1 of 2

১৯০৭। বয়স ৮ বছর

১৯০৭। বয়স ৮ বছর 

দূরের গ্রাম থেকে এক ফকির আসতো জীবনানন্দের বাড়িতে, সে যেন ‘দীনতা ও সরলতার প্রতিমূর্তি।’ বাগানে কাজ করতে করতে জীবনানন্দকে হরেক রকম গল্প শুনাতো সে-শস্যের, ফসলের। মাটির কথা বলতে বলতে ফকির ঘাসের ওপর কাস্তে চালাতো। এই দেখে বালক জীবনানন্দ কাতর হয়ে উঠতেন। জীবনানন্দকে প্রবোধ দিয়ে ফকির বলতো— 

‘কিছু ভাববেন না খোকাবাবু, কয়েকদিনের মধ্যেই আবার খুব সুন্দর নরম কচি ঘাস হবে।’ [‘বাল্যস্মৃতি : পৃ : ১৩২] 

মা কুসুমকুমারীর কবিতা বালক জীবনানন্দকে খুবই বিভোর করে রাখতো। জীবনানন্দ লিখেছেন- 

‘বিপাশার পরপারে হাসিমুখে রবি ওঠে’ কবিতাটি প্রথম যখন আট ন’বছর বয়সে পড়েছিলাম তাঁর সব লেখার ভেতর সবচেয়ে ভাল লেগেছিল; কবিতাটির নির্ম্মল অর্থ নিৰ্ম্মলতর ভেতরের ধ্বনি নদী-ধ্বনি আজও কানে বাজে, হৃদয়ে এসে লাগে।’ [‘আমার মা-বাবা’, জীবনানন্দ দাশ]

রবীন্দ্রনাথের বয়স ৪৬। জাতীয় শিক্ষা পরিষদে ‘বিশ্বসাহিত্য’ প্রবন্ধটি পাঠ করলেন তিনি। এটি গ্যেটের ‘Welt Literature’-এর অনুবাদ। সমীন্দ্রনাথকে দিয়ে শান্তিনিকেতনে ঋতু- উৎসব অনুষ্ঠানের সূচনা করলেন কবি। শান্তিনিকেতন মন্দিরে ১৩ বছর বয়সি মীরার বিয়ে হয়, জামাতা নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বিয়ের পরেই কৃষিবিদ্যা শিক্ষার উদ্দেশ্যে আমেরিকায় প্রেরিত হন। মীরাসহ রবীন্দ্রনাথ বরিশালে আসেন এবং সেখান থেকে একা চট্টগ্রামে যান। রাজনৈতিক উন্মাদনা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্যে সকলে কবিকে নিন্দামন্দ করছে। 

বন্ধু ভোলার সঙ্গে কবির ১১ বছর বয়সি কনিষ্ঠ পুত্র সমীন্দ্রনাথ মুঙ্গেরে বেড়াতে গেল। কলেরায় আক্রান্ত হয়ে সে সেখানেই মারা গেল। তারপর রবীন্দ্রনাথ বেলা ও মীরাকে নিয়ে চলে গেলেন শিলাইদহে। 

মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ-গ্রন্থাগারে ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ আবিষ্কার করেন। সংগৃহীত চর্যাপদের সংখ্যা সাড়ে ছেচল্লিশ। এগুলো লিখেছিলেন ২৪ জন বৌদ্ধ কবি। ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরিতে প্রথম বাঙালি গ্রন্থাগারিক নিযুক্ত হলেন হরিনাথ দে। 

ময়মনসিংহ ও জামালপুরে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা বাধে। ‘সন্ধ্যা’ নামক দৈনিকে প্রকাশিত একটি লেখার জন্যে ব্রহ্মবান্ধব অভিযুক্ত হন। মামলার শুনানির আগেই তিনি মারা যান। ‘যুগান্তর’ সাপ্তাহিকের সম্পাদক ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত কারারুদ্ধ হন। 

ডিসেম্বরে রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছোটলাট এন্ড্রু ফ্রেজারকে হত্যার চেষ্টা। সুরাটের ২৩তম কংগ্রেস অধিবেশন নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের হট্টগোলের কারণে ভেস্তে যায়। পাঞ্জাবে হিন্দুসভা গঠন। উত্তর পাঞ্জাবে রাওয়ালপিণ্ডির বিপ্লবীগণ একটি পোস্ট অফিস লুণ্ঠন ও একটি গির্জা বিনষ্ট করলে ইংরেজ গভর্নমেন্ট সন্দিহান হয়ে হিন্দু নেতা লালা লাজপৎ রায় ও শিখ নেতা অজিত সিংহকে নির্বাসিত করে। ভারতে ‘Theosophical Society’ প্রতিষ্ঠিত হয়, সভাপতি হন অ্যানি বেসান্ত। ভারতের সুবিখ্যাত চিত্রকর রবি বর্মার মৃত্যু হয়। বিখ্যাত ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক লর্ড কেলভিন এ বছর মারা যান। 

আগা খান মুসলমানদের জন্যে পৃথক নির্বাচন দাবি করেন। ঢাকায় ষড়যন্ত্র মামলা হয়। ‘ওরিয়েন্টাল আর্ট সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যারিস্টার মি. গান্ধী ভারতীয় শ্রমজীবীদের সঙ্গে কারারুদ্ধ হন। 

ইউরোপ দু’টো সশস্ত্র শিবিরে বিভক্ত হল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বীজ রোপিত হল। 

এ বছর জন্মেছেন অজিত দত্ত, সুনীলচন্দ্র সরকার, সত্যেন সেন, গোবিন্দচন্দ্র দেব, কবি সুফী মোতাহার হোসেন, মোরাভিয়া। 

পরলোক গমন করেন সাহিত্যে প্রথম নোবেল প্রাইজ বিজয়ী আর.এফ.এ. সুলী প্রুধোম ও প্রসিদ্ধ বাঙালি কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার। 

এ বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান ইংল্যান্ডের কথাসাহিত্যিক রুডিয়ার্ড কিপলিং (১৮৬৫- ১৯৩৬)। 

কিপলিং সম্পর্কে নোবেল কমিটির মন্তব্য এ রকম- 

‘In consideration of the power of observation, orginality of imagination, virility of ideas and remarkable talent for narration which characterise the creations of this world-famous author.’ 

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হল— ‘The Second Jungle Book’, ‘The Day’s Work’, ‘ Actions and Reactions’, ‘The Servant of a Dog.’

প্রকাশিত গ্রন্থ : এ বছর রবীন্দ্রনাথের গ্রন্থ প্রকাশ পেল ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’, ‘প্রাচীন সাহিত্য’, ‘লোকসাহিত্য’, ‘আধুনিক সাহিত্য’ ‘হাস্যকৌতুক’, ‘ব্যঙ্গকৌতুক’ ও ‘চারিত্রপূজা’; বঙ্গবাসী কার্যালয় প্রকাশ করল ‘বঙ্গভাষার লেখক’। প্রকাশিত হল দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘আলেখ্য’, দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদারের ‘ঠাকুরমার ঝুলি, বের হল বের্গসের ‘ক্রিয়েটিভ ইভালুশান’। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *