মহারাজ বীরচন্দ্ৰ মাণিক্য তাঁর পাটরানীর মৃত্যুশোকে তীৰ্থ করতে গেলেন বৃন্দাবনে। রাজাদের শোকের বহর বোঝা যায় শ্রাদ্ধের আড়ম্বর দেখে। মহারানী ভানুমতী সৌভাগ্যবতী, তাঁর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান হল দু’জায়গায়, রাজধানী আগরতলায় এবং বৃন্দাবনের পুণ্যস্থানে। রাজকোষ থেকে খরচ হল এক লক্ষ টাকা। আর কোনও রানীর পারলৌকিক কাজের জন্য এই বিপুল অৰ্থ ব্যয় কল্পনাই করা যায় না। ত্রিপুরার অনুষ্ঠানে বীরচন্দ্র সারাদিন অভুক্ত থেকে যজ্ঞ করেছেন, তার চক্ষু দুটি অশ্রুসজল। ব্ৰাহ্মণদের বস্ত্ৰ, স্বর্ণখণ্ড ও একশো গোবৎস দান করেছেন, সবাই ধন্য ধন্য করেছে রাজার নামে। বৃন্দাবনে এসে মহারাজ দেড় হাজার ব্ৰাহ্মণকে ভোজ দিয়েছেন, এতবড় শ্ৰাদ্ধবাসর এখানকার মানুষ বহুদিন দেখেনি। অনেকে বলাবলি করতে লাগল, অতদূর থেকে এসে ত্রিপুরার রাজা জয়পুরের রাজাদেরও টেক্কা দিয়েছেন।
তবে বৃন্দাবন শোক প্রকাশের উপযুক্ত স্থান নয়। নামমাহাত্ম্যেই অনেক কথা মনে পড়ে। আকাশে কাজল বৰ্ণ মেঘ দেখে মনে পড়ে এক বংশীধারী চিরকিশোরের কথা, যমুনার তরঙ্গে ভেসে ওঠে চিরকালেই প্রেমিকা রাধার মুখচ্ছবি। সেই রাখালের দল ও গোয়ালিনীরা আর নেই বটে, কিন্তু বাতাসে কান পাতলে যেন শোনা যায় তাদের গান ও কলহাস্য। বৃন্দাবনের পথের ধুলোতেও ছড়িয়ে আছে রাধা-কৃষ্ণের স্মৃতি। বীরচন্দ্রের কবি মন উতলা হয়ে ওঠে।
মহারাজ আরও কয়েকটি তীর্থদর্শনে যাবেন ভেবেছিলেন, কিন্তু তড়িঘড়ি ফিরে এলেন ত্রিপুরায়। রাধারমণ ঘোষ, ধনঞ্জয় ঠাকুর, নবধ্বজ সিংহ প্রমুখ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ পারিষদকে ডেকে ব্যক্ত করলেন তাঁর হৃদয়ের বাসনা, তিনি কুমারী মনোমোহিনীকে অবিলম্বে বিয়ে করতে চান। এ বিবাহ নিছক ইন্দ্ৰিয় সুখের জন্য নয়। এই প্রৌঢ় বয়সে তিনি আবার বরের টোপর মাথায় দিতে চান নেহাত বাধ্য হয়ে। এক মহান দায়িত্ব পালনের জন্য। মৃত্যুর আগে মহারানী ভানুমতী তাঁর এই ইচ্ছে জানিয়ে গেছেন। মহারানীর শেষ ইচ্ছে পালন করা তার অবশ্য কর্তব্য।
এ প্রস্তাব শুনে কেউই বিস্মিত হলেন না। রাধারমণ বললেন, তা হলে কন্যাটিকে তার পিত্ৰালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। আগামী বৎসর শুভদিনক্ষণ দেখে …
তাকে বাধা দিয়ে নবধ্বজ বললেন, আগামী বৎসর? এত দেরি করতে হবে কেন?
বীরচন্দ্ৰ হাসতে লাগলেন।
নরধ্বজ বললেন, শুভস্য শীঘ্রম। এই মাসেই শুভদিন আছে।
ধনঞ্জয় ঠাকুর চুপ করে রইলেন। তিনি জানেন, এই বিবাহের প্রধান উদ্যোক্তা নবধ্বজ। মহারাজ বীরচন্দ্র ইচ্ছে করলেই মনোমোহিনীকে কাছুয়া হিসেবে অন্তঃপুরে রাখতে পারতেন, কিন্তু তিনি ওই মেয়েটিকে বিবাহের স্বীকৃতি দিচ্ছেন নরধ্বজের চাপে। নবধ্বজের মৃতা ভগিনীর কন্যা এই মনোমোহিনী।
বীরচন্দ্র বললেন, তোমরা বাঙালিবাবুদের রীতি নীতি জান না। ওদের পরিবারে কেউ মারা গেলে এক বছর কালাশৌচ চলে। কী ঘোষমশাই, তাই না? বিয়ের কনে আসে বাপের বাড়ি থেকে, তাই ও মনোকে এখন বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলছে।
নরধ্বজ অপ্ৰসন্নভাবে বললেন, বাঙালিবাবুদের রীতি এ রাজ্যে চলবে কেন? বউ মরে গেলে কি কেউ আর সন্দেশ খায় না? সন্দেশ খাবার ইচ্ছে হল আজ, আর খাবে এক বছর পরে। এসব আমরা বুঝি না।
এই বিচিত্র উপমা শুনে রাধারমণ চুপ করে গেলেন।
ধনঞ্জয় ঠাকুর বললেন, ক্ষত্রিয়দের স্ত্রী বাপের বাড়ি থেকে সেজোগুজে দোলায় চেপে আসে না। ক্ষত্রিয়রা কন্যা লুণ্ঠন করে আনে।
নরধ্বজ বললেন, আমাদের মতে পঁচিশ তারিখটাই একটা শুভদিন। সেদিনই তা হলে ব্যবস্থা করা যাক। আমার ইচ্ছে একটা ইংলিশ ব্যান্ড পাটি আনা হোক চিটাগাং থেকে। ঘোষমশাই, তাতে কত খরচ পড়বে?
রাধারমণ গলা খাঁকারি দিয়ে বুললেন, মহারাজ সম্প্রতি বৃন্দাবন ঘুরে এলেন, দুটি শ্ৰাদ্ধ অনুষ্ঠানে অনেক খরচ হয়েছে, রাজকোষে বিশেষ অর্থ নেই। বালিশিরার পাহাড় ইংরেজ কোম্পানিকে ইজারা দিয়ে যে লক্ষ মুদ্রা পাওয়া গিয়েছিল, তারও কিছু আর অবশিষ্ট নেই। সেই জন্যই আমি বলছিলাম, উৎসবটা যদি আর কিছুদিন পরে করা যায়-
বীরচন্দ্র বললেন, না, না, ওসব ইংলিশ ব্যান্ড-ফ্যান্ড মোটেই চাই না। ধুমধাম করে বড় গোছের উৎসবেরই প্রয়োজন নেই। নমো নমো করে বিয়ে সারতে হবে। পুরুতরা শ্ৰাদ্ধের সময় অনেক কিছু পেয়েছে, সব এখনও হজম হয়নি, এবারে তাদের হাতে দু’পাঁচ টাকা গুজে দেবে। ভানুমতীর অলংকারের অর্ধেক রেখে দেওয়া হবে সমরের বউয়ের জন্য, বাকি অর্ধেক মনো পাবে। নতুন গয়নাগাটিও গড়াতে হবে না! নবধ্বজ, পঁচিশ তারিখ কেন, আরও আগে দিন নেই? এই সপ্তাহের মধ্যেই দেখো না!
ধনঞ্জয় বললেন, তা ঠিক। সন্দেশ খাবার জন্য পঁচিশ তারিখ পর্যন্তই বা অপেক্ষা করতে হবে কেন?
আগামী মঙ্গলবার, অর্থাৎ আর পাঁচ দিন পরেই বিবাহের লগ্ন নির্ধারিত হয়ে গেল। প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে। অন্দরমহলে চলল নানা রকম কানাকানি। অন্য রানীরা ঠোঁট বেঁকিয়ে কুৎসা ছড়াতে লাগল মনোমোহিনীর নামে, এ মেয়ে যখন তখন প্রাসাদের বাইরে যায়, অন্য পুরুষদের সঙ্গে কথা বলে, এমন মেয়ে রাজরাণী হবার যোগ্যই নয়। রাজকুমারীরাও এই দস্যি স্বভাবের কিশোরীকে তেমন পছন্দ করে না, ভানুমতীর মৃত্যুর পর তারা মনোমোহিনীকে নানা ছুতোয় নিপীড়ন শুরু করেছিল, একজন তো ঝগড়া বাঁধিয়ে কাঁচি দিয়ে কেটে দিয়েছিল মনোমোহিনীর অনেকখানি চুল, এখন তারা সন্ত্রস্ত হয়ে উঠল, মনোমোহিনী পাটরানী হয়ে বসলে তাদের ওপর প্রতিশোধ নেবে। বিয়ের পর অন্তত ছ’মাস এই অল্প বয়েসী রানী মহারাজের প্ৰিয়তমা হয়ে তো থাকবেই।
মনোমোহিনী অবশ্য এই সংবাদ শুনে কোনও ভাবান্তর দেখাল না। সে আগেরই মতন ধেই ধেই করে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। বিরজা নামে এক মাসি সম্পৰ্কীয়ার সঙ্গে সে রাত্রে শোয়, বিরজা তাকে রানী হিসেবে যোগ্য করে তোলার জন্য নানান উপদেশ দেবার চেষ্টা করল বটে, কিন্তু কে শোনে কার কথা!
বীরচন্দ্রের বৈধ পুত্রকন্যার সংখ্যা পঁচিশ। ন’জন পুত্রের মধ্যে রাধাকিশোর যেমন জ্যেষ্ঠ, রাজকুমারীদের মধ্যে তেমনি অনঙ্গমোহিনীরই জন্ম হয়েছে সকলের আগে। যুবরাজ রাধাকিশোরের বয়েস এখন কুড়ি, অনঙ্গমোহিনীর জন্ম হয়েছে সকলের আগে। অনঙ্গমোহিনীর বয়েস তেইশ। অনঙ্গমোহিনীর স্বামী গোপীকৃষ্ণ ঠাকুর এ রাজ্যের একজন উজির। অনঙ্গমোহিনী শৈশব থেকেই তার পিতার খুব প্রিয়, প্রথম সন্তানের প্রতি সব পিতারই বিশেষ টান থাকে। অনঙ্গমোহিনী নিজের চেষ্টায় লেখাপড়া শিখেছে, সেও কবিতা রচনা করে। ত্রিপুরার রাজকবি মদন মিত্তিরের মতে, অনঙ্গমোহিনীর কবিতা অতি উচ্চাঙ্গের, কলকাতার পত্র-পত্রিকায় ছাপা হলে অবিলম্বে তার খ্যাতি ছড়িয়ে যাবে। কিন্তু অন্তঃপুরের এক বধূর কবিতা মুদ্রিত হলে কেরানি, ভবঘুরে, সাধারণ পাচপেঁচি ধরনের লোকও পড়ে ফেলবে, এ যে অকল্পনীয় ব্যাপার। বে-আব্রু হতে আর বাকি থাকল কি! অনঙ্গমোহিনীর কবিতা এখানকার অতি ঘনিষ্ঠ দু’চারজনই শুধু পড়ে, তার বাবা একজন উৎসাহী সমঝদার।
অনঙ্গমোহিনী স্বামীর সঙ্গে অন্য বাড়িতে থাকলেও রাজপ্রাসাদে প্রায়ই আসে, এখানে তার নিজস্ব কক্ষটি অন্য কেউ দখল করতে পারেনি। অন্দরমহলের মহিলাদের কলহে অনঙ্গমোহিনী হস্তক্ষেপ করে, দৃঢ়ভাবে মতামত দেয়, তার কথা কেউ সহজে অগ্রাহ্য করতে পারে না। সকলেই জানে, মহারাজ তাঁর এই প্রিয় কন্যাটির কথার গুরুত্ব দেন।
পিতার এই আকস্মিক নতুন বিবাহের বাসনা অনঙ্গমোহিনীর একেবারেই পছন্দ হল না। ভানুমতীর সঙ্গে অনঙ্গমোহিনীর বনিবনা ছিল না। ভানুমতীরই মনোনীতা এটুকু পুঁচকে মেয়ে তার মাতৃস্থানীয় হবে, এটা অনঙ্গমোহিনী মেনে নিতে পারে না কিছুতেই। মণিপুরিদের দাপটে আর একটি মণিপুরি কন্যাকে যদি রাজপরিবারের বধূ হিসেবে আনতেই হয়, তা হলে যুবরাজ রাধাকিশোরের সঙ্গেই তো তার বিয়ে দেওয়া যেতে পারে। রাধাকিশোরের এক স্ত্রী আছে অবশ্য। কিন্তু রাজা হবার পর তার রানীর সংখ্যা তো বাড়বেই।
অনঙ্গমোহিনী ভাইকে নিজের কক্ষে ডেকে পাঠাল।
যুবরাজ রাধাকিশোরের শরীর তার পিতার মতন বৃহদাকার নয়, তার মেজাজেও সে রকম দার্ঢ্য নেই। মাঝারি ধরনের গড়ন, এই বয়েসেই তার মস্তিষ্ক ধীর স্থির। বিনীত স্বভাব ও নম্র বাক্যের জন্য সকলেই তাকে পছন্দ করে। গত দেড় মাস মহারাজের অনুপস্থিতিতে মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে সে যে অতি বিচক্ষণতার সঙ্গে রাজ্য চালিয়েছে, সে কথা মহারাজ নিজেও স্বীকার করেছেন।
একটি বেতের তৈরি বেশ চওড়া চেয়ারে বসে আছে অনঙ্গমোহিনী, জরির কাজ করা শাড়ি পরা, তার মুখখানি গোল ধরনের, কিন্তু দু’চোখে বুদ্ধির দীপ্তি। একটা রুপোর পাত্র থেকে সে শুকনো খেজুর তুলে তুলে খাচ্ছে। ধুতি ও বেনিয়ান পরা রাধাকিশোর সে ঘরে প্রবেশ করতেই অনঙ্গমোহিনী বলল, আয় ভাই, বোস। তারপর সে নিজেই উঠে গিয়ে দ্বার বন্ধ করে দিল।
রাধাকিশোর বলল, কী ব্যাপার, এত জরুরি তলব? আমি দরবারে যাচ্ছিলাম।
অনঙ্গমোহিনী বলল, পরে যাবি। তুই খেজুর খেতে ভালবাসিস। এই দেখ কত বড় বড় আরবি খেজুর। মির্জা মহম্মদ এনে দিয়েছে ঢাকা থেকে।
রাধাকিশোর দুটি খেজুর তুলে নিয়ে মুখে পুরল। অতি উত্তম আরবি খেজুর, কিন্তু তার স্বাদ নেবার পর রাধাকিশোরকে তেমন পুলকিত দেখাল না।
অনঙ্গমোহিনী বলল, নে, আরও নে!
রাধাকিশোর বলল, নাঃ, আর থাক! ছোটবেলায় এই খেজুর সত্যিই আমার খুব প্রিয় ছিল, তোমার সঙ্গে কড়াকাড়ি করে খেতাম। কিন্তু এখন আর তেমন ভাল লাগছে না। ছোটবেলার অনেক কিছুই পরে বদলে যায়।
অনঙ্গমোহিনী বলল, এখন তুই কী খেতে ভালবাসিস রে?
– সে সব কথা পরে হবে। এখন তোমার কাজের কথাটা বল তো দিদি। আমার তাড়া আছে।
— শোন রাধু, তোকে আর একটা বিয়ে করতে হবে।
— তা তুমি আদেশ করলে আর একটা বিয়ে করব, এ আর বড় কথা কী! তোমার শ্বশুরবাড়ি কোনও সোমথ ননদ আছে বুঝি? অলঙ্কারাদি যদি ভালোমতন দেয়, ছাদনাতলায় গিয়ে বসে পড়ব!
— আমার কোনও ননদের কথা নয়। ওই যে মণিপুরি মেয়েটা, মনোমোহিনী, বেশ ডাগর চেহারা, তুই ওকে বিয়ে করছিস না কেন?
যেন চোখের সামনে একটা সাপ দেখেছে, এইভাবে শিউরে উঠল রাধাকিশোর। চক্ষুতুটী বিস্ফরিত করে চেয়ে রইল কয়েক মুহূর্ত। তারপর বলল, তুমি কী বলছ দিদি? ওর সঙ্গে কার বিয়ে ঠিক হয়েছে শোননি?
অনঙ্গমোহিনী বলল, শুনব না কেন? আমি বাবাকে বুঝিয়ে বলব, ওই মেয়েটির সঙ্গে তোর বিয়ে হলেই ভালো হবে।
রাধাকিশোর আতঙ্কিত মুখে দরজা-জানালাগুলির দিকে একবার চেয়ে দেখল। কেউ শুনছে কি না। তারপর কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, তুমি কি আমার সর্বনাশ করতে চাও দিদি? তোমার মুখে ও কথা শোনা মাত্র বাবা ভাববেন, ও মেয়েটার ওপর আমার বুঝি লোভ আছে। ভরতের কি হয়েছে তুমি জানু না? বড় রানীর মৃত্যুর আগে থেকেই ও মেয়েটির প্রতি পিতাঠাকুরের আসক্তি হয়েছে। তিনি ওকে বিয়ে করতে বদ্ধপরিকর। খবরদার, তুমি এরকম কথা আর ভুলেও উচ্চারণ করো না!
অনঙ্গমোহিনী খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। এই সব বিষয় সে কিছুই জানত না। সে জিজ্ঞেস করল, ভরত কে?
রাধাকিশোর বলল, সে ছিল একটা কাছুয়ার ছেলে। যতদূর জানি, সে অতি নিরীহ, পড়াশুনো নিয়ে থাকত। ওই মেয়েটা তার সঙ্গে আশনাই করতে গিয়েছিল। একটু জানাজানি হতেই সে ছোড়াটাকে খতম করে দেওয়া হয়েছে। ও মেয়ে বিষকন্যা, যাকে ছোবে… আমার সঙ্গেও ভাব জমাতে এসেছিল, আমি চেঁচিয়ে মেচিয়ে, লোকজনদের শুনিয়ে তাকে ধমকেছি! বাপরে বাপ, এমন কথা আর বলো না দিদি!
অনঙ্গমোহিনী বিরক্তিমাখা মুখ নিয়ে একটুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, কিন্তু তুই বুঝতে পারছিস না, রাধু, ওই মেয়েটা যদি পাটরানী হয়ে বসে, তা হলে কী বিপদ হবে? ও সমরেন্দ্রর মাসি হয়। ওরা দু’জনে মিলে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে। বাবার মনটা ঘোরাবার চেষ্টা করবে! এবার রাধাকিশোরের মুখে ক্ষীণ হাসি ফুটে উঠল। আর একটা খেজুর মুখে দিয়ে বলল, ষড়যন্ত্রকে কি ভয় পেলে চলে? সৰ্বক্ষণই তো কিছু না কিছু চলছে। নিজের বুদ্ধির ওপর ভরসা রাখতে হয়। তুমি এসব নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করো না। বরং পিতাঠাকুরের এই বিয়েতে খুশির ভাব দেখাও। ভবিষ্যতে কী হয় দেখা যাবে।
অনঙ্গমোহিনী উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ভবিষ্যতে সব সময় আমি তোর সঙ্গে থাকিব, রাধু। আমাকে জানাবি সব কথা!
এই বিবাহের আর একটি বাধা এল সম্পূর্ণ এক অন্য দিক থেকে।
বড় উৎসব না হলেও কয়েক সহস্র মুদ্রা তো ব্যয় হবেই, মহারাজার সচিব রাধারমণ ঘোষের সেটাই প্রধান চিন্তা। রাজা-রাজড়ার বিয়ে চুপি চুপি সারা যায় না, রাজধানীর প্রধান ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে, হাতি-ঘোড়ার মিছিল বের হবে, মহারাজার নতুন সাজ-সজ্জা বানাতে হবে, পুরনো পেশাকে বিয়ে হয় না। রাজকোষের অবস্থা ভালো নয়, প্রজাদের কাছ থেকে বকেয়া কর আদায়ের জন্য ঘোষমশাই জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ জন্য তাঁকে ছুটতে হচ্ছে রাজধানী ছেড়ে বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলে।
একদিন দুপুর বেলা ঘোষমশাই স্নানাহারের জন্য ফিরলেন নিজের বাড়িতে। সারা সকাল বিভিন্ন কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালাতে হয়েছে, সেইজন্য তিনি কিঞ্চিৎ ক্লান্ত। তাঁর পরিবার এখানে নেই, তিনি একা থাকেন। সিঁড়ি দিয়ে উঠে এসে পোশাক ছাড়বার জন্য নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে তিনি বৈঠকখানায় কিসের যেন একটা শব্দ পেলেন। উকি দিয়ে দেখলেন, তক্তপোশের ওপর বসে আছে এক আগন্তুক, ধুতির ওপর কাপালিকদের মতন টকটকে লাল রঙের একটা লম্বা আলখাল্লা পরা, মুখে জ্বলন্ত চুরুট, একখানি বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছে মনোযোগ দিয়ে।
ঘোষমশাই দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই আগন্তুকটি মুখ ফিরিয়ে কাষ্ঠ হাসি দিয়ে বললেন, দ্বিপ্রহরের প্রণাম, কেমন আছ হে ঘোষজা, অনেকক্ষণ বসে আছি তোমার জন্য! রাধারমণ ঘোষের মুখমণ্ডলে তাঁর অন্তরের অনুভূতির প্রকাশ সহজে ঘটে না। ভাব গোপন করার জন্য তিনি প্রসিদ্ধ। কিন্তু এই ব্যক্তিটিকে দেখে তিনি যেন সর্বাঙ্গে চমকিত হলেন। অস্ফুট স্বরে বললেন, কৈলাস?
আগন্তুক বললেন, কেন, চিনতে পারছ না নাকি? আমার এই চাঁদবদনখানির তেমন তো বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। মাঝে কিছুদিন দাড়ি রেখেছিলাম, পোষালো না, গর্মির সময় বড় কুটকুট করে! এসো, এসো, বসো, খুব অবাক হয়েছ মনে হচ্ছে? এখন অবধি সাদর সম্ভাষণও করলে না?
তক্তপোশের অন্য কোণে বসে রাধারমণ শুষ্ক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার, কৈলাস? হঠাৎ ত্রিপুরায় এলে কী মনে করে?
কৈলাস বললেন, বাঃ, পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে আসতে পারি না? তুমি কেমন আছ, দেখতে এলাম! তা বেশ ভালোই তো গুছিয়ে বসেছ মনে হচ্ছে। বোধ করি এ রাজ্যের প্রধান মন্ত্রী হবার পথে তোমার আর কোনও প্রতিবন্ধক নেই!
রাধারমণ মুখ নিচু করে দ্রুত চিন্তা করতে লাগলেন। কৈলাসচন্দ্র সম্পর্কে তাঁর এটা অপরাধবোধ আছে। ত্রিপুরায় আসারও আগে কৈলাসচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর পরিচয়, এখানে এসে কৈলাসচন্দ্ৰই ছিলেন তাঁর প্রথম বন্ধু। কৈলাস বুদ্ধিমান, লেখাপড়া জানা মানুষ, ইতিহাস-সচেতন, তাঁর সঙ্গে কথা কয়ে সুখ ছিল।
কৈলাসের বাড়ি ত্রিপুরায়, পড়াশুনো করতে গিয়েছিলেন কলকাতায়। তাঁর বাবা গোলোকচন্দ্ৰ সিংহ ছিলেন এখানকার রাজস্ব বিভাগের সেরেস্তাদার। রাজপরিবারের সঙ্গে ওঁদের পরিবারের অনেক দিনের সম্পর্ক। কলকাতা থেকে ফিরে কৈলাসও রাজস্ববিভাগে চাকরি পেয়েছিলেন, রাধারমণ ও কৈলাস এক সঙ্গে অনেক সময় কাটাতেন, দু’জনে এ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেরিয়েছেন। হঠাৎ এক সময় মহারাজ বীরচন্দ্রের সঙ্গে কৈলাসের মতান্তর, মনান্তর ও শক্ৰতা শুরু হয়ে গেল। পূর্ববর্তী রাজা ঈশানচন্দ্রের অকাল মৃত্যুর পর তাঁর অন্যান্য ভাইদের কোনও রকম সুযোগ না দিয়েই বীরচন্দ্র সিংহাসন দখল করে নিয়েছেন। অন্য দুই ভাইয়ের সঙ্গে মামলা-মোকদ্দমা জিতে আইনসঙ্গত করে নিয়েছিলেন নিজের অধিকার। রাজত্ব বেশ ভালোই চালাচ্ছিলেন বীরচন্দ্র, কিছুদিন পর আবার একটা ঝঞাট শুরু হল। ঈশানচন্দ্রের নাবালক পুত্র নবদ্বীপচন্দ্ৰ বয়ঃপ্ৰাপ্ত হতেই একটি গোষ্ঠি থেকে দাবি তোলা হল তার পক্ষে। আগেকার রাজার ছেলেই যখন উপযুক্ত হয়েছে, তখন সে-ই তো সিংহাসনের উত্তরাধিকারী, কাকা বীরচন্দ্র এতদিন অভিভাবক হিসেবে রাজ্য চালিয়েছেন, বেশ ভালো কথা, এবার তিনি সরে আসুন! একবার সিংহাসন পেলে কে তা ছাড়ে? তা ছাড়া বীরচন্দ্ৰ মনে করেন, ব্যক্তিত্বহীন বালক নবদ্বীপচন্দ্রের চেয়ে রাজা তিনি অনেক বেশি যোগ্য। কৈলাস চলে গেল নবদ্বীপচন্দ্রের পক্ষে, প্ৰবল আন্দোলন শুরু করল এবং রাধারমণকেও টানার চেষ্টা করল নিজের দলে।
কিন্তু রাধারমণের রাজনীতি জ্ঞান তীক্ষ্ণ। তিনি বুঝেছিলেন, রাজনীতিতে ন্যায়-অন্যায়ের সূক্ষ্ম বিচার চলে না। আখের গুছিয়ে নিতে হলে যে বেশি ক্ষমতা শালী, তার পক্ষেই থাকতে হয়। রাষ্ট্রযন্ত্র এবং পুলিশ বীরচন্দ্রের হাতে, তাকে হটিয়ে নবদ্বীপচন্দ্রের পক্ষে সিংহাসন দখল করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। সুতরাং নিছক আবেগের বশে নবদ্বীপচন্দ্ৰকে নিয়ে মাতামাতি অর্থহীন। বন্ধুর পাশ থেকে সরে গেলেন রাধারমণ। এমন কি, বিধবা রানী ও নবদ্বীপচন্দ্রকে যখন কারারুদ্ধ করা হল, কৈলাসের চাকরি কেড়ে নিয়ে তাকে আরও কঠিন শাস্তি দিতে উদ্যত হলেন বীরচন্দ্র, তখনও রাধারমণ প্রতিবাদ না জানিয়ে কিছুই না জানার ভান করে রইলেন। গুপ্ত ঘাতকের হাতে অকস্মাৎ মৃত্যুই ছিল তখন কৈলাসের নিয়তি, কিন্তু যথা সময়ে ষড়যন্ত্রটি টের পেয়ে কৈলাস এ রাজ্য ছেড়ে চম্পট দিলেন। তাতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন রাধারমণ।
কৈলাস আবার ফিরে এলেন কোন সাহসে, কোন অস্ত্রবলে বলীয়ান হয়ে?
চুরুট টানতে টানতে তাচ্ছিল্যের সুরে কৈলাস বললেন, তুমি ছিলে এক নব্য শিক্ষিত বঙ্গীয় যুবক, এখন হয়েছ এক স্বৈরাচারী রাজার চাটুকার। শেক্সপিয়ার-মিল্টন মুখস্থ করেছিলেন একদা, এখন বীরচন্দ্রের যাচ্ছেতাই কবিতা শুনে বাহবা দাও! রুশো-ভলটেয়ার পড়েছিলে, এখন সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুৰ্দশার দিকে দৃকপাত কর না! বুঝলে হে ঘোষজা, আমি কুমিল্লার দিক দিয়ে ঢুকে রাজধানী পর্যন্ত পদব্রজে এসেছি। দেখলাম, গ্রামে গ্রামে সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য আরও বেড়েছে, উপজাতীয়রা একবেলাও পেট পুরে খেতে পায় না। পরণের কপনিও জোটে না। এক জায়গায় চোখে পড়ল, শীর্ণকায় একদল মেয়ে-মদ্দা জঙ্গল থেকে কচুর মূল তুলে এনে তাই সেদ্ধ করে খাচ্ছে!
রাধারমণ বললেন, এ রাজ্যের মানুষ চিরকালই তো গরিব। পাহাড়ী আদিবাসীদের অবস্থা নিয়ে কে কবে চিন্তা করেছে? জুম চাষে যে জমি নষ্ট হয়, সারা বছরের খাদ্য জুটতে পারে না, সে কথা কেউ আগে বুঝিয়েছে? আমি আস্তে আস্তে বোঝাবার চেষ্টা করছি। তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটবার জন্য আমি প্ৰাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছি!
কৈলাস বললেন, আস্তে আস্তে মানে কত আস্তে আস্তে? আমার তো মনে হল, দুর্ভিক্ষ আসন্ন, উজাড় হয়ে যাবে গ্রামের পর গ্রাম। আর এদিকে এক রানীকে মেরে ফেলে তার ছোরাদ্দে লক্ষ টাকা খরচ করছ তোমরা। বুড়ো রাজা আবার বিয়ে করতে যাচ্ছে এক কচি বাচ্চা মেয়েকে, তাতেও টাকার ছোরাদ্দ হবে। উৎকট শখে রাজা কিনছেন দামি দামি ক্যামেরা, নিরন্ন, শীর্ণ প্রজাদের ছবি তোলাতেই তার আমোদ! শুনলাম মানা ঘরে এখন ন্যাংটা মাগীদের ছবি আঁকা হচ্ছে। এইসব অনাচার-ব্যভিচারে তুমি সায় দিয়ে যাচ্ছ।
রাধারমণ এবার খানিকটা রাগতভাবে বললেন, তুমি আমার ওপর লেকচার ঝাড়তে এসেছ, কৈলাস? রাজ-রাজড়াদের জীবনযাত্রার ধরণ-ধারণ পাল্টাবার আমি কে? তুমি পারতে? সিংহাসনে যে-ই বসুক, সে-ই বিলাসিতায় গা ভাসাবে! তোমার নবদ্বীপচন্দ্ৰ এলেও অন্যথা হতো না। মুর্খেরা বেশি বিলাসী হয়। তবু আমি বলব, মহারাজ বীরচন্দ্ৰ মাণিক্য একেবারে স্বৈরাচারী নন, অন্যদের পরামর্শ গ্ৰহণ করেন, প্রজাদের অযথা পীড়ন করেন না! তিনি মদ স্পর্শ করেন না!
কৈলাস বললেন, মদ না ছুলেই চরিত্তির শুদ্ধ হয়ে গেল? আমি তো দেখেছি অনেক মদ্যপায়ী বরং উদার হয়। কলকাতার কাগজে তোমার সম্বন্ধে কী বেরিয়েছে তুমি জান। ত্রিপুরায় এখনও সতীদাহ হয়, গত মাসেই উদয়পুরের কাছে এরকম দুটি ঘটনা একই দিনে ঘটেছে। তুমি রাজার একান্ত সচিব, এ রাজ্যের অতি ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি হয়েও বর্বর প্রথা নিবারণ করতে পারনি! ছিছিছিছি, তুমি ইয়ং বেঙ্গলের বংশধর হয়েও এটা সহ্য করে যাচ্ছ!
রাধারমণ বললেন, ত্রিপুরা তোমার দেশ, আমার দেশ নয়। আমি বহিরাগত। এখানকার এই সব কুপ্ৰথা দূর করার জন্য তুমি কতখানি চেষ্টা করেছিলে? কোন সামাজিক আন্দোলন চালিয়েছ? এই সেদিন পর্যন্ত এখানে ক্রীতদাস প্রথা চালু ছিল। এখান থেকে ভারতের বহু জায়গায় দাস-দাসী ও খোজা চালান যেত, তোমরা তো সেসব জেনেশুনেও মুখ বুজে থেকেছে। মহারাজকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ক্রীতদাস প্রথা বন্ধ করার আইন জারি করেছি আমি, হ্যাঁ গর্ব করে বলতে পারি, আমার চেষ্টাতেই সেটা বন্ধ হয়েছে। সতীদাহ বন্ধ করার জন্য আমি বারবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, মহারাজ এখনও মানতে চাইছে না, ধর্মীয় প্রথা বলে ভয় পাচ্ছেন, কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে আমি সফল হবই, এই তোমাকে বলে রাখলাম। কলকাতার কাগজে যা খুশি লিখুক, আমার কিছু আসে যায় না!
একটু থেমে, নিজেকে সংযত করে রাধারমণ আবার শান্তভাবে বললেন, বেলা অনেক হয়েছে, এখন থাক ওসব কথা। কৈলাস, তুমি কি শুধু আমাকে ধমকাতেই এখানে এসেছ, না অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে?
কৈলাস ধারালোভাবে হেসে বললেন, এসেছি তোমার ওই পেয়ারের রাজার বিয়েটা বন্ধ করতে। ওকে আমি জেল খাটাব!
রাধারমণ বললেন, রাজার বিয়ে তুমি বন্ধ করবে? নিজের ক্ষমতার ওপর তোমার অত্যধিক আস্থা দেখছি। আলখাল্লার মধ্যে হাত ভেতরের জেব থেকে একটি লম্বা, সাদা রঙের লেফাফা বার করলেন কৈলাস। এক চক্ষু টিপে বললেন, এর মধ্যে কী আছে আন্দাজ করতে পারো? বীরচন্দ্রের মৃত্যুবাণ। ত্রিপুরার সিংহাসনে বসার কোনও যোগ্যতাই যে ওর নেই, তার অকাট্য প্রমাণ আমার হাতে আছে। পেট মোটা রাজা বীরচন্দ্ৰ মাণিক্যকে ছাদনাতলায় যেতে হবে না, তাকে আমি দাঁড় করাব আদালতের আসামীর কাঠগড়ায়।
রাধারমণ এক দৃষ্টি চেয়ে রইলেন লেফাফাটির দিকে। কৈলাস বললেন, ওহে ঘোষজা, তোমার এবার এখান থেকে পাট উঠল। নতুন রাজা নিশ্চয়ই তোমার মতন ঘরশক্র বিভীষণকে রাখবেন না। তুমি জিনিসপত্র গোছগাছ শুরু করে দাও, আবার নতুন কী চাকরি খুঁজবে ভাব!
রাধারমণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, এখানে চাকরি গেলেও যে আমি খেতে পাব না তা তো নয়! দু মুঠো ভাত জুটে যাবেই। আপাতত আমার ক্ষুধা পেয়েছে বেশ। তোমারও খাবার-দাবারের বন্দোবস্ত করতে হবে তো। নাকি তুমি আহারাদি সেরে এসেছ? কৈলাস বলল, খেয়ে আসব কেন? কায়স্থের বাড়িতে এসে পাত পেড়ে বসলে ভালো-মন্দ জুটে যাবেই, তা কি আমি জানি না? তোমার সেই পুরনো খানসামাটি এখনও আছে? আহা, সে বড় ভালো রাঁধে। রাধারমণ বললেন, বসো, তোমার স্নানের জল দিতে বলি গ!
ঘর থেকে বাইরে এসে রাধারমণ একটুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর দ্রুত নিজের কক্ষে গিয়ে নিয়ে এলেন বড় তালা আর চাবি। বৈঠকখানার দরজাটি টেনে বন্ধ করে বেশ সশব্দে হুড়কোতে তালা লাগাতে লাগলেন।
ভেতর থেকে কৈলাস জিজ্ঞেস করলেন, ও কী হে, ঘোষজা, দরজা বন্ধ করছ কেন?
রাধারমণ বললেন, তুমি একটু বিশ্রাম নাও, মাথাটা ঠাণ্ডা করো। তোমার বিশ্রামে যাতে কেউ ব্যাঘাত না ঘটায়, সেইজন্য দরজা আটকে দিলাম।
তারপর রাধারমণ বাইরের এক প্রহরীকে ডেকে বললেন, তুই এখানে পাহারায় থাক। ভিতরে এক বাবু আছে, যদি দরজা ভেঙে বেরুবার চেষ্টা করে, মাথায় মারিস না, পায়ে মারবি জোরে। দুই পা খোড়া করে আটকে রাখবি, প্ৰাণে মারিস না যেন!