১৯০৪। বয়স ৫ বছর
মোতির মায়ের দুই ছেলে মোতিলাল ও শুকলাল ছিল জীবনানন্দের বালকবেলার নিত্যসঙ্গী, খেলার সাথি জীবনানন্দ ওদের দুজনের কাছ থেকে ছিপ ফেলে মাছ ধরার কৌশল শিখেছিলেন। বাড়ির পাশের বাঁশঝাড় থেকে ছিপ সংগ্রহ করা হতো। তার পর মশার কামড় খেয়ে ঝোপঝাড়ের মধ্যে বসে পুকুর বা ডোবায় ছিপ ফেলে মাছ ধরতেন জীবনানন্দ। রাজমিস্ত্রি মুনিরুদ্দি, বাগানের মালি অলি মামুদ, দুধ বিক্রেতা প্রহ্লাদ এই সময় জীবনানন্দের অতি প্রিয় হয়ে উঠেছিল।
প্রহ্লাদ ছিল সার্থক চাষী। রোজ সকালে দুধ দিয়ে যেত সত্যানন্দের বাড়িতে। মাঝে মাঝে সত্যানন্দের দুই ছেলেকে নিজের গ্রামে নিয়ে যেত। শস্যের ভারে নত ধানের খেত দেখাত দুজনকে। খোকাবাবুর কবিতাপাঠ প্রহ্লাদের খুব ভালো লাগত।
রবীন্দ্রনাথের বয়স ৪৩। শান্তিনিকেতনে ফেব্রুয়ারিতে বসন্তরোগের প্রাদুর্ভাব হলে বিদ্যালয় শিলাইদহে স্থানান্তর করলেন কবি। ২৮ মে বিদ্যালয় শান্তিনিকেতনে ফিরে এল। বিদ্যালয়ের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। স্কুলের অর্থ সংগ্রহের জন্যে ‘হিতবাদী’র প্রকাশককে দু’হাজার টাকার বিনিময়ে রবীন্দ্র-গ্রন্থাবলীর স্বত্ব বিক্রি করে দিলেন কবি। ‘বঙ্গভাষার লেখক’ গ্রন্থের জন্যে রবীন্দ্রনাথ প্ৰথম আত্মজীবনী রচনা করলেন। আত্মজীবনী পড়ে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় উষ্মা প্রকাশ করেন। পত্রে দীর্ঘ বাদানুবাদের পর দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বন্ধুত্ব ছিন্ন হয়ে যায়।
লর্ড কার্জনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়-আইন প্রণীত হলে শিক্ষার ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। সমবায় সমিতি আইন রচিত হয়। প্রাচীন সৌধ-সংরক্ষণ আইন তৈরি হয়। লর্ড কার্জন ঢাকা এলেন এবং কার্জন হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন।
তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামা রুশ-সম্রাটের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন সন্দেহে কার্জন তিব্বতে সৈন্য প্রেরণ করেন। ইংরেজ সেনাপতি রাজধানী লাসা অধিকার করলে দালাই লামা সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে সন্ধি স্থাপন করেন।
বক্সার-বিদ্রোহ দমনের ছলে রুশ সম্রাট মাঞ্চুরিয়ায় প্রচুর সৈন্য পাঠালে জাপান-সম্রাট প্রতিবাদ করেন। কালক্রমে উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধে। রুশ-জাপান যুদ্ধে জাপান জয়লাভ করলে ভারতীয়রা উল্লসিত হয়। ইঙ্গ-ফরাসি আঁতাতের ফলে মিশর, মরক্কো, শ্যামদেশ, পশ্চিম আফ্রিকা ও নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের ঔপনিবেশিক স্বার্থ নিয়ে দু’টি সাম্রাজ্যলোভী দেশ সমঝোতায় আসে।
এ বছর জন্মেছেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, অন্নদাশঙ্কর রায়, হেমচন্দ্র বাগচী, রাধারাণী দেবী, মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন, সৈয়দ মুজতবা আলী।
আন্তন চেখভের মৃত্যু হয় এ বছর। সুপ্রসিদ্ধ ইংরেজ কবি স্যার এডুইন আর্নল্ড মৃত্যুবরণ করেন।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান ফ্রান্সের কবি এইচ.পি. মিস্ত্রাল (১৮৩০–১৯১৪) ও স্পেনের আধুনিক নাট্যশৈলীর জন্মদাতা যোশে এচেগারে (১৮৩৩–১৯১৬)।
মিস্ত্রালকে পুরস্কার দেওয়ার কারণ হিসেবে কমিটি লেখেন—
‘In recognition of the fresh originality and true inspiratoin of his poetic production.’
মিস্ত্রালের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Mierio’, ‘Calendau’, ‘Nerto’, ‘La Reino dou Rose’. আর এচেগারের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ – La esposa del vengador, En el puno de La espenda’, ‘Conflicto entre dos deberes.’
প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকা : শিবনাথ শাস্ত্রীর ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’, কায়কোবাদের ‘মহাশ্মশান’, সখারাম দেউসকরের ‘দেশের কথা’, দীনেশচন্দ্র সেনের ‘রামায়ণী কথা’, ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ‘হরিদাসের গুপ্তকথা’, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর জিজ্ঞাসা’, দীনেন্দ্রকুমার রায়ের ‘পল্লীচিত্র’, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ‘মতিচূর ১ম খণ্ড’, ‘স্ত্রী জাতির অবনতি’ (এই গ্রন্থটিতে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থগুলোতে নারী সম্পর্কিত বিকৃত বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করা হয়) প্রকাশিত হয়। জেম্স বারীর ‘পিটার প্যান’ গ্রন্থটি আত্মপ্রকাশ করে।
ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় ‘সন্ধ্যা’ নামক একটি পত্রিকা বের করলেন।