খাদ

সেখানে গভীর খাদ আছে এক কুটিল, ভয়াল
অতিকায় সিংহের হাঁয়ের মতো অদ্ভুত শূন্যতা
চতুর্দিকে ব্যাপ্ত তার, আদিগন্ত বিভ্রমে বিহ্বল।
অতল গহ্বরে সেই আছে শুধু পাঁক, পুঞ্জীভূত
আবর্তিত ক্রুদ্ধ ক্রূর অন্ধ পাঁক, শুধু পাঁক।
আকাঙ্ক্ষিত ফুলদল, লতাগুল্ম, পদ্মের মৃণাল
অথবা চিকন মৃগ কিছুই হয় না প্রত্যাখ্যাত
গলিত শবের কীট, কৃমিপুঞ্জ-ঘৃণিত জটিল-
কিছুই জন্মে না তাতে, মৃত্যু ছাড়া জন্মে না কিছুই।
অপটু ডানার শীর্ণ পাখির শাবক, বুড়ো কাক,
মাঠের নিরীহ গোরু, দিনান্তের তৃষিত মহিষ
অথবা চিকন মৃগ কিছুই হয় না প্রত্যাখ্যাত
অতল গহ্বরে সেই। অতর্কিতে হয়তো কখনো
বিভ্রান্ত পথিক কোনো রাত্রির মোহিনী অন্ধকারে
পাঁকের আবর্তে ডোবে নিরুপায়, ব্যর্থ আর্তনাদ,
তিলে তিলে নিমজ্জন, যথারীতি অন্তিমে বিলোপ।
এবং আমিও আজ নিমজ্জিত অন্তহীন খাদে।
দুর্গন্ধের সুতীব্র পীড়নে রাত্রিদিন বিভীষিকা
সমপরিমাণে; ক্রমাগত কেবলি জড়াই পাঁকে।
নিঃশ্বাসে নরক ফোঁসে, আমার অধীর আত্মা সে-ও
গরলের বিন্দু হয়ে ঝরে সারাক্ষণ, আর দেখি
আকাশে নক্ষত্র-গুচ্ছ, আমি শুধু মরালের মতো
অন্তিম গানের ধ্যানে প্রজ্বলিত, গুঞ্জলিত খাদ।