১৬.
লিটল প্যাডকসে রাতের খাওয়া শেষ হল নিতান্ত নিরানন্দময় পরিবেশে, নিঃশব্দে।
মিস ব্ল্যাকলক। প্যাট্রিক আর জুলিয়া সিমন্স, ফিলিপা হেমস, মিৎসি কারোর মুখেই হাসি ছিল না। কেউ কেউ দু-একবার কথা বলার চেষ্টা করলেও জমেনি।
ইনসপেক্টর ক্র্যাডক জানিয়েছিলেন তিনি সকলকে নিয়ে আধঘন্টার মধ্যেই উপস্থিত হচ্ছেন। মিস মারপলের নিখোঁজ হওয়া মিস মারগাটরয়েডের মৃত্যু-সমস্যাগুলো আলোচনার দরকার।
সকলে ড্রইংরুমে অপেক্ষায় রয়েছেন। বাড়ির সব আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একটা গাড়ির শব্দ পাওয়া গেল বাইরে। পরক্ষণেই ঘরে ঢুকলেন ক্র্যাডক। তার সঙ্গে কর্নেল আর মিসেস ইস্টারব্রুক, মিসেস সোয়েটেনহ্যাম আর তার ছেলে এডমণ্ড সবার শেষে মিস হিনচক্লিফ ঢুকলেন ঘরে। প্রত্যেকেই ম্রিয়মান।
সকলে আসন গ্রহণ করলে ক্র্যাডক দরজার পাশে দাঁড়ালেন। তার প্রায় মুখোমুখি রয়েছেন তিন মহিলা–জুলিয়া আর মিসেস সোয়েটেনহ্যাম সোফায় বসে, মিসেস ইস্টারব্রুক স্বামীর চেয়ারের হাতলে।
মিস ব্ল্যাকক আর মিস হিনচ বসেছিলেন আগুনের সামনে। এডমণ্ড ছিল তাদের পাশে। একটু দূরে বসেছিল জুলিয়া।
কোনরকম ভূমিকা না করেই ক্র্যাডক বলতে শুরু করলেন, মিস মারগাটরয়েড খুন হয়েছে, আপনারা সকলেই জানেন। তাকে যে খুন করেছে, আমাদের ধারণা সে একজন স্ত্রীলোক। বিশেষ কারণেই তাই আমাদের তদন্তের গণ্ডিও ছোট হয়ে গেছে। ওখানে উপস্থিত মহিলাদের কাছ থেকে আমি জানতে চাই তারা বিকেল চারটে থেকে চারটে কুড়ি মিনিট পর্যন্ত কোথায় ছিলেন, কি করেছেন।
মিস সিমন্স অবশ্য আমাকে আগেই তার বক্তব্য শুনিয়েছেন। তবু তাকে আর একবার তা শোনাতে বলছি। কনস্টেবল এডওয়ার্ড শর্টহ্যাণ্ডে আপনাদের বক্তব্য লিখে নেবে।
জুলিয়া বলল, বলতে যখন হচ্ছে, আমি আবারও বলছি, চারটে থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত আমি নদীর ধারে পথ ধরে হাঁটছিলাম। অবশ্য পথে কারও সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।
–এবারে বলুন মিসেস সোয়েটেনহ্যাম। বললেন ক্র্যাডক।
-বলছি, একটু ভেবে নিতে দিন। বললেন মিসেস সোয়েটেনহ্যাম, যতদূর মনে পড়ছে, বৃষ্টি আসার আগে আমি শুকনো ক্রিসেন থিমাম ফুলের গন্ধ শুঁকে দেখছিলাম।
–ঠিক চারটে দশ মিনিটে বৃষ্টি নেমেছিল। বললেন ক্র্যাডক।
–বোধহয় তাই, আমি সে সময় ওপরে বারান্দায় একটা হাত ধোয়ার বেসিন রেখেছিলাম। বারান্দায় জল আসছিল বলে বর্ষাতি আর জুতো নিয়ে নিচে নেমে যাই। এডমণ্ডকে ডেকেছিলাম, ও কোন সাড়া দেয়নি, বোধহয় বই লিখছিল কিংবা ঘুমোচ্ছিল। এরপর আঁটা দিয়ে নর্দমা সাফ করতে থাকি। পাতা বোঝাই হয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
–আপনাকে নর্দমা সাফ করতে কেউ দেখেছে?
–না, কেউ দেখেনি।
–মিঃ সোয়েটেনহ্যাম, আপনি আপনার মায়ের ডাক শুনতে পেয়েছিলেন?
–না, এডমণ্ড উত্তর দিল, আমি ঘুমুচ্ছিলাম।
–এবারে মিসেস ইস্টারব্রুক বলুন।
মিসেস ইস্টারব্রুক বললেন, আর্চির সঙ্গে স্টাডিতে বসে রেডিও শুনছিলাম।
কর্নেল ইস্টারব্রুক স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি ঠিক বলছ না, এ ধরনের তদন্তে সেটা জরুরী। আমি বলছি ইনসপেক্টর, আমার স্ত্রীর স্নায়ুর ওপরে এঘটনায় প্রচণ্ড চাপ পড়েছে, সে ঠিকভাবে বলতে পারছে না। আমি ল্যাম্পিয়নের সঙ্গে মুরগীর খাবার বিষয়ে কথা বলছিলাম। তখন প্রায় সোয়া চারটে। বৃষ্টি থামার আগে ফেরা হয়নি।
–আপনিও কি বাইরে গিয়েছিলেন মিসেস ইস্টারব্রুক? প্রশ্ন করলেন ক্র্যাডক।
ফাঁদে পড়া ইঁদুরের মত মুখ হয়ে গিয়েছিল মিসেস ইস্টারব্রুকের। তিনি বললেন, না আমি বাইরে যাইনি রেডিও শুনছিলাম।
-ঠিক আছে আপাতত এতেই চলবে। আপনাদের বক্তব্য টাইপ করে সকলকে দেখানো হবে, আপনারা পড়ে ঠিক আছে কিনা দেখে সই করে দেবেন।
মিসেস ইস্টারব্রুক বললেন, অন্যদের কাছে তো কিছু জানতে চাইলেন না ইনসপেক্টর, ওই এডমণ্ড সোয়েটেনহ্যাম আর জুলিয়া সিমন্স মেয়েটা?
ইনসপেক্টর ক্র্যাডক বললেন, মিস মারগাটরয়েড মারা যাবার আগে বলেছিলেন এমন একজনের কথা যিনি ডাকাতির ঘটনার সময়ে ঘরে অনুপস্থিত ছিলেন, কিন্তু তার ঘরে থাকারই কথা ছিল। তিনি তার বন্ধুকে জানিয়েছিলেন সে রাতে একজন স্ত্রীলোক ঘরে ছিলেন না।
কিন্তু অন্ধকারে টর্চের আলোয় সকলের চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল। কারও কিছু দেখার সম্ভাবনা ছিল না। জুলিয়া বলে উঠল।
-মারগাটরয়েডের ছিল; বলে উঠলেন মিস হিনচক্লিফ, সে ছিল দরজার পেছনে, এখন ইনসপেক্টর যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। সেদিন ঘরে কি ঘটছে একমাত্র মারগাটরয়েডের পক্ষেই দেখা সম্ভব ছিল।
এই সময় মিৎসি এসে ঘরে ঢুকল।
–এই যে বীরপুরুষ পুলিস, আমি রান্নাঘরে কাজ করি বলে ডাকার দরকার মনে করেন নি, তাই না? কিন্তু আমি মিৎসি, অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি দেখতে পায়, অনেক বেশি জানে। ডাকাতির দিন আমি অনেক কিছু দেখেছিলাম। বিশ্বাস করতে পারিনি তাই কাউকে বলতে চাইনি।
তুমি ভেবেছিলে সব শান্ত হয়ে গেলে বিশেষ একজনের কাছে টাকা চাইবে, তাই তো? বললেন ক্র্যাডক।
–কেন চাই না? ফোঁস করে উঠল মিৎসি, একদিন যখন অনেক টাকা আসবে জানি, আর জানি যখন কি সব চলছে, তখন টাকা আদায় করতে ছাড়ব কেন? এখন আমার ভয় করছে, তাই আর চুপ করে না থেকে যা জানি সব বলব।
বেশ, তাহলে তাই বল। বললেন ক্র্যাডক।
-বলব, সব বলব সেই রাতের ঘটনা। আমি পার্টিতে ছিলাম না। রান্নাঘরে বাসনপত্র গুছোচ্ছিলাম। ডাইনিং ঘরে এলে গুলির শব্দ হল। তখন হলঘর একদম অন্ধকার। আবার গুলির শব্দ হল আর টর্চটা পড়ে গেল। তখনই আমি স্ত্রীলোকটাকে দেখলাম। সেই লোকটার পাশে বন্দুক হাতে দাঁড়ান। আমি দেখলাম মিস ব্ল্যাকলক দাঁড়িয়ে আছেন।
-কি বলছ মিৎসি, তুমি পাগল হয়েছ? হতবাক মিস ব্ল্যাকলক বলে উঠলেন।
–সম্ভব, এডমণ্ড বলে উঠল, মিৎসি কখনই মিস ব্ল্যাকলককে দেখতে পারে না।
-তাই বুঝি মিঃ সোয়েটেনহ্যাম, তীব্র শ্লেষের স্বরে বলে উঠলেন ক্র্যাডক, আমিও জানি মিৎসি মিস ব্ল্যাকলককে দেখেননি, কেননা সেখানে তখন তিনি ছিলেন না, ছিলেন আপনি। তাই না?
-আমি?…কি বলছেন আপনি, কখনও না–
–আপনিই কর্নেল ইস্টারব্রুকের রিভলবার তাঁর ড্রয়ার থেকে সরিয়ে ছিলেন, মজা করার জন্য রুডি সার্জের সঙ্গে রফা করেছিলেন। প্যাট্রিক সিমন্সকে অনুসরণ করে আপনি অন্য ঘরে গিয়েছিলেন। তারপর আলো নিভে যেতেই তেল লাগানো দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান। মিস ব্ল্যাকলককে গুলি করে আপনি রুডি সার্জকে গুলি করে হত্যা করেন। কয়েক মুহূর্ত পরেই কিছু না জানার ভান করে ড্রইংরুমে ঢুকে লাইটার জ্বালাবার চেষ্টা করেন।
এডমণ্ড একেবারে নীরব হয়ে গেল। পরক্ষণেই চিৎকার করে উঠল, আমার একাজ করার কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে? কেন আমি করব? সবই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
ক্র্যাডক বললেন, মিসেস গোয়েডলারের আগে যদি মিস ব্ল্যাকলক মারা যান তাহলে দুজনেরই লাভবান হবার কথা। তারা হল পিপ আর এমা। আমরা জেনেছি জুলিয়া সিমন্সই এমা
-আপনি বলতে চাইছেন, আমি পিপ? চিৎকার করে বলল এডমণ্ড, একেবারে গাঁজাখুড়ি গল্প। হয়তো আমি কাছাকাছি বয়সের। কিন্তু মিঃ পুলিশ, আমার জন্মের সার্টিফিকেট, স্কুল, কলেজের সার্টিফিকেটই বলবে আমি এডমণ্ড সোয়েটেনহ্যাম।
এমন সময় অন্ধকারের ভেতর থেকে একটা গলা শোনা গেল, ও পিপ নয়, আমিই পিপ ইনসপেক্টর।
ফ্যাকাশে মুখে সামনে এগিয়ে এল ফিলিপা হেমস।
-আপনি, মিসেস হেমস?
-হ্যাঁ। পিপ ছেলে একথাই সকলে ধরে নিয়েছিল, কেবল জুলিয়া জানত তার যমজ এক মেয়ে। সে একথা কেন বলেনি আমি জানি না।
-আমি হঠাই জানতে পেরেছিলাম তুমি কে, বলল জুলিয়া।
–প্রথমে আমারও তাই মনে হয়েছিল, ফিলিপা বলল, আমার স্বামী মারা গেলে আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। মা আগেই মারা গিয়েছিলেন? গোয়েডলারের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা জানতে পারি আমি। জেনেছিলাম, মিসেস গোয়েডলার মারা গেলে সব টাকাকড়ি পাবেন মিস ব্ল্যাকক নামে একজন। তার খোঁজ করে এখানে এসে মিসেস লুকাসের কাছে কাজ নিই। ভেবেছিলাম, মিস ব্ল্যাকলক নিশ্চয় আমার মত একজনকে সাহায্য করবেন। আমার হ্যারির শিক্ষার জন্য টাকার দরকার ছিল।
কিন্তু…দম নেবার জন্য কয়েক মুহূর্ত থামল ফিলিপা, ডাকাতির ঘটনাটাতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কেননা, আমি জানতাম, সকলে আমাকেই সন্দেহ করবে। কেন না। মিস ব্ল্যাকলককে খুন করার মোটিভ একমাত্র আমারই থাকার কথা। জুলিয়া কে আমার কোন ধারণাই ছিল না। আমরা যমজের মত দেখতেও একরকম ছিলাম না।
মিস ব্ল্যাকলক আমার সঙ্গে সদয় ব্যবহারই করেছিলেন। আমি তাকে কখনোই মারার চেষ্টা করিনি। তাহলেও আমিই পিপ। এডমণ্ডকে সন্দেহ করার কোনই কারণ নেই।
কথা শেষ করে হাঁপাতে লাগল ফিলিপা। তার হাত বারবার মুঠি পাকাতে লাগল।
নেই নয়, আছে। ঝাঁঝের সঙ্গে বললেন ক্র্যাডক, মিঃ সোয়েটেনহ্যাম তরুণ, তার টাকার প্রয়োজন। যে কোন ধনবতাঁকেই সে বিয়ে করতে চাইবে। অথচ মিসেস গোয়েডলারের আগে মিস ব্ল্যাকলক মারা না গেলে এরকম অর্থবতাঁকে বিয়ে কথা সম্ভব নয়। সেই কারণেই এডমণ্ড বুঝতে পেরেছিলেন, কিছু একটা করা প্রয়োজন। ঠিক বলছি তো মিঃ সোয়েটেনহ্যাম?
-সব বানানো গল্প। চিৎকার করে উঠল এডমণ্ড।
ঠিক এই সময়েই রান্নাঘর থেকে একটা দীর্ঘ কাতর ভয়ার্ত আর্তনাদ ভেসে এল।
-একার গলা–মিৎসি তো নয়। জুলিয়া বলে উঠল।
-না। বললেন ক্র্যাডক, তিনজন মানুষকে খুন করেছে, এমন একজনেরই কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি আমরা…
.
১৭.
ইনসপেক্টর ক্র্যাডক যখন এডমণ্ডকে ধরে পড়েছেন, সেই সময় নিঃশব্দে মিৎসি রান্নাঘরে চলে গিয়েছিল। সে যখন সিঙ্কে জল ছাড়ছিল, সেই সময় মিস ব্ল্যাকক ঢুকেছিলেন।
-তুমি এমন মিথ্যা কথা বললে মিৎসি, হাসিমুখে কোমল স্বরে বললেন মিস ব্ল্যাকলক।
মিৎসি লজ্জিত ভাবে পাশে তাকিয়ে তাকে দেখল।
–রুপোর বাসনগুলো আগে ধোবে। সিঙ্কে বেশি করে জল ঢেলে নাও।
মিৎসি বাধ্যমেয়ের মত সেভাবেই সিঙ্ক জল ভর্তি করল।
–আমার ওসব কথার জন্য আপনি রাগ করবেন না মিস ব্ল্যাকলক।
–রাগ করলে কি আর মেজাজ ঠিক থাকত? বললেন মিস ব্ল্যাকলক।
–আমি তাহলে ইনসপেক্টরকে বলব যে সব মিথ্যে করে বলেছি।
–তিনি তোমার কথা শুনেই বুঝতে পেরেছেন।
মিৎসি কল বন্ধ করবার জন্য নিচু হল। সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে দুটো শক্তিশালী হাত তার মাথা চেপে ধরে সিঙ্কের জলে চেপে ধরল।
-এবারই তুমি প্রথম সত্যি কথাটা বলেছিলে। হিসহিস করে বলে উঠলেন মিস ব্ল্যাকলক।
মিৎসি উন্মত্তের মত দুহাত ছুঁড়ে নিজেকে ছাড়বার চেষ্টা করছিল। কিন্তু মিস ব্ল্যাকলক ছিলেন ঢের বেশি শক্তিশালী। তিনি তার মাথাটা জলে চেপে ধরেছিলেন।
সহসা বাতাসে ডোবা বানারের কাতর কণ্ঠ ভেসে এল।
–একি লোটি–লোটি–এমন কাজ করো না
ঘাড় ফিরিয়ে আর্তনাদ করে উঠলেন মিস ব্ল্যাকলক। দুহাত শূন্যে দুলিয়ে অদৃশ্য ভয়ানক কিছুকে যেন ঠেকাবার চেষ্টা করলেন।
মিৎসি ছাড়া পেয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে দাঁড়াল। দম টানতে কষ্ট হচ্ছিল তার। ঘর থেকে কোনমতে ছুটে বেরিয়ে গেল।
আর্তনাদ করে চলেছেন সমানে মিস ব্ল্যাকলক। রান্নাঘরে একা হয়ে গিয়ে তার ভয় দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছিল।
–আমায় মাপ কর ডোরা, ডোরা আমি নিরুপায় হয়েই একাজ করেছি
দিশা হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। কোনদিকে যাচ্ছেন বুঝতে না পেরে বাসন মাজার ঘরের দিকে ছুটে গেলেন।
কিন্তু বেশি দূর যেতে পারলেন না। সার্জেন্ট ফ্লেচার তার বিশাল বপু নিয়ে পথ আগলে দাঁড়ালেন।
ঠিক সেই সময় মিস মারপল মুখময় হাসি নিয়ে ঝটা বুরুশ রাখার আলমারি থেকে বেরিয়ে এলেন।
–মানুষের গলা আমি ভালই নকল করতে পারি। বললেন মিস মারপল।
মিস ব্ল্যাকলক ভয়ার্ত অপ্রস্তুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়েছিলেন।
–আপনাকে আমার সঙ্গে আসতে হবে, এই মেয়েটিকে আপনি জলে ডুবিয়ে মারতে চেষ্টা করেছিলেন। আমি তার সাক্ষী। চলুন মিস ব্ল্যাকলক।
উঁহু, শার্লট ব্ল্যাকলক, বললেন মিস মারপল, মুক্তোর মালা সরিয়ে নিলেই অপারেশনের দাগ দেখা যাবে।
–অপারেশন। বিস্মিত হলেন ফ্লেচার।
–হ্যাঁ, গলগণ্ড অপারেশন।
ততক্ষণে অনেকটা সামলে উঠেছেন মিস ব্ল্যাকলক। মিস মারপলের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি সবই জেনেছেন?
-হ্যাঁ, সবই আমি জেনেছি।
শার্লট ব্ল্যাকক ডুকরে উঠলেন। অবসন্ন শরীরটাকে টেনে নিয়ে ধপ করে টেবিলের সামনে বসে পড়লেন।
–ডোরার গলা নকল করে আপনি আমাকে ব্যথা দিয়েছেন। ডোরাডোরাকে আমি ভালবাসতাম।
ইতিমধ্যে ঘরে প্রবেশ করলো ইনসপেক্টর ক্র্যাডক। তার পেছনে অন্য সকলে।
মিৎসি অনেকটা সামলে উঠেছিল। তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। নিজের কাজের প্রশংসা সে নিজেই করতে শুরু করল।
–কী দারুণ অভিনয় আমি করলাম, করিনি? মরতে বসেছিলাম, তবু সাহস ছিল বলে না এতবড় ঝুঁকিটা নিয়েছিলাম।
ব্যাপারটা বুঝে উঠতে কয়েক মুহূর্ত দেরি করেছিলেন মিস হিনচক্লিফ। তারপরেই সকলকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন মিস ব্ল্যাকলকের ওপরে।
-ওকে আমি খুন করব–আমাকে আটকাবেন না
মিস ব্ল্যাকলক সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে ঠেকাবার চেষ্টা করতে লাগলেন। তার হাঁপ ধরে গিয়েছিল।
-মিস হিনচক্লিফ–অমন করবেন না–আমার কথা শুনুন।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। মিস হিনচক্লিফ ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে মিস ব্ল্যাকলকের গলা চেপে ধরবার চেষ্টা করতে লাগলেন।
–আমি খুন করব–আমার বন্ধু মারগাটরয়েডকে ও খুন করেছে–
সকলে মিলে সামলালেন মিস হিনচক্লিফকে। রুদ্ধ আক্রোশে তিনি দাঁত কড়মত করতে লাগলেন। চোখ দিয়ে যেন আগুন ঠিকরে পড়তে চাইছে।
মিস ব্ল্যাকলক ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। কাতর স্বরে বলে উঠলেন, আমি ওকে মারতে চাইনি। কাউকেই আমি মারতে চাইনি। তবু আমি না মেরে পারলাম না। ডোরাকে আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না-ওহ ডোরা–আমি একেবারে একা হয়ে গেলাম–একা।
দু-হাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন মিস ব্ল্যাকলক ওরফে শার্লট ব্ল্যাকলক।
.
১৮.
রেভারেণ্ড জুলিয়ান হারসন, ইনপেক্টর ক্র্যাডক, জুলিয়া পাট্রিক সিমন্স, এডমণ্ড আর ফিলিপা এরা সকলেই আজ শ্রোতা। মিস মারপলের মুখ থেকে আদ্যপান্ত শোনার জন্য উৎসুক হয়ে যে যার সুবিধা মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছেন।
মিস মারপল সকলের মাঝখানে বসেছিলেন একটা আরাম কেদারায়। তার মুখোমুখি চুল্লীর সামনে বসে আছেন বাঞ্চ।
–এ কাহিনী আপনারই মিস মারপল। পাইপ টানতে টানতে বললেন ক্র্যাডক।
–ওহ, না, আমি তো একটু সাহায্য করেছি কেবল। তদন্তের সব ঝামেলা তো তুমিই সামলেছ বাছা। তুমি আমার চেয়ে অনেক বেশি জান। বললেন মিস মারপল।
অধৈর্য হয়ে উঠেছিলেন সকলেই। বাঞ্চ তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, ঠিক আছে আপনারা দুজন মিলেই বলবেন। শুরু কর তুমি, জেন মাসী। গোটা প্লটটাই যে মিস ব্ল্যাকলকের তুমি কখন বুঝতে পারলে?
–প্রিয় বাঞ্চ, বললেন মিস মারপল, কতগুলো ব্যাপারে গোড়া থেকেই আমার সন্দেহ হয়েছিল তার পক্ষেই এসব করা সম্ভব। অমন নিপুণ ডাকাতির দৃশ্য নিজের বাড়িতে তার পক্ষেই সাজানো সম্ভব ছিল।
রুডি সার্জের সঙ্গে একমাত্র তারই পরিচয় ছিল। তাছাড়া বাড়িতে কেন্দ্রীয় তাপ ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কোন চুল্লী না রাখা নিজের বাড়িতে আর কার পক্ষে সম্ভব ছিল? ঘরে আগুন না রাখার পরিকল্পনাটা তারই ছিল।
গোড়াতে অবশ্য ব্যাপারটা অত সরল ছিল না। সবার মত আমাকেও ধাঁধায় পড়তে হয়েছিল। ভেবেছি, কেউ ওই লেটিসিয়া ব্ল্যাকলককেই খুন করতে চেয়েছে।
-ওই সুইস ছোকরা রুডি সার্জ থেকে শুরু কর তুমি। যা ঘটেছিল গোড়া থেকেই বল জেন মাসী। রুডি সার্জ কি ওকে চিনতে পেরেছিল?
-হ্যাঁ। ক্র্যাডকই তার পরিচয় খুঁজে বার করেছিল। বলে ইনসপেক্টরের দিকে তাকালেন মিস ব্ল্যাকল্লক।
–ও কাজ করত বের্নের ডাঃ অ্যাডলফ কথের ক্লিনিকে। বললেন ক্র্যাডক। শার্লট ব্ল্যাকলক সেখানে গিয়েছিলেন গলগণ্ড অপারেশান করাতে।
কিছু গোলমেলে কাজ করে ওই ক্লিনিক ছাড়তে হয়েছিল ছোকরাকে। সে ইংলণ্ডে এসে হোটেলে কাজ নিয়েছিল। সেখানে সে মিস ব্ল্যাকলককে দেখে চিনতে পারে। ক্লিনিকে উনি একসময়ে রুগী হিসেবে ছিলেন।
কিছু চিন্তাভাবনা না করেই ঝোঁকের মাথায় রুডি সার্জ এগিয়ে এসে তার সঙ্গে কথা বলেছিল। পরে নিশ্চয়ই ক্লিনিকের গোলমেলে কাজগুলোর কথা মনে করে সে সঙ্কুচিত হয়েছিল।
-তাহলে, সে হোটেল মালিকের ছেলে, ব্যবসা শিখতে এসেছে, এসব কথা বলেনি? বাঞ্চ বললেন।
–ওসব কিছুই বলেনি। রুডি সার্জের কথা বলার অজুহাত হিসেবে মিস ব্ল্যাকলক যা বলেছিলেন সবই ছিল তার নিজের বানানো কথা।
-ছোকরার সঙ্গে দেখা হবার পরই প্রথম ধাক্কা খেলেন মিস ব্ল্যাকলক। বললেন মিস মারপল, ব্যাপারটা তার কাছে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কেন না, তার আগে পর্যন্ত তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলেই ধরে নিয়েছিলেন। মিস শার্লট ব্ল্যাকলক, যিনি গলগণ্ড অপারেশনে করেছিলেন, নির্দিষ্ট ভাবে একজন তাকে চিনে ফেলবে, এ তিনি ভাবতে পারেননি।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ওখান থেকেই–ওই গলগণ্ড রোগ। এক উজ্জ্বল হাসিখুশি তরুণী শার্ট ব্ল্যাকলকের গলায় ওই রোগ দেখা দেয়। তার জীবন ব্যর্থ হতে বসেছিল। নিজের রূপ সম্পর্কে খুবই সচেতন ছিল সে। তার মা জীবিত ছিলেন না, বাবাও তেমন সহানুভূতিসম্পন্ন ছিলেন না। তাই সে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছিল। স্বাভাবিক জীবন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল সে।
গলগণ্ড অপারেশন করার উপায় ছিল না। কেন না ডঃ ব্ল্যাকলক ছিলেন, আমার ধারণা, অত্যন্ত প্রাচীনপন্থী। তার সঙ্গে কিছুটা গোঁয়ারতুমিও ছিল। অপারেশনের ওপর তাই তার কোন আস্থা ছিল না। তিনি রোগগ্রস্ত মেয়েকে আয়োডিন ইত্যাদি ওষুধের মধ্যেই রেখেছিলেন। আর করার কিছু ছিল না ভেবে শার্লটের বোনও তাই মেনে নিয়েছিল।
শার্লট তার বাবার ব্যবস্থাই মেনে নিয়ে নিশ্চিন্ত ছিল। কিন্তু গলগণ্ড ক্রমশ স্ফীত হয়ে উঠতে লাগল। ফলে বাইরে লোকজনের সামনে বেরনো সে বন্ধ করে দিয়েছিল।
ইনসপেক্টর ক্র্যাডক আমাকে বলেছেন, বেল গোয়েডলার তাকে বলেছিলেন, লেটিসিয়া ব্ল্যাকলক ছিলেন ব্যক্তিত্বময়ী। তার সতোর প্রশংসা তিনি বারবার করেছেন। মানুষ কিভাবে অসৎ কাজ করে তা তিনি বুঝতে পারতেন না। তিনি নিজে যেমন কোন অসৎ কাজ করেননি তেমনি রেণ্ডাল গোয়েডলারকেও সোজা পথে ধরে রেখেছিলেন।
লেটিসিয়া বোনের প্রতি খুবই সহানুভূতিসম্পন্ন ছিলেন। তার জন্য অনুভব করতেন। বোনের মানসিক বিপর্যয় হাল্কা করবার জন্য তিনি যা কিছু ঘটত বোনকে বিস্তারিত লিখে জানাতেন এভাবেই দূর থেকেও তিনি হতভাগ্য বোনকে সঙ্গ দেবার চেষ্টা করতেন।
ডাঃ ব্ল্যাকলক মারা গেলে শার্লট অসহায় হয়ে পড়ল। তাকে দেখাশোনা করবার জন্য লেটিসিয়া র্যাণ্ডাল গোয়েডলারের কাজ ছেড়ে দিলেন।
অপারেশানের ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নেবার জন্য তিনি বোনকে সুইজারল্যাণ্ডে নিয়ে গেলেন। সেখানে অপারেশানের সাহায্যে সাফল্যের সঙ্গেই গলার খুঁতটা সারিয়ে ফেলা হল। গলার দাগ ঢাকা পড়ে গেল একছড়া মুক্তোর মালায়।
ইতিমধ্যে যুদ্ধ লাগল। সরাসরি ইংলণ্ডে ফেরা সম্ভব না হওয়ায় দুই বোন সুইজারল্যাণ্ডে রেডক্রশে নাম লেখালেন। তাইতো, ইনসপেক্টর?
-হ্যাঁ, মিস মারপল। আপনি বলতে থাকুন বললেন ক্র্যাডক।
ইংলণ্ডে বেল গোয়েডলারের স্বাস্থ্যের খবর ওদের কাছে পৌঁছেছিল। ওরা জেনেছিলেন তিনি বেশি দিন বাঁচবেন না। আমার ধারণা ভবিষ্যতে বিরাট সম্পদ লাভের স্বপ্ন দুই বোনের মধ্যেই ছিল। তবে সম্পদের লোভ লেটিশিয়ার চেয়ে শার্লটেরই বেশি ছিল। কেন না, জীবনে বেঁচে থাকার আনন্দ সে উপলব্ধি করতে পেরেছিল। ভবিষ্যতের সুখস্বপ্ন তাকে বিভোর করে তুলেছিল। দেশ-বিদেশে ভ্রমণ, ছোট্ট একটা নিজস্ব বাড়ি, দাসদাসী, প্রাচুর্য এমনি এক ভোগ সুখের জীবনের স্বপ্ন দেখত সে।
এর মধ্যেই এমন এক অঘটন ঘটল যে শার্লটের ভবিষ্যতের সব রঙীন স্বপ্ন নিমেষে চুরমার হয়ে গেল।
স্বাস্থ্যবতী লেটিসিয়া অকস্মাৎ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই রোগটা নিউমোনিয়ার দিকে মোড় নিল। একসপ্তাহ ভুগেই তিনি মারা গেলেন।
শার্লটের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। বেল গোয়েডলারের আগে মারা না গেলে-অন্তত আরও মাস কয়েক বেঁচে থাকলেই অঢেল অর্থের মালিক হত তারা দুই বোন। আর লেটিসিয়ার পর সেই অর্থ আসত শার্লটেরই হাতে। সব সম্ভাবনাই মিথ্যা হয়ে গেল লেটিসিয়ার আকস্মিক মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে।
দুই বোনের চরিত্রের বিভিন্নতা সেই সময়েই পরিষ্কার হয়ে ওঠে। শার্লট তার ভাগ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় নেমে পড়ল। আমার মনে হয়, সে যা করতে চলেছিল তাকে অন্যায়। বলে তার মনে হয়নি। কয়েক মাস পরে, বেল গোয়েডলারের মৃত্যুর পর সব টাকা তো লেটিসিয়ারই হত, তাই সে লেটিসিয়া আর নিজেকে বোন ভেবে নিয়েছিল।
দুই বোনের মধ্যে যথেষ্ট মিল ছিল। লোকের চোখে চট করে পার্থক্য নজরে পড়ত না। এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন ছিল শার্লট। তাই দুই বোনের এই আকারগত মিলটাকেই সে তার কার্যোদ্ধারের কাজে ব্যবহার করতে চাইল। শালটন মারা গেছে, লেটিসিয়া বেঁচে আছে–এমনটা লোককে বলার মধ্যে দোষের কি থাকতে পারে?
একটা আবেগ থেকেই মতলবটা মাথায় এসে গেল শার্লটের। সকলে তাই জানল শার্লট মারা গেছে, লেটিসিয়া ইংলণ্ডে ফিরে এল।
কিন্তু, বোনের মৃত্যুর পর লেটিসিয়া তার কর্মক্ষেত্রে নতুন মানুষ হয়ে ফিরল। তার কর্মকুশলতা আগের মত আর সজীব রইল না। কেমন নিষ্প্রভ। কিন্তু দাপট রইল আগেরই মত। মানসিক ভাব যেমনই হোক শার্লট তার দিদির হাবভাবে এভাবে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলতে লাগল।
তবে কয়েকটা ব্যাপারে শার্লটকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছিল। পরিচিতদের চোখের আড়ালে নিজেকে সরিয়ে নেবার জন্য তাকে ইংলণ্ডের অখ্যাত অপরিচিত অঞ্চলে একটা বাড়ি কিনতে হল। সে বিশেষভাবে এড়িয়ে চলতে চাইছিল তার দেশ ক্যাম্বারল্যাণ্ডের লোজন আর বেল গোয়েডলার। ওরা তাকে চিনে ফেলতে পারত। হাতের লেখার অমিলকে ঢাকবার জন্য শার্টকে হাতে গেঁটে বাতের আক্রমণ আমদানি করতে হয়েছিল। খুব কম লোকই শার্লটকে ভালভাবে চিনত, তাই সহজেই সে নিজেকে নিরাপদ ধারণা করে নিয়েছিল।
–কিন্তু, জেন মাসী, বাঞ্চ প্রশ্ন করল, তার সঙ্গে যদি লেটিসিয়ার পরিচিত কারু দেখা হত, এরকমতো অনেকেই ছিল?
–সেটা এমন কিছু সমস্যা সৃষ্টি করত না। তারা এটাই ভেবে নিত যে লেটিসিয়া অনেক বদলে গেছে। দশ বছরে মানুষ অনেক বদলে যেতে পারে। সে যে লেটিসিয়া নয়, এমন সন্দেহ কারো মনেই আসত না। কেননা লেটিসিয়ার হাবভাব, চালচলন সে ভালভাবেই জানত, কার সঙ্গে তার পরিচয়, কার সঙ্গে কেমন ব্যবহার সব খুঁটিনাটিই তার জানা ছিল। কাজেই সহজেই নিজেকে রপ্ত করে নিয়েছিল।
ঘটনার দ্বিতীয় পর্যায়ই বলা চলে এটাকে–লিটল প্যাডকসে লেটিসিয়া বেশি শার্লটের বসবাস। এখানে অল্পদিনেই সে পড়শীদের জেনে নিল। সে এখন পুরোদস্তুর লেটিসিয়া ব্ল্যাকক।
এর মধ্যে একদিন এল দূর সম্পর্কের এক বোনের চিঠি। দুই বোনপো বোনঝিকে পেইংগেস্ট রাখার অনুরোধ নিয়ে। তাদের কখনো আগে দেখেনি জেনেও সে দয়া দেখিয়ে নিজের আশ্রয়ে নিয়ে এল।
কোথাও কোন উপদ্রবের সম্ভাবনা ছিল না। সবকিছু বেশ ভালই চলছিল। এর মধ্যে লেটিসিয়ার স্কুলের এক সহপাঠিনীকে দয়া দেখাতে গিয়ে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে নিয়ে এল। নতুন ভূমিকায় শার্লটের এটাই ছিল সবচেয়ে বড় ভুল।
অবশ্য নিজের দুঃসহ একাকীত্ব মোচনের জন্যও তাকে এটা করতে হয়েছিল, মেনেও নিতে হয়েছিল। স্কুলজীবনে ডোরা বানার ছিল লেটিসিয়ার প্রিয় বন্ধু। সেই হিসেবে দুঃস্থ অবস্থায় সাহায্যের আশায় সে চিঠি লিখেছিল লেটিসিয়াকে। আবেগের তাড়নায় সে চিঠি লিখল ডোরা বানারকে। সে বেচারী চিঠি পেয়ে আশ্চর্য হয়ে যায়। কেন না, তিনি চিঠি লিখেছিলেন লেটিসিয়াকে, আর উত্তর পেয়েছিলেন শার্লটের কাছ থেকে।
এখানে আর নিজেকে গোপন রাখতে চায়নি শার্লট। সে জানত তাতে লাভ হত না। ডোরা তার সাহায্য পেলে গোটা ব্যাপারটা তার মত দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখবে, এমন একটা বিশ্বাসও তার ছিল। তাই সে সবকথা তাকে নিষ্পাপ ভঙ্গীতে খুলে জানায়। ডোরাও সবশুনে তাকে মন থেকে সমর্থন করেন। লেটিসিয়ার আকস্মিক মৃত্যুতে শার্লট বঞ্চিত হবে–অজানা অচেনা কারুর হাতে সব অর্থ চলে যাবে, তার মনে হয়েছিল, এরকম হওয়া উচিত নয়।
এলোমেলো মানসিক অবস্থা হলেও ডোরা বানার এটা ভালই বুঝেছিলেন যে কোন কথা প্রকাশ হতে দেয়া যাবে না। কিন্তু সবসময় তাল ঠিক রাখা তার পক্ষে সম্ভব হত না।
ডোরা বানার লিটল প্যাডকসে চলে আসার কিছুদিনের মধ্যেই শার্লট বুঝে গেল, কি মারাত্মক ভুল সে করে ফেলেছে।
অদ্ভুত মানসিক বিপর্যয়ের জন্য ডোরা প্রায়ই কাজকর্মে গোলমাল পাকিয়ে ফেলতেন, তেমনি বেশি কথা বলার জন্য বেশ কথাও মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়ত। তার মত মানুষকে নিয়ে বাস করাই ছিল এক বিড়ম্বনা। শার্লটের পক্ষে ছিল প্রাণান্তকর।
তবু ব্যাপারটা সে মেনে নিতে চেষ্টা করেছিল নিজের একজন একান্ত সঙ্গীর অভাব বোধ থেকে। দ্বিতীয়ত ডাক্তার জানিয়েছিল, সে বেশিদিন বাঁচবে না।
ডোরা বানার দুই বোনকে নাম ধরেই ডাকতেন। ছোট্ট করে সম্বোধন করতেন লেটি আর লোটি। শার্লট ছিল লোটি।
ডোরা সাবধান থেকেই শার্লটকে সম্বোধন করতেন। তবু মাঝে মাঝে লোটি ডাকতে গিয়ে আসল নাম লেটি বলে ফেলতেন। স্কুল জীবনের অভ্যাসের বশেই এই ভুলটা হয়ে যেত। ফলে শার্লটকে এব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হত। তবে ব্যাপারটা ক্রমশই তার কাছে অসহ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছিল। তার স্নায়ুর ওপর খুবই চাপ পড়তে থাকে।
তবে, ডোরার মুখের উচ্চারণে এই সামান্য ভুল কারোরই নজরে আসেনি। সেটা স্বাভাবিক বিকৃতি বলেই মেনে নিয়েছিল সকলে।
লেটিসিয়ার নিরাপত্তার দিক থেকে আসল ভয়ের ব্যাপার ঘটল রয়্যাল স্পা হোটেলে, যখন রুডি সার্জ তাকে চিনতে পেরে এগিয়ে এসে কথা বলল।তবে এই সুইস ছোকরা যে শার্লটকে ব্ল্যাকমেল করার উদ্দেশ্য নিয়ে তার কাছে টাকা চেয়েছিল, একথা আমি বিশ্বাস করি না। ইনসপেক্টর ক্র্যাডকও বিশ্বাস করেন না। কেন না, ভেতরের লুকোচুরির ব্যাপার-স্যাপার তার জানা ছিল না।
-হ্যাঁ, ব্ল্যাকমেলের কোন ধারণাই রুডি সার্জের মাথায় ছিল না। একজন বয়স্কা মহিলার কাছে নিজের দুরবস্থার কথা বলে সাহায্য আদায় করা যেতে পারে এর বেশি সে ধারণা করেনি। বললেন ক্র্যাডক।
তবে রুডি সার্জের সঙ্গে দেখা হবার পর থেকেই নিজেকে নিরাপদ করার স্বার্থে ছক কষতে শুরু করেছিল শার্লট। আমার ধারণা হোটেলের তছরুপ করা টাকা মিটিয়ে দেবার টাকাটা শার্লটের কাছ থেকেই পেয়েছিল সে।
শার্লট ব্ল্যাকলকের অপরাধী মন। সে এই দেখাসাক্ষাতের বা টাকা চাওয়ার ব্যাপারটাকে অন্যভাবেই দেখেছিল। তার ধারণা হয়, রুডি সার্জ কিছু সন্দেহ করেছে, তাই ব্ল্যাকমেলের উদ্দেশ্যে তার দিকে হাত বাড়িয়েছে।
শার্লট আরো ভেবে নেয়, কিছুদিন পরে বেল গোয়েডলারের মৃত্যু সংবাদ খবরের কাগজে প্রকাশিত হবার পর স্বাভাবিক ভাবেই তাকে তার স্থায়ী রোজগারের উৎস করে নিতে পারে।
নিজেকে সে ইতিমধ্যেই জালিয়াতিতে ভাল রকমেই জড়িয়ে ফেলেছিল। সে নিজেকে লেটিসিয়া ব্ল্যাকলক বলেই পরিচিত করে তুলেছিল। বিশেষ করে ব্যাঙ্কে ও বেল গোয়েডলারের কাছে। কাজেই আসল পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়বে আশংকা তার শতগুণ বেড়ে গেল হোটেলের কেরানী সন্দেহজনক চরিত্রের রুডি সার্জের সঙ্গে সাক্ষাতের পর থেকেই। পথ নিষ্কণ্টক করে নিশ্চিন্ত হবার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হল তাকে।
শার্লট রুডি সার্জকে মজা করার উদ্দেশ্যে একটা ডাকাতির মহড়ার কথা জানাল। এজন্য অচেনা কাউকে প্রচুর অর্থ দেবার ইচ্ছাও প্রকাশ করল।
রুডি সার্জ নিজেও ছিল একজন অপরাধী। সে অর্থের লোভে সহজেই টোপ গিলল। সে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেবার টাকা পেল। লিটল প্যাডকসে ঘুরিয়ে দেখিয়ে আঁটঘাটও তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হল। কোথায় তার সঙ্গে দেখা করবে রুডি সার্জ সেই জায়গাও শার্লট তাকে দেখিয়ে দিল।
এই সব কিছুই কিন্তু করা হয়েছিল ডোরা বানারের অজ্ঞাতে। তিনি বিন্দুবিসর্গ জানতে পারেননি।
একনাগাড়ে কথা বলে হাঁপ ধরে গিয়েছিল। তাই দম নেবার জন্য কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বললেন, এবারে এসে গেল আসল দিন।
–হ্যাঁ। বললেন মিস মারপল, মতলব পুরোপুরি সফল হবে কিনা এ নিয়ে একটা ভয় অবশ্যই ছিল, তাই ডাকাতির ঘটনার দিন গোড়া থেকে সে বিমর্ষ হয়ে ছিল।
ডোরা বানার আমাদের বলেছিল, লোটি সেদিন বেশ ভীত ছিল।
এখনো ঘটনার সূত্রপাত হয়নি, শার্লটের পিছিয়ে আসার সুযোগ ছিল। পিছিয়ে আসার কোন ভয় ছিল না।
উপযুক্ত সময়ে কাজে ব্যবহারের জন্য ইতিমধ্যে কর্নেল ইস্টারব্রুকের রিভলবার অলক্ষিতে সরিয়ে নিয়েছিল শার্ট। সম্ভবত ফাঁকা বাড়িতে ডিম, জ্যাম বা এমনি কিছু নিয়ে ঢুকেছিল। সুযোগ মত বন্ধ দরজায় তেল ঢালার কাজও সেরে রেখেছিল যাতে খোলার সময় শব্দ না হয়। দরজার গায়ে ঠেস দিয়ে যে টেবিলটা রাখা ছিল ফিলিপিয়ার ফুল সাজাবার ব্যবস্থার অজুহাতে সেটাও সরিয়ে রাখা হয়েছিল। সবটাই ছিল একটা মজার খেলার মত। কিন্তু শেষটা আর খেলার মত থাকবার কথা নয়। শার্লটের মনে তাই ভয় বাসা বেঁধেছিল-মতলব ভেস্তে যাবার ভয়।
–পরিকল্পনা ছিল নিখুঁত, বললেন ক্র্যাডক, ঠিক সন্ধ্যা ছটার পর শার্লট বাড়ির হাঁসদের ঘর বন্ধ করতে বেরলো। তখনই রুডি সার্জকে গোপনে ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে টর্চ, মুখোশ, দস্তানা দিয়ে দেয়।
টেবিলের ঘড়িতে সাড়ে ছটার ঘণ্টা বাজতেই সিগারেট হাতে নিয়ে টেবিলের কাছে দাঁড়াল। সবই হতে লাগল পরিকল্পনা মাফিক। অতিথিদের জন্য সিগারেট নেওয়ার ব্যাপারটা ছিল খুবই স্বাভাবিক। সেই সময় প্যাট্রিকও গেল পানীয় আনতে।
শার্লট জানত, সকলেরই নজর থাকবে ঘড়ির দিকে। ছিলও তাই। তবে একজন ছিলেন ব্যতিক্রম। ডোরা বানার–তার চোখ লেটির পেছনে লেগে ছিল। তিনি আমাদের বলেন, সকলেই যখন ঘড়ির দিকে চোখ রেখেছেন, তখন শার্লট ফুলদানীটা তুলে নেয়।
ল্যাম্পের তারের ওপরের অংশ আগেই এমন ভাবে ছিঁড়ে রেখেছিল যাতে ভেতরের তার বেরিয়ে থাকে। এরপর কেবল সামান্য জল ঢেলে দিলেই হল তারের সেই খোলা অংশে। চোখের নিমেষে তাই করল শার্লট আর সুইট টিপে দিল। জল বিদ্যুতের সুপরিবাহকসঙ্গে সঙ্গে লাইন ফিউজ হয়ে গেল।
সেদিন ভিকারেজে যেমন হয়েছিল, বললেন বাঞ্চ, এজন্যেই সেদিন তুমি চমকে উঠেছিলে জেন মাসী?
-হ্যাঁ, প্রিয় বাঞ্চ। আলোর ওই ব্যাপারটা আমাকে ধাঁধায় ফেলে দিয়েছিল। বিদ্যুতের ব্যাপার স্যাপার আমার ভাল জানা ছিল না। আমি তাই খুঁজছিলাম দুটো ল্যাম্প, যার একটা ড্রইংরুমের ল্যাম্প বদলে রাখা হয়েছিল রাত্রিবেলা।
-সেকারণেই পরদিন ফ্লেচার ল্যাম্পটা পরীক্ষা করে কোন ত্রুটি দেখতে পায়নি। লাইনে কোন ফিউজও ছিল না।
–তার পরেই আমার কাছে ডোরা বানারের বলা চাষীবউ-ল্যাম্পের কথাটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, বললেন মিস মারপল, তবে তার কথা শুনে প্যাট্রিকের ওপরেই আমার সন্দেহ পড়েছিল গোড়ায়। তবে তার কথায় পারম্পর্য ছিল না বলে পুরোপুরি নির্ভর করাও কষ্টকর ছিল।
তবে শার্লট ফুলদানী তুলে নিয়েছিল এই কথাটা ডোেরা ঠিক বলেছিলেন। আমি এই সূত্রেই জেনে গিয়েছিলাম, তারের ওপর ফুলদানীর জল ঢেকে শার্লটই ফিউজ করে থাকতে পারে।
টেবিলে পোড়া দাগটা আমি ধরতে পারিনি, ক্র্যাডক বললেন, ডোরা বানার বলেছিলেন, তিনি একটা ঝিলিক আর চড়চড় শব্দ শুনেছিলেন। তাতে টেবিলের ওপর যে পোড়া দাগ পড়েছিল আমি ভেবেছিলাম কেউ সিগারেট রাখতেই দাগটা হয়েছিল। অথচ আমারই বোঝার ভুল ছিল, সেই সন্ধ্যায় কেউই সিগারেট ধরাননি…আর ফুলদানীর ফুলগুলোও শুকিয়ে গিয়েছিল ফুলদানীতে জল ছিল না বলে। সদাসতর্ক শার্লট এখানে মস্ত ভুল করে ফেলেছিল, ফুলদানীতে জল দিলে এমনটা হত না। ড্ডারা বানার ভেবেছিলেন, তিনিই ফুলদানীতে জল দিতে ভুলে গেছেন।
–ডোরা বানরের কথা এলোমেলো হলেও তাতে অনেক সত্য ছিল, বললেন মিস মারপল, সেই কথাগুলো শার্লট অন্যভাবে কাজে লাগিয়েছিল। সে তার মনে প্যাট্রিক সম্পর্কে সন্দেহ জাগিয়ে দিতে পেরেছিল।
–এভাবে আমাকে বেছে নিয়েছিল কেন? ব্যথিত ভাবে বলল প্যাট্রিক।
–ব্যাপারটা যে ভেবেচিন্তে করা হয়েছিল তা আমার মনে হয় না, বললেন ক্র্যাডক।
যাই হোক, এরপরে ছকমতই কাজ এগিয়ে চলল। আলো নিভে যেতে নিয়মিত দরজা খুলে রুডি সার্জ টর্চ হাতে ঘরে ঢুকল। আর শার্লট নিঃশব্দে ছোট ঘরের তেল লাগান দরজা দিয়ে। ঢুকে রুডি সার্জের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। সে বুঝতেই পারেনি রিভলবার হাতে তার পেছনে একজন এসে দাঁড়িয়েছে।
টর্চের আলো ঘরে ঘুরছে, এমনি সময়ে শার্লট গুলি করল, পরপর দুবার। পরে ঘুরে কাছে থেকে রুডিকে গুলি করে অস্ত্রটা তার পাশে ফেলে দেয়। তারপর হলঘরের টেবিলে দস্তানা রেখে নিজের জায়গায় ফিরে যায়। এই সময় কিছু একটা দিয়ে নিজের কানে ক্ষতও করে নেয়া–
–নিজের নখ কাটার যন্ত্র দিয়ে, বললেন মিস মারপল, কানের লতিতে সামান্য আঘাতেই অনেক রক্ত ঝরতে থাকে। রক্ত দেখে সকলেই তাকে গুলির আঘাতে আহত ভেবে নেয়।
–নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা সফল হয়েছিল, বললেন ক্র্যাডক, ডোরা বানার বারবার বলেছে, রুডি সার্জ মিস ব্ল্যাকলককেই গুলি করেছিল। শালর্টকে যে আহত হতে তিনি দেখেছিলেন, সেকথা বোঝাতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত রুডি সার্জের মৃত্যু আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা বলেই ধরে নেয়া হত, মিস মারপলের জন্যই এতবড় ভুলটা এড়ানো সম্ভব হয়েছিল।
-ওহ, না, না, আমার ব্যাপারটা ছিল নিছকই আকস্মিক। মিঃ ক্র্যাডক, তদন্তে আপনি সন্তুষ্ট হতে পারেন নি–সেজন্যই ভুলটা ধরা পড়েছিল।
–কোথাও একটা গরমিল রয়েছে বুঝতে পারছিলাম, ক্র্যাডক বললেন, কিন্তু ধরতে পারলাম আপনি দেখিয়ে দেবার পর। এরপর আবিষ্কার করলাম দরজার রহস্যটা। তদন্তও নতুন দিকে মোড় নিল। লেটিসিয়া ব্ল্যাকলকের খুনীকে খুঁজে বের করার জন্য আমরা উঠে পড়ে লাগলাম।
–তাকে খুন করবার মত আরও একজন যে কাছাকাছি ছিল তা শার্লটের আজানা ছিল না। বললেন মিস পারপল, আমার ধারণা তিনি ফিলিপাকে দেখেই চিনতে পেরেছিলেন। ফিলিপা হেমস অনেকটাই তাদের মায়ের মত দেখতে।
কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হল, ফিলিপাকে দেখে তিনি আতঙ্কিত বা অখুশি হননি। বরং খুশিই হয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি ঠিক করেছিলেন, টাকা দিয়ে ওকে বশ করবেন অথবা মেয়ের মতই কাছে টেনে নেবেন।
ইনসপেক্টর যখন পিপ আর এমার সম্পর্কে খোঁজখবর করতে শুরু করলেন, তখন দেখা গেল শার্লট ফিলিপাকে আড়াল করবারই ব্যবস্থা করল। সে তার পুরনো দিনের অ্যালবাম থেকে ফিলিপার মায়ের অর্থাৎ সোনিয়ার ছবি, লেটিসিয়ার ছবি–সব বেমালুম সরিয়ে ফেলল।
–এদিকে আমার মাথায় ঢোকেমিসেস সোয়েটেনহ্যামই হলেন সোনিয়া গোয়েডলার। বিরক্তির সঙ্গে বললেন ক্র্যাডক।
-শার্লট আসলে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছিল ডোরা বানারকে নিয়ে। তাঁর বকবক করা স্বভাব, তার আবার অনবরত ভুল করা–কখন কি বিপদ ঘটিয়ে বসে সেটাই হয়েছিল উদ্বেগের বিষয়।
ওদের ওখানে যত কয়দিনই চা খেতে গেছি, লক্ষ্য করেছি, ডোরা বানারকে শার্লট সতর্ক নজরে রেখেছে।
একদিন ডোরা বানার তাকে লেটি সম্বোধন করল কথায় কথায়, শার্লটের চোখে স্পষ্ট দেখতে পেলাম ভয়ের ছায়া। শব্দটা যে নিছকই কথার ভ্রম নয়, তখনই আমার মাথায় আসে।
এর আগে ব্লু বার্ড কাফেতে যেদিন ডোরার সঙ্গে বসে কফি খেলাম, সেদিনও তার কথায় পরস্পরবিরোধী ভাব ছিল। মনে হয়েছিল তিনি দুজনের কথা বলছেন।
বন্ধুর সম্পর্কে বলতে গিয়ে একবার তিনি লেটি খুব দৃঢ় চরিত্রের মেয়ে বলে বললেন। পরক্ষণেই মন্তব্য করলেন খুবই হাল্কা চরিত্রের মেয়ে সে। একবার বললেন সে ছিল বুদ্ধিমতী, আর সফল। কিন্তু পরক্ষণেই এমন কথা বললেন, লেটিসিয়া ব্ল্যাকলকের জীবনের সঙ্গে যার কোন মিলই ছিল না।
ডোরা বানার সেদিন যখন জোড়া ল্যাম্পের কথা বলছিল আর সন্দেহ প্রকাশ করেছিল, কৃষক বউয়ের ল্যাম্পটা কেউ রাতারাতি বদলে গিয়েছে, তখন শার্লট কাফেতে গিয়েছিল। আমার মনে হয় আমাদের সবকথাই সে শুনতে পায় আর বুঝতে পারে ডোরা বানার তার বিপদ ডেকে আনছে।
সেদিন আমাদের সেই কথাবার্তার পরিণামেই শার্লট তার পক্ষে চরম বিপজ্জনক হয়ে ওঠা বন্ধুটির সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিল। ডোরা বানারকে জীবিত রাখা কোন দিক থেকেই আর তার কাছে নিরাপদ মনে হচ্ছিল না।
তবে অসহায় বন্ধুটির প্রতি দয়া দেখাতেও কার্পণ্য করেনি সে। যন্ত্রণাহীন মৃত্যুর ব্যবস্থা করেছিল সে। আর জীবনের শেষবারের মত জন্মদিনের আনন্দের ব্যবস্থা–তাতে ডোরার জন্য বিশেষ কেকের ব্যবস্থা।
জন্মদিনের পার্টির জন্য মিৎসিকে দিয়ে তৈরি করানো হয়েছিল ডোরা বানারের এই কেক–প্যাট্রিক যার নাম দিয়েছিল মধুর মরণ।
আসলে তার জন্য মধুর মৃত্যুরই ব্যবস্থা করেছিল সেদিন শার্লট। পার্টির পরে ডোরা নিজের অ্যাসপিরিনের বোতলটা খুঁজে না পেয়ে শার্লটের বোতল থেকে অ্যাসপিরিন নেবে এমন ব্যবস্থাই করে রাখা ছিল।
ব্যাপারটা এমন ভাবে সাজানো হয়েছিল যে অ্যাসপিরিনের বদলে বিষবড়িগুলো যে লেটিসিয়ার জন্যই রাখা হয়েছিল, তা মনে না হয়ে উপায় নেই।
সুখকর নিদ্রার মধ্যেই যন্ত্রণাহীন মৃত্যু হল ডোরা বানারের। বুদ্ধিমতী শার্ট রইল ধরাছোঁয়ার বাইরে। নিরাপত্তা রইল অক্ষুণ্ণ।
কিন্তু ডোরাবানার ছিল শার্লটের একাকীত্বের একমাত্র সঙ্গী। নিজের জীবনের কথা বলার মত বন্ধু তার দ্বিতীয় কেউ ছিল না। তাই এই বন্ধুর অভাব তীব্র হয়েই বাজল। তার এই দুঃখ ছিল সত্যিকারের।
-নিজের হাতে বন্ধুকে হত্যা কী ভয়ানক। বললেন বাঞ্চ।
–শার্লট ব্ল্যাকলক আসলে ছিল দুর্বলচিত্ত খুনী। খুনীদের পক্ষে এই দুর্বলতা অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ এরকম দুর্বলেরা যখন ভয় পায়, তখন তারা নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ফলে তারা হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর নির্মম। শার্লটের ভয়ের বলি হলেন মারগাটরয়েড।
–মারগাটরয়েড? জুলিয়া বলল।
-হ্যাঁ। মিস হিনচক্লিফ আর মারগারটরয়েড–দুজনে মিলে সেদিনের ঘটনার পর্যালোচনা করেছিলেন। শার্ট ওদের কটেজে এসে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সবই শোনে। আর এখনই তার মনের ভয় দ্বিগুণ হয়ে ওঠে।
রুডি সার্জ আর ডোরা বানার, যাদের কাছ থেকে বিপদ আসার সম্ভাবনা ছিল তাদের সরিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত ছিল শার্ট। আর কারও কাছ থেকে বিপদ আসতে পারে, এমন কোন ধারণাই তার ছিল না। সে নিশ্চিত জানত তার অপকর্ম আর কারো চোখে পড়েনি।
মিস হিনচক্লিফ থানায় যাওয়ার জন্য যখন গাড়িতে উঠেছেন সেই সময় সম্ভবত মারগাটরয়েড আচমকা আসল ব্যাপারটা আবিষ্কার করতে পারলেন। মানুষ যখন ঠাণ্ডা মাথায় পুরনো কথা মনে করবার চেষ্টা করে তখন অনেক ছোট ছোট বিষয় তার মনে পড়ে যায়। তাই হয়েছিল মারগাটরয়েডের। তিনি চেঁচিয়ে বলেছিলেন…সেই মহিলা ওখানে ছিলেন না।…
আমার ধারণা, মারগাটরয়েড ম্যান্টলপিস থেকেই দৃশ্যপট চোখের সামনে তুলে আনবার চেষ্টা করেছিলেন। তার পরে দুটো জানালা। কেউ কেউ ওদিকে দাঁড়িয়েছিল।
ডোরা বানার তাকিয়েছিলেন ল্যাম্প আর সিগারেট বাক্স হাতে শার্লটের দিকে।
এরপরই শোনা গেল গুলির শব্দ। তারপর থেকেই পর পর সব তার মনে পড়ে যেতে থাকে। দেয়ালে যেখানে গুলি লেগে দাগ হয়েছিল তিনি সেটা দেখেছিলেন। ওই দেয়ালের সামনেই দাঁড়িয়েছিল শার্লট। তার দিকেই গুলি ছোঁড়া হয়েছিল।
মারগাটরয়েডের মনে পড়ে যায় সেখানে, দেয়ালের সামনে শার্লট ছিল না…
মিস হিনচক্লিফ তাকে তিনজন মহিলার কথা ভাবতে বলেছিলেন। তার মধ্যে একজনের কথা তিনি নিশ্চয় বিশেষ ভাবে মনে করতে বলেছিলেন। সেইভাবে ভাবতে গিয়েই মারগাটরয়েডের মনে পড়ে যায় তার কথা। আর তিনি বলে ওঠেন, হিনচ…উনি ওখানে ছিলেন না…
বাঞ্চ বলে উঠলেন, তুমি বোধহয় আগেই বুঝতে পেরেছিলে, তাই না জেন মাসী? কাগজে তো লিখেছিলেন, যখন ল্যাম্পটা ফিউজ হয়ে যায় আমাদের।
-হ্যাঁ প্রিয় বাঞ্চ। তখনই একে একে ঘটনাগুলো মনে পড়ে যেতে থাকে। খাপছাড়া আর রইল না কিছু। বললেন মিস মারপল।
-তুমি লিখেছিলেল্যাম্প…ভায়োলেট…অ্যাসপিরিনের বোতল…। ডোরা বানার তো তার বোতলটা খুঁজে পাননি। বাঞ্চ বললেন।
-হ্যাঁ, তার বোতল কেউ লুকিয়ে রেখেছিল। নয়তো নিজেই ভুলে গিয়েছিলেন কোথায় রেখেছিলেন, তাই তার বন্ধুর অ্যাসপিরিন নেবার দরকার হয়েছিল। এতে বোঝানো হয়েছিল শার্লটকে মারার জন্যই কেউ বোতলে বিষবড়ি রেখেছিল।
শার্লট ডোরা বানারের জন্য পার্টির ব্যবস্থা করে দয়ার পরিচয়ই দিয়েছিল। সে সত্যি কথাটাই বলেছিল রান্নাঘরে–আমি কাউকেই মারতে চাইনি।
আসলে সে যা একান্তভাবে চেয়েছিল তা হল অপর্যাপ্ত অর্থ। শার্লটের জীবনের সব আনন্দই হারিয়ে গিয়েছিল। তাই সে জীবনে যা পায়নি সেই অর্থের বিনিময়ে জীবনের পরিপূর্ণ আনন্দ উপভোগ করতে চেয়েছিল। অর্থের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল সে।
-আয়োডিনের কথা শুনে গলগণ্ডের কথা তোমার মনে হয়েছিল কেন মাসী? বললেন বাঞ্চ।
গলগণ্ডে ভুগছিল শার্লট। লেটিসিয়ার ভূমিকায় থেকে সে আমাকে বোঝাতে চেয়েছিল তার বোন যক্ষ্মারোগে মারা যায়। চিকিৎসার জন্য তাকে সুইজারল্যাণ্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু আমি জানতাম গলগণ্ডের বড় চিকিৎসকরা সুইজারল্যাণ্ডেই আছেন, সেখানেই এই রোগের চিকিৎসা হয়ে থাকে। আয়োডিনের কথা শুনেই তাই আমার সুইজারল্যাণ্ডের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল।
আগেই নজরে পড়েছিল তার গলার অদ্ভুত আকারের মুক্তোর মালাটা, এটা যে স্টাইল নয়। বুঝতে আর দেরি হয়নি-সন্দেহ হয় অপারেশানের চিহ্ন ঢাকার জন্যই ওই মালা।
-সে-রাতে মালাটা যখন আচমকা ছিঁড়ে যায়, শার্লটের ব্যবহারও সঙ্গে সঙ্গে কেমন অদ্ভুত বেখাপ্পা হয়ে পড়ে। কিছু বুঝতে না পারলেও ব্যাপারটা আমাকে সন্দিহান করে তুলেছিল। বললেন ক্র্যাডক।
সেকারণেই তুমি লিখেছিলে লোটি? বলল বাঞ্চ।
–হ্যাঁ, আমি জানতাম, লেটিসিয়ার বোনের নাম ছিল শার্লট যাকে ডোরা বানার ডাকতেন লোটি বলে। কয়েকবার তিনি আমার সামনেই মিস ব্ল্যাকলককে লোটি বলে ডেকে ফেলেছিলেন। আর প্রতিবারেই তিনি লোটি বলার পরেই কেমন অপ্রস্তুত হয়ে ওঠেন।
–বের্নের কথা লিখেছিলে কেন? বললেন বাঞ্চ।
–ওখানে হাসপাতালেই রুডি সার্জ বয়ের কাজ করত। নিচু স্বরে বললেন মিস মারপল। যাই হোক মারগাটরয়েডের আকস্মিক মৃত্যু ঘটলে বুঝতে পারলাম, আরে দেরি করা ঠিক হবে না। যা করবার দ্রুত তা করে ফেলতে হবে। অথচ হাতে জুৎসই প্রমাণও ছিল না। তাই কাজের একটা ছক করে নিয়ে সার্জেন্ট ফ্লেচারের সঙ্গে কথা বললাম।
ইনসপেক্টরের সঙ্গে আগে কথা না বলে ফ্লেচার কিছু করতে রাজি হচ্ছিল না। অনেক বলে কয়ে আমি তাকে রাজি করিয়েছিলাম। তারপর দুজনে মিলে লিটল প্যাডকসে গিয়ে মিৎসিকে ধরে তালিম দিলাম।
আগে ওকে বুঝিয়ে দিলাম কি করতে হবে। বারবার মহড়া দিয়ে ও নিজেকে তৈরি করে নিল। যা যা করতে হবে আমাদের করে দেখাল। তারপর ইনসপেক্টর ক্র্যাডক এলে ওকে ওপরে পাঠিয়ে দিলাম।
–মিৎসি যা করেছে এক কথায় অপূর্ব। বলল জুলিয়া।
–কিন্তু এতসব করার কি দরকার ছিল তা তো বুঝলাম না। বাঞ্চ বলল।
–একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে, বললেন মিস মারপল, ব্যাপারটা জটিল অবশ্য। আমার পরিকল্পনা ছিল, মিৎসি স্বীকার করবে যে তার ব্ল্যাকমেল করারই ইচ্ছে ছিল। সে স্বীকার করবে যে ডাইনিং ঘরের চাবির গর্ত দিয়ে দেখেছে, মিস ব্ল্যাকলক একটা রিভলবার হাতে নিয়ে রুডি সার্জের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যা যা ঘটেছিল ও সবই পরিষ্কার দেখেছে।
একটা ভয় ছিল শার্লট না বুঝে যায় চাবির ফুটো দিয়ে কিছু দেখা মিৎসির পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু আচমকা চমকে গেলে মানুষ যুক্তিবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। তাই এই ভরসাতেই আমরা ঝুঁকি নিয়েছিলাম।
ব্যাপারটা খুবই ফলপ্রসূ হয়, বললেন ক্র্যাডক, আমিও একেবারে অন্য দিক থেকেই আক্রমণ করি এডমণ্ডকে, যদিও ভাল করে জানতাম সে কখনওই একাজ করতে পারে না। সরাসরি তাকে অভিযোগ করি।
–আমার অংশের অভিনয়ও নিশ্চয় যথাযথ হয়েছিল, বলল উল্লসিত ক্র্যাডক, আমি দৃঢ়ভাবেই অভিযোগ অস্বীকার করলাম। একেবারে পরিকল্পনার ছক ধরে। তবে আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে যা ছিল না তা হল, জুলিয়া আচমকা নিজে থেকেই বলে ওঠে সেই হল পিপ। ভেবেছিলাম পিপ আমিই হব।
জুলিয়ার কথা শুনে আমার মত ইনসপেক্টর ক্র্যাডকও হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তবে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি এই ব্যাপারটা সুন্দরভাবে সামলে নেন। তিনি বলেন, কোন অর্থবতী মহিলাকে বিয়ে করাই আমার অভিপ্রায়।
–এতসবের কি দরকার ছিল? বলল জুলিয়া।
দরকার ছিল এজন্য যাতে শার্লট বিশ্বাস করে মিৎসি সত্যি সত্যি কিছু দেখে থাকবে। আর মিৎসিও একই কথা বারবার বলতে থাকে যাতে তার কথা সকলে শুনতে বাধ্য হয়। এরকম না হলে তাকে চুপ করাবার দরকার হবে না। ক্র্যাডক বললেন।
এরপর বললেন যেমন তাকে তালিম দেওয়া হয়েছিল, সেভাবেই মিৎসি ঘর ছেড়ে রান্না ঘরে চলে যায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শার্লটও বেরিয়ে গেল।
রান্নাঘরে মিৎসি একা হলেও আসলে একা ছিল না। সার্জেন্ট ফ্লেচার ছিলেন রান্নাঘরের পাশে বাসনমাজার ঘরের দরজার পেছনে। আর আমি ছিলাম রান্নাঘরে ঝটা বুরুশ রাখার আলমারির মধ্যে।
–ঘটনা কি ঘটবে তা তুমি ভাবতে পেরেছিলে জেন মাসী? বললেন বাঞ্চ।
দুটো ব্যাপার আমি ভেবেছিলাম। হয় মিৎসির মুখ বন্ধ রাখার জন্য শার্লট তাকে টাকা দিতে চাইবে। তা হলে সার্জেন্ট ফ্লেচারই এই ঘটনার সাক্ষী থাকবেন।
তা না করলে, আমি ধরে নিয়েছিলাম, শার্লট মিৎসিকে খুন করতে চাইবে।
শার্লটের মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। নিজেকে ধরে রাখার শক্তি আর তার ছিল না।
মিস হিনচক্লিফ আর মারগাটরয়েডের ঘটনাটার পর থেকে সে বেসামাল হয়ে পড়েছিল।
মিস হিনচক্লিফ পুলিশ স্টেশনে চলে গেলেন। তিনি ফিরে এলেই মারগাটরয়েড তাকে বলে দেবেন সে-রাতে শার্লট যে ঘরটায় যেখানে থাকার কথা ছিল সেখানে ছিলেন না।
জানালার আড়ালে থেকে, এই পরিস্থিতিতে, শার্লট বুঝে গিয়েছিল, মারগাটরয়েডের মুখ তখনই বন্ধ করার ব্যবস্থা করা দরকার যাতে মিস বাঞ্চ কিছু জানতে না পারেন।
মাত্র কয়েক মিনিট সময় ছিল হাতে। কোন পরিকল্পনা নেবার মত সময় ছিল ন। সরাসরি খুন ছাড়া কিছু করার ছিল না। এক মিনিট সময় নষ্ট না করে শার্লট গলায় ফাঁস এঁটে বেচারী মারগাটরয়েডকে হত্যা করে।
তারপর দ্রুত বাড়িতে ফিরে এসে পোশাক পাল্টে নেয়।
শার্লটের ভাগ্য খারাপ হল, এর পরেই ঘটল মুক্তোর মালা ছেঁড়ার ঘটনা। অপারেশনের দাগটা পাছে কেউ দেখে ফেলে এই ভেবে নিদারুণ ভয় পেয়ে গেল।
পরে পরেই ইনসপেক্টর ফোনে জানালেন, তিনি সকলকে নিয়ে আসছেন–মারগাটরয়েডের মৃত্যুর ঘটনাটা তদন্তের জন্য।
পর পর ধাক্কা আসতে লাগল। চিন্তা করবারও সময় ছিল না। মিৎসি এবারে ঘটালো নতুন বিপদ। ভয়ে দিশাহারা অবস্থায় একটা হিংস্র পশুতে পরিণত হল শার্লট।
আমি তার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছিলাম। সে কারণেই বঁটা রাখার আলমারিতে থেকে ডোরা বানারের গলা নকল করে আমি তাকে একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম।
–হয়েছিলও ঠিক তাই…একেবারে ভেঙ্গে পড়েছিল।