‘বাঁশবনে–’

‘বাঁশবনে–

প্যারিসের এক সুবিখ্যাত ‘গুর্মে’ অর্থাৎ ‘খুশখানেওলা’ বা ভোজনরসিক একবার তুর্কিতে বেড়াতে যান। ইয়োরাপে উত্তম ভোজনের মক্কা-মদিনা যেরকম প্যারিস, এশিয়া-আফ্রিকায় সেইরকম তুর্কি। অন্তত ইয়োরোপীয়দের বিশ্বাস তাই–যদিও আমার ব্যক্তিগত ধারণা প্রাচ্যদেশীয় ভোজন-মক্কা তুর্কি নয়–দিল্লি, লখনউ, আগ্রা। কিন্তু সে-কথা থাক্।

প্যারিস গুর্মের কনসতুনতুনিয়া (কনস্টানটিনোপোল) আগমন-বার্তা সেখানকার ভোজন-রসিক-সমাজে ছড়িয়ে পড়তে বেশিদিন লাগল না। তাঁদের চক্রবর্তী যে পাশা ওই মার্গে বহুদিন ধরে সাধনার ফলে স্বৰ্গত মহামান্য আগা খানকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন, তিনি প্যারিসের গুর্মেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নৈশভোজনে নিমন্ত্রণ জানালেন– গুর্মেও তারই প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছিলেন।

সে-ভোজনের বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। বরঞ্চ যে এখনও ইউরোপীয় সঙ্গীত শোনননি, তাকে বেটোফেন সমঝাতে আমি রাজি আছি।

গুর্মে পরের দিনই প্যারিস রওনা দিলেন। তার তীর্থদর্শন সমাপন হয়েছে তিনি তো আর সিসোফিয়া মসজিদ দেখতে কনসতুনতুনিয়া আসেননি।

প্যারিসে ফিরে যাওয়া মাত্রই সেখানকার গুর্মে-সমাজ তাকে শুধালে, ‘কী রকম খেলে?’

 তিনি বললেন, ‘অপূর্ব, অপূর্ব! এ-রকম খানা এ-জন্মে কখনও খাইনি। তুর্কি গিয়ে আমার উদর ধন্য হয়েছে, আমার রসনা তার চরম মোক্ষলাভ করেছে।’

একপ্রকার বহুবিধ উচ্ছ্বসিত প্রশংসার পর তিনি কিঞ্চিৎ তুষ্ণীম্ভাব ধারণ করলেন। তার পর বললেন, ‘কিন্তু…’।

সবাই বললে, ‘কিন্তু…?’

 ‘পদ ছিল বড্ড বেশি।’

ভোজন-মার্গে যাঁরা মন্ত্রসিদ্ধ তাঁরাই শুধু এ-বাক্যের অর্থ বুঝতে পারবেন।

কেউ কখন বলে, “ওহ, যা খাইয়েছে! ডাল ছিল চার রকমের, পোলাও ছিল পাঁচ রকমের, অমুক ছিল তমুক রকমের—’

চার রকমের ডাল? লোকটা কি তবে জানে না তার বাড়িতে কোন্ ডাল সবচেয়ে ভালো রান্না হয়? আর চার রকমের ডাল এবং পাঁচ রকমের পোলাও-ই যদি আপনি খান তবে রসগোল্লা সন্দেশে পৌঁছবেন কী করে? যদি বলেন, ‘রুচির পার্থক্য রয়েছে, তাই চার রকমের ডাল’, তবে শুধাই : সার্থক কবি সুন্দরীর বর্ণনাকালে কি পঁচিশটা বিশেষণ দিয়ে বলেন, ‘রুচি-মাফিক তোমার বিশেষণটা বেছে নাও’ কিংবা চিত্রকর হনুমানের ছবি আঁকার সময় তাঁর পশ্চাদ্দেশে পাঁচটা পাঁচ রকমের ন্যাজ এঁকে দিয়ে বলেন, ‘পছন্দসই তোমার ন্যাজটা বেছে নাও।’

কাগজে পড়েছি ডাচেস অব উইনজার কখনও সুপ খেতে দেন না। ডিনারের অবতরণিকায় গাদা-তরল বস্তু পেটে ঢুকিয়ে দিলে বাদ-বাকি পদ মানুষ ভালো করে খাবে কী করে? অতিশয় হক কথা। আমার ভালো পাঁচক নেই বলে আমি পারতপক্ষে কাউকে নিমন্ত্রণ করিনে। যদিস্যাৎ করি, তবে ছোট্ট একটি টমাটো ককটেল দিই (শেরির গেলাস ভর্তি টমাটো রস এবং দশ ফোঁটা ‘মাগগি’–তদভাবে উস্টাস সস্+চার ফোঁটা তাবাস্কো সস– তদভাবে চীনা চিলি সস–তদভাবে একটি চিমটি লাল লঙ্কাগুঁড়ো+প্রয়োজনীয় নুন। এসব ভালো করে মিশিয়ে খুশবায়ের জন্য উপরে অতি সামান্য গোলমরিচের গুঁড়ো ভাসিয়ে দেবেন); এটা খাদ্য নয়–ক্ষুধা-উত্তেজক মাত্র।

তবে রেস্তোরাঁর কথা আলাদা। কারণ রেস্তোরাঁয় তাবৎ চৌষট্টি পদ খাবার জন্য কেউ পীড়াপীড়ি করে না। ভোজে আপনি পদের পর পদ স্কিপ করতে থাকলে গৃহস্বামী তথা অন্য নিমন্ত্রিতেরা সন্দ করবেন, আপনি একটা স্নব। রেস্তোরাঁয় সে-আশঙ্কা নেই।

এবং ভালো রেস্তোরাঁতে আ লা কার্তের বাহান্ন পদ থাকার পরও গোটা তিনেক তাবল দোৎ (tuble d’hote) বা ফিকসড দামে ফিকসড পদের ভোজন থাকে। যেমন মনে করুন দুটাকাতে আছে (১) সেলেরি সুপ, (২) রোস্ট মাটন, (৩) পুডিং; আড়াই টাকাতে (১) সেলেরি সুপ, (২) বয়েলড ফিশ, (৩) রোস্ট মাটন, (৪) পুডিং; এবং তিন টাকাতে আছে (১) সেলেরি সুপ, (২) বয়েল্ড ফিশ, (৩) রোস্ট চিকেন, (৪) পুডিং কিংবা আইসক্রিম।

এই তাবল দোৎ বাতলে দেবার প্রধান উদ্দেশ্য ডোমকে বাঁশ-বাছতে সাহায্য করা। বিশেষ করে এই সাহায্যের প্রয়োজন মহিলাদেরই বেশি। ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন, মহিলারা মেনু কার্ড অর্থাৎ আ লা কার্ত হাতে নিলে পুরুষদের কী হয়। এই ফাঁকে মর্নিং ওয়াক সেরে এসে দেখবেন, ম্যাডাম তখনও মনস্থির করতে পারেননি কোন্ সুপ তার বিষধর ছুঁয়ে ককণ্ঠ পেরিয়ে লম্বোদরে বিলম্বিত হবেন। ইতিমধ্যে ওয়েটারের দাড়ি গজিয়ে গিয়েছে–দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘড়ির কাঁটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে পড়েছে–অবশ্য আসলে তা নয়, ইতিমধ্যে পাকা চব্বিশ ঘন্টা পেরিয়ে গিয়েছে।

দা-ঠাকুরের পাইস-হোটেলে মেনু বাছতে আমাদের কোনও অসুবিধে হয় না। কখন তেতো খেতে হয় আর কখনই-বা টক, সে-তত্ত্ব আমরা বিলক্ষণ অবগত আছি। আমাদের সময়ে পাইস হোটেলে তাবল দোৎও থাকত। ওই জিনিস সে-দিন রান্না হয়েছে লাটে; কাজেই সেইটে সেদিন অর্ডার দিলে ভোজনপর্ব সমাধান হত সস্তায়।

সায়েবি হোটেলে গিয়ে আমরা পড়ি বিপদে। সে-রেস্তোরাঁ যদি আবার উন্নাসিক হয়, তবে প্রায় সমস্ত মেনুখানাই লেখা থাকে ফরাসি ভাষায়। ‘বাছুরের কাটলেট’ নাম দেখে আপনি হিন্দুসন্তান আঁতকে উঠলেন, কিন্তু ওইটেই হয়তো খেতে দেখলেন আপনার মুসলমান বন্ধুকে। শুধালেন, ‘কী বস্তু?’ বললে, ‘এস্কালপ দ্য ভো ভিয়েনোওয়াজ’–তাতে বাছুরের নাম-গন্ধ নেই, ‘ভো’ যে বাছুর আপনি জানবেন কী করে? আপনি তাই দিব্যি অর্ডার দিয়ে বসলেন। রেস্তোরাঁ যদি আরেক কাঠি সরেস হয়, তবে ওই বস্তুরই নাম পাবেন জনে– ‘ভিনার স্নিৎসেল’। ‘স্নিৎসেল’ অর্থ ‘এস্কালপ’, তার মানে ইংরেজিতে ‘স্ক্যালপ’, সোজা বাংলায়, ‘মাংসের টুকরো’। ওটা কিসের মাংস তার কোনও হদিস ওতে নেই। শুয়োরেরও ‘স্নিৎসেল’ হয়, চীনদেশে হয়তো কুকুরেরও হয়। শুনেছি, আমাদের মুনিঋষিরা গণ্ডার খেতেন। অনুমান করি, তাঁরা তা হলে গণ্ডারের ‘স্নিৎসেল’ খেতেন।

আমি ইংরেজি জানিনে। মুসলমান মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি, শুয়োরের মাংসের নাম ইংরেজিতে ‘পর্ক’ এবং ওটা খাওয়া মহাপাপ। তাই ‘পর্কচপ’ না-খেয়ে আশ্বস্ত হতুম, ধর্মরক্ষা করেছি। তার পর একদিন আবিষ্কার করলুম, ‘হ্যাম’, ‘বেকন’ শুয়োরের মাংস, এমনকি ওই মাংসের কটলেট, সসেজও হয়–এবং মেনুতে তার উল্লেখও থাকে না। আবিষ্কারের পর অহোরাত্র জলস্পর্শ করিনি এবং মোল্লাবাড়িতে গিয়ে ‘তওবা’ অর্থাৎ প্রায়শ্চিত্ত করেছিলুম। মোল্লা সান্তনা দিয়ে বলেছিলেন ‘অজান্তে খেলে পাপ হয় না’। কিন্তু আমার পাপিষ্ঠ মন চিন্তা করে দেখলে, অজান্তে খেলেও স্বাদে ভালো লাগতে পারে।

কিন্তু ইংরেজি রেস্তোরাঁ বাবদে আমার আপনার বিশেষ কোনও দুশ্চিন্তা নেই। বন্ধুবান্ধবদের ভিতর আকছারই দু-একজন বিলেত-ফেরতা থাকেন। মেনু সম্বন্ধে তাঁদের সুগভীর জ্ঞান দেখাবার মোকা পেয়ে তারা বিমলোল্লাস অনুভব করেন, আমরাও উপকৃত হই। তদুপরি ‘বয়’ যখন বিল হাজির করে, তখন আমি হঠাৎ জানালা দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিরীক্ষণ করতে থাকি–এটিকেট-দুরস্ত বিলেত-ফেরতাকেই এক্ষেত্রে বিল শোধ করতে হয়। উদাস, ভাবালু হওয়ার ভান করতে পারলে বিস্তার লাভ।

বাঙালির দুর্বলতা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বা ইংলিশ রান্নার প্রতি নয়–তার প্রাণ ছোঁক ছোঁক করে মোগলাই রান্নার জন্য। কিন্তু মেনু পড়তে জানে না বলে যা-তা অর্ডার দিয়ে বসে এবং নিতান্ত পয়সা ঢেলে দিয়েছে বলে সেটা যখন অতি অনিচ্ছায় খায়, তখন দেখতে পায়, পাশের টেবিলে এক ভাগ্যবান ঠিক সেই সেই জিনিসই পরম পরিতোষ সহকারে খাচ্ছে, যেসব খাবার সৎ-কামনা নিয়ে সে রেস্তোরাঁয় এসেছিল।

একেই বলে অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস!

জীবনের মেজর ট্র্যাজেডি বা ‘অদৃষ্টের নির্মম পরিহাসে’র নির্ঘন্ট যদি দিতে হয়, তবে আমার প্রথম যৌবনের প্রথমা প্রিয়া যে আমাকে জিট করেছিলেন সেটার উল্লেখ আমি করব না, কিন্তু এটার উল্লেখ অতি অবশ্য করব। সুখাদ্যের জিলটিং ভোলার জন্য একটা জীবন যথেষ্ট দীর্ঘ নয়।

বাঙালি-রান্না বললে কী বোঝায় সেটা আমরা মোটামুটি জানি, কিন্তু সব বাঙালি-রান্না একরকম নয়। পুব আর পশ্চিম বাংলার রান্নাতে এন্তার তফাত। পুবের রান্নাতে ঝালের প্রাচুর্য, পশ্চিমের রান্নাতে চিনি। কে যেন বলেছিল, ‘মাই মোটর কার ইজ সাউন্ড ইন এভূরি পার্ট একসেপট ইন দি হর্ন’–ঠিক সেইরকম পশ্চিম-বাংলার রান্নাতে ‘সুগার ইন এভরিথিং একসেপট ইন রসগোল্লা।’

সব মোগলাই রান্না একরকমের নয়। কলকাতায় এই কয়েক বছর পূর্বেও প্রচলিত ছিল একমাত্র ‘কলকাত্তাই মোগলাই’ রান্না। হালে ‘লাহোরি মোগলাই’ও প্রচলিত হয়েছে। দেশ-বিভাগের পর লাহোর-পিন্ডির ‘শেফ’রা দিল্লির কনট সার্কাসে এসে ‘পাঞ্জাবি মোগলা’ই রান্না প্রবর্তন করেন (দিল্লির মোগলাই এখন চাঁদনি চৌকে আশ্রয় নিয়েছে) এবং তারই ব্রাঞ্চ এখন কলকাতা এসে পৌঁছেছে।

এ রান্নার বৈশিষ্ট্য তিনটি জিনিসে :

(১) আফগানি নান! কলকাতার আদিম ও অকৃত্রিম নান রুটির (ফার্সিতে ‘নান’ শব্দেরই অর্থ রুটি—’নানরুটি’ তাই হুবহু পাঁউরুটির মতো, কারণ পর্তুগিজ ‘পাঁউ’ শব্দের অর্থ রুটি) সঙ্গে এর অতি অল্প মিল। আফগানি নান দৈর্ঘ্যে প্রায় এক হাত এবং আকারে অনেকটা সিংহল দ্বীপের ন্যায়। রুটির পাশগুলো মোলায়েম, মধ্যিখানটা বিস্কুটের মতো ক্রিসপ (ওই দিয়ে ভোজনের শেষ অঙ্কে দিব্যি ;চিজ অ্যান্ড বিসকিট’ও খাওয়া যায়)। এই না আপনি কতখানি মোলায়েম বা ক্রিসপ খেতে পছন্দ করেন সেটা দু চার দিন খাওয়ার পরেই খানসামাকে বলে দিতে পারবেন।

(২) তন্দুরি মাছ। মাঝারি সাইজের একটা আস্ত মাছ সাফসুতরো করে, মসলাদি মাখিয়ে তন্দুর (আ)-এর ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যখন বেরিয়ে আসে তখন মনে হয়, বোধ হয় ভালোমতো রান্না হয়নি। কিন্তু খেয়ে দেখবেন, অপূর্ব স্বাদ! আমাদের বাড়িতে তন্দুর নেই বলে আমরা পাঞ্জাবিদের এই ‘তন্দুরা ফিশ’ অবদানটি মুক্তকণ্ঠে এবং সরস জিহ্বায় মেনে নিয়েছি।

(৩) তন্দুরি চিকেন। এতে প্রায় কোনও মশলাই ব্যবহার করা হয় না বলে এ-জিনিস যত খুশি খান অসুখ করবে না। অতি মোলায়েম এবং উপাদেয়। আস্ত মুর্গিটি হাত দিয়ে ভাঙবেন, এবং হাত দিয়েই নান্ সহযোগে খাবেন–ছুরিকাঁটার পাশ মাড়াবেন না।

সঙ্গে সঙ্গে মাঝে মাঝে শিক কাবাব, শামি কাবাব, বড়ি কাবাব, মিশরি (মিশরীয়) কাবাব অল্প অল্প খেতে পারেন। একটুখানি গ্রেভি-ওলা ভিজে বস্তুর প্রয়োজন হলে কোফতা-নরগিস (অনেকটা ডেভিলের মতো) অর্ডার দিতে পারেন। আমি কিন্তু এ-পর্বে শুকনোই পছন্দ করি।

উপরোল্লিখিত এক, দুই, তিন নম্বরের জিনিস খাস কলকাত্তাই-মোগলাই রেস্তোরাঁয় পাবেন না। তবে শুনেছি, ইদানীং কোনও কোনও রেস্তোরাঁ চাপে পড়ে রাখতে আরম্ভ করেছেন।

এবার ভেজার পালা।

মটন পোলাও, চিকেন পোলাও, আণ্ডা পোলাও এবং মটর পোলাও। ফিশ পোলাও অল্প রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায়।

এর সঙ্গে দুনিয়ার জিনিস খেতে পারেন। কোর্মা, কালিয়া, দোলমা, রেজালা যা খুশি। যাঁরা ঝাল খেতে ভালবাসেন অথচ অসুখের ভয়ে খান না, তাঁরা ‘দহি-ওলা-গোশৎ’–অর্থাৎ দই-মাংস (সাধারণ মটনের হয়) খাবেন। দিল্লিওলারা যে এত ঝাল খেয়েও কাল কাটাচ্ছে তার একমাত্র কারণ, হয় দহি-ওলা গোশৎ খায়, নয় খাওয়ার পর এক ভাঁড় টক দই খায়।

পেটটাকে যদি আরও ধাতস্থ রাখতে চান তবে খাবেন ‘শাকওলা-গোশৎ’– অর্থাৎ শাকের সঙ্গে মাংস। এটা শিখদের প্রিয় খাদ্য–যেরকম ওরা করেলার ভিতর কিমা মাংস পুরে দোলমা খায়।

আর ঝাল-ফুর্জি, রওগন যুষ, শাহি কুর্মা এবং লাটের মাল চিকেন কারি, কটন কারি ইত্যাদি তো রয়েছেই। ভেজিটেরিয়নদের জন্য মটর-পোলাও এবং চিজ-আলু, কিংবা চিজ-মটর কারি। তবে মাংসহীন সাদা পোলাওয়ের সঙ্গেই চিজ-মটর ঝোল মানায় বেশি।

আমি মটর-পোলাওয়ের সঙ্গে মটন কিংবা চিকেন কারি খাই; কারণ মটন-পোলাওয়ের সঙ্গে মটর-কারিতে মটনের বাড়াবাড়ি হয়, আবার চিকেন পোলাওয়ের সঙ্গে মটন-কারিতে দুটো মাংসের ককটেলকে আমার গুবলেট বলে মনে হয়। তবে এটা নিছকই রুচির কথা। আর ভুলবেন না গ্রেভির অপ্রাচুর্য হলে, সবসময়ই ওটা আলাদা করে অর্ডার দেওয়া যায়।

সর্বশেষ উপদেশ, বয়স্ক ওয়েটারকে মেনু বাছাই করার সময় ডেকে নিয়ে তার সদুপদেশ নেবেন। না নিলে কী হয়?

এক ইংরেজ স্নব গেছেন প্যারিসের রেস্তোরাঁয়। তিনি কারও উপদেশ নেবেন না। মেনুর প্রথম পদে আঙুল দিয়ে বোঝালেন কী চাই। নিশ্চয়ই সুপ। এল তাই। উত্তম প্রস্তাব।

তার পর আঙুল নামালেন অনেকখানি নিচে। ভাবলেন মাছ, মাংস, আণ্ডা কিছু একটা আসবে। এল আবার সুপ। ইংরেজ জানতেন না, ফরাসিরা বাইশ রকমের সুপ রাখে।

খেয়েছে! এখন কী করা যায়? আঙুল দিলেন সর্বশেষ পদে। পুডিঙ কিংবা আইসক্রিম হবে।

এল খড়কে–টুথ-পেক!!