3 of 3

১৩৭. বিদায় হজ্জ

অতঃপর যুলকা’দা মাস শুরু হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম হাজ্জের জন্য প্রস্তুত হলেন এবং মুসলমানদের প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিলেন। যুলকা’দা মাসের পাঁচ দিন অবশিষ্ট থাকতে তিনি হজ্জ উপলক্ষে রওন হলেন।

হজ্জের প্রক্কালে তিনি জনগণকে হজ্জের নিয়মকানুন শিক্ষা দিলেন। তারপর তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। আল্লাহর প্রশংসার পর তিনি বললেন,

“হে জনগণ, আমার কথা শোন। আমি সম্ভবতঃ এই স্থানে এ বছরের পর আর কখনো তোমাদের সাথে মিলিত হতে পরবো না। হে জনতা, আজকের দিনে ও এই মাসে যেমন অন্যের জ্ঞান মালের ক্ষতি সাধন তোমাদের ওপর হারাম তেমনি কিয়ামত পর্যন্ত তা হারাম হয়ে গেল। তোমরা শীঘ্রই আল্লাহর কাছে হাযির হবে এবং নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে। তোমাদের কাছে (আল্লাহর বানী) পৌছিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমি পালন করেছি। যার কাছে কারো গচ্ছিত জিনিস রয়েছৈ সে যেন মালিকের কাছে তা ফেরত দেয়। সকল সুদ রহিত করা হলো। [৯৫. সব রকমের ঋণ, খুন ও জখমের প্রতিশোধ রহিত করা হয়।] তোমরা শুধু মূলধন পাবে। তোমরা কারো ওপর যুলুম করবে না, যুলুমের শিকারও হবে না। আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালা যে, কোন সুদ চলবে না। আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের সমস্ত সুদ রহিত করা হলো। জাহিলী যুগে সংঘটিত সকল খুন জখমের শাস্তি বা প্রতিশোধ গ্রহণ রহিত করা হলো। সর্বপ্রথম আমি হারিস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের পৌত্র ইবনে রাবীয়ার হত্যার শাস্তি বা প্রতিশোধ রহিত করছি। ইবনে রাবীয়া বনু লাইস গোত্রে দুগ্ধপোষ্য ছিল। বনু হুযাইল তাকে হত্যা করে। সেই হত্যাকান্ড দিয়েই আমি জাহিলী যুগের সকল হত্যাকান্ড ক্ষমা করার কাজ শুরু করছি।

অতঃপর হে জনতা, তোমাদের এই ভূখন্ডে শয়তানের আর কখনো পূজা অর্চণা প্রাপ্তির সম্ভাবনা নেই। সে এ ব্যাপারে নিরাশ হয়েছে। তবে তোমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজে যাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করে থাক, শয়তানের আনুগত্য করলে তাতেই সে খুশী হবে। অতএব তোমদের দ্বীনের ব্যাপারে শয়তান সম্পর্কে সাবধান থেকো।

হে জনগণ, নিষিদ্ধ মাসগুলোকে পরবর্তী বছরের জন্য মুলতবী রাখা আরো জঘন্য কুফরী কর্ম। কাফিররা এই প্রথা দ্বারা গুমরাহীর পথে চালিত হয়। এর মাধ্যমে তারা রক্তপাতকে এক বছর বৈধ আর এক বছর অবৈধ করে নেয। এভাবে তারা আল্লাহর নিষিদ্ধ দিনগুলোকে ফাঁকি দেয়ার চক্রান্ত করে। এভাবে কার্যতঃ তারা আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজকে বৈধ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বৈধ কাজকে অবৈধ করে নেয়। আকাশ ও পৃথিবীর প্রথম সৃষ্টিলগ্ন থেকেই সময তার নিজস্ব নিয়মে গড়িয়ে চলেছে। আল্লাহর কাছে মাস হলো বারোটা। তার মধ্যে চারটা হলো নিষিদ্ধ। তিনটা মাস এক নাগড়ে আর একটা মুদার গোত্রের রজব মাস। সে মাসটা শা’বান ও জামাদিউস সানীর মাঝখানে অবস্থিত। [৯৬. রজব মাসকে ‘মুদার গোত্রের রজব’ বলার তাৎপর্য এই যে, এই মাসটাকে মুদার গোত্রেই গুরুত্ব দিত। আরবের কোন গোত্র এ মাস নিষিদ্ধ মাস হিসেবে আমল দিত না।]

তোমাদের নারীদের প্রতি তোমাদের কিছু কর্তব্য এবং অধিকার রয়েছে। নারীরা তোমাদের বিছানায় অন্য কাউকে শোয়বে না। এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হবে না- এটা তাদের কর্তব্য। কেননা এটা তোমাদের ঘৃণার উদ্রেক করে থাকে। আর তা যদি করেই বসে তবে তাদের থেকে আলাদা বিছানায় শোয়া এবং মৃদু প্রহার করার অধিকার আল্লাহ তোমাদেরকে দিয়েছেন। তবে যদি পরিশুদ্ধ হয় তাহলে তাদের স্বাভাবিকভাবে খাদ্য ও পোশাক-পরিচ্ছদ দেয়া তোমাদের কর্তব্য। নারীদের প্রতি শুভকামী থাক। কেননা তারা তোমাদের কাছে অক্ষম বন্দীস্বরূপ। আল্লাহর আমানত হিসেবে তাদেরকে প্রহণ করেছো। আল্লাহর বিধান অনুসারেই তোমরা তাদেরকে বৈধ করে নিয়েছো।

হে মানব সকল, তোমরা আমার কথা হৃদয়ঙ্গম কর। আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার কাজ আমি সম্পন্ন করেছি। আর তোমাদের কাছে এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি যা দৃঢ়ভাবে ধারণ করলে তোমরা কখনো বিপথগামী হবে না। প্রকাশ্য সুস্পষ্ট জিনিস আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ। হে জনগণ-আমার কথা শোনো ও হৃদয়ঙ্গম কর। জেনে রাখ, প্রত্যেক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। মুসলমানরা ভাই ভাই। কাজেই নিজের ভাইয়ের কোন জিনিস তার খুশী মনে দান করা ছাড়া নেয়া অবৈধ। তোমরা লোকদের ওপর যুলুম করো না। হে আল্লাহ, আমি কি তোমার দ্বীন মানুষের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছি?” লোকেরা বললো, “হে, আল্লাহ, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে তোমার দ্বীন পৌছিয়ে দিয়েছেন।” তিনি বললেন, “হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *