প্রথম অংশ : ছন্দপতন
দ্বিতীয় অংশ : মৃত্যুহরণ

সপ্তরিপু – অধ্যায় ৩

অধ্যায় তিন – বর্তমান সময়

কোতয়ালি মডেল থানা, ময়মনসিংহ সদর

বদলি ব্যাপারটা মনে আসতেই মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে ইন্সপেক্টর আহমেদ বাশারের।

তাও শুধু বদলি হলে একটা কথা ছিল। ডিমোশন, সেই সঙ্গে বদলি! বদলিটাও হয়েছে এমন এক জায়গায় যেখানে এইমুহূর্তে আসার একবিন্দু ইচ্ছে ছিল না তার।

ময়মনসিংহ তার নিজের শহর কিন্তু এর সঙ্গে জড়ানো তিক্ত স্মৃতির কারণেই সে এখান থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছে এতদিন। একদিন ঠিকই এখানে ফিরে আসার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সেটা এভাবে নয়। যে শহরে একদিন মাথা উঁচু করে ফিরে আসার ইচ্ছে ছিল, সেখানেই কিনা তাকে ফিরে আসতে হলো মাথা নিচু করে। এরচেয়ে বড়ো অপমান আর কিছু হতেই পারে না। বাঁ হাতের মধ্যমায় পরা আংটিটা ডান হাতের দুই আঙুল দিয়ে ধরে মোচড়াতে লাগল সে।

জীবন যখন যেভাবে প্রবাহিত হয় মানুষকেও সেভাবেই তাল মিলিয়ে চলতে হয়। কখনো জীবনের ওপরে মানুষের নিয়ন্ত্রণ থাকে, আবার কখনো-কখনো নিজেকে ছেড়ে দিতে হয় ভাগ্যের হাতে। কিছুটা ভাগ্য আর কিছুটা কর্মফলের সংমিশ্রণের দোলাচলেই প্রবাহিত হয় প্রতিটি মানুষের জীবন। কিন্তু বাশারের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটে গেল, এরপর কী জবাব দিবে ও নিজের কাছে? কখনো মনে হয় নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে, আবার কখনো মনে হয় একমাত্র ওর ভুলই এই পরিণতির জন্যে দায়ী।

দিন সবেমাত্র শুরু হতে চলেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বাশার দেখল, এগারোটা বাজে। ময়মনসিংহ সদর কোতয়ালি মডেল থানার ব্যস্ততা এখনো তেমনভাবে শুরু হয়নি বললেই চলে। সপ্তাখানেক আগে জয়েন করার পর থেকে সে এরকমই দেখছে। দৈনিক ডিউটি বাদ দিলে এখনো তাকে তেমন গুরুতর কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সে-ও খুব বেশি গরজ দেখাচ্ছে না। নিজের ডেস্কে বসে পত্রিকা পড়তে পড়তে আর চা খেতে খেতে আরো ঘণ্টাখানেক সময় কাটিয়ে বেরিয়ে এলো ও।

নিজে যখন ওপরের লেভেলের কর্মকর্তা ছিল তখন নিজের ডেস্কে বসেই সিগারেট টানতো, কিন্তু এখন তো নিচের পদে চলে গেছে কাজেই সে-উপায় নেই। আর তাছাড়া নতুন এসেছে এই থানায়, এখানকার হাব-ভাব এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতেও পারেনি। বেলা বাড়ার সঙ্গে থানার ব্যস্ততা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। প্রাত্যহিক সেই দৃশ্য। মানুষের আনাগোনা, কারো সমস্যা, কারো সমাধান, কারো তৈলমর্দন, কারো খবরদারি, কারো পাগলামি এই নিয়েই থানার দৈনন্দিন জীবন।

থানা থেকে বেরিয়ে একটা টং দোকানের বেঞ্চে বসে সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগল ও। মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক। কথাটা মনের ভেতরে আসতেই সিগারেটের ধোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘ নিশ্বাস।

জীবন কতই না বিচিত্র। কিছুদিন আগেও সময় কোনদিক দিয়ে পার হয়ে যেতো টেরও পেতো না ও। আর ডিমোশন হবার পর থেকে সময় পার করাই এক বিচিত্র যন্ত্রণা। চায়ের টঙে বসেই দ্বিতীয় সিগারেট ধরাতে ধরাতে ভাবতে লাগল : লাঞ্চ করবে কোথায়? থানায় অবশ্য খাবারের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না।

বেঞ্চের নিচে কী যেন পায়ে নাড়া দিচ্ছে। বাশার দেখল একটা ছোটো কুকুরের বাচ্চা। ওর পায়ে জিভ দিয়ে চাটছে। বাচ্চাটাকে দেখে হেসে উঠল ও। দোকানের সামনে টাঙানো প্যাকেট থেকে এক টুকরো কেক নিয়ে ছুড়ে দিল ওটার দিকে। মহা আনন্দে খেতে শুরু করল ব্যাটা।

‘কি রে, তোর মা কই?’ খেতে খেতেই কুকুরের বাচ্চাটা একবার লেজ নেড়ে উঠল। ‘বুঝছি কেউ নাই তোর,’ বলে বাশার সিগারেটে কষে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ল। ‘আমারও কেউ নাই,’ বাশারের কথা শুনে কুকুর ছানা কী বুঝল কে জানে। কেক খাওয়া থামিয়ে মাথা তুলে ওর দিকে তাকিয়ে রইল দুই সেকেন্ড। তারপর আবার খেতে শুরু করল। ব্যাটার হাবভাব দেখে হেসে উঠল বাশার।

উঠতে যাবে হঠাৎ চোখ তুলে দেখতে পেল এক কনস্টেবল দৌড়ে আসছে ওর দিকে। কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে সালাম দিল ছেলেটা।

‘কী ব্যাপার, হাফিজ? এরকম দৌড়াচ্ছো কেন?’ বাশার এখনো সিগারেটটা ফেলেনি। তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্যে কষে টান দিল একটা।

‘স্যার, ওসি স্যারে আইন্নেরে ডাকছে,’ একেবারে খাস ময়মনসিংহের ভাষায় তাকে তথ্যটা জানাল কম বয়সের কনস্টেবল ছেলেটা।

সিগারেটটাতে শেষ টান দিয়ে ওটাকে মাটিতে ফেলে কনস্টেবলের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল, ‘কখন ডেকেছে?’

‘স্যার, এট্টু আগে। আমি তো আইন্নেরে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। কী নাকি সমইস্যা অইছে, আইন্নেরে অহনি দরকার।’

ব্যাপার কী, গত সাতদিন ধরে বসিয়ে রেখেছে এখন হঠাৎ ওসির জরুরি তলব কেন? মাটিতে ফেলে দেওয়া সিগারেটের মোথাটা জুতোর তলায় পিষে দিয়ে উঠে দাঁড়াল ও। দোকানির দিকে তাকিয়ে কুকুর ছানাটাকে দেখিয়ে বলল, ‘আরেকটু পরে ওরে দুইটা রুটি দিস,’ বলে টাকা শোধ করে কনস্টেবলের দিকে তাকিয়ে বলল। ‘চলো দেখি, কী দরকার ওসিসাহেবের?’

থানার ভেতরে ঢুকে কনস্টেবলকে নিয়ে ওসির রুমের দিকে এগোল বাশার। কাছাকাছি পৌঁছে কনস্টেবলকে ওসির রুমের বাইরে থাকতে বলে সে প্রবেশ করল ভেতরে।

কোতয়ালি সদর থানার ওসির নাম সাবের আহসান মল্লিক। একদিকে সে ওয়াকিটকিতে কথা বলছে অন্যদিকে আবার টিএনটি ফোনটাও ক্রেডল থেকে ওপরে তুলে রাখা। তারমানে সে টিএনটি ফোনে কথা বলছিল এমন সময় টকিতে কোনো জরুরি খবর এসেছে। হঠাৎ ওসির এই অতি ব্যস্ততা একটু রহস্যময়। কারণ একটু আগেও জরুরি কিছুর আভাস পায়নি বাশার। হঠাৎ কী এমন হলো কে জানে! ওকে ভেতরে ঢুকতে দেখে ওসি তাকে হাতের ইশারায় বসতে বলল। কথা শেষ করে ফিরে তাকাল ওর দিকে। ‘বাশারসাহেব, কেমন আছেন? নতুন জায়গা নতুন থানা, কেমন লাগছে?’

‘জি স্যার, ভালো,’ বেশ কঠিন সুরে জবাব দিল বাশার। ইচ্ছে করলেও কিছুতেই সহজ হতে পারছে না ও। সময় স্থান ও সম্পর্ক অনুযায়ী ভাষার ব্যবহার ও শব্দ চয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। তুই শব্দটার ব্যবহার যেমন সবসময় অপমানসূচক নয়, ঠিক তেমনি আপনি সম্বোধনও সবসময় সম্মানসূচক নয়। বিশেষ করে আপনার কোনো বন্ধু যদি কোনো বিশেষ কারণে হঠাৎ তুমি থেকে আপনি বলা শুরু করে তখন বুঝতে হবে ব্যাপারটার ভেতরে প্রকট সমস্যা রয়েছে।

ওসি সাবের আহসান মল্লিক আর বর্তমান ইন্সপেক্টর আহমেদ বাশার একই সঙ্গে চাকরিতে জয়েন করেছিল, সারদাতে তাদের ট্রেনিংও হয়েছিল একই সঙ্গে। সারদার ট্রেনিংয়ের শুরুতে এই ওসি আহসান মল্লিক একেবারেই ভালো করতে পারছিল না। তখন বাশার আর ওর আরেক বন্ধু রাজু যথেষ্ট সাহস যুগিয়েছিল মল্লিককে। এমনকি চাকরিতে জয়েন করার পর বাশার আর ওদের ব্যাচের আরো কয়েকজন খুব সহজেই প্রমোশন পেয়ে যায়, তখন এই মল্লিক প্রমোশন না পেয়ে বেশ হতাশ হয়ে পড়ছিল। তখনো ওরাই তাকে সাহস যোগাতো। আর এখন ভাগ্যের ফেরে এই মল্লিকই বাশারের বস। তার অধীনেই এখন কাজ করতে হবে ওর।

তবে ডিমোশন পেয়ে বদলি হবার পর বাশার প্রথম যখন জানতে পারে তাকে একসময়ের সহপাঠী মল্লিকের অধীনে কাজ করতে হবে, প্রথমে খারাপ লাগলেও ও একসময় মনে হয়েছিল এক অর্থে ভালোই হবে। মল্লিকের কাছ থেকে সে সহায়তা পাবে। কিন্তু জয়েন করার পর থেকে মল্লিকের ঠান্ডা আচরণে হতাশ হয়েছে ও। এমনকি যে মল্লিক আগে সবসময় ওকে তুমি বলত, ও জয়েন করার পর থেকে আপনি ডাকা শুরু করেছে। এটা সে কেন করছে এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি বাশার। আর বুঝেই বা লাভ কি? হাতি যখন গর্তে পড়ে ব্যাঙও তখন মাথায় চড়ে বসে। সম্পর্কের ক্ষেত্রফল পলকে-পলকে কীভাবে পালটে যায় সে- অভিজ্ঞতা তো এই জীবনে কম হয়নি ওর।

‘কোনো সমস্যা নেই তো? আপনি উঠেছেন কোথায়?’ ওসি মল্লিক একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে জানতে চাইল।

বাশার উত্তর দেওয়ার আগে একটু অপেক্ষা করল। কারণ সে বোঝার চেষ্টা করছে মল্লিক তাকে সিগারেট অফার করে কিনা। কারণ একটা সময় এক সঙ্গে তারা অনেক ধূমপান করেছে।

মল্লিক তার দিকে সিগারেটের প্যাকেটটা এগিয়ে দিল না।

‘স্যার, কোনো সমস্যা নেই। আমি অফিসার্স মেসে উঠেছি। পরে কোয়ার্টার পেলে সেখানে উঠে যাবো,’ বাশার শরীরটাকে রিল্যাক্স করার চেষ্টা করল। খুব বেশি শক্ত হয়ে আছে সে। যখন আপনি কারো উপকার করবেন আর পরবর্তীতে কোনো কারণে সেই ব্যক্তির দ্বারস্থ হবেন, তখন দুই ধরনের ঘটনা ঘটবে। আপনার অতীত উপকারের কথা স্মরণ করে হয় সে আপনাকে খুব আপন করে নেবে, আর না হয় সে আপনার সঙ্গে কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টা করবে, যাতে আপনি অতীত উপকারের বিনিময়ে কোনো কিছু প্রত্যাশা করে না বসেন। এই মুহূর্তে দ্বিতীয় ঘটনাটাই ঘটছে। যেহেতু মল্লিক বসগিরি ফলানোর চেষ্টা করছে কাজেই সেটাই সই। ‘জিজ্ঞেস করার জন্যে ধন্যবাদ, স্যার।’

‘কোনো সমস্যা হলে বা কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন, ‘ বলে সে হেসে যোগ করল। আরে, আমি কী সাহায্য করব, এটা তো আপনারই এলাকা। আপনার শহর,’ বলে সামান্য একটু হেসে উঠল মল্লিক।

সঙ্গে সঙ্গে বাশারের মনে হলো ওর পেটে লাথি মেরেছে কেউ। পুরনো বন্ধু মল্লিক তার সঙ্গে বসের মতো আচরণ করছে এটা মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু সে তার পুরনো ক্ষত ধরে টান দেবে এটা ভাবতেও পারেনি বাশার। সেই ধরনের মানুষ হলো সবচেয়ে খারাপ যারা আপনার দুর্বলতাকে পুঁজি করে আপনাকে আঘাত করার চেষ্টা করবে। মনটা তিক্ততায় ভারী হয়ে উঠল বাশারের। এই শহর নিয়ে কতটা কষ্ট জমে আছে ওর মনের ভেতরে এটা ওর সব বন্ধুবান্ধবই জানে। মল্লিক আরো ভালো জানত। ওর মনের ভেতরের কষ্টটা ধরে মল্লিক এভাবে টান দিবে এটা ও ভাবতেও পারেনি। অসুস্থ একটা অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলল ওকে, কিন্তু কীভাবে যেন একেবারে স্বাভাবিক গলায় কথা বলে উঠল সে।

‘জি, স্যার। এটা তো আমারই শহর, একেবারে সরাসরি মল্লিকের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল সে। ওর তীব্র দৃষ্টির সামনে একটু নরম হয়ে এলো মল্লিকের তাচ্ছিল্যের ভাব। ‘স্যার, আপনি আমাকে কোনো কারণে ডেকেছিলেন?’

‘হ্যাঁ, কিছুক্ষণ আগে শানকিপাড়া শেষমোড়ে একটা ঘটনা ঘটেছে। ওই জায়গাটা আজ সকাল থেকেই হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত ছিল। আমরা আগে থেকেই আশঙ্কা করছিলাম ওখানে কিছু একটা ঘটতে পারে আজ।’

‘কেন, ওই ডেভলপার কোম্পানির জমি দখলের ব্যাপারটা নিয়ে?’ ব্যাপারটা গতকালই শুনেছিল বাশার। ওখানে নাকি এক ডেভলপার পুকুর ভরাট করে তার কোম্পানির কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। সেটা নিয়ে নাকি আগে থেকেই একটা ঝামেলা হবার আশঙ্কা ছিল।

‘হ্যাঁ, ওই ব্যাপারটাই। সাঈদ কন্ট্রাকটার তার কোম্পানির প্রভাব খাটিয়ে জায়গাটা করায়ত্ত্ব করলেও কাজ শুরু করতে পারেনি স্থানীয় কিছু ঝামেলার কারণে। আজ থেকে সেটা শুরু করার কথা। সাঈদসাহেব আমাকে আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিল পুরো ব্যাপারটা, আর তাই আমিও টহল পুলিশদের একটা গ্রুপ আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম ওখানে,’ ওসি মল্লিককে বেশ নার্ভাস দেখাচ্ছে।

‘এখন কি ওখানেই ঝামেলা হচ্ছে?’ বাশার অনুমান করল মল্লিক সম্ভবত প্রটেকশান দেওয়ার নামে সাঈদ কন্ট্রাকটারের কাছ থেকে বেশ ভালো অঙ্কের একটা টাকা খসিয়ে নিয়েছে। এখন সমস্যা হওয়াতে ঘাবড়ে যাচ্ছে। ‘সমস্যাটা ঠিক কী নিয়ে?’

‘সবাই ঠিক ছিল। আমরা যেসব সমস্যা আশা করেছিলাম তেমন কিছু হয়নি। কিন্তু ওরা কাজ শুরু করার পর অন্য এক দিক দিয়ে ঝামেলা বেঁধে যায়।’

‘কী রকম?’

‘ওরা পুকুরের পানি সেচে ফেলে দিতে গিয়ে পুকুরের মাঝখানে নাকি কাদার মধ্যে গেঁথে থাকা অবস্থায় একটা পুরনো গাড়ি খুঁজে পেয়েছে।’

‘কী খুঁজে পেয়েছে, গাড়ি?’ বাশারের মনে হলো ও ভুল শুনেছে।

‘হুম, গাড়ি। পুকুরের তলায় একটা গাড়ি খুঁজে পেয়েছে ওরা।’

‘ওখানে কাদার ভেতরে পুকুরের তলায় গাড়ি আসবে কোত্থেকে?’

‘সেটাই তো বুঝতে পারছি না। তাই আমি চাইছি আপনি সেখানে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা দেখেন। আমি জিপ আর ফোর্স রেডি করেই রেখেছি, আপনি এখুনি ওখানে চলে যান।’

বাশারের মনে কিছু প্রশ্নের উদয় হয়েছিল কিন্তু সেগুলো জিজ্ঞাসা করার আগেই ওসি ওয়াকিটকিতে কথা বলতে লাগল। কথা শেষ করে সে বাশারের দিকে ফিরে নির্দেশনা দিতে লাগল।

‘স্যার, আমার কিছু জিজ্ঞাসা ছিল।’

‘সব কথা হবে। আগে আপনি দেখে আসুন ওখানকার পরিস্থিতি কী।’

‘ঠিক আছে, স্যার,’ ও সালাম ঠুকে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছিল হঠাৎ ওসি মল্লিক পেছন থেকে ডাক দিল।

‘বাশার।’

মল্লিকের ডাকে ঘুরে তাকাল বাশার, ‘স্যার?’

‘বাশার, যা হয়েছে তা তো হয়েই গেছে। সেটাতো পালটানো সম্ভব নয়। আর যেহেতু আমাদেরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে কাজেই সব ভুলে স্বাভাবিকভাবে কাজ করাই ভালো।’

‘অবশ্যই, স্যার। আমার তরফ থেকে কোনো সমস্যাই হবে না, স্যার,’ বলে ও সালাম ঠুকে ওসি মল্লিকের রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

বাশার বুঝতে পেরেছে মল্লিক শেষ কথাগুলো কেন বলেছে। বাশারকে ওর শহর নিয়ে খোঁচাটা মেরে সে কাজটা ভালো করেনি, ওর মনে কষ্ট দিয়েছে এটা বেশ ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছে মল্লিক। আর সেই ব্যাপারটাকেই একটু তরল করার জন্যেই সে বলেছে শেষ কথাগুলো। কিন্তু বাশার জানে মল্লিক ব্যাপারটাকে যতই তরল করার চেষ্টা করুক না কেন ওর মনের ভেতরে বন্ধু হিসেব মল্লিকের অবস্থান চিরতরে শেষ হয়ে গেছে। মন থেকে কোনো দিনই আর ওকে শ্রদ্ধা করবে না ও। থানার বাইরে এসে জিপে উঠতে উঠতে বাশার ভাবতে লাগল, মনের গহিনের কষ্টগুলোতে যারা খোঁচা দেয় তাদের প্রতি আর যাই হোক অন্তত শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *