সে-কথা প্রথম শুনি গাঁওবুড়াদের
মুখে; তাঁরা গোধূলিতে পুকুরের পাড়ে বসে প্রবীণ গলায়
গাজী কালু চম্পাবতী পুঁথি সুরের
আমেজ মিশিয়ে বলেছিলেন সে-কথা, মনে পড়ে।
বালক বয়সে সবকিছু সহজে বিশ্বাসযোগ্য
হয়ে ওঠে তাই
ওদের সে-কথা শুনে তাকাতাম উত্তরের দিকে।
কেননা সেদিক থেকে তিনি আসবেন,
এ ধারণা তাদের কথায়
প্রশ্রয় পেয়েছে বারবার। বহুদিন
আমি হেঁটে চলে গেছি বহুদূরে উত্তর দিকের
নিশানা স্মরণে রেখে। অনেক পুরনো দীঘি, জামতলা আর
পাতা-ছাওয়া পথ পাড়ি দিয়ে
আবার এসেছি ফিরে, যদিও পাইনি দেখা তার,
যার কথা বলে
গাঁওবুড়াদের চোখ হতো স্বপ্নাকুল গোধূলিতে
অথবা সকালবেলা। কেউ কেউ থাকতেন খুব চুপচাপ
হুঁকো হাতে, কেউ কেউ খড়মের শব্দে তুলে যেতেন অন্দরে।
শহরেও শুনেছি সে-কথা কিছুকাল পরে; যারা
চাখানায় কিংবা আস্তাবলে
মারতেন সরস আড্ডা দিনরাত, তাদের ভেতর
কেউ কেউ গল্পচ্ছলে বলতেন তাঁর কথা, যিনি
আসবেন উত্তরে পথ বেয়ে। কেমন দেখতে তিনি আর
কীরকম পোশাক-আশাক
শোভা পাবে গায়ে তাঁর, এসব কিছুই
থাকত না সেই প্রিয় কিসসায় তাদের।
কিস্সাই বলব একে, যেহেতু আসার কথা যাঁর
তিনি তো আসেননি আজও, শুধু
কিছু কথা ভ্রমরের গুঞ্জরণ হয়ে ওষ্ঠে ওষ্ঠে
ঘোরে মাঝে-মাঝে, আমি আগেকার মতো
গভীর আগ্রহে আর শুনি না সে-কথা।
কখনো নিঃশব্দে হাসি, উদাস তাকাই কখনোবা,
চায়ের পেয়ালাটিকে ঠোঁটের নিকটে নিয়ে যাই।
আমার সংশয়ী মন যদিও এখন
উত্তরের দিকে আর নজর করে না, তবু কোনো কোনো দিন
কী-যে হয়, আমি তাঁর কথা ভাবি, আসবেন যিনি,
যিনি এদেশের মৃত্তিকার মতো, নদীর পানির মতো,
চৌরাহায় বিশাল বৃক্ষের মতো। আমি
গল্পের ভিতরে ধৈর্য ধরে আরেক কাহিনী খুঁজি।