টুকিটাকি

টুকিটাকি

দাবা খেলার জন্মভূমি কোথায়?

দাবা খেলার ইতিহাস সম্পর্কে নানা মুনি নানা কথা কয়ে থাকেন। দাবার শেষের দিকের ইতিহাস সুস্পষ্ট এবং যেখানে তর্কাতর্কির অবকাশ নেই। ইরান জয় করার পরে আরবরা সেদেশে প্রথম দাবা খেলা শেখে। সকলেই জানেন, কোনও খেলা সম্পূর্ণ আপন করে নেওয়ার পরও তার মূল পরিভাষা অনেক সময় আগাগোড়া পরিবর্তিত হয় না। তাই আরবরা ইরানি দাবা খেলা শেখার পরও দাবার রাজাকে ইরানি শব্দ ‘শাহ’ (রাজা) দিয়ে চিহ্নিত করে, এবং ‘তোমার শাহ্ বিপদে’ বলার সময়, অর্থাৎ কিস্তি দেওয়ার সময় শুধু ‘শাহ’ বলত।

এরপর ক্রুসেড লড়াইয়ের সময়ে বন্দি ইয়োরোপীয়রা আরবদের কাছ থেকে দাবা খেলা শেখে এবং তারাও কিস্তি দেওয়ার সময় ‘শাহ’ বলত। সেই ‘শাহ’ লাতিনের ভেতর দিয়ে ইংরেজিতে রূপ নেয় ‘শেক’ এবং সর্বশেষ ‘চেক’ রূপে (ব্রিটিশ ‘এক্সচেকারে’র নাম ওই ‘চেক’ থেকে এসেছে)।

কিস্তিমাতের ‘মাত’ কথাটা ওইভাবেই আরবি ‘শাহ্ মাতা’ অর্থাৎ ‘তোমার রাজা মারা গিয়েছে’ ইংরেজিতে রূপ নিয়েছে ‘চেক মেট’ হয়ে।

এখন প্রশ্ন, ইরানিরা দাবা খেলা শিখল কার কাছ থেকে? দাবা ইরানি খেলা এ দাবি পারস্যদেশে কখনও করা হয়নি। বরঞ্চ সে দেশে কিংবদন্তী প্রচলিত যে, এ খেলা ‘পঞ্চতন্ত্র’ পুস্তকের মতো ভারতবর্ষ থেকে ইরানে গিয়েছে।

একাদশ শতাব্দীতে গজনীর পণ্ডিত আল-বিরুনি তাঁর ভারতবর্ষ সম্বন্ধে লিখিত পুস্তকে দাবা খেলার ছক একে দিয়েছেন ও খুঁটির বর্ণনা করেছেন। তবে আজকের দাবা আর সে দাবার পার্থক্য প্রচুর। তখনকার দিনে দাবা খেলা হত চারজনে– ছকের চারকোণে চার খেলোয়াড় আপন আপন ঘুটি নিয়ে বসতেন এবং চালও দিতে হত পাশা (ডাইস বা অক্ষ) ফেলে।

তাই নিয়ে বিচলিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ আজ ভারতীয় দাবা ও বিলিতি দাবা হুবহু এক খেলা নয়।

কাজেই সম্পূর্ণ নতুন কোনও প্রমাণ উপস্থিত না হলে ভারতবর্ষ যে দাবা খেলার জন্মভূমি তা নিয়ে তর্ক করবার কোনও কারণ নেই।

.

খেলাচ্ছলে

কিছুকাল আগে পার্লিমেন্টে জনৈক সদস্য যে প্রশ্ন শুধান তার সারমর্ম এই :

হেলসিনকিতে যে ওলিম্পিক খেলা হয় সেখানে খেলার শেষে যখন সব দেশ আপন আপন জাতীয় পতাকা নিয়ে পরিক্রমা করে তখন ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করে সেই শোভাযাত্রায় যোগ দেবার জন্য কোনও ভারতীয়কে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশেষে নাকি এক ফিন যুবক ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করে।

প্রশ্নকর্তা কোনও কোনও ভারতীয়কে এই ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দাও করেন।

উত্তরে সহ-শিক্ষামন্ত্রী বলেন যে, তিনিও এইরকম কথা শুনেছেন।

 আমাদের মনে হয়, এর একটা কড়া তদন্ত হওয়া উচিত।

আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস ভারতীয়রা অন্যান্য জাতির তুলনায় অভদ্র নয়। এককালে ভারতীয় সৌজন্য-শালীনতা বিদেশি বহু পর্যটককে মুগ্ধ করেছিল বলে তারা তাদের ভ্রমণকাহিনীতে ভারতবাসীদের উদ্দেশে বিস্তর প্রশস্তি গেয়ে গিয়েছেন। মেগাস্তেনেস থেকে এ ইতিহাস আরম্ভ হয় এবং যদিও কোনও লেখক আমাদের কোনও কোনও আচার-ব্যবহারের নিন্দা করেছেন বটে, কিন্তু আমরা অভদ্র, একথা কাউকে বড়-একটা বলতে শোনা যায়নি। বিদেশে ভারতীয়েরা আরও সাবধানে চলে বলে সেখানেও তারা প্রচুর খাতির যত্ন পায়।

তবে হঠাৎ আজ এরকম একটা পীড়াদায়ক ঘটনা ঘটল কেন?

আমার মনে হয়, আমাদের টিমের কর্তাব্যক্তিরা পরবটার কথা বেবাক ভুলে গিয়েছিলেন, কিংবা ব্যাপারটার গুরুত্ব ঠিক মেকদারে যাচাই করতে পারেননি বলে সবাই মিলে রঙ্গভূমি ত্যাগ করে শহরে ফুর্তিফার্তি করতে চলে গিয়েছিলেন আর তাই চ্যাংড়ারাও যে চলে যাবে তাতে আর কী সন্দেহ।

কর্তারা শহরে বেড়াতে যাননি, চ্যাংড়াদের তাঁরা যেতে বারণ করলেন, তবু তারা বেপরোয়া চলে গেল, একথা বিশ্বাস করতে আমার প্রবৃত্তি হয় না। এ টিমে যারা গিয়েছিল তাদের দু একজনকে আমি চিনি। পতাকা তোলার জন্য তাদের আদেশ করলে তারা নিশ্চয়ই, অতি অবশ্যই, শহরে চলে যেত না– সেখানে শেষ পর্বের জন্য সানন্দে অপেক্ষা করত।

বিদেশে আপন দেশের পতাকা উত্তোলন করার জন্য নির্বাচিত হওয়া কি কম শ্লাঘার বিষয়?

কাজেই মুরুব্বিদের প্রশ্ন শোধানো উচিত, তাঁরা তখন ছিলেন কোথায়, তাঁরা কাকে কী আদেশ দিয়েছিলেন, কেউ সে আদেশ অমান্য করেছিল কি না?

এরই পিঠে-পিঠে সংবাদপত্রে আরেকটা খবর পড়লুম।

পার্লিমেন্টে যেদিন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, সেদিনই শ্রীযুক্ত পঙ্কজ গুপ্ত জিওলজিক্যাল সার্ভে রিক্রিয়েশান ক্লাবে বক্তৃতা দেবার সময় বলেন, ভারতের খেলোয়াড়রা যখন বিদেশে খেলতে যান তখন তারা প্রায়ই অভদ্র ভাষায় লেখা বেনামি চিঠি পান এবং তাঁরা যে মন না দিয়ে ফুর্তি ফার্তি আরাম-আয়েশ করে বিলেতে দিন কাটাচ্ছেন সে কটুবাক্যও চিঠিগুলোতে বর্ষিত থাকে।

গুপ্তমহাশয় বলেন, এ ধারণা ভুল এবং এ অভিযোগ কখনও সম্ভবপর হতে পারে না, কারণ প্রতি সপ্তাহে একনাগাড়ে ছ দিন জীবন-মরণ পণ করে খেলা প্র্যাকটিস করতে হয়, এ সময় ঢলাঢলির (‘ইজি লাইফ’) কথাই উঠতে পারে না।

এ অতি হক কথা– বিদেশে নানা শ্রেণির খেলোয়াড়দের সংস্রবে এসে আমারও ওই একই ধারণা হয়েছে। তবে সব অভিজ্ঞতারই আরেকটা সাবধান হওয়ার দিকও আছে, অর্থাৎ ভূরি ভূরি অভিজ্ঞতা থাকলেও ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সতর্ক হওয়ার রাশে ঢিল দেওয়া বিচক্ষণের কর্ম নয়।

এ সংসারে দুষ্টু লোকের অভাব নেই। দেশবিদেশের বহু জায়গায় এরা ওই সন্ধানে থাকে, খেলোয়াড়দের খেলার মাঠের বাইরে এমনভাবে বেকাবু করা যায় কি না, যাতে করে পরের দিন তারা ভালো করে খেলতে না পারে। তাই তারা খেলা আরম্ভ হওয়ার পূর্বে এবং যে কদিন খেলা হচ্ছে সে-কদিন রোজ সন্ধ্যায় নেটিভ-স্টেট স্টাইলে জব্বর জব্বর ককটেল পার্টি দেয় এবং দেশবিদেশের এমন সব হোমরা-চোমরাদের নেমন্তন্ন করে যে, সেখানে বিদেশি খেলোয়াড়দের, ওদের সম্মান রক্ষার্থে ইচ্ছে না থাকলেও বাধ্য হয়ে যেতে হয়। তার পর নানা কায়দায়-কৌশলে খেলোয়াড়দের মদ খাওয়াবার চেষ্টা সমস্ত সন্ধ্যা ধরে চলে। যারা পালা-পর্বে নিতান্ত অল্প খায় তাদের নিস্তার নেই, আর যারা খেতে ভালোবাসে তারা অনেক সময় প্রলোভন সামলাতে পারে না। দলের ম্যানেজার এবং কাপ্তেন অবশ্য মুরগির মতো চিলের ছোঁ থেকে বাচ্চাদের বাঁচাবার চেষ্টা করেন কিন্তু অনেক সময় পেরে ওঠে না, তাই ওদের দোষ দিয়ে কোনও লাভ নেই।

কোনও কোনও সময় এমন প্রলোভনও রাখা হয় যে সম্বন্ধে লিখতে আমার বাধো বাধো ঠেকছে। ফার্সিতে বলে দানিশমন্দরা ইশারা বশ অস্ত’–অর্থাৎ বুদ্ধিমানকে ইশারাই যথেষ্ট।

ফলং? পরের দিন তারা এমন খেলা খেলে যে, দেখে মনে হয় এরা নিতান্তই খেলাধুলো করতে এসেছে।

ভারতীয় খেলোয়াড়দের সম্বন্ধে আমার ভয় হয়তো অমূলক, হয়তো আমি খামখাই ঘামের ফোঁটায় কুমির দেখছি, হয়তো আসলে ওটা কুমির নয়, ফুসকুড়ি, কিন্তু ওকিবহাল হওয়ার জন্য বলতে হয়,

সাবধানের মার নেই।
(যদিও জানি
‘মারেরও সাবধান নেই’)।

 মনে করুন সি কে নাইডু, সি এস নাইডু, জাম সাহেব, ব্র্যাডম্যান, লারউড, অমরনাথ, অমর সিং, মুশতাক, ওয়াজির আলী এবং একমাত্র এঁদের মতো পয়লা নম্বরওয়ালারা যদি আজ ইহলোক পরলোক ছেড়ে দিল্লিতে একখানা সরেস ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে আসেন, তবে আপনার মানসিক চাঞ্চল্যটা কীরকমের হয়?

স্বীকার করি, গেল শনিবার দিন এখানে ‘হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড ও প্রেসিডেন্টস এস্টেট ক্লাবে’র যে একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ খেলা হয়, তাতে নিমন্ত্রণ সত্ত্বেও অনিবার্য কারণে এদের কোনও মহারথীই উপস্থিত হতে পারেননি। তাই বলেই যদি আপনারা ভাবেন খেলা উচ্চাঙ্গের হয়নি, তা হলে মারাত্মক ভুল করা হবে। ‘হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড’ দিল্লির রীতিমতো পুরাদস্তুর কেউকেটা কাগজ, এবং রাষ্ট্রপতির আপন এস্টেট ক্লাবও তো আমাদের শ্লাঘার প্রতিষ্ঠান। অতএব বিবেচনা করুন, এ খেলার প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি কি অতিশয় প্রয়োজনীয় কর্তব্য সমাধান করছিনে?

কিন্তু হায়, আমাদের দারুণ দুর্ভাগ্য, এ খেলার মীনাথরূপে আপনাদের সমীপে কোনও নিবেদন করার উপায় আমার নেই। কারণ ও খেলাতে আমি সশরীরে উপস্থিত হতে পারিনি, যদিও আমার চিত্ত, হৃদয়, চৈতন্য, আত্মা, সর্ব অস্তিত্ব ওই খেলাতে উপস্থিত ছিল। দরদী পাঠক শুধাবেন, কেন উপস্থিত হতে পারনি?

অভিমান।

এই যে আমি ‘হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডে’র এত বড় অসম্ভ্রান্ত দৈনন্দিন পাঠক, ওই কাগজের গুণী কর্মচারীগণের সঙ্গে আমার বহু যুগের হৃদ্যতা, তাঁরা আমার মতো একটা ওস্তাদ ক্রিকেটিয়ারকে ওই পর্বের দিনে বেবাক ভুলে গেলেন। কেন, আমি কি রান্নাঘরের পিছনে বাতাবি নেবু দিয়ে ঘন ঘন সেঞ্চুরি করিনি? অবশ্য স্বীকার করি উইকেট ছিল না কিন্তু উইকেট তো থাকে ক্লান্ত হলে বসবার জন্য, আমি তো ক্লান্ত হইনে।

ম্যাচ ড্র গেছে। যাবে না? আমাকে না নিলে!!

.

পিকনিকিয়া

গল্প শুনেছি, এক ইংরেজ, ফরাসি, জর্মন এবং স্কট নাকি বারোয়ারি চড়ুইভাতির ব্যবস্থা করে। কথা ছিল সবাই কিছু কিছু সঙ্গেই আনবেন। ইংরেজ আনল বেকন-আণ্ডা, ফরাসি এক বোতল শ্যাম্পেন, জর্মন এক ডজন সসেজ আর স্কট নিয়ে এল তার ভাইকে।

দিল্লিতে কিন্তু পিকনিকিয়ারা শুধু ভাইকে সঙ্গে আনেন না, আনেন ভাইয়ের শালী-শালাদের, তারা আনে তাদের কাকা-মামাদের এবং তারা ফের কাদের নিয়ে আসে তার হদিস এখনও পাইনি। সঙ্গে আনে ক্রিকেট, ফুটবল, গ্রামোফোন, পোর্টেবল রেডিও, মণ তিনেক পুরি, তদনুপাতের তরকারি এবং মাংস, গোলগাপ্পা (ফুচকা) এবং মিঠা পান।

এদের পীঠস্থল কুতুবমিনার, হাউজ-খাস এবং লোধি গার্ডেনস। পাঁচ-সাত জনের পিকনিক হেথা-হোথা ছড়ানো থাকলে যত না গোলমাল আর উপদ্রব হয়, তার চেয়ে ঢের বেশি পীড়াদায়ক হয় এইসব পাইকিরি পিকনিকে। বেখেয়ালে থাকলে হঠাৎ যে কখন দুম করে ক্রিকেট-বলটা আপনার ঘাড়ে এসে পড়বে তার কিছু ঠিক-ঠিকানা নেই।

এঁরা আনন্দ করুন, আমার তাতে কী আপত্তি, কিন্তু এই যে সাক্ষাৎ মরুভূমিসম দিল্লি শহরে এত তকলিফ বরদাস্ত করে বহুত মেহনত করে ঘাস গজানো হয়, তারই উপর যখন অত্যাচার চলে তখন আমার মতো শান্ত লোকেও এই দিল্লির শীতে উষ্ণ হয়ে ওঠে। লনে খোলা আগুন জ্বালানো বারণ, তারা জ্বালাবেনই এবং চৌকিদার আপত্তি জানালে তারা ঝগড়াকাজিয়া লাগিয়ে দেন। কিংবা দেখি, চৌকিদার আর কোনও আপত্তি করছে না, যেন সে আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। রৌপ্যচক্র অস্বচ্ছ, তার ভেতর দিয়ে দেখবেই-বা কী করে!

তাই দিল্লিতে আগমনেচ্ছু রসিকজনকে সাবধান করি, যদি শান্ত সমাহিত চিত্তে স্থাপত্যানন্দ উপভোগ করতে চাও তবে রবির সকালে কদাচ কুতুব, হাউজ-খাস এবং লোধি উদ্যান দেখতে যেও না।

নিতান্তই যদি যেতে চাও তবে যেও সরযূকুণ্ডে। অতি চমৎকার স্থল এবং ভিড় নেই বললেও চলে।

.

সাহিত্যিকের মাতৃভাষা

শ্ৰীযুক্ত নীরদ চৌধুরী তাঁর ‘অজানা ভারতীয়ের আত্মজীবনী’ লিখে দেশবিদেশে সুনাম (কারও কারও মতে কুনাম) অর্জন করেছেন। বইখানা পাঠ করবার সুযোগ– কিংবা কুযোগ–আমার এখনও হয়নি, তবে পুস্তকখানার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কী, সেকথা আমি চৌধুরী মহাশয়ের নিজের মুখেই শুনেছি এবং তিনি তাঁর ভুবনবিখ্যাত পুস্তক থেকে গুটিকতক অধ্যায় আমাদের পড়ে শুনিয়েছেন। ওহ! সে কী ইংরেজির বাহার– তার ভেতর কত ভাষা থেকে, কত কেতাব থেকে কত রকম-বেরকমের আলপনা, কত ব্যঙ্গ, কত হুঙ্কার, কত বাকচাতুরী ছত্রে ছত্রে হাউই উড়ছে, পটকা ফাটছে মূল বিষয়ের দিকে ধ্যান দেয় কার ঠাকুরদার সাধ্যি!

তা সে বইয়ের কথা যাক। ওরকম বই পড়ার বয়স আমার বহুকাল হল গেছে। এ ধরনের বই আনাতোল ফ্ৰাস কেন পড়েন না, তাঁকে জিগ্যেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার সে বয়স গেছে, যখন মানুষ যা বোঝে না তাই ভালোবাসে। আমি আলো ভালোবাসি।’ নীরদ চৌধুরী যেরকম এ যুগের ভলতেয়ার, আম্মা এ যুগের ফ্রাঁস!!

শ্ৰীযুত চৌধুরী পত্রান্তরে একখানা প্রবন্ধ লিখেছেন। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, তিনি এককালে বাংলায় লিখতেন এবং ইচ্ছে করলেই বাংলায় সর্বশ্রেষ্ঠ লেখকদের একজন হতে পারতেন।

চৌধুরী মশাই মানুষ; তাঁরও নানা দোষ আছে। কিন্তু তিনি যে অত্যধিক বিনয়-ভারে অবনত একথা তার পরম শত্রুও বলবে না।

ইংরেজি লেখক হিসেবে মি. চাওডরি কতখানি নাম করেছেন জানিনে– জানার প্রয়োজনও বোধ করিনি। বিবেচনা করি অ্যাদ্দিনে তিনি ল্যাম, রাসকিনকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন কিন্তু বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘হেলায় লঙ্কা করিত জয়’ শুনে আমার মনোরাজ্যে নানাপ্রকারের খণ্ড বিদ্রোহের সৃজন হয়েছে।

তাঁর বাংলা লেখা আমার কিছু কিছু পড়া আছে। বাংলা সাহিত্যের কিঞ্চিৎ সাধনা আমিও করেছি, যদিও শ্রেষ্ঠ লেখকদের অন্যতম হওয়ার চেষ্টায়, দিল্লি আমার জন্য এখনও বিলক্ষণ দূর অস্ত। তিনি কাঁচা বা নিকৃষ্ট বাংলা লিখতেন একথা আমি বলব না, কিন্তু তিনি যে কিসের মতো কোনও ভয়ঙ্কর অমৃতভাণ্ড নিয়ে বাংলা সাহিত্যে নামেননি সে-কথাও আমাকে বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে।

তবে এ দম্ভ কেন? সোজা অর্থ কি এই নয়; ওহে বাঙালি গ–ভ-গণ, তোমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও সাহিত্যের যে এভারেস্টে উঠতে পারছ না, আমি ইচ্ছা করলে পবননন্দন পদ্ধতিতে এক লক্ষেই সেখানে উঠতে পারতুম।

দ্বিতীয়ত, ছোঃ, বাংলা আবার একটা সাহিত্য, তাতে আবার নাম করা! মারি তো হাতি, লুটি তো ভাণ্ডার। নাম করতে হয় তো ইংরেজিই সই।

অর্থাৎ আপন মাতৃভাষাকেও তাচ্ছিল্য।

বৃথা তর্ক। আমি শুধু শেষে প্রশ্ন শুধাই– স্বজাতীয় লেখক, আপন আপন মাতৃভাষাকে তাচ্ছিল্য করে কে কবে সত্য বড় হয়েছে?

.

আসা-যাওয়া

পুব ও পশ্চিম দেশবাসীদের ভেতর মেলা মিল আর গরমিল দুই-ই রয়েছে বলে কেউ বলেন (কিপলিং), এ দুয়ে মিল অসম্ভব, আর তার বহু পূর্বে গ্যোটে বলে গিয়েছেন ‘পুব পশ্চিম এখন আর আলাদা আলাদা হয়ে থাকতে পারবে না।’

যেখানে কিপলিং, গ্যোটে, রবিঠাকুর, লিন যুটাং একমত হতে পারছেন না সেখানে আমি কথা কইতে যাব কোন সাহসে? যেখানে ফৈয়াজ খানে আর হীরু গাঙ্গুলিতে লড়াই লেগে গিয়েছে সেখানে আমি বেমক্কা বে-সমে হাততালি দিয়ে মরি আর কী?

তবু সামান্য একটা কথা নিবেদন করতে চাই।

পশ্চিমের লোক এখনও কারও সঙ্গে কথা ঠিক না করে, অর্থাৎ পাকাপাকি এনগেজমেন্ট না করে দেখা করতে আসে না। এবং টম যদি ডিকের বাড়িতে কিংবা আপিসে আসতে চায় তবে ডিকের অনুমতি না নিয়ে কখনও আসবে না। কিন্তু, পশ্য, টম ডিকের অনুমতি নিয়ে এল বটে– কটার সময় ভেট হবে কিন্তু সে যখন খুশি চেয়ার ছেড়ে বলতে পারে, ‘তবে এখন চললুম’ তার জন্য ডিকের কোনও অনুমতি প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ ইয়োরোপে কারও বাড়িতে যাওয়াটা তার হাতে, বেরিয়ে আসাটা আপনার হাতে।

প্রাচ্যের প্রায় সব দেশেই ব্যবস্থাটা উল্টো। আপনি যখন খুশি রায় মহাশয়ের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হতে পারেন। ‘এই যে রায় সাহেব’ বলে হুঙ্কার দিয়ে আপনি রায় মহাশয়ের বৈঠকখানায় ঢুকবেন, আর রায়ও ‘এই যে চৌধুরীমশায়, আসতে আজ্ঞে হোক, বসতে আজ্ঞে হোক’ বলে কোলবালিশ আর হুঁকোর নলটা আপনার দিকে এগিয়ে দেবেন। আপনি বালিশটা জাবড়ে ধরে ফুরুৎ ফুরুৎ করে আলবোলায় দম টানতে টানতে মৃদু মৃদু পা দোলাতে থাকবেন।

কিন্তু যখন বলবেন ‘এবারে উঠি?’ তখন কিন্তু রায়ের পালা। আপনি যে দুম করে চলে আসবেন সেটি হচ্ছে না, সে অধিকার আপনার নেই। রায় বলবেন, ‘আরে, বসুন, স্যার। এত তাড়া কিসের!’ আপনার তখন জোর করে চলে আসাটা সৎ বে-আদবি।

এর গুহ্য কারণ, হয়তো আপনি বহুদিন পরে এসেছেন, হয়তো কাশীবাস সেরে ফিরেছেন, রায়-গৃহিণী খবর পেয়ে আপনার জন্য সিঙারা ভাজবার তোড়জোড় করেছেন, আপনি হট করে চলে এলে তিনি মনঃক্ষুণ্ণ হবেন, অতএব আপনাকে আরও কিছুক্ষণ বসতে হবে।

অর্থাৎ বিদায় নেবার বেলা আপনাকে অনুমতি নিতে হবে।

 বিশেষ করে ইরান-আফগানিস্তানে এ নিয়ম অলঙ্ঘ্য। ভেবেছেন কি, আপনার নামে গোটা পাঁচেক ব্যঙ্গ-কবিতা লেখা হয়ে যাবে। মাহমুদকে নিয়ে ফিরদৌসির ব্যঙ্গ-কবিতা তার সামনে লজ্জায় বোরকা টানবে।

রুশ-দেশ প্রাচ্য-প্রতীচ্যের মধ্যিখানে। তাই তারা খানিকটে এদের মানে, খানিকটে ওদের মানে। শার্ট তারা সায়েবদের মতো পাতলুনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়, কিন্তু তারা যখন আপন ‘ন্যাশনাল ব্লাউস’ জাতীয় কুর্তা পরে, তখন সেটা আমাদেরই পাঞ্জাবির মতো সামনে পিছনে ঝুলিয়ে দেয়।

তারা দেখা করতে আসে খবর দিয়ে, না দিয়ে, দুই-ই। বিদেয় নেবার সময় তারা কিন্তু তৃতীয় পন্থা অবলম্বন করে। গাল-গল্পের মাঝে একটুখানি মোকা পেলে বলে, ‘এইবার ভাই, তোমার সঙ্গে আরেকটি পাপিরসি খেয়ে বাড়ি যাব।’

এ বড় উত্তম পন্থা। আন্তোন যদি ভ্যাচোর ভ্যাচোর করে আপনার প্রাণ এতক্ষণ অতিষ্ঠ করে তুলে থাকে, তবে আপনি তদণ্ডেই উল্লসিত হয়ে উঠবেন, ‘যাক, লক্ষ্মীছাড়াটা তা হলে আর বেশি ভোগাবে না।’ আপনার তখন উপেক্ষার ভাবটা ঝেড়ে ফেলে খুশি মুখে দু চারটি কথা বলতে কিছুমাত্র কষ্ট হবে না। পক্ষান্তরে আন্তোন যদি আপনার দিলের দোস্ত হয় তবে আসন্ন বিচ্ছেদ-বেদনাটার জন্য আপনি নিজেকে খানিকটা সামলে নিতে পারবেন।

এবং দ্বিতীয়ত, ইয়োরোপে দেখা হওয়ামাত্রই প্রথম প্রয়োজনীয় কথা পাড়া হয়, পরে গাল-গল্প। প্রাচ্য দেশে তার উল্টো পাঁচটি টাকা ধার চাইবার হলে বিদেয় নিয়ে দোরের গোড়ায় এসে তখন আমতা আমতা করে চাইতে হয়, বাড়িতে ঢুকেই হুঙ্কার দিয়ে নয়।

রুশ দেশে ওই শেষ সিগারেটের সময় যা কিছু ‘বিজিনেস talk’ এবং শিবরাম চক্রবর্তী অনু pun এ ‘টক বিজিনেস’।

.

দেহলি-প্রান্ত

দিল্লি ছাড়ার সময় আমার ঘনিয়ে এল। বিচক্ষণজন দিল্লিতে বেশিদিন থাকে না। পঞ্চপাণ্ডব পর্যন্ত মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এল দেখে হিমালয়-মুখে রওনা দেন। এমনকি সামান্য কুকুরটা পর্যন্ত এখানে পড়ে থাকেনি।

তবে কি যারা এখানে পড়ে থেকে শেষটায় শিব হয়ে যান, তাঁরা অবিবেচক? আদপেই। এই দুশমনের ভূমি, গরমে শিককাবাব-বানানেওলা, শীতে কুলফি-জমানেওলা, সেক্রেটারি-জয়েন্ট লুসস্ক্রু-আন্ডার-তস্য-আন্ডারকাভার, জাত-বেজাতের কর্মচারী কণ্টকিত এই ভূমিতে যে ব্যক্তি ‘অশেষ ক্লেশ ভুঞ্জিয়া’ পরলোকগমন করে সে ‘পরশুরামি’ স্বর্গে গিয়ে অপ্সরাদের সঙ্গে দু দণ্ড রসালাপ করতে পারুক আর নাই পারুক, তাকে অন্ততপক্ষে নরকদর্শন করতে হয় না। কারণ এক নরক থেকে বেরিয়েই অন্য নরকে যাবার ব্যবস্থা। কোনও ধর্মগ্রন্থই দিতে পারে না। আমি বিস্তর ধর্মের ঘাটে মেলা জল খেয়েছি– এ কথাটি আপনারা প্রায় আপ্তবাক্যরূপে মেনে নিতে পারেন।

কিন্তু এসব নিছক রাগের কথা।

এই যে আমি দেহলি-বাসীদের সঙ্গে রাশানদের মতো শেষ একটা (না, দু-তিনটে) সিগারেট খাওয়ার হুমকি দিচ্ছি শুধু তাদের আপনজন ভেবে অভিমানবশত।

আপনারা আমার সাহিত্যিক প্রচেষ্টার কদর করলেন না, আমার গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ আপনাদের সাহিত্য-সভায় পড়তে দিলেন না, যদি বা প্রধান বক্তা কোনও আন্ডার সেক্রেটারির নেমন্তন্ন পেয়ে শেষ মুহূর্তে কামাই দিলেন বলে আমাকে রচনা পড়তে দিলেন, তখন আবার আমার গুরুগম্ভীর রচনা শুনে আপনারা হাসলেন, যখন রসরচনা (আহা, আজকাল রসরচনা লিখে কত লোক রাতারাতি নাম কিনে নিল) পড়লুম তখন আপনারা গম্ভীর হয়ে গেলেন, যখন সেক্রেটারিদের মস্করা করে কবিতা পড়ে শুনালুম– আপনারা সভয়ে গোপনে এক একে সভাস্থল ত্যাগ করলেন, যখন তাঁদের প্রশস্তি গেয়ে রচনা পাঠ করলুম তখন স্পষ্ট শুনতে পেলুম, আপনারা ফিসফিস করে বলছেন আমি তেলমালিশের ব্যবসা (ম্যাসাজ ইন্সটিটিউট নয়) খুলেছি, কিছু না পেয়ে শেষটায় যখন গান গাইলাম তখন পাড়ার ছোঁড়ারা ঠিক সেই সময় গাধার লেজে টিনের কেনেস্তারা বেঁধে তাকে পাড়াময় খেদিয়ে বেড়াল, ভরতনৃত্যম্ নাচিনি– তা হলে বোধহয় আপনারা হনুমানের ছবি এঁকে তার তলায় আমার নাম লিখে বছরের শেষে ‘নরসিং দাস’ প্রাইজের বদলে এই প্রাইজ দিতেন।

তবু আমি আপনাদের ওপর এক ফোঁটাও রাগ করিনি। বরঞ্চ আমি আপনাদের কাছে উপকৃত হয়ে রইলুম। আপনাদের সংস্রবে না এলে এই যে সাহিত্যরচনার মামদো ভূত আমাদের কাঁধে ছিল সে কি কস্মিনকালেও নামত?

বিবেচনা করি এখন কলকাতা ফিরে গেলে পাড়ার ছোঁড়ারা আমাকে দেখামাত্রই পরিত্রাহি চিৎকার করে পালাবে না, তরুণীরা হয়তো কিঞ্চিৎ ঘাড় বেঁকিয়ে ‘এই যে’ বলে একটুখানি মিঠে হাসিও জানাবেন, ‘ওইরে, আবার এসেছে’ বলে দুদ্দাড় করে দরজা জানালা বন্ধ করবেন না।

ব্যালাটা বেচে দিয়েছি। পাণ্ডুলিপিগুলো কাঞ্জিলালকে ‘অবদান’ করেছি। তার বন্ধু পরিমল দত্ত নাকি গাঁটের পয়সা খরচা করে সেগুলো ছাপাবে। তা ছাপাক; আপনারা শুধু নজর রাখবেন সে যেন অ্যাকাউন্টস বিভাগে বদলি না হয়– ছোকরা তা হলে তহবিল তছরুপের দায়ে পড়বে। পরিমলকে আমি স্নেহ করি।

যতই ভাবছি, ততই দেখি দিল্লি খারাপ নয়।

দিল্লির গরম অসহ্য। কিন্তু বিবেচনা করুন সেই গ্রীষ্মের শেষে যখন কালো যমুনার ওপার থেকে দূর-দিগন্ত পেরিয়ে আকাশ-বাতাস ভরে দিয়ে বিজয় মলের মতো গুরুগুরু করে নবীন মেঘ দেখা দেয়, তারই আবছায়া অন্ধকারে আপনি খাঁটিয়াখানা বাইরে পেতে নব বরিষণের প্রতীক্ষায় প্রহর গোনেন, আপনার ত্রিযামা যামিনীর সখা তারার দল একে একে ম্লান মুখে আপনার কাছ থেকে বিদায় নেয়, অল-ইন্ডিয়া-রেডিয়োর ঘড়িটা আবার তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই অন্ধকার বিদীর্ণ করেই আপনারই চারপাইখানার কাছে এসে আপনাকে সঙ্গসুখ দেয়, দূর বৃন্দাবনের প্রথম বর্ষণে ভেজা মিঠে হাওয়া এসে আপনার গালে চুমোর পর চুমো খেয়ে যায়, হঠাৎ আকাশের এস্পার-ওপার ছিঁড়ে-ফেঁড়ে বিদ্যুৎ চমকে দিয়ে নিজাম প্রাসাদের চুড়ো, রাশান রাজদূতাবাসের ফটক, নিমগাছে এর গায়ে ওর বুকে মাথা কোটা এক ঝলকের তরে দেখিয়ে দেয় এবং তার পর সর্বশেষে অতি ধীরে ধীরে রিমঝিম করে বৃষ্টিধারা যখন আপনার সর্বাঙ্গে গোলাপজল ছিটিয়ে দেয় তখন আপনি খাঁটিয়া ঘরের ভেতর টেনে নিয়ে যাবার চিন্তাটি পর্যন্ত করেন না, ভিজে মাটির গন্ধ দিয়ে বুকের রন্ধ্র ভরে নেন, ইতোমধ্যে শুনতে পান– আরকিয়োলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের দারোয়ান রামলোচন সিং তুলসীদাসকৃত রামায়ণ সুর করে পড়তে আরম্ভ করে দিয়েছেন, আর আপনার প্রতিবেশী সারস্বত ব্রাহ্মণের মেয়ে ভৈরবীতে গান ধরেছে।

দিল্লি কি সত্যই খুব মন্দ জায়গায়?

কিংবা এই শীতকালের কথাটাই নিন। নিতান্ত যদি সন্ধের পর আপনাকে না বেরুতে হয় তবে পুনরায় বিবেচনা করুন…

এরকম দিনের পর দিন গভীর নীলাকাশ আপনি কোথায় পাবেন? সকালবেলায় সোনালি রোদ ট্যারা হয়ে আপনার চোখের উপর এসে পড়েছে, ক্রমে ক্রমে লেপ কাঁথা গরম হয়ে উঠল, নাকে টোস্ট স্যাঁকার সোঁদা সোঁদা গন্ধ এসে পৌঁছচ্ছে, এইবার ছ্যাঁৎ করে ডিম-ভাজার শব্দ আর গন্ধ আসবে, আপনি ড্রেসিং-গাউনটা গায়ে চাপিয়ে দিয়ে বারান্দায় এসে বসলেন।

আহা! সবুজ ঘাসে শিশিরের ঝিলিমিলি, প্রাতঃস্নাত শান্ত ঋজু ঝাউ সামনে দাঁড়িয়ে, শীতের বাতাসে বুগনভেলিয়ার মৃদু কম্পন, তার পর ধীরে ধীরে প্রখর হতে প্রখরতর রৌদ্রে বিশ্বাকাশের আলিঙ্গন, ধূপছায়াতে কালো-সবুজের স্নেহ-চিকন আলিম্পন, আপনার আমার মতো গরিবের ফালি অঙ্গনটুকু নন্দনকানন হয়ে উঠল– আপনি সেই সৌন্দর্যের মোহে আপিস কামাই দিয়ে আনন্দঘন দিন স্বর্ণরৌদ্রে চক্ষু মুদিত করে কাটালেন–

এ শুধু দিল্লিতেই সম্ভব।

দিল্লি ত্যাগ তাই সহজ কর্ম নয় ॥