নেকড়েমানুষ – ৬

ছয়

কিশোর আর রবিন বাঙ্কহাউসের উদ্দেশে হাঁটছিল, এসময় জঙ্গল থেকে একটা গুড়-গুড় শব্দ ভেসে এল।

‘বাঁচাও! বাঁচাও!’

‘মুসার গলা মনে হচ্ছে!’ উত্তেজিত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল রবিন।

মুখ তুলে চাইতেই ওরা দেখতে পেল গুঁড়িটা পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নেমে আসছে। কাঠের বেড়ার নীচ দিয়ে গড়িয়ে থামল ঠিক করালের মাঝখানে।

‘ওরা মনে হয় ভেতরে আছে! এসো, রবিন,’ জরুরি কণ্ঠে বলল কিশোর। গুঁড়িটার কাছে দৌড়ে গেল ওরা।

‘মুসা? রাফি? তোমরা ঠিক আছ তো?’ রবিন জিজ্ঞেস করল। মুসা আর রাফি ধীরে-ধীরে গুঁড়িটার ভিতর থেকে গুড়ি মেরে বেরিয়ে এল।

‘খাইছে, এখন বুঝতে পারছি—ওয়াশিং মেশিনের ড্রায়ারে দিলে আমার কাপড়-চোপড়ের কী দশা হয়,’ বলল মুসা। ‘রাফি, তুই ঠিক আছিস?’

ঘেউ করে উঠে সায় জানাল রাফি। উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরল। কিন্তু সোজা হাঁটার বদলে ক্রমাগত ঘুরছে। গুঁড়ি ভ্রমণের ফলে মাথা ঝিমঝিম করছে বেচারীর।

‘তোমাদের দু’জনের কী হয়েছিল?’ প্রশ্ন করল কিশোর। ‘আর জিনা কোথায়?’

‘এই তো এখানে, পিছন থেকে বলে উঠল জিনা। ওরা সবাই ঘুরে দাঁড়াল।

ঘেউ-ঘেউ করে জিনাকে স্বাগত জানাল রাফি। টলতে-টলতে জিনার কাছে যেতে চাইল পা চেটে দেয়ার জন্য। কিন্তু মাথা যেহেতু বনবন করে ঘুরছে, জিনার পাশ দিয়ে হেঁটে গিয়ে একটা খুঁটি চাটতে লাগল।

‘খাইছে, আমরা ভেবেছিলাম নেকড়েমানুষ তোমাকে ধরে ফেলেছে,’ বলল মুসা।

‘আমি ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছিলাম, তাই আমাকে খুঁজে পায়নি,’ বলল জিনা। ‘সাহায্যের জন্যে যখন এখানে ফিরে আসছি, তখন নেকড়েমানুষের ট্র্যাকগুলো আবার চোখে পড়ে। ওগুলো ফলো করে একটা ক্লু খুঁজে পাই আমি।’ এক টুকরো ছেঁড়া ডেনিম কাপড় বাড়িয়ে ধরল ও।

‘খাইছে, নেকড়েমানুষের গায়ে এরকম শার্টই ছিল,’ বলল মুসা। ‘তবে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো কোথায় এই কাপড়ের টুকরোটা পেয়েছি,’ বলল জিনা।

‘কোথায়?’ প্রশ্ন করল কিশোর।

ট্র্যাকগুলো ফলো করে জঙ্গলের গভীরে এক পুরানো ট্রী হাউসের খোঁজ পাই আমি,’ জবাবে বলল জিনা। ‘তোমরা কী পেলে?’ কিশোর আর রবিনকে জিজ্ঞেস করল।

‘আমরা নেকড়ের মূর্তিটা চেক করেছি,’ জানাল কিশোর। ‘স্যাম ঠিকই বলেছিল। একেবারে চুরমার হয়ে গেছে ওটা।’

‘তবে আমরা অন্য একটা জিনিসও পেয়েছি,’ যোগ করল নথি। ‘মূর্তিটার চারপাশের ঝোপ-ঝাড়ে তল্লাশী করে এটা মিলেছে।’

কিশোর সবাইকে একটা পেল্লায় ইস্পাতের হাতুড়ি দেখাল। ‘হুম,’ বলল জিনা, চিবুকে আঙুলের টোকা দিল। ‘এরকম একটা হাতুড়ি কোথায় যেন দেখেছি।

‘হ্যাঁ, বলল কিশোর। ‘মনে হচ্ছে নেকড়েমানুষের খেল খতম হয়ে এসেছে।

‘ঠিক বলেছ,’ বলল জিনা। ‘একটা ফাঁদ পাতার সময় হয়েছে।’

‘খাইছে, আমি আবার নেকড়েমানুষের খেলার পুতুল হতে চাই না। যে গড়ান গড়িয়েছি, বাপ রে!’ আপত্তির সুরে বলল মুসা।

ঘেউ-ঘেউ করে ওর কথায় সায় জানাল রাফি।

ঠিক এসময়, র‍্যাম বাঙ্কহাউসের ভিতর থেকে বেরিয়ে এল। ওর ডান বাহু স্লিঙে ঝুলছে। ছেলে-মেয়েদেরকে করালে দেখতে পেয়ে ওদের কাছে হেঁটে এল।

‘ব্যথা কি খুব বেশি, র‍্যাম?’ প্রশ্ন করল কিশোর।

‘সামান্য টাটাচ্ছে,’ বলল র‍্যাম। ‘তেমন সিরিয়াস কিছু নয়।’ চারধারে চোখ বুলাল জিনা।

‘স্যাম কোথায়?’ প্রশ্ন করল।

‘জঙ্গলে তল্লাশী করছে,’ বলল র‍্যাম। ‘ও নিশ্চিত পল রয়েছে এসবের পেছনে। তোমাদের গোয়েন্দাগিরি কেমন চলছে?’

‘নেকড়েমানুষকে ধরার জন্যে একটা ফাঁদ পাতব ঠিক করেছি আমরা,’ জবাব দিল কিশোর। ‘এবং আমার ধারণা তোমার সাহায্য আমাদের কাজে আসবে।’

‘আমি যে কোন কিছু করতে রাজি,’ বলল র‍্যাম। ‘নেকড়েমানুষটার কথা ছড়িয়ে পড়লে আমাদেরকে এই রানশ বন্ধ করে দিতে হবে।’ ওকে বিষণ্ন দেখাল।

‘আমরা মুসা আর রাফিকে কনভিন্স করার চেষ্টা করছিলাম,’ বলল রবিন, ‘যাতে ওরা আমাদেরকে সাহায্য করে। এখন তো মনে হচ্ছে করবে, কি ঠিক না?’

রাফি ঠায় বসে রইল।

‘একটা স্ন্যাক দিলে করবি?’ জানতে চাইল জিনা।

রাফি সাড়া দিল না।

‘দুটো দিলে?’ প্রশ্ন করল জিনা।

রাফি মাথা ঘুরিয়ে নিল। ভাবখানা এমন যেন ওর কথা শুনতে পায়নি।

‘দুটো স্ন্যাক আর মার্থার স্পেশাল পিচ কবলার হলে কেমন হয়?’ র‍্যাম জিজ্ঞেস করল।

চোখজোড়া জ্বলে উঠল রাফির। ঘেউ-ঘেউ ডাক ছাড়ল। লেজ নেড়ে খুশিতে বার দুয়েক লাফিয়ে নিল।

‘রাফি, তুই রহস্যটার সমাধানে কাজ শুরু কর,’ বলল র‍্যাম। ‘আমি মার্থাকে বলছি পিচ কবলার বানানোর কাজ শুরু করুক।’

‘তারপর সবাইকে জড় কোরো,’ বলল কিশোর। ‘নেকড়েমানুষের রহস্যের কিনারা করতে তোমরা সবাই হেল্প করবে আমাদের।