আমার ফসল

এমনই হবার কথা, অনেক আগেই জানতাম
এরকম ঘটবে হঠাৎ। তুমি নিরাসক্তভাবে
আমাকে রাত্তিরে বিদায়ের কাফনে বিশদ মুড়ে
চলে যাবে। আমার ভেতরে কী প্রচণ্ড ভাংচুর
হলো আর শত শত আর্ত কোকিলের কণ্ঠ-চেরা
রক্তধারা গেল বয়ে সেসবের প্রতি উদাসীন
তুমি দু’চারটি খুব লৌকিকতাময় বাক্য বলে
সেরেছ বিদায়পর্ব। সার্কাসের খেলা চুকেবুকে
গেলে বয়েসী যে রঙমাখা সঙ ভয়ানক একা
বৃত্তের ভেতরে স্তব্ধতায় বিষণ্ন দাঁড়িয়ে থাকে,
আমি সে ধরনের থেকে যাব ততক্ষণ, যতক্ষণ
না তুমি একটি বিন্দু হয়ে মিশে যাও দৃশ্যান্তরে।

আমার নিথর নীরবতা নিয়েছে বরণ করে
তোমার শিল্পিত কথকতা, কোনো বিবরণ কোনো
নামের উল্লেখ একজন কবির হৃদয়ে কত
ক্ষত তৈরি করেছে তা লক্ষ্যই করোনি, এরকম
মগ্ন ছিলে অতীতের ঝালরের ভ্রষ্ট দ্যুতি নিয়ে।
যে অর্ঘ্য সাজিয়ে আমি রেখেছিলাম সুন্দরীতমা
তোমার উদ্দেশে তাকে অবহেলে ছুঁয়ে চলে গেছ,
তা বলে আমার গানে অভিযোগ হবে না ধ্বনিত।

এভাবেই শেষ হোক, চেয়েছিলে? আমিও কি ঠিক
এমন প্রত্যাসা নিয়ে প্রতীক্ষা করেছি? সদত্তর
জানা নেই; নিশ্চয়তা কোনো দিন নেয়নি দত্তক
ভুলেও আমাকে, বিস্মৃতির ঘাটে ভরসন্ধ্যায়
তোমাকে চেয়েছি দিতে বিসর্জন, অথচ প্রতিমা
অধিক জাজ্বল্যমান হয়ে মেলে আয়ত দু’চোখ।

অনেকেই বলে, শোনো, কৃষক মাটির বুক চিরে
ঘরে আনে রাশি রাশি শস্যকণা, তুমি শুধু এত
রাত জেগে, সারাদিনমান রুক্ষ পথে ঘুরে ঘুরে
আখেরে কী পেলে? আমি স্মিত হেসে বলি-
আমিও ফিরিনি শূন্য হাতে। আমার হৃদয়ে দ্যাখো
ক্ষতের গোলাপ ফোটে, যন্ত্রণাই আমার ফসল।