কোথায় রাখবে চোখ হে আমার দীর্ঘ উপবাস?
তুমি তো গুহায় আছ দীর্ঘদিন যোগাযোগহীন;
ঘাড় বেয়ে নেমে গেছে রুক্ষ কটা চুল, ওষ্ঠ যেন
খরা-কবলিত মাটি চক্ষুদ্বয় ভীষণ উজ্জ্বল-
ক্রমাগত উপবাসে হে আমার দীর্ঘ উপবাস
এ রকমই হয়, এরকম কম্পমান নিশিদিন।
কোথায় রাখবে চোখ হে আমার দীর্ঘ উপবাস?
এতদিন ফলমূল অথবা তণ্ডুল আশেপাশে
দ্যাখোনি এবং কেউ দেয়নি তোমার হাতে তুলে
ভরা পাত্র টলটলে, আহার্য ও পানীয়ের ঘ্রাণ
তুমি ভুলে গিয়েছিলে। এখন তোমার গুহাগাত্রে
কেমন কোমল ছায়া, মৃদু ঝরনাধ্বনি যাচ্ছে শোনা।
অবিরল; তুমি চোখ মেলে দ্যাখো দ্রাক্ষালতা খুব
কাছে এসে এই বর্তমানের মতন আলিঙ্গন
করছে তোমাকে নিরিবিলি। অতীত সজীব প্রাণী হয়ে
শুঁকছে তোমার পদযুগ, বুঝি চেখে নিতে চায়
ত্বকের উত্তাপ কিছু কিংবা হাড়ে উত্তুরে বাতাস
ছড়িয়েছে কত হিম পরখ করার লোভ তার।
হে আমার দীর্ঘ উপবাস, কতকাল পরে যাবে
পরবাসে পুনরায়? তোমার অসামাজিক রীতি
নদীতীরে কিংবা বনে পায় সমর্থন। খরস্রোতে
চোখ রেখে নদী হও, পর্বতারোহীর নিঃসঙ্গতা
বুকে পুষে গিরিচূড়া হয়ে যাও; হও প্রতীক্ষায়
তীক্ষ্ণ আরও, যেন বঞ্চনাকে ভালোবেসে অকাতরে
খুলে দিতে পারো মুঠি। এখন তোমার খুব কাছে
কত কিছু লোভনীয় রূপে এসে যাচ্ছে সাবলীল;
কোথায় রাখবে চোখ হে আমার দীর্ঘ উপবাস?
থাকবে কি চোখ বুজে? যে তোমার ধু-ধু উপবাসে
বইয়ে দেবে জলধারা, সে যদি গুহায় ছুটে আসে?
যদি সে পরিবেশ করে বিষলতা বারংবার?