3 of 3

১৩১. হিমইয়ার বংশীয় রাজাদের দূতের আগমন

হিমইয়ার রাজন্যবর্গ তাদের ইসলাম গ্রহণের খবর জানিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পত্রসহ দূত পাঠান। এই রাজন্যবর্গের মধ্যে ছিলেন হারেস ইবনে আব্দ কুলাল, নুআঈম, মা’আফির ও হামদানের উপশাসক নুমান কায়ল। [৯৪. কায়ল শব্দটি সম্পর্কে মতভেদ আছে। কেউ কেবল বলেন এর অর্থ রাজা। অন্যান্যরা বলেন এর অর্থ রাজার নিছর কোন পদস্থ কর্মকর্ত। শেষোক্ত মতটিই সর্বাধিক প্রসিদ্ধ।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক অভিযান থেকে ফিরে আসার সময় এসব দূত আগমন করে। ইয়ামানের অধিপতি যুররা পাঠান মালিক ইবনে মাররা বাহাওয়ীকে। তারা সকলেই নিজেদের ইসলাম গ্রহণ, শিরক বর্জন এবং মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা ঘোষণা করে দূত ও চিঠি পাঠান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে তাঁদেরকে নিম্নরূপ চিঠি লেখেন, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আল্লাহর রাসূল ও নবী মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে রুআইন, মায়াফির হামদানের অধিপতি ইবনে আব্দ কুলাল, নুআঈম ইবনে আব্দ কুলাল ও উপশাসক নুমানের প্রতি। আমি মহান আল্লাহর প্রশংসা করছি যিনি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই। আমরা রোমক ভূমি থেকে ফেরার পর তোমাদের দূত মদীনাতে আমাদের সাথে দেখা করে তোমাদের বার্তা আমাদের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছে। তারা তোমাদের ইসলাম গ্রহণ ও মুশরিকদের হত্যা করার খবর আমাদেরকে জানিয়েছে। তোমরা যদি সততার পথে চল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, নামায কায়েম কর, যাকাত দাও, গনীমত থেকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে এক পঞ্চমাংশ, নবীর অংশ ও তার বন্টনপূর্ব বাছাই করা অংশ এবং মুমিনদের ওপর ধার্যকৃত অবশ্য দেয় সাদকা প্রদান কর, তাহলে আল্লাহর হিদায়াত লাভ করবে। ধার্যকৃত অবশ্য দেয় সাদকা হলো, যেসব কৃষিভূমি বৃষ্টি ও খঅলের পানি দ্বারা সিঞ্চিত তার ফসলের এক দশমাংশ এবং কৃত্রিমভঅবে সিঞ্চিত কৃষিভূমির ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ।

আর চল্লিশটা উটে একটা দুই বছরের বেশী বয়সের উষ্ট্রী শিশু এবং ত্রিশটায় একটা দুই বছরের বেশী বয়সের উট। প্রতি পাঁচটা উটে একটা ছাগল, দশটা উটে দুইটা ছাগল, চল্লিশটা গরুতে একটা গাভী, ত্রিশটাতে এক বছর অথবা দুই বছর বয়স্ক বাছুর এবং প্রতি চল্লিশটা গরুতে একটা গাভী, ত্রিশটাতে এক বছর অথবা দুই বছর বয়স্ক বাছুর এবং প্রতি চল্লিশটা চারণশীল ছাগল বা ভেড়ায় একটা করে ছাগল। এগুলো মুমিনদেরওপর আল্লাহর ধার্য করা অপরিহার্য সাদকা। এর বেশী দিলে আরো ভালো কিন্তু যে ব্যক্তি শুধু এইটুকু প্রদান করবে, তারা ইসলামের আনুগত্যের প্রমাণ দেবে এবং মু’মিনদেরকে মুশরিকদের ওপর বিজয়ী হতে সাহায্য করবে, সে-ই মু’মিন। সকল মু’মিনদের যতটা অধিকার ও দায়দায়িত্ব তারও ততটা অধিকার ও দায়দায়িত্ব। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল তাঁর সার্বিক নিরপত্তার জিম্মাদার। কোন ইহুদী ও খৃষ্টান ইসলাম গওহণ করলে সে মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তার অধিকার ও দায়দায়িত্ব অন্যান্য মু’মিনদের সমান। আর যদি কেউ নিজের ইহুদি ও খৃষ্টান ধর্মে বহাল থঅকতে চায় তবে তাকে জোরপূর্বক ইসলামে দীক্ষিত করা হবে না। তবে এ ধরনের প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষ গোলাম কিংবা স্বাধীন যাই হোক না কেন, তাকে জিযিয়া দিতে হবে। জিযিয়ার পরিমাণ মায়াফের (ইয়ামানী কাপড় বিশেষ) এর ক্রয়মূল অনুসারে এক দীনার অথবা তদপরিমাণ কাপড়। যে ব্যক্তি এই জিয়িয়া আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রদান করবে, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল তার নিরাপত্তার জিম্মাদরা। আর যে ব্যক্তি তা পদান করতে অস্বীকার করবে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দুশমন।

ইয়মানের অধিপতি যুরযাকে আল্লাহর নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আমার দূত মুয়ায ইবনে জাবাল, আবদুল্লাহ ইবনে যায়িদ, মালিক ইবনে উবাদাহ ও উকবা ইবনে নামির ও তাদের সঙ্গীরা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) যখন তোমাদের কাছে যাবে তখন তাদের সঙ্গে সদাচরণ করবে, আর তারা যদি তোমাদের প্রজাদের কাছে প্রাপ্য যাকাত ও জিযিয়া উসুল করে আমী মুয়ায ইবনে জাবালের অধীনস্থ দুতদের কাছে পৌছিয়ে দেয় তাহলে যুরা যেন তাতে সম্মতি দেয়।

মুহাম্মাদ পুনরায় ঘোষণা করছেন যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই এবং তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

আরো উল্লেখ থাকে যে, মালিক ইবনে মাররা বাহাত্তরী আমাকে জানিয়েছে যে, তুমি (যুররা) হিমইয়ার নরপতিদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছো এবং মুশরিকদের হত্যা করেছো। এজন্য তুমি সুসংবাদ ও মুবারকবাদ নাও এবং হিমইয়ারের প্রতি বাল আচরণ কর। বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং কাউকে নির্যাতন করো না। মনে রেখ, আল্লাহর রাসূল তোমাদের ধনী-গরীব সকলেরই অভিভাবক। যাকাত সাদকা মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার পরিজনের জন্য বৈধ নয়। যাকাত হলো ধন সম্পদের পবিত্রতা সাধনের উপায় এবং তা শুধু মুসলিম দরিদ্র ও পথিকের জন্য বৈধ। মালিক সুষ্ঠুভাবে ও বিশ্বস্ততার সাথে তোমার বার্তা পৌছিয়ে দিয়েছে। কাজেই তাঁর সাথে ভাল আচরণ করার জন্য তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি। আমার অনুসারীদের মধ্যে থেকে অত্যন্ত সৎ, সুযোগ্য, জ্ঞানী ও পরহেজগার লোকদেরকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছি। তাদের সাথে সদাচরণ করার জন্য তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি। কারণ তাদের রিপোর্টই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন বিবেচিত হবে। ওয়সসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *