দেখি তাকে, ব’সে থাকে এক প্রান্তে নীরব, স্বপ্নিল-
সকলের কাছাকাছি থেকেও অনেক দূরে তার
এ কেমন অবস্থান? কখনো ধরায় সিগারেট,
ধোঁয়া ছাড়ে, ইতস্তত করে পায়চারি কখনোবা।
দ্যাখে সে একটি পাখি ব’সে আছে ভীষণ একাকী;
পাখিটির চোখে বুঝি স্বপ্নের মতন জ্বলে কারো
মুখচ্ছবি, ভাবে; দ্যাখে পাখির গহন চোখে তার
আপন আকুল চোখ। বিহঙ্গ, মানুষ দীর্ঘশ্বাস।
চতুষ্পার্শ্বে বাজে কী ব্যাপক অনুপস্থিতির সুর।
হঠাৎ নাছোড় তৃষ্ণা বুকে কালো মড়কের মতো
ত্বরিত ছড়িয়ে পড়ে। চোখে তার দুলে ওঠে কত
করোটি, কঙ্কাল আর বালির কর্কশ সিংহগুলি
কেশর দুলিয়ে করে তুমুল গর্জন। পুনরায়
জ্যোৎস্নাময় বালিয়াড়ি গোলাপ বাগান হয়ে ডাকে।
একেই প্রতীক্ষা বলে? মাঝে-মধ্যে লজ্জাবোধ হয়।
বহুদিন কেটে গেছে তার এরকম প্রতীক্ষায়।
গাছপালা পাখি কিংবা ভ্রাম্যমাণ মেঘে চোখ রেখে,
চোখ রেখে আসবাবপত্রে, পথে অনেক সময়
কাটিয়েছে, মনে হয়, কত যে শতাব্দী চলে যায়
দীর্ঘ ছায়া ফেলে তার কাতর হৃদয়ে, শূন্যতায়
ব্যাকুল মুহূর্তগুলি ব্যর্থ যায়, আঁধারে গড়ায়।
‘দয়া করো’ সে সর্বদা তার দৃষ্টি মেলে দ্যায়
পথে, দ্যাখে খুব ঝঞ্ঝাচিহ্ন নিয়ে একটি প্রাচীন
জাহাজ বন্দরে আসে পণ্যহীন, যাত্রীরা উধাও;
কাপ্তান, নাবিক কেউ নেই। বনশোভা দূরে স’রে
যেতে থাকে; ‘দয়া করো’ হাওয়ায় মিলায় বার-বার।
কী এক দুঃখের গান রাত্রির হৃদয় থেকে যেন
পল্লবিত হয়, সুর কোথায় যে তাকে নিয়ে যায়
আর সে নিজে ঘুমে-হেঁটে-বেড়ানো লোকের মতো একা
ক্রমাগত পথ চলে। দুঃস্বপ্নসংকুল কোনো বাঁকে
সহসা ফেরালে চোখ কিছু পতনের শব্দ শোনে-
কে যেন ছায়ার মতো দ্রুত সরে যায় বহু দূরে;
কে তুমি কে তুমি বলে ডোবে সে অতল হাহাকারে।
প্রতীক্ষা ফুরোয় তবু ফুরোয় না আকাঙ্ক্ষার আয়ু।