1 of 2

১৯৩৪। বয়স ৩৫ বছর

১৯৩৪। বয়স ৩৫ বছর 

‘রূপসী বাংলার প্রধান প্রধান কবিতাবলী রচনা করলেন জীবনানন্দ। ভেবেছিলেন ‘বাংলার ত্রস্ত নীলিমা’ নামে একটি সংকলনে কবিতাগুলো একসঙ্গে প্রকাশ করবেন। নানা কারণে জীবিতাবস্থায় তা সম্ভব হয়নি। মৃত্যুর পরে ১৯৫৭-তে এই কবিতাগুলো ‘রূপসী বাংলা’ নামের কাব্যান্তর্গত হয়ে প্রকাশিত হয়। গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি এক অমোঘ ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে ‘রূপসী বাংলা’র কবিতাবলীতে। বাংলার নদী-মাঠ-ঘাট, ঘাস-ফুল-পাতা, পোকা-পাখি-প্রাণী, রূপকথা-পাঁচালি-পল্লীগান, ইতিহাস-পুরাণ-প্রবচন তাঁকে নেশাগ্রস্তের মতো আচ্ছন্ন করে রেখেছিল ‘রূপসী বাংলা’র কবিতাগুলো রচনা করার সময়। 

রবীন্দ্রনাথের বয়স ৭৩। ১৯ মার্চ ইন্দিরাকে দেখতে শান্তিনিকেতনে এলেন জহরলাল ও কমলা নেহরু। সরোজিনী নাইডুও শান্তিনিকেতন ঘুরে গেলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ বক্তৃতা দিলেন, বিষয়— ‘সাহিত্যতত্ত্ব’। কবি তৃতীয় বারের মতো সিংহল যাত্ৰা করলেন, ৬ মে। কলম্বোয় গভর্নর স্যার ব্যারন জয়তিলক স্বাগত জানালেন কবিকে। 

‘শাপমোচন’ অভিনীত হল ২৬ মে থেকে পরপর তিনদিন। ‘চার অধ্যায়’ উপন্যাস লেখা শেষ করলেন কাড়িতে। শান্তিনিকেতনে ফিরে বিশ্বভারতীর অভ্যন্তরীণ সংস্কারে মনোযোগী হলেন রবীন্দ্রনাথ। গান্ধী কলকাতায় এলে রবীন্দ্রনাথ তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন। সীমান্তগান্ধী আবদুল গফ্ফর খাঁ কলাভবনের ছাত্র পুত্র আবদুল গনিকে দেখতে এলেন শান্তিনিকেতনে। বিপুলভাবে সংবর্ধিত হলেন তিনি। 

অধ্যাপক গিলবার্ট মারের সঙ্গে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সম্বন্ধ বিষয়ে পত্রালাপ হল রবীন্দ্রনাথের। বিধুশেখর শাস্ত্রী বিশ্বভারতী ত্যাগ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। 

বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে প্রতিভা সোম (ডাক নাম : রাণু, পিতা : আশুতোষ সোম, মাতা : সরযূবালা) এর বিয়ে হয় [২৯ জুলাই, ১৯৩৪]। ১৯৩০-এ জীবনানন্দের বিয়ের অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব বসু নিমন্ত্রিত হয়েছিলেন। কিন্তু বুদ্ধদেব বসু তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠানে জীবনানন্দকে নিমন্ত্রণ করেননি। জীবনানন্দ দৈনিক পত্রিকা পড়ে বুদ্ধদেব-প্রতিভার বিয়ের খবরটা জেনেছিলেন। জুলাই মাসে বুদ্ধদেব বসু রিপন কলেজে অধ্যাপনা কাজে যোগদান করেন। 

১২ জানুয়ারি সূর্যসেন ও তারকেশ্বরের ফাঁসি হয়। ফাঁসি হয় দীনেশ মজুমদারেরও। কমিউনিস্ট পার্টিকে ভারতে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। 

ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিহার ও নেপালে সহস্র সহস্র মানুষের মৃত্যু ঘটে। 

জার্মান প্রেসিডেন্ট ভন হিন্ডেনবার্গের মৃত্যু হলে হিটলার একাধারে চ্যান্সেলর ও প্রেসিডেন্ট হলেন। তিনি নতুন উপাধি গ্রহণ করলেন—’ফুয়েরার’। চীনে মাও সে তুঙের নেতৃত্বে কমিউনিস্টদের লং মার্চ হল, ৮০০০ মাইল অতিক্রম করলেন তাঁরা। যুগোস্লাভিয়ার রাজা আলেকজান্ডার আততায়ীর হাতে নিহত হলেন। 

এ বছর জন্মগ্রহণ করেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদার, সাধনা মুখোপাধ্যায়, কবিরুল ইসলাম, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, আবুল খায়ের মুসলেহ্ উদ্দিন। 

আর পরলোক গমন করেন ‘মোদের গরব মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা’ গানটির রচয়িতা অতুলপ্রসাদ সেন, চারণকবি মুকুন্দ দাস, মাস্টারদা সূর্য সেন। 

এ বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেলেন লুইগী পিরানদেলো [১৮৬৭–১৯৩৬]। ঔপন্যাসিক- নাট্যকার-গল্পকার। ইতালির লেখক তিনি। 

পুরস্কার দেওয়ার পক্ষে নোবেল কমিটি লেখেন- 

‘For his bold and ingenious revival of dramatic and scenic art.’ 

তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থগুলো হল—’দ্য মেরি গ্রো রাউল্ড’, ‘ওয়ান, নান্‌ অ্যান্ড হানড্রেড থাউসেন্ড’ ‘দ্য এমপারার’, ‘নেকেড’, ‘দ্য লাইফ আই গেভ ইউ’ ইত্যাদি। 

প্রকাশিত গ্রন্থ : প্রকাশ পায় রবীন্দ্রনাথের ‘মালঞ্চ’, ‘শ্রাবণগাথা’, ‘চার অধ্যায়’। বের হয় অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ‘অমাবস্যা’, অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘কামনা পঞ্চবিংশতি’, অজিত দত্তের ‘পাতালকন্যা’, কালিদাস রায়ের ‘হৈমবতী’, জসীম উদ্দীনের ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’, কাজী কাদের নেওয়াজের কাব্য ‘মরাল’। 

সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত ‘বঙ্গশ্রী’ পত্রিকায় এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় গল্প ‘একটি দিন’। পরে এই গল্পটিই ধারাবাহিক উপন্যাসের রূপ নিয়ে ‘দিবারাত্রির কাব্য’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়ে ডিসেম্বরে শেষ হয়। এটিই পরের বছর ‘দিবারাত্রির কাব্য’ নামে উপন্যাসাকারে বের হয়। 

মে মাস (জ্যৈষ্ঠ ১৩৪১) থেকে ‘পূৰ্ব্বাশা’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে বের হতে থাকে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটি। ১৯৩৫-এর জুলাই পর্যন্ত ৯ কিস্তি মুদ্রিত হবার পর পত্রিকাটির প্রকাশনা সাময়িকভাবে বন্ধ হওয়ায় উপন্যাসটির প্রকাশ অসম্পূর্ণ থাকে। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *