১৯২১। বয়স ২২ বছর
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি ভাষা-সাহিত্যে জীবনানন্দ এমএ পাস করেন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে। আইন পরীক্ষা দেননি। এমএ এবং ল’ পড়বার সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন হার্ডিঞ্জ ছাত্রাবাসে তাঁর আর এক বাল্য-সহপাঠী হরিজীবনও থাকতেন। এমএ পরীক্ষার কিছুদিন পূর্বে ‘ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রি’ রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন জীবনানন্দ। তাই পরীক্ষায় আশানুরূপ ভালো ফল করতে পারলেন না। আশানুরূপ ফল করতে না পারার আশঙ্কায় পরীক্ষায় বসতে চাননি তিনি। কিন্তু পিতা সত্যানন্দের চাপাচাপিতে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় বসেন জীবনানন্দ।
রবীন্দ্রনাথের বয়স ৬০। এ বছর নিউইয়র্কে হেলেন কেলারের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ ঘটে। লেনার্ড এমহার্স্টের সঙ্গেও প্রথম পরিচয় হয় এ সময়। নিউইয়র্ক থেকে সিকাগো হয়ে ইংল্যান্ড ফিরে এলে ‘স্যার’ উপাধি ত্যাগের অজুহাতে ইংরেজরা তাঁর প্রতি উদাসীন মনোভাব দেখিয়ে যেতে থাকে। ইংল্যান্ড থেকে বিমানযোগে প্যারিস এলেন ১৬ এপ্রিল। এটাই তাঁর বিমান যাত্রার প্রথম অভিজ্ঞতা। প্যারিসে রোমা রোলাঁ ও প্যাট্রিক গেডিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় রবীন্দ্রনাথের। ম্যুনিকে টমাস মানের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে তাঁর। ভিয়েনায় এলে উইনটারনীজের সঙ্গে কবির পরিচয় ঘটে। বিদেশ থেকে ১৬ জুলাই দেশে ফিরলেন রবীন্দ্রনাথ। অসহযোগ আন্দোলনকে পরিপূর্ণভাবে সমর্থন না করায় গান্ধী ও অন্যান্যের সমালোচনার সম্মুখীন হলেন কবি।
পাঁচ বছর পর পিয়ার্সন ফিরে এলেন শান্তিনিকেতনে, এলমহার্স্ট এসে ভার নিলেন শ্রীনিকেতনের। তিনিই বিশ্বভারতীর প্রথম ভিজিটিং প্রফেসর। ইনি বিশ্বভারতীতে চীনা ও তিব্বতি ভাষা এবং বৌদ্ধধর্ম চর্চার সূত্রপাত করলেন। ২৩ ডিসেম্বর ব্রজেন্দ্রনাথ শীলের সভাপতিত্বে বিশ্বভারতীর উদ্বোধন হল।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ইংল্যান্ডের রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটির অনারারি মেম্বার নির্বাচিত হন। ১৮ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক পদে যোগ দেন তিনি। ৩০ জুন ১৯২৪ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। রবীন্দ্রনাথের ৬০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আশীর্বাণী রচনা করেন।
কাজী নজরুল ইসলাম আলী আকবর খানের সঙ্গে কুমিল্লা যান। কান্দিরপাড়ের সেনগুপ্ত পরিবারের গিরিবালা দেবী ও আশালতার সঙ্গে পরিচয় ঘটে নজরুলের। এরপর আলী আকবরের সঙ্গে দৌলতপুর চলে যান। সেখানে সৈয়দা খাতুন ওরফে নার্গিসের প্রেমে আপুত হন নজরুল। নার্গিসের সঙ্গে বিয়ে হয়। কন্যাপক্ষের একটি শর্ত নিয়ে নজরুলের সঙ্গে কন্যাপক্ষের মতান্তর হয়। শর্তটি হল—বিয়ের পর নজরুল স্ত্রী নার্গিসকে নিয়ে দৌলতপুর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে পারবেন না। বিয়ের রাতেই (১৭ জুন) বিয়ের আসর থেকে উঠে পায়ে হেঁটে নজরুল কুমিল্লা শহরে চলে আসেন।
শান্তিনিকেতনে নজরুলের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রথম সাক্ষাৎ। সাক্ষাতে নজরুল রবীন্দ্রনাথকে ‘আগমনী’ কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনান। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ৩/৪ তালতলা লেনের বাসায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি রচনা করলেন নজরুল।
ভারতে অসহযোগ আন্দোলন উত্তাল হয়ে উঠেছে। অসহযোগ আন্দোলনের বিরোধিতা করে নিন্দিত হয়ে বিপিনচন্দ্র পাল রাজনীতি থেকে অবসর নিলেন। সুভাষচন্দ্র বসু আইসিএস প্রত্যাখ্যান করলেন।
স্যাডলার কমিশনের সুপারিশক্রমে আলীগড়, লক্ষ্ণৌ ও ঢাকা নগরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হল। চীনে কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম হল। ভারতের গভর্নর জেনারেল চেমসফোর্ড পদত্যাগ করলে লর্ড রিডিং উক্ত পদে নিযুক্তি পান।
দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূলে মলা জাতি তৃতীয় বারের মতো ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে। তারা সরকারি অফিস-আদালতে আগুন লাগায়, রাজকোষ লুণ্ঠন করে। মালাবারে সামরিক আইন জারি হয়।
চাঁদপুর রেলস্টেশনে জমায়েতকৃত ৪ হাজার শ্রমিকের ওপর গুর্খা সৈন্যরা অত্যাচার করলে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের সমস্ত দেশীয় কর্মচারী ধর্মঘট করে।
ব্রিটেনের যুবরাজ প্রিন্স অব ওয়েলস্ ভারত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বোম্বাই-এ এলেন। এই উপলক্ষে শোভাযাত্রার সময় কংগ্রেসীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলে কিছু মানুষ হতাহত হয়। ফলে সমগ্র ভারতে হরতাল পালিত হয়। যুবরাজ কলকাতায় পৌঁছালে পুনরায় ভারতব্যাপী হরতাল পালিত হয়।
ব্রিটিশ-ভারতে ষষ্ঠ বারের মতো লোকসংখ্যা গণনা করা হয়।
এ বছর জন্মেছেন শুদ্ধসত্ত্ব বসু, আহমদ শরীফ, নীলিমা ইব্রাহিম, আইনজ্ঞ গাজী শামছুর রহমান, সত্যজিৎ রায়, আবদুল গনি হাজারী, পটুয়া কামরুল হাসান।
মারা গেলেন ঈশ্বচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র ‘সাহিত্য’ পত্রিকার সম্পাদক সুরেশচন্দ্র সমাজপতি।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান আনাতোল ফ্রান্স (১৮৪৪– ১৯২৪)। কবি ও নাট্যকার। ফ্রান্সের নাগরিক তিনি।
তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কারণ হিসেবে নোবেল কমিটি লেখেন-
‘In recognition of his brilliant literary achievement which are characterised by nobility of style, magnimous human sympathy, charm and a true French temper.’
তাঁর বিখ্যাত রচনা— ‘The Crime of Sylvestre Bonnard’, ‘The God of Athurist’.
প্রকাশিত গ্রন্থ : রবীন্দ্রনাথের ‘ঋণশোধ’ প্রকাশিত হয়। ইংরেজিতে বের হয় ‘গ্রেটার ইন্ডিয়া’, ‘দি রেক’, ‘পোয়েমস্ ফ্রম টেগোর’, ‘গ্লিমসেস অব বেঙ্গল’, ‘দি ফিউজিটিভ’ ও ‘থট রেলিকস্’। প্রকাশ পায় ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের ‘আলমগীর’, উপন্দ্রেনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নির্বাসিতের আত্মকথা’, স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘স্বপ্নবাণী’, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘A brief Sketch of Bengali Phonetics’, বেগম রোকেয়ার ‘মতিচূর (দ্বিতীয় খণ্ড)’, আলডুস হালির ‘ক্রোম ইয়োলো’, ডি.এইচ. লরেন্সের ‘উইমেন ইন লাভ’।
মুন্সী আবদুল হান্নান চৌধুরীর ‘খিলাফৎ কবিতা’ ও চন্দ্রনাথ দাসের ‘মহাত্মা গান্ধীর কবিতা নিষিদ্ধ করল ইংরেজ সরকার।