3 of 3

১১৫. হাওয়াযিনের জমিজমা, যুদ্ধবন্দী, তাদের কিছুসংখ্যক লোককে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য উপঢৌকন দান এবং কিচু লোককে পুরস্কার প্রদানের বিবরণ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণ হাওয়াযিনের বিপুল সংখ্যক যুদ্ধবন্দীকে সাথে নিয়ে তায়েফ থেকে জিরনাতে গিয়ে যাত্রাবিরতি করলেন। ইতিপূর্বে সাকীফের অবরোধ ত্যাগ করে তাদের থেকে চলে যাওয়ার সময় একজন সাহাবী তাঁতে বনু সাকীফের বজন্য বদদোয়া করতে বলেন। জবাবে তিনি বলেন, “হে আল্লাহ! সাকীফকে হিদায়াত দান কর ও আমার কাছে হাজির কর।”

হাওয়াযিনের একটি প্রতিনিধদল জিরানাতে এসে তাঁর সাথে দেখা করলো। তকন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হাওয়াযিনের গোত্রের ছয় হাজার শিশু ও নালি যুদ্ধবন্দী ছিল। আর উচ ও বকরীর সংখ্যা নির্ণয় করা যায়নি। প্রতিনিধিরা বললো, “হে আল্লাহর রাসূল, আমরা আপনার জ্ঞাতি-গোষ্ঠী ও আত্মীয়-স্বজন। আমাদের ওপর কি ভয়াবহ বিপদ আপতিত তা আপনার অজানা নেই। অতএবআমাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করুন। আল্লাহ আপনার ওপর অনুগ্রহ করবেন।”

হাওয়যিনের এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালো। তার অব্যবহিত পর বনু সা’দ ইবনে বকরের এর একজন উঠে দাঁড়ালো। এ ব্যক্তি হলো যুহাইর ওরফে আবু সুরাদ। সে বললো, “ইয়া রাসুলাল্লাহ, যুদ্ধবন্দীদের ভেতর আপনার ফুফু, খালা ও আপনার লালন-পালনকারিণীরাই রয়েছে। [৮৪. লালন পালনকারিণী বলতে দুগ্ধ-দাত্রীদেরকে বুঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামের দুধমাতা হালিমা এই বনু সা’দ গোত্রেরই মহিলা ছিলেন এবং তা হাওয়াযিনেরই একটি শাখা।] আমরা যদি হারেস ইবনে আবু শিমার অথবা নুমান ইবনে মুনযিরকে দুধ খাওয়াতাম এবং তারা যদি আজ আপনার জায়গায় অধিষ্ঠিত হতো হাতলে তারাও আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতো। আপনি তো তাদের চেয়েও উত্তম।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা তোমাদের সম্পদ এবং স্ত্রী ও শিশুদের মধ্যে কোনটিকে অগ্রধিকার দিতে চাও?” তারা বললো, “আপনি যদি দুটোর একটাই নিতে বলেন তাহলে আমাদের শিশু ও মহিলাদেরকেই ফিরিয়ে দিন।” তিনি বললেন, “যেসব মহিলা ও শিশু আমার ও বনু আবদুল মুত্তালিব গোষ্ঠীর কাছে আছে তাদেরকে আমি দিয়ে দিচ্ছি। আর বাদবাকীদের জন্য তোমরা যোহরের নামাযের সময় জমায়াতে হাজির হও। তখন মুসলমানদের সবার কাছে এই বলে আবেদন জানাবে যে, ‘আমরা আমাদের স্ত্রী ও শিশুদের ফেরত চাই। যারা মুলমানদের কাছে রয়েছে তাদের জনস্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুরোধ করছি তিনি যেন মুসলমানদেরকে সুপারিশ করেন আর যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট রয়েছে তাদের জন্য মুসলমানদেরকে অনুরোধ করছি তারা যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুরোধ করেন।’ তখন আমি আমার কাছে যারা রয়েছে তাদেরকে ফেরত দেব এবং মুসলমানদেরকে অনুরোধ করবো যেন তারাও ফেরত দেয়।”

যোহরের নামাযের সময় হাওয়াযিন ও বনু সা’দের প্রতিনিধিরা রাসূলুল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশমত কাজ করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সামনে ঘোষণা করলেন, “সঙ্গে সঙ্গে মুহাজির ও আনসারগণও বললেন, “আমাদের কাছে যারা আছে আমরা তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের কাছে সমর্পণ করলাম।” কেবল আকরা ইবনে হারেস নিজের ও বনু তামীমের, উয়াইদা ইবনে হিসন নিজের ও বনু ফাজারের এবং আব্বাস ইবনে মিরদাস নিজের ও বনু সুলাইমের পক্ষ থেকে এ আবেদনে সাড়া দিলো না। কিন্তু বনু সুলাইম আব্বাসকে অগ্রাহ্য করে বললো, “ আমাদের যার কাছে যত নালী ও শিশু আছে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে অর্পণ করলাম।: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমাদের মধ্যে যারা নিজ নিজ অধিকার ত্যাগ করতে চাও না তাদেরকে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, এরপর সর্বপ্রথমে যে যুদ্ধবন্দী আমার হস্তগত হবে তা থেকে তাদের প্রত্যেককে একটির বদলে ছয়টি করে দেবো। কাজেই এদের শিশু ও নারী ফেরত দাও।”

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম হাওয়াযিনের প্রতিনিধিদের জিজ্ঞেস করলেন, “মালিক ইবে ন আওফের খবর কি?” তারা বললো, “সে তায়েফে বনু সাকীফের সাথে রয়েছে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বললেন, “মালিকেেক তোমরা জানিয়ে দাও, সে যদি মুসলমান হয়ে আমার কাছে হাজির হয় তাহলে আমি তাকে তার সমস্ত সম্পদ ও বন্দী লোকদেরকে ফেরত দেবো এবং আরো একশো উট দেবো।” মালিকের আশংকা ছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রস্তাব বনু সাকীফ জানতে পারলে তারা তাকে আটক করবে। তাই সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাওয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করলো। সে পথিমধ্যে কোন এক জায়গায় একটি উটকে তার বাহন হিসেবে প্রস্তুত করে রাখলো। অতঃপর তায়েফ থেকে গভীর াতে একটি ঘোড়ায় চড়ে ঐ উটের কাছে পৌছলো। অতঃপর সেই উটের পিঠে চড়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাজির হলো। কিরানা অথবা মক্কায় তাঁর সাথে মিলিত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সকল বন্দী ও সম্পদ ফেরত দিলেন এবং একশোটি উটও দিলেন। সে ইসলাম গ্রহণ করলো এবং নিষ্ঠাবান মুসমলমানের পরিণত হলো। অতঃপর মালিক ইবনে আওফ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসায় একটি কবিতা আবৃত্তি করলো। কবিতাটি নিম্নরুপঃ

“সমগ্র মানব সমাজে আমি মুহাম্মাদের সমতুল্য কোন মানুষ দেখিনি, বা শুনিনি।

সে কাউকে কোন কিছু দেয়অর প্রতিশ্রুতি দিলে তা যথাযথভাবে রক্ষা করে এবং বিপুল পরিমাণে দান করে উপরূন্ত তুমি যদি চাও তবে সে আগামীকাল কি ঘটবে তাও বলে দিতে পারে।

যখন বড় বড় গোত্রতিরা নিজ নিজ বাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্র সহ পালিয়ে গেছে এবং অত্রন্ত তীক্ষèধার তরবারীও আঘাতে আঘাতে পর্যুদস্ত হয়েছে ধূলিধূসরিত রণাঙ্গনে তখনো সে শাবকদের পাহারায় নিযোজিত ও ঘাঁটিতে ওত পেতে থাকা হিংসের মহ অবিচল।”

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মালিক ইবনে আওফকে তার স্বগোত্রীয় মুসলমানদের এবং বনু সুমালা, বনু সালেমা ও বনু কাহম গোত্রের মুসলমানদের আমীর নিযুক্ত করেন। মালিক এইসব মুসলমানদের সাথে নিয়ে বনু সাকীফের বিরুদ্ধে অব্যাহত লাড়াই চালাতে থাকেন এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে বশীভূত করেন। বনু সাীফের কবি আবু মিহজান খেদোক্তি করে কবিতা আবৃত্তি করে,

“একদিন শত্রুরা আমাদেরকে ভয় করে চলতো। অথচ আজ কিনা বনু সালেম আমাদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।

সকল সম্পর্কের পবিত্রতা লংঘন ও ওয়াদা ভঙ্গ কলে মালিক তাদের সহযোগিতায় আমাদের ওপর চড়াও হয়েছে। এমনকি আমাদের বাড়ীঘরের ওপরে চড়াও হয়ে বসেছে।

অথচ আমাদেরই প্রতিশোধ নেয়ার কথা ছিল।”

অতঃপর মুসলমানদের মধ্যে অনেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফাই (বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ) তথা উট ও ছাগলের ভাগ দেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। পীড়াপীড়ি করতে করতে তারা তাঁকে একটি গাছের নীচে নিয়ে গেলে গাছে তাঁর চাদর আচকে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা আমার চাদরখানা দাও। আল্লাহর কসম, তিহামার বৃক্ষরাজির মত বিপুল সম্পদও যদি থাকতো তাহলে আমি তা তোমাদের মধ্যে বন্টন করে দিতাম। আমার ভেতরে কৃপণতা, ভীরুতা ও মিথ্যার লেমমাত্রও তোমরা দেকতে পেতে না।” অতঃপর তিনি তার উটের পার্শ্বে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং তার ঘাড়ের ওপর থেকে একটা চুল হাতে নিয়ে তা দেখিয়ে বললেন “হে মুসলিম জনতা, আল্লাহর কসম, তোমাদের ফাই থেকে-এমনকি এই পশমগাছি থেকেও আমার প্রাপ্য এক পঞ্চমাংশের বেশী নয়। অথচ সেই এক পঞ্চমাংশেও আমি তোমাদেরকেই দিয়ে দিয়েছি। সুতরাং যদি কেউ এই সম্পদ থেকে একটা সুঁই ও সুতাও নিয়ে থাক তবে তা ফিরিয়ে দাও। মনে রেখ, যে ব্যক্তি খিয়ানত করবে, কিয়ামতের দিন ঐ খিয়ানত তার জন্য আগুনের রূপ নেবে এবং চরম অপমান ও লাঞ্ছনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।”

জনৈক আনসারী তার উটের হাওদার ছিঁড়ে যাওয়া অংশ সেলাই করার জন্য কিছু পশমের সুতা নিয়েছিলেন তিনি তা ফেরত দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “ এ থেকে আমার প্রাপ্য অংশ তোমাকে দিলাম।” তিনি বললেন, “আপনি খিয়ানত সম্পর্কে যে কথা বলেছেন তাতে আমার এ জিনিসের মোটেই প্রয়োজন নেই।” অতঃপর তা ফেরত দিলেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মন জয় করার উদ্দেশ্যে প্রভাবশালী ও নেতৃস্থানীয় লোকদের সম্পদ প্রদান করেন। নিম্নলিখিত ব্যক্দিদেরকে তিনি একশ’টি করে উট দেন: আবু সুফিয়ান ইবনে হারব, আবু সুফিয়ানের পুত্র মুয়াবিয়া, হাকীম ইবনে হিযাম, হারেস ইবনে কালদা, হারেস ইবনে হিশা, সুহায়েল ইবনে আমর, হুয়াইতিব ইবনে আবদুল উয্যা, আলা ইবন জারিয়া, উয়াইনা ইবনে হিসন, আকরা ইবনে হারেস, মালিক ইবনে আওফ ও সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া।

নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গকে একশ’র কম উট প্রদান করেন ৎ মাখরামা ইবনে রাওয়াল যুহরী উমাইর ইবনে ওয়াহাব আল-জুমাহী, হিশাম ইবনে আমর ও আমর ইবনে লুয়াই। আর সাঈদ ইবনে ইয়ারবু ও সাহমীকে পঞ্চাশটি করে উট দেন।

আব্বাস ইবনে মিরদাসকে দেন পঞ্চাশটিরও কম। সে রাগান্বিত হয়। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিরস্কার করে নিচের কবিতাংশ আবৃত্তি করে,

“এগুলো আমার ছিনিয়ে নেয় দ্রব্য ছিল। আমি অশ্¦ শাবকের পিঠে সওয়ার হয়ে সমতল ভূমির জনপদে হামলা চালিয়ে এগুলো পেয়েছিলাম। নিজের গোত্রের লোকদের ঘুম থেকে জাগিয়ে রেখে ছিনিয়ে এনেছিলাম যেন তারা না ঘুমায়। কিন্তু তারা ঘমিয়ে পড়েছিল আর আমি একা জেগে ছিলাম। উয়াইনা ও আকরা যা পারেনি আমি ও আমার ঘোড়া সেই সম্পদ ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। যুদ্ধের ময়দানে আমি একজন দক্ষ লড়াকু। কিন্তু আমাকে যথেষ্ট পরিমাণে দেযা হয়নি। তবে একবোরে বঞ্চিত করা হয়নি। কেবল কয়েকটি ছোট উট আমাকে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর চারটি পা এখনো তেমন লম্বা হয়নি। হিসন এবং হারেস (একশো উট প্রাপ্ত উয়াইনা ও আকরার পিতা) আমার পিতার (মিরদাসের) চেয়ে সমাজে বেশি প্রতিপত্তিশালী ছিল না। আর আমি নিজেও ওদের দুজনের চেয়ে নগণ্য নই। আজ আপনি যাকে অপমানিত করলেন সে আর কখনো সম্মানিত হবে না।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণকে নির্দেশ দিলেন, “যাও, ওকে আরো কিছু দিয়ে খুশী কর এবং তার মুখ বন্ধ কর।” সাহাবাগণ তাকে আরো কিছুসংখ্যক উট গিয়ে খুশী করলেন।

আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশ ও অন্যান্য আরব গোত্রের নেতাদের প্রতি এরূপ বদান্যতা প্রদর্শন করায় এবং আনসারগণকে কিছুই না দেয়ায় তারা খুবাই অসন্তুষ্ট হন এবং কেউ কেউ আপত্তিকর কথাবার্তা বলা শুরু করেন। এমনকি কেউ কেউ বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আপনজনদেরকে খুশী করেছেন।” এ সময় সা’দ ইবনে উবাদা (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দেখা করে বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি গনীমতের সম্পদ যেভাবে বিলিবন্টন করলেন তাতে আনসারগণ ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছে। আপনি এসব সম্পদ নিজের গোত্র কুরাইশ ও অন্যান্যদের মধ্যে বন্টন করলেন। অথচ আনসারদের কিছু দিলেন না।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে সা’দ! তোমার নিজের মনোভাব কি?” তিনি বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আমার গোষ্ঠীর একজন।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তাহলে তোমার গোষ্ঠীকে এখানে হাজির কর।”

সা’দ আনসারদেরকে সেখানে জমায়েত করলেন। কিছুসংখ্যক মুহাজিরও সেখানে এসে হাজির হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অনুমতি দিলেন। এরপর আবার কিছুসংখ্যক মুহাজির আসতে চাইলে তিনি আর অনুমতি দিলেন। এরপর আবার কিছুসংখ্যক মুহাজির আসতে চাইলে তিনি আর অনুমতি দিলেন না। এভাবে ঐ সকল আনসার সমবেত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের াকছে গেলেন। প্রথমে তিনি যথাযথভাবে আল্লাহর প্রশংসা করলেন। অতঃপর বললেন, “হে আনসারগণ, তোমাদের পক্ষ থেকে কিচু আপত্তিকর কথা উচ্চারিত হতে শুনেছি এবং আমার ওপর তোমরা ক্ষুব্ধ ও ক্রুব্ধ হয়েছো বলে জানতে পেরেছি। বলতো আমি যখন তোমাদের কাছে আসি তখন কি তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে না? অতঃপর আল্লাহ কি তোমদেরকে হিদায়াত দান করেননি? তোমরা কি দরিদ্র ছিলে না অতঃপর আল্লাহ কি তোমাদের সচ্ছল করেননি? তোমরা কি পরস্পরের শত্রু ছিলে না। অতঃপর আল্লাহ কি তোমাদেরকে পরস্পরের কাছে প্রিয় করে দেননি?” তারা বললেন, “হা। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই আমাদের ওপর সবচেয়ে বেশি অনুগ্রহ করেছেন।” তিনি আরো বললেন, “হে আনসারগণ, তোমরা জবাব দাও না কেন?” তারা বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমরা আপনাকে কি জবাব দেবো? আল্লাহর রাসূলই আমাদের ওপর সবচেয়ে বেশী অনুগ্রহ করেছেন।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা বলতে পার যে, তুমি আমাদের কাছে এসেছিলে এমন অবস্থায় যখন কেউ তোমার প্রতি ঈমান আনেনি, আমরাই কেবল ঈমান এনছিলাম। সবাই তোমাকে নির্যাতন করেচিল শুধু আমরাই তোমাকে সাহায্য করেছিলাম, তোমাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল আমরাই তোমাকে আশ্রয় দিয়েছিলাম, তুমি অসহায় অবস্থায় আমাদের কাছে এসেছিলে আমরা তোমাকে আপনজন করে নিয়েছিলাম। এ কথাগুলো বললে তোমাদের মোটোই মিথ্যা বলা হেব না। এবং সবাই তার সত্যতা স্বীকার করবে। হে আনসারগণ, দুনিয়ার এই ক্ষণস্থায়ী সম্পদের জন্য তোমরা আমার ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে গেলে? এক শ্রেনীর লোককে আমি আগেই আস্থাবান ছিলাম এটা কি তোমাদের পছন্দ হয়নি? হে আনসারগণ, তোমরা কি এতে খুশী নও যে, লোকেরা উট ও বকরী নিয়ে চলে যাক, আর তোমরা তার বদলে আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে যাও? যে আল্লাহর হাতে মাহুম্মাদের প্রাণ, তাঁর শপথ করে বলছি, আমাকে যদি হিজরাত করে আসতে না হতো, তাহলে আমি তোমাদেরই মত আকজন আনসার হতাম। সবাই যদি একপথে চলে আর আনসাররা যদি ভিন্ন পথে চলে আমি আনসারদের পথ ধরেই চলবো। হে আল্লাহ! তুমি আনসারদের প্রতি রহমত বর্ষণ কর, তাদের সন্তানদের ওপর এবং সন্তানদের বংশধরের ওপরও রহমত বর্ষণ কর।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ভাষনে আনসার সাহাবীগণ এত কাঁদলেন যে, দাড়ি পর্যন্ত সিক্ত হয়ে গেল। তারা সমস্বরে বলে উঠলেন, “আমরা আমাদের ভাগে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেয়েই সন্তুষ্ট এবং তাতেই গৌরবান্বিত।’

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন। মুসলমানরাও যে যার কাজে চলে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *