অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ

অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ

হাওড়া স্টেশনের ডিজিটাল বোর্ডে দুন এক্সপ্রেস নামটা ভেসে উঠতেই বনানী মুখ থেকে কোল্ড ড্রিঙ্কের স্ট্র-টা কোনোমতে বের করে ছটফটিয়ে উঠলেন, ”ওই যে, দিয়ে দিয়েছে ট্রেন! আট নম্বর প্ল্যাটফর্ম! মোহর শীগগিরই ব্যাগগুলোকে নে, ওগো তুমি বড় ট্রলিটা নাও…!”

মোহর অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ছিল, সবে মিনিট পাঁচেক হল বসার জায়গা পেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে চোখ রেখেছে, মায়ের এমন হুড়মুড়িয়ে তাড়া দেওয়াতে বিরক্ত হয়ে বলল, ”ওফ মা! তোমার এই হুটোপাটি করার স্বভাবটা কিছুতেই যাবে না! সেই সাড়ে আটটায় ট্রেন, এখন সবে সাতটা। দিয়েছে দিক না, আমরা ধীরেসুস্থে যাব’খন!”

বনানী আরো অস্থির হয়ে উঠলেন, ”ধীরে সুস্থে গেলে চলবে নাকি! প্ল্যাটফর্মে ভিড় হয়ে এত লাগেজ নিয়ে হাঁটা যাবে না, তার ওপর তোর বাবা তো আর সেরকম চটপটে নয়, আমি না তাড়া দিলে থম মেরে বসে থাকবে তো বসেই থাকবে! তার ওপর এসি থ্রি টায়ারের দু-নম্বর কামরাটা সামনের দিকে পড়বে না পেছনের দিকে তাও জানি না। তার থেকে চল তাড়াতাড়ি গিয়ে আগে ট্রেনে উঠে বসি।”

মোহর আর দ্বিরুক্তি না করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে ওর রুকস্যাকটা পিঠে বাঁধতে লাগল। মায়ের এই সবসময় সমস্ত ব্যাপার নিয়ে টেনশন আর হুড়োহুড়ি ওর মোটেও ভালো লাগে না, এই জন্য কোথাও ঘুরতে গেলে বেড়ানোর যে হালকা মেজাজ, সেটা নষ্ট হয়ে যায়, ব্রেকফাস্টের জন্য তাড়া, গাড়ি ডাকার তাড়া, হোটেল ভালো হবে কিনা তার টেনশন, রাতে ঠিকমতো খাবার পাওয়া যাবে কিনা তার চিন্তা, ধুর এত চাপ নিয়ে ঘুরতে ভালো লাগে নাকি! রিল্যাক্সড মেজাজটাই হারিয়ে যায়। কিন্তু কি আর করা যাবে, একহাতে একটা ট্রলি ধরে পিঠে রুকস্যাক ঝুলিয়ে ও হাঁটা লাগাল।

সুজয়ও উঠে লাগেজ নিয়ে চলতে শুরু করলেন, পেছন পেছন বনানী জলের বোতলের ব্যাগটা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলতে লাগলেন, ”অত ধীরেসুস্থে করলে আর ঘোরা হয় না বাপু! একে তো দু-রাত ট্রেনে থাকতে হবে ভেবেই বিচ্ছিরি লাগছে, তার ওপর ক্যুপে পড়েছে, বাকি তিনজন কেমন হবে কে জানে!”

সুজয় স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে শান্ত গলায় বললেন, ”আহা এত চিন্তা করছ কেন, লোয়ার, মিডল আর আপার তিনটেই তো পড়েছে আমাদের, তুমি নীচে শুয়ে পড়বে, আমি মাঝে আর মোহর…।”

বনানী সুজয়ের কথার মাঝখানেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, ”তুমি থামো তো! তোমার আর কি! কোনো কিছুতেই কোনো ভাবনা আছে তোমার? সকাল থেকে যে আমি ভেবেই অস্থির এই দুদিন ধরে ট্রেনে কি খাব, কি করব, এতগুলো রান্না করলাম, প্যাক করলাম, আর তুমি? দিব্যি সারাদিন পায়ের ওপর পা তুলে বই মুখে নিয়ে কাটিয়ে দিলে। একটা বড় মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি, ক্যুপের মধ্যে বাকি তিনজন কেমন হবে না হবে, এইসব নিয়ে কোনো চিন্তা আছে তোমার? তার ওপর হরিদ্বারের হোটেলটা স্টেশন থেকে কতদূরে হবে কে জানে, সবই তো নেটে বুক করা! আমাদের স্কুলের জয়তীদিও বলছিল ইন্টারনেটে বুক করলে সব আজেবাজে রুম দেয়। নামব তো সেই পরশু দিন, আর মোহরও খুঁজে খুঁজে এই জঘন্য ট্রেনটারই টিকিট পেল, ঘুরতে গেলে সবাই চালাকচতুর হলে ঘোরাটা ঠিকঠাক হয়, একজন সারাক্ষণ ভাবের জগতে বসে থাকলে আরেকজনের মাথাতেই সব চিন্তা এসে পড়ে বুঝলে!”

প্ল্যাটফর্মে এসে দ্যাখা গেল ট্রেন এখনো আসেনি বটে, তবে বি-টু কোচ কোথায় পড়বে, সেটা ডিজিটাল বোর্ডে দিয়ে দিয়েছে। বনানী তাতেও নিরস্ত হলেন না, দুজন টিকিট চেকারকে জিজ্ঞেস করে একদম শিওর হয়ে তবে বসলেন। নভেম্বরের প্রথম হলে কি হবে, রীতিমতো গরম। চোখে মুখে জল দিয়ে বোতলটা সুজয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলেন, ”ওগো শুনছ, জল খাও একটু! সেই কখন বেরিয়েছ বাড়ি থেকে, পেট গরম হবে এবার……!”

মোহর মনে মনে মায়ের ওপর রেগে থাকলেও এবার হেসে ফেলল, মা বাবাকে যতই বকুক, আসলে একটা ছোট্ট বাচ্চার মতো ট্রিট করে। আড়চোখে ফোনের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে ও আলগা করে মা-কে জড়িয়ে ধরল, ”মা, চিলি পনিরটা বেশ ঝাল ঝাল বানিয়েছ তো?”

বনানী বললেন, ”বেশি ঝাল খেও না, বাইরে ঘুরবে এখন ক-দিন, শরীর খারাপ হয়ে যাবে।” তারপরেই গলার স্বর পালটে বললেন, ”হ্যাঁ রে, হোটেলটা ঠিকঠাক বুক করেছিস তো? পুরো টাকা আগেভাগে দিয়ে দিলি, এখন কতরকম হচ্ছে!”

মোহর বলল, ”সবেতে অত টেনশন কোরো না তো মা! খুব ভালো হোটেল। ওই তো, ট্রেন ঢুকছে, চল, আস্তে আস্তে উঠি।”

বনানী বললেন, ”শোন, দরজার গায়ে দেখে নিবি তো আমাদের সঙ্গে যে তিনজন আছে, কি নাম, কত বয়স? এতটা রাস্তা একসাথে যাব, আজেবাজে লোক হলে আরেক চিন্তা!”

প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে একচোট হুড়োহুড়ি হয়, তারপর আস্তে আস্তে থিতিয়ে যায়। মোহর সবকটা লাগেজ সাবধানে ট্রেনে তুলল। মনটা বেশ খুশি খুশি লাগছে এবার। চাকরি পাওয়ার পর থেকে ওর খুব ইচ্ছে ছিল বাবামা-কে কোথাও একদম নিজের খরচে ঘুরিয়ে আনবে। অবশেষে সেটা সত্যি হতে চলেছে। দিনসাতেকের প্রোগ্রাম, হরিদ্বারে থাকা আর সেখান থেকেই হৃষীকেশ, মুসৌরি ঘুরে আসার প্ল্যান করা হয়েছে। আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে খানিকটা উত্তেজনাও হচ্ছে, তবে সেটা সম্পূর্ণ অন্য কারণে।

