১৯০১। বয়স ২ বছর
জীবনানন্দের অনুজ অশোকানন্দের জন্ম: ১২ অক্টোবর, ১৯০১ খ্রিস্টাব্দ; ২৫ আশ্বিন ১৩০৮ বঙ্গাব্দ। অশোকানন্দের ডাকনাম ভেবলু। তাঁর মৃত্যু: ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ ফাল্গুন ১৩৯৮ বঙ্গাব্দ, শনিবার।
অশোকানন্দের জন্মের সময় জীবনানন্দের বয়স ২ বছর ৭ মাস ২৭ দিন, সত্যানন্দের ৩৮, কুসুমকুমারীর ২৬।
সত্যানন্দ দাশের সম্পাদনায় ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকা প্রকাশিত হল। এটা বরিশাল ব্রাহ্মসমাজের মাসিক মুখপত্র। এতে সত্যানন্দের বহু চিন্তামূলক রচনা ও কুসুমকুমারীর অনেক কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। ৩৮ বছর সচল ছিল এই পত্রিকাটি। ধর্ম, নীতি, শিক্ষা ও সমাজতত্ত্ব বিষয়ক পত্রিকা ছিল এটি।
রবীন্দ্রনাথের বয়স ৪০। বলেন্দ্রনাথের বিধবা স্ত্রী সুশীতলা বা সুশির পিতৃকুল কর্তৃক পুনর্বিবাহ দেবার চেষ্টা চলছে—এই সংবাদ পেয়ে দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশে রবীন্দ্রনাথ এলাহাবাদ গেলেন তাঁকে নিয়ে আসতে। রবীন্দ্রনাথের মনে ব্রাহ্মণ্যবোধ তখনো বর্তমান। অব্রাহ্মণ বলে কুঞ্জলাল ঘোষকে শান্তিনিকেতনের শিক্ষকতা ছেড়ে দিতে হল। এতে রবীন্দ্রনাথের সম্মতি ছিল। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে পতিসর জমিদারির কাছারিতে রবীন্দ্রনাথ আবিষ্কার করলেন। প্রিয়নাথ সেনের ব্যবস্থায় রবীন্দ্রনাথের বড় মেয়ে মাধুরীলতার সঙ্গে বিহারীলাল চক্রবর্তীর পুত্র মজঃফরপুরের উকিল শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তীর বিয়ে হয়। মাধুরীলতার বয়স তখন ১৫।
দীর্ঘ ৬৪ বছরকাল রাজত্ব করবার পর ইংল্যান্ডের রানি ভারতের সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়া মারা যান। তাঁর ছেলে সপ্তম এডওয়ার্ড ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সম্রাট পদে অভিষিক্ত হন। সীমান্তের স্বাধীন উপজাতিগুলোকে দাবিয়ে রাখার জন্যে লর্ড কার্জন সিন্ধুনদের পশ্চিম দিকস্থ ভূভাগ নিয়ে ‘উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে’র সৃষ্টি করলেন।
ব্রিটিশ-ভারতে চতুর্থ বারের মতো লোকসংখ্যা গণনা করা হয়। আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলার লোকসংখ্যা ২ কোটি ৮৯ লক্ষ। বৃদ্ধির হার ০.০০৭২। ৪০০ জন মুসলমান নারী ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বলে আদমশুমারির রিপোর্টে বলা হয়।
চীন সম্রাট ইউরোপীয় শক্তিপুঞ্জের কাছে পিকিং ও সাংহাই নগরীর কতকাংশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। জগদ্বিখ্যাত তুর্কি সেনাপতি গাজী উসমান পাশা মৃত্যুবরণ করেন।
জগদীশচন্দ্র বসু ‘জড় ও জীবের সাড়া বিষয়ে তাঁর আবিষ্কারের প্রমাণ দিলেন ইংল্যান্ডের রয়েল সোসাইটিতে। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস’ প্রতিষ্ঠা করলেন।
এ বছর জন্মেছেন সুকুমার সেন, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী, মণি সিংহ, আব্বাস উদ্দীন আহমদ, মনোজ বসু, প্রমথনাথ বিশী প্রমুখ।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান ফ্রাঙ্কোইজ আরমান্ড সুলী প্রুধোম (১৮৩৯— ১৯০৭)। দার্শনিক কবি। ফ্রান্সের অধিবাসী পুরস্কার দেওয়ার কারণ হিসেবে নোবেল কমিটি লেখেন—
‘In special recognition of his poetic composition which gives evidence of lofty idealism, artistic perfection and a bare combination of the qualities of both heart and intellect.’ সুলী প্রুধোমের বিখ্যাত রচনা ইমপ্রেশন্স অব ওয়ার’, ‘হ্যাপিনেস’।
এ বছর লিও টলস্টয়কে নোবেল প্রাইজ না দেওয়ায় সারা বিশ্বে সমালোচনার ঝড় ওঠে। উল্লেখ্য, তালিকার চূড়ান্ত পর্যায়ে টলস্টয়ের নাম ১০ বার অন্তর্ভুক্ত হলেও তাঁকে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয়নি। নানা সময়ে নোবেল পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন টলস্টয়, ম্যাক্সিম গোর্কি, গী দ্য মোপাসাঁ, হেনরিক ইবসেন, এজরা পাউন্ড, অগাস্ট স্টিন্ডবার্গ, সুইনবার্গ, আঁন্দ্ৰে মোলারক্স, টমাস হার্ডি, হেনরি জেম্স, পল ভালেরি প্রমুখ।
প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকা : প্রকাশ পায় রবীন্দ্রনাথের ‘ঔপনিষদিক ব্ৰহ্ম’, ‘নৈবেদ্য’, ‘গল্পগুচ্ছ ২য় খণ্ড’। ‘ভারতী’ পত্রিকায় তাঁর ‘চিরকুমার সভা’ ও ‘নষ্টনীড়’ ধারাবাহিক বেরোচ্ছে। যোগেন্দ্রচন্দ্র বসুর ‘নেড়া হরিদাস’, যোগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ‘চা কুলির আত্মকাহিনী’, যদুনাথ সরকারের ‘হিস্ট্রি অব ঔরংজীব’ প্রকাশিত হয়। কিপলিঙের ‘কিম’, এইচ.জি. ওয়েলসের দি ফার্স্ট ম্যান অন দি মুন’ প্রকাশ পায়। কংগ্রেস নেতা দাদাভাই নৌরজীর ‘Poverty and Un- British Rule in India’র প্রকাশ ঘটে।
প্রকাশ পায় রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ পত্রিকা।