ঋণী

পুরোনো ঢাকার নেড়ি গলি ছেড়ে আজিমপুরের
তেতলার ফ্ল্যাটে যাই বস্তুত আড্ডার লোভে, খানিক হাঁপাই।
ক্লান্তির কফিন ঢাকা শরীর এলিয়ে কৌচে নিঃশব্দে দূরের
আকাশে বুলাই চোখ এবং বৈশাখী গরমেও স্বস্তি পাই
বন্ধুর সুহাস মুখে; উপরন্তু ভাগ্যবলে ফাহ্‌মিদা এখানে অতিথি
আজ রাতে। আমাদের প্রহর সমৃদ্ধ হবে, রাবীন্দ্রিক সুরে
নানান বিন্যাসে অবিরাম দুলবে সত্তার মৌন ঝাউবীথি,
জাগবে আনন্দলোক তেতলার ফ্ল্যাটে সরকারি আজিমপুরে।

ফাহ্‌মিদা সুর ভাঁজে-এ-ও এক বৃষ্টি অপরূপ,
অস্তিত্ব ডুবিয়ে নামে। গীতবিতানের কিছু নিভৃত নিশ্চুপ
পাতা ওড়ে অলৌকিক কলরবে, গাংচিলের মতো ওড়ে, ঘোরে সারা ঘরে
প্রাণের ঊর্মিল জল ছুঁয়ে যায় কতো ছলভরে।
ফাহ্‌মিদা কণ্ঠে সুর তুললেই ঘরে রৌদ্র ওঠে, মেঘে মেঘে
বাজে বাঁশি, ভাসে ভেলা, শ্রাবণের ধারা ঝরে, গাছ হয়; হাট-
ফেরা লোক মিলায় সোনার মেঘে এবং চোখের দ্বারে ধ্যানের আবেগে
নদীর সুদূর পাড়ে যায় দেখা ঘাট।
কখন যে রাত্রি বাড়ে আলো-আঁধারিতে তেতলায়,
কিছুই পাই না টের সুরে ভেসে, ফ্ল্যাটে ফাহ্‌মিদার গলায়
আমার সোনার বাংলা ঝলমল করে ওঠে। ঋণী তারই কাছে
আজীবন, কণ্ঠে যার বারবার রবীন্দ্রনাথের গান বাঁচে।