নেকড়েমানুষ – ২

দুই

ছেলে-মেয়েরা ভ্যান থেকে বেরিয়ে এসে চারধারে চোখ বুলাল। পার্কিং এরিয়ার উল্টোদিকে বিরাট এক লালরঙা বার্ন। বার্নের পাশে, কাঠের নিচু বেড়া দিয়ে ঘেরা বিশাল এক ফাঁকা জমি। করালের ভিতরে ছোটাছুটি করছে ঘোড়ারা। নিঃসঙ্গ এক ষাঁড় দাঁড়িয়ে বেড়ার পাশে। করালের উল্টোপাশে লগ-কেবিন-স্টাইল এক বাঙ্কহাউস।

‘হাউডি, পার্টনার্স,’ বলে উঠল কেউ একজন। ওরা ঘুরে দাঁড়াতেই দেখতে পেল দু’জন লোক দাঁড়িয়ে। দু’জনের পরনেই কাউবয় পোশাক আর মাথায় কাউবয় হ্যাট। দু’জন দেখতে এতটাই একরকম যে আলাদা করে চেনা মুশকিল।

‘হ্যালো, কিশোর,’ বাঁ পাশের জন বলল। ‘অনেক বড় হয়ে গেছ!

‘পুট ‘আর দেয়ার, পার্টনার,’ অপরজন বলল। এগিয়ে এসে কিশোরের পিঠ চাপড়ে দিল। ‘অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছ, অনেক খুশি হয়েছি।

‘হাই, স্যাম, হাই, র‍্যাম,’ বলল কিশোর। ‘আমাকে আর আমার বন্ধুদের দাওয়াত দেয়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

‘তোমার বন্ধু মানে আমাদেরও বন্ধু,’ বলল স্যাম। কিশোর তোমাদেরকে বলেছে ছোটবেলায় এখানে ও সামারগুলো কীভাবে কাটিয়েছে? বয়, ও আর গ্লেন টার্নার কোন না কোন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তই।’

হঠাৎ লাল দেখাল কিশোরের মুখের চেহারা। বন্ধুদের দিকে ঘুরে চাইল ও।

‘তোমাদের সাথে স্যাম আর র‍্যাম এভারটনের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই,’ বলল। ‘ওরা লোন উলফ রানশের মালিক। আসলে ওদের পরদাদা একশো বছর আগে রানশটা তৈরি করেন।’

কিশোর বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াল।

‘এরা রবিন, জিনা, মুসা আর রাফি,’ বলল কিশোর।

বাঁ পাশের লোকটি হ্যাট খুলল। মাথায় খাট করে ছাঁটা কালো চুল তার।

‘নাইস টু মীট ইউ,’ বলল। ‘আমি স্যাম।’

‘আমি র‍্যাম, অপরজন বলল, হ্যাট খুলে। লম্বা, হলদেটে চুল পনিটেইল করে বাঁধা।

‘রানশটা কিন্তু ঠিক সেই আগের মতই আছে,’ চওড়া হেসে বলল কিশোর।

স্যামের দিকে চাইল র‍্যাম।

‘কী বলেছিলাম?’ বলল র‍্যাম। ‘কোন কিছু পাল্টানো ঠিক হবে না।’

‘ভুল কথা!’ বলে উঠল স্যাম। ‘রানশটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে বাড়াতে হবে। আর তুমি যদি তা না কর তো আমি করব!’ কথা কটা বলেই ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে হেঁটে চলে গেল সে।

র‍্যাম ছেলে-মেয়েদের দিকে চেয়ে হ্যাটটা পরে নিল।

‘সরি,’ বলল। ‘রানশটা নিয়ে সামান্য সমস্যা হচ্ছে। আমরা একমত হতে পারছি না কী করা উচিত। আমি স্যামকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে এই একশোতম জন্মদিনটা সেলিব্রেট করতে রাজি করিয়েছি। আমার ধারণা এতে ব্যবসা বাড়বে। এতে যদি কাজ না হয়, তবে আমরা কী করব জানি না। আমি শুধু চাই স্যাম যেন হর্সশুগুলো বিক্রি করে না দেয়।’

‘হর্সশুগুলোর মধ্যে বিশেষ কী এমন আছে?’ প্রশ্ন করল জিনা।

মৃদু হাসল র‍্যাম।

কথাটা শুনতে বেশ মজার লাগে,’ বলল। ‘আমাদের পরদাদা যখন রানশটা চালু করেন তখন চারটে সোনার হর্সশু বানান। আমরা আজকের উৎসবের রাতে সেগুলো শো করব। হর্সশুগুলোর এখন অনেক দাম, কিন্তু পরদাদা ওগুলোকে গুড-লাক চার্ম মনে করতেন।’

‘নেকড়ের মূর্তিটা যেমন,’ বলল কিশোর।

‘তোমার এখনও কয়োটি পলের ক্যাম্পফায়ার গল্পগুলো মনে আছে দেখছি,’ বলল র‍্যাম। ‘স্যাম সব সময় হর্সশুগুলো বেচে দেয়ার কথা বলে, আমরা যাতে রানশটাকে বড় এক কাউবয় রিসোর্ট বানাতে পারি। কিন্তু আমি চাই এটা ছোট্ট, ছিমছাম অবস্থায় থাকুক। আগে যেমন ছিল আরকী। পরদাদাও সম্ভবত এমনটাই চাইতেন।’

‘আমি কী চাই বলি শোন,’ রাফির কানে ফিসফিস করে বলল মুসা। ‘বড়সড় একটা বার্গার।’

লেজ নেড়ে সায় জানাল রাফি। জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে নিল। ‘বার্গার খাবে?’ বলল র‍্যাম। ‘তা হলে মার্থাকে গিয়ে বলো।’

‘মার্থা টার্নার এখনও বাবুর্চির কাজ করে?’ কিশোর জিজ্ঞেস করল।

‘ইয়াপ,’ জবাব দিল র‍্যাম। ‘আর গ্লেনও এখানে আছে। নানা ধরনের টুকটাক কাজ করে।’

‘ধন্যবাদ, র‍্যাম,’ কিশোর বলল। ‘পরে আবার দেখা হবে। চলো তোমরা, দুনিয়ার অন্যতম সেরা এক কুকের সাথে দেখা করব।’ বাঙ্কহাউসের দিকে হাঁটা ধরল কিশোর। অন্যরা অনুসরণ করল ওকে।

ওরা করালটার পাশ দিয়ে যাচ্ছে, মুসা আর রাফি থমকে দাঁড়াল। রবিন পিছু ফিরে চাইতেই ওদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল।

‘কী হলো, এসো,’ ডাকল ও।

‘আসছি,’ বলল মুসা। ‘সত্যিকারের কাউবয়দের একটু দেখে আসি।’

‘আচ্ছা, কিন্তু কোন ঝামেলায় জড়িয়ো না,’ বলল নথি। হাঁটতে শুরু করল।

‘চিন্তা কোরো না, রবিন,’ বলল মুসা। ‘কোন ঝামেলা হবে না।’