প্রতিটি অক্ষরে

আমার মগজে ছিল একটি বাগান, দৃশ্যাবলিময়।
কখনো তরুণ রৌদ্রে কখনোবা ষোড়শীর যৌবনের মতো
জ্যোৎস্নায় উঠত ভিজে। জ্যোৎস্নাভুক পাখি
গাইত সুস্নিগ্ধ গান, আমার মগজে ছিল একটি বাগান।
মদির অভিনিবেশে পাখি গান গেয়ে উঠলেই
শিরায় শিরায় সব দিকে
উঠত ঝিকিয়ে
নতুন কবিতাবলি মগজের রঙিন নিকুঞ্জে।
আমার সে সব কবিতায়
থাকত জড়িয়ে সেই উদ্যানের স্মৃতি।
এখন যা কিছু লিখি, কবিতা অথবা
একান্ত জরুরি কোনো চিঠি
কিংবা দিনলিপি,
এখন যা কিছু লিখি সব কিছুতেই
ভর করে লক্ষ লক্ষ গুলিবিদ্ধ লাশ।
প্রতিটি অক্ষরে আজকাল
প্রতিটি শব্দের ফাঁকে শুয়ে তাকে লাশ। কখনোবা
গোইয়ার চিত্রের মতো দৃশ্যাবলি খুব
অন্তরঙ্গ হয়ে মেশে প্রতিটি অক্ষরে।
প্রতিটি পঙ্‌ক্তির রন্ধ্রে রন্ধ্রে
বিধবার ধু-ধু আর্তনাদ
জননীর চোখের দু’কূলভাঙা জল
হু হু বয়ে যায়। প্রতি ছত্রে
নব্য হিরোশিমা, দাউ দাউ
কত মাই লাই।

আমার প্রতিটি শব্দ পিষ্ট ফৌজি ট্রাকের তলায়,
প্রতিটি অক্ষরে
গোলা বারুদের
গাড়ির ঘর্ঘর,
দাঁতের তুমুল ঘষ্টানি,
প্রতিটি পঙ্‌ক্তিতে শব্দে প্রতিটি অক্ষরে
কর্কশ সবুজ ট্যাঙ্ক চরে, যেনবা ডাইনোসর।
প্রতিটি পঙ্‌ক্তির সাঁকো বেয়ে
অক্ষরের সরু আল বেয়ে উদ্বাস্তুরা যাচ্ছে হেঁটে
সারি সারি, বিষম পা-ফোলা শুকনো গলা,
লক্ষ লক্ষ যাচ্ছে তো যাচ্ছেই,
প্রতিজন একেকটি হু হু দীর্ঘশ্বাস।
এখন আমার কবিতার
প্রতিটি অক্ষরে
বনবাদাড়ের গন্ধ, গেরিলার নিঃশ্বাস এবং
চরাচরব্যাপী পতাকার আন্দোলন।