ওদের ক্যুপে লাগেজ ঢুকিয়ে রেখে ওরা তিনজন যখন সিটে বসে আছে, সেইসময় বাকি তিনজন ট্রেনে উঠল। বনানী আড়চোখে দেখলেন, মধ্যবয়স্কা স্বামী-স্ত্রী, সঙ্গে বছর সাতাশ-আটাশের ছেলে। তিনজনেরই ভদ্র, রুচিশীল চেহারা। বনানী মনে মনে একটু আশ্বস্ত হয়ে নিজের হ্যান্ডব্যাগটাকে নিয়ে একটু সরে বসলেন। তারপর নিজের মনেই নিজেকে বোঝালেন, চেহারা ভদ্র সভ্য দিয়ে আজকাল কিছুই বোঝা যায় না, এই তো আগের সপ্তাহে যে ছেলেটার বাড়ি থেকে দেখতে এল মোহরকে, ফোনে তো কথা শুনে কত ভালো লেগেছিল, ছবিতেও মনে হয়েছিল বেশ শিক্ষাদীক্ষা আছে ফ্যামিলিটায়, কিন্তু বাড়িতে এসে কথাবার্তায় মোহ ভাঙল, দেখতে এসেছে ইঞ্জিনিয়ার মেয়ে, এদিকে কথাবার্তা বলছে মধ্যযুগের মতো। বনানীর মতো পোড়খাওয়া মানুষ যদি মানুষ চিনতে এত ভুল করেন, তবে মোহরের মতো বাচ্চারা তো করবেই! তাই, যত ঝামেলাই আসুক, মেয়েকে তিনি নিজেই দেখেশুনে বিয়ে দেবেন, এটা বনানীর প্রতিজ্ঞা। এনিয়ে বাপমেয়ের সাথে কত ঝগড়া হয়েছে তাঁর, সুজয় কত বুঝিয়েছে, এখনকার দিনে আবার অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ আছে নাকি, মেয়েকে নিজেই দেখেশুনে পাত্র ঠিক করতে দাও, কিন্তু বনানী ছাড়বার পাত্রী নন। পয়সাওলা ছেলে তাঁর দরকার নেই, ফ্যামিলি ভালো হলেই হল।

হঠাৎ গায়ে কার ছোঁয়া পেয়ে চমকে তাকিয়ে দেখেন, পাশের মহিলাটি হাসিহাসি মুখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন, ”দিদিদের কোথায় যাওয়া হচ্ছে, হরিদ্বার না বেনারস?”

বনানী একটু কিন্তু-কিন্তু করে বললেন, ”হরিদ্বার। আ-আপনারা?”

মহিলা বেশ বিগলিত হয়ে বললেন, ”আমরাও হরিদ্বার! যাক বাবা, আমি তো ভাবছিলাম এতটা জার্নি, কার না কার সাথে পড়বে সিট, এইতো বেশ একসাথে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে। আমি বিদিশা, আমরা লেকটাউনে থাকি, আপনারা?”

দু-ঘণ্টা পরে ট্রেন যখন বর্ধমান স্টেশনে কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়াল, তখন বনানী আর বিদিশা বেশ খোস গল্পে মেতে উঠেছেন। বনানীর বেশ চাপমুক্ত লাগছিল, এত ভালো সঙ্গী পাওয়া যাবে ভাবাই যায়নি! কিছু কিছু মানুষের মধ্যে এমন আন্তরিক ভাব থাকে, মনে হয় যেন কতকালের চেনা, এও তেমনই। বিদিশার স্বামী মানুষটিও বেশ রসিক, মিটিমিটি হেসে থাকেন সর্বক্ষণ, মাঝেমধ্যে টুক করে একটু ফুট কাটেন আলাপের মাঝে, ভদ্রলোক রেলে চাকরি করেন। সুজয়ের সঙ্গে দিব্যি মেতে উঠেছেন পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিলের তর্কে। ওঁদের একটাই ছেলে, নাম সৃজন। সে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরি করছে আইটি সেক্টরে। বেশ সুন্দর ভদ্র নম্র ছেলে। মোহর সেই কখন আপার বার্থের টঙে উঠে বসে একটা পেপারব্যাক খুলে বসে আছে, ওকে নামবার একটা হাঁক দিয়ে টিফিন ক্যারিয়ার থেকে যত্ন করে তৈরি করা চিলি পনির বের করতে করতে বনানী বললেন, ”নিন প্লেট বের করুন, সবাই একসাথে মিলেমিশে খেয়ে নিই।”

বিদিশাও তার ব্যাগ থেকে খাবারের ঝোলা বার করতে করতে বললেন, ”বেশ তো, কিন্তু আমি আর আপনি-আজ্ঞে করতে পারছি না বাপু! তুমি আমাকে বিদিশা বোলো, আমি তোমাকে বনানী, কেমন?”

মোহর ওপর থেকে একবার আড়চোখে দেখল, তারপর চুপচাপ নেমে এল নীচে। বনানী বললেন, ”এই দ্যাখ মোহর, এই কাকিমারাও আমাদের হোটেলেই উঠেছেন। ভালোই হল, বেশ একসাথে ঘোরা যাবে, বল?”

সৃজন ছেলেটি এতক্ষণে কথা বলল, ”কাকিমা আপনারা কোথায় কোথায় ঘুরবেন? মুসৌরি যাবেন তো?”

বনানী মোহরের দিকে ইশারা করে বললেন, ”সব তো ও-ই ঠিক করেছে, কিরে, আমরা কোথায় কোথায় যাবো বল না দাদাকে।”

মোহর অল্প হেসে বলল, ”হ্যাঁ মুসৌরি, হৃষীকেশ সবই যাব।”

অনেকসময় বছরের পর বছর পাশাপাশি থেকে কোনো বন্ধুত্বই হয় না, আবার কখনো কখনো ঘুরতে গিয়ে এমন ভালোবাসার জালে জড়িয়ে পড়ে মানুষ, সেই টান রয়ে যায় আমৃত্যু। বনানী আর বিদিশারও তাই হল। দুজনের এমন বন্ধুত্ব হয়ে গেল, হরিদ্বারে গিয়ে ঘোরা, বেড়ানো, সব তো একসাথে হলই, কলকাতায় ফিরেই শীগগিরই মিট করবেন দুজনে, এমন কথাও দেওয়া হয়ে গেল। যেদিন ফেরার ট্রেন, তার আগের দিন সন্ধেবেলায় হর-কি-পৌরির ঘাটে আরতি দেখতে দেখতে বনানীর মনটা আনন্দে ভরে উঠছিল। এদের এ ক-দিন যত দেখছেন ততই যেন অবাক হয়ে যাচ্ছেন। কি সহজ সরল সুন্দর পরিবার! বিদিশার মতো হাসিখুশি মানুষ তো খুব কমই হয়, ওঁর স্বামী অমিতাভও খুব ভালো। সৃজন বলে ছেলেটির তো কোনো তুলনাই হয় না, সেদিন মনসা পাহাড়ে বনানী যখন কিছুটা উঠে আর উঠতেই পারছিলেন না, মনে হচ্ছিল এক্ষুনি দম বন্ধ হয়ে যাবে, মোহর আর ওর বাবাও অনেকদূরে এগিয়ে গিয়েছিল, তখন ওই সৃজন ছেলেটাই তো বনানীকে ধরে ধরে নিয়ে গেল কতটা রাস্তা, একটা দোকানে বসিয়ে জল খাওয়াল, ওষুধও নিয়ে এল খুঁজে পেতে।

আরতির শেষে দুই বন্ধু একসঙ্গে ডালা ভাসালেন গঙ্গার জলে, সকলের শুভকামনা করে। চারপাশের পবিত্র আবহাওয়ায়, অদূরের সন্ধ্যারতিতে আবেগে দুজনেরই চোখে জল। বিদিশা আলগা করে বনানীর হাত ধরে বললেন, ”তুই যেমন ভালো, তোর মেয়েটাও তেমনি মিষ্টি বনানী! ওইটুকু মেয়ে, কিন্তু কি সুন্দর দায়িত্ববোধ, দেখছি তো ক-দিন ধরে!”

বনানী কিছু বললেন না, কিন্তু তাঁর বুকের ভেতরটা আনন্দে ধক করে উঠল। যে কথাটা তিনি দু-দিন ধরে বলবেন বলবেন করছেন, সেটাই কি বিদিশা বলতে যাচ্ছেন? একটু দিশেহারা হয়ে অস্ফুটে বনানী বললেন, ”তোর ছেলেটাই বা কম যায় কিসে! এখনকার ছেলেদের মধ্যে তো মায়াদয়া এসব দেখাই যায় না, কিন্তু তোর ছেলের মনটা ভারি ভালো।”

বনানী দূরে তাকালেন, মোহর আর ওর বাবা সামনে হেঁটে চলেছে। একটু মনঃক্ষুণ্ণ হলেন এই ভেবে যে, তাঁদের মধ্যে এত ভালো বন্ধুত্ব হওয়া সত্ত্বেও ছেলেটার সাথে মোহরের তেমন ভাব জমেনি। সারাক্ষণই দুজনে দূরে দূরেই রয়েছে। পরমুহূর্তেই নিজেকে বোঝালেন বনানী, এত ভালো ফ্যামিলি, এত ভালো ছেলে, পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কি একটা বলতে যাবেন, হঠাৎ শুনলেন বিদিশা কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলছেন, ”আমার মনে হয় আমরা খুব ভালো বেয়ানও হব বুঝলি!”

বনানী অবাক হয়ে তাকাতেই বিদিশা চোখ টিপে আবার বললেন, ”তোর মেয়ের পাশে শাশুড়ি হিসেবে আমাকে ভালোই মানাবে বল? কি বলিস?”

বনানী খুশিতে প্রথমে কি করবেন ভেবে পেলেন না, মনে হল একছুট্টে গিয়ে সুজয়কে বলেন, ”দ্যাখো, তুমি বলছিলে না, আমি পারব না? মোহরের জন্য কত ভালো ছেলে আমি খুঁজে পেয়েছি দ্যাখো!” তারপর আনন্দে বিদিশার হাত জড়িয়ে ধরলেন।

হোটেলে ফিরে রাতের ডিনার টেবিলে সলজ্জ মুখে বনানীই প্রস্তাবটা পাড়লেন। প্রথমেই সৃজনের দিকে চেয়ে বললেন, ”দ্যাখো সৃজন, তোমার মা আর আমি দুজনেই যথেষ্ট মডার্ন। আমাদের পছন্দ মানে এই নয় তোমাদেরও সেটা মুখ বুজে মানতে হবে। ভেবে বলো, তোমার মত আছে কি এই বিয়েতে?”

তারও ঘণ্টাদুয়েক পরে সবাই যখন নিজের নিজের রুমে ঘুমে তলিয়ে গেছে, হোটেলের করিডরে চুপিসাড়ে দেখা করল দুটো ছেলেমেয়ে। প্রথম কথা বলল মোহরই, ”মেনল্যান্ড চায়না ট্রিটটার কথা ভুলে যেয়ো না, যা প্ল্যান করেছিলাম না, আর যেরকমভাবে এক্সিকিউট করলাম, তোমার বিরাট কোহলিও এরকমভাবে ম্যাচ বের করে আনতে পারবে না।”

সৃজন চারপাশ আলগোছে দেখে নিয়ে জড়িয়ে ধরল তার চার বছরের পুরনো গার্লফ্রেন্ডকে, ”নাহ, এই ব্যাপারে আমি সত্যিই কান মুলছি! তোমার জবাব নেই। আরে আমার মা-ও বলে দেখেশুনে বিয়ে দেবে, তোমার মা-ও তাই! আর দুজনেই মুখে যা, কাজেও তাই। আমি তো বিশাল চাপ খেয়ে গিয়েছিলাম যে এতদিন প্রেম করে শেষটায় মনে হয় ব্যাচেলরই থাকতে হবে। উফ, তোমার এই যে প্ল্যানটা, সলিড, সলিড, কোন কথা হবে না!”

মোহর বলল, ”কি করব, সাত-আটমাস আগে মা-কে ভালো করে যখন বলতে গিয়েছিলাম যে মা, প্রেম করছি, মা তো কিছু না শুনেই নাকচ করে দিলো! তোমার মা-ও নাকি তাই!”

সৃজন চোখ টিপে বলল, ”তাই বলে মাছের তেলেই মাছ ভাজা? ব্রাভো! তবে এদের দুজনের প্রেম করাতে গিয়ে আমরা এ ক-দিন তো কথাই বলতে পারছিলাম না, কি বিরক্ত লাগছিল!”

মোহর মুচকি হেসে বলল, ”একটা লাভম্যারেজকে অ্যারেঞ্জড করতে গিয়ে আরো একটা লাভ হয়ে গেল, বলো?”

সৃজন বুঝতে না পেরে বলল, ”মানে?”

মোহর তার ভালোবাসার মানুষটার ঠেঁটে চুমু এঁকে দিতে দিতে বলল, ”তোমার মা আর আমার মায়ের লাভ ম্যারেজটাও হয়ে গেল! হি হি!”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *