অধ্যায় আটত্রিশ – বর্তমান সময়,
বিশেষ সেল, কোতোয়ালি মডেল থানা, ময়মনসিংহ
‘সব শেষ!’ জয়া আফসোসের সঙ্গে মাথা নাড়ল। ‘এত কষ্ট, এত অপেক্ষা সব এভাবে শেষ হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি। এখন তো মান-সম্মান বাঁচানো নিয়েই প্রশ্ন উঠবে,’ ভীষণ বিমর্ষ দেখাচ্ছে তাকে। কথাগুলো রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলল সে। রিফাতও মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
ওরা এই মুহূর্তে বসে আছে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার একটা বিশেষ রুমে। এখানে সাধারণত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। তবে প্রথমেই ওদেরকে এখানে এনে বসানো হয়নি।
ওসি মল্লিক ওদেরকে রিফাতের বাসার সামনে থেকে অ্যারেস্ট করার পর ওদের প্রতি তার আচরণ আর দশটা সাধারণ ক্রিমিনালের মতোই ছিল। ওদেরকে থানায় এনে সেলে বন্দি করে রাখা হয়। অবশ্য একটা ভালো কাজ করেছে সে। বাশারের ক্ষতটা চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করেছে থানার ডাক্তার ডাকিয়ে। প্রত্যেককে আলাদা আলাদা সেলে রাখার পর বাশার তৌফিককে ডেকে পাঠিয়ে এসপি আমজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ হয়। ওর কপাল ভালো একটা কাজে কাছাকাছিই ছিলেন তিনি। তাই বাশারের কল পেয়ে সব শোনার পর সে ওসি মল্লিককে কল করে নির্দেশনা দেন, ওদেরকে সেলে বন্দি করে না রেখে গেস্ট রুমে পাহারা দিয়ে রাখা হোক। কারণ তিনি নিজে আগে ওদের সঙ্গে কথা বলবেন, তার পরে যা করার করা হবে। ওসি নাকি আপত্তি জানানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তৌফিকের কাছ থেকেই ব্যাপারটা শুনেছে বাশার। ও তৌফিককে নির্দেশ দিয়েছে থানাতেই থাকতে, কারণ ওর দরকার হতে পারে। সেই সঙ্গে এ-ও জানিয়েছে রমিজ দারোগা আর আবদুল্লাহকেও জানিয়ে রাখতে যাতে কোনো দরকার পড়লে ওদের সাহায্য পাওয়া যায়।
‘কে বলেছে সব শেষ, গল্প তো সবে শুরুমাত্র,’ বাশার ওদের দিকে দেখছে না। ও তাকিয়ে আছে সাদা দেওয়ালের দিকে। বাঁ হাতের আংটিটা ক্রমাগত ঘুরিয়ে চলেছে। অবাক ব্যাপার, যখন তার চারপাশের সবকিছু ভেঙে পড়ছে, যখন ওর জীবনটাই শেষ হতে চলেছে এরকম সময়ে কেন জানি খুব মজা লাগছে ওর। গত এক বছরে ও এরকম স্বস্তি বোধ করেনি। ভীষণ ক্লান্ত অবস্থায় টানা আট ঘণ্টা ঘুম দিয়ে উঠলে সকালবেলা যেরকম ফ্রেশ লাগে, ওর অনুভূতি হচ্ছে অনেকটা সেরকম। বাশার আপন মনেই হাসতে লাগল।
‘কী ব্যাপার, এরকম পরিস্থিতিতে তুমি হাসছো?’ কথাটা বলে রিফাত জয়ার দিকে তাকাল। দুজনেই আনমনে কাঁধ ঝাঁকালো একবার। দুজনেই ভাবছে লোকটা অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিতে না পেরে পাগল হয়ে গেল নাকি।
‘বললাম তো গল্প মাত্র শুরু হয়েছে,’ বাশার আবারো হেসে উঠল। ‘শোনো, মানুষের জীবন থেকে যখন কিছুটা অংশ হারিয়ে যায় তখন সে অসহায় হয়ে পড়ে, আর যখন সে তার জীবনের সবকিছু হারিয়ে ফেলে তখন সে হয়ে ওঠে ভীষণ শক্তিশালী। কারণ তখন তার হারাবার মতো আরকিছু থাকে না। বুঝেছ?’
জয়া চোখ মটকে তাকাল তার দিকে। ‘সে তো বুঝলাম কিন্তু চারশো পৃষ্ঠার উপন্যাসের সাড়ে তিনশো পৃষ্ঠা পড়ার পর তোমাকে যদি কেউ বলে গল্প মাত্র শুরু হলো তাহলে তোমার কেমন লাগবে। তাও আবার গল্পের প্রধান সব চরিত্র যখন ধরা খেয়ে গেছে, তখন? তুমি যদি লেখক হতে তবে পাঠক তোমাকে ধরে পেটাত,’ জয়া একটু রেগে উঠেছে।
ওর কথা শুনে বাশার আবারো হেসে উঠল। ও দেওয়ালের ঘড়িটার দিকে তাকাল। বারোটা বেজে থেমে আছে ওটা। কবে ওটার বারোটা বেজেছে কে জানে। তবে ওদের বারোটা বাজতে চলেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বাশার অনুমান করার চেষ্টা করল কতক্ষণ আগে এসপি আমজাদের সঙ্গে কথা হয়েছে ওর। মনে মনে আন্দাজ করল এসপি স্যারের এসে পৌছাতে আরো আধা ঘণ্টার ওপরে লাগবে। এই সময়ের ভেতরে ওকে কিছু জিনিস বের করতে হবে।
‘আচ্ছা আমাকে একটা ব্যাপার বলো, বলে ও দুইহাত ওপরে তুললো। ‘এই কেসে কাজ শুরু করার পরেই বুঝতে পারলাম কেউ একজন রেকর্ড গায়েব করেছে। আচ্ছা সেটা পরে বুঝলাম অথরিটিই করেছে। কিন্তু তারপরে একজন বিদেশিকে দেখলাম আমাকে অনুসরণ করতে, সে কে আমরা জানি না। রিফাতের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হলাম, যে লোকটা রিফাতকে অপহরণ করতে চাইল সেই একই লোক শশীলজেও আমাদের কাছ থেকে মূর্তিটা কেড়ে নিতে চাইল। আর সম্ভবত এই লোকই আমার ইউনিফর্মের কলারে ট্র্যাকার লাগিয়েছিল। সম্ভবত হোটেল মোস্তাফিজের লবিতেই এই কাজটা করেছিল সে,’ বলে ও একটু কাঁধ ঝাঁকালো। ‘আর এভাবেই আমাদের প্রতিটা কথা প্রতিটা মুভমেন্ট জানতে পারছিল। এই লোকটা আমার কাছে অত্যন্ত প্রফেশনাল মনে হয়েছে। তারমানে একে কেউ লাগিয়েছে আমাদের পেছনে। তারমানে অত্যন্ত শক্তিশালী কেউ আছে এসবের পেছনে। আমার প্রশ্ন হলো কে?’ বাশার তাকিয়ে আছে দুজনার দিকে। ‘তোমাদের আমি একটা কথা এখন পর্যন্ত বলিনি, কারণ এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি নিজেই নিশ্চিত ছিলাম না,’ বলে ও লাইব্রেরির সামনে সাদা গাড়িতে দেখা বিদেশি লোকটার কথা খুলে বলল। তবে লোকটা যে দেখতে মৃত ডেভিডের মতো সেটা এড়িয়ে গেল।
‘এখানে আমার একটা কথা আছে,’ বলে রিফাত একটা হাত তুললো। ‘তুমি বিদেশি যে লোকটার কথা বলছ তার ব্যাপারে আমার একটা থিয়োরি আছে। ডেভিডের একজন পার্টনার ছিল। এই লোকটাকে আমি কখনো দেখিনি কিন্তু যতটুকু জানতাম সেই ডেভিডের বেশিরভাগ ব্যবসার দিকটা দেখাশোনা করত। হয়তো এই লোকই গাড়ি উদ্ধারের ব্যাপারটা শুনে ফিরে এসেছে। টুইন কালী একটা অমূল্য অ্যান্টিক পিস। যার হাতে থাকবে তার ব্যাপারে…’ রিফাত কথা শেষ করল না। বরং ইশারায় বুঝিয়ে দিল ব্যাপারটার গভীরতা
‘এখানে আমারও একটা কথা বলার আছে। বিজয় আচার্যের একজন অ্যাসিসটেন্ট ছিল বলেছিলাম না? দাপুনিয়ার ছেলে, মোক্তার নাম। বিজয় মারা যাবার পর তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। সে-ও হতে পারে। হয়তো সে-ও এই গাড়ি উদ্ধারের ব্যাপারটা জানতে পেরে ছুটে এসেছে যদি কোনোভাবে টুইনকালী হাত করতে পারে,’ জয়া বলল কথাটা।
যাক, একেবারে ছায়া শরীরের চেয়ে অন্তত সম্ভাব্য দুটো নাম তো পাওয়া গেল। এখানে আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে তারপর আমি মূল প্রসঙ্গে যাবো। আচ্ছা তোমরা বার বার বলছ টুইন কালী। কিন্তু মূর্তি তো আমি দেখি একটা। তাহলে একটাকে টুইন কালী বলা হয় কেন?’ বাশার জানতে চাইল।
‘আশ্চর্য এটাই তো এই মূর্তির বৈশিষ্ট্য,’ রিফাত বলে উঠল। ‘এই মধুপুর অঞ্চলে নাকি ঠগীদের অত্যন্ত শক্তিশালী একটা দল ছিল। ওরা এই জোড়া কালী মূর্তির পুজো করত। এই জোড়া কালী মূর্তির নাকি অস্বাভাবিক শক্তি ছিল। তাই ঠগীদের এই বিশেষ দলটাকে সবাই ভয় পেতো। লিজেন্ড বলে : ইংরেজ অফিসারদের একটা দল ওদেরকে ট্র্যাক করতে করতে এখানে চলে আসে। ওদের সঙ্গে নাকি এই ঠগী দলের ব্যাপক গণ্ডগোল হয়। এরপর এই জোড়া কালী মূর্তিকে সরিয়ে ফেলা হয়। একটা পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইংল্যান্ডে আরেকটা কোথায় রয়ে যায় কেউই জানে না। তবে এটাও প্রচলিত যে ইংল্যান্ডে যে মূর্তিটা পাঠানো হয় সেটাতেই নাকি ক্লু দেওয়া আছে অন্য মূর্তিটা কোথায়,’ টানা বলে রিফাত থামলো।
ও থামতেই বাশার কথা বলল না। ‘আচ্ছা, এবার অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে আসছে আমার কাছে। এবার বুঝতে পারছি কেন সবাই পাগল হয়ে এই মূর্তির পেছনে লেগেছে। এই মূর্তি আসলে দ্বিতীয় কালী মূর্তি উদ্ধারের হাতিয়ার। আর এই মূর্তি হাসিল করে সেটাকে পরীক্ষা করে দ্বিতীয় মূর্তিটা উদ্ধার করতে পারলে তবেই আসল খেলা জমবে আর সেটাই সবার উদ্দেশ্য। এবার বুঝতে পারছি কেন আমরা গ্রেপ্তার হলাম।’
‘মানে?’ জয়া জানতে চাইল।
‘মানে বুঝতে পারছ না। একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখো। আমরা শশীলজ থেকে মূর্তিটাকে উদ্ধার করে যখন বাসায় নিয়ে যাই তখনো কিন্তু আমার কলারে ট্র্যাকারটা লাগানোই ছিল। সম্ভবত আমার কাঁধে আঘাত না লাগলে ওটার ব্যাপারে আমরা জানতেই পারতাম না। তাহলে ওই লোকটা আর দল খুব সহজেই আমাদেরকে খুঁজে বের করে রিফাতের বাসায় আক্রমণ করতে পারত। কিন্তু সেটা হয়নি, বরং একটু পরেই কোনো জানান না দিয়ে ওসি মল্লিক তার বাহিনীসহ এসে হাজির হয়। তারমানে বুঝতে পারছ?’ বলে ও দুজনারই চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।
‘আমি কিছুই বুঝিনি,’ রিফাতের সরল স্বীকারোক্তি।
‘মানে হলো, যে বা যারাই আমাদের কাছ থেকে মূর্তিটা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল তারাই ওসি মল্লিককে আমাদের গ্রেপ্তার করতে পাঠিয়েছে।’
‘সর্বনাশ,’ জয়া বলে উঠল ।
‘সর্বনাশের কিছু নেই। এটাই আমাদের জন্যে শাপে বর হবে। একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে ওসি মল্লিককে যারাই নিয়োগ দিয়ে থাকুক তারা শুধু আমাদেরকে গ্রেপ্তার করেই অবশ্যই ক্ষান্ত হবে না বরং…।’
মূর্তিটাকেও সরানোর চেষ্টা করবে,’ বাশারের অসমাপ্ত বাক্যটা রিফাত শেষ করে দিল।
‘একদম ঠিক। আর এই ব্যাপারটাই আমি কাজে লাগানোর চেষ্টা করব,’ বলে ও আবারো দেওয়ালে ঝোলানো বন্ধ ঘড়িটা দেখল। যদিও ওটা বন্ধ তবুও মনের ভেতরে একটা হিসেব আছে ওর। কিছুক্ষণের ভেতরে এসপি আমজাদ স্যার চলে আসবেন। এর আগে কিছু কাজ সারতে হবে ওর। আর সেজন্যে তৌফিককে দরকার। দরকার ওর বন্ধু জামিলকে।
ও ঘড়ি থেকে চোখ সরিয়ে জয়া আর রিফাতের দিকে দেখল। ‘শোনো, আমার একটা পরিকল্পনা আছে। আমি একটা ফাঁদ পাততে চাই।’
***
আরো আধা ঘণ্টা পর বাশার, জয়া আর রিফাত বসে আছে এসপিসাহেবের রুমে। উনি এখনো আসেননি তবে কাছাকাছি চলে এসেছেন। বিগত আধা ঘণ্টা বাশারের খুব ব্যস্ততায় কেটেছে। ওরা যে গেস্ট রুমে বসে ছিল সেটার সেন্ট্রিকে ডেকে কোনো রকমে তৌফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয় ও। তারপর তৌফিককে কিছু নির্দেশনা দিয়ে ওর মোবাইল থেকেই কল করে ওর বন্ধু জামিলকে। জামিলের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপারে সাহায্য লাগবে ওর। সেই ব্যাপারে অনুরোধ করতেই জামিল একবাক্যেই রাজি হয়ে যায়। কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে সেটা পরিষ্কার করে জামিলকে জানায়। জামিলের সঙ্গে কথা বলার পর তৌফিককে আরো কিছু নির্দেশনা দিয়ে বিদায় করে ও।
এরপর জয়া আর রিফাতকে ওর পুরো পরিকল্পনা খুলে বলে। ওদের পরিকল্পনা যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে তখুনি গার্ড এসে এসপির রুমে নিয়ে যায় ওদেরকে। তখন থেকে বসে আছে ওরা। বাশার ভেতরে ভেতরে বেশ চিন্তিত। কারণও যা পরিকল্পনা করেছে সেটার পুরোটাই নির্ভর করছে এসপি আমজাদের ওপরে।
রুমের দরজা বেশ জোরে খুলে গেল। ফোনে কথা বলতে বলতে ভেতরে প্রবেশ করলেন ময়মনসিংহ এলাকার এসপি আমজাদ আনোয়ার। ঠিক তার পেছন পেছন দুজন গার্ড, তাদের সঙ্গে ওসি মল্লিক। এসপিসাহেব সোজা গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে পড়লেন। এখনো ফোনে কথা বলছেন। তার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে রইল মল্লিক। এসপিসাহেবের কথা শেষ হতেই সে কথা বলতে শুরু করল।
তার কথা শুনে একটা হাত তুললেন এসপি আমজাদ। ‘আহ! মল্লিক তোমার কথা তো শুনলাম। আমি একটু বাশারের সঙ্গে কথা বলতে চাই। তুমি এক কাজ করো, ওনাদেরকেও নিয়ে যাও,’ বলে উনি জয়া আর রিফাতকে দেখালেন। ‘বাইরের রুমে বসাও। আমি আগে বাশারের সঙ্গে কথা বলি, পরে যা হবার হবে।’
‘স্যার, আমি…’ এসপির কথা শেষ হবার আগেই মল্লিক কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল এসপি আমজাদ কিছুই না বলে স্রেফ চোখ তুলে তাকাল তার দিকে। সঙ্গে সঙ্গে চুপ হয়ে গেল সে। গার্ডদেরকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে টকিতে কথা বলতে বলতে বাইরের দিকে চলে গেল মল্লিক। বাশার জয়া আর রিফাতের দিকে তাকিয়ে একবার ইশারা করে ওদেরকে শান্ত থাকতে বলল।
ওরা বেরিয়ে যেতেই এসপি আমজাদ সরাসরি ফিরে তাকালেন বাশারের দিকে। ‘হোয়াট দ্য হেল, বাশার! তুমি কি পাগল হয়ে গেছ! এসব কী করে বেড়াচ্ছো তুমি?’
‘স্যার, আমি সরি কিন্তু …’
‘মল্লিকের কাছে যা শুনলাম তার অর্ধেকও যদি সত্যি হয় তবে এইবার তো তোমাকে সরাসরি সাসপেন্ড করে বিচার করা হবে। তুমি বুঝতে পারছ, আগের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কতটা কষ্টে তোমাকে সেভ করা হয়েছিল? আবারো এরকম বোকার মতো কাজ কীভাবে করতে পারলে তোমার মতো একটা ছেলে, উত্তেজনায় দুই হাত দিয়ে টেবিলে একটা চাপড় বসিয়ে দিলেন এসপি আমজাদ।
স্যার প্লিজ, আগে আমাকে বলতে দিন। আমাকে স্রেফ পাঁচটা মিনিট সময় দিন,’ বলে ও দেরি না করে শুরু থেকে একেবারে গড়গড় করে বলে গেল সব সময় নিতে গেলে বলার সুযোগ নাও আসতে পারে। ‘স্যার, সত্যি কথা হলো পুরো ব্যাপারটা এভাবেই ঘটেছে।’
এসপি আমজাদ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। ‘যদি তোমার কথা সত্যি হয়ও, তবুও মল্লিক যেভাবে কেসটা সাজিয়েছে তাতে তো তোমার বারোটা বেজে যাবে। এমনকি আমিও তেমন কিছু করতে পারব না। তুমি একটা ভুল করেছ। যদি আমাকে আপডেট দিতে কিংবা মূর্তিটা উদ্ধার হবার পর সরাসরি থানায় নিয়ে আসতে তাহলে এই ঝামেলায় পড়তে হতো না।’
‘স্যার, যা ঘটেছে ঠিক এই ভয়েই আমি ওটাকে নিয়ে আসিনি কারণ আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,’ বাশার মরিয়া হয়ে বলে উঠল। এসপি আমজাদের কর্মকাণ্ডের ওপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। আবারো ও মরিয়া হয়ে বলে উঠল, ‘স্যার, আমার একটা পরিকল্পনা আছে। যদি আপনি অনুমতি দেন।’
এসপি আমজাদ এখনো চুপ করেই আছেন। হয়তো কিছু হিসেব মেলানোর চেষ্টা করছেন। ‘পরিস্থিতি ভালো না, বাশার। তারপরও বলো তুমি কী করতে চাও,’ বলে তিনি চোখ তুলে তাকালেন বাশারের দিকে।
বাশারও সরাসরি তাকিয়ে আছে তার চোখের দিকে। ‘স্যার, পরিস্থিতি যেরকম খারাপ খুব ভয়াবহ ঝুঁকি না নিলে আমি ব্যাপারটা সমাধান করতে পারব না,’ বলে ও চট করে একটা হাত এসপি আমজাদের দিকে বাড়িয়ে দিল।
ঝট করে ওর দিকে তাকালেন এসপি। ‘বাশার, তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি?’
‘স্যার, এছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।’