হাতের বিষয়ে আমি প্রায়শই ভাবি। প্রতিদিন
না হলেও কোনো কোনো দিন নিজের হাতের দিকে
তন্ময় তাকাই, যেন কিছু পাঠোদ্ধারে বড় বেশি
মনোযোগী হয়ে পড়ি। উত্তেজিত মাছের মতন
হাত উল্টেপাল্টে দেখে নিই, রেখাবিদ নই, তবু
হাতের তালুর স্থির লতাপাতা করি উপভোগ।
টেবিলে আমার হাত। কে তুমি? হঠাৎ চক্ষুদ্বয়
প্রশ্ন করে, কেন তুমি এমন ঘুমিয়ে আছ একা
এই টেবিলের বুকে? তুমি কি বধির কোনো শাখা?
নাকি জলচর কোনো প্রাণী ডাঙায় পোহাচ্ছে রোদ?
কখনো শয্যায় হাত পড়ে থাকে এক পাশে, আমি
সবিস্ময়ে দেখি তাকে, সেকি আমারই প্রকৃত কেউ?
স্মৃতির শিশির চোখে নিয়ে হাত অপলক গাঢ়
তাকায় আমার দিকে; সে দৃষ্টিতে নদী, বালিয়াড়ি,
শূন্য তাঁবু; জ্যোৎস্নাময় উটের স্বপ্নিল গ্রীবা, ক্ষেত,
সূর্যাস্ত এবং ক্রূদ্ধ পাখির বিবাদ, সে দৃষ্টিতে
কবির করোটি, সদ্য ক্ষত, নর্তকীর শরীরের
কত ঢেউ, কালো ভেনাসের মতো বর্ষার নিশীথ।
যখন আমার হাত আমাকে বলতে চায় কিছু,
পিঁপড়ের মতো ঘোরে হাতে। মাঝারি আমার হাত
কিছুবা অবুঝ, ত্রস্ত, কিঞ্চিৎ বেঢপও, বলা যায়-
দেখি সে বাতাস হয় উড়ুক্কু প্রান্তরে, ঘাসে ঘাসে;
মাঝারি আমার হাত বেড়ে যায় স্বপ্নের হাওয়ায়।
কখনো চমকে উঠি আমার আপন হাত দেখে,
ক্ষয়িষ্ণু ছায়ার মতো কত লোক লুটোচ্ছে এ হাতে,
লোমকূপগুলি যেন দারুণ মড়ক-কবলিত
পল্লীপুঞ্জ, আর্ত হিরোশিমা, একাত্তরের বিদীর্ণ
বাংলাদেশ। ভয় পাই, কখনোবা ভয় না পাওয়ার
ভান করি; হাতের ভেতরে দ্রুত হাত নিয়ে যাই।