মানববিদ্যা

মানববিদ্যা

শিক্ষার প্রতি মানুষের একটা আন্তরিক সহানুভূতি থাকলেও শিক্ষার প্রভাবের গোড়ার কথাটা মানুষের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে মনে হয় না। তাই আমাদের দেশে মানববিদ্যা (Humanities) বিস্তারের ফলে যথাযোগ্য বিনিয়োগ ব্যবস্থার অভাবে বেকার সমস্যার মতো নানারকম সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেন অনেকেই। কিন্তু ঐ বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয়ের মধ্যেও সাধারণভাবে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও নৈতিক বন্ধন দৃঢ় হয়, তা সহজে চোখে পড়ে না। তারা তাই কেবল কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান।

ধর্মবিধি দিয়েই লোক-শিক্ষার শুরু। এতেই সমাজে শৃঙ্খলা স্থাপন আর সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশ সম্ভব হয়েছিল এককালে। তাই মনুষ্য সমাজে ধর্মের উদ্ভব তত্ত্বটি বিশ্লেষণ করলে জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব সহজেই বোঝা যাবে। ধর্মবিধির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজবদ্ধ মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ব্যবহারবিধি প্রয়োগ করে সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তি রক্ষা করা। মূলত এক প্রত্যক্ষ সমস্যার সমাধানকল্পেই ধর্ম নামক বিধিগুলোর উদ্ভব হলেও এতে জগৎ ও জীবন সম্পর্কিত এমন একটি মৌলিক রহস্যসূত্র যুক্ত হয়েছে, যাতে বিধিগুলো শুধু প্রত্যক্ষ জীবন সম্পর্কিত হয়েও জীবনোত্তর (অর্থাৎ এ-জীবনপূর্ব ও এ-জীবনোত্তর) কাল্পনিক জীবনের জের টেনে তাতে কল্পনাতীত সুখের মধুর চিত্র বা দুঃখের বিভীষিকার সংস্কার জন্মিয়ে দেয়া হয়েছে। এ না হলে উপায় ছিল না। কারণ কোনো নিয়ন্ত্রণশক্তি না থাকলে কোনো কানুনই কার্যকর করা সম্ভব নয়। সবলের সর্বগ্রাসী সার্বভৌম শক্তির নিয়ন্ত্রণ-সামর্থ্য দুনিয়াতে কারো নেই বলেই দুনিয়ার বাইরের কল্পজগতের একটা শক্তির একান্ত প্রয়োজন ছিল। অবস্থাও ছিল অনুকূল। এ বিশাল বিচিত্র ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের প্রাকৃতিক নিয়ম ও বৈচিত্র্যগুলো ব্যাখ্যা করবার প্রয়োজনে অসহায় কৌতূহলী মানুষের মনে এমনি একটি অদৃশ্য শক্তির (যিনি স্রষ্টা বা নিয়ন্তা) কল্পনা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সে বিরাট রহস্যময় অদৃশ্য শক্তির উপর শাসন ও বিচারের ভার কল্পনায় অর্পণ করে তাঁকে ভয়ঙ্কর করে তোলা হল। এভাবে প্রয়োজন মতো নানা বিশেষণে ক্রমাগত তাঁকে বিশেষিত করা হয়েছে। বলেছি এ ছাড়া উপায় ছিল না। কারণ নীতিকথায় মানুষের না ভরে পেট, না ভরে মন। আত্মরক্ষা ও আত্ম-প্রসারের জন্যে যখন যা প্রয়োজন তা বেপরোয়াভাবে আয়ত্ত করা জৈবধর্ম। কাজেই সমাজবদ্ধ মানুষকে সংযত রাখার প্রয়োজনে কল্যাণকামী চিন্তাশীল ব্যক্তি অনুভব করলেন–শাসনশক্তি বা নিয়ন্ত্রণশক্তি চাই।

সে-শক্তির শাস্তিদানের ক্ষমতা চাই। জন্মিয়ে দেওয়া হল বিভীষিকাময় এক রুদ্র-শক্তির সংস্কার, যার ভয়ে দুর্বলচিত্ত মানুষ মরবার আগেই বারবার মৃত্যুর বিভীষিকা অনুভব করতে লাগল। মৃত্যু ভীষণ কিছু নয়, কিন্তু তার পরে আছে ভীষণ নরকাগ্নির যন্ত্রণা। এ যন্ত্রণার হাত থেকে নিষ্কৃতির একমাত্র পথ হচ্ছে ধর্ম নামের কোড মেনে চলা। এতেই পুণ্য সঞ্চয়ের প্রচেষ্টা। ছেলেরা ফেলের আশঙ্কা আছে বলেই পাস করবার জন্যে পড়ে, ফার্স্ট যে হয় তা আকস্মিক। ফেলের আশঙ্কা না থাকলে ফার্স্ট হওয়ার কথা দূরে থাক, পাস করার জন্যেই কেউ পড়ত না। দোজখের তিরস্কারের আশঙ্কা না থাকলে বেহেস্তের পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষায় আমরা একটা কানামাছিও তাড়াবার চেষ্টা করতাম না।

কিন্তু কোনো সংস্কার বা সম্পত্তি মৌরসী হয়ে গেলে তার সত্যিকার মূল্য সম্বন্ধে সবসময়ে সচেতন থাকা সম্ভবপর হয় না। এ কারণে মানুষের চিত্তের সবল মুহূর্তে পারলৌকিক জীবনের দুর্ভোগের দুশ্চিন্তা বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। প্রাণধর্মী শক্তিমান লোকের অসংযত সম্ভোগের বেপরওয়া হামলা অন্যান্যদের পীড়নের কারণ হয়ে উঠল। আর এদের শায়েস্তা ও সংযত রাখবার জন্যে বারবার নতুন করে সেই আদিম অদৃশ্য রুদ্রশক্তির দোহাই ধ্বনিত হয়ে উঠতে লাগল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে ও পরিবেশে সমস্যানুযায়ী নতুন নতুন বিধিব্যবস্থা জারি হয়ে চলল, আজও বিরাম হয়নি তার। কেননা শাস্তির শঙ্কাহীন সবল মনুষ্যচিত্তের অসংযত বৃত্তি বিলাসের সীমা নেই, শেষ নেই। স্পষ্ট বোঝা যায় ধর্মের বিধিনিষেধের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কর্তব্য নির্দেশ করা। যেমন মিথ্যা বলা পাপ, কারণ তাতে যে-কোনো একজন বা একাধিক মানুষের ক্ষতি হয়; চুরি করা পাপ, কারণ তাতে যে-কোনো একজন বা একাধিক লোকের দুর্দশার কারণ ঘটে। এরূপে হত্যা করা, দান না করা, সুদ খাওয়া, ঘুষ নেওয়া প্রভৃতি অপরের ক্ষতিকারক সর্বপ্রকার কাজ হচ্ছে অন্যায় বা পাপ। এজন্যেই পরলোকে দোজখে বসতি অনিবার্য। দেখা গেল এতে খোদার কোনো ক্ষতি-বৃদ্ধি হয় না। এক কথায় মানুষের প্রতি অন্যায় আচরণের মধ্যেই পাপ। মানুষ ফরিয়াদি হয়ে আল্লাহর দরবারে নালিশ জানায় বলেই অন্যায়কারী মানুষ অপরাধের শাস্তি ভোগ করে। সুতরাং পাপপুণ্য হচ্ছে মানুষের উপকার বা অপকার করার পুরস্কার ও তিরস্কার মাত্র–একটায় নরকের শাস্তি, অপরটায় স্বর্গের শান্তি। কিন্তু এ-যুগে ধর্ম আর মানুষকে ধরে রাখতে পারছে না। এ-যুগে আর কিছু প্রয়োজন।

তবু এদিক দিয়ে ইসলাম বিশেষভাবে বাস্তব, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম। সূরা ফাতেহা ছাড়া-যে নামাজ হয় না, তার কারণ ইসলামে আল্লাহর কাছে সেরাতুল মোস্তাকিম (সোজা পথ) প্রার্থনা করাই মানুষের একমাত্র ব্রত বলে নির্দেশিত হয়েছে। এ সেরাতুল মুস্তাকিম বা ঋজুপথ হচ্ছে অন্যায় বা পীড়ন-প্রেরণা বিবর্জিত পথ। এ পথে চললেই শুধু মানুষ নিজে বেঁচে থাকতে পারে ও অন্যকে বাঁচতে দিতে সমর্থ হয়। বস্তুত Live and let live-ই হচ্ছে ইসলামের মূল আদর্শ। তাই ইসলাম স্পষ্ট করেই বলে– তুমি যা নিজের জন্য পছন্দ কর না–তা তোমার ভাইয়ের জন্য কামনা করো না–অর্থাৎ যে-অন্যায় যে-পীড়ন তুমি নিজে ভোগ করতে চাও না, সে-পীড়ন সে অন্যায় অন্যের প্রতি করো না। অন্য কথায় বলতে গেলে দুনিয়ার প্রত্যেক মানুষ এমনিভাবে চলবে যাতে তার বিরুদ্ধে অপর কোনো মানুষের কোনো নালিশ না থাকে। তাহলেই সে নিষ্পাপ। ইসলাম এও উপলব্ধি করেছিল যে ভালো কথায় বা আদেশে কাজ হবার নয়, যদি না তা হৃদয়ঙ্গম করার শক্তি মানুষের জন্মে। তাই ইসলামে জ্ঞানার্জন বা বিদ্যাভ্যাস ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য।

.

০২.

সমাজবিরোধী বা অকল্যাণ-প্রসূ যে-কোনো কর্ম বা আচরণ ধর্মের চক্ষে পাপ (sin) সমাজের চক্ষে নিন্দনীয় (vice), আর আইনের চক্ষে অপরাধ (crime)। আল্লাহ চোখের সামনে নেই বলে মানুষ পাপ করতে কৃচিৎ দ্বিধা করে। সে ভয় করে লোকনিন্দাকে আর ত্রস্ত হয় আইনের শাস্তির শঙ্কায়। এজন্যে মানুষ মান বাঁচিয়ে ও গা বাঁচিয়ে গোপনে অন্যায়-অপকর্ম করে। শিক্ষাজাত আত্মসম্মানবোধ কিংবা সমাজে প্রতিষ্ঠাপ্রসূত মর্যাদা-চেতনা মানুষকে অনেক অপকর্মের প্রলোভন এড়িয়ে চলতে সহায়তা করে। তাছাড়া জ্ঞানার্জনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ধীশক্তি, বিবেচনাসামর্থ্য ও তীক্ষ্ণ আত্মমর্যাদাবোধ জাগে। ইসলাম এও বুঝে যে প্রবৃত্তিপরবশ মানুষকে লোকান্তরের শাস্তির ভয়ে শায়েস্তা রাখা সম্ভব নয়। তাই জ্ঞানার্জনের জন্য এমনি তাগিদ। আমরা দেখেছি নরকাগ্নির ভয় মানুষের চরিত্র শোধনে যত না সহায়তা করে, তার চেয়ে ঢের বেশি এ ব্যাপারে কার্যকর হয়। আত্মমর্যাদাবোধ। কারণ আত্মমর্যাদাবোধ থেকে কর্তব্যবোধ জাগা স্বাভাবিক। আল্লাহ অন্তর্যামী; মানুষের কোনো ভাব, ইচ্ছা বা কার্য আল্লাহর অগোচরে থাকে না–এ জেনেও প্রবৃত্তি বশে মানুষ। অসৎকার্যে লিপ্ত হয়। কিন্তু মানুষ মানুষকে ভয় ও সমীহ করে চলে নিন্দার আশঙ্কায়। এ নিন্দাভীরুক্ত শিক্ষাজাত আত্মমর্যাদাবোধের ফল। মানুষ মূলত সৌন্দর্যপ্রিয়, সচেতনভাবে সৌন্দর্যের সাধনা না করলেও অবচেতন মনে তা সর্বদাই করে থাকে। ফলে প্রশংসা পাবার বা ভালো সাজবার অর্থাৎ কথায়, কাজে ও চালে-চরিত্রে সুন্দর হওয়ার একটা সহজাত প্রবৃত্তি রয়েছে মানুষের। পাছে লোকে নিন্দা করে এ ভয়ে মানুষ দুষ্কর্ম গোপনেই করে।

ফলে আমরা চুরি করি না নিন্দার ভয়ে, মিথ্যা বলি না অপরের শ্রদ্ধা হারাবার আশঙ্কায়। মা বাপের সেবাযত্ন করি অপরের নিন্দার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্যে। পুকুরে কচুরী জন্মাতে দিই না রুচিহীন বলে অন্যে নিন্দা করবে বলে। ঘর-দোর, পোশাক-পরিচ্ছদ, ছেলে-মেয়ে যথাসম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখি সুরুচির পরিচয় দেবার জন্যে, (স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের নির্দেশে নয়)। এরূপ নানাপ্রকার ব্যক্তিগত ও সামাজিক শৃঙ্খলা মেনে চলি শুধু শিক্ষাসূত্রে যে-আত্মমর্যাদাবোধ জেগেছে তা রক্ষা করবার প্রয়োজনে। সুতরাং দেখা গেল দান-ধর্ম, সুরুচিসম্মত আচার-ব্যবহার, আত্মীয়-স্বজনের প্রতি কর্তব্যবোধ, সততা-ন্যায়পরায়ণতা প্রভৃতি যতকিছু আমরা মেনে চলবার চেষ্টা করি সবকিছুই আমাদের শিক্ষাজাত মর্যাদাবোধ থেকেই এসেছে। এতে ধর্মবিধির মূল উদ্দেশ্য সহজেই সফল হয়, যা পারলৌকিক শাস্তির ভয়েও সম্ভব হয়নি। য়ুরোপে আজকাল চুরি রাহাজানি ঘুষ অত্যাচার প্রভৃতি অনেক প্রকার অপরাধই আর বিশেষ দেখা যায় না–তার মূলে রয়েছে শিক্ষাজাত মর্যাদাবোধ। রাশিয়ায় বা চীনে দুর্গত মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা ও দরদ জেগেছে, তাও শিক্ষাজাত বিবেচনা ও মর্যাদাবোধ জাত কর্তব্যবোধের ফলে উদ্ভূত। কেননা যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা সবাই সর্বহারা নন।

সুতরাং ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রিক জীবনবোধের জন্যে মানববিদ্যা শিক্ষাদান ও গ্রহণ অপরিহার্য। এছাড়া মানুষের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের আর দ্বিতীয় পথ নেই। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বা সাধারণভাবে আজকের দুনিয়ায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষায় পয়সা বেশি। সে কারণে সামাজিক মর্যাদা ও প্রতিষ্ঠা অধিক। সুখ ও আরামের লোভে দেশের সবচেয়ে মেধাবী ও মনীষাসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা ও তাদের অভিভাবকরা বিজ্ঞান ও প্রকৌশল-বিদ্যা কামনা করেন। মানববিদ্যা তাদের অবহেলা পাচ্ছে। ফলে দেশে মননশীল সমাজবিদ ও সংস্কৃতিবান মনীষীর অভাব ঘটছে। তাঁদের মনীষা থেকে বঞ্চিত হলে সমাজের ও সংস্কৃতির বিকাশ মন্থর বা রুদ্ধ হওয়ারই কথা।

বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যা মানুষের ব্যবহারিক জীবনের প্রয়োজন মিটায়। কিন্তু যে নৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আদর্শ ও মূল্যবোধের উপর সমাজবদ্ধ মানুষের মনুষ্যত্ব তথা জীবনবোধ প্রতিষ্ঠিত, তার সম্যক পরিচর্যা ও উন্নয়ন না হলে মানুষ কী নিয়ে বাঁচবে! মনের ঐশ্বর্য না থাকলে প্রাণের পরিচর্যার কী সার্থকতা! মানুষের জীবনের সব সমস্যাই মানসিক। আজকের দুনিয়ায় দরদী মনীষীর প্রয়োজন তাই সবচেয়ে বেশি। কেননা মানববিদ্যার বিকাশ না হলে মানুষের মানস-জগৎ প্রসার লাভ করে না। মানুষের সভ্যতার ও সংস্কৃতির বিকাশের মূলে রয়েছে এই মানববিদ্যা। ইতিহাস-দর্শন-সাহিত্য-শিল্প প্রভৃতিই মানুষের মনের হীনতা, সংকীর্ণতা, অজ্ঞতা ও অসূয়া অসহিষ্ণুতা ঘুচিয়ে বৃহৎ ও মহৎববাধের জীবনে উত্তরণ ঘটিয়েছে। প্রজ্ঞা, প্রেম ও কল্যাণবুদ্ধির উৎস তো এই মানববিদ্যাই। যন্ত্রীর মন যদি কল্যাণকামী না হয়, তবে যন্ত্র কখনো কল্যাণপ্রসূ হতে পারে না। আজকের পৃথিবীতে মনের পরিচর্যার প্রয়োজন তাই আরো বেশি। কেননা যন্ত্র ও যান্ত্রিকতা মনুষ্যজীবনের বিরুদ্ধে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুনিয়া জুড়ে মানবতার এতবড় বিপদ আগে কখনো দেখা দেয়নি। তাই আজ হাজার হাজার ইতিহাসতত্ত্ববিদ, সমাজতত্ত্ববিদ, দার্শনিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিক ও মানবতাবাদীর প্রয়োজন।

কয়েক বছর আগে আমাদের শিক্ষালয়ে বিজ্ঞানের ছাত্রদের সভ্যতার ইতিহাস এবং কলাবিভাগের ছাত্রদের বিজ্ঞানের ইতিবৃত্ত পড়ানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। এতে বিজ্ঞানের ছাত্ররা জীবন, দেশ, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে পারত এবং এদের মধ্যে যারা মেধা ও মনীষার অধিকারী তাদের চিন্তার দানে ও নেতৃত্বে মানবিক সমস্যার সমাধান এবং সমাজ-সংস্কৃতির উন্নয়ন সম্ভব ও সহজ হত। কিন্তু এ ব্যবস্থা আবার রহিত হয়ে গেল। ফলে দেশের উৎকৃষ্ট মানস শক্তির অপপ্রয়োগ ও অপচয় রোধ করার আর উপায় রইল না।