যখন টেবিলে ঝুঁকে থাকি,
একটি নির্জন দীর্ঘশ্বাস, যেন ক্লান্ত পথচারী কোনো
আমার ঘাড়ের ধু-ধু একাকী প্রান্তরে
আস্তেসুস্থে ছড়ায় তুষার।
যখন টেবিলে ঝুঁকে থাকি,
একটি সোনালি সিংহ, তার চকচকে কেশর-দোলানো স্ফীত
গলায় ফুলের মালা, আসে দেয়ালের পলেস্তারা ফুঁড়ে, মুখ
থেকে ব্যাঞ্জো, রত্নরাজি, প্রেমিকের দীপ্র চোখ, সুন্দরীর মুখ বের করে।
যখন টেবিলে ঝুঁকে থাকি,
আমার আপন ঘরে সহসা প্ল্যাটোর গুহা জাগে;
গুহায় অনেক ছায়া, কম্পমান, গুহাগাত্রে একজন তার
আধপোড়া সিগারেট চেপে ধরে, কেউবা ঝোলায় পাণ্ডুলিপি।
যখন টেবিলে ঝুঁকে থাকি,
স্বপ্নের সবুজ লনে চারজন নিপুণ খেলোয়াড়
টেনিস বলের সাথে ঘন ঘন লাফিয়ে বেড়ায়,
র্যা কেট বাদামি ভায়োলিন হয়ে শূন্যে নেচে ওঠে বারংবার।
যখন টেবিলে ঝুঁকে থাকি,
ত্র্যালবাম থেকে কিছু ফটোগ্রাফ প্রবল বেরিয়ে দৃষ্টিপথে
কয়েকটি মুখ হয়। একজন বলে, ‘আমি দুঃখ হয়ে পুড়েছি সর্বদা’,
‘আমি যন্ত্রণাকে ছুটি দিয়েছি দিঘিতে সন্ধেবেলা’, বলে অন্যজন।
যখন টেবিলে ঝুঁকে থাকি,
টেলিফোন দেয়ালের সঙ্গে কথা বলে, বই নৈঃসঙ্গের সাথে,
নিশীথের সাথে চক্ষুদ্বয়। কোত্থেকে কেমন পাখি এসে বলে-
আমি তো তোমার নই, কারো নই, পুনরায় স্বপ্নের চিতায় চলে যাব।
যখন টেবিলে ঝুঁকে থাকি,
সংবাদপত্রের রাশি রাশি কালো অক্ষর ছাপিয়ে
আট কলামের পরপারে কতিপয় শীর্ণ মুখ শূন্য থালা,
প’ড়ে থাকে; ছাদ গুলিবিদ্ধ মানুষের মতো করে আর্তনাদ।
যখন টেবিলে ঝুঁকে থাকি,
পৃথিবীর মানচিত্র পর্দার মতন ঝোলে জানালায়,
সাবমেরিনের চূড়ো মেঝেতে চকিতে দেখা দেয়,
আমার সম্মুখে ব’সে চুরুট ফোঁকেন তেরোজন রাষ্ট্রদূত।
যখন টেবিলে ঝুঁকে থাকি,
সকালবেলার মতো কারো হাত, যমজ সোনালি
আপেল এবং টেলিফোন, প্রজাপতি, ফটোগ্রাফ, আসবাব
গান গায়, গান গায় কবিতার জাগ্রত পঙ্ক্তির কানে কানে।