3 of 3

১১৯. দুমার শাসনকর্তা উকায়দের-এর নিকট রাসূলুল্লাহ (সা) কর্তৃক খালিদ ইবনে ওয়ালীদকে প্রেরণ

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবনে ওয়ালীদকে দুমাতুল জান্দালের শাসক উকায়দের ইবনে আবদুল মালিকের নিকট প্রেণ করলেন। উকায়দের কান্দা গোত্রের একজন খৃষ্টান ছিল এবং সেখানকার বাদশাহ ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদকে বলে দিলেন, “তুমি গিয়ে দেখবে উকায়দের গরু শিকার করছে।”

গ্রীষ্মের জ্যোৎ¯œা রাতে উকায়দের যখন ছাদের ওপর স্ত্রীসহ বসেছিল, তখন খালিদ তার দুর্গের দৃষ্টি সীমার ভেতরে পৌছে গেলেন। একটি বন্য গরু ঐ সময় উকায়দেরের প্রসাদের দরজায় শিং গিলে গুতোতে লাগলো। তার স্ত্রী বললো, “এমন গরু আর কখনো দেখেছো?” সে বললো, ‘না’। স্ত্রী বললো, “তাহলে এমন শিকার হাতছাড়া করা কি উচিত?” সে বললো, “কখখনো না।” এই বলেই সে নীচে নামালো এবং ঘোড়ায় সওয়ার হলো। সে নিজে এবং তার ভাই হাসানসহ পরিবারের বেশ কয়েকজনকে নিয়ে সে শিকারের পছেনে ছুটলো। বাইরে বেরিয়েই তারা সালূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রেরিত বাহিনীর হাতে ধরা পড়লো। উকায়দেরের ভাই হাসান মুসলিম বাহিনীর হাতে নিহত হলো। তার পরিধানে ছিল স্বর্ণের জরিদার একটি রেশমী জামা। খালিদ (রা) সেটা খুলে নিলেন এবং নিজে মদীনায় যাওয়ার আগেই একজনকে দিয়ে মদীনায় পাঠিয়ে দিলেন।

আনাস ইবনে মালিক (রা) বলেন, উকায়দেরের জামা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌছানো হয়েে আমি তা দেখেিেছ। মুসলমানগণ তা হাত দিয়ে স্পর্শ করে বিস্মিত হচ্ছিল দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এইটে দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছ? আল্লাহর কসম, জান্নাত সা’দ ইবনে মু’য়াযের জন্য যে রুমাল রয়েছে তা এর চেয়েও ভাল।”

ইবনে ইসহাক বলেন, খালিদ উকায়দেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি তাকে প্রাণের নিরাপত্তা দিয়ে জিযিয়ার বিনিময়ে সন্ধি করলেন এবং মুক্ত করে দিলেন। সে তার এলাকায় ফিরে গেল।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম তাবুক থেকে সম্মুখে অগ্রসর হলেন না। বরং সেখানেই দশদিন অবস্থান করলেন। তারপর মদীনায় ফিরে এলন। পথিমধ্যেওয়াদিউল মুশাককাক উপত্যকায় একটা ক্ষুদ্র পাহাড়ী ঝর্ণা ছিল। তার পানি দ্বারা বড়জোর দুই বা তিনজন পথিকের পিপাসা নিবৃত্ত হতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আগে যারা ঐ উপত্যকায় পৌছবে, তারা যেন আমরা না আসা পর্যন্ত পানি পান না করে অপেক্ষ কের।” কিন্তু সবার আগে একদলমুনাফিক সেখানে পৌছে এবং সেখানে যেটুকু পানি ছিল তা পান করে ফেরে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে পৌছে দেখলেন একটু পানিও নেই। তিনি বললেন, “আমাদের আগে কে এখানে এসেছে?” তাকে জানানো হলো যে, অমুক অমুক প্রথমে সেখানে এসেছে। তিনি বললেন, “আমি তো নিষেধ করেছিলাম যে,, আমি এসে পৌছার আগে কেউ পানি পান করবে না।” অতঃপর তিনি ঐ মুনাফিকদের অভিশাপ ও বদদোয়া করেন। তারপর তিনি সওয়ারী থেকে নেমে পাহাড়ের পাদদেশে হাত রাখলেন। তৎক্ষনাৎ আল্লাহর ইচ্ছায় বিপুল পরিমাণ পানি গড়িয়ে পড়তে থাকলো। অতঃপর সেখান থেকে পানি পান কররেন, পাহাড়ের ঐ স্থানটায় হাত বুলালেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকের মত প্রবল গর্জনে পানির ফোয়ারা ছুটলো। লোকেরা তৃপ্ত পানি পান ও অন্যান্য প্রয়েঅজন পূর্ন করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যদি দীর্ঘ আয়ু পাও তাহলে ভবিষ্যতে এই উপত্যকার খ্যতি শুনতে পাবে এবং এই পানি উপত্যকার আশপাশের এলাকাকে উর্বর করে তুলবে।”

ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেনঃ আবু রুহাম গিফারীর ভ্রাতুষ্পুত্র থেকে ইবনে উকায়মা লায়সী এবং লায়সী থেকে ইবনে শিহাব যুহরী বর্ণনা করেছেন যে,, আবু রুহাম কুলসুম ইবনে হুসাইন যিনি ‘বাইয়াতুল রিদওয়ান’ এ অংশগ্রহণকারী অন্যতম সাহাবী ছিলেন, বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তাবুক অভিযানে যোগদান করেছিলাম। তাঁর সাথে সফর করছিলাম। একদিন রাতে যখন তাবুকের পার্শ্ববর্মী আখদার অতিক্রম করছিলাম তখন আল্লাহ আমাদের ওপর ঘুম চাপিয়ে দিলেন। যেহেতু আমার সওয়ারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের ওসয়ারীর একেবারে নিকটবর্তী ছিল এবং দুটো কাছাকাছি হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পায়ে আমার সওয়ারীর আঘাত লাগতে পারে এই আশংকায় আমি জেগে থাকতে এবং আমার সওয়ারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সওয়ারা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করছিলাম। এই অবস্থায় পথিমধ্যে রাতের একাংশে আমার ঘুম অদম্য হয়ে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে আমার সওয়ারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সওয়ারীর সাথে গায়ে গায়ে লেগে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘উহ’ শব্দে আমি জেগে উঠলাম। বললাম, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।” তিনি বললেন, “চলতে থাক।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু গিফারের কে কে অভিযানে আসেনি তা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন আর আমি তার জবাবে যেসব লোক আসেনি তাদের নাম বলতে লাগলাম। তিনি বললেন, “পাতলা দাড়ি ও ভ্রুওয়ালা লম্বা লালচে বর্নের লোকগুলোর খবর কি?” আমি তাঁকে তাদের না আসার কথা বললাম। তিনি বললেন, ‘সবলদেহী খর্বাকার কালো লোকগুলো কি করেছে?” আমি বললাম, “আমাদের মধ্যে এ ধরনের কাউকে আমি দেখছি না।” তিনি বললেন, “হিজাযের গিফার ও আসলামের বসতি এলাকয় যাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে?” আমি তাদের কথা বনু গিফারের প্রসঙ্গেই স্মরণ করতে চেষ্টা করেচিলাম। কিন্তু মনে পড়েনি। অবশেষে আমার মনে পড়লো যে, তারা বনু আসলামের একটা গোষ্ঠী যাদের সাথে আমাদের মৈত্রী বন্ধন ছিল। আমি বললাম, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা বনু আসলামের একটি গোষ্ঠী যাদের সাথে আমাদের মৈত্রী বন্ধন ছিল। আমি বললাম, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা বনু আসলামের একটি গোষ্ঠী যারা আমাদের মিত্র ছিল।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তারা অন্ততঃ নিজেদের একটা উট দিয়ে একজন সক্ষম যোদ্ধাকে আল্লাহর পথে জিহাদে আসতে সাহায্য করতে পারতো। এতে তাদের কোন বাধা ছিল না। আমার সঙ্গীদের ভেতরে আর যে যাই করুক, কুরাইশ মুহাজির, আনসার, বনু গিফার ও বনু আসলামের লোকদের আমার সাথে না আসা আমার কাছে সবচেয়ে বেশী কষ্টদায়ক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *