3 of 3

১০৫. হুদাইবিয়ার ঘটনা

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় রমযান ও শাওয়াল মাস অতিবাহিত করলেন। যুলকাদাহ মাসে উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করলেন। কোন যুদ্ধ করার অভিসন্ধি তাঁর ছিল না। [৭৪. ইবনে হিশামের মতে, এই সময় মদীনার শাসনভার অর্পণ করা হয় নামীলা ইবনে আবদুল্লাহ লাইসীর ওপর।] মদীনার অধিবাসী সাধারণ আরব এবং আশপাশের মরুচারী বেদুইনদেরকেও তিনি তাঁর সফরসঙ্গী করে নিলেন। তিনি আশংকা করছিলেন যে, কুরাইশরা চিরাচরিত পন্থায় তাঁকে হয় আল্লাহর ঘর যিয়ারতে বাধা দেবে, অথাবা যুদ্ধ করতে এগিয়ে আসবে। এ আশংকার কারণে যারা সফরসঙ্গী হতে চেয়েছিল তাদের অনেকেই যাত্রা স্থগিত রাখলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাদবাকী আরব, মুহাজির ও আনাসারদের নিয়ে যাত্রা করলেন। সঙ্গে কুরবানীর উটের বহরও নিয়ে চললেন এবং উমরার ইহরাম বেঁধে নিলেন।[৭৫. ৭০ টি উট সঙ্গে নিয়েছিলেন। উমরা যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৭০০। প্রতি দশজনের জন্য একটি উট নেয়া হয়েছিল।] যাতে কুরাইশরা তাঁর তরফ থেকে যুদ্ধের আশংকা না করে এবং তিনি যে শুধুমাত্র আল্লাহর ঘর যিয়ারত করতে এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়েছেন বুঝতে পারে।

তিনি মক্কার কাছাকাছি উসফানে পৌঁছলে তাঁর সাথে বিশর ইবনে সুফিয়ান কা’বীর দেখা হলো। সে বললো, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, নিকটেই কুরাইশ বাহিনী সমবেত হয়েছে। তারা আপনার যাত্রার কথা শুনে বিরাট উটের বহর নিয়ে আপনার সাথে যুদ্ধ করতে এসেছে। তারা আগেই যুতুয়াতে সমবেত হয়েছিল। তারা প্রতিজ্ঞা করেছে যে, আপনাকে কিছুতেই মক্কায় প্রবেশ করতে দেবে না। খালিদ ইবনে ওয়ালীদের নেতৃত্বে তারা কুরাউল গামীমে [৭৬.যুতুয়া মক্কার নিকটবর্তী একটি জায়গা। কুরাউল গামীম উসফান থেকে ৮ মাইল আগে অবস্থিত একটি উপত্যকা।] এগিয়ে এসেছে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “ধিক কুরাইশদেরকে! জঙ্গী মনোভাব তাদেরকে গ্রাস করে ফেলেছে। আমাকে গোটা আরববাসীর সাথে একটু বুঝাপড়া করার সুযোগ দিলে ওদের অসুবিধা কোথায়? আরবরা যদি আমাকে পর্যুদস্ত করে তাহলে তাতে কুরাইশদের মনষ্কামনাই পূর্ণ হবে। আর যদি আল্লাহ আমাকে আরবদের বিরুদ্ধে জয়যুক্ত করেন তাহলে সবাই ইসলামে আশ্রয় পাবে। যদি তারা ইসলাম কবুল নাও করে তা হলেও তারা আরো অধিক শক্তি নিয়ে যুদ্ধ করতে পারবে। কুরাইশরা ভেবেছে কি? আল্লাহর কসম, শেষ পর্যন্ত জিহাদ করে যাবোÑ হয় এ বিধান জয়যুক্ত হবে, না হয় আমি শেষ হয়ে যাবো।”

অতঃপর তিনি বললেন, “এমন কেউ কি আছ যে আমাদেরকে কুরাইশরা যে পথে সমবেত হয়েছে তা থেকে ভিন্ন পথে নিয়ে যেতে পারবে।” অতঃপর সেই ব্যক্তি দুর্গম পার্বত্য পথ দিয়ে তাদের নিয়ে গেল। এ অভিযানটা মুসলমানদের জন্য ভীষণ কষ্টকর ছিল। অবশেষে তারা উপত্যকার প্রান্তে সমভূমিতে গিয়ে উপনীত হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানগলকে বললেন, তোমরা বল, “আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি।” সবাই তাই বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এই কথাটাই মূসা (আ) বনী ইসরাঈলদের বলতে বলেছিলেন। কিন্তু তারা তা বলতে রাজী হয়নি।”

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে ডান দিকে জামজের ভিতর দিয়ে সানিয়াতুল মুরার অভিমুখে মক্কার নিম্নভূমিতে অবস্থিত হুদাইবিয়ার উপত্যকায় গিয়ে উপনীত হবার নির্দেশ দিলেন। মুসলিম বাহিনী নির্দেশ মুতাবিক যাত্রা করলো। কুরাইশদের অগ্রবর্তী ঘোড়সাওয়ার দল ভিন্নদিক থেকে মুসলিম সেনাদলের অগ্রাভিযান লক্ষ্য করে বিদ্যুগ বেগে কুরাইশদের কাছে ফিরে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদলবলে সানিয়াতুল মুরারে গিয়ে উপনীত হলেন এবং সেখানেই তাঁর উট থেমে গেল। লোকেরা বললো, “উট থেমে গেছে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “উট থামেনি এবং থামা তার রীতি নয়। তবে যে জিনিস আবরাহার হস্তিবাহিনীকে থামিয়ে রেখেছিল, সেই জিনিসই ওকে মক্কা যাত্রা থেকে ঠেকিয়ে রেখেছে। আজকে কুরাইশরা আমাকে রক্তের বন্ধনের দোহাই দিয়ে যে প্রস্তাবই দেবে আমি তা মেনে নেব।” অতঃপর তিনি সহযাত্রীদের যাত্রাবিরতি করতে বললেন। সবাই বললো, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, এখানে মোটেই পানি নেই। কিভাবে আমরা এখানে যাত্রাবিরতি করবো?” তিনি একটি তীর বের করে একজন সাহাবীর হাতে দিয়ে একটি শুকনো কুয়ার ভেতরে তা নিক্ষেপ করতে বললেন। তিনি তীর নিক্ষেপ করলে কুয়া পানিতে ভরে উঠলো এবং মুসলমানরা সেখানে যাত্রাবিরতি করলেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিশ্চিত অবস্থান গ্রহণ করলে বুদাইল ইবনে ওয়ারাকা খাযায়া গোত্রের কয়েকজন লোকজন তাঁর কাছে এলো। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আলাপ আলোচনা করলো। তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি উদ্দেশ্যে এসেছেন?” তিনি জানালেন, তিনি কোন যুদ্ধ বিগ্রহের উদ্দেশ্যে আসেননি। বরং শুধু পবিত্র কা’বার যিয়ারত ও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে এসেছেন। তিনি বিশর বিন আবু সুফিয়ানকে যেকথা বলেছিলেন তাদেরকও তাই বললেন। তারা ফিরে গিয়ে কুরাইশদের বললো, “হে কুরাইশগণ, তোমরা মুহাম্মাদের ব্যাপারে খুবই তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাক। আসলে তিনি যুদ্ধ করতে আসেননি। কা’বাঘর যিয়ারত করতে এসেছেন মাত্র।”

একথা শুনে কুরাইরা তাদের ওপর উল্টো দোষারোপ করলো এবং অপ্রীতিকর কথাবার্তা শুনিয়ে দিল। তারা বললো, “যদি সে যুদ্ধ করতে না এসে থাকুক তবুও তাকে আমরা কখনো জবরদস্তিমূলকভাবে মক্কায় প্রবেশ করতে দেব না। সাধারণ আরবরাও একথা জানে যে, মক্কাবাসী কখনো কাউকে এ শহরে জোরপূর্বক ঢুকতে দেয়নি।”

খাযায়া গোত্রের মুসলমান ও মুশরিক নির্বিশেষে সকলেই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামের পরম হিতাকাংখী ও তাঁর সকল গোপনীয় বিষয়ের সংরক্ষক। মক্কায় যাই ঘটুক তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তা গোপন করতো না।

কুরইশরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট মিকরায ইবনে হাফ্স ইবনে আখইয়াফকে পাঠালো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিকরাযকে আসতে দেখে দূর থেকেই মন্তব্য করলেন, “এ লোকটি বিশ্বাসঘাতক।” সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে আলাপ আলোচনা করলে তিনি বুুদাইল ও তার সঙ্গীদের যা বলেছিলেন, মিকরাযকেও তাই বললেন। সে কুরাইশদের কাছে ফিরে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তাই জানালো।

এরপর কুরাইশরা হুলাইস ইবনে আলকামা অথবা ইবনে যাবানকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাঠালো। তাকে দেখেই তিনি মন্তব্য করলেন, “এ লোকটি একটি খোদাভক্ত জাতির সদস্য। আমদের কুরবানীর পশুগুলো তার সামনে নিয়ে দেখিয়ে দাও।” হুলাইস যখন দেখলো, কুরবানীর চিহ্ন বহনকারী বিশাল উটের পাল তার সামনে দিয়ে যাচ্ছে এবং দীর্ঘদিন কুরবানীর জায়গায় পৌঁছতে না পারার কারণে ওগুলোর গায়ের পশম ঝরে পড়েছে তখন সে কুরাইশদের কাছে ফিরে গিয়ে যা দেখেছে তা বর্ণনা করলো। কুরবানীর পশুগুলো দেখে এত অভিভূত হয়ে গিয়েছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে উমরার উদ্দেশ্যেই এসেছেন সে ব্যাপারে তার আর কোন সন্দেহই রইল না এবং সেজন্য তাঁর সাথে দেখা করে জিজ্ঞসাবাদ করার প্রয়োজনই বোধ করলো না। তার কথা শুনে কুরাইশরা বললো, “তুমি চুপ করে বস। তুমি মূর্খ বেদুইন, কি বুঝবে?” একথা শুনে সে রেগে গেল। সে বললো “হে কুরাইশগণ! এ ধরনের কার্যকলাপের জন্য আমরা তোমাদের সাথে জোটবদ্ধ হইনি এবং এর জন্য তোমাদের সাথে চুক্তিও সম্পাদন করিনি। যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘর যিয়ারত ও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্য এসেছে তাকে কি বাধা দেয়া হবে? আমি শপথ করে প্রতিজ্ঞা করলাম যে, মুহাম্মাদ যে প্রবিত্র উদ্দেশ্যে এসেছে তা যদি তাকে করে যেতে না দাও তাহলে গোত্রের সকল লোককে নিয়ে আমি একযোগে তোমাদের ত্যাগ করে চলে যাবো।” তার বললো,“হুল্লাইস, একটু থামো! আমাদের একটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে আসতে দাও।”

এরপর কুরাইশরা উরওয়াহ ইবনে মাসউদ সাকাফীকে রাসূলুল্লাহর নিকট পাঠালো। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এসে বসে পড়লো। বললো, “হে মুহাম্মাদ, তুমি কি তোমার আপনজনদের জব্দ করার জন্য এই বিরাট জনতাকে জমায়েত করেছ? তবে জেনে রেখো, কুরাইশরাও তাদের দুর্বল উটের বহর নিয়ে সিংহের বেশ ধারণ করে মুকাবিলার জন্য প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে পড়েছে। তারা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে প্রতিজ্ঞা করেছে যে, তোমাকে বলপ্রয়োগে নগরে ঢুকতে কখনোই দেবে না। আল্লাহর শপথ, অতি শীগ্রই এইসব লোক তোমাকে একাকী রেখে আলাদা হয়ে যাবে।” আবু বাক্র সিদ্দিক (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে বসে এসব কথা শুনছিলেন। তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে বললেন, “তুই গিয়ে লাতের অংগ চাট। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ছেড়ে চলে যাবো ভেবেছিস?” উরওয়াহ বললো, “এই লোকটি কে?” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এ হচ্ছে আবু কুহাফার পুত্র। ” উরওয়াহ আবু বাক্রকে (রা) লক্ষ্য করে বললো, “এক সময় তুমি আমার উপকার করেছিলে তা নাহলে আজ তুমি যে কথা বললে তার প্রতিশোধ নিতাম। সেই উপকারের বদলায় এটা ছেড়ে দিলাম।” এরপর উরওয়াহ কথা বলতে বলতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাড়ি নাড়াচাড়া করতে লাগলো। এই সময় মুগীরা ইবনে শ’বা (রা) তরবারী হাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশেই দাঁড়িয়ে রইলেন। উরওয়াহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাড়িতে হাত দিলেই মুগীরা তরবারী দিয়ে তার হাতে টোকা দেন আর বলেন, “ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখে হাত দিও না। নচেৎ এই তরবারী তোমার ঘাড়ে পড়বে।” উরওয়াহ বললো, “ধিক তোমাকে। কি কর্কশ ও কঠিন হৃদয় তুমি।“ এ দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসলেন। উরওয়াহ জিজ্ঞেস করলো, “হে মুহাম্মাদ, এ লোকটা কে?” তিনি বললেন, “সে তোমার ভাতিজা মুগীরা ইবনে শু’বা।” (মুগীরা ও উরওয়াহ উভয়েই বনু সাকীফ গোত্র থেবে উদ্ভুত) উরওয়াহ বললো, “রে নিমকহারাম, এই সেদিনই তো আমি তোর কত বড় উপকারটা করলাম।” এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উরওয়ার সাথে কথাবার্তা বললেন। তাকে জানালেন যে, তিনি যুদ্ধ করতে আসেননি।[৭৭.ইবনে হিশাম বলেন, মুগীরা ইসলাম গ্রহণের পূর্বে বনু সাকীফের বনু মালিক পরিবারের ১৩ জন লোককে খুন করেছিলেন। ফরে উভয় পবিারের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। তখন বনু মালিককে ১৩টি মুক্তিপণ দিয়ে মুদীরাকে অব্যাহতি লাভে সাহায্য করে এবং উভয় পরিবারের মধ্যে আপোষরফার ব্যবস্থা করে। এখানে উরওয়া সেই ঘটনার দিকেই ইংগিত দিয়েছে।]

উরওয়াহ ইবনে মাসউদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে বিদায় নিল। সে দেখে গেল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা তাঁকে কত ভক্তি ও তা’যীম করে। তিনি অযু করলে অযুর পানি নেয়ার জন্য, থু থু ফেললে তা নেয়ার জন্য এবং চুল পড়লে তা পাওয়ার জন্য সবাই প্রতিযোগিতা ও কাড়াকাড়ি করে। কুরাইশদের কাছে ফিরে গিয়ে সে বললো, “হে কুরাইশগণ! আমি পারস্য সম্রাট কিসরাকে, রোম সম্রাট সিজারকে এবং আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজাশীকে তাদের সমকালো রাজকীয় পরিবেশে দেখেছি। আল্লাহর শপথ, মুহাম্মাদকে তাঁর সাহাবীরা যেরূপ ভক্তিশ্রদ্ধ করে তেমন আর কোন রাজাকে আমি প্রজাদের এরূপ ভক্তি ও শ্রদ্ধার পাত্র হতে দেখিনি। কোন কিছুর বিনিময়েই তারা মুহাম্মাদকে শত্রুর মুখে অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে যেতে প্রস্তুত নয়। এমতবস্থায় তোমরা যা ভালো মনে কর করতে পার।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খিরাস উমাইয়া খাযারীকে মক্কায় কুরাইশদের কাছে পাঠালেন। তাঁকে নিজের উট সালাবের ওপর চড়িয়ে তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার জন্য নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠালেন। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উটটিকে হত্যা করে খিরাসকে (রা) হত্যা করতে উদ্যত হলো। কিন্তু বিভিন্ন গোত্রের কিছু লোক মিলে তাঁকে রক্ষা করে ও মুক্ত করে দেয়। পরে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে আসেন।

এরপর তিনি উমার ইবনুর খাত্তাবকে (রা) তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার জন্য মক্কায় কুরাইশ নেতাদের কাছে পাঠাতে মনস্থ করলেন। কিন্তু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, কুরাইশদের হাতে আমার প্রাণ যাওয়ার আশংকা রয়েছে। বনু আদী ইবনে কা’বের এমন কোন লোক মক্কায় নেই যে, আমাকে তাদের কবল থেকে রক্ষা করতে পারে। আর আমি যে কুরাইশদের কেমন কট্রর দুশমন তা তারা ভাল করেই জানে। আপনি বরং উসমান ইবনে আফফানকে (রা) পাঠিয়ে দিন। তিনি মক্কাবাসীর জন্য আমার চেয়ে অনেক বেশী প্রভাবশালী।” তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমানকে (রা) পাঠালেন, যেন তিনি মক্কাবাসীকে বুঝিয়ে দিতে পারেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন যুদ্ধ বিগ্রহের উদ্দেশ্যে আসেননি বরং উমরাহ করতে এসেছেন। উসমান (রা) চলে গেলেন। সেখানে প্রবেশের পর আবান ইবনে সাঈদের সাথে তাঁর দেখা হলো। আবান তাঁকে আশ্রয় দিল। ফরে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বার্তা পৌঁছাতে সক্ষম হলেন। উসমান (রা) আবু সুফিয়ান ও অন্যান্য কুরাইশ নেতাদের সাথে দেখা করেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বার্তা পৌঁছিয়ে দেন। তারা উসমানকে বললো, “দেখ উসমান, তুমি যদি কা’বা তাওয়াফ করতে চাও তবে তাওয়াফ করে নাও। ” উসমান বললেন, “ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফ না করা পর্যন্ত আমি করবো না।” কুরাইশরা উসমানকে (রা) আটক করে রাখে। ওদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলমানরা শুনলেন যে, উসমান (রা) শহীদ হয়েছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *