কিন্নর কণ্ঠের খ্যাতি ছিল না তোমার, কোনো দিন
জলকিন্নরীর ধ্যানে, ঈশ্বরের বিফল সন্ধানে
কাটেনি তোমার বেলা। কুলীন ড্রইংরুমে কিংবা ফিটফাট রেস্তোরাঁয়
হওনি কখনো তর্কপরায়ণ সাহিত্যের শৌখিন আড্ডায়।
ছিল না তোমার মন জমকালো শিল্পের মহলে, আলোকিত
প্রভাতবেলায় তুমি যে-শিল্পের পেয়েছিলে দেখা
ভীষণ তামাটে তার গ্রীবা রৌদ্রের সুতীব্র আঁচে।
স্বদেশকে প্রিয়ার একান্ত নাম ধরে ডেকে ডেকে
অগ্নিবলয়ের মধ্যে গড়েছিলে প্রেমের প্রতিমা
নিজে পুড়ে পুড়ে।
তোমার প্রেমার্ত স্বর পঞ্চান্ন হাজার
একশো ছাব্বিশ বর্গমাইলে আনাচে-কানাচে
পৌঁছে গেছে। বাউলের গেরুয়া বস্ত্রের মতো মাটি, মাছ আর আকাশের কাছে
নদীর বাঁকের কাছে, মজুরের ক্ষিপ্র, পেশি অত্যাচারী শাসক-দপুরে
কৃষকের হাল-ধরা মুঠোর কাছেই তুমি শিখেছিলে ভাষা।
বস্তুত এখানে বড় বেশি আমরা সবাই যাত্রা ভালবাসি,
এমনকি নিজেরাই ‘অধিকারী পার্ট দাও’ বলে
সমস্বরে ভীষণ চেঁচাই,
সহাস্য বাড়াই মুখ রঙচঙে মুখোশ পরার লোভে আর নিজেদের
কাপ্তান কাপ্তান লাগে কিনা দেখে নিই আড়চোখে
বিকৃত আয়নায়, ঘাড়ে মুখে আলতো বুলিয়ে নিয়ে পাউডার
পরস্পর খুব করি খুনসুটি। ইদানীং আমরা সবাই
অন্ধ, মূক আর বধিরের পার্ট ভালবাসি। অথচ তোমার
ভূমিকা সর্বদা ছিল ভিন্নতর। অন্ধকারে থেকে, মনে পড়ে,
দেখতাম রুদ্ধবাক প্রধান যাত্রার তুমি রাজপুত্র, নিঃশঙ্ক, সুকান্ত,
সোনার কাঠির স্পর্শে নিদ্রিতা সত্যকে
অক্লেশে জাগাতে চাও, অভিশপ্ত রাজ্যের উদ্ধারে
কোষমুক্ত করো তরবারি। তুমি পাষাণপুরীর
প্রতিটি মূর্তির স্তব্ধতায় চেয়েছিলে ছিটোতে রুপালি জল।
চোখ বুজলেই দেখি, হু-হু মাঠে, কুটিরে, খোলার ঘরে, দুঃখ-ছাওয়া শেডে,
সুস্থির দাঁড়িয়ে আছ সুদিনের কর্মিষ্ঠ নকিব।