ঋগ্বেদ ০৮।০০২
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ২
ইন্দ্র দেবতা। কণ্বগোত্রীয় মেধাতিথি ও অঙ্গিরাগোত্র প্রিয়মেধ ঋষি।
১। হে বসু ইন্দ্র! এই অভিযুত সোম পান কর, উদর পূর্ণ হউক। হে অকুতোভয় ইন্দ্র! তোমাকে দান করিব।
২। নেতাগণদ্বারা ধৌত, বস্ত্রদ্বারা অভিযুত ও মেষলোমে পরিপূত সোম, নদীতে স্নাত অশ্বের ন্যায় শোভা পাইতেছে।
৩। হে ইন্দ্র! যবের ন্যায় উক্ত সোম তোমার জন্য গব্যের সহিত মিশ্ৰিত করিয়া আস্বাদযুক্ত করিয়াছিলাম। অতএব হে ইন্দ্র! এই একত্র পানস্থলে আগমন কর।
৪। দেবতা ও মনুষ্যগণের মধ্যে ইন্দ্রই কেবল সমস্ত সোমপান করিতে পারেন। অভিবুত সোমপায়ী ইন্দ্রই সর্বপ্রকার অন্নযুক্ত।
৫। যে দূরব্যাপী সুহৃৎ ইন্দ্রকে দীপ্ত সোম অপ্রীত করে না, দুর্লভ মিশ্রণ দ্রব্যবিশিষ্ট সোম যাঁহাকে অপ্রীত করে না, তৃপ্তিকর চরু পুরোডাশাদি যাঁহাকে অপ্ৰীত করে না, আমরা সেই ইন্দ্রকে স্তব করি।
৬। ব্যাধ মৃগকে যেরূপ অন্বেষণ করে, সেইরূপ অন্য যে লোক গব্য সংস্কৃত সোমদ্বারা ইন্দ্রকে অন্বেষণ করে ও বাক্যদ্বারা কুৎসিতরূপে তাঁহার নিকট গমন করে; তাহারা তাঁহাকে পায় না।
৭। অভিযুত সোমপায়ী ইন্দ্রদেবের তিন প্রকার সোম যজ্ঞ গৃহে অভিযুত হউক।
৮। একমাত্র ঋত্বিকগণের ভরণীয় যজ্ঞে তিনটী কোশ সোমস্রবণ করিতেছে; তিনটী চমস পূর্ণ হইয়াছে।
৯। হে সোম! তুমি শুচি এবং বহুপাত্রে অবস্থিত এবং মধ্যে ক্ষীর দ্বারা ও দধিদ্বারা মিশ্ৰীকৃত। তুমি বীর ইন্দ্রকে সর্বাপেক্ষা অধিক প্রমত্ত কর।
১০। হে ইন্দ্র! তোমার এই সোম সকল তীব্র, আমাদের অভিযুত ও দীপ্ত মিশ্রণ দ্রব্য তোমার আকাঙ্খা করিতেছে।
১১। হে ইন্দ্র! উক্ত সোম সকলে মিশ্রণ দ্রব্য মিশ্রিত কর। পুরোডাশ ও এই সোমকে মিশ্রিত কর; যেহেতু তোমাকে ধনবান বলিয়া শুনিতে পাই।
১২। সুরা পীত হইলে, কুৎসিত মত্ততা সুরাপায়ীকে প্রমত্ত করিবার জন্য যেরূপ যুদ্ধ করে, সেইরূপ হে ইন্দ্র! পীতসোম সকল হৃদয় মধ্যে যুদ্ধ করে। দুগ্ধপূর্ণ উধঃকে লোকে যেরূপ পালন করে, তুমি সোমপূর্ণ, স্তোতাগণ সেইরূপ তোমায় পালন করে।
১৩। হে হৰ্য্যশ্ব! তুমি ধনবান, তোমার স্তোতা ধন্যবান হয়। তোমার ন্যায় ধন্যবান প্রসিদ্ধ লোকের স্তোতা প্রভু হয়।
১৪। ইন্দ্র স্তুতিশূন্য লোকের শত্ৰু, তিনি উচ্চাৰ্য্যমান উকথ জানিতে পারেন, সম্প্রতি গায়ত্র গান করা হইতেছে।
১৫। হে ইন্দ্র! তুমি বধকারী শত্রুর হস্তে আমাকে পরিত্যাগ করও না, অভিভবকারীর হস্তে পরিত্যাগ করিও না। হে শক্তিমান ইন্দ্র! তুমি স্বীয় কৰ্ম্মবলে আমাদিগকে ধন দান কর।
১৬। হে ইন্দ্র! আমরা তোমার সখা; তোমায় ইচ্ছা করি; তোমার স্তোত্রই আমাদের প্রয়োজন; আমরা তোমায় স্তব করি। কণ্বগোত্রৎপন্নগণ উকথদ্বারা তোমায় স্তব করিতেছে।
১৭। হে বজ্রবান ইন্দ্র! তুমি কৰ্ম্মবান, তোমায় নুতন যজ্ঞে আমি অন্য স্তোত্র উচ্চারণ করি না, কেবল তোমার স্তোত্রই আমি জানি।
১৮। দেবগণ সোমাভিষবকারীকে সৰ্ব্বদা ইচ্ছা করেন, তাহার স্বপ্নাবস্থা ইচ্ছা করেন না। তাঁহারা অনলস হইয়া অত্যন্ত মন্দকার সোম প্রাপ্ত হন।
১৯। হে ইন্দ্র! অন্নের সহিত আমাদের অভিমুখে প্রকৃষ্টরূপে আগমন কর। যুবতী জায়া পাইলে গুণী ব্যক্তিও যেরূপ তাহার প্রতি ক্রুদ্ধ হন না, সেইরূপ আমাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হইও না।
২০। দুঃসহনীয় ইন্দ্র, অদ্য আমাদের সমীপে আগমন করুন, কুৎসিত জামাতার ন্যায় যেন সন্ধ্যা না করেন।
২১। আমরা এই বীর ইন্দ্রের বহুধনদাত্রী কল্যাণী অনুগ্রহ বুদ্ধি জানি। তিন লোকে প্ৰাদুর্ভূত ইন্দ্রের হৃদয় জানি।
২২। কণ্বমান ইন্দ্রের উদ্দেশে শীঘ্র সোম সেক কর, অতি বলসম্পন্ন এবং প্রভূত রক্ষাবিশিষ্ট ইন্দ্রের অপেক্ষা অধিক যশস্বী ব্যক্তি জানি না।
২৩। হে অভিষবণকারী! তুমি বীর, শক্তিমান ও নরগণের হিতকর। ইন্দ্রের উদ্দেশে মুখ্যরূপ সোম প্রদান কর, তিনি পান করুন।
২৪। যিনি সুখকর স্তোতাগণকে বিশেষরূপে জানেন, সেই ইন্দ্র, হোতাদিগকে ও স্তোতাগণকে বহু অশ্বযুক্ত ও গোযুক্ত অন্ন দান করুন।
২৫। হে অভিষবণকারীগণ! তোমরা মাদয়িতব্য, বীর ও শূর ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে স্তুতিযোগ্য সোম দান কর।
২৬। সোম পানশীল, বৃত্রহন্তা ইন্দ্র আগমন করুন, আমাদের দূরবর্তী যেন না হন। বহুবিধ রক্ষাবিশিষ্ট ইন্দ্র শত্রুগণকে নিয়ত করুন।
২৭। স্তোত্রযুক্ত, সুখকর অশ্বদ্বয় এই যজ্ঞে স্তুতিদ্বারা বিশ্রুত এবং সংভজনীয় সখা ইন্দ্রকে আনয়ন করুন।
২৮। হে শিরস্ত্ৰাণবিশিষ্ট, ঋষিযুক্ত, শক্তিমান ইন্দ্র! এই সোম স্বাদু, তুমি আগমন কর। সোম সকল মিশ্রণদ্রব্যে মিশ্রিত হইয়াছে, আগমন কর। তুমি হৰ্ষপ্রিয়, স্তোতা তোমার অভিমুখে স্তুতি করিতেছে।
২৯! হে ইন্দ্র! বৰ্দ্ধনশীল স্তোতাগণ ও স্তুতিসমূহ মহৎ ধন ও বল লাভের জন্য তোমাকে বর্দ্ধিত করে।
৩০। হে স্তুতিদ্বারা বহনীয় ইন্দ্র! তোমার জন্য যে স্তুতি ও উক্থ আছে, তাহা সমস্ত মিলিত হইয়াই তোমার বল বিধান করিতেছে।
৩১। ইন্দ্র বহুকর্মা, তিনি এক এবং বজ্রহস্ত, তিনি চিরকাল হইতে শত্রুকর্তৃক অনভিভূত, তিনি স্তোতাকে বল প্রদান করেন।
৩২। ইন্দ্র দক্ষিণ হস্তদ্বারা বৃত্রকে হনন করিয়াছেন, তিনি অনেক স্থানে অনেকবার আহুতি, তিনি নানা প্রকার ক্রিয়াদ্বারা মহান।
৩৩। সমস্ত প্রজাগণ যে ইন্দ্রের অধীন, অচ্যুত বল ও অভিভব যে ইন্দ্রে বৰ্তমান, সেই ইন্দ্র, যজমানগণের অনুমোদনকারী হউন।
৩৪। ইন্দ্র এই সমস্ত কাৰ্য্য করিয়াছেন, তিনি সর্বত্র বিশ্রুত, তিনি হবিষ্মানদিগের অন্নদাতা।
৩৫। প্রহরণশীল ইন্দ্র যে গমনশীল গবাভিলাষী স্তোতাকে অপক্কপ্রজ্ঞ শত্রুর হস্ত হইতে রক্ষা করেন, লেই স্তোতাই প্রভু হইয়া বহুধন দান করেন।
৩৬। মেধাবী ইন্দ্র অশ্বের সাহায্যে গন্তব্য স্থানে গমন করেন। তিনি শূর। নেতা মরুদগণের সাহায্যে বৃত্র বধ করেন। তিনি পরিচর্য্যাকার যজমানের রক্ষক এবং সত্যস্বরূপ।
৩৭। হে প্রিয়মেধা! সেই ইন্দ্রের প্রতি আসক্তমান যজ্ঞ কর। ইন্দ্র সোম প্রাপ্ত হইলে হৃষ্ট হন, সে হর্ষ নিষ্ফল হয় না।
৩৮। হে কণ্বগণ! তোমরা সাধু লোকের পালক, অন্নাভিলাষী, বহুদেশগামী, বেগবান ও গেয়ষশঃসম্পন্ন ইন্দ্রের স্তব কর।
৩৯। পদচিহ্ন না থাকিলেও সখা, সুকর্মা ইন্দ্র নেতা দেবগণকে গাভীসকল পুনঃ প্রদান করিয়াছিলেন। দেবগণ ইন্দ্র হইতে অভিলষিত পদার্থ প্ৰাপ্ত হইয়াছিল।
৪০। হে বজ্রবান ইন্দ্র! তুমি মেঘরূপে অভিগমন করতঃ এই প্রকারে স্তুতিকারী কণ্বপুত্র মেধ্যাতিথিকে প্ৰাপ্ত হইয়াছিলে।
৪১। হে বিভিন্দু(১); তুমি দাতা, তুমি আমাকে চারি অযুত ধন দান করিয়াছ, পরে অষ্ট সহস্রসংখ্যক দান করিয়াছ।
৪২। প্রসিদ্ধ, জলবৰ্দ্ধক, ভূতনিৰ্ম্মাতা স্তোতার প্রতি অনুগ্রহশীল, দ্যাবাপৃথিবীকে ধনোৎপত্তির জন্য স্তব করিয়াছ।
————
(১) বিভিন্দুনামক রাজার নিকট বহুধন প্রাপ্ত হইয়া ঋষি তাঁহার স্তব করিতেছেন। সায়ণ।