তেরো
ইউনির্ভাসিটিতে ঢোকার মুখেই বিমানের সঙ্গে দেখা। ওকে দেখে হাত নেড়ে ডাকল।
বিমান বলল, ‘তোমার পাত্তা নেই কেন? এটা খুব অন্যায়।’
অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, ‘আমায় খুঁজছিলেন?’
‘খুঁজছিলাম মানে? তিনদিন তোমার ক্লাসে ছেলে পাঠিয়েছি, তারা এসে বলল, তুমি নেই। গতকাল তোমার হস্টেলে গিয়ে পাওয়া যায়নি। যাক, তুমি একটু অফিসে এসো, দরকার আছে।’
এখন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মনে কোনও অস্বস্তি হয় না। বাংলার ক্লাস না-করেও কোনও ছাত্র ইচ্ছে করলে ভাল রেজাল্ট করতে পারে। কতগুলো ধরা-বাঁধা প্রশ্ন এবং তার বস্তাপচা উত্তর মানেই পরীক্ষায় সেকেন্ড ক্লাস পাওয়া— এই সত্য অনিমেষের জানা হয়ে গেছে। সেদিন কোথায় যেন পড়ছিল আগেকার দিনে ম্যাট্রিক পাশ করার চেয়ে এখন ডক্টরেট পাওয়া সহজ। লোকসাহিত্য বা জয়দেব সম্পর্কে প্রচারিত বইগুলো থেকে ছেঁকে নিয়ে সাজিয়ে দিলেই সেই সাবজেক্টের থিসিস হয়ে যায়। আর যাঁর অধীনে কাজ হচ্ছে তাঁর ভালবাসা পেলেই নামের আগে ডক্টরেট বসে যাবে। কিন্তু ইদানীং ব্যাপারটার অসারতা এত স্পষ্ট যে চট করে কেউ নিজেকে ডক্টরেট বলে পরিচয় দেয় না, বিশেষত বাংলায়। অনিমেষ বিমানকে বলল, ‘চলুন।’
ছেলেমেয়েরা যে যার ক্লাসে কিংবা আড্ডায় যাচ্ছে। এখন ইউনির্ভাসিটিতে মেয়েদের সংখ্যা বোধহয় ছেলেদের থেকে বেশি। এত রকমের সাজগোজ একসঙ্গে দেখে মাথা ঠিক রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে মাঝে মাঝে। কিছুদিন হল অনিমেষ টের পাচ্ছে সে যখন ওদের পাশ দিয়ে যাওয়া-আসা করে তখন তাকে নিয়ে ফিসফাস আলোচনা হয়। সম্ভবত সেই মিটিং-এর আবিষ্কারের কথা এখন জনে জনে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
হাঁটতে হাঁটতে বিমান বলল, ‘কাল তোমাদের হস্টেলে খুব কাণ্ড হয়েছে শুনলাম।’
অনিমেষ অবাক হয়ে বিমানের দিকে তাকাল, ‘আপনি কী করে জানলেন, বিমানদা?’
‘সব খবরই আমাদের কাছে আসে। তুমি লিড করেছিলে?’
‘লিড মানে আমিই কথা বলেছিলাম এ এস-এর সঙ্গে। ভদ্রলোকের ভাবভঙ্গি খুব একটা ভাল ছিল না। সুপার না-এসে গেলে কী হত বলা যায় না। ওঁর কথায় ভদ্রলোক ক্ষমা চাইলেন।’ অনিমেষ বলতে বলতে ভাবছিল যদি সুপার না-আসতেন তা হলে একটা হাতাহাতি হয়ে যাওয়া বিচিত্র ছিল না।
বিমান বলল, ‘যা হোক, নেতৃত্বটা তোমার হাতে ছিল জেনে আমি খুশি।’
একটু ইতস্তত করে অনিমেষ বলল, ‘কিন্তু ব্যাপারটা খুবই বাজে। ওরকম একটা ইস্যু নিয়ে হইচই করতে আমার প্রথমে ইচ্ছে ছিল না, শেষে জড়িয়ে পড়লাম। ঘটনাটা এত সামান্য—।’
হাত তুলে অনিমেষকে থামিয়ে বিমান ঘুরে দাঁড়াল, ‘সব সময়ে একটা কথা মনে রাখবে, লাইম লাইটে আসতে গেলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। যেটাকে সামান্য মনে হচ্ছে তাকে যদি একটু মোচড় দিয়ে ঘুরিয়ে দিতে পারো সেটাই অসামান্য হয়ে যেতে পারে। ধরো, কালকে যদি তোমরা ওই ইস্যুটার সঙ্গে আরও কতগুলো পয়েন্ট যোগ করতে তা হলে আজ তুমি সারা কলকাতায় পরিচিত হয়ে যেতে।’
‘কীরকম?’ অনিমেষ কৌতুক বোধ করল।
‘অত্যন্ত জঘন্য খাবার, হস্টেল কর্তৃপক্ষের তোমাদের টাকায় ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বাড়ানো এবং হস্টেলের কোয়ার্টার অসৎ কাজে ব্যবহার— স্রেফ এই তিনটে ইস্যু যোগ করে দিলে কলকাতার সব হস্টেলের বোর্ডারদের সঙ্গে পেতে। কারণ, প্রথম অভিযোগটা এত কমন যে সবাই একমত হবেই। আজ যদি সারা দেশের হস্টেলগুলোয় ওরকম ঘেরাও প্রতিবাদ শুরু হয়ে যেত তা হলে সবার সঙ্গে সংযোগরক্ষার জন্যে একটা কমিটির প্রয়োজন হত; এবং যেহেতু তুমি প্রথম ঢিল ছুড়েছ তাই তোমার উদ্যোগে কমিটি হলে তার নেতৃত্ব তোমারই থাকত। এত হস্টেল এবং তার বোর্ডারের সংখ্যা বিরাট হওয়ায় খবরের কাগজে ব্যাপারটা গুরুত্ব পেত এবং তুমি নেতা হিসেবে নিজের জায়গা করে নিতে পারতে। না, না, অনিমেষ, তুমি ভুল করেছ এ সুযোগ না-নিয়ে। কাল যদি একবার আমার সঙ্গে আলোচনা করতে তা হলে—।’ আফশোসের ভঙ্গিতে হাত ছুড়ল বিমান।
চোখের সামনে অবলীলায় বিমান যে ছবিগুলো এঁকে গেল তা অনিমেষ স্পষ্ট দেখতে পেল। এবং দেখে কিছুক্ষণ বিস্ময়ে ওর মুখে কথা ফুটল না। এই জটিলভাবে সহজ করে তোলার নামই বোধহয় রাজনীতি। সে নিচু গলায় জবাব দিল, ‘বিমানদা, ব্যাপারটা এত দ্রুত ঘটে গেল যে ভাববার সময় পাইনি।’
‘বুঝেছি, এবং সেখানেই আমার আপত্তি। তোমাকে একটা সরল সত্য বুঝিয়ে দিই। ধরো রামকৃষ্ণ মিশনে যিনি দীক্ষা নিয়েছেন তিনি কতগুলো উপদেশ জানেন এবং সেভাবেই জীবনযাপন করেন। তাঁর জীবনে যদি কোনও সমস্যা আসে তা হলে তার সমাধান তিনি সেই উপদেশমতোই সমাধান করবেন। এই ভদ্রলোক থাকেন কলকাতায়। এবার আর-একজনের কথা ভাবো যিনি থাকেন কানপুরে। দেখা যাবে তিনি যদি দীক্ষিত এবং একনিষ্ঠ হন তা হলে তাঁর কার্যকলাপ কলকাতার ভদ্রলোকের প্রায় কার্বনকপি হবে। কেন হবে বলো তো?’ বিমান প্রশ্নটা করে উত্তরের জন্য ইউনিয়ন অফিসের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল।
‘এক হবে কারণ ওঁদের আদর্শ এক।’ অনিমেষ সহজ গলায় বলল।
‘আমি হলে অবশ্য বলতাম, এক তো না-ও হতে পারে। ধর্মীয় বিশ্বাস ও বোধ দাঁড়িয়ে থাকে অন্ধ আত্মসমর্পণের ওপর, তাই তার ভিত নড়ে যাওয়া বিচিত্র নয়— সবসময় এক হবেই কেউ গ্যারান্টি দিতে পারে না। মানুষের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে ধর্ম তার শেকড় গাড়ে। কিন্তু যে মানুষ মার্ক্সবাদে বিশ্বাস করে সে সেটা পরীক্ষায় সত্য জেনেই করে। বাতাস-জলের মতো মার্ক্সবাদ মানুষের প্রয়োজন। এখন তার নানারকম ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগ হচ্ছে কিন্তু মূল সত্য তো অবিকৃত। তুমি যদি তোমার বোধ ও বুদ্ধি মার্ক্সবাদে শুদ্ধ করতে তা হলে গতকাল কারও জন্যে অপেক্ষা করতে হত না। তোমার কর্মপদ্ধতি এবং তার ফলাফল দেখেই তুমি বুঝতে পারতে আমার সঙ্গে কোনও পার্থক্য নেই।’ বিমান হাসল, ‘হতাশ হয়ো না কমরেড, প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তুমি যা করেছ তা অনেক, কিন্তু এ থেকে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষিত হলে বেশি লাভবান হবে।’
এই সাতসকালেই ইউনিয়ন অফিস জমজমাট। ইলেকশন আসছে। কাজকর্ম প্রচুর। অনিমেষ দেখল সুদীপদাকে ঘিরে বেশ বড় একটা দল কাগজপত্র নিয়ে বসে আছে। সুদীপদার মুখে আধপোড়া এবং বোধহয় নেভা চুরুট। কয়েক সেকেন্ডেই অনিমেষ বুঝতে পারল বিভিন্ন ক্লাসের ক্যান্ডিডেট সিলেকশন চলছে যারা ছাত্র ফেডারেশনের ব্যানারে দাঁড়াবে।
সুদীপ ওকে দেখে চিৎকার করে বলল, ‘এই যে এসে গেছ! তা তোমার মতলবটা কী বলো তো?’
সবাই ওর দিকে ঘুরে দেখছে, অনিমেষ বিব্রত বোধ করল। প্রশ্নটার মানে সে ধরতে পারছে না।
সুদীপ বলল, ‘একদম বোবা হয়ে গেলে যে! এদিকে শুনছি বেশ নেতা হয়ে গেছ, চারধারে নাম হয়েছে, আর আমাদের এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে!’
অনিমেষের মুখে রক্ত জমল, ‘কী যা-তা বলছেন!’
সুদীপদা বলল, ‘গতকাল তোমাদের এ এস-কে খুব টাইট দিয়েছ খবর পেলাম। ভাল করেছ। ব্যাটা এককালে কমিউনিস্টদের গালাগাল দিত।’
কথাটা প্রথম শুনল অনিমেষ। এ এস সম্পর্কে এরা যে খবর রাখে ওরা হস্টেলে থেকেও তা জানে না। ওর হঠাৎ মনে হল যারা রাজনীতি করে তাদের অনেক গোপন কান এবং চোখ আছে, তাই কোনও কিছুই তাদের অজানা থাকে না। মুশকিল হল সে নিজে দুটোর বেশি প্রকৃতির কাছ থেকে পায়নি। অনিমেষ দেখল ঘরে ঢুকেই বিমান নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সর্বত্র কর্মব্যস্ততা, তাই এভাবে একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে খারাপ লাগছিল। অথচ নিজে আগ বাড়িয়ে কিছু করতে সংকোচ হচ্ছিল। বাঁ দিকের দেওয়াল ঘেঁষে দু’জন পোস্টার লিখছে। অনিমেষ শুনল, যে সচরাচর লিখে থাকে সে আসেনি বলে ওরা হিমসিম খাচ্ছে। সুদীপ আবার লিস্ট নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত এখন। অনিমেষ ছেলে দুটোর কাছে গিয়ে বলল, ‘আমি একটু সাহায্য করতে পারি?’
একটা ছেলে ঘাড় ঘুরিয়ে ওকে দেখে হেসে উঠে দাঁড়াল, ‘আপনার অভ্যেস আছে?’
অনিমেষ বলল, ‘না, অভ্যেস নেই। তবে বাংলা অক্ষর তো, চেষ্টা করে দেখতে পারি।’
ছেলেটা বলল, ‘খুব সোজা নয়। বড় হরফ হতে হবে, সেই সঙ্গে গোটা গোটা এবং তাতে এমন স্পিড থাকবে যে সংগ্রামী মনে হবে। নিন দেখুন, পারেন কিনা!’
ছেলেটা একটা কাগজ ওর হাতে ধরিয়ে দিল, তাতে তিনটে লাইন লেখা। ‘আমাদের সংগ্রাম চলছে চলবে,’ ‘বাম ছাত্র ঐক্য জিন্দাবাদ,’ ‘নির্বাচন অধিকার আদায়ের একমাত্র হাতিয়ার।’
অনিমেষ দেখল প্রথমটা লেখা হয়েছে, সে তার পরের লাইনটা শুরু করল। লিখতে লিখতে ওর খেয়াল হল সেই ছেলেবেলায় কংগ্রেসের নৌকোতে রিলিফের কাজে যাওয়ার পর এই প্রথম সে কোনও রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসীদের সহযোগী হয়েছে। ছোট বড় হয়ে যাচ্ছে, অনিমেষ খুব সাবধানে আঁকার চেষ্টা করছিল। একে লেখা না-বলে আঁকা বলাই ভাল। ছেলেটা ঠিকই বলেছে লেখাগুলোর মধ্যে একটা সংগ্রামী চরিত্র ফুটে ওঠা দরকার এবং সেটা আঁকার কায়দার ওপরই নির্ভর করে। কিন্তু লিখতে লিখতে বুকের মধ্যে একটা তপ্ত ভাব অনুভব করছিল অনিমেষ। এই শব্দগুলোর মধ্যে এমন একটা ফোর্স আসে যা বন্দেমাতরমের মধ্যে নেই।
লেখা যখন শেষ তখন সুদীপের গলা শুনতে পেল অনিমেষ, ‘শাবাশ, হাতেখড়ি মন্দ হয়নি!’ ব্যাপারটা ওকে এতখানি আকৃষ্ট করে রেখেছিল যে অন্য দিকে খেয়াল ছিল না। এখন দেখল ওর পেছনে ছোটখাটো ভিড় জমে গেছে, সবাই পোস্টারগুলো দেখছে। সচেতন হয়ে সে নিজের লেখা দেখল। না, খারাপ হয়নি, বরং এগুলো সে নিজে লিখেছে তা বিশ্বাস করা শক্ত হয়ে পড়ছে। কোনওদিন সে এ-কাজ করেনি, কিন্তু এত ভাল কী করে হল! সে সুদীপকে বলল, ‘প্রথম চেষ্টা তো—।’
একটা চুরুট এগিয়ে দিল সুদীপ, ‘নাও, এটা ধরাও।’
বিমান চেয়ারে বসে কাজ করতে করতে বলে উঠল, ‘কী ব্যাপার, অন্য কেউ চাইলে তো চুরুট ছাড়া হয় না, আজ হঠাৎ এত উদারতা, লক্ষণ ভাল নয়।’
সুদীপ ঠাট্টার গলায় জবাব দিল, ‘এই চুরুট সবার সহ্য হবে না।’
বিমান বলল, ‘তা হলে বলছ অনিমেষের সহ্য হবে!’
সুদীপ বলল, ‘মনে হচ্ছে।’
অনিমেষ হেসে ফেলল, ‘আমি খাই না, সুদীপদা।’
বিমান কপট ভঙ্গিতে বলে উঠল, ‘না বলতে নেই, অনিমেষ। ওটা খেলে দেখবে বেশ বুদ্ধিজীবী বলে মনে হবে নিজেকে। তা ছাড়া তুমি ভাগ্যবান, তাই ওটা পাচ্ছ। নিয়ে নাও চটপট।’
অগত্যা অনিমেষ চুরুটটা নিল। ছোট্ট কিন্তু বেশ শক্ত চেহারার চুরুট। এর আগে সে কাউকে কাউকে দেখেছে চুরুট খাবার আগে দেশলাই কাঠি দিয়ে মুখ ফুটো করে নিতে। কিন্তু এটায় সেরকম প্রয়োজন আছে বলে মনে হল না। সুদীপ আগুন জ্বেলে সামনে ধরতে সে ওটা ধরাল। বিকট গন্ধ সহ ধোঁয়াটা নাকে যেতে অনিমেষের মনে হল দমবন্ধ হয়ে যাবে। ততক্ষণে সুদীপ নিজের জায়গায় ফিরে গিয়ে গম্ভীর গলায় ডাকল, ‘অনিমেষ, এদিকে এসো।’
সমস্ত শরীর গোলাচ্ছে, কোনওরকমে কাশি চেপে অনিমেষ দেখল তার মাথা ঝিমঝিম করছে। সে কোনওরকমে সুদীপের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
সুদীপ কতগুলো কাগজ থেকে একটা বেছে নিয়ে ওকে বলল, ‘পুরো নাম সই করো।’
অনিমেষ যতটা সম্ভব দ্রুত কাগজটার ওপর চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারল এটা একটা নমিনেশন ফর্ম। ফিফথ ইয়ার বাংলার ক্যান্ডিডেট হয়ে তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষে। একটুও ইতস্তত না-করে অনিমেষ সই করল সুদীপের কলমে। সুন্দর গোটা অক্ষরে লেখা অনিমেষ মিত্র, শব্দ দুটো ঝকঝক করছিল কাগজে।
সুদীপ বলল, ‘তোমার ক্লাসের দু’জন ছেলে চাই যারা প্রপোজ এবং সেকেন্ড করবে। তোমার কেউ পছন্দের আছে?’
অনিমেষ চট করে শুধু পরমহংস ছাড়া কাউকে মনে করতে পারল না।
ওপাশ থেকে একজন বলে উঠল, ‘আমি করতে পারি।’
সুদীপ বলল, ‘হ্যাঁ, তুমি তো আছ। আর-একজনকে ডেকে সই করিয়ে নিয়ো।’
অনিমেষ ছেলেটিকে দেখল, বাংলার ক্লাসে ওকে কখনও দেখেছে বলে মনে পড়ছে না। হয়তো লক্ষ করেনি।
এবার বিমান ওকে ডাকল। অনিমেষ ওর সামনে গিয়ে বসতেই বিমান বলল, ‘অন্য ক্যান্ডিডেটদের সঙ্গে মিটিং হয়ে গেছে, তুমি বাকি ছিলে। এই ইলেকশনে আমাদের প্রতিপক্ষ দু’জন। ছাত্র পরিষদ আর এস. এফ. রাইট। শেষ দলটা নিয়ে কোনও চিন্তা নেই, কারণ ওদের শক্তি এত কম যে কিছু করে উঠতে পারবে না। ছাত্র পরিষদ প্রচুর টাকা ঢালছে। ওদের পোস্টারগুলো দেখেই তা বুঝতে পারবে। এটা তো সবাই জানে ছাত্র পরিষদ হল কংগ্রেসের সংগঠন। এখন দেশের যা অবস্থা তাতে কংগ্রেসি সরকার খুব সুখে নেই। মানুষ ক্রমশ ওদের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠছে। ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে যখন আমরা প্রচার করব তখন ওই সেন্টিমেন্টটাকে কাজে লাগাব। ওরা হয়তো আমাদের চিনের দালাল বলে এক হাত নেবে কিন্তু মানুষ দূরের জিনিসের চেয়ে কাছের সমস্যাই বেশি প্রয়োজনীয় মনে করে। বুঝতে পারছ?’
অনিমেষ হঠাৎ বলল, ‘চিনের দালাল মানে ছাত্র ফেডারেশন চিনকে সমর্থন করে?’
বিমান হঠাৎ গম্ভীর মুখে বলল, ‘সেটা আলাদা প্রশ্ন। ভারত-চিন সীমান্ত-যুদ্ধ সম্পর্কে পার্টি যে বক্তব্য রেখেছে সেটা পড়ে দেখবে। কংগ্রেসিরা সেই বক্তব্যটার অপব্যাখ্যা করছে। কেউ যদি তোমাকে প্রশ্ন করে তুমি চিনের দালাল কি না তা হলে জবাব দেবে কারও ভালকে সমর্থন করা মানে দালালি নয়। মাও সে তুং যেভাবে কৃষক-শ্রমিককে সংগঠিত করে লংমার্চ করেছিলেন সেটা বিশ্বে মানবতার জ্বলন্ত মশাল বলে চিহ্নিত থাকবে। আমরা যদি এই মশালের আগুনে নিজেদের শুদ্ধ করি তা হলে কি দালালি হবে? এই হবে আমাদের বক্তব্য।’
অনিমেষ বলল, ‘তা হলে ওটাকে সীমান্ত-সংঘর্ষ বলব?’
‘হ্যাঁ, কারণ ঘটনাটা কী তা আমরা জানি না। যে-দেশ কমিউনিজমের আদর্শে বুর্জোয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে আজ মাথা তুলেছে, যে-দেশের মহান নেতা মাও সে তুং, সে দেশ আক্রমণকারী এটা স্বপ্নেও চিন্তা করা যায় না। আচ্ছা, এবার তোমার কাজ হবে ক্লাসের সব ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। এক-আধটা কাজ যা চোখে পড়ার মতো যদি করতে পারো তা হলে সবার নজরে পড়বে। অবশ্য ওই মিটিং-এর পর তার আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু ম্যান টু ম্যান ক্যাম্পেনের মূল্য আছে, সেটা শুরু করে দেবে। কখনও কোনও অবস্থায় মাথা গরম করবে না, সবসময় হাসিমুখ করে থাকবে। আর যদি কোনও প্রবলেম সামলাতে না-পারো তা হলে অফিসে যোগাযোগ করবে। অল রাইট?’ বিমান বুঝিয়ে দিল।
সেদিন থেকেই ক্যাম্পেন শুরু হয়ে গেল। সুদীপের সঙ্গে কয়েকটা ক্লাস ঘুরল অনিমেষ! সে-সব ক্লাসের ক্যান্ডিডেটদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে সুদীপই বক্তৃতা দিল। খুব ভাল বলে সুদীপ, বলার ধরনে এমন একটা তেজস্বিতা আছে যে চুপ করে শুনতে হয়।
ঘুরতে ঘুরতে অনিমেষের ক্লাসের সামনে আসতে ওরা দেখল টি. এন. জি. ক্লাস নিতে আসছেন। সুদীপ দ্রুত ভদ্রলোকের সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘স্যার, আপনাকে পাঁচ মিনিট সময় দিতে হবে।’
টি. এন. জি. চশমাটা এক হাতে ঠিক করে নিয়ে হেসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী ব্যাপার?’
‘ছেলেমেয়েদের দু’-তিনটে কথা বলব। ইলেকশনের ব্যাপারে।’
‘পাঁচ মিনিটেই যেন হয়ে যায়।’ টি. এন. জি. আবার প্রফেসার্স রুমে ফিরে গেলেন।
সুদীপ অনিমেষকে নিয়ে ক্লাসে ঢুকল। ওদের দলের ছেলেরা দরজায় দাঁড়িয়ে। টি. এন. জি-র ক্লাস বলেই ঘরটা ভরতি। ছেলেমেয়েরা সবাই উৎসুক হয়ে ওদের দেখছে। সুদীপ ডায়াসে উঠে বলল, ‘বন্ধুগণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন আসন্ন। আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করার জন্য আমরা ছাত্র ফেডারেশন (লেফট) আপনাদের সহযোগিতা চাইছি। এই নির্বাচনে আমাদের তরফ থেকে এই ক্লাসের প্রার্থী শ্রীঅনিমেষ মিত্র। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন যে অনিমেষ এই কংগ্রেসি সরকারের উগ্র দমননীতির শিকার হয়েছেন। এই সরকারের পোষা পুলিশ সম্পূর্ণ বিনা কারণে তাঁর ওপর আক্রমণ চালায় এবং তাঁকে এমনভাবে গুলিবিদ্ধ করে যে চিরকালের মতো তিনি শরীরে বুলেটের চিহ্ন নিয়ে বেঁচে থাকবেন। অনিমেষকে ভোট দেওয়া মানে সেই নৃশংসতার প্রতিবাদ জানানো। আমাদের হাতে বেশি সময় নেই, তবু আমি অনিমেষকে অনুরোধ করছি আপনাদের কিছু বলতে। অনিমেষ—।’
মাথা নেড়ে অনিমেষকে ডায়াসে আসতে বলে সুদীপ গম্ভীর মুখে দরজার কাছে সঙ্গীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। সুদীপের বক্তৃতার সময় অনিমেষ ছেলেমেয়েদের প্রতিক্রিয়া দেখছিল। সবাই বেশ উৎসুক হয়ে তাকে লক্ষ করেছে। অনিমেষ, অস্বস্তি থাকলেও, বেশ স্মার্ট হবার চেষ্টা করছিল। হঠাৎ সুদীপ এভাবে তাকে ডাকবে চিন্তা করেনি, কারণ অন্যান্য ক্লাসে ক্যান্ডিডেটদের কিছু বলতে বলা হয়নি। সময় কম এবং সবাই ওকে উৎসুক হয়ে দেখছে বুঝতে পেরে অনিমেষের পেটের ভেতর চিনচিন ব্যথাটা শুরু হয়ে গেল। ও বুঝতে পারছিল এখন একটা ভুল পদক্ষেপ মানে চিরকালের মতো হাস্যকর হওয়া। পায়ের স্টেপ ঠিক রেখে ও এমন ভান করে ডায়াসে উঠে এল যে এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। যে-কোনও মুহূর্তে শরীরে ঘাম হতে পারে বা কথা জড়িয়ে যেতে পারে জেনেও ও কথা শুরু করল, ‘বন্ধুগণ, আমি অনিমেষ মিত্র, আপনাদের সতীর্থ, আগামী নির্বাচনে আপনাদের সমর্থন চাইছি। কবে, কখন, কী কারণে পুলিশ আমাকে গুলিবিদ্ধ করেছিল, কিংবা আমার একটি অমূল্য বছর কীভাবে হাসপাতালে শুয়ে নষ্ট হয়েছে সে সব বলে আপনাদের মন নরম করতে আমি চাই না। আমি এখন সুস্থ, যদিও বুলেটের দাগ উল্কি হয়ে আছে, থাকবে। আমি মফস্সলের ছেলে, জলপাইগুড়িতে কংগ্রেসের সমর্থক ছিলাম। সেখানে দেখেছি ক্ষমতার কী কদর্য প্রয়োগ, দেখেছি স্বার্থের কী নোংরা ব্যবহার! একটা বাড়ি তৈরি করতে গেলে যেমন নির্দিষ্ট প্ল্যান লাগে, একটা দেশকে গঠন করতেও তেমনি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সেই পরিকল্পনা হল একটা নির্দিষ্ট মতবাদ যা দরিদ্রের মুখে অন্ন দেবে এবং একটা শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থার কথা বলবে। ছাত্র ফেডারেশন লেফট মনে করে সেটা কমিউনিজমের পথেই সম্ভব। এর ফল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেখেছি। কেউ কেউ বলতে পারেন, আমরা ছাত্র, রাজনীতির এই জটিলতায় আমরা কেন যাব? বাড়িতে যদি আগুন লাগে তা হলে ছোটরাও বালতি হাতে ছুটে যায়, তাই না? আমরা প্রতিবাদ করতে পারি অরাজকতার বিরুদ্ধে। এইসব ছোট প্রতিবাদ এক হয়ে যে শক্তি ধরবে তা কিন্তু আমাদেরই উপকারে আসবে। বন্ধুগণ, আমি আপনাদের কাছে সমর্থন চাইছি যাতে প্রতিবাদ করতে পারি। ধন্যবাদ।’
কথা বলতে বলতে খেয়াল ছিল না, এখন অনিমেষ আবিষ্কার করল তার সেই নার্ভাসনেসটা একদম নেই। খুব সহজে সে বলে গেছে। কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ, তারপরই তুমুল হাততালিতে ঘর ভরে গেল যেন। মেয়েরাই বেশি শব্দ করছে।
অনিমেষ শান্ত মুখে দরজার কাছে আসতেই সুদীপ বলল, ‘আর-একটা চুরুট খাবে?’
দ্রুত ঘাড় নাড়ল অনিমেষ, ‘না, না, বাপস!’
‘মানে?’ চোখ বড় করল সুদীপ।
‘ওটা এই বক্তৃতা দেওয়ার চেয়ে অনেক বেশি কষ্টকর। তা ছাড়া আমি তো মফস্সলের ছেলে, বুদ্ধিজীবী হতে পারব না।’ হাত জোড় করল অনিমেষ।
সুদীপের মুখে কিছুক্ষণ কথা ফুটল না। তারপর সঙ্গীদের বলল, ‘শ্রীমান অনিমেষ মিত্রের দীক্ষা হয়ে গেছে। এখন উনি সাবালক।’
বিকেলে হস্টেলে ফেরার সময় অনিমেষ পরমহংসের সঙ্গে ফিরছিল। পরমহংস বলছিল, ‘তুমি কালকে শোভনাদির ছেলেকে পড়াতে রাজি না-হয়ে ভাল করেছ, এতক্ষণে মনে হল।’
অনিমেষ অবাক হল, ‘কেন’?
‘এসব টিউশনি ফিউশনিতে কি তোমাকে মানায়? তুমি হলে বর্ণচোরা আম। ওপরে লাজুক, ভেতরে আগুন। শালা কী বক্তৃতা দিলে আজ! একবার ভাবলাম মুখস্থ করেছ নাকি, তারপর দেখলাম, নাঃ। সবক’টা মেয়ে বোল্ড আউট। মিডল স্টাম্প ছিটকে গেছে। তা এই তুমি ঘাড়গুঁজে ছাত্র পড়াচ্ছ— ভাবাই যায় না।’
হো হো করে হাসল অনিমেষ, ‘যে লোকটা বক্সিং লড়ে সে বউকে আদর করে না? কী আশ্চর্য! এসব বলে এড়িয়ে গেলে হবে না, তুমি আমার জন্যে টিউশনি দেখো।’
‘শালা হাতের মোয়া, চাইলেই পাওয়া যায়, না? তারপর ফ্যাচাং করে রেখেছ। ঘটি হলে হবে না, চেনাশুনা বেরুলে চলবে না— দেখি, যদি পাই। তা তোমার চিন্তা কী! ইউনিয়ন থেকে গ্যাম্বলিং হবে না?’
‘গ্যাম্বলিং?’ অনিমেষ হতভম্ব।
‘ফালতু টাকা পাওয়া মানে গ্যাম্বলিং।’
‘সেটা কংগ্রেসি ইউনিয়নে হত।’
‘গুড। এখন থেকে ভাল স্পিন বোলিং রপ্ত করেছ। তোমার হবে। দেখো অনিমেষ, সব শালাই গাছে ওঠে কিছু হাতিয়ে নিতে। যারা আদর্শ-ফাদর্শ কপচায় তারাই রান আউট হয়ে যায়।’
এই কথাগুলো হস্টেলে ফিরে অনিমেষের মনে হচ্ছিল। এই দেশে মানুষ নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করতে পারে না। সাধারণ মানুষের মানসিকতা এইভাবেই তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
ত্রিদিব নেই। ঘরে একা শুয়ে শুয়ে অনিমেষ আকাশ দেখছিল। অনেক দিন জলপাইগুড়ির চিঠি পাচ্ছে না। দাদু প্রতি সপ্তাহে চিঠি দিতেন, আজকাল তাও যেন অনিয়মিত হয়ে যাচ্ছে। ছোটমা তো দেয়ই না, টাকা পাঠানোর পর বাবা খবরাখবর জানতে চান। আসলে সে নিজে নিয়মিত লিখতে পারে না বলেই ওঁদের এই ঠান্ডা ভাব সেটা সে জানে। কিন্তু চিঠি লিখতে গেলে এত আলসেমি লাগে!
বাবা যদি আজকের খবরটা জানতেন তা হলে নিশ্চয়ই রেগে যেতেন। ওঁর ভাষায় ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে নিজের বারোটা বাজানো। অনিমেষ ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে অধ্যাপনা করুক এই তাঁর ইচ্ছা। ইউনিয়ন করছে জানলে টাকা বন্ধ করেও দিতে পারেন। বরং দাদু অতটা বিপক্ষে যাবেন না। অনিমেষ যখন কিছু করছে সেটা মন্দ নয় জেনেই করছে এই তাঁর বিশ্বাস।
দরজায় শব্দ হতে অনিমেষ বলল, ‘খোলা আছে।’
দারোয়ান মুখ বাড়াল, ‘আপনাকে বড়া সাব বোলাচ্ছে।’
বড়া সাব মানে সুপারিনটেনডেন্ট। সচরাচর টাকা বাকি না-পড়লে তিনি খোঁজ নেন না। অনিমেষ দরজা বন্ধ করে বাস্কেটবল লন পেরিয়ে এদিকে চলে এল। সুপার ওঁর টেবিলে বসে ছিলেন। অনিমেষ যেতেই তিনি সামনের চেয়ারটা দেখিয়ে দিলেন।
অনিমেষ বলল, ‘ডেকেছিলেন?’
‘হ্যাঁ। আজ কলেজ কর্তৃপক্ষ একটা মিটিং ডেকেছিলেন। অনেক আলোচনার পর স্থির হয়েছে যে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট আর আন্ডার-গ্র্যাজুয়েটদের একসঙ্গে হস্টেলে রাখা চলবে না। কলেজ স্টুডেন্টদের জন্য একদম আলাদা হস্টেল হবে এগুলো। ব্যাপারটা সামনের মাসের এক তারিখ থেকেই কার্যকরী হবে।’
অনিমেষ বলল, ‘আপনি কি আমায় হস্টেল ছেড়ে দিতে বলছেন?’
সুপার বললেন, ‘ব্যাপারটা সেইরকম।’
কলকাতার কলেজে ভরতি হবার পর থেকে এই হস্টেলে বছরগুলো কেটেছে। এখন কোথায় যাবে সে? অনিমেষ জিজ্ঞাসা করল, ‘কারণটা কি শুধু এটাই, না গত রাত্রের ঘটনাটা এর পেছনে রয়েছে?’
‘আমি ঠিক বলতে পারছি না।’
‘আপনি বলবেন না।’
‘অপ্রিয় কথা বলতে আমি চাই না।’
‘আপনাদের এই অন্যায় আদেশের বিরুদ্ধে আমরা লড়তে পারি। এবং সেটা করতে আপনি বাধ্য করছেন।’
অনিমেষ উঠে দাঁড়াতে সুপার বলে উঠলেন, ‘আমার কথা শোনো অনিমেষ, এ নিয়ে প্লিজ হইচই কোরো না। যদি স্ট্রাইক করো তা হলে কিছু ছেলের ক্ষতি হবে যারা এখনও স্কটিশ কলেজে পড়ে। তোমার তো থাকা নিয়ে কথা। আমি সেন্ট জন হস্টেলের সুপারিনটেনডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি। ওখানে অনেক এম এ-র স্টুডেন্ট আছে। উনি তোমাকে একটা সিট দিতে রাজি হয়েছেন। আফটার অল, তোমার বাবা আমাকে পার্সোনালি রিকোয়েস্ট করেছেন তোমাকে দেখতে, তুমি আমার কথা রাখো।’
অনিমেষ মাথা নাড়ল। তারপর ধীর পায়ে বেরিয়ে এল বাইরে। সামনের লনে দুটো ছেলে বল নিয়ে পিটোপিটি করছে। খুব শান্ত পরিবেশ এখন। ওপরে বোধহয় থম্বোটো মাউথঅর্গান বাজাচ্ছে। গত রাত্রের ঘটনার জন্যে এত তাড়াতাড়ি আঘাত আসবে কল্পনা করতে পারেনি সে। সামান্য এই ব্যাপারে যদি তাকে হস্টেল ছেড়ে চলে যেতে হয়, বড় ব্যাপারে না-জানি কী হবে। একবার বিমানদার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। অনিমেষ দেখল ত্রিদিব ঢুকছে। ও কাছে গিয়ে বলল, ‘একটা ঘটনা ঘটেছে।’
‘কী?’
‘আমাকে সুপার হস্টেল ছেড়ে দিতে বললেন।’
‘জানতাম।’
‘জানতে মানে?’
‘অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি, জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি।’ দু’হাত নেড়ে আবৃত্তি করল ত্রিদিব। তারপর গম্ভীর হয়ে বলল, ‘ওরা তোমার ক্ষতি করতে গিয়ে ভাল করে ফেলল। কথাটার মানে পরে বুঝবে।’