ইবনে ইসহা বলেনঃ উসামার নেতৃত্বে অভিযান শুরুর প্রস্তুতি চলতে থাকাকালেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিতে আরম্ভ করে এবং শেষ পর্যন্ত এই অসুস্থতাতেই তিনি ইন্তিকাল করেন। অসুস্থতার সূচনা হয় মফর মাসের শেষের দিনগুলোতে অথবা পয়লা রবিউল আওয়ালে। পীড়ার সূচনা এভাবে হয় যে, তিনি একদিন গভীর রাত্রে মদীনার কবরস্থান বাকীউল গারকাদে যান এবং কবরবাসীর জন্য ইস্তিগফার করেন। পরদিন থেকে তিনি রোগ-যাতনার শিকার হন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযাদকৃত গোলাম আবু মুয়াইহবা বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মধ্যরাতের দিকে ডেকে তোলেন এবং বলেন, “হে আবু মুয়াইহিবা, আমি এই কবরস্থানের মৃতদের জন্য ইসতিগফার করতে আদিষ্ট হয়েছি। তুমি আমার সাথে চল।” আমি সাথে গেলাম। করবরস্থানের সামনে দাড়িঁয়ে তিনি বললেন,
“হে কবরবাসী, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আজকে লোকেরা যে অবস্থায় পতিত হয়েছে তার চাইতে তোমরা ঢের ভাল অবস্থায় আছ। ফিতনাসমূহ গভীর অন্ধকার রাতের মত সমুপস্থিত যা ক্রমান্বয়ে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়। যে দুর্যোগই আসছে তা পূর্ববর্তীটার চেয়েও মারাত্মক।
অতঃপর আমাকে সম্বোধন করে বললেন, “হে আবু মুয়াইহিবা! আমাকে দুনিযঅর ধনসম্পদ ও তার স্থায়ী ভোগাধিকার এবং তারপর জান্নাত দান করা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল যে, তুমি এই ধনসম্পদ ও তা স্থায়ীভাবে ভোগের অধিকার, জান্নাত ও আল্লাহর সাক্ষাত লাভ- এ দুইটি মধ্যে যেটি ইচ্ছা গুহণ কর।”
আমি বললা, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি দুনিযার ধন সম্পদ ও তা স্থায়ীভাবে ভোগ করার অধিকার অতঃপর জান্নাত- এ দুটোকে ইখতিয়ার করুন।” তিনি বললেন, “না, আমি বরং আল্লাহর সাক্ষাত সাক্ষাত ও জান্নাতই গ্রহণ করেছি।”
এরপর তিনি ‘বাকী’ কবরবাসীর জন্য দোয়া ও ইসতিগফার করলেন এবং ঘরে ফিরলেন। এরপরই তাঁর রোগ যাতনা শুরু হয় এবং তাতেই শেষ পর্যন্ত ইন্তিকাল করেন্
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়িশা (রা) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাবী থেকে ফিরে এসে দেখলেন, আমি মাথাব্যথায় কাতর হয়ে বলছি,, “উহ, মাথা গেল।” এ অবস্থা দেখে রাসূলুল।লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে আয়িশা, আমারই বরং মাথা গেল। তারপর বললেন, “আচ্ছা, তুমি দি আমার আগে মরে যাও আর আমি তোমার কাফন দাফন ও জানাযা করি, তাহলে কেমন হয়?” আমি বললাম, “আমি যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, সে কর্মটি হলে আপনি ঘরে ফিরে আপনার স্ত্রী নিয়ে আমোদ প্রমোদ করবেন।”
এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসলেন। ক্ষণিকের জন্য মনে হলো, তাঁর রোগযন্ত্রণা দূর হয়ে গেছে। তখানো তাঁর স্ত্রীদের কাছে পালাক্রমে থাকতেন। কিন্তু সাহসাই রোগযন্ত্রণা বেড়ে গেল। এই সময় তিনি মাইমুনার (রা) ঘরে ছিলেন। তিনি তাঁর সকল স্ত্রীকে ডাকলেন এবং তাঁদের কাছে অনুমতি চাইলেন যে, তাঁর পরিচর্যা আমার ঘরেই হোক। সকলেই অনুমতি দিলেন।