কী যেন হাওয়ার মধ্যে আছে, কী যেন একটা খুব
জীবন্ত, রহস্যময়, প্রাণীর ঘ্রাণের মতো প্রায়।
ভাষা নেই, তবু কিছু বলার আশায় ঘাই মারে
সহসা হাওয়ায় ফের কোথায় হারায় অকস্মাৎ।
যখন নিজেকে মেলে দিই টেলিফোনের ভিতরে,
যখন টেবিলে ঝুঁকে লিখি, বই পড়ি, বিছানায়
শুয়ে-শুয়ে কী তন্ময় অতীত আবৃত্তি করি কিংবা
যখন নিঃসঙ্গ হাঁটি ফুটপাতে, রেস্তোরাঁয় বসি,
হঠাৎ হাওয়ার মধ্যে কী যেন সুতীব্র জেগে ওঠে।
মনে হয়, কারো জিভ চাটছে আমাকে নিরিবিলি,
আমাকে দেখছে কেউ নিকট আড়াল থেকে, যেন
বলবে গোপনে কিছু আমাকেই। আমি উৎকর্ণ,
সে-কথা আকণ্ঠ পান করবে বলে প্রহরে প্রহরে
চকিতে চাতক হয় আমার প্রতিটি রোমকূপ।
কী যেন হাওয়ার মধ্যে আছে, কী যেন একটা গূঢ়
সংকেতের মতো বেজেজ ওঠে শব্দহীন। দৃশ্যাবলি
সচকিত, নাগরিক নিসর্গবাসরে একজন
নগর পুলিশ হুইসিল তীব্র বাজাতে বাজাতে
ক্লান্ত হয়, স্বপ্নাবেশে দ্যাখে শহরের ত্র্যানাটমি
গলে গলে পড়ে তার চোখের পাতায়, দ্যাখে দূরে
মৃতের কুচকাওয়াজ, তারপর চক্ষুদ্বয় দ্রুত
কচলাতে কচলাতে জ্যোৎস্নায় নিজের বুট জোড়া
কিঞ্চিৎ পরখ করে। কী যেন হাওয়ার মধ্যে আছে,-
স্পন্দমান ভাষাহীন এক অলীক টেলিপ্রিন্টার!
কী যেন হাওয়ার মধ্যে আছে। পাখিগুলি চিহ্ন হয়ে
জরুরি একটা কিছু আমাকে বোঝাতে চায় বুঝি-
নইলে কেন অবেলায় ওরা উড়ে যায় বারবার?
কেন বৈদ্যুতিক তারে বুক পেতে শীর্ণতা পোহায়?
কী যেন হাওয়ার মধ্যে আছে বলে যত দ্রুত আমি
লোকালয়ে হেঁকে যাই তত কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে।