মধুছন্দার ভয়

মধুছন্দার ভয়

আমি প্রথম প্রথম অবাক অবিশ্বাসে পর্যবেক্ষণ করতাম, তারপর মিষ্টি হেসে বোঝাতে যেতাম, বলতাম এমন করিস না।

কিন্তু কিছুতেই যখন কিছু হল না, আমার সবকিছু তখন দেখেশুনে গা-পিত্তি জ্বলে যেতে লাগল।

আর এই কয়েকদিন ধরে তো মনে হচ্ছে মাথার মধ্যে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে যেন!

রেগে গেলে আমি চিরকালই গরম আলুর পরোটা হয়ে যাই, গুম হয়ে থাকি, সহজে কাউকে সাড়া দিই না, কেউ বেশি কচলাতে এলে এমন ঝাড় দিই যে সে পালাবার আর পথ পায় না।

সবাই তাই সেনগুপ্ত বাড়ির ছোটবউকে বেশ সমীহ করে চলে, সে আত্মীয়স্বজনই হোক কিংবা পাড়া প্রতিবেশী। হোক উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ি, বিয়ে হয়ে আসার পর তো প্রথম রাতে এমন বেড়াল মেরেছিলাম, সবাই সিধে হয়ে গিয়েছিল।

সমীর অবশ্য আজ দোকানে যাওয়ার আগে আমায় একটু ঠান্ডা করতে এসেছিল ভয়ে ভয়ে, ”আহা! সামনে পুজো, আকাশে বাতাসে খুশির আমেজ, এত চটছ কেন? বাচ্চা মেয়ে, একটু সময় দিতে হবে না?”

আমি এক দাবড়ানি দিয়ে বুড়োটাকে বিদেয় করেছি। মাথাগরমের সময় জ্ঞান আমার চিরকালের অসহ্য, সেটা ও এই তিরিশ বছরেও যখন ওর মাথায় ঢোকেনি, তখন এখন ওই চুল প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া টাকে হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ঠুকে বোঝানো উচিত।

আমার ছেলে সমন্বয় তো সকালেই অফিস বেরিয়ে গেছে। সেও যাওয়ার আগে মা-কে গুম হয়ে থাকতে দেখে বলে গেছে, ”মা, মাথাটাকে একটু ঠাণ্ডা করো!”

আমি নিরস মুখে আমার ঘরে বসেছিলাম আর নিজের ভাগ্যকে দুষছিলাম। উফ! মানুষের এত ফাটা কপালও হয়? কি মরতে যে সাততাড়াতাড়ি ভিআরএস নিতে গেলাম! তবু অফিস গিয়ে একটু একঘেয়েমিটা কাটত।

ওই যে কথায় বলে না, মানুষ ভাবে এক, আর হয় আর এক! এও তাই! ভেবেছিলাম, ছেলেটা দাঁড়িয়ে গেছে, বিয়ে দিয়ে দিই, ব্যস তারপর আনন্দ শুরু। কিন্তু হা হতোস্মি!

আর কত সময় দেব? বিয়ের এক মাস হয়ে গেল গত সোমবার। পুজোর সময় কত প্রোগ্রাম করা ছিল আমাতে ওতে, সব বাতিল।

একটা মাত্র ছেলের বউ, কত কি শখ ছিল মনে, আর শেষে কিনা এইরকম…?

আমার ভাবনা শেষ হলনা, মহারানি ঢুকলেন আমার ঘরে, ”মা, চা খাবে?”

আমি এমনভাবে তাকালাম, সত্যযুগ হলে শিওর মধুছন্দা ভস্ম হয়ে যেত। যা ভেবেছি ঠিক তাই, মধুছন্দা লাল আর হলুদ মেশানো একটা শাড়ি পরে আঁচলটাকে অন্যপাশ দিয়ে জড়িয়ে রেখে ঢুকেছে।

আহা, কি দারুণ কম্বিনেশন! শাশুড়ি পরে রয়েছে হলুদের উপর ফুল ফুল ছাপ সুতির ট্রাউজার আর কুর্তি আর বৌমা শাড়ি! আধুনিক শাড়ি হলে তাও ঠিক আছে, এটা একদম জড়ভরত মার্কা শাড়ি।

আগে অনেক বুঝিয়েছি, এবার আমি আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না। চুড়ান্ত রেগে গেলে আমি ঠান্ডা পাথরের মতো হয়ে যাই। সেইরকমই হিমশীতল গলায় বললাম, ”চা বানানোর জন্য তো শেফালি রয়েছে, তোর কাজকর্ম কিছু নেই? শপিং টপিং কিচ্ছু করবি না?”

মধুছন্দা উত্তর দিল না, মুখ নীচু করে একটা পা দিয়ে অন্য পায়ের নখ খুঁটতে লাগল।

অনেকক্ষণ বাদে মুখ খুলল, ”একগাদা শাড়ি তো পেয়েছি বিয়েতে, আর কি কিনব।”

”শাড়ি ছাড়া পুজোয় আর কিছু কেনার নেই বুঝি?” আমি বললাম, ”আর তুই আবার দিনের বেলা এরকম জবরজং শাড়ি পরে বসে আছিস?”

মধুছন্দা এবার কুঁকড়ে গেল, একটু আমতা আমতা করে বলল, ”ইয়ে মানে, বাবাকে তো জানোই, কখন দুম করে এসে পড়বে, তখন আমাকে যা-তা বলবে। নাহলে আমার কি ইচ্ছে করে বলো এই গরমে এইরকম ধড়াচুড়ো পরে থাকতে?”

”তা বলুক না, শুনে নিবি!” আমি বাবু হয়ে খাটের উপর নড়েচড়ে বসে ভালো করে বোঝাতে উদ্যত হলাম, ”শোন, এইখানটায় এসে বোস। আরে হাতিঘোড়া গেল তল, মশা গেল কত জল! আমি যখন এইবাড়িতে বউ হয়ে এসেছিলাম, তখন তো দিদিশাশুড়ি, খুড়শাশুড়ি, পিসিশাশুড়ি সব মিলিয়ে একেবারে রমরমা ব্যাপার। বাড়ির বাকি দুটো বউ সারাক্ষণ পায়ে আলতা পরে কাজের মেয়েদের সাথে হাহাহিহি করছে, দুপুর হলেই সবাই পান নিয়ে বসে পড়ছে পরনিন্দা পরচর্চায়। কোনো ক্রিয়েটিভিটি নেই, কালচার নেই। তার ওপর কতরকম রেস্ট্রিকশন! চারদিকে ভাসুর, দেওর, শ্বশুরেরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তারপর ব্যবসার জন্য দোকান থেকে কর্মচারীরা আসছে যাচ্ছে, সারাক্ষণ নাকি মাথায় ঘোমটা দিয়ে থাকতে হবে।”

মধুছন্দা ফুট কাটল, ”তুমি থাকতে? আমার তো বিশ্বাসই হয়না মা!”

আমি মুখব্যাদান করে বললাম, ”তুই ভাবলি কি করে? শোন না, বাড়ির বউয়ের জোরে জোরে হাসা যাবে না, হাঁটা যাবে না, ঢেঁকুর তোলা যাবে না, এরকম হাজার একটা অদ্ভুত সব রেস্ট্রিকশান। মানে, শারীরবৃত্তীয় যেকোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়াই নাকি অত্যন্ত গোপনীয় আর এই গোপনীয়তা শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তার ওপর চাকরিওলা বউ নিয়েও সবার মারাত্মক সমস্যা! প্রথমে তো কেউ বিশ্বাসই করছিল না যে সমীর চাকরিওলা বউ বিয়ে করেছে। দিদিশাশুড়ি তো ফুলশয্যার পরের দিনই ঘরভর্তি লোকের সামনে বললেন, ”ওসব যা করেছ বিয়ের আগে, ঠিক আছে। এখন কি আর চলে নাকি? আমাদের ব্যবসাবাড়ি, ছেলেদের খেতে আসার ঠিক নেই, তিনটে বউকে দিনরাত দৌড়ে বেড়াতে হবে, বুঝলে ছোটবউ। আর সেনগুপ্ত বাড়ির বউ চাকরি করবে কিগো, এবাড়ির বউদের কখনো রোজগার করার দরকার পড়ে না, বুঝলে! তার চেয়ে বড় জায়েরা দিদির মতো, তোমার শাশুড়িও ভারি লক্ষ্মী মেয়ে, তাদের থেকে সংসারের ঘাঁতঘোত সব বুঝে নাও দিকি, আর এই বুড়িগুলোকে একটু ভালোমন্দ রেঁধে খাওয়াও। তারপর নাতি-নাতনির মুখ দেখে আমরা সগ্যে যাই, কি বলিস মেজবউ? বলে উনি অন্য একজন মহিলার দিকে তাকালেন।”

মধুছন্দা আগ্রহ নিয়ে শুনছিল, আমি থামতেই বলল, ”তারপর?”

আমি বললাম, ”তখন ঘরে বাড়ির লোক ছাড়াও বিয়েতে আসা আত্মীয়স্বজন মিলে প্রায় পঞ্চাশ-ষাট জন লোক। সবাই দিদিশাশুড়ির কথায় হেসে সায় দিচ্ছিল যেন বিশাল মজার কোনো কথা শুনেছে। আমি মাঝখানটায় বসেছিলাম। তখনকার দিনে নতুন বউ শ্বশুরবাড়িতে এলে জড়সড় হয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকবে, ভয়ে ভয়ে কথা বলবে, পাঁচটা কথা জিগ্যেস করলে একটার উত্তর দেবে, তাও এত আস্তে যে শোনাই যাবে না, সেরকম দেখতেই মানুষ অভ্যস্ত ছিল। সেখানে আমি বউভাতের দিন থেকে সবার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়েছি, হেসেছি, কুশল জিজ্ঞাসা করেছি, লোকজন অলরেডি আমাকে বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করেছিল।”

শুনতে শুনতে মধুছন্দার মুখে কখন হাসি দেখা দেখা দিয়েছে, আমার পাশে এসে বসে পড়েছে, আমি খেয়াল করিনি।

আমি বলে চললাম, ”দিদিশাশুড়ির হাবভাব আমি দু-দিন ধরে দেখছিলাম। সবার উপর মতামত চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে হামবড়া দেখানোর একটা ব্যাপার রয়েছে ওনার মধ্যে। এইবার আমি ভাবলাম, আর নয়। সবাই রয়েছে, বিড়ালটা এখনি মারতে হবে। আমি মিষ্টি হেসে বললাম, ঠাকুমা, চাকরিটা কি তুমি আমায় দিয়েছিলে? মানে ইন্টারভিউ বোর্ডে তুমি ছিলে বুঝি? কই, তোমায় দেখতে পাইনি তো?”

দিদিশাশুড়ি নিদান দিয়ে পান মুখে চিবোচ্ছিলেন, আমার কথায় কেমন হাঁ হয়ে গেলেন।

আমি ছাড়লাম না, ”ওহ বুঝেছি, তাহলে নিশ্চয়ই সার্ভিস কমিশনের প্যানেলে ছিলে না?”

দিদিশাশুড়ি এইবার থতমত খেয়ে গেলেন, ”অ্যাঁ! মানে?”

আমি থামলাম না মোটেই, একইরকম মিষ্টি সুরে বলে চললাম, ”সারা দেশে মাত্র সাতজন কেমিস্ট চেয়ে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট অ্যাডভার্টাইজ করেছিল, কলকাতার ল্যাবে পোস্ট ছিল মাত্র দুটো। অরগ্যানিক কেমিস্ট্রির উপর টাফ রিটেন টেস্ট, সাড়ে পাঁচঘণ্টার ল্যাব এক্সাম, তারপর সাতজনের প্যানেলে ইন্টারভিউ দিয়ে এই চাকরিটা পেয়েছি ঠাকুমা। নিজের যোগ্যতায়। আমি তাই তোমার কথা শুনে কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলাম যে চাকরিটা কি তুমি আমায় দিয়েছ নাকি যে ছাড়তে বলছ?”

মধুছন্দা চোখ বড়বড় করে বলল, ”তুমি সবার সামনে ওইরকম বললে? তারপর?”

”তারপর আবার কি? আমি মুখে ওইরকম বলছি, আর ঠেঁটে এয়ারহোস্টেসমার্কা হাসি ঝুকিয়ে রেখেছি, সেসব দেখেটেখে দিদিশাশুড়িও কনফিউজড হয়ে পড়লেন। কি বলবেন বুঝতে পারছিলেন না, তখন আমি আবার বললাম, ”আর সমীর আর আমি বিয়ে তো করেইছি সব জেনেবুঝেই যে ও ব্যবসা করবে, আমি আমার চাকরি। আর আমার শ্বশুর ভাসুর কোটিপতিও যদি হয়, তাতে আমার কি? প্রত্যেক মানুষেরই নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত ঠাকুমা, তাই না! তুমি চিন্তা কোরো না, ছুটির দিনে আমি টুকটাক রান্না ইচ্ছে হলে নিশ্চয়ই করব, আর তুমি সেই খেয়ে আরামে স্বর্গেও যাবে।”

মধুছন্দা মুখটাকে ছানাবড়ার মতো করে থেকে তারপর হাসিতে ফেটে পড়ল, ”তুমি তখনকার দিনে বিয়ের পরের দিনই এইরকম বলেছিলে? তাও আবার স্বামীর নাম ধরে ডেকে?”

”শুধু যে বলেইছিলাম তা নয়, সবকটা করেও দেখিয়েছি। নিজের সম্পূর্ণ খুশিমতো জীবন কাটিয়েছি, চাকরি, শখের আঁকা, গান কিচ্ছু বাদ দিইনি। যা খুশি তাই পরেছি, ঘুরেছি, আবার সকলের সঙ্গে ভালো ব্যবহারও করেছি, সবার বিপদে-আপদে পাশে থেকেছি। প্রথমে ওই দিদিশাশুড়িরা আমার উপর রেগে থাকলেও আস্তে আস্তে আমিই কিন্তু সবার কাছের হয়ে উঠেছিলাম। সাজতাম গুজতাম, হইহই করতাম, মাইনে পেয়েই ওদের সবার জন্য প্রত্যেক মাসে জিনিস কিনে আনতাম, সবাই খুব খুশি হয়ে উঠত, ওনাদের জন্য মনে করে আর কে কিই বা কোনদিন কিনে এনেছে বল! দিদিশাশুড়ির জন্য ভালো থান, নিউ মার্কেট থেকে চুলের তেল যখন নিয়ে আসতাম, আনন্দে ওনার মুখ জ্বলজ্বল করত।”

মধুছন্দা হাসিমুখে তাকিয়েছিল।

”শেষের দিকে তো বাড়িতে কেউ এলেই উনি আমাকে ডেকে দ্যাখাতেন, ”এই দ্যাখ আমার ছোট নাতবউ, বিশাল বড় চাকরি করে জানিস, আমাদেরও কত ভালোবাসে।” বলতে বলতে দু-চোখের পাতা গর্বে চিকচিক করে উঠতে আমি নিজে দেখেছি। তারপর উনি মারা যাওয়ার সময় আমি যখন অফিস কামাই করে দিনরাত ওনার পাশে থাকতাম, একদিন তো আমার কাছে কেঁদেই ফেলেছিলেন, স্বীকার করেছিলেন যে সারাক্ষণ সবার বাধ্য হয়ে থাকা মানেই ভালো নয়, নিজের ইচ্ছে দমিয়ে রেখে মুখ বুজে মেনে নেওয়াটায় কোনো কৃতিত্ব নেই। নিজের কোয়ালিটিটাকে ফ্লারিশ করা, মানুষকে ভালোবাসতে পারাটাই হল আসল কথা। আসলে কি বল তো,” আমি বললাম, ”এরা যে কেউ খারাপ ছিল তা কিন্তু নয়, ছোট থেকে শাসনে থেকে থেকে এটাকেই এরা স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিল। মেয়েদেরও যে কোনো স্বাধীন ইচ্ছে থাকতে পারে, তাদের যে নিজেদের কিছু করার থাকতে পারে, সেটা এরা ভাবার সাহসটাই পায়নি। আর স্রোতের প্রতিকূলে যাওয়ার সাহস তো সবার থাকে না। তাই একজন কেউ উল্টোদিকে হাঁটতে গেলেই এরা রাশ টেনে ধরতে চায়।”

মধুছন্দা এখনো চোখ বড় বড় করে আছে, ”মাই গড, আমি তো ভাবতেই পারছি না মা!”

আমি এবার তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলাম, ”তুই যে ভাবতে পারবি না সেটা আমি তোকে এই একমাস দেখেই বুঝেছি। তোর দ্বারা কিস্যু হবে না। কোনো স্পার্কই নেই তোর মধ্যে।”

মধুছন্দা কাঁচুমাচু মুখ করে বলল, ”আরে তুমি বুঝতে পারছ না, বাবার উপর যদি এই থেরাপি অ্যাপ্লাই করতে যাই, তাহলে হয়তো মারধোর খেয়ে যাবো তোমার সামনেই।”

”অ্যাঁ?” আমি চমকে উঠলাম, ”মারবে?”

”তা নয়তো কি বলছি তোমাকে! বিয়ে হয়ে যখন চলে আসছি, তখনো আমাকে পইপই করে বলে দিয়েছে, শ্বশুরবাড়িতে সবসময় শাড়ি পরে থাকবি, একা কোথাও বেরোবি না।”

”কি মুশকিল!” আমি এবার বিরক্ত হয়ে উঠলাম, ”উনি এরকম মান্ধাতা আমলের মানুষ বলে তো আর আমরা নই। এ যে দেখছি উল্টোপুরাণ! আমি চাকরিটা ছাড়লামই তোর সঙ্গে খাবো-দাবো ফুর্তি করব লাইফটাকে এনজয় করব বলে!”

মধুছন্দা এবার কাঁদো কাঁদো মুখে বলল, ”কি করব বলো। বাবা এইরকমই। ওই যে অষ্টমঙ্গলায় তুমি অতও সুন্দর ব্লাউজটা জোর করে পরিয়ে পাঠালে, আমি জানতাম, গিয়েই ঝামেলা করবে। ঠিক তাই। বলল, এইরকম ব্লাউজ পরে আর কোনোদিন যেন না দেখি।”

আমি চুপ করে গেলাম। মধুছন্দা খুব ভুল কিছু বলেনি। ওর বাবা জয়ন্তদা সত্যিই একটু পুরনোপন্থী। ওরা আমাদের পারিবারিক বন্ধু বলা চলে। দুই বাড়িরই বৌবাজারে বড় সোনার দোকান, সেই সূত্রে কয়েক প্রজন্মের পরিচয় দুই পরিবারে। ছোট থেকে আমার ছেলে আর মধুছন্দাও বন্ধু ছিল, আমরা মনে মনে চেয়েওছিলাম যে দুটিতে বিয়ে হলে বেশ হয়, তাই ওরা নিজেরাই যখন ঠিক করল বিয়ে করবে, আমরা খুশিই হয়েছিলাম।

জয়ন্তদা আর ওনার স্ত্রী সুলতার সঙ্গে উৎসব অনুষ্ঠানে দেখা হলেও খুব একটা ঘনিষ্ঠতা আমার সঙ্গে হয়নি, কিছুটা আমার চাকরিসূত্রে ব্যস্ততার কারণে, আর কিছুটা আমার নিজের জন্য। টিপিকাল মেয়েলি গল্পগাছা করতে আমার কোনোদিনই তেমন ভালো লাগে না। তাই সুলতা যখন এবাড়িতে আসত, তখন আমার বড় দুই জা বা বাকিদের সঙ্গে গল্পই করত বেশি, আমি ছুটির দিন বাড়ি থাকলেও বই, গান বা আঁকাজোকা নিয়েই থাকতাম। আগেই বলেছি, প্রথম প্রথম লোকজন একটু বাঁকা চোখে দেখলেও মোটের উপর এবাড়ির সবাই ভালোই ছিল, আমাকে আমার মতো তারা থাকতে দিত।

কিন্তু এখন বুঝছি, ত্রিশ বছর আগে আমি যে বিপ্লব এই বাড়িতে এনেছিলাম, তার ছিটেফোটাও এখনো উত্তর কলকাতার সাবেক সুবর্ণবণিক বাড়ি জয়ন্ত দত্তের পরিবারে প্রবেশ করতে পারেনি। মধুছন্দা ভালো ছাত্রী ছিল, পড়েছে আগাগোড়া গার্লস স্কুলে, কলেজও গার্লস, লেডি ব্র্যাবোর্ন, কিন্তু চাকরির চেষ্টা বা চিন্তা কোনোটাই করা যাবে না, এমনই কড়া আদেশ ছিল ওর ওপর। কলেজ অবধি করেছে চওড়া করে ওড়না নিয়ে সালোয়ার কামিজে। কি আশ্চর্য মানুষজন, আজকের যুগেও এরা আছে?

আমার মনে মনে প্রচণ্ড রাগ হতে লাগল। ওদের বিয়েটা হওয়ার আগে আমি এমনিই শান্তিনিকেতন ঘুরে এসে একটা খুব সুন্দর সালোয়ার কামিজ উপহার দিয়েছিলাম সুলতাদিকে, সেটা হাতে নিয়ে সুলতাদির অভিব্যক্তি দেখে আমার চাপ লেগেছিল বেশি। অথচ পরে আমাকে মধুছন্দা বলেছিল, সুলতাদির খুব ইচ্ছে এগুলো পরার, কিন্তু জয়ন্তদার ভয়ে পরার কথা মাথাতেও আনতে পারে না।

মধুছন্দা শান্ত নরম সরম মেয়ে, গুরুজনকে অমান্য করে না বলে ও ওর মৌলিক অধিকারগুলো অবধি পাবে না?

মনে হচ্ছিল আমি যেন সেই বিয়ের পরের দিনটায় ফিরে গেছি।

আমি একটা নিশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালাম, ”রেডি হ। বেরবো।”

মধুছন্দা অবাক, ”কোথায়?”

আমি বললাম, ”নেট এক্সামের কি ভালো একটা কোচিং আছে বলছিলি যেন কোথায়?”

 কলেজে পড়ানোর যে খুব শখ মধুছন্দার ছিল, সেটা আমার ছেলে সমন্বয় বিয়ের আগেই আমাকে গল্প করেছিল। আর তাই পিএইচ ডি করতে গেলে নেট তো দিতেই হবে।

 মধুছন্দা বলল, ”কোন সাবজেক্টে? আমার সাবজেক্টে … মানে কেমিস্ট্রিতে? পার্কসার্কাসে, কিন্তু কেন? মা তুমি বুঝতে পারছ না, বাবা বিশাল চেঁচামেচি করবে। বলবে শ্বশুরবাড়িতে এইসব করে আমার মুখ ডোবাবি তুই।”

আমি কথা বাড়ালাম না, আলমারি থেকে একটা নতুন কেনা পালাজো কুর্তির সেট বের করতে করতে নির্লিপ্তভাবে বললাম, ”ঘরে গিয়ে রেডি হয়ে নে। আর ঠিকঠাক জামা পরবি। আমি এই ব্ল্যু ইয়লো পরছি, তুইও এই রঙের কিছু থাকলে পর, ম্যাচিং হবে।”

ঘণ্টাদুয়েক পরে পার্কসার্কাসের ওই ইন্সটিটিউটে মধুছন্দার অ্যাডমিশন করিয়ে একটা পার্লারে গিয়ে বেশ ফ্যাশনেবল চুল কেটে পাশের একটা রেস্ট্যুরেন্টে দুজনে মিলে পেট ভরে বিরিয়ানি সাঁটিয়ে যখন গাড়িতে উঠলাম, মধুছন্দার চোখদুটো খুশিতে ঝলমল করছিল, বেচারি বোধ হয় এই প্রথম জিন্স টপ পরতে পেরেছে। এই সেটটা আমিই কিনে দিয়েছিলাম ওকে, আজ প্রথম পরল।

নাহ মেয়েটা ভালোই!

আমার অনেকদিনের স্বপ্নটা পূর্ণ হওয়ায় আনন্দে মেজাজটা ফুরফুর করছিল। সমীর দুবার ফোন করল, পরে করছি বলে কেটে দিলাম।

রাস্তায় প্যান্ডেল বাঁধা দেখতে দেখতে ভাবলাম, নাহ, আমার পুজোর প্ল্যান মনে হচ্ছে ভণ্ডুল হবে না।

মধুছন্দা আইসক্রিমটা শেষ করে বলল, ”মা, উইকে তো তিনদিন আসতে হবে, ওই দিনগুলো বাবা এসে পড়লে ম্যানেজ করতে পারবে তো? এখন নয়। পুজোর পর থেকে অবশ্য ক্লাস শুরু হবে বলল।”

আমাদের বাড়িটা একদম বৌবাজারের পেছনে, কাজেই মধুছন্দার বাবা দোকান থেকে মাঝেমধ্যেই চলে আসেন আমাদের বাড়ি, সেইজন্য মধুছন্দার ভয়টা আরো যাচ্ছে না।

আমি ভ্রূ কুঁচকে তাকালাম, ”কেন? তুই চুরি করতে যাচ্ছিস?”

”সেটা নয়, তুমি তো জানোই। একেই এত ছোট করে চুল কাটলাম, কি করে সামাল দেব ভাবছি। আমার মা অবধি বাবার বিরুদ্ধে কিচ্ছু কোনোদিনও বলতে…!”

আমি মধুছন্দাকে কথা শেষ করতে দিলাম না, আমাদের বাড়ির ড্রাইভার শ্যামলকে বললাম, ”শ্যামল, আহিরিটোলা চলো সোজা।”

মধুছন্দা চমকে উঠল, ”মা, আ-আহিরিটোলা কেন? ওদিকে তোমার কোনো বন্ধু আছে বুঝি? আজ তো সোমবার, জানো তো বাড়িতে পুজো থাকে বলে দোকান দুপুরেই বন্ধ করে বাবা বাড়ি চলে যায়, যদি রাস্তায় দেখতে পেয়ে যায়?”

আমার মনে হল মধুছন্দার মাথায় জোরে দুটো চাঁটি দিই, উফ, এত ভীতুও কোনো মেয়ে হয়! আমি বললাম, ”রাস্তায় দেখতে পাবে কেন? আমরা যাচ্ছি, জয়ন্তদা আর সুলতাদি বাড়িতেই ওয়েট করছেন, এই তো মেসেজ করে দিলাম।”

মধুছন্দা এবার প্রায় কাটা ছাগলের মতো ককিয়ে উঠল, ”এইভাবে? মা, প্লিজ তুমি আগে বাড়ি চল, বাবা আমায় এই ড্রেসে দেখলে পুঁতে ফেলবে, জাস্ট পুঁতে ফেলবে। তোমার ছেলে বিয়ের পরে পরেই বিপত্নীক হয়ে যাবে মা, তুমি প্লিজ বাড়ি চলো।”

মধুছন্দার এই অতিরিক্ত ভয় পাওয়াটায় আমার অসহ্য লাগছিল,তবু ওঁর কথার ধরন শুনে হেসে ফেললাম, ”চিন্তা নেই, পুঁতে ফেললে আমি গিয়ে আবার খুঁড়ে তুলে নিয়ে আসব তোকে। আচ্ছা, দুনিয়ায় কোন ভীতু মেয়ে লক্ষ্মী মেয়ে উপাধি পাওয়া ছাড়া কিছু করতে পেরেছে বল তো? এত ভীতু কেন তুই? পড়াশুনো শিখেছিস, যুক্তি দিয়ে কথা বলে ঘোল খাওয়াতে পারিস না? এই সব পুরনো ধ্যানধারণা আঁকড়ে চলা মানুষগুলো খালি ট্র্যাডিশনের অজুহাত দেয়, যুক্তি দিলেই দেখবি এরা নয় গুম হয়ে যাবে, নাহয় পিছু হটবে।”

মধুছন্দা তবু ভয় পাওয়া তিতিরপাখির মতো জানলার বাইরে চেয়ে থাকে, এক্ষুণি ম্যানিকিওর করে আসা নখগুলোকে খেয়ে খেয়ে টেনশন কাটাতে থাকে।

ওদের বাড়ি যখন ঢুকলাম তখন প্রায় বিকেল চারটে। আমাদের মতো অতটা পুরনো বাড়ি কিন্তু মধুছন্দাদের নয়, সোজা আয়তাকার তিনতলা বড় বাড়ি, সামনে গাড়ি বারান্দা, আর বেশ বড় বাগান। সব মিলিয়ে মডার্ন একটা বাংলো, অথচ মানুষজন কতটা পুরনো, ভাবলাম আমি।

ভেতরে ঢুকে প্রথমে আমাকে, তারপর মধুছন্দাকে আপাদমস্তক দেখে ওঁদের পুরনো চাকর মধু প্রথমে হাঁ হয়ে গেল, তারপর বসতে বলেই ছুটল ভেতরে।

আমি মধুছন্দার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা কুলকুল করে ঘামছে। ঘামুক, ভয়টা ওর আজ কাটাতেই হবে, নাহলে আরো হাজার হাজার মেয়ের মতো ওর স্বপ্নটাও কবরে চলে যাবে।

মধুছন্দার বাবা-মা একসাথে ঘরে ঢুকলেন। জয়ন্তবাবু একঝলক তাকিয়ে কেমন গম্ভীর হয়ে গেলেন। আর মাথায় ঘোমটা দিয়ে শাড়ি পরা সুলতাদি আমার পালাজো দেখে যতটা চমকে উঠলেন, তার চেয়েও বেশি মনে হয় সিঁটিয়ে গেলেন মধুছন্দার জিন্স টপ দেখে।

প্রাথমিক কুশল বিনিময়ের পর আমিই প্রথম কথা শুরু করলাম, ”জয়ন্তদা, সুলতাদি, একটা দরকারি কথা বলতে এলাম। মধুছন্দা নেট-এর কোচিং-এ ভর্তি হল আজ।”

জয়ন্তবাবু ভ্রূ কুঁচকে মধুছন্দার দিকে একবার তাকিয়েই বললেন, ”বলুন বেয়ান! কি হয়েছে? নেটের কোচিং আবার কেন?”

এই এনাদের আরেক অদ্ভুত সম্বোধন, বিয়ের আগে কি সুন্দর আমাকে অমুকদি বলতেন, এখন বিয়ের পরেই আমাকে আর সমীরকে বেয়াই বেয়ান ডাকতে শুরু করেছেন। সহজ সম্পর্কগুলোকে এরা কেন যে জটিল করেন, আমার কিছুতেই মাথায় ঢোকে না।

আমি মিষ্টি করে সেই আমার নিজের বিয়ের পরের দিনের হাসিটা হাসলাম, ”বলছি। আগে একটা কথা বলুন আপনার ছেলে টুকুন বড় হচ্ছে, ও বিয়ে করলে ওর বউ চাকরি করতে পারবে না?”

জয়ন্তবাবু গুম হয়ে গেলেন, ”দত্তবাড়ির বউরা চাকরি করতে যায় না বেয়ান! এটা তো আপনিও ভালোই জানেন।”

আমি সম্মতির ভঙ্গীতে মাথা নাড়লাম, ”হুম জানি। আচ্ছা, ধরুন একটা মেয়ে, তার মারাত্মক মাথা, আইনস্টাইনের লেভেলের আইকিউ তার, কিংবা সাইনা নেহওয়ালের মতো খেলার ট্যালেন্ট, বা ধরুন লতা মঙ্গেশকরের মতো গানের গলা, শুধুমাত্র দত্তবাড়ির বউরা বাইরে যায় না বলে আপনি সেই মেয়েটার ভেতরের প্রতিভাটাকে নষ্ট করে দেবেন?”

জয়ন্তবাবু কি বলতে যাচ্ছিলেন, আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম, ”বহু আগে যখন আমাদের সমাজ ম্যাট্রিয়ার্ক ছিল, সেটা আজও কন্টিনিউ হলে আপনার উপর যদি এমন নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া হত, কেমন লাগত আপনার? আজকালকার দিনে এগুলো কোনো ব্যাপার? একটা মেয়ে, পড়াশুনো শিখেছে, দুনিয়াটাকে সে দুচোখ ভরে দেখবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে, তার ইচ্ছে অনিচ্ছে গুলোকে মেটাবে, সেটাকেই তো স্বাধীনতা বলে। বনেদি বাড়ির মেয়ে হওয়ার অপরাধে সে যদি এইটুকু না পায়, তবে আইসিস-এর জঙ্গিদের সাথে আপনার কি পার্থক্য রইল?”

জয়ন্তবাবু থতমত খেয়ে আমার দিকে তাকালেন।

আমি মোটেই দমলাম না, ”সব কিছুর একটা কারণ আছে, আগেকার দিনে মেয়েরা বাড়িতে থাকত, শাড়ি, ঘোমটা এইগুলো তবু পরে থাকা যেত, এখনকার দিনে ক-টা মেয়ে বাড়িতে বসে থাকে বলুন তো? আর থাকবেই বা কেন? সেখানে রোজ বেরোতে গেলে কমফরটেবল ড্রেস দরকার, যাতে তারা স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারে, তাই না? আর আমার তো মনে হয় একজন শিক্ষিত মেয়ের এইটুকু বোধ যথেষ্ট আছে, কোনটা শালীন, কোনটা অশালীন, কোথায় কি পরা উচিত। আমি নিজেও তাই পরি, আর মধুকেও তাই পরতে বলেছি এবার থেকে।”

সেদিন মধুছন্দাকে নিয়ে একটু পরেই ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। মধুছন্দা কেমন চুপ করে বসেছিল গাড়িতে, চোখটা ছলছল করছিল। আমি নরমভাবে ওর হাতের উপর হাত রেখেছিলাম, ”আমি কিন্তু জয়ন্তদাকে কোনো অপমান করিনি মধু। এই কথাগুলো না বললে শুধু তুই নয়, টুকুনের বউ হয়ে যে আসবে, তার কাজটা আরও শক্ত হয়ে উঠবে। কারুর চিন্তাধারা চেঞ্জ করতে গেলে তাকে বোঝাতেই হবে, এটা তো মানবি? আর চুপ করে থেকে কি পাবি জীবনে? যখন বুড়োবয়সে অথর্ব হয়ে বসে থাকবি, সারাজীবনের পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষবি, তখন আফসোস হবে না যে একটু চেষ্টা করলে আমি একটা কলেজে পড়াতে পারতাম, কত রেসপেক্ট পেতাম, শুধু নিজের সামান্য ভয়ের জন্য কিছু করলাম না।”

মধুছন্দা জলভরা চোখে আমার দিকে তাকাল, ”বাবা কি আর আমাদের বাড়ি আসবে না মা!”

”নিশ্চয়ই আসবেন, কেন আসবেন না, একি কথা!” আমি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম।

কিন্তু না, মধুছন্দার বাবা আর এলেন না। আগে যেখানে সপ্তাহে তিনদিন করে দোকানে একটু ফুরসত পেলেই হেড কর্মচারীর হাতে ক্যাশের ভার দিয়ে ছুটে চলে আসতেন, তেমন আর এলেন না।

পুজো এসে গেল। পঞ্চমীর দিন আমরা আমাদের ট্রিপের ফাইনাল প্ল্যান করছিলাম। একাদশী থেকেই সমন্বয়ের অফিস আর সমীরের দোকান খুলে যাচ্ছে বলে আমি আর মধু দুজনে মিলে তিনদিনের জন্য মুর্শিদাবাদ ঘুরে আসব ঠিক করেছি। ভিআরএস-এর সময় একগাদা টাকা পেয়েছি, সেগুলোকে নিয়ে এখন যদি একটু আনন্দ না করি, আর কবে করব?

মধুর আড়ষ্টতা একদিনে পুরোপুরি কেটে গেছে, মেয়েটা ভেতরে ভেতরে যে এতটা উচ্ছল আমি বুঝতেই পারিনি। কলেজ স্ট্রিট থেকে গিয়ে নেটের বইপত্র কিনে এনেছে, পড়াশুনোও শুরু করেছে যাতে ক্লাস শুরু হলে গিয়ে লিঙ্কটা ধরতে পারে।

আসলে সব মেয়েই বোধ হয় ভেতরে আমার মতো, শুধু বাইরেটা নানা পরিস্থিতির চাপে তাঁদের খোলসের মধ্যে থাকতে হয়, সেই খোলসটা কোনোমতে খুলে নিয়ে পুড়িয়ে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে!

আমি খাটের উপর বসে ল্যাপটপে মুর্শিদাবাদের ভালো হোটেল খুঁজছিলাম আর ও দূরের চেয়ারে বসে কি একটা অ্যাপে ওখানকার খাবারদাবার নিয়ে ফিডব্যাক পড়ে পড়ে আমায় শোনাচ্ছিল।

এমন সময় জয়ন্তদা আর সুলতাদি ঘরে ঢুকলেন। আমি শশব্যস্ত হয়ে উঠে বসলাম।

মধুছন্দা ওর শর্টস টেনে পা ঢাকার জন্য এমন নীচে নামাতে লাগল, আমার ভয় হল উপর থেকেই না খুলে যায় প্যান্টটা!

আমি বুঝতে পারছিলাম না কি বলব, কিন্তু পেছনে সুলতাদি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আমার মুখে একটা হাঁফ ছাড়া আনন্দ ফুটে উঠল।

পৌষ মেলার কেনা সালোয়ার কামিজটায় সুলতাদিকে ভারি সুন্দর দেখাচ্ছিল যে!

**********

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *