প্রথম অংশ : ছন্দপতন
দ্বিতীয় অংশ : মৃত্যুহরণ

সপ্তরিপু – অধ্যায় ২৩

অধ্যায় তেইশ – বর্তমান সময়

করাচি রোড, ময়মনসিংহ

‘এখানেই ডাকাতিটা হয়েছিল, তাই না?’ ওদের জিপ হোটেলের সামনে থেকে একটানে উঠে এসেছে কাচারি রোডে। শশীলজের সামনে দিয়ে যাবার সময়ে ওদিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল বাশার।  

সেদিকে না তাকিয়ে মোবাইল টিপতে টিপতেই জয়া জবাব দিল, ‘হ্যাঁ, এখানেই।’

‘এটা কি এখনো টিচার্স ট্রেনিং কলেজই আছে?’ বাশার প্রশ্ন করল। ওর মনে পড়ল ছোটোবেলা ওর খালার সঙ্গে এখানে একবার এসেছিল। ওর খালা তখন এখানে এমএড করছিল।

‘হ্যাঁ, এটা টিচার্স ট্রেনিং কলেজই আছে। তবে এর একটা অংশ নাকি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিয়ে নিয়েছে। এক সময় এটা সবার জন্যে খোলা ছিল না। এখন আবার জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে শুনেছি,’ জয়া জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ওদের জিপ কাচারি রোড পার হয়ে গোল পুকুরপার রোডে ঢুকেছে।

‘স্যার, কোনদিকে?’ ওর কাছে জানতে চাইল আবদুল্লাহ।

‘আমার তো মনে নেই,’ বাশার অনুমান করার চেষ্টা করল কোনদিকে জানি দেখেছিল জাদুঘরটা। ‘এদিকেই হবার কথা, কারো কাছে জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে।’

বাশার কারো কাছে জানতে চাইবার আগেই পাশ থেকে জয়া বলে উঠল, ‘জিজ্ঞেস করতে হবে না। আরেকটু এগোলে হাতের বামে দেখবে ইনকাম ট্যাক্স অফিস, সেটার ঠিক বিপরীত দিকেই মিউজিয়াম।’

আবদুল্লাহ আরেকটু এগিয়ে ঠিক মিউজিয়ামের পুরনো গেটের সামনে পার্ক করল। বাশার জিপ থেকে নেমেই আশপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। গতকালের পর থেকে আর সেই সাদা গাড়ি চোখে পড়ছে না। আনমনেই ও খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই সাদা গাড়ি আর সাদা মানুষটাকে।

‘তোমরা দুজনে জিপেই বসো। আমরা আসছি,’ কথাটা আবদুল্লাহ আর রমিজ দারোগার উদ্দেশ্যে বলেই ও আর জয়া মিলে হাঁটা দিল মিউজিয়ামের ভেতরের দিকে।

ছোটোবেলায় একবার এলেও এখানকার স্মৃতি বলতে গেলে প্রায় কিছুই মনে নেই বাশারের। তবে এটুকু মনে আছে এখনকার মতো জীর্ণ দশা ছিল না তখন। গেট দিয়ে প্রবেশ করে দুইপাশে ছোটো একটা বাগানের মতো জায়গা পার হয়ে ওরা হলুদ রঙের মূল ভবনটাতে প্রবেশ করল। মিউজিয়ামের বাইরে একজন দারোয়ান বসে ঝিমোচ্ছে। তার পাশে একটা পুরনো দিনের বন্দুক। বাশার নিশ্চিত কেউ যদি লোকটার বন্দুক নিয়ে দৌড় দেয় এই লোক টেরও পাবে না।

মিউজিয়ামের অফিসে একজন কেরানি গোছের বয়স্ক লোক বসে মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়ছে। লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে পত্রিকা পড়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ এই ত্রিভুবনে হতেই পারে না। তার সামনে গিয়ে মৃদু কাশি দিল বাশার। কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আবারো কাশি দিল ও। তাও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আরেকবার কাশি দিতে যাচ্ছিল তার আগেই লোকটা পত্রিকা নামিয়ে বলে উঠল, ‘এত কাশি হইলে মানুষ ডাক্তারখানায় যায়, জাদুঘরে আইতে তো হুনি নাই।’

‘আমরা দর্শনার্থী নই। একটা ব্যাপারে খোঁজ নিতে এসেছি,’ জয়া বলে উঠল।

 ‘তা আর কইতে, পুলিশে আইবো জাদুঘরে ঘুরতে, তাইলে তো বালাই আছিল। বলেন, কী জানতে চান?’ সে তার চোখে পরে থাকা চাঁচের তৈরি সাদা চশমাটা খুলে জানতে চাইল।

‘মিউজিয়ামের কিউরেটরের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিলাম আমরা,’ বলে বাশার আশপাশে একবার চোখ বুলালো। কিউরেটরের রুম বাইরে থেকে ছিটকিনি আটকানো। ‘উনি আসেননি?’

‘উনি এত সময়মতো আইলে তো ভালোই অইতো। অপনেগো কী জানুন দরকার সেইটা বলেন?’

‘আপনাদের এখানে বেশ আগে রিফাত মজুমদার নামে একজন কিউরেটর ছিল তার ব্যাপারে কিছু বলতে পারবেন?’ বাশার জানতে চাইল।

কেরানি লোকটাকে দেখে মনে হলো বেশ অবাক হয়েছে। ‘এতদিন পরে আতকা হের ব্যাপারে খুঁজ-খবর! কিছু অইছেন?’

‘না, একটা কেসের ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলা দরকার আমাদের। তাই জানতে চাচ্ছিলাম।’

‘হুম, কোন ব্যাপার, আপনেরাই ভালা জানেন। তয় ভালা কিছু অউনের কথা না। কারণ ভালা মাইনষের লগে ভালা কিছু অয়না। ভালা মাইনষের লগে সবসময় মন্দ ব্যাপার ঘটে। আমি এইহানে আছি প্রায় পঁচিশ বছর। সামনের বছরে অবসরে যামু। কত ম্যানেজার দেখলাম,’ বাশার অনুমান করল লোকটা কিউরেটরকে ম্যানেজার বলছে। কিন্তু হের মতো মানুষ আর পাই নাই। পোলাপান মানুষ আছিল, বোকার মতোন একটা কাম কইরা বেচারা…..হেরে তো চাকরি থাইক্কা বাইর কইরা দিছে বহুত আগে।’

‘সেটা আমরা জানি, কিন্তু তাকে এখন কোথায় পাওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে যদি কোনো তথ্য দিতে পারতেন,’ লোকটার বকবকানি শুনে একটু বিরক্ত বোধ করছে বাশার।

‘শুনছিলাম ওই ঘটনার পরে হেয় নাকি বিদেশ গেছিল পড়ালেহা করতে

শিট, মনে মনে আঁতকে উঠল বাশার এই লোকও যদি বিদেশ চলে গিয়ে থাকে তবে তো সৰ্বনাশ।

‘…তয় শুনছি কিছুদিন আগে নাকি দেশে আসছে, ভালা একটা চাকরিও পাইছে,’ সাদা চশমা বলেই চলেছে।

‘কোথায়?’ রীতিমতো ধমকে উঠল জয়া। ‘এত কথা না বইলা কোথায় সেইটা বলেন।

‘জয়নাল আবেদিন সংগ্রহশালায় নাহি উপ-পরিচালক হিসেবে আছে হেয়।’

‘ধুর মিয়া! এতক্ষণ ত্যানা না পেঁচায়া এইটা আগে বলতে পারলেন না,’ বলে ধাম করে লোকটার টেবিলে একটা থাবা দিয়ে বেরিয়ে গেল জয়া। বুড়ো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। জয়া বেরিয়ে যেতেই বিড়বিড় করে বলে উঠল, ‘বাপরে, কি মাইয়া মানুষ, এমুন আর দেহি নাই!’

বাশার বাইরে এসে দেখল জিপে উঠে বসেছে জয়া। সে-ও উঠে বসে আবদুল্লাহকে নির্দেশ দিল, ‘পার্কের দিকে চলো, জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালায় যেতে হবে।’

‘স্যার, কুনো কাম অইলো?’ রমিজ দারোগাকে দেখে মনে হচ্ছে সংক্ষিপ্ত এই সময়টাতে সে বেশ চমৎকার একটা ঘুম দিয়ে নিয়েছে। তার কথার জবাবে কিছু না বলে মাথা নাড়ল বাশার। ও তাকিয়ে আছে জয়ার দিকে।

‘আপনি যে এভাবে মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এটা কী ঠিক?’ বেশ কড়া সুরেই জানতে চাইল ও।

‘ঠিক-বেঠিক জানি না, তবে আমি এরকমই। ভালো না লাগলে কিছু করার নেই,’ জয়া মুখ ঝামটে উঠল।

‘শুনুন, মানুষের মনে কষ্ট দিতে নেই। এভাবে মানুষের মনে কষ্ট দিলে…’

বাশার কথা শেষ করার আগেই জয়া চোখ গরম করে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল, তার আগেই চট করে বাশার ওর একটা হাত চেপে ধরল।

‘কী ব্যাপার?’ হঠাৎ বাশার এভাবে হাত চেপে ধরাতে জয়া ভড়কে গেছে।

‘সেই সাদা গাড়িটা,’ বাশার ইশারায় ওদের জিপের পেছনে দেখাল। ‘আবারো পিছু নিয়েছে।

জয়া এখনো কড়া চোখে বাশারের দিকে তাকিয়ে আছে। ‘আপনি কি নিশ্চিত?’

‘অবশ্যই আমি নিশ্চিত। আমি পরিষ্কার দেখেছি এটার একটা লাইট ভাঙা।’

‘কী করতে চান এখন?’ জয়া জানতে চাইল।

বাশার কিছু না বলে চিন্তা করছে। ও কিছু বলার আগেই জয়া বলে উঠল। ‘এক কাজ করেন, আবদুল্লাহকে বলেন গাড়ির গতি আস্তে আস্তে না কমিয়ে হঠাৎ করে একপাশে পার্ক করতে। সত্যিই যদি গাড়িটা আমাদেরকেই অনুসরণ করে তবে অবশ্যই থামবে। আর না হলে তো চলেই যাবে।’

কথাটা মনে ধরল বাশারের। ও আবদুল্লাহকে নির্দেশ দিল জিপের গতি বাড়ানোর, এরপরে চট করে একপাশে সাইড করে ফেলার। আবদুল্লাহ মোটামুটি বুঝতে পারল বাশার কী করতে বলছে। সে-ও জিপের গতি বাড়িয়ে দিল।

ওদের জিপ ইতিমধ্যেই পার্কে প্রবেশ করেছে। খালি রাস্তা পেয়ে আবদুল্লাহ জিপের গতি আরো বাড়িয়ে দিল।

এখন বেশ তীব্র গতিতেই ডান দিকে ব্রহ্মপুত্র নদীকে ডানে রেখে সামনে এগিয়ে চলেছে। আরেকটু এগুলেই শুটিং ক্লাব পার হয়ে পার্কের দ্বিতীয় অংশে প্রবেশ করবে। এই জায়গাটায় পার্কের একটা অংশ দেওয়াল দিয়ে ভাগ করা হয়েছে। মাঝখানে ডিভাইডারের কাছে কিছু ফুচকার দোকান আছে সেখানে রাস্তাটা একটু বাঁক নিয়ে আবার পার্কের অন্য অংশে প্রবেশ করেছে। বাঁকের কাছাকাছি আসতেই চট করে জিপটাকে বাঁয়ে এক সাইড করে রেখে দিতে বলল বাশার। আবদুল্লাহ সর্বোচ্চ দক্ষতা দেখিয়ে বনবন করে হুইল ঘুরিয়ে জিপটাকে রাস্তার বাঁদিকে দাঁড় করিয়ে ফেলল।

তীব্র ঝাঁকি খেয়ে থেমে গেল জিপ।

পেছনে আসছিল এক সাইকেল আরোহী হঠাৎ ব্রেক চাপাতে আরেকটু হলেই জিপের ওপরে এসে পড়ছিল কোনোমতে, সামলে নিয়ে জিপ ড্রাইভারের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে পাশ দিয়ে টুং-টাং বেল বাজিয়ে চলে গেল। জিপের ভেতরে সবাই এর-ওর গায়ে ছিটকে পড়েছে। নিজেদের ঠিকঠাক করে জয়া ফিরে তাকাল পেছন দিকে, বাশার তাকিয়ে আছে ভিউ মিররে। পেছনের সাদা গাড়ির প্রতিক্রিয়া দেখাটাই এখন মূল উদ্দেশ্য।

গাড়িটার গতি কি একটু কমে গেল? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করল বাশার। পেছনের গাড়িটার গতি কমে গিয়েও আবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেড়ে গেল। রাস্তায় যেরকম গতি থাকার কথা তার চেয়ে অনেক বেশি গতিতে ওদের জিপ পার হয়ে চলে গেল গাড়িটা। বাঁকের কাছে পৌঁছে গতি খানিকটা কমিয়ে পার হয়ে গেল বাঁকটা। তারপর আবারো গতি বাড়িয়ে হারিয়ে গেল দৃষ্টিসীমার বাইরে।

‘ওটার লাইট কিন্তু ভাঙা ছিল না,’ বাশার নিজের মোবাইলে গাড়িটার নম্বর লিখতে শুরু করেছিল, হঠাৎ জয়ার মন্তব্য শুনে খেই হারিয়ে ফেলল।

‘ধুরো,’ নম্বরটা গুলিয়ে ফেলে নিজেকেই বকা দিয়ে জয়ার দিকে ফিরে তাকাল। ‘কী বললেন, লাইট?’ বলে এক সেকেন্ড চিন্তা করে জবাব দিল। ‘লাইট মেরামত করা এমন কঠিন কিছু না।’

‘আর হ্যাঁ, বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে সাদা গাড়ি খুঁজে বের করাও কঠিন কিছু না, প্রচুর আছে,’ বলে বাশারের দিকে তাকিয়ে একটু টিটকিরির হাসি দিল জয়া। জবাবে কড়া একটা কিছু বলতে চাইছিল বাশার তার আগেই আবদুল্লাহ প্রশ্ন করল, স্যার, আরো অপেক্ষা করমু, নাকি যামু?’

‘যাও, আর কী করবা,’ অদ্ভুত এক দ্বিমুখী অনুভূতি হচ্ছে ওর। বুঝতে পারছেনা গাড়িটা অনুসরণ করেনি বলে ও খুশি হয়েছে? নাকি অনুসরণ করলেই বেশি খুশি হতো? মেজাজ খারাপ লাগছে। পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাতে যাবে তার আগেই ওর দিকে একটা সিগারেট বাড়িয়ে দিল জয়া।

‘স্নায়ুর গোড়ায় ধোঁয়া দিলে নাকি স্নায়ু ঠান্ডা থাকে, আমার এক টিচার বলতেন,’ জয়া মৃদু হাসি নিয়েই বলল। ‘দিনে দুই প্যাকেট সিগারেট খেতেন উনি।’

সত্যি কথা বলেছেন। তো আপনার সেই শিক্ষক এখন কোথায়?’ সিগারেট ধরাতে ধরাতে জানতে চাইল বাশার।

মাটির নিচে, বয়স পঁয়ত্রিশ হবার আগেই স্ট্রোক করে মারা গেছেন।’

জয়ার উত্তর শুনে আচমকা হেসে ওঠাতে গলায় ধোঁয়া আটকে গিয়ে হাসিটা কাশিতে রূপান্তরিত হলো। বেদম কাশি আটকে দেওয়াতে চোখে পানি চলে এলো ওর।

‘স্যার, চইলা আসছি,’ বলে আবদুল্লাহ জিপ থামালো জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার গেটের সামেন।

‘গেটের একপাশে পার্ক করো।

আবদুল্লাহ জিপ পার্ক করতেই নেমে এলো সবাই। ‘আবদুল্লাহ আর রমিজসাহেব আপনারা দুজনে ভেতরে যান গিয়ে দেখে আসনে উনি আছেন কি না,’ বলে ও নাম লেখা চিরকুটটা ধরিয়ে দিল রমিজ দারোগার হাতে। বারবার এর-ওর ওখানে যাওয়াতে বিরক্ত হয়ে উঠেছে বাশার। তার চেয়ে ওরা গিয়ে দেখে আসুক আছে কিনা। থাকলে পরে ও যাবে। ‘আপনারা ভেতরে গিয়ে খবর নেন। উনি সম্ভবত উপ-পরিচালক বা এরকম কিছু একটা হবেন। যদি থাকেন তাহলে আমাকে কল দিয়েন,’ বলে ও জয়ার দিকে তাকাল। চাইলে আপনিও যেতে পারেন।’

‘নাহ,’ হাত নেড়ে জয়া বলল। ‘ওরাই যাক।’

আবদুল্লাহ আর রমিজ দারোগা বড়ো লোহার গেটটা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। বাশার জিপের একপাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে লাগল। দৃষ্টি জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার দিকে। ‘আমরা যখন ছোটো ছিলাম এটা তখন বহুবছর বন্ধ ছিল।’

‘হ্যাঁ, মাঝখানে বহুবছর বন্ধ থাকার পর এখন আবার জনসাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়েছে,’ ওর পাশ থেকে জয়া জবাব দিল। দুজনেই সংগ্রহশালার দোতলা ভবনের দিকে তাকিয়ে আছে।

বাশারের মনে পড়ল শেষবার যখন এখানে এসেছিল জায়গাটা ঘন জঙ্গলের মতো হয়ে গেছিল যত্নের অভাবে। দোতলা ভবনটারও রং জ্বলে জায়গায় জায়গায় শ্যাওলা ধরে বাজে অবস্থা হয়ে গেছিল। এখন পুরো চিত্রটাই পালটে গেছে। সামনের বাগান সাজানো হয়েছে সুন্দর করে। রং-বেরঙের চমৎকার সব ফুল ফুটে

আছে এখানে-ওখানে। ভেতরে বহু মানুষের সমাগমও দেখা গেল। সংগ্রহশালার প্রাঙ্গণে এক জায়গায় বেশ কিছু বাচ্চা বসে ছবি আঁকছে। একজন শিক্ষিকা ছবি আঁকা শেখাচ্ছে তাদেরকে।

‘কী অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন, তাই না? কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে গেছিলেন। তার কাজ, তার জীবন-মানুষের সামনে তুলে ধরাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল,’ মন্তব্য করল বাশার।

‘হ্যাঁ, ছিল। তবে এসব ব্যাপারে, বিশেষ করে নিজেদের ভেতরের গুণী মানুষের কদর না করে তাদেরকে পথে বসানোর ব্যাপারে আমরা জাতিগতভাবে খুবই পারদর্শী। জয়নুল আবেদীন তো তাও ঠাঁই পেলেন। এস এম সুলতানের এক টুকরো স্বপ্ন কি আমরা বাঁচাতে পেরেছি? মানিক বন্দোপাধ্যায়ের মতো মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন, জীবনানন্দ দাসের কথা নাই-বা বললাম। উদাহরণের কি অভাব আছে? কেউ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে, আবার কেউবা সামাজিক কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে। আমরা কি আসলেই গুণীদেরকে সম্মান করতে জানি। আর কদরই যদি না থাকে তবে গুণী জন্মাবে কীভাবে? মানিক বন্দোপাধ্যায়ের পরিণতি জানতে পারলে এ দেশের কোন ইয়ং ছেলে বা মেয়েটা লেখক হতে চাইবে; বলেন,’ জয়া কথা বলতে বলতে যেন একটু উত্তেজিত হয়ে উঠেছে।

‘আপনি এভাবে বলছেন কেন? হুমায়ূন আহমেদ, সৈয়দ মুজতবা আলীর মতো সাফল্যের উদাহরণও তো আছে। আছে না?’

‘হ্যাঁ, সেটা আছে। তবে হুমায়ূন স্যারের প্রায়োরিটি ভিন্ন ছিল।’

‘এটা আপনি বলতে পারেন না। কার প্রায়োরিটি কী হবে সেটা অন্য কেউ ঠিক করে দিতে পারে না। আরেকটা ব্যাপার ‘আর্টস ফর আর্টস সেইক’, নাকি ‘আর্টস ফর ম্যাটেরিয়ালিস্টিক পারপাস’ এই দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে কোন সৃষ্টিশীল মানুষটাকে যেতে হয়নি, বলেন,’ এবার বাশারও একটু উত্তেজিত হয়ে উঠেছে।

‘আপনি আমার কথা বুঝতে পারেননি। আমি যেটা বলছি সেটা হলো, উনি অনেক ভালো একজন লেখক ছিলেন। শুধু ভালো বললে হয়তো অন্যায় হবে। আমি বলবো সেরাদেরও সেরা। তবে আমার বক্তব্য উনি যা দিতে পারতেন বা অন্যভাবে বলতে গেলে যা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল সেটা উনি পুরোপুরি দিতে পারেননি অনেক বেশি লেখার কারণে। একভাবে বলতে গেলে পাঠকদেরকে ও বাংলা সাহিত্যকে হয়তো আরো অনেক গভীর ও অনেক বেশি কিছু দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর ছিল। তবে সেটা উনি করেননি। তাই তার প্রতি সবসময়ই একধরনের অভিমান কাজ করে আমার,’ একটু আগের উত্তেজনা প্রশমিত হওয়াতেই কিনা কে জানে জয়া যেন একটু বিব্রত।

‘মহান সৃষ্টি তৈরি করতে গিয়ে কেউ যদি না খেয়ে মরে তবে সেটা বুঝি ভালো?’ বাশার পরিস্তিতি একটু হালকা করার জন্যে বলল, কিন্তু জয়া উলটো আবারো উত্তেজিত হয়ে উঠল

‘এটাই তো আমার বক্তব্য। জাতিগতভাবে কেন আমরা এখনো ভালো জিনিসের কদর করতে পারব না? কেন এখনো হালকাই রয়ে যাবো? বুঝতে না পারি, কিন্তু ভালো জিনিসের কদর করতে তো শেখা উচিত।’

‘আপনি একথা বলছেন, আমার তো মনে হয় মোবাইলের এই যুগে মানুষ দিন-দিন আরো ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে,’ বলে বাশার দুইহাত তুললো। ‘এসব বিতর্কের শেষ নেই, আমি ক্ষুদ্র মানুষ। নিজের ক্ষুদ্র চিন্তা-ভাবনা নিয়েই থাকতে চাই,’ বলে ও হেসে উঠল। ‘নিজে বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম। এখন করছি পুলিশগিরি। আমি এসব বলার কে!’

জয়াও হেসে উঠল। ‘ওই যে, ওরা চলে এসেছে।’

‘পেয়েছো?’ বাশার প্রশ্ন করল রমিজ দারোগার উদ্দেশ্যে।

জবাব দিল আবদুল্লাহ। ‘স্যার, উনি এইখানে উপ-পরিচালক হিসেবে আছেন। তবে আইজ আসেননি,’ আবদুল্লাহর কথা শুনে আবার ভেতরে ভেতরে গুঙিয়ে উঠল বাশার। মনে মনে ভাবল আবারো কানা গলি।

‘তয় এইবারও কাম হইছে,’ রমিজ দারোগা বলে উঠল। বলেই সে বাশারের দিকে বাড়িয়ে দিল একটা ছোট্ট চিরকুট। ‘এইহানে হের বাসার ঠিকানা লেইক্ষা আনছি,’ বিরাট কাজ করেছে বলে সে ভুঁড়ি দুলিয়ে হাসতে লাগল।

বাশার কাগজটা নিতে নিতে ভাবল, এই লোক দেখি চিরকুট মানব হয়ে যাচ্ছে। কাগজটা হাতে নিয়ে সে দেখল বাউন্ডারি রোডের একটা ঠিকানা। বাউন্ডারি রোডে ওর এক বন্ধুর বাসা ছিল সেটার কথা মনে করে বোঝার চেষ্টা করল, বাসাটা কোন জায়গায় হতে পারে। কিন্তু বুঝতে পারল না। ‘বাউন্ডারি রোড চেনো না?’ প্রশ্নটা ও করেছে আবদুল্লাহর উদ্দেশ্যে।

‘জি, স্যার চিনি তো।’

সবাই মিলে জিপে উঠতেই জিপ ছেড়ে দিল আবদুল্লাহ। সংগ্রহশালার সামনের রোড ধরে ওদের জিপ সোজা চলে এলো কাঁচিঝুলি মোড়ে। এখান থেকে বাঁক নিয়ে গাড়ি আরেকটু এগিয়ে ঢুকে পড়ল হামিদউদ্দিন রোডে। এদিক দিয়ে ঢুকলো কেন আবদুল্লাহ, ঠিক বুঝতে পারল না বাশার। ও জানতে চাইল।

‘স্যার টাউন হলের মোড়ে এই সময়ে জাম হয়,’ আবদুল্লাহ একমনে গাড়ি চালাচ্ছে।

ময়মনসিংহ শহরেও আজ-কাল জ্যাম হয়, ভাবতেই কেমন অদ্ভুত লাগে। গাড়ি এখন কলেজ রোড দিয়ে চলেছে। আরেকটু এগোলেই আনন্দমোহন কলেজ পার হয়ে সামনে এগোবে। এই এলাকাতেই বড়ো হয়েছে বাশার। যখন ও এখানে ছিল তখন আর এখনকার মধ্যে কত পার্থক্য! ডেভলপার আর রিয়েল এস্টেটের ছোঁয়ায় পুরো শহরটা জাদুর কাঠির মতো বদলে গেছে। বদলে গেছে মানুষগুলোও, হারিয়ে গেছে অনেকেই। শুধুমাত্র নিজের ভেতরে বেঁচে রয়েছে পুরনো স্মৃতিগুলো। ঝাপসা হতে হতে হয়তো স্মৃতিগুলোও একদিন হারিয়ে যাবে। বেশিরভাগ স্মৃতিই হলো রাতের হাইওয়েতে দেখা ছোট্ট কোন টং দোকানের বাতির মতো, গাড়ি যত দূরে সরতে থাকবে আলোটা ততোই টিমটিমে হতে হতে এক সময় হারিয়ে যাবে অন্ধকারে। তবে কিছু স্মৃতি রয়ে যায় চিরস্থায়ীভাবে।

‘স্যার, চইলা আসছি,’ আবদুল্লাহর কথায় নিজের কল্পনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে এলো বাশার। দুপুর গড়িয়ে চলেছে। সকাল থেকে দুইশো পঞ্চাশ এমএল কোক আর দুটো বিড়ি ছাড়া কিছু খাওয়া হয়নি।

পেটে গ্যাস, মাথায় স্ট্রেস…বাঙালির কমন অবস্থা।

‘একদিকে সাইড করো। কিছুই তো চিনি না এদিকে। খুঁজে বের করতে হবে, আমি নেমে জেনে নিচ্ছি তোমরা জিপ নিয়ে আস্তে আস্তে আমার সঙ্গে এগোবে,’ বলে বাশার নেমে এলো জিপ থেকে। কাছেই একটা চায়ের দোকানে জিজ্ঞেস করে ঠিকানাটা জেনে নিয়ে হাঁটতে লাগল। নির্দিষ্ট ঠিকানার বাসাটা দোকানের কাছেই। বাড়িটার সামনে এসে থেমে গেল ও। বেশ সুন্দর একটা পুরনো দিনের বাড়ি। ওপরে টিন-শেড দেওয়া, সামনে অনেকখানি ফাঁকা জায়গা। বাড়ির ভেতরে প্রচুর গাছপালা দেখা যাচ্ছে। ‘এটাই।’

ও গেটের ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে, জয়া এসে ওর পাশে দাঁড়াল। ‘চলেন ভেতরে যাই, যত দ্রুত কথা বলা যায় ততোই ভালো,’ জয়ার কথা শুনে বাশার মনে মনে ভাবল : হ্যাঁ, আমার জন্যেও। কিছু না খেলে আর চলছে না।

বাইরের বড়ো স্টিলের গেটের ছোটো দরজাটা খোলাই আছে। ওটা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো জয়া। আবদুল্লাহ আর রমিজ দারোগাকে জিপেই অপেক্ষা করতে বলে বাশার আশপাশে চোখ বুলালো একবার। একেবারে ভর দুপুরে জায়গাটা বেশ নির্জন হয়ে আছে। দূরে একটা সাদা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মৃদু চোখ কুঁচকালো বাশার। নিজেকেই ধমক দিল, বাংলাদেশের রাস্তায় বেওয়ারিশ কুকুরের চেয়েও সাদা গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। নিজেকে ধমকে দিয়ে ঢুকে পড়ল ও।

ভেতরে ঢুকেই প্রথমে যে কথাটা মনে হলো বাড়ির মালিক বাগান করতে পছন্দ করে। এই শখ আজকাল শহুরে কারো আছে বলে মনে হয় না। তাও আবার বাড়ির সামনে সবজি বাগান। ছোট্ট কিন্তু সুন্দর গোছানো সবজি আর ফুলের বাগান পার হয়ে ওরা চলে এলো বাংলোর মতো দেখতে বাড়ির দরজার কাছে। স্প্যানিশ জলদস্যুদের জাহাজের গায়ে ঝোলানো আংটার মতো দেখতে একটা আংটা ঝোলানো দরজায়।

‘কলিংবেল কই?’ বাশারের প্রশ্নের জবাবে কিছু না বলে দরজায় ঝোলানো আংটার এক কোনা তুলে ধরে নিচের দিকে নামিয়ে আনলো। সঙ্গে সঙ্গে একটু ভোঁতা কিন্তু মিষ্টি একটা আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ল। বাশার বুঝতে পারল এটাই কলিং বেল। কারো সাড়া নেই। ভেতর থেকে খুট-খাট শব্দ ভেসে আসছে।

‘আরেকবার দিতে হবে মনে হয়,’ বলে এবার বাশার নিজেই চট করে আংটা ধরে নাড়া দিল। একইরকম মিষ্টি আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ল, এবার আরো জোরে। এখনো কারো সাড়া নেই। ও জয়ার দিকে তাকিয়ে একবার কাঁধ ঝাকিয়ে আবারো হাত বাড়াতে যাবে তার আগেই ধাম করে খুলে গেল দরজা। প্রথমেই চোখে পড়ল ঘামে ভেজা একটা টি-শার্ট, তার ওপরে ঘামে ভেজা একটা মুখ।

‘কাকে চাই?’ এইমাত্র দরজা খুলে বেরিয়ে আসা ‘ঘাম-মানব’ জানতে চাইল। বেশ হাঁপাচ্ছে লোকটা সেই সঙ্গে পুলিশ দেখে মনে হয় একটু নার্ভাস। ‘কী ব্যাপার, আপনারা? সরি, খুলতে একটু দেরি হয়ে গেল। আমি পেছনের বাগানে কাজ করছিলাম। হাত ধুয়ে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেল।’

‘আপনি মিস্টার রিফাত?’

‘জি, আপনারা?’ সে এখনো মৃদু হাঁপাচ্ছে। ‘ব্যাপার কী, বলুন তো?’

বাশার একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে। কারণ কেন জানি লোকটাকে বেশ চেনা চেনা মনে হচ্ছে ওর কাছে। ‘না মানে আমরা একটা ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিলাম,’ বাশার একটু দ্বিধার সঙ্গে বলে একবার জয়ার দিকে দেখল। জয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে।

‘কোন ব্যাপারে?’ লোকটাকে কেন জানি শঙ্কিত মনে হচ্ছে বাশারের কাছে। ‘আসলে আমি কাজ করছিলাম তো। তাই জরুরি কিছু না হলে পরে কথা বলতে হবে।’

‘আজ থেকে এগারো বছর আগে আপনি মনে হয় ময়মনসিংহ মিউজিয়ামের কিউরেটর ছিলেন, তখন একটা ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আমরা ওই ব্যাপারে কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলাম। ব্যাপারটা একটু জরুরি।’

‘একটু না,’ বেশ জরুরি, বাশারের কথার সঙ্গে যোগ করল জয়া। সে এখনো কেন জানি কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মানুষটার দিকে।

লোকটা একটু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, যেন দ্বিধা করছে কিছু বলতে। ‘এত আগের ঘটনা! আর আমি ওই ব্যাপারে ঠিক কথা বলতে চাচ্ছিলাম না।’

‘ব্যাপারটা জরুরি,’ এবার বাশারও একটু কড়া গলায় বলল। আরো একটা দীর্ঘ মুহূর্ত লোকটা বাশারের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর যেন হার মেনে নিয়ে বলল। ‘আসুন, ভেতরে আসুন,’ বলে সে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল।

ভেতরে বেশ সুন্দর দেখতে একটা ড্রইংরুম। চারপাশে নানা ধরনের অ্যান্টিক জিনিস আর দেওয়ালে পেইন্টিঙের ছড়াছড়ি। কিন্তু রুমটার মধ্যে একটু বিশদৃশ কী যেন আছে। বাশার ঠিক ধরতে পারল না।

সোফায় এসে বসল ওরা। সোফার একপাশে একটা শার্ট ভাঁজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। বাশার আন্দাজ করল ওরা আসার আগে মনে হয় লোকটা এই শার্টটা পরে ছিল। ওরা দুজনে একটা সোফায় বসতেই লোকটা অন্যপাশের একটা সোফায় বসল। জুতো পরা একটা পা আরেক পায়ের ওপরে ভাঁজ করে রাখল। সঙ্গে সঙ্গে বাশারের ভ্রু কুঁচকে উঠল 1

‘বলুন, কী বলতে চান। তবে তার আগে আমি আপনাদের আইডি কার্ড দেখতে চাই। বাশার নিজের কার্ড দেখাল। লোকটা জয়ার দিকে তাকিয়ে আছে জয়াও সমান প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। হঠাৎ দৃষ্টি নামিয়ে জয়া পকেট থেকে মোবাইল বের করে টিপতে লাগল।

‘আমি জানি না আপনারা কি বিষয়ে কথা বলতে এসেছেন তবে এই ব্যাপারে আসলে এতটাই জল ঘোলা হয়েছে যে…’ লোকটার কথা শেষ করার আগেই বাশারের পাশ থেকে জয়া বলে উঠল। ‘কী ব্যাপার, আপনার মোবাইল বন্ধ নাকি? আপনার নামে আমার মোবাইলে টেক্সট এসেছে কেন?’

একে তো লোকটার সঙ্গে কথা বলার মাঝখানে কথা বলেছে তার ওপরে চট করে এমন একটা কথা বলেছে বাশার প্রথমে বিরক্ত হলো তারপর অবাক হয়ে গেল। ‘আমার নামে টেক্সট এসেছে আপনার মোবাইলে! কীভাবে সম…’

‘এই যে দেখুন,’ বলে মোবাইলটা এগিয়ে দিল সে বাশারের দিকে। কিন্তু বাশার মোবাইলটা নেওয়ার আগেই ভেতরের রুম থেকে কিছু একটা পড়ার শব্দ ভেসে এলো। কিছু একটা ভেঙেছে মনে হলো। বাশার আর জয়া দুজনেই ফিরে তাকাল সেদিকে তারপর দৃষ্টি ফিরিয়ে আনলো লোকটার দিকে। কথার মাঝখানে জয়া বাধা দেওয়াতে লোকটা থেমে গেছিল, ভেতর থেকে শব্দ ভেসে আসতেই ওদের দিকে তাকিয়ে নার্ভাস একটা হাসি দিল সে।

‘আর বলেন না, আমার বিড়ালটা এত বিরক্ত করে,’ বলেই সে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে সোফার পাশ থেকে শার্টটা তুলে নিয়ে ভেতরের দিকে রওনা দিল। জয়া তার হাতে ধরা মোবাইলটা বাশারের দিকে আরো এগিয়ে দিল। বাশার মোবাইলটা নিয়ে টেক্সট মেসেজটা পড়তে লাগল। ‘এটা তো…’

চুপচাপ পড়ুন কী লিখেছি,’ জয়া ভেতরের রুমের দিকে তাকিয়ে আছে, যেদিক দিয়ে এইমাত্র লোকটা প্রবেশ করেছে।

বাশার দেখল মোবাইলের মেসেজ অপশনে ইংরেজি অক্ষর দিয়ে একটা বাংলা মেসেজ লেখা।

‘এই লোকটা রিফাত মজুমদার হতে পারে না,’ মেসেজটা পড়ে ঝট করে বাশার ফিরে তাকাল জয়ার দিকে। ওর দিকে তাকিয়ে জয়া ঠোঁট গোল করে খুব মৃদু স্বরে চিবিয়ে-চিবিয়ে বলল :

‘কারণ, রিফাত মজুমদার একজন মহিলা।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *