গ্রিস দেশের সরস্বতী
দীপু একমনে বিশাল থার্মোকলের শিটটা থেকে সরু সরু করে স্ল্যাব কাটছিল, থার্মোকল জিনিসটা দেখতে যতটা সুন্দর, সেটাকে কেটে কিছু বানানোটা কিন্তু অতটা সোজা নয়, দীপু প্রথমে বাড়ির ছুরি দিয়ে কাটতে গিয়ে বোকা বনে গিয়েছিল, ছুরি আড়াআড়ি জোরে চালালেও থার্মোকলের মাঝের গোল গোল মটরদানার মতো জিনিসগুলো ভেঙে যায়, ফলে এবড়োখেবড়োভাবে কেটে যাচ্ছিল। অবশেষে কাল কলেজ থেকে ফেরার সময় মিকাইয়ের বাইকে করে মন্তেশ্বর টাউনে গিয়ে থার্মোকল কাটার স্পেশাল ছুরি কিনে এনেছে।
এই ছুরিটা ভারি মজার, অনেকটা পুরনো দিনের ক্ষুরের মতো দেখতে, ওপরে আয়তাকার ফলা বেরিয়ে থাকে, তা দিয়ে থার্মোকলের স্ল্যাবগুলো নিখুঁতভাবে কেটে বেরিয়ে আসছে।
দীপু ডানহাটের তেলোটা শক্ত করে চেপে ধরছে ছুরিটার ওপর, তারপর একদম উপর থেকে লম্বভাবে চালাচ্ছে থার্মোকলের গায়ে, একনিষ্ঠভাবে কাজটা করছে ঠিকই, কিন্তু মনের মধ্যে ওর একটা প্রচ্ছন্ন উত্তেজনাও কাজ করছে।
যার জন্য এত আয়োজন, সে দেখবে তো?
অ্যাথেনা আসবে তো?
গ্রামের এই দিকটা সব কাঁচাপাকা বাড়ি, তারই মধ্যে এই ফাঁকা জায়গাটা পাশের সিধুকাকাদের, ফাঁকা অবশ্য নয়, সিধুকাকা বছরে দু-বার এখানে কুমড়োর চাষ করে, মাঘ মাস শেষ হলেই আবার বীজ পুঁতবে, মাচা বেয়ে কুমড়োগাছের লতাপাতা বেড়ে উঠে গোটা জায়গাটা তখন ছেয়ে ফেলবে।
সিধুকাকার তাই ওদের ওপর কড়া নির্দেশ, ”দ্যাখ দীপু, জায়গাটা দিতে পারি তোদের পুজো করার জন্য, কিন্তু আর হপ্তাখানেকের মধ্যেই কিন্তু আমি বীজ বসাব, একদম পরিষ্কার করে দিবি কিন্তু বিসর্জনের পর! মনে থাকবে তো? আর বল্টুকে অঙ্কটা একটু দেখিয়ে দিবি তো ক-দিন।”
দীপুরা লম্বা করে ঘাড় নেড়েছিল। সিধুকাকার কথায় ঘাড় না নেড়ে উপায় নেই, এচত্বরে এমন ছোট্ট ফাঁকা জায়গা মেলা ভার। হাটতলার দিকে অবশ্য বেশ কিছু খোলা জায়গা রয়েছে, কিন্তু সেখানকার পরিবেশ বড় বাজে।
আসলে এখন সরস্বতী পুজোটা পড়ুয়াদের থেকে বেশি না-পড়ুয়াদের সম্পত্তি হয়ে গেছে, উড়োপাড়ার মস্তান ছেলেগুলো নমো নমো করে সরস্বতী ঠাকুর এনেই তার সামনে উদ্দাম হিন্দি গান চালিয়ে নাচে, মাইকের কানফাটা আওয়াজে ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠে, আর রাত হলেই সেখানে মদ-মাংসের ফোয়ারা ছোটে। সরস্বতী পুজোর চাঁদায় নিজেদের দিব্যি শীতকালীন পিকনিকটা হয়ে যায়।
দীপুরা ছোট ছেলে, তার ওপর শান্তশিষ্ট, ওদের সাথে টক্কর দিয়ে পারবে কেন? তাই ওরা এই জায়গাটা বেছে নিয়েছে।
দীপু একমনে থার্মোকল কেটে প্যান্ডেল বানাচ্ছিল, দীপুর হাতের কাজ খুব সুন্দর, ওর ইচ্ছেও ছিল আর্ট নিয়ে পড়ার, কিন্তু গ্রামের লোকজন একটু প্রাচীনপন্থী, আঁকাজোকা নিয়ে যে পড়াশুনো করা যায়, কিংবা পড়াশুনো করা গেলেও যে তাই দিয়ে ভবিষ্যতে পেট চালানো যেতে পারে, সেই ধারণা এখানকার কারুরই নেই। দীপু উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ভয়ে ভয়ে একবার কথাটা বাবার কানে তুলতে গিয়েছিল, বাবা তখন দোকানের গদিতে বসে দাঁড়িপাল্লায় ওজনে ব্যস্ত, বারদুয়েক পুনরাবৃত্তির পর হাঁপাতে হাঁপাতে দীপুর দিকে তাকিয়েছিল, ”অ্যাঁ! আঁকা নিয়ে পড়বি মানে? সে আবার কি পড়া?”
দীপু মিনমিন করে বলেছিল, ”আঁকা, মানে আর্ট নিয়ে পড়া যায় তো! সরকারি কলেজ আছে কলকাতায়, সেখানে পড়া যায়। যদি চান্স পাই, খরচও তেমন নেই।”
”অ। তা আঁকা নিয়ে কি পড়াবে শুনি? ওই কাগের ঠ্যাং, বগের ঠ্যাং নিয়ে পড়ার আছেটা কি? আর পড়ে কি আঁকার টিউশনি করবি? তাতে পেট চলবে?” বাবা বিটকেল চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়েছিল ওর দিকে, তারপর হাতের ডাল মাপার হাতাটা উঁচু করে তুলে ধরে চেঁচিয়ে উঠেছিল, ”চুপচাপ মন্তেশ্বর কলেজে গিয়ে ভর্তি হয়ে যাবি। গ্র্যাজুয়েশনটা পাশ কর, করে ব্যবসায় মন দে। এহ, বুড়ো বাপ দোকানে বসে হিমশিম খাচ্ছে, আর উনি যাবেন কলকাতায় আঁকতে!”
দীপু তবু হাল ছাড়েনি, ডুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটো ধরে বাঁচতে চেয়ে আঁকুপাঁকু করে, তেমনভাবে বলেছিল, ‘কে-কেন, গাঙ্গুলিদের ওই সোমেশকাকাও তো এঁকেই অতদূর…!”
ওর কথা শেষ হতে না হতেই বাবা এমনভাবে ওরদিকে তাকিয়েছিল, ও আর কথা শেষ করার সাহস পায়নি, মানে মানে কেটে পড়েছিল।
বাবার সেই তাকানোটা মনে পড়তেই দীপুর মনটা কেমন হয়ে গেল, একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও কাজে মন দিল। বাবার কথামতোই ও ওদের এই খড়মপুর গ্রাম থেকে এখন প্রায় একঘন্টা সাইকেল চেপে পড়তে যায় মন্তেশ্বর কলেজে। ইংরেজি অনার্স। দীপু যে পড়াশুনোয় খারাপ তা নয়, তার ওপর ওদের এই অজপাড়াগাঁয়ের তুলনায় ও পড়াশুনোয় যাকে বলে রীতিমতো ভালো, এই গ্রামে তো এখনো শিক্ষার আলোই তেমন পৌঁছয়নি। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি, খড়মপুর গ্রামে পড়াশুনো করাটা এখনো বিলাসিতা। আসলে এখানকার মানুষজন এতই গরিব, বেশিরভাগ বাড়িতেই মেয়েরা ঘরের কাজ আর ছেলেরা চাষবাস, কিংবা পোলট্রি ফার্মের কাজে জড়িয়ে পড়ে। এক-দুটো ছাড়া সবই প্রায় মাটির বাড়ি। সেখানে ওর আঁকাটাকে প্রোফেশনালি নেওয়াটা কি চোখে নেওয়া হবে তা তো সহজেই অনুমান করা যায়।
দীপু আরো কিসব ভাবছিল, হঠাৎ ঘন্টু হাঁপাতে হাঁপাতে ওর দিকে ছুটে এল, ”ওই, তোর বউ কিন্তু কাল সকালেই আসবে। একদম পাক্কা নিউজ ভাই!”
দীপুর বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠল, ”শি-শিওর তুই?”
”হান্ড্রেড পারসেন্ট শিওর বস! রুবু এই তো দেখে এল, সোমেশকাকারা গাড়ি থেকে নামছে, ওদের ওই বেঁটে মতো কাজের ছেলেটা সব লাগেজগুলো নামিয়ে বাড়িতে ঢোকাচ্ছে।”
দীপু একদৃষ্টে ঘন্টুর দিকে তাকিয়ে রইল, ”আর? আর কাউকে দেখেনি রুবু?”
ঘন্টু এবার মিটিমিটি হাসল, তারপর ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল, ”বলব। আগে দশ টাকা ছাড়।”
দীপুর মুখটা বিরক্তিতে বেঁকে গেল। ঘন্টুর কথায় কথায় ঘুষ নেওয়ার বদভ্যাসটা আর গেল না। দীপুই বা এত টাকা কোত্থেকে পায়, ওই তো চার-পাঁচটা বাচ্চাকে পড়িয়ে হাজার টাকা মতো রোজগার ওর!
নিজের মনে গজগজ করতে করতে দীপু পকেট থেকে একটা দশ টাকার কয়েন বের করে বাড়িয়ে দিল, ”সবসময় গরিব মানুষের ওপর ডাকাতি করার অভ্যাসটা এবার বন্ধ কর।”
ঘন্টু চোখ টিপে বলল, ”গরিব? তুই? শালা এনআরআই বউ, এনআরআই শ্বশুর, আর তুই নাকি গরিব?” দীপুর বিরক্তি এবার বাড়ছে বুঝে তারপরেই ও আসল কথায় চলে এল, ”আরে অত চটিস কেন ভাই। তোর বউও এসেছে। আমি নিজে দেখেছি। ছাদের ওপর দাঁড়িয়েছিল।”
”ছাদের ওপর দাঁড়িয়েছিল দেখেই তুই কি করে বুঝে গেলি কাল সকালে ও এই পাড়ায় পুজো দেখতে আসবে?” দীপের এবার দশ টাকাটার ওপর ভারি আফসোস হতে শুরু করল।
‘ওহ পুরোটা আগে শোন না! আমাকে ফেসবুকে মেসেজ করে বলেছে, কাল সকালে এখানে আসবে।” কথাটা বলেই ঘন্টু সাবধানী গলায় বলে, ”তবে তোকে বলতে বারণ করেছে কিন্তু! তুই আবার বলে দিস না আমি বলেছি। সারপ্রাইজ টারপ্রাইজ দেবে বোধ হয়!”
”সারপ্রাইজ আবার কি?” দীপু হাঁ।
”তা তোমাদের প্রাইভেট ব্যাপার আমি করে জানব!” ঘন্টু চোখ টিপল, ”দ্যাখ সারপ্রাইজ হামি-টামি পাবি নিশ্চয়ই!”
কি আশ্চর্য ব্যাপার-স্যাপার অ্যাথেনার, কিছুই বোঝা যায় না! প্রেম করছে দীপুর সাথে, এদিকে কোথায় কখন আসবে, সেটা মেসেজ করে জানাচ্ছে ঘন্টুকে, আবার দীপুকে সেটা জানাতেও বারণ করছে। মাঝে মাঝে দীপুর মনে হয় সত্যিই কি অ্যাথেনা ওকে চায়? নাকি, হাজার হাজার মাইল দূরে বসে থেকে এটা ওর টাইম পাস ছাড়া আর কিছুই নয়!
আজও যখন ফাঁকা সময়ে বাড়ির ছোট্ট কোনায় রাখা ওর একান্ত নিজস্ব তক্তাপোষে শুয়ে শুয়ে মাথার নীচে হাত রেখে জানলা দিয়ে ও আকাশ দেখে, ওর জীবনের এই এপিসোডটা ভাবতে বসলেই যেন মনে হয় কোনো সিনেমা দেখছে। কিন্তু ক্লাইম্যাক্সে যে কি আছে, তা ঘন্টুর ভাষায় ‘ভগা’ই জানেন!
খড়মপুর গ্রামে যে কটা হাতে গোনা শিক্ষিত বাড়ি আছে, তার মধ্যে একটা হল গাঙ্গুলিদের বাড়ি। নিজস্ব জমি, পুকুর, ঠাকুরদালান, দুর্গামন্দির, সব মিলিয়ে একেবারে কয়েক বিঘে নিয়ে ওদের জমজমাট বসতভিটে। শুধু ধনসম্পত্তিতেই নয়, পড়াশুনোতেও ও-বাড়ির ছেলেমেয়েরা বরাবরই এগিয়ে। কেউ কলকাতা, কেউ দিল্লিতে বড় বড় চাকরি করে, দুর্গাপুজোয় সব একজোট হয়। আরো একটা কারণে গাঙ্গুলিবাড়ির গোটা বর্ধমান জেলাতে খুব নামডাক, বিরাট ঘটা করে সরস্বতী বন্দনা হয় ও-বাড়িতে, সরস্বতী পুজো যে স্কুল বা পাড়ার কচিকাঁচা ক্লাব ছাড়া বাড়ির সবাই করতে পারে, তা এগ্রামের লোকেদের কল্পনারও বাইরে। কিন্তু গাঙ্গুলি বাড়ির সবকিছুই অন্যরকম।
কিন্তু সেই বাড়িতেও ঝড় উঠেছিল, যখন বাড়ির সবচেয়ে ছোটছেলে সোমেশ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে পড়তে ফাইনাল ইয়ারে ছেড়ে দিয়ে এসে ঘোষণা করল যে ডাক্তারি করতে তার মোটেও ভালো লাগে না, সে আঁকতে চায়। জ্যাঠা, কাকা থেকে শুরু করে সমস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষরা হাঁ হাঁ করে উঠেছিলেন। এসব অবশ্য দীপুর জন্মের আগের কথা, মায়ের মুখে শোনা। সোমেশকাকা লোকজনের কথায় অত কান-টান দেয়নি, সে দিব্যি ডাক্তারি পড়া ছেড়ে আর্ট নিয়ে পড়তে চলে গিয়েছিল উত্তর ভারতের কোনো এক শহরে। শোনা যায়, বাড়ির বড়দের তীব্র আপত্তি থাকলেও সোমেশকাকার মা নাকি ছেলের ইচ্ছে সত্যি করতে গায়ের গয়না খুলে দিয়েছিলেন।
সেই সোমেশ কাকার তারপর বহু বছর কোনো হদিশ ছিল না। গ্রামের জনজীবন এমনিতে নিস্তরঙ্গ ঠিকই, তাই বলে নতুন নতুন আলোচনার বিষয়ের অভাব হয় না। সোমেশকাকা মানুষের মন থেকে হারিয়েই গিয়েছিল।
পুকুরের জলে আবার ঢিল পড়ল যখন বছর দশেক আগে কোলকাতা থেকে একটা খবরের কাগজের দুজন রিপোর্টার বিশাল বিশাল ক্যামেরা নিয়ে ওদের এই খড়মপুর গ্রামে নিউজ কভার করতে এল। তখনই সারা গ্রাম হাঁ হয়ে শুনল, সোমেশকাকা নাকি এখন মস্ত বড় একজন আর্টিস্ট, সে নাকি পাথর দিয়ে এমন অসাধারণ মূর্তি বানায়, সারা দুনিয়া তার নাম জানে। সম্প্রতি সে নাকি খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্টের অসাধারণ নিখুঁত একটি মূর্তি বানিয়েছে, তাতে হইহই পড়ে গেছে বিশ্বে, সোমেশকাকার শিকড় খুঁজতে কলকাতার মিডিয়া তাই হানা দিয়েছে এই খড়মপুরে।
গ্রামের একমাত্র অশ্বত্থতলায় বুড়োরা সব বসে বিড়ি টানতে টানতে আরো শুনল, সোমেশ থাকে নাকি এখন গ্রিসে। সেখানকার মেয়েই বিয়ে করেছে।
গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান বুদুদাদু চোখ বড় বড় করে বলল, ”অ্যাঁ ! গ্রিস? গ্রিস মানে সেই ইতিহাস বইয়ের রোম, গ্রিস? আলেকজান্ডার? সেই সব দেশ এখনো আছে নাকি?”
তার পরের ফেব্রুয়ারি মাসে সোমেশকাকা তার গ্রিক বউ আর মেয়েকে নিয়ে অতবছর পর প্রথম বাড়িতে আবার পা দিল। বাড়ির ছেলে সারা পৃথিবীতে বংশের নাম উজ্জ্বল করেছে, আর তাকে গাঙ্গুলিবাড়ির বিখ্যাত সরস্বতীপুজোয় নেমন্তন্ন করা হবে না, তাই আবার হয় নাকি?
দীপুর এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে সেই দিনটা, তখন ও সবে টেনে উঠেছে। স্কুল যায়, এসে বাড়ির মুরগিগুলোকে একটু সামলায়, আর অবসরে আঁকায় ডুবে যায়। ততদিনে সোমেশকাকার গল্প শুনে শুনে মনের মধ্যে তাঁকেই দীপু হিরোর আসনে বসিয়ে ফেলেছে। যদিও সোমেশকাকা আঁকিয়ে নয়, ইংরেজিতে যাকে বলে স্কাল্পটর, তবু সেও তো হাতের কাজ, শিল্পই হল!
কিছুটা পুজোর প্রসাদের লোভে, আর বাকিটা সোমেশকাকাকে চাক্ষুষ দেখার আগ্রহে সেদিন ও গাঙ্গুলিবাড়িতে গিয়েছিল।
আর সেদিনই ও প্রথম দেখেছিল অ্যাথেনাকে।
আজও ভাবলে কেমন ঘোরের মধ্যে চলে যায় দীপু, ওরই বয়সি একটা রোগা মেয়ে, মাখনের মতো ফর্সা আর মসৃণ তার হাতদুটো, পুতুলের মতো নীল চোখ, লাল একটা ফ্রক পরে বসেছিল ঠাকুরদালানে রাখা একটা চেয়ারে। সবচেয়ে অদ্ভুত মেয়েটার চুলগুলো, টিভিতে ইংরেজি সিনেমায় দেখা মেমগুলোর মতো, পুরো সোনালি, রোদ পড়ে যেন সেগুলো সত্যিকারের সোনার মতোই ঝলমল করছে।
ওকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে পাশ থেকে ওর বোন মিঠি বলেছিল, ”ওইটাই তো সোমেশকাকার মেম মেয়ে রে দাদা! কি ফর্সা দেখেছিস? নাকটা কি টিকলো রে, ঠিক যেন কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড়!”
দীপু বিরক্ত হয়ে বোনের দিকে তাকিয়েছিল, মিঠি ততদিনে শুধু ঘুরেছে বলতে দার্জিলিং, কোনোকিছুর বর্ণনা করতে গেলেই যেন ওর মুখে দার্জিলিং এর কিছু না কিছু চলে আসবে।
সেবার গাঙ্গুলিবাড়িতে ভিড় একটু বেশিই হয়ে রয়েছিল সবসময়। একে তো সোমেশকাকার বউ মেয়ে দুজনেই খাঁটি বিদেশিনীর মতো দেখতে, ওই বয়সি মেয়ে ফ্রক পরে ঘুরছে, খড়মপুর গ্রামের লোকেরা ভাবতেই পারে না। তাছাড়া সাধারণত এই ধরনের মানুষেরা এমন অপরিচিত পরিবেশে এলে একটু আড়ষ্ট হয়ে থাকে, কথা কম বলে। কিন্তু অ্যাথেনা যেন একটা খরস্রোতা নদী, সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে, গল্প করছে, জড়সড় হওয়ার কোনো বালাই নেই!
দীপু অনেক ইতস্তত করে সেবার কথা বলেছিল সোমেশকাকার সঙ্গে। ওর আঁকার প্রতি আগ্রহ সোমেশকাকা বেশ মন দিয়ে শুনেছিলেন, তারপর বলেছিলেন, ”ও তুমি ভজাদার ছেলে? আঁকো? বাহ, তোমার কিছু কাজ আমায় দেখিও তো!”
আঁকাকে যে আর্টিস্টরা কাজ বলে, সেই প্রথম জেনেছিল দীপু। আর তারপরেই পায়ে পায়ে ওর দিকে এগিয়ে এসে আলাপ করেছিল অ্যাথেনা।
সেবার সোমেশকাকারা গ্রিসে ফিরেছিল ফাল্গুন মাস কাটিয়ে, ততদিনে প্রকৃতির সাথে দীপুরও কৈশোর মনে বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে। সেই বসন্তের ফুল নিজের মনের আকাশকুসুম কল্পনাতেই রঙিন থেকে রঙিনতর হয়েছে। অবশেষে পরের দুর্গাপুজোয় দীপু আরক্ত মুখে বন্ধুদের দিয়ে অ্যাথেনাকে জানিয়েছিল ওর মনের কথা।
ভাবতে ভাবতে কোথায় চলে গিয়েছিল দীপু, ঘন্টুর এক ঝটকায় ওর চমক ভেঙে গেল, ”কিরে, কোথায় হারিয়ে গেলি তুই? তাড়াতাড়ি কর, ঝুপ করে সন্ধে নেমে এলে কিন্তু আর কাজ শেষ করতে পারবি না। আর এইখানটা যা মশা, তখন বউকে দেখার বদলে ডেঙ্গুতে কোঁকাবি।”
দীপু তাড়াতাড়ি আবার থার্মোকলে মনোনিবেশ করল, ”হ্যাঁ, এই তো করছি। কাল সকালের মধ্যে হয়ে যাবে। ঠাকুরমশাইকে জিজ্ঞেস করেছিস ক-টায় পুজো?”
”ওই তো ন-টা থেকে শুরু।” ঘন্টু হঠাৎ গম্ভীর হয়ে যায়, ”আচ্ছা ভাই, আমি একটা কথা ভাবছিলাম। তুই ধর অ্যাথেনাকে বিয়ে করলি, তারপর এইসব পুজোর জোগাড় টোগাড় কে করবে? মানে ও তো এসব নিয়মকানুন কিছু জানেনা নিশ্চয়ই!”
দীপু মুখ দিয়ে একটা হাসির শব্দ করল, ”হুহ! গাছে কাঁঠাল এখনো পাকলোই না, আর তুই গোঁফে তেল দিচ্ছিস!”
”না রে সত্যি বলছি। তুই এত সুন্দর শোলা দিয়ে ঠাকুর, প্যান্ডেল বানাস আমরা তাজ্জব বনে যাই, আগেরবার তো ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছিলাম, তোর ঠাকুরটা কি ফেমাস হয়েছিল জানিস? সেখানে তোর নিজের ঘরেই যদি না পুজো করতে …!”
”সব হবে। সব ট্রেনিং দিয়ে দেব। আর অ্যাথেনার এইসব ব্যাপারে আগ্রহও খুব। কতলোকে তো দু-তিনবছর বাইরে থেকে এসেই বাংলা ভুলে গেছে এমন হাবভাব করে, সেখানে অ্যাথেনা ওখানে জন্মেও তো বাংলা জানে বল, হোক ভাঙাভাঙা!”
অ্যাথেনার বাংলা দীপুদের বন্ধুমহলে এক দারুণ মজার বিষয়, ঘন্টুর মনে পড়তেই হেসে ফেলল, ”বটেই তো, বটেই তো!”
দীপু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীরভাবে বলল, ”শোন ইচ্ছেটাই বড় কথা। আর সেটা ওর আছে।”
বাড়ি ফিরে এসেও দীপুর উত্তেজনাটা প্রশমিত হল না। সামনাসামনি কতদিন বাদে আবার দেখবে কাল সকালে ওকে, ভাবতেই কেমন হচ্ছে। আর অ্যাথেনা এমন অদ্ভুত মেয়ে, এখন ইচ্ছে করে কিছুতেই আর দীপুর সাথে যোগাযোগ করবে না, মেসেজের উত্তরও দেবে না।
কারুর সাথেই ওর আর কথা বলতে ইচ্ছে হল না, চুপচাপ খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল দীপু।
সত্যি, অ্যাথেনার যে সতিই দীপুর প্রতি কোনো প্রকৃত অনুভূতি আছে, নাকি বালিকা বয়সের অবুঝপনায় সে দীপুর প্রেম নিবেদনে নিয়মমাফিক সাড়া দিয়ে সেবার ফিরে গিয়েছিল গ্রিসে, সেই অনিশ্চয়তায় ভুগতে ভুগতেই দীপুর কেটে গিয়েছিল বেশ কয়েক বছর। ফাঁকা সময়ে অলস দুপুরে অঙ্ক খাতার পেছনে ফুটিয়ে তুলত অ্যাথেনার মুখ, আর নিজের মনেই ভাবত, বছরে দুবার ছাড়া দেখা সাক্ষাত তো দূর, যোগাযোগেরও কোনো উপায় নেই।
নিজের মনেই ও ভয় পেত, অ্যাথেনা সত্যিই ওকে চায় তো? তখন আশপাশের বন্ধুদের চোখের পলক ফেলার মতো ঘনঘন প্রেম, প্রেমিকা বদলাচ্ছে, সেসব দেখে মুখচোরা দীপু আরো ভড়কে যেত, ও নিজেও অ্যাথেনার এখানে এলে টাইম পাসের খেলনা নয় তো?
কিন্তু ভগবান মনে হয় ওর এই ভয়টাকে খুব সিরিয়াসলি নিয়েছিলেন। নাহলে তার বছরদুয়েকের মধ্যেই খড়মপুর গ্রামে রমরমিয়ে ইন্টারনেট এত সস্তা হয়ে উঠবে কেন।
আর ইন্টারনেটের যুগে এসে গ্রিস যা আড়াই ঘণ্টা দূরের কলকাতাও তাই!
সত্যিই, তারপর থেকে দীপুর আর কোনোদিনও ভয় করেনি। সারাদিন পড়া, আঁকা, টিউশনির ফাঁকে ফাঁকে অ্যাথেনাকে কাছে পেয়ে আসছে ও, এখন তো এমন অভ্যাস হয়ে গেছে, সামান্য কিছু ঘটলেই অ্যাথেনাকে না বলা পর্যন্ত ওর ভাত যেন হজম হয় না। যাই কিছু আঁকুক, আগে সেটা অ্যাথেনাকে পাঠাবে, অ্যাথেনার গম্ভীরমুখে মতামত মোবাইলের ওই আয়তাকার স্ক্রিনে দেখতে যে কি ভালো লাগে দীপুর!
এই তো আগের মাসে ওরা সান্তোরিনি বলে একটা দ্বীপে বেড়াতে গিয়েছিল, কি যেন সমুদ্রে বলেছিল অ্যাথেনা, ইগিয়ান সাগর না কি, সেই অসম্ভব সুন্দর দ্বীপটা তো অ্যাথেনার সঙ্গে সঙ্গে দীপুও ঘুরে ফেলল ফোনেই। শুধু তাই নয়, ওই দ্বীপে দাঁড়ানো অ্যাথেনার একটা ছবিও এঁকে ফেলেছিল ও তারপরেই।
দীপু জানে, ঘন্টুর মতো কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাড়া বেশিরভাগই ওকে নিয়ে আড়ালে হাসে, অদূর ভবিষ্যতে ও যে বিশাল লেঙ্গি খেতে চলেছে তাই নিয়ে নিজেদের মধ্যে রগড় করে। ওকে বোঝাতেও এসেছে অনেকে, ”ভাই অ্যাথেনাকে তুই বেশি সিরিয়াসলি নিস না। ওরা কিরকম সব দেশে থাকে জানিস? অন্যভাবে নিস না, কিন্তু তোর মতো এইরকম অজপাড়াগাঁয়ের একটা ক্যাবলা ছেলেকে ও ভালোবাসতে যাবে কেন? হ্যাঁ মানছি তুই ছেলেটা ভালো, কিন্তু এরকম কখনো শুনেছিস? তুই বল? রিন্টুর গার্লফ্রেন্ড কলকাতার, তাই ওকে ডাম্প করে দিয়ে চলে গেল, আর এ তো … ভাই এখনো সময় আছে, তুই বেরিয়ে আয়!”
দীপুর ঘুমে চোখ জ্বালা করছে, না কষ্টে, বুঝতে পারে না। দীপু কারুর কথা শোনেনি। বলা ভালো, শোনার মতো মনের জোর ওর ছিল না। স্কুল পেরিয়ে কলেজ, গোঁফের রেখা অস্পষ্ট থেকে স্পষ্ট হয়েছে, অ্যাথেনা যেন ওর জীবনের সাথে আরো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে দিনের পর দিন।
*
সকাল ন-টায় পুজো শুরু হয়ে গেলেও ঠাকুরমশাই আসতে আসতে প্রায় পৌনে দশটা বেজে গেল। পাড়ার মিন্টি, রাণু, মানসী, টিয়ার মতো বাচ্চা মেয়েগুলো শাড়ি পরে উপোস করে কলকল করছিল দীপুর তৈরি করা থার্মোকোলের প্যান্ডেলের সামনে।
ওদিকে ঘন্টু, মিকাইরা ব্যস্ত পুজোর আয়োজনে। একপাশে দীপুর বোন মিঠি পাকা গিন্নির মতো বসে বসে ফল কাটছে।
সত্যিই, নামমাত্র খরচে কত সুন্দর প্যান্ডেল এবং মূর্তি বানানো যায়, তা এবারেও দীপু দেখিয়ে দিয়েছে। থার্মোকোল দিয়ে বানানো এক অপরূপ স্থাপত্য, সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ভাঁজে ফুটে ওঠেছে তার সৌষ্ঠব।
দীপু হলুদ রঙের পাঞ্জাবিটা পরে একটু দূরে দাঁড়িয়েছিল চুপ করে, মনের ভেতরটা ছটফট করলেও বাইরে প্রকাশ করছিল না একটুও।
মিন্টি বন্ধুদের ছেড়ে দৌড়ে গেল ওর দিকে, ”দীপুদাদা তুই এইটা কলকাতার রাজভবন বানিয়েছিস না বল? রাণুরা কেউ বিশ্বাস করছে না আমার কথা, আমি বলছি ওদের কোলকাতা গিয়ে আমি এই বাড়িটা দেখেছি। এটা তো রাজ্যপালের বাড়ি, তাই না?”
দীপু আলতো করে পাড়াতুতো ছোট্ট বোনটার মাথার চুলগুলো ঘেঁটে দিল, ”না রে। এটা একটা বহু পুরনো মন্দির। এর নাম পার্থেনন। গ্রিসে আছে। প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো, বুঝলি!”
মিন্টি বড় বড় চোখ করে বলল, ”মন্দির? এইরকম দেখতে? কোন ঠাকুরের মন্দির রে দীপুদাদা?”
দীপু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু কথা ঠেঁটেই রয়ে গেল, আড় চোখে দেখল অ্যাথেনা আসছে।
অ্যাথেনা শাড়ি পড়েছে?
দীপুর চোখ বড়বড় হয়ে গেল। লাল একটা ফুলহাতা সোয়েটারকে ব্লাউজের মতো করে পরে তার উপর কাঁচা বাসন্তী রঙের একটা শাড়ি পরে আসছে অ্যাথেনা। অনভ্যাসে সামনের কুঁচিগুলোর ভেতরের কিছু কুঁচি খুলে গেছে, কোল আঁচল লুটোচ্ছে মাটিতে। শীতের উত্তুরে হাওয়ায় একদিকে অবাধ্য সোনালি চুল, অন্যদিকে শাড়ি, অ্যাথেনা কোনটা সামলাবে বুঝতে পারছে না।
তবু শাড়ি পরা অ্যাথেনাকে দেখে দীপুর বুকের ভেতর যেন এক হাজার দোয়েল পাখি গান গেয়ে উঠল।
কি ভাগ্যিস, এই সময়েই ঘন্টুরা একটু দূরে গেছে! নাহলে দূর থেকে আওয়াজ দিয়ে দিয়েই দীপুকে আরো নার্ভাস করে দিত।
অ্যাথেনা ওরেকদম সামনে এসে দাঁড়াল, হাসি হাসি মুখে বলল, ”শাড়ি পরেছ, দেখুছু?”
অন্যসময় হলে দীপু অ-কার, উ-কার নিয়ে রসিকতার লোভ ছাড়ত না, অ্যাথেনা মোটামুটি বাংলা শব্দগুলো ঠিকঠাকই বলে, কিন্তু কোথায় খেয়েছ, কোথ্যা খেয়েছি হবে সেটা কিছুতেই বুঝতে পারে না।
কিন্তু আজ ওর কথা প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল। অ্যাথেনার সাথে ওর প্রেমপর্বের বয়স প্রায় চার-পাঁচবছর হলেও তার বেশিরভাগটাই কেটেছে ভার্চুয়াল দুনিয়ায়, বাস্তবে এত কাছাকাছি হওয়া এই প্রথম!
ও বলল, ”খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।”
অ্যাথেনা হাসল। হাতের ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে ওর দিকে এগিয়ে দিল।
”কি এটা?” দীপু বিস্মিত হল।
”সারপ্রাইজ! দেখই না!”
দীপু কাগজটা খুলে পড়তে পড়তে হতভম্ব হয়ে গেল।
গ্রিসের এক নামজাদা আর্ট কলেজ। তাদের অ্যাডমিশন সেল এটাই জানাচ্ছে যে, তারা শ্রীদীপ্ত মজুমদারের সবকটা আঁকাই পেয়েছে এবং জুনিয়ার ডিপার্টমেন্টের ছাত্র হিসেবে তাকে তাঁরা মনোনীত করেছে। এজন্য একটা মোটা স্কলারশিপও সে পাবে, কিন্তু তার জন্য রুটিন একটা ভিডিও ইন্টারভিউ দিতে হবে, তার জন্য সুবিধামতেন্ঠ তারিখ এবং সময় জানতে চাওয়া হয়েছে ওর কাছ থেকে। এছাড়া আরো কিছু রুটিন টেস্টেরও উল্লেখ রয়েছে চিঠিতে।
পুরো চিঠিটা পড়ে দীপু হতভম্ব মুখে অ্যাথেনার মুখের দিকে তাকাল, ”মানে! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
”বুঝটে পারছে না?” শিশুর মতো উজ্জ্বল হাসিতে অ্যাথেনার মুখটা ঝলমল করছে, ”আমি সব পেইন্টিংগুলো ওদের সেন্ড করেছিল যে! ড্যাডও রেকমেন্ডেশন লেটার লিখে দিলাম। আমার ডিপু এখন পেইন্টার হয়ে যাব। হি হি!”
দীপু হতবাক মুখে অ্যাথেনার দিকে তাকাল।
এইজন্য গতও কয়েকমাস ধরে তাড়া দিয়ে দিয়ে অ্যাথেনা ওর পাসপোর্ট করিয়েছে?
ওর হঠাৎ অ্যাথেনাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হল। ভালোবাসা ভালোবাসাই, তাতে দেশ, দুরত্ব, ভাষা কিচ্ছু নির্ভর করে না। গ্রিস থকে খড়মপুরের দূরত্ব আসলে এক ইঞ্চিরও কম। ঠিক ওর যতটা কাছে এখন অ্যাথেনা দাঁড়িয়ে আছে।
কয়েকদিন ধরেই শীতটা জাঁকিয়ে পড়েছে, ওদের এই খড়মপুর গ্রামে তো আরো বেশি। তবু মাফলার জড়ানো গলায় দীপুর মনে হল এখন বসন্তকাল এসে গেছে। হোক ঠান্ডা, তবু বসন্তের কোকিল যেন প্রতিটা গাছে বাসা বেঁধেছে।
দূরে দেখল ঘন্টু আসছে। সেদিকে তাকিয়ে দীপু ফিসফিস করে বলে উঠল, ”বাড়িতে পুজো করব কেন রে মাথামোটা, গ্রিস দেশের সরস্বতী কে জানিস না? ওদের পড়াশুনোর ঠাকুরের নামই তো অ্যাথেনা। আর তারই তো মন্দির এই পার্থেনন। নিজের বউয়ের পুজো কেউ করে বুঝি! আমি কি রামকৃষ্ণ? আপদের দল!”