ভাষার কথা

ভাষার কথা

কাছের মানুষকে আভাসে-ইঙ্গিতে মনের কথা–কাজের কথা হয়তো বুঝিয়ে দেয়া যায়, কিন্তু দূরের মানুষকে–ভবিষ্যতের মানুষকে–কাজের কিংবা মনের কথা কীভাবে বলা যায়? এ সমস্যা একদিন মানুষকে বিব্রত করেছে। এর সমাধান পেয়েছে মানুষ মুখ-নিঃসৃত ধ্বনি সৃষ্টি করে।

সেই আদিকালে এক জায়গার বা এক গোত্রের মানুষ মিলে চুক্তি করেছে, অতঃপর বিশেষ বিশেষ ধ্বনি দ্বারা বিভিন্ন বস্তু বা ভাব কিংবা আচরণ নির্দেশিত হবে। যেমন গরু বললে এক বিশেষ জীবকে বুঝব, ঘাস ধ্বনিতে বিশেষ বস্তুকে নির্দেশ করব, সুন্দর ধ্বনি দিয়ে এক বিশেষ ভাব ব্যক্ত করব, খাব বলে এক বিশেষ উদ্দেশ্য জানিয়ে দেব। এভাবে মানুষের ভাষা সৃষ্টি হল।

তাহলে ধ্বনি আসলে বোবা। মানুষের অভিপ্রায়ই তাকে অর্থ দান করে। ধ্বনিগুলোর অর্থবহতা একান্তভাবে স্থানিক বা গোত্রিক চুক্তি-নির্ভর। এইজন্যেই দুনিয়াতে এত ভাষা এবং একের ভাষা অপরের অবোধ্য। যে-লোক যে-ভাষাতে জন্ম থেকেই চুক্তিবদ্ধ হয়, সে-ভাষাই তার মাতৃভাষা। সে-ভাষা তার দেহের রক্তমাংসের মতোই একান্ত নিজের। আমরা যা কিছু অনুভব করি, যা কিছু ভাবি, তা এই ভাষার মাধ্যমেই হয়। কাজেই ভাষা হচ্ছে জীবনানুভূতির বাহন, বেশি করে বললে বলতে হয়, ভাষাই জীবন। তাহলে মাতৃভাষা থেকে বিচ্যুত হওয়া মানে অনেকাংশে জীবনকেই খণ্ডিত করা, ক্ষুদ্র করা, হয়তোবা ব্যর্থ করা। কচ্ছপকে উল্টিয়ে দিলে যেমন সে না চলতে পেরে আর না-খেতে পেয়ে মারা যাবে, তেমনি মানুষের মুখের ভাষা-ভাব-ভাবনার ভাষা কোনো কৌশলে ভুলিয়ে দিলে মানুষ হিসেবে তার অপমৃত্যু অনিবার্য।

এ-যুগে নয় শুধু, চিরকাল মানুষ অবচেতন মনে এ-কথা উপলব্ধি করেছে। তাই প্রত্যেকের স্ব স্ব ভাষা এত প্রিয়। তিনটে ধর্ম দুনিয়াময় পরিব্যাপ্ত হয়েছে : বৌদ্ধধর্ম, খ্রীস্টধর্ম এবং ইসলাম। বিজাতির ও বিদেশীর এসব ধর্ম মানুষ সাগ্রহে বরণ করে নিয়েছে; কিছু ধর্মের ভাষা কেউ নেয়নি, এসব ধর্মভাষা মন্দির, মসজিদ ও গীর্জার প্রাচীর পার হয়ে কারুর মুখের বুলি কিংবা মনের ভাষা হয়ে ওঠেনি এতকাল পরেও।

আগেই বলতে চেয়েছি, একটি বা একাধিক ধ্বনি-সমষ্টিতে হয় শব্দ, এবং শব্দের সঙ্গে শব্দের সুযোজনায় পাই ভাষা। ধ্বনি, শব্দ বা বাক্য বক্তার অভিপ্রায় অনুসারেই অর্থবহতা লাভ করে, নইলে ওগুলো বোবা। যেমন : খা, যা, ধূ, কৃ, হ প্রভৃতি প্রকৃতি বা ধাতুমূল বক্তার কোনো অভিপ্রায় নির্দেশ করে না, এগুলোর সঙ্গে বক্তার পরিচায়ক ও তার অভিপ্রায়-সূচক পুরুষ (Person), কাল ও ভাব (Mood) জ্ঞাপক চিহ্ন যুক্ত হলেই তা অর্থবহ শব্দ বা পদ হয়। তেমনি মানুষ শব্দের সঙ্গে বচন, লিঙ্গ, পুরুষ ও কারক চিহ্ন যোগ করলেই তা বক্তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করবার যোগ্য হয়। এতেও হয় না, বক্তার অভিপ্রায়-অনুগ কণ্ঠস্বরও উচ্চারিত ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হওয়া চাই, তা হলেই শব্দ বা বাক্য অর্থগ্রাহ্য হয়। লিখিত ভাষায় বিভিন্ন চিহ্ন যোগে এবং পৌর্বাপর্য সূত্রে এ অভিধা পাওয়া যায়, তাই আমরা বর্ণ-নির্ভর ভাষার অর্থ গ্রহণে সমর্থ হই। অর্থাৎ বক্তার উদ্দিষ্ট অভিপ্রায় বুঝে নিই। যেমন বিভিন্ন চিহ্ন যোগে একই শব্দের–আদেশ, নির্দেশ, অনুনয়, প্রশ্ন, বিস্ময় প্রভৃতি সূচক অর্থ পাই। একটি দৃষ্টান্ত দিই : যাও। যাও! যাও? যাও, ইত্যাদি চিহ্নযুক্ত যাও পদটি বিভিন্ন অর্থ-ব্যঞ্জনা দান করছে।

অতএব আমাদের পুরোনো কথায় ফিরে যেতে হয় : ভাষা হচ্ছে ভাবের বাহন। ভাবই আসল, ভাষা হচ্ছে আনুষঙ্গিক। ভাব থাকলে ভাষা আপনিতেই আসে। ভাব ও ভাষায় আধেয় আধার সম্পর্ক। আধারের পরিবর্তনে আধেয় আকৃতি বদলায়, প্রকৃতি হারায় না। অতএব ভাষা, গৌণ, ভাবই মুখ্য।

এই উক্তির সার্থকতা ইসলামের ইতিহাসেও পাই। নবলব্ধ ইসলামি ধ্যান-ধারণার প্রভাবে, আরবি ভাষা পুরোনো কলেবরে নতুন অভিধা লাভ করে। এভাবেই আগুন-পূজক ইরানির ভাষা হয় ইসলামি। তারা আরবের ধর্ম নিল, কিন্তু নিজের ভাষা রাখল। তাই ইসলামের মৌল শব্দগুলোরও নিজেদের ভাষায় তর্জমা হল, তাতেই আরবের আল্লাহ, সালাৎ, সিয়াম, মক ও জান্নাত শব্দগুলো। ইরানে হল খোদা, নামায, রোযা, ফেরেস্তা আর বেহেস্ত।

এমনিই হয়। মাতৃভাষায় তর্জমা না হলে কোনো কথাই,–কোনো ভাব-ভাবনাই মনের কথা–প্রাণের কথা হয়ে ওঠে না। তাই তর্জমার প্রয়োজন ও আয়োজন। তাই ইসলামি ভাষা বলে। স্বীকৃত আরবি, ইরানি ও উর্দু ভাষায় লিখিত কেতাব তথাকথিত হিন্দুর ভাষা বাংলায় অনুবাদের প্রয়াস। আমরা তর্জমা করি, কেননা আমরা জানতে চাই, বুঝতে চাই। আমরা রচনা করি, কারণ আমরা নিজেদের জানাতে চাই, বোঝাতে চাই। অতএব, আমাদের শ্রদ্ধেয় ইসলামি ভাষাতে– আমাদের অভিপ্রায় পূর্ণ হয় না, উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় না। তাই বিজাতির ও বিধর্মীর ভাষা বলে মেনে নিয়েও পবিত্র ইসলামের বাণী, মুসলিম-মনীষার ফসল নাপাক মাতৃভাষার মাধ্যতে পেতে চাই। নইলে হৃদয়ঙ্গম হয় না যে! তাহলে আমাদের উদ্দেশ্য ইসলামের বাণী ও বুলিকে পবিত্র রাখা নয়, মাতৃভাষার মাধ্যমে পরিপাক করা। কাজেই ভাষার ইসলামিরূপের কথা এক্ষেত্রে উঠানই। নিরর্থক।

আর একটি কথা বলেছি, আমরা কথা রচনা করি; কেননা আমরা যা ভাবি, যা জানি তা অপরকে জানাতে চাই, অপরের হৃদয়-মনে সঞ্চারিত করে দিতে চাই। সে কী শুধু মুসলমানকে? সে কী কেবল স্বদেশবাসীকে? যদি বিশ্ববাসীকেও তা জানাতে চাই, তা হলে আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের আচারিক ও আনুষ্ঠানিক ইসলামের কথা আর কেউ শুনতে চাইবে না, তার বিশ্বজনীন মর্মবাণীই কেবল অপরকে আকৃষ্ট করবে। এর তাজা প্রত্যক্ষ প্রমাণ য়ুরোপ। সচেতন বা অচেতনভাবে আমরা প্রতিমুহূর্তে য়ুরোপ থেকে মানস-খাদ্য গ্রহণ করছি, কিন্তু কিরিস্তানীকে সযত্নে পরিহার করি–এড়িয়ে চলি। অথচ ভাব-জগতে যা কিছু য়ুরোপের দান–তার কতকাংশ নাস্তিক্যজাত হলেও অধিকাংশ আস্তিক্য বুদ্ধির ফল। সে-আস্তিক্য বুদ্ধি নিশ্চয়ই খ্রীস্ট-মত ভিত্তিক। তাদের আচারিক ও আনুষ্ঠানিক ধর্মবোধ ছাপিয়ে যা বিশ্বজনীন রূপ নিয়েছে, অর্থাৎ যা সর্ব-মানবিক হয়ে উঠেছে, তা-ই আমাদের গ্রহণযোগ্য হয়েছে, তাতেই আমাদের অধিকার বর্তেছে। অতএব, বিশ্বজনীন মানবিক আবেদন সৃষ্টি করতে হলে আমাদের ইসলামি ভাব ও বাণীকে অপরূপ করে তুলতে হবে, কেননা আগেই বলেছি স্কুলস্বরূপে তা অমুসলিমের শ্রদ্ধা পাবে না। এজন্যে আমাদের লক্ষ্য হবে-Form-এর পরিচর্যা নয়, Spirit-এর প্রতিষ্ঠা।

 আবার বলছি, শব্দ হল ভাষা-সৌধের–বাক্য-দেহের বোবা উপাদান। বক্তা বা লেখকের অভিপ্রায় অনুযায়ী তা অভিধা পায়। এজন্যে প্রয়োগভেদে শব্দ অর্থান্তর লাভ করে। যেমন, গৌরব স্নেহ–pride, শ্রদ্ধা–ইচ্ছা, আকর্ষণ–respect, গঙ্গা–গঙ্গানদী, গাঙ–যে-কোনো নদী, যবন—Ionian-মুসলমান, পাষণ্ড-ধর্মসম্প্রদায়-দুবৃত্ত। এরূপ পঙ্কজ, গোপাল, করী। এছাড়া শব্দের একাধিক অর্থ তো রয়েইছে। যে-কোনো ভাষা সম্বন্ধে একথা সত্যি! আবার ভাব-বিবর্তনে অর্থাৎ নতুন ভাব-চিন্তার অনুপ্রবেশের সাথে সাথে বাক্‌-ভঙ্গিও বদলায়। ভাষা ও ভঙ্গি যে একান্তভাবে বক্তা বা লেখকের মনোভঙ্গির অনুগ, তার বিশিষ্ট প্রমাণ রবীন্দ্রনাথের রচনা। রবীন্দ্রনাথও পয়ার-ত্রিপদীতে কবিতা লিখেছেন, কিন্তু রূপে-রসে আগের ও তার সমকালের অনুরূপ কবিতার সঙ্গে এদের পার্থক্য কত! কথায় বলে Style is the man. তাই ব্যক্তিক-ভঙ্গিই সাহিত্যে বৈচিত্র্য আনে। আর ব্যক্তিক ভঙ্গি বিশিষ্ট হয় কেবল তখনই, নতুন ভাব-চিন্তার বীজ উপ্ত হয় যখন বক্তার মনোভূমে।

মানুষের মনন-চিন্তন নিত্য বিকাশমান। কাজেই তার নতুন ভাব-চিন্তা ধারণে সমর্থ পুরোনো শব্দগুলো স্ব-অর্থে টিকে থাকে, অন্যগুলো হয় বাদ পড়ে, নয়তো পুরোনো দেহে নব অভিধা নিয়ে বেঁচে থাকে। এতেও কুলোয় না, তাই অর্থগর্ভ ও ব্যঞ্জনাবহ নতুন নতুন শব্দ তৈরি হয়। সৃষ্টি প্রতিভা-সাপেক্ষ, তাই প্রয়োজনে উদ্দিষ্ট ভাব-বাহী শব্দ অপর ভাষা থেকে ধার নিতে হয়। এভাবে সৃজনে এবং ঋণে-ঋথে ভাষা পুষ্টি ও সমৃদ্ধি পায়। সভা করে এ গ্রহণ, বর্জন ও সৃজন চলতে পারে না। সৃষ্টির মুহূর্তে স্রষ্টার মন্ময় গরজেই তা সম্ভব হয়। শব্দের এই অভিধা, বিবর্তন ও শব্দ সৃষ্টির জগৎ এক বিচিত্রলোক। ব্যক্তির ভাব-চিন্তার ও অনুভূতি-উপলব্ধির মানস-সত্তার সংস্পর্শে শব্দ প্রাণময় ও বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। এ অনুভূত সত্য, কিন্তু অনির্বচনীয়। এ রহস্য একদা ভারতীয় ঋষিদের চমকে দিয়েছিল, তাই বিস্ময়-বিমুগ্ধ ঋষি-মুখে উচ্চারিত হয়: বাক্ ব্ৰহ্ম–শব্দই ব্রহ্ম। শব্দের অবয়বে মানুষের ভাব-সত্তা যে জীবন্ত মূর্তি পায়, এবং সুবিন্যস্ত শব্দ যে অসামান্য শক্তির আধার হয়ে ওঠে, আর এজন্যেই বাক যে জীবন-নিয়ন্তা ব্রহ্মস্বরূপ, তা ঋষিদের মন্ত্রদ্রষ্টা খ্যাতি থেকেই বোঝা যায়। গুঞ্জন ও মুখরতাতেই বাক্য-বদ্ধ শব্দের পরিচয়–বাক্যই মানসকে মূর্তি দেয়, ভাবকে দেয় মুক্তি–এভাবে বাথুদ্ধ হয় মানুষের আন্তসত্তা, ফুটে ওঠে জীবনের প্রতিচ্ছবি। ফলে। ভাষা অনুভূত-জীবনকে দেয় মূর্তি আর জীবনানুভূতিকে দেয় মুক্তি। এবং জীবন হচ্ছে জাগ্রত মুহূর্তের কতগুলো অনুভূতির সমষ্টি। তাই বলেছিলাম যেহেতু ভাষাই বোধের বাহন, ভাষাই জীবন।

দুটো কারণে শব্দের সৃজন ও ঋণ গ্রহণ চলে : নতুন ভাব-চিন্তার উদ্ভাবনে এবং বস্তুর আবিষ্কারে। স্বদেশে যদি নতুন ভাব-চিন্তার উদ্ভব বা উন্মেষ হয়, কিংবা নতুন বস্তু তৈরি বা আবিষ্কৃত হয়, তা হলে নিজের ভাষাতেই সে-মনন প্রকাশক বা সে-বস্তু নির্দেশক শব্দ তৈরি হয়। আর যদি বিদেশী ভাব বা বস্তু নেয়া হয়, তা হলে প্রাসঙ্গিক বিদেশী শব্দকে নিজের ভাষায় ঠাঁই দিতেই হয়। একে রোধ করতে যাওয়া যেমন নিরর্থক, এ-গরজ ছাড়া বি-ভাষার শব্দ আনার অপচেষ্টাও তেমনি অসার্থক।..

সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে। সবল পরাক্রান্ত আর দুর্বল সন্ত্রস্ত। সবল জানতে চায়, জানাতে চায়, সে বুঝতে উৎসুক আর বোঝাতে প্রয়াসী। সে দিকে-দিকে নিজেকে ছড়িয়ে দেয়ার অভিলাষী, ব্যাপ্তিতেই তার আনন্দ, তার জীবনোল্লাস, তার আরাম। তাই মানুষের মানসোল্লাস আজ গ্রহে-গ্রহে জীবন ও জীবিকার প্রসার খুঁজছে। দুর্বলের ধর্ম আত্মসংকোচন আর সবলের বিলাস আত্মবিস্তারে। দুর্বল Self-preservation-এ বা আত্মরক্ষায় ব্যস্ত, আর সবল Self-expansion-এ বা আত্মপ্রসারে রত। দুর্বল স্থবির, সবল চঞ্চল। একজন প্রাণহীনতায় অচল, অপরজন প্রাণপ্রাচুর্যে উল্লোল। দুর্বলের নিয়তি আত্মবিলোপে, সবলের তৃপ্তি আত্ম-উল্লাসে–মহিমার উজ্জ্বলতা সাধনে। আত্মার অপমৃত্যুতে দুর্বলের লয়, আর আত্ম-প্রতিষ্ঠায় সবলের জয়। তাই দুর্বলতা সমাজে ঘৃণ্য, আইনে অপরাধ ও ধর্মে পাপ।

 আমরা রেনেসাঁ-দীপ্ত জাগ্রত জাতি। আমাদের তো দুর্বলতা থাকার কথা নয়। তাহলে। আমাদের ডর কিসে, আমাদের ভয় কাকে? দ্বন্দ্বে ভীত হয় কারা? আমরা তো দুর্বল নই! আমাদের তো দেবার-নেবার পালা সবে শুরু হল! এ বেনে-যুগে মানস-বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়লে কিংবা তাল ঠুকে চলতে না জানলে আমাদের জান নিয়ে টানাটানি পড়বে, তাতে জান যদি বাঁচে মন নিশ্চিতই হারাব। আর কে না জানে, মন-হারানো জান-হারানোর চাইতেও ক্ষতিকর। উঠতির লক্ষণই হচ্ছে নির্ভীকতা, উদারতা, প্রাণময়তা, মুখরতা, জিজ্ঞাসা, কর্মনিষ্ঠা ও চিন্তা ভাবনার প্রবহমানতা। আমরা নতুন জাতি, আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মব্যাপ্তিই আমাদের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও ব্রত। এতকালের আত্মসংকোচন ও জড়তার গ্লানি মুছে আত্মপ্রসারে ব্রতী হওয়াই তো কাম্য।

যে-প্রসঙ্গে এ আবেগের বন্যা ছুটল, সে-কথাই বলি : বুতপরস্তের আরবি, আগুন-পূজকের ফারসি এবং পৌত্তলিকের উর্দু ভাষা-বিজ্ঞান মতে বাক্যরীতির (Syntax) ধরন দিয়েই ভাষার জাত বিচার হয়, এই দৃষ্টিতে উর্দু ভারতীয় আর্যভাষাভুক্ত] যদি ইসলামি ভাষায় পরিণত হতে পারে, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমানের ভাষা অবিকৃতভাবেই ইসলামি হতে বাধা কী? মুসলমানের মাতৃভাষা, মুখের বুলি হিন্দুয়ানি হতে পারে? আমরা না বলি–

চীন ও আরব হামারা
হিন্দুস্তা হামারা
মুসলিম হায় হাম
ওয়াতন হায় সারে জাহাঁ হামারা!