1 of 2

১৯২৩। বয়স ২৪ বছর

১৯২৩। বয়স ২৪ বছর 

রবীন্দ্রনাথের বয়স ৬২। লর্ড লিটন শান্তিনিকেতন পরিদর্শন করতে এলেন। কিন্তু অসহযোগী অধ্যাপকরা লর্ড লিটনের সংবর্ধনা সভা বর্জন করলেন। 

অতুলপ্রসাদ সেনের অতিথি হয়ে রবীন্দ্রনাথ লক্ষ্ণৌতে গেলেন, কয়েকদিন থাকলেন তিনি সেখানে। ১৪ এপ্রিল টাটার অর্থানুকূল্যে রতনকুঠি নামক অতিথিভবনের শিলান্যাস হল শান্তিনিকেতনে। এ সময় ‘বিশ্বভারতী কোয়ার্টারলি’ পত্রিকার (১৯২৩–১৯৩১) প্রকাশ। ‘বিসর্জন’ নাটকে জয়সিংহের ভূমিকায় অভিনয় করলেন রবীন্দ্রনাথ। লিখলেন ‘রথযাত্রা’ নাটিকা ও ‘সমস্যা ও সমাধান’ প্রবন্ধ। নন্দলার বসু পাকাপাকিভাবে শান্তিনিকেতনে যোগ দিলেন এ বছর। 

চিত্তরঞ্জন দাশ কলকাতা কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হলেন; ডেপুটি মেয়র হলেন সোহরাওয়ার্দী, প্রধান কর্মাধ্যক্ষ সুভাষচন্দ্র বসু। হেমেন্দ্রনাথ ঘোষ প্যারিসে গবেষণা করতে গিয়ে অর্থাভাবে পড়লে রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে স্যার আশুতোষ তাঁর বৃত্তির ব্যবস্থা করলেন। পরে এই হেমেন্দ্রনাথ ঘোষই ভারতে প্রথম পেনিসিলিন তৈরি করেন। 

ভারতের জনমান্য নেতা মৌলানা মুহম্মদ আলী ও শওকত আলী কারাগার হতে মুক্তি পেলেন। 

কারাগারে বসে ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী লেখেন নজরুল। এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ‘বসন্ত’ গীতিনাট্য নজরুলকে উৎসর্গ করেন (১০ ফাল্গুন ১৩২৯)। উৎসর্গপত্রে লেখা ছিল— 

শ্রীমান কবি কাজী নজরুল ইসলাম/স্নেহভাজনেষু।’ 

এক জনসভায় হেমন্ত সরকার, অতুল সেন, মৃণালকান্তি বসু, যতীন্দ্রমোহন বাগচী প্রমুখ ব্যক্তি নজরুলের অনশনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথ অনশন ভাঙার জন্যে নজরুলকে কালিম্‌পঙ থেকে টেলিগ্রাম পাঠান— 

‘Give up hunger strike, our Literature claims you.’

এই টেলিগ্রাম নজরুলকে দেওয়া হয়নি। ‘Addresse not found’ মন্তব্যসহ সেটি রবীন্দ্রনাথের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। বিরজাসুন্দরীর হস্তক্ষেপে ৩৯ দিন পর নজরুল অনশন ভঙ্গ করেন। ১৫ ডিসেম্বর জেল থেকে মুক্তি পান নজরুল, এক বছর তিন সপ্তাহ পর। ‘দোলন চাঁপা’ কাব্যের প্রকাশ (আশ্বিন ১৩৩০)। প্রকাশক : শরৎচন্দ্র গুহ, আর্য পাবলিশিং হাউস। পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় এতে ভূমিকা লিখেছিলেন। 

এ বছরেই ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে বুদ্ধদেব বসু নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। 

কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্কে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেল। এখানে ধর্মান্ধতা বন্ধ হল, পশ্চিমি পোশাক পরা শুরু হল; সারা দেশ জুড়ে শিল্পায়ন আরম্ভ হল। 

হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানিতে ব্যর্থ অভ্যুত্থান হল এবং হিটলার কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলেন। 

দীর্ঘদিন কালাজ্বরে ভুগে সুকুমার রায় মারা গেলেন। পরলোক গমন করলেন পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অশ্বিনীকুমার দত্ত, ঔপন্যাসিক মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন। ইতালিতে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হলেন পিয়ার্সন। 

আর এ বছর জন্মালেন শিবনারায়ণ রায়, কবীর চৌধুরী। 

এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান আয়ারল্যান্ডের কবি ডব্লিউ. বি. য়েটস্ (১৮৬৫- ১৯৩৯)। 

তাঁকে নোবেল প্রাইজ দেওয়ার কারণ হিসেবে নোবেল কমিটি লেখেন- 

‘For his always inspired poetry, which in a highly artistic form, gives expression to the spirit of a whole nation.’ 

তাঁর বিখ্যাত রচনাবলীর মধ্যে উল্লেখনীয় ‘The Countess Cathleen’, ‘দ্য ট্রেমালিং ভেইল’, ‘দ্য কেলটিক ট্যুইলাইট’। 

প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকা : প্রকাশ পায় শরৎচন্দ্রের ‘দেনাপাওনা’, অক্ষয়চন্দ্র সরকারের রূপক ও রহস্য’, গিরিশচন্দ্র বসুর ‘উদ্ভিদ জ্ঞান’, দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’, সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘মরীচিকা’। প্রকাশিত হয় রিকের ‘সনেটস্ টু অর্ফিয়ুস’, ‘ডুইনো এলেজিস্’, আদ্রে মোরোয়ার ‘এরিয়েল, জাঁ ককতোর ‘দি গ্রান্ড একার্ট’, বার্নার্ড শ’র ‘সেন্ট জোয়ান’। 

দীনেশরঞ্জন দাশ (১৮৮৮–১৯৪১) সম্পাদিত ‘কল্লোল’ পত্রিকার প্রকাশ, সহ-সম্পাদক : গোকুলচন্দ্ৰ নাগ (১৮৯৪–১৯২৫)। বের হয় চিত্তরঞ্জন দাশের ‘Forward’ পত্রিকা। বাংলার শ্রমজীবী মানুষের প্রথম পত্রিকা ‘সংহতি’ প্রকাশিত হল। 

মোবারক আলীর কাব্য ‘কাইয়ের ঘাট হাঙ্গামার কবিতা’ গ্রন্থটি বাজেয়াপ্ত হল। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *