নেকড়েমানুষ – ৯

নয়

সবাই ছুটে গেল মুসা আর নেকড়েমানুষের কাছে।

‘ভাল দেখিয়েছ, মুসা,’ সপ্রশংস কণ্ঠে বলল কিশোর। মুসাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করল। এবার র‍্যাম আর কিশোর নেকড়েমানুষকে মাটি থেকে তুলে শক্ত করে ধরে রাখল।

‘এখন দেখা যাক কে এই নেকড়েমানুষ,’ বলল কিশোর।

‘এক মিনিট!’ বনভূমি থেকে চেঁচিয়ে উঠল কে যেন। স্যাম। কয়োটি পলের সঙ্গে হেঁটে আসছে সে। কয়োটি পলের বগলের তলায় ধাতব বাক্সটা। ওরা পৌঁছে যেতেই, র‍্যাম হাত বাড়িয়ে খুলে নিল নেকড়েমানুষের লোমশ মুখোশটা।

‘গ্লেন টার্নার!’ র‍্যাম আর স্যাম একসঙ্গে বলে উঠল।

‘হ্যাঁ,’ বলল কিশোর।

‘কিন্তু কেন?’ র‍্যামের প্রশ্ন।

‘প্রশ্নটা করো পেছন থেকে যে কলকাঠি নেড়েছে তাকে,’ বলল জিনা। ও আর রবিন ভিড়ের মধ্যে সঙ্গে করে নিয়ে এল মার্থা টার্নারকে।

‘আমার কোন অনুশোচনা নেই,’ বলল মার্থা। ‘আমি গ্লেনকে দিয়ে হর্সশুগুলো চুরি করিয়েছি যাতে আমরা নিজেরাই রানশটা কিনে নিয়ে কয়েকটা ওয়াইল্ড ওয়েস্ট রেস্টুরেন্ট শুরু করতে পারি। আমাদের তা হলে আর টাকার চিন্তা থাকত না।’

‘কিন্তু তোমরা জানলে কীভাবে মার্থা আর গ্লেন এসবের হোতা?’ ছেলে-মেয়েদেরকে জিজ্ঞেস করল র‍্যাম।

‘প্রথমে বুঝিনি,’ জবাবে বলল কিশোর। ‘স্যাম ছিল আমাদের প্রথম সাসপেক্ট।’

‘কিন্তু আমরা এটা জানতাম ও ওর যমজ ভাইয়ের কোন ক্ষতি করবে না,’ বলল রবিন। ‘যতই মতবিরোধ থাকুক না কেন।’

‘তারপর কয়োটি পল হয়ে ওঠে আমাদের প্রধান সাসপেক্ট,’ বলল জিনা। ‘কারণ দিনের পর দিন সবাইকে নেকড়েমানুষের ভয় দেখিয়েছে।’

‘এবং রানশটা সে নিজে চালাতে চায় এ ব্যাপারটাও গোপন করার চেষ্টা করেনি,’ যোগ করল কিশোর।

‘কিন্তু তোমরা অন্য আর কী-কী কু খুঁজে পেয়েছিলে?’ র‍্যামের প্রশ্ন। ‘ভাঙা মূর্তির পাশে পাওয়া ডেনিমের টুকরো আর হাতুড়িটার মত।’

‘ওগুলো রাখা হয়েছিল যাতে আমরা মনে করি কয়োটি পলই নেকড়েমানুষ,’ বলল জিনা। ‘হাতুড়িটা ভাল করে লক্ষ করে দেখুন।

জিনা হাতুড়িটা র‍্যামের হাতে দিল। ও আর স্যাম তীক্ষ্ণ চোখে জরিপ করল ওটা।

‘এটা হর্সশু হাতুড়ি নয়,’ বলল স্যাম।

‘ঠিক,’ বলল নথি। ‘এটা একটা মিট টেণ্ডারাইযার। বড় ধরনের বার্বিকিউয়ের জন্যে রাঁধুনী যেমনটা ব্যবহার করে আরকী।’

‘তবে সবচেয়ে বড় কুটা পাই,’ বলল জিনা, ‘যখন নেকড়েমানুষের পায়ের ছাপ ফলো করে ট্রী হাউসটা খুঁজে পাই আমি।’

‘আমিও পায়ের ছাপগুলো ফলো করি,’ পল বলল। ‘সেখানেই নকল হর্সশু ভরা বাক্সটা খুঁজে পাই।’

‘আজকের আগে মাত্র দু’জন মানুষ পুরানো ট্রী হাউসটার কথা জানত: আমি আর গ্লেন টার্নার,’ বলল কিশোর। ‘তার কারণ ছোটবেলায় আমরাই সিক্রেট হাইডআউট হিসেবে ওটা বানিয়েছিলাম।‘

স্যাম ঘুরে দাঁড়াল করোটি পলের দিকে।

‘রাজাতোমাকে সন্দেহ করার জন্যে আমি দুঃখিত, পল, বলল স্যাম।

‘এবং হর্সশুগুলো উদ্ধার করার জন্যে তোমাকে ধন্যবাদ, যোগ করল র‍্যাম।

এবার স্যাম আর র‍্যাম উল্টো ঘুরে মার্থার দিকে চাইল।

তোমার কোন সাফাই থাকলে বলতে পারো, বলল র‍্যাম।

‘আমি ঠিকই পার হয়ে যেতাম,’ বলল মার্থা, যদি না এই বিচ্ছুগুলো আর কুকুরটা নাক গলাত।

কয়োটি পল গ্লেনের নেকড়ের পোশাক চেপে ধরে টেনে নিয়ে গেল। স্যাম অনুসরণ করল মার্থাকে নিয়ে।

‘তোমাদের সাহায্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ, বলল র‍্যাম। ‘তোমরা রানশটাকে বাঁচিয়ে দিলে। তোমাদের জন্যেই স্যাম আর আমি বুঝতে পেরেছি এক টুকরো জমির চাইতে পরিবারের বাঁধন অনেক বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। এখন রানশটাকে টিকিয়ে রাখতে এমন একটা বুদ্ধি বের করতে হবে যাতে দু’জনেই খুশি থাকি।’

পরদিন, ছেলে-মেয়েরা রওনা দেয়ার জন্য ভ্যানে উঠল। রানশ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, জানালা দিয়ে বাইরে চাইল মুসা।

‘অ্যাই, দেখো, দেখো!’ বলে উঠল ও। কিশোর ভ্যানটা থামাল। কয়োটি পল রানশটাকে পাহারা দেয়ার জন্য নতুন এক মূর্তি খোদাই করছে। কিন্তু ধূসর নেকড়ের বদলে ওটা রাফির বড়সড় এক কাঠের মূর্তি।

খুশিতে ঘেউ-ঘেউ করে ডাক ছাড়ল রাফি। হাত নাড়ল পল। সবাই হেসে উঠল। ভ্যান এগিয়ে চলল তার গন্তব্যের