ভ্যাম্পায়ারের পদধ্বনি – ৯

নয়

লকারটা শূন্য। একদম ফাঁকা।

‘মনে হয় ওর লিজ শেষ হয়ে গেছে,’ বলল রবিন। কিন্তু আমি ঠাট্টাটা উপভোগ করতে পারলাম না। কারণ ক্রিস্টোফার পাইক জানে আমাকে কীভাবে, কোথায় খুঁজে পাবে!

দ্রুত ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম আমরা। পেডাল মেরে বাড়ি ফেরার পথে রবিন কিংবা আমি কেউই কোন কথা বললাম না। বলার মত কিছু ছিলও না। আমরা হেরে গেছি। গোহারা হেরে গেছি।

আমার বাড়িতে আগে গেলাম আমরা। বাবা-মা তখন মিনি-ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হেসে হাত নাড়ল তারা।

‘ওঁরা কোথায় যাচ্ছেন?’ প্রশ্ন করল নথি।

‘জানি না,’ বললাম। এসময় দেখতে পেলাম নেলি খালা দরজায় দাঁড়িয়ে, মিনি-ভ্যানটার উদ্দেশে হাত নাড়াচ্ছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম বাবা-মা কোথায় গেল।

‘প্রথমে ডিনারে, সেখান থেকে মুভি, তারপর নাচ,’ সন্তুষ্টির হাসি হেসে বললেন নেলি খালা।

বাবা-মা নাচতে যাবে! ভাবনাটা স্টোরেজে ভ্যাম্পায়ার থাকার মতই অদ্ভুত লাগল!

‘আমিই বলেছি তোমরা এনজয় করো, আমি মুসার সাথে থাকব। আমি একটা কবিতা লিখছি, ভাবলাম এই সুযোগে তোকে পড়ে শোনাই। এবার রবিনের দিকে চাইলেন। ‘তুমিও এসো না!’

ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। মুখ হাঁ। কথা ফুটছে না। শেষমেশ রবিন আমাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এল।

‘আণ্টি, মুসা আর আমি ঠিক করেছি সন্ধেটা আমার বাসায় কাটাব,’ বলল ও। ‘কাল আমাদের জ্যামিতি টেস্ট আছে তো।’

জোরাল অজুহাত।

‘ঠিক আছে, আগে পড়াশোনা। মুসা, তুই কখন ফিরবি?’

‘দেরি হবে। বড় পরীক্ষা কিনা। রবিনের বাসায় খেয়ে আসব।’

স্মিত হাসলেন নেলি খালা।

‘আচ্ছা। আমি তোর জন্যে কলিফ্লাওয়ার টেমপিউরা করে রাখব, পরে যদি তোর খিদে পায়।’ ভিতরে চলে গেলেন তিনি।

‘বড় বাঁচা বাঁচিয়েছ,’ রবিনকে বললাম। ওর বাসার দিকে রীতিমত ছুটছি আমরা।

‘ডোণ্ট মেনশন ইট,’ বলল রবিন। আমার বাহুতে আলতো ঘুষি মারল। আমি পাল্টা মারতে যেতেই ঝট করে সরে গেল।

বাকি বিকেলটায় অলস সময় কাটালাম দু’জনে। আণ্টি সত্যি সত্যি আমাকে ডিনার খেয়ে যেতে বললেন। আমরা খানিকটা পড়াশোনাও করলাম। আসলে সব কিছুই করলাম আমরা, শুধু ও ব্যাপারে কথা বলা ছাড়া।

ন’টার দিকে ভয়ানক ক্লান্তি বোধ করলাম, তাই বাড়ির দিকে চললাম। ক্লান্তি লাগারও কথা, কারণ দু’দিন ভাল ঘুম হয়নি আমার। গ্যারেজে বাইক রাখার সময় হাই তুললাম। সদর দরজা দিয়ে আলগোছে ভিতরে ঢুকে পড়লাম, আশা করলাম নেলি খালা টের পাবেন না। দেখলাম উদ্বেগের কারণ নেই। তিনি টিভির সামনে কাউচে শুয়ে। সাঙ্ঘাতিক ক্লান্তি লাগছে। নেলি খালাকে না জানিয়ে নিজের কামরায় গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ব ভাবলাম।

দাঁত ব্রাশ করছি এসময় ফোন বাজল। দৌড়ে গিয়ে ধরলাম। চাই না অ্যানসারিং মেশিনে চলে যাক।

‘আমান রেসিডেন্স,’ হাই চেপে বললাম।

‘মুসা? তুই?’

‘হ্যাঁ, নেলি খালা, আমি।’

‘তুই এখানে কী করছিস? তুই না ফোন করে বললি রাতে বন্ধুর বাসায় থাকবি? সেজন্যেই আমি বাইরে এসেছি। এখন ফোন করেছি কারণ তুই কোথায় আছিস তা তোর বাবা-মাকে নোট লিখে জানাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভুলে গেছি। তাই এখন অ্যানসারিং মেশিনে একটা মেসেজ রাখতে চাই। অথচ এখন দেখতে পাচ্ছি বাড়িতে তুই একা।’

‘নেলি খালা, অসুবিধে নেই,’ হাই তুলে বললাম। ‘আমি একা কোথায়, তুমি তো—’

হঠাৎই জমে গেলাম আমি। হাত থেকে মেঝেতে খসে পড়ল রিসিভারটা। বুক থেকে হুশ করে দম বেরিয়ে গেছে যেন। শ্বাস নিতে পারছি না। এতটাই অবসন্ন আমি, রিসিভারটা যখন তুলে নিলাম মাথা কাজ করছে না।

আমি একা কোথায়, বলতে যাচ্ছিলাম, তুমি তো আছ এখানে। কিন্তু নেলি খালা একই সঙ্গে কীভাবে কাউচে ঘুমোন আবার বাইরে থেকে ফোনে আমার সঙ্গে কথা বলেন?

কাউচের দিকে চাইলাম। নেলি খালার দেহ ধীরে-ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। উনি চোখ মেলে আমার দিকে চাইলেন।

চোখের পাতাগুলো রক্তলাল!

‘কীরে?’নেলি খালার কণ্ঠ কবরের বাসিন্দাদের মত। আর্তচিৎকার ছাড়লাম আমি।