এ পৌঁছাতে টুইড সোজা হয়ে বসল। ক্লার্কের কাছে খবরটা চাইল। ও’মিয়েরা ঠিক সেই সময়ে জেগে বলল, কি ব্যাপার?

ও মোটেই ঘুমায়নি। পিস্তল উঁকি মারছে। ইতিমধ্যে হাওয়ার্ডও এসে পড়ল। ল্যাংগার সামিটে উঠবেন কেল থেকে। আবার জানাচ্ছি কেল মিউনিখ নয় কেল স্টোলার।

–ও যে দুঃস্বপ্ন, ব্যাপারটা কি? হাওয়ার্ড বলল। অন্য তিনজন সিকিউরিটি চীফও রয়েছে। ফ্ল্যানড্রেস এসে যুক্ত হলো।

ট্রেনের গতি মন্থর হলো। কেল-এ থামল।

ফ্ল্যান্ড্রেস চারনম্বর দরজা খুললো। ঠিক সেই মুহূর্তে ল্যাংগার ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।

ফ্ল্যান্ডেস গার্ডকে সংকেত দিয়ে দরজা বন্ধ করল। ট্রেন চলতে আরম্ভ করলো। এবার ব্যাভেরিয়াগামী।

ফ্ল্যানড্রেস সবাইকে জানাল, স্টোলারের খবর চ্যান্সেলার দিতে পারলো না।

হাওয়ার্ডের এবার ডিউটি আরম্ভ হবে। টুইডের দিকে একবার তাকালো। টুইড সমস্ত কিছু দেখে যাচ্ছে।

বার্ণেতে দ্বিতীয়বার সিগন্যালে এসে থামল।

 বিষয়। ইরমা রোমার।

 উচ্চচা : পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি।

ওজন : একশ কুড়ি পাইন্ড।

 চোখের রঙ : বাদামী।

পরিচয় : এক শিল্পপতির স্ত্রী।

নাম : এক্সোল রোমার।

 বয়স : চৌত্রিশ বৎসর।

গন্তব্য : লিসবন, আর্নল্ড, বার্নে।

টুইড পড়ে হাওয়ার্ডের হাতে দিল। পড়ে বলল, ওর সঙ্গে মিলছে না।

ফ্ল্যান্ডেস বলল, এখুনি যাওয়া দরকার স্লিপার কোচে। পরে জানা গেল। ইরমা রোমার ভাল লাগছেনা এই কারণ দেখিয়ে স্টার্টগাটেই নেমে গেছে। স্টার্টগাটেই…পৌঁছানোর সময় ছটা একান্ন মিঃ, ছাড়বার সময় সাতটা তিন। মাত্র বারো মিনিট স্টপেজ। প্রতি স্টপেই লক্ষ্য রাখা হচ্ছে কে নামছে, কে উঠছে, সমস্ত কোচগুলোতেই।

প্রথম শ্রেণীর ডেকোচে এক মহিলা যাত্রী নিবিষ্ট মনে অ্যামেরিকান ভোগ-এর একটা কপি পড়ছিল।

পরিষ্কার করে চুল আঁচড়ানো। চোখে চশমা, আমেরিকান পোষাক পরণে।

মহিলার পাসপোর্ট অ্যামেরিকান। পেশা উল্লেখ আছে, সাংবাদিক। তাহলে, ভালো লাগছে না এই কারণ দেখিয়ে নেমে যাওয়া মহিলাটি হচ্ছে আসলে দিয়েত্রিচের মিসট্রেস স্বয়ংক্লারা বেক? বর্তমানে সাংবাদিক।

সাংবাদিক পামেলা ডেভিস। স্টার্টগার্ট স্টপে অ্যাটেনডেন্টের চোখে ধূলো দিয়ে টয়লেটে গিয়ে ছদ্মবেশটা ঠিকঠাক করে নিয়েছিল। আসলে ও ট্রেন থেকে মোটেইনামেনি। টয়লেটে কালো চুলের ওপর সাদা চুলের উইগ পড়েছিল। সুটকেশে ছিল দামী পোষাক। ঠিক পোষাক পড়ে নিয়েছিল। তারপর সুটকেস বন্ধ করেছিল। ওটাকে ফেলে দেওয়াই সব চাইতে উপযুক্ত।ইরমার পাসপোর্টের জায়গায় ব্যাগে পামেলা ডেভিসের পাসপোর্টটা রেখেছিল ও। ব্যাগে ভিয়েনা যাবার একটা টিকিট ছিল।

পামেলা অর্থাৎ ক্লারার চোখে কিছুই এড়ায়নি। এখন ও অপারেশনের জন্যে প্রস্তুত। বলা যায় শেষ পর্যায়।

উলম এ স্টপেজ দু-মিনিট। টুইড প্ল্যাটফরমে দাঁড়িয়ে। হফারকে ওর চিনতে অসুবিধে হয়নি। মার্টেল শুধু যে সুইস মহিলার কথাই বলেছে তা নয়। স্পেশাল কার্ডের সঙ্গে পাশপোর্ট ফটোও দিয়েছে।

সামিট এক্সপ্রেস আসার আগে থেকেই ক্লেয়ার প্ল্যাটফরমে অপেক্ষা করছিল। হাতে সুটকেস আর হ্যান্ডব্যাগ। চোখে চশমা। ট্রেন থামতেই ওয়েটিং অফিসিয়ালকে টিকিট দেখাল। উঠবে প্রথম শ্রেণীর কোচে। কামরা ফাঁকা। দূরে একজন মহিলা বসে। ওর নাম পামেলা ডেভিস।

–আরে কি সৌভাগ্য মিস হফার। ও প্রায় লাফিয়ে উঠল। হ্যান্ডব্যাগ থেকে পিস্তলটাও বের করেছে ততক্ষণে। ঠিক সেই সময়ে লম্বা লোকটা নরম স্বরে বললো, ভয় নেই। আমি ক্ষতিকর ব্যক্তি নই। ও সবিস্ময়ে দেখল এরিখ স্টোলার। এক্সপ্রেস পূর্বদিকে যাত্রা আরম্ভ করেছে।

***

তেসরা জুন, বুধবার।

সময় আটটা থেকে আটটা পঁয়তাল্লিশ মি.।

 ব্রেজেঞ্জে ক্যাব ড্রাইভারকে রুমনস্ট্রাসে সমাধি-তে নিয়ে যেতে বলল। তাড়াতাড়ি।

সমাধি ক্ষেত্রে এসে সমাধি ফলকগুলো দেখে ও খানিকটা বিভ্রমে পড়ল। আজই তো ঠিক দিন। ঘড়িতে সকাল আটটা। প্রতি সপ্তাহে এই দিনে, এই সময়ে আসে ও।

বৃষ্টিতে রেনকোটটা ঠিক করে নিলো।

হঠাৎ মার্টেলের চোখে পড়ল, এক মহিলা মাথায় লাল রুমাল, হাতে একগুচ্ছ ফুল সমাধি ফলক গুলির দিকে হেঁটে যাচ্ছে। মহিলা যে ফলকটির কাছে দাঁড়ালো তাতে লেখা আছে অ্যালাইস স্টোর, ঊনিশশ ত্রিশ ঊনিশশ তিপ্পান্ন। মার্টেল ওর পিছনে নিঃশব্দে গিয়ে দাঁড়ালো।

ফুল দিয়ে মহিলাটি পেছন ঘুরতেই মার্টেলের মুখোমুখি। মার্টেল বলল, ভয়ের কিছু নেই। নিজের পরিচয় দিল ভিয়েনার সিকিউরিটি পুলিশ। অ্যালাইস স্টোরের সম্বন্ধে কিছু তথ্যের প্রয়োজন।

মহিলাটির পুরোন বন্ধু অ্যালাইস। তিরিশ বছর আগে মারা গেছে, যখন ফরাসী সৈন্যরা ডোরালবার্গ অধিকার করেছিল। মহিলাটির চোখে সতর্কতার আঁচ পেল মার্টেল। ট্যাক্সি অপেক্ষা করছে, আর কথা সম্ভব নয় বলে চলে গেল।

***

ব্লুমস্টাসেতে বড় ভিলা। দরজায় আটটা নাম। প্রত্যেকের নামের পাশে বেল পুশ। মার্টেল দরজা খুলতে যে নামটা দেখলো তা ক্রিশ্চিনা ব্র্যাক।

মহিলার সঙ্গে কথাবার্তায় যা জানা গেল তা হল : মিঃ স্টোর বলে এক ভদ্রলোককে ও ভালবাসতো। কিন্তু বিয়ের পরই ও মারা যায়। দুজন সিকিউরিটির লোক এসে ওকে খবরটা দেয়। ওদের পরণে সিভিল পোষাক ছিল। ওরা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছিল যে ব্যাপারটা গোপন কারণ ওর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে সোভিয়েট বিরোধী কাজকর্মে লিপ্ত ছিল। ও লেফটেন্যান্ট ছিল। মৃত্যুর পর নিয়মিত পেনস ও পাচ্ছে। মৃতদেহ শনাক্ত করেছিল মহিলাই। তারপর ওকে অন্য নামে সমাধিস্থ করা হয়। কারণ সোভিয়েট বিরোধী অপারেশনে ঐ নামটা জীবিত রাখার প্রয়োজন ছিল।

মার্টেলের মনে পড়ল ওরা দুটো খুন করেছিল। একজনের ঘাড়টা ভাঙ্গা ছিল আর দ্বিতীয়জনের দেহটা লেকের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল। মার্টেল একটা সম্প্রতি ভোলা ফটো মহিলাটিকে দেখাতেই ক্রিশ্চিনা নিথর হয়ে গিয়ে বলল, এতো আমার স্বামী, মিঃ স্টোর। ব্যাপারটা তো কিছুই…।

মার্টেল শান্তভাবে জানালো, এ তোমার স্বামী নয়। অনেকটা ঐরকম দেখতে। তোমার স্বামী। তিরিশ বছর আগেই মারা গেছে।

উঠে দাঁড়ালো মাৰ্টেল, বলল, তোমার সামনে এখন একটা বিপদ আসছে। তুমি বরং আমার সঙ্গে কয়েকদিন নিরাপদ জায়গায়…।

মার্টেল ক্রিশ্চিনাকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে ড্রাইভারকে ক্যাব নিয়ে কাছাকাছি এয়ারস্ট্রিপ এ নিয়ে যেতে বলল।

প্রথমে ওর হাউপ্টব্যানহফ-এ যাওয়া প্রয়োজন। ওখানে ক্রিশ্চিনাকে একটা হোটেলে রাখা প্রয়োজন। তারপর…।

***

তেসরা জুন, বুধবার : মিউনিখ :

এক্সপ্রেস উলম ছাড়ার পর এরিখ স্টোলার কমিউনিকেশন কোচে উঠেছিল। হাওয়ার্ড তো রীতিমত ক্ষুব্ধ।

ওরা দুজন কমিউনিকেশন কোচের একটা বক্সে বসলো। এরিখ জানালো মার্কেলের সহকর্মী ক্লেয়ার হফার উলম এ ট্রেনে উঠেছে ফার্স্ট ক্লাসে। ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে। টুইড তাই জানালো ওর কাছে একবার যাওয়া প্রয়োজন। ওরা দুজনেই মার্টেল যে কোথায় আছে এই নিয়ে চিন্তিত। এরিখ জানালো চ্যান্সেলার ল্যাংগারই খুনীর লক্ষ্য। ব্যাভেরিয়ার নির্বাচনে, ক্রেমলিনের পুতুল টফলার নাজীদের ব্যবহার করে জনসাধারণকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছে যাতে ভোট ওর পক্ষে যায়। সেই কারণেই ল্যাংগারকে সরানো প্রয়োজন। তাহলে ব্যাভেরিয়া উনিশশ উনিশ-এর মতো সোভিয়েটের হাতে চলে যাবে। মিউনিখেই ওকে খুনের ব্যবস্থা করেছিল, সেজন্যই স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু সম্ভাব্য খুনী কে? টুইড জানালো বলা একেবারেই সম্ভব নয়। এরিখকে নতুন ধরনের অ্যালার্ম ডিফাইজএনে দিতে বললো। যন্ত্রটা প্লাস্টিক বাক্সর মতো। শক্তিশালী টর্চ, আবার বোতাম টিপলে সাইরেনেরও কাজ করে। টুইড হাতে নিয়ে এগোল।

***

মার্টেলের গাড়ি ইসার নদীর পাশ দিয়ে চলেছে। ওখানেই স্টল বলে একজনের মৃতদেহ। পাওয়া গেছিল।

হাতের ঘড়িটায় লেখা ছিল, না হলে শনাক্ত করা অসম্ভব ছিল।

মার্টেল গাড়ি থেকে নেমে বাকিটা দৌড়ে এগোল। ঘড়িতে নটা তেইশ মিঃ। সুন্দর সকাল। স্টেশনে সামিট এক্সপ্রেস পৌঁছতে আর দশ মিনিট বাকি। চ্যান্সেলার যদি খুন হয় তাহলে টফলারের হাতে ক্ষমতা চলে যাবার সম্ভাবনা।

***

শব্দ হতেই ম্যানফ্রেডের হাত রিসিভারের দিকে গেল। অ্যাপার্টমেন্টের সামনে ওর প্যাক করা সুটকেশ রাখা।

কণ্ঠস্বর বলে উঠলো, এওয়ার্ড পোর্টজ বলছি। আমি প্রস্তুত।

সময়টা ঠিক রাখবে।

 ওদিকে মিউনিখের হাউপ্টব্যানহফে একটা ফোন বুথে পোর্টজ ফোন করছিল। তরুণ-যুবক। ফোনটা রেখে দিল।

এদিকে ম্যানফ্রেড সুটকেস হাতে নিয়ে দরজা বন্ধ করলো। হাতে গ্লাভস। পোর্টজ নিশ্চয়ই প্রস্তুত হয়ে আছে। যে মুহূর্তে প্রকৃত খুনী চ্যান্সেলারকে গুলি করবে, ঠিক সেই সময়ে ও ফাঁকা আওয়াজ করবে। তারপর পালাবার ব্যবস্থা করবে। এই কৌশলে আসল খুনী পশ্চাতে থাকবে।

 ফ্ল্যাড্রেসের গাড়ি পার্ক করা হল। চশমাটা ঠিক করে ও গুপ্ত গ্যারেজের দিকে রওনা হলো। ওখানেই দিয়েত্রিচের সঙ্গে ওর চূড়ান্ত আলোচনা পর্ব। শেষ প্রস্তুতি।

***

সমস্ত ব্যাপারটা হতাশাজনক। মাৰ্টেলকে ট্রেনটা ধরতেই হবে। হাউপ্টব্যানহফে ট্রাফিক ব্যবস্থা জঘন্য। মার্টেল সামনের দিকে এগোতে লাগল।

ভিড়ের মধ্যেই দ্রুত এগোচ্ছিল। সময় ঠিক নটা একত্রিশ। সামিট এক্সপ্রেস পৌঁছতে আর দু-মিনিট বাকি।

মার্টেল দ্রুত স্টেশনে ঢুকল। চারদিকে পুলিশ কর্ডন। চ্যান্সেলারের জন্যে সবাই অপেক্ষমান। মার্টেল তাকালো। সামিট এক্সপ্রেস সবেমাত্র থামল। প্রাণপণে ছুটল ট্রেনের দিকে।

ক্লারাকে করিডর পেরিয়ে বাইরে আসতে দেখা গেল। হাতে সুটকেশ। হারের কামরার দিকে ও তাকালো না। হফার ওর যাওয়ার মধ্যে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করতে লাগল। ওকে কোথায় দেখেছে! মনে পড়ল। বৈরিশ্চার হফের রিসেপশান হলে।

ক্লেয়ার প্লাস্টিক বাক্সটা হাতে নিয়ে কামরা থেকে নেমে ওর পিছু নিল। বেক খানিকটা এগিয়ে সুটকেশটা প্লাটফরমের ওপর রাখলো। তারপর ওর হাতলটা ঘুরিয়ে ওটা রেখে সোজা এগিয়ে গেল। রেস্তেরাঁ থেকে ফ্ল্যান্ড্রেস ব্যাপারটা দেখতে পেয়েছিল। খুবই সন্দেহজনক।

ও দ্রুত স্টেশনের ধারের টিকিট নেবার জায়গাটার দিকে এগোতে লাগল। এদিকে চ্যান্সেলার ট্রেন থেকে নেমে প্লাটফর্ম দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জনতার অভিনন্দন নিচ্ছিলেন।

ক্লেয়ার প্লাসটিকের বাক্সটা প্লাটফরমে নামিয়ে বোতামটা টিপলো। তীব্র স্বরে সাইরেনের শব্দের পর বাক্সটা থেকে ক্লেয়ার লাফিয়ে সরে গেল। ল্যাংগার হঠাৎ শব্দ শুনে অনিশ্চিতভাবে প্লাটফরমের ওপর দাঁড়িয়ে গেল। এরিখ স্টোলার ওর পেছনে। হাতে পিস্তল। তার পেছনে ও’মিয়েরা। ক্লারা বেক পেছন ফিরে হফারকে চিনতে পারলো। হঠাৎ সারা প্লাটফরম জুড়ে তীব্র আলোর ঝলকানি। প্লাটফরমের ওপর রাখা সুটকেশটা ততক্ষণে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়েছে। মাত্র পাঁচ সেকেন্ড। আসল খুনীকে আড়াল করার পরিকল্পনায় এওয়ার্ড পোর্টজ পিস্তলে ফাঁকা আওয়াজ করলো। সেই মুহূর্তে মার্টেল ওর পেছনে। হাতে কাল্ট ৪৫ রিভালভার।

ঠিক সেই মুহূর্তে স্টেশনের একপ্রান্তেফ্ল্যান্ড্রেস নিজের লুগারটা চ্যান্সেলারের দিকে তাক করেছে। মার্টেলের রিভলভার থেকে পরপর তিনটে গুলি বার হলো। কিন্তু ব্যর্থ হলো। ফরাসী ভদ্রলোকের দেহস্পৰ্শকরলোনা।স্ট্যাম্বার্গারহফ স্টেশনের প্রবেশ মুখ দিয়ে ও অদৃশ্য হলো।

ওদিকে ক্লারা পিস্তলের ট্রিগার টিপতে উদ্যত। লক্ষ্য ক্লেয়ার হফার, ঠিক সেই মুহূর্তে স্টোলারের পিস্তল গর্জে উঠল আর বেক ছিটকে পড়ল।

অন্য প্রান্তে ও’মিয়েরা নিজের ৩৮ স্মিথ-ওয়েসন পিস্তল পোর্টজ-এর দিকে উদ্যত।

পোর্টজ ব্ল্যাংক ফায়ার করার পরে ইউ ব্যান-এর দিকে পালাতে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময়ে গুলিটা ওর পিঠে ঢুকল আর সঙ্গে সঙ্গে ওর নিশ্চল দেহটা পড়ে রইল মাটিতে।

স্টানবার্গারহফ থেকে ট্রেন সবেমাত্র ছাড়ছে। অ্যালেন ফ্ল্যান্ড্রেস প্লাটফরমের ওপর দিয়ে  দৌড়াচ্ছিল। সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। কামরার কাছে এসে দরজার হাতলটা ঘুরিয়ে খুললো দরজাটা, ঠিক সেই সময় গার্ড চীৎকার করল। মার্টেল দৌড়ে আসছিল সেদিকে। ফ্ল্যান্ড্রেস অর্ধেক ঢুকছে ট্রেনের কামরায়। বাকি অর্ধেক বাইরে। মার্টেল পরপর দুবার গুলি চালাল পিঠ লক্ষ্য করে।

এদিকে ট্রেনের গতিবেগ বেড়েছে। ফ্ল্যাড্রেসের দেহটা স্ট্যাচুর মতো খানিকটা দাঁড়িয়ে প্লাটফরমে আছড়ে পড়ল। মার্টেল ওর নিপ্রাণ–দেহটা পরীক্ষা করল।

***

তেসরা জুন, বুধবার

সামিট এক্সপ্রেসের রেস্টুরেন্ট কারে মার্টেল জার্মান চ্যান্সেলারের মুখোমুখি বসে, সিগারেট ধরিয়ে চ্যান্সেলারের উদ্দেশ্যে বললো, সোভিয়েট যখন তিরিশ বছর আগে ওদের লোক দিয়ে ব্রেজে অধিকার করেছিল, ঠিক তখনই পূর্ব জার্মানীকে প্রক্সি হিসাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

এক্সপ্রেস মিউনিখ ছাড়িয়ে এবার স্যালজবার্গ, তারপর ভিয়েনার পথে। মার্টেল স্বচ্ছন্দে বসে আছে। ওর সামনে দেশের প্রধানমন্ত্রী, অ্যামেরিকার আর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বসে। আর রয়েছে টুইড, স্টোলার, ও’মিয়েরা আর হাওয়ার্ড।

ল্যাংগার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিভাবে ব্যাপারটা ধরতে পারলে?

বলা যায় বিচ্ছিন্ন করার পদ্ধতি। প্রত্যেকেরই ডাবল আছে।

আমি জানতাম আপনার ব্যক্তিগত সিকিউরিটি রয়েছে যদিও আপনি কখনও ব্যবহার করেননি। ওদের একজন লোক ছিল অ্যামেরিকান। হুবহু আসল ফ্ল্যান্ড্রেসের মত দেখতে। ওরা ফরাসী ফোর্সের মধ্যে ডাবল খোঁজার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করছে ভোরালবার্গে, টারলর আর ভিয়েনাতে। অবশেষে পেয়েছিল…।

একটু থেমে মাৰ্টেল বলল, আসল ফ্ল্যান্ড্রেসকে কেউই খুব একটা ভাল চিনতো না।ওকে এমন একটা জায়গায় বদলী করা হয়েছিল যেখানে সবাই নতুন। তারপর…।

চ্যান্সেলার বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলে, তুমি আমাকে বাঁচিয়েছে। কিন্তু ফ্ল্যান্ড্রেসকে চিনলে কি করে?

মার্টেল বললো, এটা একটা বেদনাদায়ক ঘটনা। আমাদের আগে চার্লস ওয়ার্নার এজেন্ট ছিল। ও খুন হয়ে যায়। ওর নোটবুকে ব্রেজেঞ্জ-এর নাম পাওয়া যায়। ওখানে ওর ফটো দেখিয়ে খুঁজতে খুঁজতে একটা সমাধিক্ষেত্রে পৌঁছেই। এখানে এক মহিলার সঙ্গে আমার দেখা হয়। আসল ফ্ল্যান্ড্রেস খুন হবার আগে ওরই সাথে বিয়ে হয়েছিল। পূর্ব জার্মানরা মহিলাটিকে একেবারে বোকা বানিয়েছিল। ওর মৃত স্বামীকে অন্য নামে সমাধি দেওয়া হয়েছিল। এটা এই জন্যে করেছিল যদি সেই নকল ফ্ল্যান্ড্রেস ফ্রান্সে গিয়ে আবার সিকিউরিটি সার্ভিসে ঢোকে তখন যাতে…।

মার্টেল এরপর একটু থামলো। প্রত্যেকে বিস্মিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে।

মার্টেল আবার শুরু করল, ও’মিয়েরার ব্যাপারেও আমরা বাদ দিইনি। টুইড যখন ওর অতীত ব্যাপার খোঁজ করতে ক্লিন্ট লুমিসের সঙ্গে যোগাযোগ করলো তখনই ও খুন হলো। ও’মিয়েরা দুমাস পশ্চিম বার্লিনে ছিল অজ্ঞাতবাসে।

এরপর মার্টেল হাওয়ার্ডের দিকে তাকালো। তারপর বলল, প্রত্যেকটি নিরাপত্তা প্রধানের একই ব্যাপার। যা কে. জি. বি-র কর্নেল পেস্কোভস্কিরও চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। আমরা বিচ্ছিন্ন করার পদ্ধতি অনুসরণ করে এগিয়েছি। হাওয়ার্ড, তোমার ব্যাপারেও সমস্যা আছে। আমরা জানতে পেরেছি প্যারিস দূতাবাসের সঙ্গে তুমি যখন যুক্ত ছিলে তখন তুমি ছ-সপ্তাহ ভিয়েনায় ছুটি কাটিয়েছিলে। তুমি কিন্তু ব্যাপারটা একেবারেই জানাওনি।

এরপর মার্টেল আরম্ভ করলো, এবার অ্যালেন ফ্ল্যান্ড্রেসের প্রসঙ্গে আসা যাক। অ্যালেন ফ্ল্যান্ড্রেস বরাবরই সন্দেহের ঊর্ধ্বে ছিল, অপর তিনজন নিরাপত্তা প্রধানের থেকে। ওর ব্যাকগ্রাউন্ড বলতে কিছুই ছিলনা…।

এরপর মার্টেল বলে উঠলো, এই হচ্ছে সমস্ত ব্যাপার। আমি এখন স্যালবার্গে নেমে ঘুমাবো।

***

রেইনহার্ড দিয়েত্রিচের সঙ্গে ম্যানফ্রেড দেখা করতে যখন আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজে এসে পৌঁছলো তখনই ও সতর্ক হয়ে গেল। বিস্মিত হয়ে দেখলো ম্যানফ্রেড, দিয়েত্রিচের মার্সিডিস পৌঁছে গেছে। ম্যানফ্রেডের ওপর কড়া নির্দেশ ছিল আগে পৌঁছনোর।

ঘড়িটা দেখে ম্যানফ্রেড বুঝল ও নিজে সঠিক সময়েই পৌঁছেছে, দেরী করেনি। দিয়েত্রিচই তাড়াতাড়ি পৌঁছেছে। চারপাশটা ফাঁকা।

এক হাতে হুইল ধরে অন্য হাতে জানলাটা খুললো ম্যানফ্রেড, তারপর পাশে রাখা সাইলেন্সার লাগানো পিস্তলটা নিলো। এরপর দিয়েত্রিচকে ও দেখতে পেল।

দিয়েত্রিচকে লক্ষ্য করে ও বলে উঠল, তুমি খুব তাড়াতাড়ি এসেছে।

–আমি তোমায় বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু সমস্ত ব্যাপারটা নষ্ট করার জন্যে তুমিই দায়ী। কঠিন কণ্ঠে দিয়েত্রিচ বললো। গাড়ির মধ্যে বসেছিল। সামনের জানলাটা খোলা। ডান হাতে পিস্তল, বাঁ হাতে একটা গোলাকার ধাতব-পদার্থ।

ম্যানফ্রেড বলল, কারণ ল্যাংগার খুন হয়নি। আর ওর দল জিতে যাবে?

–হ্যাঁ। আমার সঙ্গে তুমি চালাকি করেছো। তুমি ডেলটাকে অস্ত্র সরবরাহ করার কথা বলে কাজ করেছিলে। আমি তোমায় সব সময় ডাম্প এর লোকেশান বলে গেছি। তুমি আর আমি ছাড়া ব্যাপারটা কেউ জানতো না। এবার বুঝেছি স্টোলারকে তুমিই সব জানিয়েছো। তুমি –তুমি একজন বদমাইস-বেলশেভিক–

দুজনেরই মুখ কঠিন। ম্যানফ্রেড রিভালভারটা তুলে দুবার গুলি ছুঁড়ল। দিয়েত্রিচ ডান পা দিয়ে লাথি মেরে দরজাটা পুরো খোলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সফল হলোনা। গুলি খেয়ে আছড়ে পড়ল। ওর পাঁজর ভেদ করে ঢুকে গেছে ম্যানফ্রেডের বুলেট। প্যাসেঞ্জার সীটের ওপর পড়ে রইল ওর নিশ্চল–দেহটা।

এদিকে ওর হাত থেকে গড়িয়ে গোলাকার বস্তুটা কখন ম্যানফ্রেডের গাড়ির তলায় চলে গেছে ও খেয়াল করেনি। এটা নতুন একধরনের বোমা।

***

হাউপ্টব্যানহফের স্যালজবার্গ প্লাটফরমে তিনজন দাঁড়িয়েছিল। মাৰ্টেল, টুইড আর হফার। ওদের সামনে থেকে সামিট এক্সপ্রেস ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে নিজের পরবর্তী গন্তব্যস্থলে। দূরে দূরে বহুদূরে। এবার গন্তব্যস্থল ভিয়েনা, তাহলেই যাত্রা শেষ। টুইড বলে উঠলো, আমি এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। তিন সপ্তাহ থাকবো। ক্লেয়ারের দিকে তাকালো টুইড। বললো, চলি।

টুইডের দীর্ঘ শরীরটা আস্তে আস্তে ওদের চোখের সামনে থেকে সরে যেতে যেতে মিলিয়ে গেল।

ক্লেয়ার মার্টেলের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো, পরিস্থিতির সঙ্গে ঠাণ্ডা মাথায় লড়াইয়ের ক্ষমতা ওর আছে।

মিউনিখে ট্রেনটা পৌঁছোবার আগে ও যখন আমায় প্লাস্টিকের বাক্সটা দিয়েছিল তখন তো রীতিমতো চাপা-উত্তেজনা ছিল, টেনশন ছিল। কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছিলাম, ওর মধ্যে কোন আবেগ ছিলনা। অত্যন্ত শান্ত, ধীর আর স্থির ছিল ঐ পরিস্থিতিতেও।

মার্টেল শুনে হফারকে বললো, তুমি তো এখন বার্নেতে রিপোর্ট দিতে যাচ্ছে।

–হ্যাঁ।

মার্টেল বললো, আমাকে এখন ক্লসন হোটেলে যেতে হবে। ওখানে ক্রিশ্চিনা ব্র্যাক রয়েছে। ওকে আবার ব্রেজেঞ্জে পৌঁছে দিতে হবে। ওকে জানাবো যে ওর স্বামীর ভূমিকায় যে কাজ করে যাচ্ছিল, সে মারা গেছে। সত্যিই ওর জীবনটা বড়ই দুঃখময়।

স্যালজবার্গের আকাশে রঙের ছটা লেগেছে।