০৫. যুদ্ধ জাহাজের মতই রোলস রয়স গাড়ি

০৫.

স্টেডিয়ামের গেটে যুদ্ধ জাহাজের মতই রোলস রয়স গাড়ির ভিড়। গাড়ি থেকে নেমে মিস শেলীর সঙ্গে স্টেডিয়ামে পদার্পণ করতেই আমার মনে হল আজকেই সবচেয়ে আনন্দের দিন।

মিস শেলীর চেহারাটা কদাকার হলেও রুচিপূর্ণ সাদা পোষাক ও হীরার গহনাতে সর্বাঙ্গ মোড়া ছিল। আমরা যখন ডিনার খাচ্ছি, তখন সাংবাদিক কয়েকজন ঘন ঘন ছবি তুলছিল। নড়ে চড়ে বসলাম। মনটা খুশীতে মেতে উঠল।

এমন সময় বেশ কাঠখোট্টা গোছের একজন লোক মিস শেলীকে অভিবাদন জানাল। মিস শেলী তার পরিচয় দিলেন আর তাতে বুঝতে পারলাম–ইনি স্যাম লেগো, স্থানীয় পুলিশে রয়েছেন।

ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম ওর সঙ্গে আমার পটবে না। মিঃ লেগো জানালেন তিনি প্যাসিফিক ব্যাঙ্কে পূর্বে আমাকে দেখেছেন।

আমি কেরানীর পরিচয়টা ভুলবার জন্য বললাম কত লোকই তো ব্যাঙ্কে আসে, ঠিক মনে থাকে না।

এরপর মিস শেলীকে নিয়ে এসে রিং এর নির্দিষ্ট ধারে বসলাম।

মিস শেলীকে প্রতিযোগী দুই বক্সার সম্পর্কে পরিচয় দিলাম। মিডিলওয়েট চ্যাম্পিয়ন বক্সার জ্যাক স্লেড আর অখ্যাতনামা ডাকি জোন্স। মিস শেলী সেই অখ্যাতনামা জোন্সের উপর একশ ডলার বাজি ধরল। তাকে বারণ করা সত্ত্বেও সে শুনল না। শেষে জনসনের কাছে গিয়ে জোন্সের উপর মিস শেলীর একশ ডলার আর স্লেডের ওপর আমি পঞ্চাশ ডলার বাজি ধরলাম।

লড়াই শুরু হবার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই জোন্স বিখ্যাত স্লেডকে ঘুষি মেরে চোয়াল ভেঙ্গে দিল। বোঝা গেল স্লেডের এই ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়। মিস শেলী উত্তেজনায় যেন পাগল।

প্রচণ্ড ভিড়। মিঃ লেগো আমাদের ভিড়ের মধ্যে রাস্তা করে নিয়ে এলেন। সে কি দারুণ কষ্ট। একটা আধো অন্ধকার জায়গাতে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। স্টেডিয়ামের গরম হাওয়ার স্পর্শ এখনও অনুভব করছি।

আমি মিস শেলীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম–এখন কেমন বোধ করছেন?

 ভালই। গরম আর উত্তেজনায়–এরকম অনুভূতি আমার আর কখনও হয়নি।

তার চোখের দিকে তাকিয়ে যে দৃষ্টি দেখলাম, তাতে আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তার হাড়ের কাঠামোর উপর সরু চামড়ার শরীরে এমন উত্তেজনা থাকতে পারে যা চরম কামোত্তেজনার চেহারা। তার চোখে মুখে এমন দুর্জয় আসক্তি ফুটে উঠেছে, মনে হচ্ছে সে এখনি সর্বসমক্ষে পথের মাঝেই আমাকে আলিঙ্গন করবে। আমি সংকুচিত হয়ে গেলাম, এক নিদারুণ অনিচ্ছায়।

আমার মনের ভাব মিস শেলী বুঝতে পারল। চট করে বলল–যান, বাজীর টাকাটা এখনি নিয়ে আসুন।

আমি ফিরে এসে দেখলাম–গাড়িটা নেই। মিঃ লেগোর কাছে জানতে পারলাম, মিস শেলী চলে গেছেন।

বোধহয় গরম আর লড়াইয়ের উত্তেজনা–আমার কথার মাঝে মিঃ লেগো বলল–এটা লড়াই না পতন?

আমার চাকুরী জীবনে এরকম অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। আসলে মানুষ যখন চরম আত্মতুষ্টিতে ধরাকে সরা জ্ঞান করে, তখন আচমকা ঘুষি খেয়ে তার চোয়াল ভেঙ্গে যায়, মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আরও কত কী হয়!

আমি তার হাত থেকে বাঁচবার জন্য বললাম ঠিক আছে আমি চলি। শুভরাত্রি জানিয়ে বিদায় নিলাম।

সোজা ফ্ল্যাটে চলে এলাম। দেখলাম আমার পুরোনো প্রেমিকা গ্লোরী একটা ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে। তার বুকদুটো কালো ব্রা ফুঁড়ে বেরুতে চাইছে আর এক চিলতে লাল রংএর জাঙ্গিয়া কোন রকমে লজ্জা স্থানটুকু ঢেকে রেখেছে। তার উরু অবধি নেটের মোজা আর ডান হাতে হুইস্কির গ্লাস।

গ্লোরি আমাকে দেখেই প্রশ্ন করল–এই যে খোকা! ভেন্তালের সঙ্গে খেলাটা কেমন জমল?

বলছি। অপেক্ষা করলে রিসিভার তুলে নিয়ে মিস শেলীর উদ্দেশ্যে ফোন করলাম। মিস ডোলানের কণ্ঠস্বর–শেলী হাউস থেকে বলছি, কাকে চাই?

আমি বললাম–আমি মিঃ উইন্টার্স! আমি মিস শেলীর সঙ্গে কথা বলতে চাই, উনি তো আমাকে না জানিয়ে চলে এসেছে।

ঠিক আছে, আপনি একটু ধরুন,বলল ইভ ডোলানকিছুক্ষণ পরে তার কাছ থেকে জানলাম মিস শেলী শুয়ে পড়েছে। আজ আর কথা হবে না।

আমি বলতে চাইছিলাম কিছু শুনুন মিস ডোলান–যাঃ লাইন কেটে গেল। মরুক গে, যাকগে!

তুমি দেখছি আজকাল বেশ ন্যাকা ন্যাকা অভিনয় করছ। ব্যাপারটা কি বলতো? বোধহয় মিস শেলীকে রাগিয়ে দিয়েছ?–তার কথায় কর্তৃত্বের ছাপ সুস্পষ্ট।

আমি রেগে গিয়ে বললাম–গ্লোরি, তুমি যা বোঝ না, তা নিয়ে কথা বলল না।

গ্লোরি বেশ বিরক্ত হয়েই বলল–ভেবেছিলাম, তোমার কিছু অন্ততঃ বুদ্ধি আছে কিন্তু তুমি–তুমি কিনা সাতকোটি ডলারের মালকিনকে চটিয়ে দিলে।

আমি বাথরুমে যেতে গিয়েও থেমে দাঁড়ালাম। বললাম–তবে না তো কি ঐ রকম একটা কুৎসিতবাঁদরের সঙ্গে প্রেম করব?বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করব? রাস্তার মাঝখানে!

গ্লোরি আমার কাছে এগিয়ে এল।বলল,বুঝছনা কেন, তুমি চুম্বন করবেসাত কোটি ডলারের মুখে, ঐ কুৎসিত বাঁদরটার মুখে নয়। সে আমাকে পরামর্শ দিল মিস শেলীকে বিয়ে করতে।

আমি বিস্মিত হলাম–কি বলছ? ঐ বাঁদরীর সঙ্গে সারা জীবন কাটাতে হবে?

গ্লোরি আমাকে বুঝিয়ে বলল–আগে তোমার কাজ সাত কোটি ডলার হাতান। আর তুমি বিয়ে করবে তার মানে তো এই নয় যে তুমি আর কোথাও মজা করতে পারবে না।

একটু থেমে বলল–তুমি আমাকে একটা ফ্যাশনেবল ফ্ল্যাট কিনে দেবে। সেখানে তো সবসময় তোমার জন্য আমি রেডি হয়ে থাকব। প্রিয় শেড, তুমি এ সুযোগ হাতছাড়া করো না। মিস শেলী যদি তোমার কাছে প্রেম, ভালবাসা না পায়, তাহলে সে বিগড়ে যাবে। হতাশায় দুর করে তোমাকে তাড়িয়ে দেবে। টাকা তো পাবেই না, বড় দুর্নাম হবে তোমার। শেড শোন, সিরিয়াসলি ভাবো।বলতে বলতে গ্লোরি আমাকে পিছন থেকে নিবিড় আলিঙ্গন করল। তার দুই সুপুষ্ট স্তন। আমার পিঠের সঙ্গে চেপে রইল।

গ্লোরি আমাকে পরামর্শ দিল আগামীকাল প্রাতে মিস শেলীর জন্য একগুচ্ছ সাদা ভায়লেট ফুল পাঠিয়ে দিতে।

আমি তার প্রশংসা না করে পারলাম না। অন্ধকারে সব মেয়েই সমান। কিন্তু সাত কোটি ডলার সবসময় সাত কোটি।

.

০৬.

 সাত কোটি ডলারের চিন্তা মাথায় রেখে গ্লোরির পরামর্শ মত এগিয়ে গেলাম আর এক মাসের মধ্যে ভেস্তাল শেলীর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ফেললাম। অবশ্য পরিণয়ে আমার পরিচয়ের পরিণতি টেনে আনতে অনেক বুদ্ধি খাটাতে হয়েছে। তবে একটা সুবিধা ছিল, আমিই একজন সুশ্রী যুবক ওর জীবনে প্রথমে এলাম, তাছাড়া ও কারুর কাছ থেকে ভালবাসা পায় নি।

বিয়ের আগেই ভেস্তাল আমার নামে আড়াই লক্ষ ডলার দিল, যা বাজারে পুরোদমে খাটছে। যা লাভ হবে সবই আমার।

ওর প্রস্তাব কয়েকটা অফিস খুলতে হবে। ওর বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনা করবার জন্য বেশ কয়েকজন লোক নিয়োগ করতে হবে। আর বলাই বাহুল্য, এই কাজে আমার বেশ কিছু লাভ হয়েছে। সাত কোটি ডলারের উপর আমার পুরো অধিকার না থাকলেও ঐ একই অঙ্কের স্টক আর বন্ডের কাগজগুলোকে ধার পাবার জামিন হিসাবে সহজে আমি ব্যবহার করতে পারব। আর ব্ল্যাকস্টেনের সাহায্যে বেশ মোটা অঙ্কের ডলার আমি ঘরে তুলতে পারব। বেশ চমৎকার খেলা শুরু হল।

যাক আমাদের বিয়েতে ভেন্তাল জাঁকিয়ে অনুষ্ঠান করল। তার ইচ্ছা সারা পৃথিবীর লোককে ও দেখাবে, সে একজন সুপুরুষ, সুন্দর, সুশ্রী যুবককে স্বামী হিসাবে বরণ করছে। গণ্ডাখানেক ব্যান্ডপার্টি, ব্যালের অনুষ্ঠান, বেশ জমকালো পোষাক পরে বল নাচ আর দুমদাম আতসবাজী। হাজার খানেক বিশিষ্ট ব্যক্তি আমন্ত্রিত হয়েছে বিবাহ সভাতে।

আমি অবশ্য চেয়েছিলাম চুপি চুপি বিয়ের পাট চুকিয়ে ফেলতে। কিন্তু ভেস্তালের আবদারের কাছে আমার ইচ্ছা ধোপে টিকল না।

বিয়ের পর আমাদের হনিমুন হবে ভেনিসে। ভেস্তালের একটা সুসজ্জিত বিশাল মোটর বোট থাকবেইতালিতে। বোটে করে আমরা যাব ভেনিসে আর প্রথমে আমরা বিমানে করে যাব ইতালীর নেপলসে। দেড় মাস ধরে হবে আমাদের হনিমুন।

এর মধ্যে ক্রাউন বুলেভার্ড এলাকায় কয়েকটা অফিস ঘর নিয়ে লিডবেটার আর মিস গুডচাইল্ডকে কাজের দায়িত্ব দিয়ে নিজের স্বার্থ গোছাতে তৎপর হলাম।

 দেশের সবচেয়ে ধনী মহিলার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে আমার। কেরানী থেকে একেবারে টাকার গদীতে, যা স্বপ্নেও অকল্পনীয়। কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি সুখের মুহূর্ত বেশিদিন থাকে না।

.

০৭.

 বিয়ের রাতে সবাই বোধহয় আমার মনোভাব বুঝতে পেরেছে। ভাবছে, আমি বেশ পাকা খেলোয়াড়। স্বামী স্ত্রীর মিলন বাসর অনিবার্যভাবেই এসে পড়ল অনুষ্ঠান পর্ব শেষ হতে। তখন মাঝরাত। সোজা বিমানবন্দরে এসে আমাদের বিশেষ সংরক্ষিত বিমানে উঠলাম। প্রথমে প্যারিসে এলাম, সেখানে রিৎজ হোটেল, দামী সুইট, রাতটা যেমন করেই হোক ওর সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। সারাটা বিকাল পরিকল্পনা মাফিক ওকে নিয়ে ঘুরলাম। ভোর চারটের সময় হোটেলে পৌঁছোবার পর দেহের মধ্যে শ্রান্তভাব ফুটিয়ে তুলে আমি বিশ্রাম করবার অজুহাত দেখালাম।

ভেস্তাল অবাক হলেও মুখে কিছু বলল না। তারপর কয়েক ঘণ্টা ঘুমোবার পর প্যারী থেকে নোম। রোম থেকে মোটরে করে নেপলসে সেখানে তিনদিন থাকা হবে।

ভেস্তাল দর্শনীয় সব জিনিস দেখে চলেছে। পম্পেই, ক্যাপ্রি, ভিসুভিয়াস। সন্ধ্যাবেলা দুজনে সাঁতার কাটছি, এক সময় ও বলল–শেড ডার্লিং, আজ রাতে একটু তাড়াতাড়ি ফিরব। বিয়ে হয়েছে আজ তিনদিন হল।

ও কথা সম্পূর্ণ না করলেও আমি বুঝতে পারলাম ওর ইঙ্গিত। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলতে ফেলতে কোনরকমে চেপে গিয়ে বললাম–হ্যাঁ ডার্লিং, আজ তাড়াতাড়ি ফিরব।

মনে মনে ভাবলাম–যা কপালে আছে তা তো ঘটবেই। এই যন্ত্রণা আমাকে ভোগ করতেই হবে। সাত কোটি ডলারের কথা চিন্তা করে নিজের মনকে প্রবোধ দিলাম।

অন্ধকারে দুজনে পাশাপাশি শুয়ে আছি। যেন অচেনা পরস্পর। মনটাকে কোনমতে শক্ত করে নাক টিপে ভেস্তালকে দু–চারটে চুম্বন করলাম। পেটের ভেতরটা পাক দিয়ে উঠল। বুঝলাম, ভেস্তাল তৃপ্ত হয়নি। না হবারই কথা কিন্তু আমার মন চাইছে না, সেখানে শরীর সাড়া দেবে কিভাবে?

তারপর থেকে দুজনেই চুপচাপ, বিষণ্ণ। আমাদের সঙ্গে ইভ ডোলানও এসেছিল।

ডোলানকে দেখে তার প্রতি দিনদিন আকর্ষণ আমার ক্রমশই বেড়ে চলেছে।

আমরা ভেনিসের উদ্দেশ্যে জাহাজে চেপেছি। ডোলানকে কায়দা করবার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় রইলাম।

রাতে ডিনার সেরে ডেকে এসেবসলাম–ভেস্তাল নাচের রেকর্ড চালিয়ে আমার সঙ্গে নাচতে চাইল। আমি রাজি না হওয়াতে ও চুপসে গেল।

এদিকে উপসাগর ঘিরে আলোকমালা সুসজ্জিত লক্ষ লক্ষ তারার ঝিকিমিকি লালচে নীল আকাশের ক্যানভাসে।এত চমৎকার দৃশ্য দেখতে দেখতে আমার কেবলি মনে হচ্ছে ইভ ডোলানের কথা।

ব্র্যান্ডি খেতে খেতে আমি উঠে পড়লাম। একটু ঘুরে আসছি, তুমি যাও। নিশ্চয় খুব ক্লান্ত হয়েছ, শুয়ে পড়গে যাও।

ভেস্তাল প্রতিবাদ করে বলে উঠল–আমি মোটেও ক্লান্ত হইনি।

আমি শান্ত গলায় বললাম–একটু ঘুরে আসছি, এখুনিই ফিরব। কিন্তু তুমি যদি ঘুমিয়ে পড় তাই শুভরাত্রি আগেই জানিয়ে রাখলাম।

ওর কাঁধ চাপড়ে নীচের ডেকে নেমে এলাম। চাঁদের আবছা আলোয় ইভকে দেখতে পেলাম। সে লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে এসে ডেকের রেলিংবরাবর হেঁটে যাচ্ছে। আমিও তাকে অনুসরণ করবার জন্য যেই পা বাড়িয়েছি সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম একটা ছায়ামূর্তি ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ওরা আলোতে এসে দাঁড়াল। লোকটি জাহাজের সেকেন্ড অফিসার রোলিনসন। দুজনে পরস্পর ঘনিষ্ঠ হল। গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হল। আমার ভেতরটা হিংসায় জ্বলে গেল। ডোলানের একাকীত্ব ঘোচাতে এসে নিজেই একাকী হলাম।

কিছুক্ষণ পরে নিজের কেবিনে ফিরে এলাম। ভেস্তাল আর আমার ঘরের মাঝে একটা দরজা ছিল, সেটা ভেজান।দরজায় অতি সাবধানে কান পেতে শুনতে পেলাম ভেলের ফোপানি কান্নার শব্দ। তার ঘরের দিকে যাবার জন্য পা বাড়ালেও আমার মন রাজি হল না। অগত্যা নিজের বিছানায় একা শুয়ে পড়লাম।

পরদিন সকাল ছটায় জাগলাম। সূর্যের মৃদু মিষ্টি রোদ একটা সুন্দর আমেজ এনে দেয়। দাড়ি কামিয়ে সাঁতারের পোষাক পরে রেলিং–এর ধারে এলাম। মাত্র ত্রিশ গজ দূরে একটা মেয়ে সাঁতার কাটছে। ভাল করে লক্ষ্য করবার পর দেখলাম মেয়েটি ইভ ডোলান। নিজেকে সামলাতে না পেরে ওখান থেকে ঝাঁপ মারলাম নীল সমুদ্রের উচ্ছল জলরাশির মধ্যে।

তার কাছে পৌঁছে বললাম–সুপ্রভাত, মিস ডোলান।

ডোলানও তার প্রত্যুত্তর দিল।

আমি ডোলানের উদ্দেশ্যে বললাম–আসুন, একসঙ্গে দুজনে সাঁতার কাটি।

মিস ডোলান বলল–ক্ষমা করবেন, এক গাদা কাজ রয়েছে। ব্রেকফাস্ট করেই বসে পড়তে হবে। বলেই সে জাহাজের দিকে ফিরল।

তবে চলুন, একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করি। নাছোড়বান্দা ভাবে বললাম। আমাকে মাপ করবেন, আমি মিসেস উইন্টার্স এর কর্মচারী মাত্র। উনি এসব পছন্দ করবেন না। কথা শেষ করেই সে তাড়াতাড়ি সাঁতরে গিয়ে জাহাজের ঝোলান সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল।

আমি চিৎ হয়ে ভেসে দেখতে লাগলাম। সাঁতারের পাতলা পোষাক ভেদ করে ইভের যৌন স্পষ্ট ভাবে আমার চোখে ধরা দিল। আমার চোখের সামনে তার নগ্ন শরীর বারবার ভেসে উঠবার সঙ্গে সঙ্গে সারা মনে আগুন ধরিয়ে দিল।

তারপর তিনদিন কেটে গেছে। ভেস্তালকে নিয়ে দিনগুলো কাটাতে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। আমার সঙ্গে ভেস্তাল আঠার মত লেগে রয়েছে। আমাকে সুখে আর খুশীতে রাখবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বেচারী। এদিকে আমি ডোলানকেও মন থেকে মুছে ফেলতে পারছি না। ডোলান আমার ইঙ্গিত বুঝেও কায়দা করে এড়িয়ে যাচ্ছে।

কেবলমাত্র লিটল ইডেনে ফেরবার আশায় বুক বেঁধে রয়েছি। একমাত্র তখনি সব ম্যানেজ করতে পারব।

শেড! ভেস্তাল ডাকল, বাধ্য হয়ে তার মুখের দিকে তাকালাম–আমাকে বিয়ে করে তুমি বোধহয় সুখী হও নি, এখন অনুতাপ করছ, তাই না?

ভেস্তাল আমার এই মনোভাব ধরতে পেরে গেছে বুঝতে পেরে নিজের গালে নিজের চড় মারতে ইচ্ছা করল। সঙ্গে সঙ্গে আমি মুখে মৃদু হাসি এনে বললাম–তুমি এসব কথা ভাবছ কেন? আমি তো তোমাকে পেয়ে ভীষণ খুশী।

তোমার ব্যবহারই আমাকে ভাবাচ্ছে। ভেস্তাল বলল তুমি আমাকে ঘৃণা কর, তাই না?

আমি নিজেকে অভিশাপ দিলাম। মুখে হাসি এনে ওর কাঁধে হাত রাখতে যেতে ও বলল–না,, আমাকে ছুঁয়ো না, আমি তোমার কাছ থেকে এরকম ব্যবহার আশা করি নি। আমাদের হনিমুন নষ্ট করে দিয়েছ। এবার আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই। অনেক হয়েছে।

আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ভাবলাম, বিবাহ বিচ্ছেদের কথা বলবে নাকি? আমি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলাম–ভেস্তাল! আমি হনিমুন নষ্ট করিনি, আসলে এই একঘেয়ে বেড়ানোতেই আমার বিরক্তি লাগে। আমরা দুজন দুজনকে ভালবাসি, তাই আমাদের একান্ত নিভৃতি প্রয়োজন।

ভেস্তাল সে কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বলল–তুমি আমাকে ভালবাস না বলেই আমার সঙ্গে শুতে পর্যন্ত চাও না।

আমি নির্দোষের সুরে বললাম তুমি বরং চাও না আমার সঙ্গে শুতে। তুমি চাইলে আমি নিশ্চয়ই শোব।

এতেই কাজ হল। ভেস্তাল গলে গেল–নিশ্চয়ই চাই শেড আদুরে গলায় বলল–ওঃ শেড, তুমি আমাকে ভালবাস। বল শেড, তুমি একবার বল।

আমি সান্ত্বনার সুরে বললাম–কেঁদোনা, সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর একটু কষ্ট স্বীকার করে বাঁদরীর কুৎসিত দেহটা কোলে তুলে নিলাম। কাঁধে খামচি দিয়ে ধরেছেসে। ধপাস করে তাকে বিছানায় ফেলতে গিয়ে আমিও তার শুকনো দেহটার উপর পড়ে গেলাম! তারপর আলোটা নিবিয়ে দিলাম।

.

০৮.

 এরপর বেশ কিছুদিন চলল ভেস্তালের সঙ্গে আমার প্রেমের অভিনয় আর অপরদিকে ইভ ডোলানের সঙ্গে জাহাজের সেকেন্ড অফিসারের প্রেমের খেলা।

 আমরা ভেনিসে পৌঁছলাম। ভেনিসে এসে একদিন লাউঞ্জ থেকে বেরোতেই ইভ ডোলানকে ধরলাম।

এই যে মিস ডোলান, কেমন আছেন?

 চোখের কালো চশমার ফাঁক দিয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল –মিসেস উইন্টার্স মোরানোতে কাঁচের কারখানা দেখবেন। সেই কাজেই ব্যস্ত ছিলাম।

আপনিও যাবেন তো?–অনুরোধের সুরে শুধোলাম।

 না আমি যাবনা, অন্য কাজ আছে। বলেই ডালান যাবার জন্য পা বাড়াতে আমি তার হাতখানা ধরে ফেললাম।

এক ঝটকায় সে আমার হাতখানা ছাড়িয়ে নিল। আমার দিকে একধরনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তার এই ধরনের দৃষ্টির অর্থ আমি, বুঝি। এটা সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত। আমিও পথ আগলে দাঁড়িয়ে রইলাম।

আমার বেশী কাছে আসবার চেষ্টা করবেন না, মিঃ উইন্টার্স। কথাগুলো বলে সেগটগট করে লাউঞ্জে ফিরে গেল।

আমি তখন হতাশ হলেও অবাক হলাম না, কেবল সুযোগের প্রতীক্ষায় থাকলাম খেলিয়ে দেখবার জন্য। কিন্তু শরীরের কামনার আগুন যেন দাউদাউ করে জ্বলে উঠল।

আমি কেবিনে ঢোকামাত্রই ভেস্তাল আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল–শেড ডার্লিং!বিকালে আমাদের সঙ্গে গন্ডোলায় ইভকে নিয়ে যাব? অবশ্য যদি তুমি বল।

ভেস্তালের কথা শুনে আনন্দ হলেও নিস্পৃহ গলায় বললাম তোমার ইচ্ছেতেই আমার ইচ্ছা। আমার আপত্তি করবার কিছু নেই। বলে ওর হাত মৃদু চেপে ধরলাম। ভেস্তাল খুশী হল।

ডিনারের পর আমরা খেয়া ঘাটে চলে এলাম। সেখানে ইভ ডোলান অপেক্ষা করছিল। একটা কেবিনওলা গন্ডোলা নিয়ে আমরা লিভোর দিকে এগোেলাম। ভেস্তাল এক একটা দৃশ্য দেখছে আর বকবক করে যাচ্ছে সমানে। আর আমি সেদিনকার ইভেরনঃশরীরের উষ্ণ স্পর্শের স্মৃতিটা মনের মধ্যে নাড়াচাড়া করছিলাম।

যা ভেপোরত্তি স্টেশনে গন্ডোলা ছেড়ে দিয়ে মোটর করে একটা হোটেলে চলে এলাম। ভেস্তালের আবদারে তার সঙ্গে নাচতে হল।ইভ একটা টেবিলে বসে আমাদেরকে দেখতে থাকে।

আধঘণ্টা পরে ভেস্তাল আর আমি টেবিলে এসে বসলাম। ভেস্তাল ইভকে আমার সঙ্গেনাচবার জন্য অনুরোধ করল অবশ্য অনেকটা দয়া করে।

ভেস্তালের অনুরোধে ইভ চমকে উঠে বলল–অনেক ধন্যবাদ, মিসেস উইন্টার্স। আমার নাচতে ভাল লাগছে না। বরং আপনাদের নাচ দেখতে ভাল লাগছে।

আমার কিন্তু এই সুরটা খুব ভাল লাগছে। এস ডার্লিং, আমরা তাহলে নাচি,–আবদারের সুরে বলল ভেস্তাল।

অগত্যা তার সঙ্গে ফ্লোরে গিয়ে নাচতে হল। মাঝরাত পর্যন্ত ভেস্তালের সঙ্গে নাচতে হল। আমরা ফিরে এলাম। ডোলানও নিজের ঘরে ফিরে এল।

ভেস্তাল আমার সামনে পোক ছাড়বার সময়ইভ সম্পর্কে নানান কথাবলতে লাগল। ভেস্তাল ইভের প্রশংসা করল। কথাপ্রসঙ্গে তার কাছ থেকে জানতে পারলাম ভেস্তাল ইভ বা অর্গিসকে আটকে রাখার জন্য তাদের জন্য কিছু সম্পত্তি উইল করে রেখেছে। আমি তার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম। এরই মধ্যে উইল। সাত কোটি ডলার থেকে আবার চাকর চাকরানীদের ভাগ।

আমি ভেস্তালকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম কয়েকশো ডলার রয়েছে ওদের জন্য।

রাত্তিরে দুজনে আমরা পাশাপাশি শুয়ে আছি। আমার মাথায় চিন্তা কি করে সাত কোটি ডলার পুরোপুরি হাতিয়ে নেওয়া যায়। আমার হঠাৎ খেয়াল হল–ভেস্তাল হঠাৎ যদি মারা যায়! আচ্ছা, ও যদি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে! এমনও তো হতে পারে ভেস্তাল পথে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে! তাহলে আমি সাত কোটি ডলার বিনা বাধায় পেয়ে যাব। কিন্তু মিঃ অ্যাটর্নী সাহেব,আপনি ভাববেন না যে আমি ওকে খুন করবার মতলব আঁটছি।

এরপর মোরানোতে কাঁচের কারখানা দেখতে গিয়ে প্রচণ্ড গরমে ভেস্তাল নিস্তেজ হয়ে পড়ে। আমি স্নান সেরে ভেস্তালের কাছে গিয়ে একটু বাইরে গিয়ে গলা ভিজিয়ে আসবার অনুমতি চাইলাম।

ভেস্তাল অনুমতি দিল, বলল তার মাথায় ভীষণ যন্ত্রণা। কয়েকটা ভেজলিন খেয়েছে।

তাকে শুতে বলে আমি দরজা বন্ধ করে সোজা চলে এলাম ইভের ঘরে। তার দরজায় এসে নক করতে সে কটমট করে আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যে গালাগালি দিতে ইচ্ছা করছিল।

নিজেকে সংযত করে নিয়ে বললাম–মিসেস উইন্টার্সের মাথায় খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। দেখুন আপনি কি করতে পারেন।

ইভ বলল–আমি এখনই যাচ্ছি।

দেখুন। ও হয়ত একটু পরেই ঘুমিয়ে পড়বে। আপনি আজ নটা নাগাদ সানমার্কের সামনে দেখা করবেন?

পারব বলে মনে হয় না–কথাটা বলে সে দ্রুতগতিতে ভেস্তালের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল পাছায় মারাত্মক একটা ঢেউ তুলে।

সানমার্কোর সামনে অপেক্ষা করছি ডোলানের জন্য। আমি জানতাম যে সে আসবেই কারণ দুজনের লক্ষ্য একই। এইসব কথা ভাবছি এমন সময় একটা মেয়ে আমার গা ঘেঁষে দাঁড়াল। তার পরনে সুন্দর সান্ধ্য পোক।পোষাকের সরু ফিতেটা যেন যৌবনকে ধরে রাখতে পারছেনা। মুখ ঘুরিয়ে তার দিকে চেয়ে দেখলামকালো চশমা পরিহিত মেয়েটি ইভ ছাড়া আর কেউ নয়।

আমি তার উদ্দেশ্যে বললাম–ওহ্ ইভ। তোমাকে একদম চিনতে পারিনি।

ইভ কথার উত্তর না দিয়ে বলল–এখানে নিরাপদ নয়, আমরা ঐ গন্ডোলাতে গিয়ে উঠব।

ইভ কথাগুলো বলে ভিড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে ঢুকে পড়ল গন্ডোলার একটা কেবিনে। কেবিনের পাটাতনের উপর গদী মোড়া। ইভ তো সটান চিত হয়ে শুয়ে পড়ল। আমি হাঁটু মুড়ে তার পাশে গিয়ে বসলাম। ওর পুরুষ্টু উরুর উপর হাত বোলাতে বোলাতে বললাম–তোমাকে যেদিন সাঁতারের পোষাকে দেখি সেদিন থেকেই

আমার সব কথা শেষ করতে না দিয়ে ইভ আমাকে বুকের উপর টেনে নিল। মুহূর্তের মধ্যে শরীরের যত কামনা সব উজাড় করে ইভেরতুলতুলে শরীরে ঢেলে দিলাম। তারপর দুজন দুজনকে আঁকড়ে ধরলাম।

কিছুক্ষণ ঐরকম ভাবে থাকবার পর ইভ বলল–সাড়েনটা বেজে গেছে। এবার আমাকে যেতে হবে।

আমি প্রতিবাদ করে উঠলাম–এত তাড়াতাড়ি ফেরবার কি দরকার আছে?

ইভ জবাব দিল–তোমার চেয়ে আমি ভেস্তালকে বেশী চিনি। একঘণ্টা পরে যখন ঘুম ভাঙবে, তখন আমাকে ডেকে পাঠাবে।

আমি অধৈর্য স্বরে বললাম–আমার অনেক দরকার আছে। কিছু কথা

আমাকে থামিয়ে ইভ বলল কথা বলার কিছু নেই, কেবলমাত্র চুরি করে একটু আধটু প্রেম বা দেহমিলন হতে পারে। তার বেশী নয়। নিশ্চয়ই ভেন্তালের কাছে ধরা পড়তে চাও না?–কথাগুলো বেশ খোঁচা মেরে বলল।

আর তখনি আমার মাথার মধ্যে সাত কোটি ডলারের চিন্তাটা পাক খেল। আমি মাথা নেড়ে বললামনা, না, মোটেই নয়।

ইভ সঙ্গে সঙ্গে বলল–আমিও চাই না। তোমার হঠকারিতার জন্য আমার এই চাকরীটা খোয়াতে।

আমি ইভের চোখে চোখ রেখে বললাম–তোমার জন্য আমি পাগল হয়ে গেছি। তোমাকে চাই আমার।

ইভ আমার দিকে একদৃষ্টেপলকখানেক তাকিয়ে রইল। তারপর বলল–আমিও তোমার জন্য পাগল হতে চলেছি। তবে আর একটা সুযোগ করে নেবার সময় দেবে তো? অযথা কোন ঝুঁকি আমি নিতে চাই না।

আমিই তো তোমাকে সুযোগটা করে দিলাম।

মোটেও না। খোকনসোনা!বলে ইভ আলতো করে মুখ তুলে আমার ঠোঁটে চুম্বন করে মুচকি হেসে বলল–মাথা ধরাটা দিল কে? মাথা না ধরলে তুমি সুযোগ পেতে কি?

তার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। একটা ঠাণ্ডা স্রোত আমার শিরদাঁড়া বেয়ে নিচে নেমে গেল। প্রশ্ন করলাম–তোমার এ কথা বলার মানে?

ইভ মুচকি হেসে বলল–ভেস্তালকে যখন আমি একদম সহ্য করতে পারি না, তখনই একটা পি খাইয়ে দিই খাবারের সঙ্গে।

আমি চমকে উঠে বলি–তার মানে?

 ইভ বলল–এতে ভয় পাবার কিছু নেই। মারা যাবার ভয় নেই, আমার এক ডাক্তার বন্ধুর কাছে জেনেছি।

আমার ব্যাপারটা খুব ভাল লাগল না। বললাম–ওষুধপত্র নিয়ে এইভাবে খেলা করাটা বিপদজনক।

ইভের দিকে তাকিয়ে বললাম তুমি ভেস্তালকে ঘৃণা কর! তাই না ইভ?

 ইভ দৃঢ় গলায় জবাব দিল–তোমার চেয়েও বেশী।

সঙ্গে সঙ্গে আমি প্রশ্ন করি–তুমি তাহলে এখানে চাকরী করছ কেন?

 ইভ পাল্টা প্রশ্ন ছোঁড়ে–তুমি ওকে বিয়ে করেছ কেন?

আমি বললাম আমার ব্যাপারটা আলাদা।

 মোটেই আলাদা নয়। তুমি টাকার জন্যে ওকে বিয়ে করেছ। আর আমি চাকরী করছি বিলাসিতার মধ্যে জীবন কাটাতে পারব বলে। তারপর ইভ আদুরে গলায় মিনতি জানিয়ে বলল–একটা চুমু দাও, আমাকে শেড।

আমার মনে হল সত্যিই যেন আমি প্রথমবার একটা মেয়ের প্রেমে পড়লাম। তার শরীরের সঙ্গে নিজের শরীরটা লেপ্টে দিয়ে ওর মুখের উপর মুখ দিয়ে পড়ে রইলাম।

কিছুক্ষণ এরকমভাবে থাকার পর ডোলান আমাকে ঠেলে উঠেবসল–শেড, এবার আমি যাই। আমি ভেস্তালকে চিনি, সে যদি ঘুম ভেঙ্গে আমাকে না পায় তাহলে আমার চাকরীটা যাবে। ভেস্তাল খুবই সন্দেহ ও ঈর্ষা পরায়ণ। ঐ মহিলার কাছে কিছুই চাপা থাকে না।

ফ্লিকসাইডে ফিরে গেলে বোধহয় ব্যাপারটা অনেক সোজা হয়ে যাবে বললাম আমি।

তা মোটেই হবে না। ইভ বলল–সেখানে দিনের বেলায় প্রতিটা দিন আমাকে তার কাছে থাকতে হবে এবং রাত হলে তোমাকে চাইবে। আমাদের গোপন যোগাযোগ কখনই সম্ভবপর হবে না।

আমি সান্ত্বনার সুরে বললাম–ওরই মধ্যে আমরা একটা সুযোগ করে নেব।

সেটা যেন পুরোপুরি নিরাপদ হয়, ঝুঁকি নিতে চাই না। কথা বলতে বলতে গন্ডোলাটা পাড়ে এসে ঠেকল।

ইভ আমার ঠোঁটে একটা চুম্বন দিয়ে বলল–আমি আগে যাচ্ছি, তুমি কয়েক মিনিট পরে এস।

তার কথা শুনে একবুক আশায় রইলাম। ভেস্তাল নিশ্চয় খুব শিগগীর মারা যবে।ইভই হয়তো, ওকে ওষুধ খাইয়ে মেরে ফেলবে, আর তখনই আমি ইভকে জীবনসঙ্গী হিসাবে পাব আর সাত কোটি ডলারের মালিক হয়ে যাব।

.

০৯.

কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে গেল কিন্তু ইভকে আর কাছে পাচ্ছি না। মধুর দিনটার কথা ভেবে আমি প্রায় পাগল হয়ে যেতে বসেছিলাম। শেষে একদিন থাকতে না পেরে স্নানের ঘর থেকেই ইভকে ফোন করলাম। জলের কলগুলো আগে ফুল ফোর্সে ছেড়ে দিয়ে অপারেটারের কাছে ইভের নম্বর চাইলাম। আমি তখন ভাবছি পাশের ঘরেই তো ভেস্তাল আছে, আর তার পাশেই ফোন আছে। সে যদি আমাদের কথা শুনতে পায়। যা ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ডোলানের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম।–হ্যালো! কে বলছেন?

ইভ আজ রাতে তোমাকে একটা বন্দোবস্ত করতে হবে। আর পারা যাচ্ছে না–ক্লিক শব্দ করে ওপাশে ফোন রেখে দিল ইভ। আর ফোনে ভেস্তালের কণ্ঠস্বর শুনলাম–তুমিই ফোন করেছিলে শেড।

আমার তখনি মনে হচ্ছিল ভেস্তালের গলাটা যেন চেপে ধরি।রাগ সামলে নিয়ে বললাম হ্যাঁ, আমি।

অবাক হয়ে সে প্রশ্ন করল–কেন?

আমি রিসিভার নামিয়ে রেখে স্নান সেরে ভেস্তালের ঘরে যেতে সেই এক প্রশ্ন, চোখে–মুখে সন্দেহের ছাপ সুস্পষ্ট।

আমি শুকনো হাসি হেসে বললাম–তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেব বলে, তাতেও ভেস্তাল ক্ষান্ত হয় না, প্রশ্ন করল–তাহলে ইভ রেখে দিল কেন?

ও রাখল কোথায়। তুমিই তো ফোনটা কেটে দিলে। একটু থেমে বললাম যে, লিডোতে সাঁতার কাটতে যাব বলে মিস ডোলানকে একটা মোটরের বন্দোবস্ত করবার কথা বলতে যাচ্ছিলাম।

ভেস্তালের তাতেও অবিশ্বাস। সে বলল–মিস ডোলনকে যা বলার দরকার তা আমিই বলে দেব।

ঠিক আছে, বলে আমি দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমি এই ভেবে নিশ্চিন্ত ছিলাম যে, সে শুনেছে যখন কিছু একটা ব্যবস্থা করে থাকবে।

ঠিক তাই, ডিনার খাওয়ার পর ভেস্তাল অসুস্থ হয়ে পড়ল। বিছানায় সে দুহাতে মাথা টিপে বসে রইল। আমাকে বাইরে ঘুরে আসতে বলল আর ইভকে এখনি পাঠিয়ে দেবার জন্য বলল।

আমি কিছুটা ভনিতা করে বললাম–সকালে রোদে বসতে বারণ করেছিলাম তো সে কথা তুমি শুনলে না।

আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম সোজা ইভের ঘরে। ইভের ঘরের দরজায় এসে টোকা মেরে ঢুকে পড়লাম, ইভ ঘরেতেই ছিল। ওর সুডৌল স্তন দুটো, নিটোল পাছা, আমার দুহাতে ছেনে, চটকে ওকে পাগল করে তুললাম। ইভ ওর ঠোঁট দিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরল–এভাবে সাক্ষাৎ হওয়া আমাদের পক্ষে

কথাটা শেষ করতে না দিয়ে বললাম–ওর মাথা ধরেছে, তোমাকে এখনি ডাকছে।

ইভ মৃদু হেসে বলল–ও কিছু না, দুটো ভেজলিন বড়ি খাইয়ে দিলে ঘুমিয়ে পড়বে। আর তার পরেই আমি তোমার কাছে চলে যাব। সানমার্কের সামনে অপেক্ষা করো, কেমন?

আমি বললাম–তোমাকে না পেলে আমি পাগল হয়ে যাব।

আমিও, তবে সাবধানে সবকিছুবলে ইভ দ্রুত পায়ে ভেস্তালের ঘরের দিকে চলে গেল।

আমি দুটো ডবল হুইস্কি খেয়ে লাউঞ্জে অনেকক্ষণ ঘোরাফেরা করবার পর সানমাকোর খেয়াঘাটের সামনে এসে সেদিনকার সেই মাঝিটাকে গণ্ডোলা ঘাটে লাগাবার নির্দেশ দিলাম। সে আমাকে দেখেই স্যালুট করল। সেখানে অপেক্ষা করছি ইভের জন্য কিন্তু কোথায় ইভ! শেষে ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে মাঝির পয়সা মিটিয়ে দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।রাগে আমার সারা শরীর রি–রি করে কাঁপছিল।

ভেস্তালের ঘরে সোজা চলে এলাম। দেখলাম, ভেস্তাল শুয়ে আছে। ল্যাভেন্ডার জলে ভেজানো কাপড়ের টুকরো রয়েছে ওর কপালে। পাশে ইভ বসে আছে। ও কবিতা পড়ে শোনাচ্ছে। শেড লাইটে আমার ক্রুদ্ধ মেজাজটা, মুখ দেখে কেউ আন্দাজ করতে পারবে না।

ভেস্তাল আমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাইভও ফ্যাকাশে দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল।

 শেড এলে বুঝি?–ভেস্তালের গলার সুর খুব নরম শোনাল।

 হ্যাঁ, আমি। তুমি এখন কেমন বোধ করছ?

একটু ভাল। ওষুধে মাথার যন্ত্রণাটা একটু গেছে।

আমি ভেস্তালকে ঘুমোবার জন্য লাম।

এবার মিউমিউ করে ভেস্তাল বলল–শেড ডার্লিং, আজ তুমি পাশের ঘরে শোবে? ইভ আজ আমার কাছে রাত্তিরটা থাকবে তাহলে। তুমি রাগ করবে না তো?

আমি আনন্দে উত্তেজনা বোধ করলাম। তাহলে ইভকে তো সারা রাত্তিরটা পাওয়া যাবে।

আমি বলে উঠলাম–না, না,রাগ করব কেন? তুমি বরং ঘুমোবার চেষ্টা কর। দশটা বেজে গেছে।

ভেস্তাল আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল–জানতাম, তুমি অবুঝ নও।

এভাবে চারটে দিন কাটল ভেস্তালের সামনে নিজেকে সামলে রাখবার আপ্রাণ চেষ্টা। অসহ্য লাগছে যেন সবকিছু। সেদিন রাতে ডিনার খেতে যাব বলে স্নান সেরে পোষাক পরে তৈরী হয়ে নিলাম। ভেস্তাল এখনও তৈরী হয়নি। আমাকে দেখে বলল–ও বাবা, তোমার এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল।

আমি আদুরে গলায় বললাম তুমি তো একটা আলসে মেয়ে। তারপর তাড়াতাড়ি ভেস্তালকে নীচে আসতে বলে আমি তার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।

বারান্দা পেরিয়ে সোজা ইভের ঘরে ঢুকলাম।নীল রং–এর ছোট টাইট প্যান্ট দুই পুরুষ্টুউরুতে কামড়ে ধরেছে, বুক দুটো এক ফালি কাপড় দিয়ে বাঁধা। আয়নার সামনেদাঁড়িয়ে ইভ মোজা পরছে।

আমাকে দেখে সে অবাক হল, ক্রুদ্ধও হল। গর্জন করে উঠল–শেড, তুমি এখানে এসেছ কেন? ভেস্তাল জেনে যাবে।

কালকে ওকে ওষুধ খাওয়াবে। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।মিনতির স্বরে বললাম।

কোন লাভ হবে না তাতেই বলল–অসুখ করলে আমাকে তার কাছে থাকতে হবে। কাজেই কি লাভ।

 আমি ইভের তুলতুলে নরম শরীরটা জড়িয়ে ধরে ওর দেহের উত্তাপ আমার নিজের দেহের মধ্যে টেনে আনলাম।

তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি–ইভ উত্তেজিত গলায় দ্রুত বলে গেল। বলেছি না, তোমার জন্য আমি চাকরিটা খোয়াতে পারব না।

এমন সময় দরজায় কে নক করল।

দুজনের দেহের রক্ত হিম হয়ে গেল। ইভ তড়িতে আমার হাত ধরেই একটানে আধখোলা জানলার ভারী পর্দার আড়ালে ঢুকিয়ে দিল আমাকে। তারপর দ্রুত স্বস্থানে ফিরে গিয়ে দরজা খুলে দিল।

ভেস্তাল এসেছে। প্রশ্ন করল–কারোর সঙ্গে কথা বলছিলে মনে হল?

–হ্যাঁ ম্যাডাম, আমি গুণ গুণ করে গান গাইছিলাম।–ইভের গলার স্বর অতিশয় শান্ত।

ভেস্তাল তার কাছে সেন্ট চাইল, ছুতো দেখাল তার শিশিটা ভেঙ্গে গেছে!

 ইভ জড়তাহীনভাবে বলল নিশ্চয়ই! আপনি পুরোটাই নিয়ে যান।

ভেস্তাল চলে গেল। ওদিকে পর্দার আড়ালে দেওয়ালের সঙ্গে মিশে দাঁড়িয়ে আছি। শরীর গড়িয়ে ঠাণ্ডা ঘামের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। হাত–পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। চরম বোকামীর জন্য নিজেকে গালাগালি দিতে ইচ্ছে করছে। ব্রা আর প্যান্টি পরে রয়েছে ইভ। ভেস্তাল বোধহয় গন্ধ পায়। সন্দেহের কারণ হয়েছি আমি। ইভকে ভয় পাইয়ে দেবার জন্য একটা অজুহাত নিয়ে এসেছে।

দরজা বন্ধ করেইভ এসে দ্রুত পদাটা এক টানে সরিয়ে দিয়ে গর্জন করে বলে উঠল–বেরোও। দূর হয়ে যাও আমার ঘর থেকে। আজই আমাদের সব সম্পর্ক শেষ।

 কিন্তু ততক্ষণে নড়বার ক্ষমতা আমি হারিয়ে ফেলেছি। বুক ধড়ফড় করছে। তবুও বললাম একটা রাস্তা খুঁজে আমি বার করব।

আর কোন রাস্তা নেই–ইভ চাপা স্বরে বলল। তারপর ইভ উঁকি মেরে একবার দেখে নিল বাইরে কেউ আছে কি না।

তারপর চোরের মত তার ঘর থেকে সন্ত্রস্তভাবে বেরিয়ে বারান্দা দিয়ে হেঁটে লাউঞ্জে ফিরে এলাম।

আজ নিজের বোকামীর জন্য সাত কোটি ডলার হাতছাড়া করতে বসেছিলাম। মাথায় চিন্তার জট পাকাতে থাকে। একদিকে টাকা অপরদিকে ডোলান।

অস্থিরতার মধ্যে দিনগুলো কাটছিল। শেষ পর্যন্ত ভেস্তালই বাড়ি ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। ভেনিসে তিন সপ্তাহ কাটানো হল, তারপর বিমানে লসএঞ্জেলস্ আর সেখান থেকে মোটরে করে লিটল ইডেনে। এর মধ্যে মনে মনে পরিকল্পনা করে নিয়েছিলাম ইভের সঙ্গে আমার দেখা করবার জন্য একটা আলাদা ঘর নিতে হবে। আমি নিজে সব সময় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকব।

বাড়িতে ফিরে ভেস্তাল এক গাদা চিঠিপত্র নিয়ে বসল। আমি রায়ান ব্ল্যাকস্টেনকে ফোন করলাম। কাজকর্ম করবার সঙ্গে সঙ্গে লাভের অঙ্কটাও বেড়ে চলেছে।

কিন্তু ইভের সঙ্গে দেখা করবার সুযোগ হয়ে উঠছে না।

 ভেস্তাল আমার ঘরে এসে বলল–শেড ডার্লিং, আমাকে সানফ্রান্সিসকোতে যেতে হবে।

তাকে জিজ্ঞাসা করাতে জানতে পারলাম–পরশুদিন একটা পুরোনো স্কুলে একটা হলের উদ্বোধন করতে হবে। হলটির নাম শেলী লেকচার হল। মিঃ শেলী এটা তৈরী করবার জন্য টাকা দিয়েছিল। প্লেনযোগে সেখানে যাবে, তিনদিন থাকতে হবে।

ভেস্তাল তার সঙ্গে যাবার জন্য আমাকে অনুরোধ করল কিন্তু আমি কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে। তার হাত থেকে রেহাই পাবার চেষ্টা করলাম।

ভেস্তাল জানাল, তাহলে সে ইভকে সঙ্গে নিয়ে যাবে একাকীত্ব ঘোচাবার জন্য।

 তার কথা শুনে মনে হল একটা চড় মারি।

অবশ্য শেষ পর্যন্ত ইভের যাওয়া হল না। যাবার দিনে সে ভীষণ অসুস্থ, প্রায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ল। আমি বেশ খুশী হলাম। ভেস্তালকে বললাম–তোমার খাস চাকরানীকেই নিয়ে যাও। কি করবে, বেচারী অসুস্থ হয়ে পড়ল।

ভেস্তাল নিরুপায় হয়ে তার খাস চাকরানী মারিয়ানাকে নিয়ে সানফ্রান্সিসকোর উদ্দেশ্য রওনা হল।

আমি ভেস্তালকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিলাম। ঠাট্টা করে বলল–দেখ আমার অনুপস্থিতির সুযোগে যেন কুকর্ম করে বসো না।

সরলভাবে বলে দিলাম–আজ ব্ল্যাকস্টেনের সঙ্গে ডিনার খাব, আগামীকাল স্টার্টউডের সঙ্গে। ব্যঙ্গের সুরে বললাম–এদের সঙ্গে কি কুকর্ম করব বল?

ভেস্তাল আমাকে চিমটি কেটে বলল–ইভ রয়েছে যে?

আমি সঙ্গে সঙ্গে ঠাট্টা করে বললাম–অতগুলো চাকরবাকর বিশেষ করে অর্গিসের চোখ এড়িয়ে ইভের সঙ্গে কি করতে পারি?

ভেস্তাল আমার গলা জড়িয়ে ধরে চুম্বন করল। পেটের মধ্যে পাক দিয়ে উঠল। সারা শরীরের মধ্যে রি–রি করে উঠল। সব লোক ভাবছে টাকার লোভে এরকম একটা কুৎসিত বাঁদরকে আমার মত এক যুবক বিয়ে করেছে।

ভেস্তাল ন্যাকামির গলায় বলল–আমার যেতে ইচ্ছা করছে না শেড তোমাকে ফেলে।

আমি ভেস্তালকে একরকম জোর করেই প্লেনে উঠিয়ে দিলাম। যতক্ষণ দেখা গেল, ততক্ষণ হাত নাড়ল ভেস্তাল।

তারপর আমি বাড়ি ফিরে এলাম। অর্গিসের কাছ থেকে ইভের খবর নিয়ে জানতে পারলাম সে এখনও অসুস্থ। নিজের ঘরেই শুয়ে রয়েছে।

আমি পড়বার ঘরে গিয়ে রিসিভার তুলে ইভের ফোন নম্বর ডায়াল করলাম। ফোনে ওর গলা শুনতে পেয়েই ওকে বারোটার সময় আমার ঘরে আসবার জন্যে বললাম।

বারোটার সময় ইভ আমার ঘরে এসে হাজির হল। দুঘণ্টা ধরে ইভের নরম তুলতুলে দেহটা উল্টে–পাল্টে ছেনেও তৃপ্তি পাচ্ছি না। তার দেহটা বুকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ এইভাবে থাকবার পর ইভকে আদুরে গলায় জিজ্ঞাসা করলাম–আমরা কবে আবার মিলিত হতে । পারব?

যতটুকু পাচ্ছ, তাতেই সন্তুষ্ট থাক। ইভ বলল–জেনে রাখ, আমরা মোটেই নিরাপদ নয়। বেশী বাড়াবাড়ি করলে যে কোন মুহূর্তে আমরা ধরা পড়ে যেতে পারি।

একটু থেমে সে আবার বলল–এই মুহূর্তে মিসেস উইন্টাস শেলী এসে দরজায় টোকা দিলেও আমি আশ্চর্য হব না। তিনি হয়তো আদৌ সানফ্রান্সিসকো যাননি।

আমি অনুরোধের সুরে বললাম–তাই বলে তোমার জন্য এখন ছ সপ্তাহ অপেক্ষা করে থাকব সুযোগের অপেক্ষায়!

আমি তাকে প্রস্তাব দিলাম–সপ্তাহে যে দিন সে ছুটি পাবে, সেদিন আমাদের যাতে গোপন সাক্ষাৎ সম্ভব হয়, তার জন্য একটা আলাদা ঘর নেব। কেউ জানতেও পারবে না।

আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ইভ সঙ্গে সঙ্গে বললনা। ঐ ছুটির দিন আমি মায়ের কাছে যাই। ঐদিন না গেলে মিসেস উইন্টার্স মা ফোন করে জানতে চাইবে আমার কথা। শেষে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।

তখন আমি তাকে বিয়ে করবার প্রস্তাব দিলাম। বললাম–আমার তিরিশ হাজার ডলার ব্যাঙ্কে রয়েছে তাই দিয়ে ব্যবসা করে মুনাফার অঙ্ক বাড়িয়ে নেব, আমাদের দুজনের চলে যাবে।

তাকে আরও বললাম–ভেস্তাল যাতে আমাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, সে ব্যবস্থা আমি করব।

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

ইভ দৃঢ়স্বরে জানাল–আমি নাকি পাগল হয়ে গেছি। তিরিশ হাজার ডলার নিয়ে আমাদের দুজনের সুখে আর কতদিন কাটবে? সে এই চাকরী ছাড়তে পারবে না।

আমি তাকে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম–এই চাকরীতে তুমি কি মজা পাও?

সে জানাল–এত বড় বাড়িতে সুখে থাকতে পাচ্ছে, খেতে পাচ্ছে। নিজস্ব গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়াতে পারছে। এটা তার কাছে অনেক আরামদায়ক।

আমি তাকে সাজগোজ ও পোষাক পরিচ্ছদ সম্পর্কে বললে সে বলল–মেয়েদের মনস্তত্ব অনুযায়ী কোন মেয়ে তাদের থেকে সুন্দরীকে মোটেও সহ্য করতে পারে না। সেজন্য মিসেস উইন্টার্স–এর কুৎসিত চেহারার সামনে নিজেকে সব সময় সজ্জিত করে থাকলে যে কোন মুহূর্তে চাকরী চলে যেতে পারে। তাকে অনেকে এ বিষয়ে মন্তব্য করেছিল, কিন্তু চাকরী চলে যাবার ভয়ে সে তাতে গুরুত্ব দেয় না। সে আরও জানায় তার আগে কোন সেক্রেটারী এই কারণে টিকে থাকতে পারে নি। তার কারণই এই রূপ। তাই সে তার রূপ জাহির করে এই বিলাসিতাটুকু ছাড়তে পারবে না।

মিথ্যে কথা। আমি প্রতিবাদ করে বলে উঠলাম–ভেন্তাল উইলে তোমার নামে টাকা রেখেছে তাই তুমি এই চাকরীটা ছাড়তে চাইছ না।

ইভ সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল–সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

আমি ঠাট্টার সঙ্গে জবাব দিলাম কিন্তু ইভ, তুমি শেষে ঠকে যাবে। ভেস্তাল তোমার জন্য মাত্র কয়েক শ ডলার রেখেছে।

মোটেও না।ইভ প্রতিবাদ করে বলে উঠল কদিন আগে ভেস্তালনতুন উইল করেছেঅ্যাটর্নী ডেকে। ইভ আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা চ্যালেঞ্জের সুরে বলল–আমার নামে রয়েছে পঞ্চাশ হাজার ডলার। কাজেই বুঝতে পারছ, তোমাকে ছাড়ব তবু এই চাকরী আমি ছাড়ব না।

আমি বোকার মত চুপসে গেলাম। ইভ বলতে থাকে আর আমি এও জানি, তোমার নামে রয়েছে কোটি ডলার আর সম্পত্তির সবটুকু। তারপরেই ব্যঙ্গের সুরে বলল–তুমি কি ভেস্তালকে এখনও ত্যাগ করতে চাইবে?

না, এখন অবশ্য অন্যরকম ভাবতে হবে।

আমি বিছানা ছেড়ে উঠে ঘরের মধ্যে পায়চারী করতে লাগলাম, কিন্তু টাকার আশায় থাকলে তো বুড়ো হয়ে যাবো। কতদিন এভাবে অপেক্ষা করতে হবে? আর টাকা পেয়ে ভোগই বা করব কবে? মরেও তো যেতে পারি!

অন্যমনস্কভাবে আমার মুখ থেকে কথাগুলো বেরিয়ে এল। ইভ বলল–সময়টা কমিয়ে আনবার আশায় থাকতে হবে।

আমি বললাম কবে কোন্ দুর্ঘটনায় মারা যাবে বা কঠিন অসুখ হবে, এ রকম আশা করে বসে থাকা যায় নাকি?

আমাদের আর কোন উপায় নেই। আমাদের ভবিষ্যতের আলোচনাকে স্তব্ধ করতে হল দেহের মধ্যে শীতল শিহরণ বয়ে নিয়ে যাওয়া টেলিফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দে। মনে হল যেন আচমকা কোন লোক ঘরে ঢুকে পড়েছে। ভীষণ বিরক্ত হয়ে দাঁত চেপে গর্জন করে বলে উঠলাম রাত দুটোর সময় ফোন? ফাজলামো? ওদিকে ইভ জামাটা তুলে নিয়ে ওর নগ্ন শরীর দুহাতে চেপে ধরল। তারপর দরজার কাছে চলে গিয়ে দুটো পা দিয়ে প্যান্টিটা কোমরে টেনে তুলে নিল।

যাক রিসিভার তুলে ফোনে কান পাততেই শুনতে পেলাম ভেস্তালের গলা। পেত্নীটা তিনশ মাইল দূরে থেকেও আমার ও ইভের মাঝে একটা ব্যবধান গড়ে তুলতে চাইছে। ফোনে সে জানতে চাইল–আমি ঘুমোচ্ছিলাম কিনা?

ঘুম জড়ানো গলায় উত্তর দিলাম–তুমিই তো ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলে। আমি তাকে বললাম তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়। অনেক রাত হয়েছে। লক্ষ্মী মেয়ে–আদুরে সুরেতে বললাম।

ও আমার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বলতে থাকে, ও একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে আর সেটা আমাকে বলবার জন্যই, আমি ভাল আছি কিনা তা জানবার জন্যই আমাকে ফোন করেছে। স্বপ্নটা এরকম–আমি ভেস্তালের থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছি। সে ধরতে যাচ্ছে, কিন্তু আমি ছুটে পালাচ্ছি। এক সময় আমি নাকি উধাও হয়ে গেছি। আমি যদি তাকে ছেড়ে দিই এই ভয়ে সে সর্বদা কুঁকড়ে রয়েছে। ফোনে আমাকে আদর করবার মতই বলতে থাকে–তোমাকে আমি ভীষণ ভালবাসি। শেড তোমার গলা শুনে প্রাণ পেলাম।

এরকম আরও কত কথা। শুনতে শুনতে বিরক্তিতে আমার সারা শরীর রি–রি করতে থাকে। আমি ফোনের লাইন রেখে দেবার জন্য তাকে শুয়ে পড়বার কথা বললাম। কিন্তু সেখানে ও কি বক্তৃতা দিয়েছে, কি করেছে, না করেছে কত কথা একসঙ্গে বলে গেল। আমি তার সবটা শুনিই নি। একসময়ে প্রায় জোর করেই তাকে ফোন রাখবার নির্দেশ দিয়ে রিসিভার নামিয়ে রাখলাম। ইভ ততক্ষণে পোষাক পরে নিজেকে আচ্ছাদিত করে নিয়েছে। আমি তার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।

ইভ বলল–তার আজ আর ভাল লাগছেনা। মনেহচ্ছে ঘরের মধ্যে কোন লোক ঢুকে রয়েছে।

আমি তার কাছে কথা চেয়ে নিলাম–আগামীকাল তাকে আমি আবার পাব কিনা।

ইভ মৃদু হেসে জবাব দিলকালকে আমাদের মিলন সম্ভব নয়। কেননা ভেস্তাল কালকেই চলে আসবে।

প্রতিবাদ করে বলে উঠলাম–কখনই হতে পারেনা।কাল ওকে পুরস্কার বিতরণ করতে হবে।

ইভ হেসে বলল–আমি তোমার থেকে মিসেস উইন্টার্সকে বেশী চিনি।

শেষ পর্যন্ত ইভের অনুমান ঠিক হল। অফিস থেকে পরের দিন বাড়ি ফিরে দেখলাম ভেস্তাল এসে গেছে। রাগে আমার মাথা গরম হয়ে গেল। আবার সেই নরকযন্ত্রণার মধ্য দিয়ে দিন তিনেক কাটবার পর ঘটল একটা বিশ্রী ঘটনা।

সেদিন ভেস্তাল আমার কাছে এসে জানতে চাইল–আগামীকাল সে একটা পার্টি দেবে, আমি তাতে থাকতে পারব কিনা? আমি তখন শোবার ঘরে বসে শেয়ার বাজারের কিছু কাগজপত্র দেখছিলাম।

আমি কাগজ থেকে মুখ না তুলেই বললাম–হ্যাঁ, থাকব। কিন্তু তুমি এখন এখান থেকে যাও তো সোনা।

ভেস্তাল চলে গেল। ভয় লাগে সে যদি আমার মনোভাব বুঝতে পারে। আমি দু পেগ হুইস্কি গলাধঃকরণ করে সতর্কভাবে ইভের অফিস ঘরে চলে গেলাম।

আমি তাকে বললাম–আগামীকাল আমাদের দেখা হচ্ছে তো?

না, কাল মায়ের কাছে যেতে হবে–জবাব দিয়ে সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। আমিও সঙ্গে সঙ্গে ওর হাতটা ধরে ফেললাম।

ও এক ঝটকায় আমার হাত ছাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

 দরজার দিকে মুখ ঘোরাতেই দেখি দরজার সামনে অর্গিস দাঁড়িয়ে আছে।

দাঁত মুখ খিঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম–এখানে কি চাই?

অর্গিস একটুও বিচলিত না হয়ে জবাব দিল মিস ডোলান আমাকে আসতে বলেছিল।

আমি সাবধান হয়ে গেলাম। গুপ্তচরে সারা বাড়িটা ভর্তি। অফিস ঘর থেকে বেরিয়ে একটা লম্বা বারান্দা। তারপর একটা বাক। সেদিকে রয়েছে গোটা তিরিশ ঘর। অতিথিরা এখানেই থাকে। সেদিক দিয়েই এগিয়ে গেলাম। একটা ঘরের সামনে দিয়ে যেতে যেতে শুনলাম ফোনের রিং এর শব্দ। দরজায় আড়ি পেতে শুনতে পেলাম ইভের গলা। ল্যারী নামক কোন এক ছোকরাকে সে ফোন করছে। সাতটার সময় আটলান্টিক হোটেলে দেখা করতে বলেছে।

আরও শুনতে পেলাম ইভ বলছে–ওদিকের সব ব্যবস্থা তাড়াতাড়ি করে রেখ। হ্যাঁ, শুধু সময়ের অপেক্ষায়।

ইভের কথাবার্তা শুনে মন এক তিক্ত বিস্বাদে আচ্ছন্ন হয়ে গেল। নেশাগ্রস্তের মত ঘরে ফিরে এলাম। চুপচাপ অনেকক্ষণ ঘরের মধ্যে বসে ছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন কেউ নির্মমভাবে হাতুড়ি পেটা করছে আমায়। সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।

.

এদিকে স্বীকারোক্তি রেকর্ড করতে করতে একটা ঘণ্টা কেটে গেল, ফিতে শেষ। নতুন ফিতে লাগিয়ে সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। আড়মোড়া ভেঙ্গে একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে জানলার দিকে এগিয়ে গেল। পড়ন্ত বিকালের রোদে এখনও তেজ আছে। কাঠের ঘরটা গরম হয়ে গেছে, যেন একটা অগ্নিকুণ্ড ঘরেতে খাটের উপর শুয়ে থাকা প্রাণহীন নিথর শরীরটার দিকে তাকাল শেড। একটানীল রং–এর মাছি মেয়েটার মসৃণ উরু বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভোঁকরে উড়তে থাকে অনেকটা যেন ভয় পেয়ে। শেড মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেল। দেহটা এখনও শক্ত হতে শুরু করেনি, তবে খুব ঠাণ্ডা। ভয় পেয়ে ছেড়ে দিল হাতটা।

ফিরে এসে হুইস্কির বোতলটা মুখে লাগিয়ে ঢকঢক করে অনেকটা গিলে ফেলল। তারপর আবার টেপের বোতাম টিপে রেকর্ডার চালু করে দিল। রাস্তার দিকে নজর রেখে সে চেয়ারটায় বসল। কাহিনীর দ্বিতীয় ভাগ আবার বলতে শুরু করল।

আমি ভেবে বেশ মজা পাই। একদিকে ভেস্তাল আমাকে পাগলের মত ভালবাসে আর আমিও অন্ধ পাগল বনে গিয়েছি ইভের ভালবাসা পেতে। আমাকে হারাবার ভয়ে ভেস্তাল সবসময় ভয়ে সংকুচিত হয়ে থাকে। আর আমি ইভকে না পেলে পাগল হয়ে যাব–এই ভাবে যখন নিমজ্জিত, তখন একদিন আবিষ্কার করলাম ইভ আর একজনকে ভালবাসে। আমি কিছুতেই তা সহ্য করতে পারছি না। ইভকে ফিরিয়ে আনতে হবে যেমন করেই হোক।

বৃহস্পতিবার ভেস্তালের রোলস রয়েস গাড়িটা নিয়ে অফিসে গেলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ছটার সময় ভেস্তালকে ফোন করে বললাম–একটা পুরোনোবন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেছেআমি তাকে এড়াতে পারছি না। ভেস্তাল বন্ধুকে পার্টিতে নিয়ে আসবার জন্য বললে–সে পার্টির পক্ষে অনুপযুক্ত বলে কাটিয়ে দিলাম।

তারপর চলে এলাম আটলান্টিক হোটেলে। একসময় এই প্রেম কুঞ্জে গ্লোরিকে নিয়ে আমি আসতাম। সবই আমার নিখুঁত ভাবে চেনা।

রোলস রয়েস গাড়িটা গাড়ির সারের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখলাম। হোটেলের লন পেরিয়ে একটা গাছের আড়ালে টেবিলটায় এসে বসলাম। এখান থেকেই চারিদিক লক্ষ্য করতে থাকলাম।

অদূরে ইভ ও ল্যারি বসে রয়েছে দেখলাম। ছেলেটি আমার বয়সী। ভাল স্বাস্থ্য, দেখতে আমার থেকেও বেশ সুন্দর। তবে তার পরনে রয়েছে একটা স্পোর্টস জ্যাকেট ও জিনের প্যান্ট, যাতে গরীবীর ছাপই স্পষ্ট। আর ইভ একটা সাদা শার্ট পরে রয়েছে। চোখে কালো চশমা। বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে ইভকে।

কিছুক্ষণ পরে ওরা উঠে দাঁড়াল। ইভ একটা পাঁচ ডলারের নোট টেবিলে রাখল। আমি তাদেরকে অনুসরণ করলাম।

ওরা হোটেলের ভেতরের রেস্তোরাঁতে ঢুকল। আমি ঝুল বারান্দা থেকে ওদেরকে লক্ষ্য রাখতে রাখতে মনটা আমার খুশীতে ভরে উঠল। দেখলাম–ভেস্তাল আমার জন্যে যে রকম চাঞ্চল্য প্রকাশ করে, আমার ইভের প্রতি যেরকম টান,ঐ ছেলেটার প্রতি ইভেরও সেরকম আগ্রহ। কিন্তু ল্যারীর ব্যবহারটা অনেকটা ভেস্তালের সঙ্গে আমার ব্যবহারের মতন।

ইভ সারাক্ষণ কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু ছেলেটা বিরক্তি প্রকাশ করছে, অস্থিরভাবে বারবার ঘড়ি দেখছে। এবারেও দেখলাম–খাওয়া শেষ করে টেবিল ছাড়বার আগে ইভই একটাকুড়ি ডলারের নোট টেবিলে রাখল। তার মানে ছেলেটা ইভের পয়সাতেই আছে। মনটা আমার খুশীতে ভরে গেল। যে পুরুষের টাকা থাকে না, কোন মেয়েই তাকে বেশীদিন পাত্তা দেয় না।

ওরা এগিয়ে যেতে থাকল। ইভ ল্যারীকে বলল–চল, আমরা সমুদ্রের পাড়ে যাই।

ছেলেটা ঘড়ির দিকে চেয়ে বলল–মাপ কর। আমার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে হবে। আমি যেতে পারব না।

ইভ কঠোরভাবে বলে উঠল–আমি তোমাকে আগেই বলেছি না, এত তাড়াতাড়ি ফিরতে পারব না। চল, সমুদ্রের ধারে গিয়ে বসি।

 ল্যারী তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল–তোমাকে বলেছি তো, আমার একটা জরুরী কাজ আছে। সেটা ভীষণই জরুরী। আমাকে সেজন্য একজনের সঙ্গে দেখা করতে হবে।

ইভের উত্তরের অপেক্ষা না করে ছেলেটা চলে গেল আর ইভ আহত মন নিয়ে গুম হয়ে শাঁড়িয়ে রইল।

একটু পরে ঘুরপাক খেয়ে আমি ইভের সামনে হাজির হলাম। চোখাচোখি হতেই আমি হেসে ফেলে বললাম–আরে তুমি! এখানে একা দাঁড়িয়ে কি করছ? তোমার মায়ের কাছে গেলে না? গল্পটা বেশ ভালই বানিয়েছ।

ইভ কথাটা শুনেই ক্রুদ্ধা সাপিনীর মত ফুঁসে উঠল–পার্টি থেকে এখানে তুমি কি করতে এসেছ?

পার্টিতে যাওয়া আর হল কই? হেসে ফেলে বললাম–যখন কোন লোকের পাশে তার প্রেমিকাকে সহ্য করা সম্ভব হয় না, তখনই সে অন্য বন্ধুর খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। এটা তুমি তো জান ইভ? আমার সেই অবস্থা।

একটু থেমে বললাম–যা আমার কথা ছাড়, লোকটা কে?

খানিকক্ষণ পরে উত্তর দিল ইভ–ও আমার স্বামী, বুঝেছ?

আমার এতক্ষণে স্বতঃস্ফূর্ত মনটা দমে গেল–কথাটা এতদিন চেপে রেখেছিলে কেন?

স্থির দৃষ্টিতে ইভ আমার দিকে তাকিয়ে বলল–সব কথা সবাইকে না বলাই আমার অভ্যাস।

নিজেকে সংযত করে বললাম–এজন্যই তুমি চাকরীটা ছাড়তে চাইছ না। আমি ইভকে সমুদ্রের ধারে যাবার জন্য অনুরোধ করলাম।

.

ইভ যেতে না চাইলেও জোর করে ওর হাত ধরে এগিয়ে গেলাম।

ইডেন এন্ড থেকে রাস্তাটা সোজা বেরিয়ে গেছে। ক্রমশঃ রাস্তটা উঁচুর দিকে উঠেছে আর বাঁ দিকে বালিয়াড়ি নীচে ঢালু হয়ে নেমে গেছে। সত্তর কিলোমিটার স্পীডে আমি গাড়ি চালাচ্ছি। ঠিক যখন লিটল ইডেনের আলোটা চোখে পড়ল, তখনই কটাস করে একটা শব্দ। বাঁদিকের সামনের চাকার টায়ার ফেটে গেল। স্টীয়ারিং ধরে সামলাতে সামলাতেই ভীষণভাবে পাক খেয়ে গাড়িটা বালিয়াড়ির দিকে সাঁ সাঁ করে এগোতে থাকল। গায়ের রক্ত আমার হিম হয়ে গেল।নীচেই সমুদ্র। আমার জীবন বোধহয় আজ এখানেই শেষ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত চাকাটা বালিতে গেঁথে গিয়ে ঝপ করে থেমে গেল গাড়িটা। একটুর জন্য আমি বেঁচে গেলাম। সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেলাম কিন্তু আমার চিন্তাধারাটা পাল্টে গেল।মুহূর্তের মধ্যে আমার মনের পর্দায় ভেসে ওঠা ইভকে পাবার কামনা, টাকা, আমার স্বাধীনতা জ্বলজ্বল করে উঠল।

বাড়িতে যখন ফিরলাম, তখন রাত সাড়ে বারোটা। আমাকে দেখেই ভেস্তাল প্রশ্ন করল–এত রাত করে ফিরলে?

–ফিরতে দেরী হয়ে গেল, চাকাটা মাঝরাস্তায় ফেটে গেল–কথাটা শেষ না করেই শিস দিতে দিতে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম।

কিন্তু ভেস্তাল আমার সামনে এসে পথ আটকে দাঁড়াল। তার চোখের দৃষ্টি কঠিন। ক্রুদ্ধ স্বরে বলল–তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে? নিশ্চয়ই কোন মেয়ের সঙ্গে? বল কে কে?

আমি দাঁতে দাঁত চেপে গর্জে উঠে বললাম–পুলিশের সার্জেন্ট জিম কেলার আমার সঙ্গে ছিল। তুমি এখন সরে যাও আমার সামনে থেকে।

মিথ্যে কথা বলছ। বলেই ঠাস করে একটা চড় মারল আমার গালে।

আর দপ্ করে তখনি আমার মাথায় আগুন ধরে গেল। রাগে অন্ধ হয়ে ভেস্তালের হাড্ডিসার দুটো কাঁধ খামচা মেরে ধরলাম। মনে হল যেন জীবনের মত শেষ করে দিই কুৎসিত ডাইনীটাকে।

কিন্তু ততক্ষণে দুটো লোহার মত শক্ত হাত বুলডোজারের মত আমার কব্জি দুটো মুচড়ে ধরেছে।

শান্ত গলায় লেফটেন্যান্ট লেগো বলল–অত উত্তেজিত হবেন না মিঃ উইন্টার্স!

এই হতচ্ছাড়া পুলিশ অফিসার এখানে রয়েছে জানতে পারলে আমি ওর গায়ে কখনও হাত দিতাম না। রাগে আমার সারা শরীর কাঁপছে, একটা মেয়ে হয়ে ভেস্তাল কিনা আমাকে মারবে। নিজেকে সামলে নেবার জন্য একটা সিগারেট ঠোঁটে দিয়ে দেশলাই–এর জন্য এ পকেট ও পকেট হাতড়াতে লাগলাম।

মিঃ লেগো ফস্ করে লাইটার জ্বেলে ধরল আমার মুখের সামনে, তারপর মুচকি হেসে বলল–মাঝে মাঝে নিজের বউকে গলা টিপে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করে, তাই না? বোধহয় সবারই? তার কথায় শ্লেষের সুর।

আমিও না ঘাবড়াবার মত করে বললাম হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন বোধ হয়।

এরপর লেগো বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে চলে গেল। যাবার সময় লেগো আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে বলে গেল আপনার জামার কলারে যে লিপস্টিকের দাগ রয়েছে, সেটায় হয়তো আমার মত মিসেস উইন্টার্স–এর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পড়ে থাকবে।

আমি তার কথা শুনে নিজের বেখেয়ালের জন্য নিজেকে ধিক্কার দিলাম। খানিকক্ষণ কাঠের পুতুলের মত নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। বুকের মধ্যে কে যেন হাতুড়ির ঘা মেরে যাচ্ছে।