তেত্রিশ
মোল্লার খুন আমার চোখ খুলে দিয়েছিল ব্যাপকভাবে। যতদূর মনে আছে আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি এবং খুব ছোট নই। নানান ঘাত-প্রতিঘাতে এমনিতেই তখন আমরা বিভিন্ন ব্যাপারে অসম্ভব অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছি, যা ওই বয়সে আমাদের হওয়ার কথা ছিল না। এর মধ্যে যখন মানুষ খুন হতে দেখার চরম অভিজ্ঞতাও লব্ধ হলো, তখন আমাদের শৈশব, কৈশোর আর আনন্দময় থাকল না। আমরা নাগর আলির গান কেচ্ছা, মোল্লার সঙ্গে মাছ ধরার জ্যোৎস্নাময় রাত্রির রহস্যময় মাধুরীর জগৎ থেকে ছিন্ন হয়ে অকস্মাৎ যেন এক রৌদ্রদগ্ধ খাঁখাঁ মাঠের ফাটলওয়ালা বাস্তব হা-মুখের সামনে অসহায়ভাবে নিজেদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। যেন, যে কোনো অসতর্ক পদক্ষেপে আমরা ওই ফাটলের হা-মুখে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারি। সংসারে এমন কোনো অস্তিত্বকে তখন আমরা চোখের সামনে অথবা মানসচিন্তনে দেখি না, যা এই আতঙ্ক থেকে, বিভীষিকা থেকে আমাদের রক্ষার কোনো মাভৈঃ বাণী উচ্চারণ করতে পারে। না এমন কোনো সাম্প্রদায়িক বা জাতীয় নেতা, কোনো গোষ্ঠীপতি, কোনো দণ্ডনায়ক, এমনকি কোনো অলৌকিক অস্তিত্ব বা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে পর্যন্ত আমরা তখন রক্ষক হিসেবে ভাবতে পারছিলাম না। বস্তুত ওই সময়টিতে আমরা মানুষ এবং ঈশ্বর সবার ওপরেই বিশ্বাস হারিয়ে একটা গভীর অন্ধকার আবর্তে পাক খাচ্ছিলাম।
আমাদের অত্যন্ত পরিচিত, সতত মঙ্গলকামী, চমৎকার ধর্মপ্রাণ এবং হিতার্থী মানুষদের সন্তানেরা হঠাৎ করে কীরকম যেন বদলে যাচ্ছিলেন। যাঁদের বাড়িতে বড়দের কারও সঙ্গে গেলে তাঁরা অপার আনন্দে আমাদের গ্রহণ করতেন, তাঁরা এই সময়টায় কীরকম যেন অচেনা অজানা হয়ে গেলেন এবং যেসব কথা তাঁরা কোনো দিন আমাদের বলতেন না, বা কেউ বললে সরবে প্রতিবাদ করতেন, তাঁরাই এখন সেরকম সব কথা বড়দের না হোক, আমাদের বলতে দ্বিধা করছিলেন না। আমরা, সংখ্যালঘুরা চলে গেলেই তাঁদের মঙ্গল হয়, তাঁদের জমিজমা, সম্পত্তি বাড়ে, এরকম একটা আকাঙ্ক্ষা তাঁদের আচরণে প্রকাশ পেতে থাকে। এইসব চরিত্রের মানুষদের মদতেই জব্বার এবং তার সহযোগীরা আমাদের পিছারার খালের পবিত্রতাকে সম্পূর্ণ ধর্ষিত করতে থাকে।
জব্বার ছিল এক অসম্ভব হার্মাদ। তার বাপের সঙ্গে সে সহমত ছিল। তার দলের লোকেরা নবজাত রাষ্ট্রের স্বাধীনতাকে স্বেচ্ছাচার হিসেবে নিয়েছিল। সাধারণ হিন্দু-মুসলমানদের কেউই তাদেরকে পছন্দ করত না। গ্রামীণ লোকায়ত ধর্মীয় মেলাগুলো তখনও সাধারণ হিন্দু, মুসলমান মানুষদের সম্মিলন এবং আনন্দের স্থল ছিল। হিন্দুরা সেখানে সামান্য পূজা-অর্চনা করত বটে, তবে তা এমন কিছু ব্যাপক ছিল না যে তাতে অন্য সম্প্রদায়ের ধর্মহানি ঘটতে পারে। সেখানে সবাই পরম আনন্দে মেলার সুখ পেত। কিন্তু এই জব্বার এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গরা সেইসব স্থানে জুয়া খেলা, নেশাভাঙ্ করা, লুট, মেয়েদের প্রতি অশালীন ব্যবহার ইত্যাদির সূচনা করে একে একে সব বন্ধ করতে বাধ্য করে। জাতকরণী খোলা, পঞ্চ দেবতার খেলা, গলুইয়া খোলা, কামেশ্বরী খোলা প্রভৃতি লোকায়ত ধর্মীয় স্থানগুলোতে নীল ষষ্ঠী বা বাংলা নতুন সংবতের প্রথমদিনে মেলা বসত। গ্রামের বুড়ি-আধবুড়ি বিধবারা, যাঁরা জীবনের সব আনন্দ এইসব দেবদেবীদের অর্চনার জন্য রাখি করে রাখতেন, তাঁরা এ সময় বড় মধুর আনন্দ উপভোগ করতেন। এই সময় তাঁরা সবাই পূজার থানে একত্র হয়ে একদিকে যেমন উৎসাহ সহকারে পূজার্চনার জোগাড়যন্ত্র করতে ব্যস্ত থাকতেন, তারই ফাঁকে ফাঁকে তাঁদের সুখদুঃখের নানান কথা, বিগত জীবনের স্মৃতিচারণ এইসব করে ক্ষণিক স্বস্তি পেতেন। তাঁরা সাধারণত হয় ভাইয়ের সংসারে, না হয় দেবর বা ভাসুরের সংসারের আশ্রিতাই বলি বা মিনিমাঙনা ভাতকাপড়ের দাসীই বলি, ওরকম জীবনই কাটাতেন। যতদিন হাতে রথে ততদিন কদর। শয্যা নিলে এর লাথি ওর ঝাঁটা এই তো ছিল তাঁদের জীবন। তাই এই সময়টিতে সবাই যখন একত্রিত, তখন নানান কথার মধ্যে একটু এর নিন্দা তার নিন্দা না হওয়াটাই আশ্চর্যের। অতএব, কার ভাইয়ের বউ কারে কতবার ‘দুদ কলা দিয়া কালসাপ পুষছি’ বলে, আর কার ছোট অথবা বড়জা কাকে কবার ‘ভাতারখাগী দেওরসোয়াগী’ বলে গঞ্জনা দেয় তারও এক দিব্য আদানপ্রদান এই দেবস্থানেই ঘটত। তবে সব মিলিয়ে মেলাগুলো তখন জমত বড় চমৎকার। হিন্দু-মুসলমান সব অপবর্গীরা এই মেলায় প্রকৃতই আনন্দ উপভোগ করত। মোদক ময়রারা তাদের মিষ্টান্ন নিয়ে, মনিহারি দোকানিরা তাদের কাচের চুড়ি, পুঁতির মালা, রঙের গহনা নিয়ে বা চানাচুর, বারভাজা, ছোলামটরভাজা, ফুট তরমুজের ব্যপারীরা তাদের তাবৎ পসরা নিয়ে দুপয়সার ব্যবসা করত। তালপাতার ভেঁপু, বাঁশের বাঁশি, বেলুন, চুলের কাঁটা, মাথার ফিতে চুড়ি এটা ওটা এমনকি দা, কাস্তে, কোদাল, লোহার কড়াই, হাতা, খুন্তি, বঁটি সবই এইসব মেলায় পাওয়া যেত, যা অন্য সময় দরকার হলে হয় গঞ্জ থেকে, নতুবা কীর্তিপাশার বাজার থেকে কিনে আনতে হতো। কিন্তু তা আনত পুরুষেরা। মেয়েরা তো আর দেখেশুনে কিনতে পারত না, যেমন এই মেলায় তারা পারছে। ছেলেরা বা পুরুষেরা কি এসবের ভালোমন্দ আদৌ কিছু বোঝে? এইসব নিয়ে মেলা।
কোথাও একটা বট গাছের নিচে দূর কোনো গ্রামের এক পরিবার তাদেরই এখানকার এক কুটুমবাড়ির লোকেদের সঙ্গে সেই বছরান্তে মিলিত হয়েছে। এখানকার কুটুমরা বলছে, ‘আইজ যাওন নাই। কাইল দুফরে খাইয়া লইয়া, বিশ্রাম করইয়া হেই বিকালে হ্যানে রওনা দেবেন, থাইক্যা যায়েন।’ কুটুমদের তালেবর বলছেন, ‘থাকতে কি কোনো আফইত্য আছে, না হেয়া ক্যারো অসাদ? তয় বোজেন তো, গোরুবাছুর, ঠাকুর নারায়ণ, হ্যারগো তত্ত্বতালাশের ব্যবস্তা করইয়া আই নায়। হ্যারা উপসি থাকপে, বোজেন তো সব।’—অবশেষে মীমাংসা হয় – ‘তয় জ্যৈষ্ঠে কৈলম পোলাপানেগো পাড়াইবেন। আম কাডালের সোমায় হ্যারা যেন আয়নাইলে কৈলম তিরুডি ধরুম।’—এইসব কথাবার্তা নিয়েই এই মেলা। গলুইয়া খোলার মেলার প্রান্তে বেউখির, শশীদের বড় খাল। সেখানে সার সার ডিঙি। মেলা শেষে সবাই যার যার বাড়ি ফিরবে। কাছের যারা যাবে হেঁটে। দূর গ্রামের লোকেরা ওইসব নৌকোয়। মেলা মানে মেলামেশা। তোমরা ক্যামন আছ? আমাগো চলতাছে মোটামুটি। কী খাবা সোনারা? আয়ো এট্টু রসগোল্লার দোকানে যাই। কয়ডা কইরা খাবা কও? লজ্জা করবা না, আমি তোমার মাউসা। আয়ো। — কোথাও এইসব। আবার কোথাও—না বেয়াই, খন্দপাতির অবস্থা আমাগো উদিগে এবার একছের পিছলা। এই তো দ্যাহেন দ্যার কুড়া জমিতে মরিচ বোনলাম। মনে হাউস, খন্দ যদি মনমতন অয় বড় মাইয়াডার গয়না একলগেই গড়াইতে দিমু। বিয়া তো ঠিকই অইয়া আছে জানেন। তো মরিচ চারাগুলান হেই যে টাক্কুরইয়া মারইয়া রইলে, হেয়াতে গয়না তো ভালো একগাছ সোনার বালাও অইবে না। কী যে এক পোহা লাগছে, গাছের বেয়াক পাতাগুলান বেক্কুরা দিয়া কেরমোশো হুগায়। এ কারণ মনে শান্তি নাই।—এরই মধ্যে ব্যাপারীদের সঙ্গে কোন্দল চলে ক্রেতাদের।—এইডুক এউক্কা তরমুজ হ্যার দাম দুপয়সা? মোগো গেরামে তো এয়া কেউ মাগনা দেলেও নেনা। এয়ারে তরমুজ কয়? মোর বুড়ইয়া দাদার হোলডাও তো এর থিহা বড়।—ব্যাপারী নির্বিকার জানিয়ে দেয় যে, সে ক্ষেত্রে খরিদ্দারের উচিত তার ‘বুড়ইয়া দাদার হোলডা খাওয়া।’——হালার চরউয়া বাঙ্গু মারানির পো, তোরগো চরউয়া তরমুজের ফলনাতা হরি।’ ‘এয়া কি চরউয়া তরমুজ যে মাগনা খাবি?’
-–এ-ও এক কলরব এবং মেলায় এইসব হয়। রসিকেরা রস নেন, ঝগডুটেরা ঝগড়া করে। তবে এইসব কিছু নিয়েই এই মেলাগুলোর ব্যাপারস্যাপার এবং তা এক ব্যাপক আনন্দের জগৎ হতো। এরই মধ্যে দল বেঁধে নট্টমশাইরা তাঁদের বাদ্যবাজনা বাজিয়ে মেলার উদ্যম তুঙ্গে তুলে দিতেন মাঙনায়। তাঁরা গলুইয়া খোলার পাশেই একটি গ্রামের বাসিন্দা। জাত্যংশে অবশ্যই ডোম, কিন্তু আমরা তাঁদের কদাপি তুই-তোকারি করতাম না, সম্বোধন করতাম নট্টমশাই বলে। তাঁদের মধ্য থেকে অনেক বিখ্যাত ঢুলি, তবলচি বা সানাইওয়ালা একসময় আমাদের দেশে ব্যাপক নাম করেছিলেন শিল্পী হিসেবে। নটবর নট্ট, নাথু নট্ট ইত্যাদিদের কথা আমার আজও মনে আছে।
এ সমস্ত চিত্রই পঞ্চাশ-একান্নর দাঙ্গা এবং তার ফলশ্রুতিস্বরূপ যে ব্যাপক দেশত্যাগ ঘটেছিল, তার পরবর্তী চিত্র। পিছারার খালের আশপাশের সাধারণ হিন্দুরা সেই প্লবতায় প্লাবিত হয়নি বলেই এইসব মেলাগুলো জীবন্ত ছিল। এ কারণে উচ্চবর্গীয় এবং বর্ণীয়দের সংখ্যা খুব অধিক ছিল না বলে, তখনও মানুষের অনুপস্থিতিজনিত সমস্যা ঠিক ততটা অনুভব করিনি। অবশ্যই বিশেষ বিশেষ পরিবারগুলোর দেশত্যাগে অসম্ভব যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু তাঁরা সংখ্যায় খুব অধিক ছিলেন না বলে ব্যাপক শূন্যতা বোধ করিনি। কিন্তু এইসব সাধারণ হিন্দুরা দেশত্যাগ করতে শুরু করলে বড়ই একাকিত্বের নৈরাশ্যে নিমজ্জিত হলাম, কারণ তখনও সাধারণ মুসলমান সমাজের সঙ্গে একাত্মতা ঘটেনি। ভদ্র হিন্দু গৃহস্থদের দেশত্যাগের পর, আমাদের একাত্মতা স্বাভাবিক কারণেই সাধারণের সঙ্গে ঘটেছিল। এবার তারা যখন দেশত্যাগ করতে শুরু করে তখনই দাদিআম্মার দৌলতে একাত্মতার প্রসার ঘটে সাধারণ মুসলমান সমাজের সঙ্গে। সে এক দীর্ঘ পরিক্রমা। কিন্তু সে কথা রেখে যে, কাহিনি বলছিলাম তার বিস্তৃতিতে যাওয়া প্রয়োজন। ওইসব সুন্দর মেলার অন্ত কীভাবে ঘটল। তার কাহিনি খুবই প্রাসঙ্গিক।
জানি, যাদের এখন এইসব মেলার অন্ত্যেষ্টির জন্য দায়ী করব, অথবা তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়েরা আজও ওই পিছারার খালের চৌহদ্দিতে না হলেও তার আশপাশে বেঁচেবর্তে আছে। তারা এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে। তথাপি সে ঝুঁকি নিয়েই আমার অভিজ্ঞতার দলিল রেখে যেতে চাই। জব্বার বা তার দলের লোকেরা, যারা নবলব্ধ রাষ্ট্রের স্বাধীনতাকে নিজেদের স্বেচ্ছাচারের ছাড়পত্র বলে জেনেছিল এবং অবশ্যই একদল ক্ষমতাসীন ব্যক্তি তাদের এমতো শিক্ষায় তথা আশ্বাসে আশ্বাসিত করেছিল—তারা সবাই এই স্বপ্নের জগৎকে ছিন্নভিন্ন করেছিল। এইসব লোকই সাধারণ হিন্দু এবং মুসলমানদের এই মিলনের মহামেলাগুলোকে ধ্বংস করে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক বিরোধ সৃষ্টি করে, যার সমাধান আজও হয়নি। এইসব হার্মাদেরা অর্থাৎ জব্বার, হানিফ, মুসা ইত্যাদি নামের লোকেরা মেলায় জুয়ার আড্ডা বসাত, কিশোরী মেয়েদের পেছন পেছন ঘুরে তাদের শারীরিকভাবে বিরক্ত করত, আবার যারা সমকামী চরিত্রের (যেমন জব্বার) তারা সুন্দর মুখ ছেলেদের আড়ালে ডেকে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করত। কখনো তারা দলবদ্ধভাবে ময়রা, মোদকদের দোকানের সামনে হল্লা জুড়ে দিয়ে সেই সুযোগে রসগোল্লার ক্যানেস্তারা টিন, সন্দেশের বারকোশ বা খুরমার ঝুরি তুলে নিয়ে কাছাকাছি কোনো জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে খেয়ে নিত।
জব্বার ছিল অতিমাত্রায় ইন্দ্রিয়বিলাসী এবং সুযোগসন্ধানী। সে যে কোনো হিন্দু কিশোর-কিশোরীকে সুযোগমতো পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ত তাদের ওপরে। আমি যখন ক্লাস ফাইভে ভর্তি হয়েছিলাম, তখনই তার এই লালসার ব্যাপারটি জেনে গিয়েছিলাম। পরে ক্লাস নাইনে যখন ভর্তি হলাম তখনও তার এমতো আচরণ আমাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। ওই বয়সে দেখতে বোধহয় দিব্য ছিলাম। ওদের বাড়ির সামনে থেকেই আমাকে স্কুলে যেতে হতো। আমার যাওয়ার সময়টায় ও ওদের বাড়ির সামনের পিঠেকড়া গাছটার পাশে দাঁড়িয়ে থাকত, আর আমাকে একা পেলেই কুৎসিতভাবে ডাকত। ব্যাপারটা জবরদস্তির পর্যায়ে গেলে আমি ছুটে পালাতাম। সে কিন্তু এরকম আচরণ করে আনন্দ পেত এবং যেখানে সেখানে তার দলবলের সঙ্গে সরবে এইসব প্রচেষ্টার বিষয় নিয়ে মশকরা করত। ব্যাপারটা অসহ্য হওয়ায় ক্লাসের কিছু বয়স্ক ছেলেদের নিয়ে একদিন জব্বারকে বেদম প্রহার দিয়েছিলাম। দল বেঁধে কাজটা করেছিলাম বলে ও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আমার সঙ্গে বেশ কয়েকজন মুসলমান ছেলেও এ কাজে সঙ্গী হয়েছিল।
যখন মুসলমানি শাস্ত্র বিষয়ে কিছু পড়াশোনা করছিলাম, তখন জেনেছি যে কোরানে এই সমকামিত্ব, সীমালঙ্ঘন ইত্যাদি বিষয়ে আল্লাহ কীভাবেই না আদমজাতদের সতর্ক করেছেন। সাদাম বা সোডেম নগরীর ধ্বংসের বিস্তৃত বিবরণ, লুতের কাহিনি বাইবেল বা কোরান মারফত কেই-বা না জানে। কিন্তু এরা যে নিজেদের ইসলাম অনুসারী ঘোষণা করেও ওই পাপের অনুসরণ করত, তা আমার কাছে বড় অদ্ভুত মনে হতো। ইসলাম বা শান্তি এই বিশ্বে কায়েম হওয়ার বিষয়। জন্মসূত্রে কেউ তাই মুসলমান হতে পারে না। ইসলাম বা শান্তিকে যে বা যারা কায়েম করে তারাই মুসলমান। সে বা তারা যদি অন্য সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেও শান্তি কায়েমের জন্য, পরহেজগারির জন্য বা ইমানের জন্য জীবনপাত করে এবং হজরতকে এই শান্তির প্রতীক বলে স্বীকার করে তবে সে বা তারাই মুসলমান। এ কথা যদি সত্য এবং শরিয়ত মোতাবেক হয় তবে পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা হাতে গোনার মতো। আর এই জব্বার ইত্যাদিরা, তাদের মুরুব্বিরা, এমনকি রাষ্ট্রপ্রধান আইয়ুব খান সাহেব, রাষ্ট্রপতি জিন্নাহপূনজা সাহেব বা পাকিস্তানের বর্তমান নাগরিক, উজিরে আজম, উজিরে আলা, সিপাহসলার, কেউই মুসলমান নন। কারণ আমার সেই বয়সের উপযোগী ইসলামি চর্চায় আমি তাঁদেরকে ইসলাম বা শান্তির অগ্রদূত হিসেবে দেখিনি। বরং আমার এমতোই মনে হয়েছে যে, এ দেশীয় তাবৎ মুসলামানেরাই জন্মসূত্রে মুসলমান, কর্ম বা আচরণসূত্রে নন। যাঁরা কোরান, হাদিস ইত্যাদি নিষ্ঠার সঙ্গে পাঠ এবং অনুধাবন করেছেন, তাঁরা এ কথা নিশ্চয় মানবেন। এদের পূর্বজরা যেহেতু মুসলমানি ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, তাই তাদের বংশজরা আজ মুসলমান। অর্থাৎ কিনা ইসলাম এই ভূমিতে প্রচারিত হবার পর আর শরিয়ত মোতাবেক ইসলাম থাকেনি, যারা ইসলাম কবুল করেছিল, তারা পরম্পরাগত লোকধর্মের সঙ্গেই একে একসময় আত্মীয়করণ করে নিয়ে এক ধরনের জীবনচর্যা তৈরি করে নিয়েছিল। আমার এই মূল্যায়ন শুধু গ্রামীণ সাধারণ মুসলমানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সেখানে যারা বদমাশ প্রকৃতির তারা বদমাশই থেকে গেছে, ইসলাম তাদের কিছুমাত্র শোধন করতে পারেনি। আর যারা সৎ প্রকৃতির তাঁরা মানবিকই থেকেছেন, অন্যধর্মের প্রতি সহনশীল মনোভাব নিয়ে তাঁরা তাঁদের সততাকে আশ্রয় করেই জীবনযাপন করেছেন। সেখানে কোনো গোঁড়ামির দাসত্ব তাঁরা করেননি। কিন্তু যখন সংখ্যালঘুদের ভূমিদখল এবং তাদের উচ্ছেদ প্রয়োজন বলে বোধ হলো তখনই একদল মানুষ নিজেদের খাঁটি ইসলামি বলে প্রচার করতে লাগল। এই তথাকথিত প্রকৃত ইসলামিরাই পিছারার খালের আশপাশের বা এরকম অজস্র পিছারার খালের গ্রামীণজগৎকে ধ্বংস করে ব্যাপক মানুষের ক্ষতি সাধন করে। তারা বুঝল না যে, তাদের এই কার্যকলাপে সংখ্যালঘুদের থেকে সংখ্যাগুরুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শেষ পর্যন্ত। আপাতদৃষ্টিতে শুধু সংখ্যালঘুদের বাস্তুত্যাগটাই সবার নজরে পড়ে, কিন্তু এই সময়ে সব গ্রামীণ মানুষেরাই ছিন্নমূল হয়, কেউ আগে কেউ পরে। এ ব্যাপারে হয়তো জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক কর্মকাণ্ডই দায়ী, তবে আমি শুধু আমার ওই বয়সের প্রত্যক্ষ আঞ্চলিক অভিজ্ঞতাটুকুই বলছি। এই জব্বার এবং তার দলবলেরা তাদের ইসলামি মুরুব্বিদের দ্বারা পরিচালিত ছিল এবং তাদের মুরুব্বিরা জাতীয় এবং আন্তর্জাতক মুরুব্বিদের দ্বারা। এ কথা আমি পরে বুঝেছি। আমি গোটা উপমহাদেশের হিন্দু এবং মুসলমানদের কথা বলছি না। কিন্তু যেসব বুদ্ধিজীবী বা ভুক্তভোগী মনে করেন যে, শুধু সংখ্যালঘুরাই এখানে দেশভাগের জন্য ছিন্নমূল হয়েছিল, তাঁরা বোধহয় জানেন না যে দাঙ্গা-পরবর্তীকালে কিছুদিন সংখ্যালঘুদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে ধনী হলেও সংখ্যাগুরুজনেরা একসময় ছিন্নমূল হন এবং পিছারার খালের জনপদবসতির মতো সমৃদ্ধ বসতিগুলো একেবারেই রিক্ত হয়ে যায়। কারণ এখানে যখন সংখ্যালঘু গৃহস্থদের ডাকাতি করার মতো আকর্ষণীয় কোনো সম্পদ অথবা আকৰ্ষণীয়া যুবতী বা কিশোরী কেউ থাকে না, তখন জব্বারদের মতো ডাকাতদের নজর পড়ে তাদের নিজস্ব কৌমের সেইসব মানুষদের গেরস্থালিতে, যেখানে সম্পদ এবং যুবতী উভয়ই যথেষ্ট লভ্য এবং লোভনীয়। তাদের এই নজর থেকে তাদের পোষক মরুব্বিরাও বাদ পড়ে না। ফলত একসময় তাঁরাও ব্যাপারীদের কাছে সেসব বিক্রিবাটা করে নগদ টাকাটা গঞ্জ বা শহরে লেনদেন করেন। গ্রামের শ্রীবৃদ্ধির কথা কেউ আর ভাবেন না, প্রয়োজনও বোধ করেন না। নিতান্ত ভূমিনির্ভর মুনিষ-মাহিন্দরেরাই গ্রামে থেকে যায়, আমার দেখা স্বপ্নের মতো গ্রামগুলো আস্তে আস্তে এভাবেই পুরোটা ধানখেতের মতো রূপ নেয়। কিন্তু খাল, নদী, পুকুর, জলাশয়গুলোর সংস্কার না হওয়ায় সেই খেত ক্রমশ প্রেতার্ত রমণীর মতো কুৎসিত মূর্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কদাচিৎ পথচারীদের যেন মুখ ভ্যাংচায়। আমার অভিজ্ঞতা এরকম এক পথচারীরই এবং অবশ্যই আমি পিছারার খালের সুন্দর ভুবনের সেই প্রেতাত্মা মূৰ্তি প্ৰত্যক্ষ করেছি।
স্যার বলেছিলেন, তোরা একটু পড়াশোনা করে মানুষ হ, আমি দেখে একটু সুখ পাই। তা আমাদের মানুষ হবার উপক্রমণিকা তিনি যতটুকু দেখে গিয়েছিলেন, তার থেকে বোধহয় আমাদের অমানুষ হওয়ার কৌমুদীটি তাঁর নজরে বেশিই পড়েছিল। পড়ারই কথা। তবে তার হিসেবপত্র আমরা কিছু রাখিনি। সত্তর সালের কোনো একটা সময়ে তিনি মারা যান। তখন আমি পশ্চিমবঙ্গে। চিঠি মারফত অফিসে বসে খবর পেয়েছিলাম মনে আছে। সেদিন পিতৃশোক অনুভব করেছিলাম। অফিসে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল যে, একটা দামড়া ছেলে বুড়ো মাস্টারমশাইয়ের মৃত্যুসংবাদে হাউমাউ করে তার ডেস্কে বসে কাঁদছে এবং জনৈক সহকর্মী তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে যাচ্ছে।
স্যারের প্রসঙ্গ শেষ করা যায় না। আজ এই প্রায়বৃদ্ধ বয়সেও যখন তাঁর কথা মনে পড়ে, বুকের মধ্যে তোলপাড় হয়, ইচ্ছে হয় আবার ছুটে যাই সেই সময়টিতে, যখন রাস্তায়, বাজারে, স্কুলে দেখা হলেই জড়িয়ে ধরে গালে দাড়ি ঘষে দিতেন আর পকেট থেকে একচাকা পাটালি বা আখের গুড় বার করে হাতে গুঁজে দিয়ে বলতেন, নাও, গুড় খাও।
স্যার সেই স্কুলের ধর্মঘটের সময় যাদের উদ্দেশে বিশেষ করে মানুষ হবার আকাঙ্ক্ষা জানিয়েছিলেন সেই মুসা এবং হাকিম তখনই যথেষ্ট অমানুষের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। এখন তাদের বিষয়ে কিছু বলব।
ছাত্রাবস্থা থেকেই তারা অন্য জীবনে আকৃষ্ট হয়েছিল। সেই হার্মাদ জব্বার ছিল তাদের নেতা। তারা সেই আমাদের ক্লাস নাইন-টেনের সময় থেকেই নিয়মিত জুয়া খেলত, গঞ্জের বেশ্যালয়ে যেত এবং আরও সব উলেটাপালটা কাজকর্ম করত। সংখ্যালঘু মেয়েদের ভোগ করার একটা ব্যাপক প্রবণতা তাদের মধ্যে ছিল। হাকিম পরে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে চাকরি নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যায়। মুসা পুরোপুরি জব্বারের দলভুক্ত হয়। আমার ওপর ওর কী কারণে জানি না একটা অন্ধ আক্রোশ ছিল। খেলার মাঠে, স্কুলে বা বাজারে যখনই ও আমাকে কায়দায় পেত, খুবই অসম্মান, হেনস্থা এমনকি মারধর পর্যন্ত করত। বলত, তোরা এহনো এ দ্যাশে আছ ক্যা, অ্যাঁ? তোগো জাইতের ব্যাকগুলান যহন গেছে, তোগো থাহনের দরকারডা কী? একদিন বাজারের একটা কাপড়ের দোকানে এইসব কথা তুলে ও আমাকে বড় মেরেছিল। বয়স এবং শারীরিক শক্তিতেও আমার চেয়ে বড় এবং শক্তিশালী ছিল। নির্মমভাবে কিল, চড়, লাথি, ঘুসি মারতে মারতে বলেছিল, তোরা হিন্দুরা এহানে থাকলে মোগো উন্নতির কোনো আশা নাই। হালারপো হালারা হিন্দুস্থান যা। তার প্রহারে আমি যতটা না শারীরিক ব্যথা পেয়েছি, অপমানিত হয়েছি তার চেয়ে ঢের বেশি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছেলে বলে ওই অসম্মান আমার মর্মে আঘাত হেনেছিল বড় ভীষণভাবে। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। তখন আমার বয়স বড়জোর তেরো-চৌদ্দ হবে। ও তখন সতেরো-আঠারো। প্রতিশোধ নেবার মতো সাহস, সুযোগ বা শক্তি আমার তখন ছিল না। ওই বয়সের ছেলেদের মধ্যে ঝগড়া, বিরোধ, মনোমালিন্য বা হাতাহাতি হতেই পারে। পরে আবার সব ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু এ ব্যাপারটি সেরকম ছিল না। তখন আমরা দুজনেই ক্লাস নাইনে পড়ি। এই ঘটনার প্রতিশোধ আমি নিয়েছিলাম দুবছর বাদে যেদিন ম্যাট্রিকের রেজাল্ট জানতে পারি সেদিন। সেদিন বাজার-ফেরত বাড়ি ফিরছি। হঠাৎ নায়েবমশাইয়ের ছেলে, আমার সহপাঠীর ডাক শুনে দেখি ও এবং মুসা ছুটতে ছুটতে আসছে। আমি তখন কীর্তিপাশার খালের একটা হাতলবিহীন ব্রিজের উপর। ওরা ওদের বাড়িতে ডাকাতি হবার পর গঞ্জের কাছে একটা বাসা ভাড়া করে থাকত। ও একটা গেজেট নিয়ে এসে দেখাল যে, আমি ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করেছি এবং অন্যান্য প্রায় সবাই আশানুরূপ ফল করেছে। মুসা থার্ড ডিভিশন পেয়েছে। ও বলছিল, তোর রেজাল্ট যে ভালো হইবে সেটা তো আমরা জানতামই। তা আমরা সবাই মিলইয়া খুব খারাপ ফল করি নাই। এ কথায় মুসা বলল, তোরা হিন্দুরা যদ্দিন এদ্যাশে থাকপি, মোরা কি ভাল কিছু করতে পারমু? হেয়া পারমু না। য্যারা খ্যাতাপত্তর দ্যাহে, হ্যারাও তো হিন্দু। মোগো কিছু ভালো হউক হেয়া কি হেরা চায় না করে? ওর ওই কথায় আমার মাথায় হঠাৎ রক্ত চড়ে গেল। ও সবসময়ই জাতের দোহাই দিত আর মনে করত হিন্দু মাস্টাররা সবাই ওদের কম নম্বর দিয়ে অপদস্থ করার চক্রান্তে সামিল। নিজেদের সম্বৎসরের অপকর্ম বা পড়াশোনা না করার হিসেব ওরা রাখত না। এই হিসেবনিকেশের কারণেই আমার মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছিল। মনে পড়ে গিয়েছিল দুবছর আগের সেই অপমানের জ্বালা। তার সেই কিল, চড়, লাথি, ঘুসির ব্যথা যেন নতুন করে আমাকে ক্লিষ্ট করল। সেদিন বয়সোচিত কারণে শারীরিকভাবেই আমি দুর্বল ছিলাম। আজকের চিত্র ভিন্ন। আজ আমি যথেষ্ট বলিষ্ঠদেহী। এই উত্তেজক মুহূর্তে তাই আমার ক্রোধ কোনো হিসেব করল না। হাতলবিহীন ব্রিজের ওপর দাঁড়ানো মুসাকে তাই ক্রোধান্ধ হয়েই একটা লাথি মারলাম এবং মুহূর্তে সে অদৃশ্য হয়ে খালে। বন্ধু বলল, তুই এডা করলি কী? এহন উপায়? বললাম যে, উপায় কিছু নেই। ওই হারামজাদার এতদিনের বদমায়েশির একটা বদলা নেয়া গেল। ভালোই হলো, এখন থেকে একটু সমঝে চলবে। এ দেশে থাকতে গেলে সমানে সমানেই থাকতে হবে। নইলে পেয়ে বসবে। আমি জানতাম যে মুসারাই সব নয়, আমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী অনেক অন্য ছেলে আছে, তারাও মুসলমান। তারা ব্যাপারটা বুঝবে। মনে ত্রাস একেবারে হয়নি তা নয়। যদি ওরা দল বেঁধে কিছু করে? সেরকম চেষ্টাও যে পরে ওরা করেনি তা নয়। যতদিন দেশে ছিলাম এই শত্রুতা থেমে থাকেনি। কিন্তু যেসব চমৎকার ছেলে আমাদের বন্ধু ছিল, তাদের জন্য ওরা বিশেষ সুবিধে করতে পারেনি।
মুসা এরপরে আর পড়াশোনার জগতে থাকেনি। ১৯৭১ সালে যখন আমি পশ্চিমবঙ্গে এবং যখন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ পুরোদমে চলছে, তখন একদিন অমল বসু আমার অফিসে এসে হাজির। সে দেশ থেকে পালিয়ে এসেছিল যুদ্ধের মধ্যেই। মুসা এবং জব্বারের শেষ পরিণতির কথা তার কাছেই জানতে পারি। আমাদের এ অঞ্চলে তখন পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টির ব্যাপক উপস্থিতি। পার্টির সর্বাধিনায়ক সিরাজ শিকদারও তখন ওই অঞ্চলে। মুসা, জব্বার এরা সবাই রাজাকার, আলবদর ইত্যাদি দলে মিশে যথেচ্ছ অত্যাচার করছিল তখন। অমলও সেই সময় সিরাজ শিকদারের দলের একটা গ্রুপের সঙ্গে ছিল। এই সময় একদিন মুসা আর জব্বারকে তারা ধরে ফেলে। গ্রুপের ছেলেরা হিন্দু কমরেডদের অনুরোধে নাকি তাদের হাতেই দুজনকে ছেড়ে দেয়। যে গলুইয়া খোলার মেলায় তারা একদা যথেচ্ছাচার করে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করত, সেখানেই একটা অশ্বত্থ গাছের নিচে কী এক দেবীস্থানে ওদের হাড়িকাঠে ফেলে নাকি বলি দিয়েছিল অমলেরা। জব্বারদের বলি দেবার সময় নিশ্চয়ই আহমেদ মোল্লার কথা মনে পড়েছিল বোসউয়ার। আমাদের ওই অঞ্চলের মানুষদের স্বভাবানুযায়ী মনে পড়াটাই স্বাভাবিক।