নেকড়েমানুষ – ৪

চার

সে রাতে, লোন উলফ রানশের সবাই করালে জড় হলো অনুষ্ঠান উদ্যাপনের জন্য। করালের এক প্রান্তে কাঠের ছোট এক মঞ্চ। অপর প্রান্তে লম্বা এক টেবিল ভর্তি খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। ছেলে- মেয়েরা বাঙ্কহাউস থেকে বেরিয়ে এল। সবার পরনে কাউবয় আউটফিট। মুসার মাথায় পেল্লায় কাউবয় হ্যাট।

‘অ্যাই, রাফি,’ বলল মুসা। ‘সত্যিকারের বাকেরু বার্বিকিউ, কাজেই শিগির চল।’

মুসা আর রাফি সবাইকে পিছনে নিয়ে করালে প্রবেশ করল। খাবার টেবিলে এত ধরনের বার্বিকিউ ওরা কখনও চোখে দেখেনি। কী নেই ওখানে-বার্বিকিউ চিকেন, বার্বিকিউ রিবস, বার্বিকিউ বীফ, বার্বিকিউ বিনস, বার্বিকিউ কর্ন, বার্বিকিউ পটেটো, বার্বিকিউ ক্যারট, বার্বিকিউ হ্যামবার্গার, বার্বিকিউ হট ডগ, এবং এমনকী বার্বিকিউ পিৎযা পর্যন্ত!

টেবিলের পিছনে ব্যস্ত দেখা গেল মার্থা আর গ্লেনকে। মার্থা খালি প্লেটারগুলো ভরে খাবার সার্ভ করছে।

ছেলে-মেয়েরা কটা প্লেট তুলে নিল।

‘ঘ্রাণে অর্ধভোজন, মার্থা,’ বলল কিশোর। ‘পুরানো স্মৃতি মনে পড়ছে।’

‘অ্যাই, কিশোর,’ বলল গ্লেন, ‘মনে আছে মা একবার এক ডজন ব্ল্যাকবেরি পাই বানিয়েছিল? আমরা ওগুলো আমাদের গোপন হাইড আউটে নিয়ে গিয়ে সব সাবাড় করেছিলাম।’

‘তারপর কয়েকদিন পেট ব্যথা ছিল,’ হেসে উঠে বলল কিশোর। ‘কিন্তু কী স্বাদ, আহা! এখনও জিভে লেগে আছে।’

স্যাম আর র‍্যাম হেঁটে এল টেবিলটার কাছে। স্যামের বগলে ছোট এক ধাতব বাক্স। এক টুকরো চিকেন তুলে নিল ও আর র‍্যাম মুখ তুলে চাইল আকাশের দিকে।

‘আজকে পূর্ণিমা,’ বলল র‍্যাম।

‘অভিশাপটার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো তো,’ স্যাম বলল। ‘কতবার বলেছি পল একটা পাগল। তুমি কেন যে ওকে রাখতে চাও বুঝি না।

‘এ জায়গাটা সম্পর্কে ও সবার চাইতে বেশি জানে,’ বলল র‍্যাম। ‘এমন লোককে বিদায় করে দেয়া যায় না।’

‘আমরা বেশিদিন আর এত লোক রাখতে পারব না,’ বলল স্যাম। ‘কাজেই কাকে-কাকে বাদ দেবে এখন থেকেই ভেবে রাখা দরকার। এখন অনুষ্ঠান শুরু করা যাক।’ র‍্যাম জবাব দিতে পারার আগেই স্যাম হেঁটে সরে গেল। র‍্যাম ঘুরে দাঁড়াল ছেলে-মেয়েদের দিকে।

‘মনে হচ্ছে শীঘ্রি শুরু করা যাবে,’ বলল। ‘সামনে এলে আরও ভালভাবে দেখতে পাবে। র‍্যাম এবার স্যামকে অনুসরণ করে মঞ্চে গিয়ে উঠল।

‘গ্লেন, তুই কিচেন থেকে কটা পাই নিয়ে আয়,’ বলল মার্থা। স্যাম আর র‍্যামের কথা শেষ হলেই ডেজার্ট সার্ভ করতে চাই।’ গ্লেন মাথা ঝাঁকিয়ে করাল থেকে হেঁটে বেরিয়ে গেল।

‘ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, কাউবয় ও কাউগার্লরা,’ মঞ্চ থেকে ঘোষণা করল র‍্যাম। ‘আপনারা সবাই শুনুন।’ সমবেত লোকজন প্ল্যাটফর্মের দিকে এগিয়ে এল। তিন গোয়েন্দা আর জিনা পথ করে নিয়ে সামনে চলে এল। ওরা দেখতে পেল স্যাম দাঁড়িয়ে রয়েছে র‍্যামের পাশে। স্যামের হাতে তখনও ধাতব ছোট বাক্সটা ধরা।

‘আপনাদের বেশিরভাগই লোন উলফ রানশের কিংবদন্তীটা জানেন,’ বলল র‍্যাম। ‘আমাদের পরদাদা এই জমিতে সোনা খুঁজে পোছিলেন। তিনি বেশিরভাগ সোনা বেচে দেন এবং বাকি সোনা

চারটি হর্সশু বানান। এই হর্সশুগুলো আমাদের পরিবারে রয়েছে একশো বছর ধরে। আজ রাতে, আমরা-‘

‘আআআ উউউ!’

জোরাল এক গর্জনের শব্দে বাতাস কেঁপে উঠল। সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেল।

‘ওই যে আবার!’ বলল স্যাম। ‘পলকে এবার উচিত শিক্ষা দেব!’ র‍্যামের হাতে ধাতব বাক্সটা ধরিয়ে দিল স্যাম। মঞ্চ থেকে এক দৌড়ে নেমে বনভূমির ভিতরে ঢুকে পড়ল।

‘সবাই শাস্ত থাকুন,’ বলল র‍্যাম। ‘কেউ জোক করছে, ভয়ের কিছু নেই।’

‘আআআ–উউউ।’ আরও জোরদার হলো গর্জনটা। এবার কিছু একটা জঙ্গল থেকে ছুটে বেরিয়ে এসে মঞ্চে উঠে পড়ল।

‘নেকড়ে!’ চেঁচিয়ে উঠল রবিন।

‘নেকড়ে নয়!’ চিৎকার ছাড়ল জিনা। ‘নেকড়েমানুষ!’

‘খাইছে! নেকড়েমানুষ!’ চেঁচিয়ে উঠে জনতার ভিড় ভেদ করে দৌড় দিল মুসা। ওর পিছু নিল রাফি।

নেকড়েমানুষ জনতার উদ্দেশে দাঁত খিঁচিয়ে গর্জে উঠল। সবাই হতবিহ্বল। র‍্যাম এতটাই বিস্মিত, নড়তে পারছে না। নেকড়েমানুষ উল্টো ঘুরে ধাক্কা দিয়ে ওকে ফেলে দিল। এবার ছোঁ মেরে তুলে নিল ধাতব বাক্সটা। পূর্ণিমার চাঁদের দিকে চেয়ে গর্জন ছেড়ে, এক দৌড়ে ঢুকে পড়ল বনভূমির ভিতরে।

এক মুহূর্ত পরে, স্যাম ছুটে গিয়ে মঞ্চে উঠল। হাঁফাচ্ছে দস্তুরমত। র‍্যামকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করল।

‘নেকড়ের মূর্তিটা চুরমার হয়ে গেছে,’ বলল স্যাম। জনতা সভয়ে শ্বাস চাপল।

‘আমি সবাইকে অভিশাপটার ব্যাপারে আগেই সাবধান করেছিলাম!’ কয়োটি পল চেঁচিয়ে বলল। করাল ঘিরে থাকা খুঁটিগুলোর একটায় উঠে দাঁড়িয়েছে সে। ‘আপনারা আমার কথা শুনলে এসব কিছুই ঘটত না। এখন এজন্যে চড়া মূল্য দিতে হবে রানশকে!’ ঘরে দাঁড়িয়ে জঙ্গলে মিলিয়ে গেল। জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল। বা দিকে ছুটছে সবাই।

‘হর্সশুগুলো খোয়া গেছে,’ বলল স্যাম।

‘কীভাবে জানলেন?’ প্রশ্ন করল কিশোর।

‘ওগুলো মেটাল বক্সটায় ছিল,’ বলল স্যাম। ‘আমরা সেলিব্রেশনের অংশ হিসেবে ওগুলো শো করতে চেয়েছিলাম।’

‘রানশটার বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেল,’ বলল র‍্যাম। ‘এখন আমরা কী করব?’

কিশোর, রবিন আর জিনা পরস্পরের উদ্দেশে মৃদু মাথা ঝাঁকাল।

‘চিন্তা কোরো না, আমরা কেসটা নিলাম!’ বলল গোয়েন্দাপ্রধান।