3 of 3

১১০. উমরাতুল কাযাঃ ৭ম হিজরী সনঃ জিলকাদ মাস

খাইবার থেকে প্রত্যাবর্তনের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় রবিউল আউয়াল থেকে শাওয়াল মাস পর্যন্ত অবস্থান করেন। এই সময় তিনি বিভিন্ন সামরিক অভিযানে নিজে গমন করেন অথবা অন্য সাহাবীদের পাঠান।

এরপর যুলকা’দা মাসে তিনি আগের বছরের পরিত্যক্ত উমরার কাযা আদায় করার জন্য মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেন্ আগের বছর এই মাসেই মুশরিকরা তাঁতে পথিমধ্যে বাধা দেয় ও উমরা বাদ দিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য করে। ঐ একই সফরে আগের বছর যেসব মুসলিম তাঁর সহচরবুন্দ অত্যন্ত অভাব অনটন ও দুঃখ-কষ্টের মধ্যে কালতিপাত করছে। ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ কুরাইশরা রাসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাদের দেখবার জন্র তাদের সম্মিলন গ্রহ ‘দারুন্ নাদওয়া’তে কারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদুল হারামে প্রবেশ করলেন তখন তাঁর চাদর ডান বগলের নীচে ও বাম কাঁধের ওপর পেচিয়ে পরলেন এবং ডান হাত উঁচু করে ডান বগল ফাঁক করে বললেন, “আজকে যে ব্যক্তি নিজেকে শক্তিমান বলে জাহির করবে আল্লাহ তার ওপর রহমত করবেন।” একথা বলার পর তিনি হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন্ অতঃপর তিনি ও তাঁর সাহাবাগণ জোরে জোরে বীরোচিত ভঙ্গিতে হাঁটতে লাগলেন। কা’বা ঘরের আড়ালে গিয়ে কুরাইশদের দৃষ্টির অন্তরালে গেলে রুকনে ইয়ামনী চুম্বন করে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হেছটে রুকনে আসওয়াদে পৌছে এক চক্কর সমাপ্ত করলেন। অতঃপর আগের মত বীরোচিত ভঙ্গিতে জোরে জোরে হাঁটলেন। এভাবে তিন চক্কর দিলেন এবং বাকী চক্করগুলি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হেঁটে সম্পন্ন করলেন।

এই সফরেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওাসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় মাইমুনা বিনতে হারিসকে (রা) বিয়ে করেন। আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা) এই বিয়ের উদ্যোক্তা ছিলেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনদিন মক্কায় অবস্থান করলেন। তৃতীয় দিন হুয়াইতিব ইবনে আবদুল উযযার নেদৃত্বে কুরাইশদের কয়েকজন এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললো, “তোমরা মক্কায় থাকার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অতএব তুমি মক্কা ত্যাগ কর।” [৮০. অর্থাৎ হুদাইবিয়ার সন্ধি চুক্তিতে নির্ধারিত মেয়াদ ৩ দিন।]

কুরাইশরা তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এখানে তোমাদের উপস্থিতিতে আমি যদি বিয়ে সম্পন্ন করি এবং তোমাদের জন্য খাবারের আয়োজন করি আর তোমরা তাতে যোগ দাও তাহলে ক্ষতি কি?” তারা বললো “তোমার খাবারে আ,াদের প্রয়োজন নেই। তমি চলে যাও।”

রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ত্যাপ করলেন। নিজের ভৃত্য আবু রাফেকে তিনি মাইমুনার (রা) দেখালোমানর জন্য রেখে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তানয়ীমের নিকটবর্তী সারেফ পৌছেলেন। আবু রায়ে মাইমুনাকে (রা) নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হলো। এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহইমুনার (রা) নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হলো। এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাইমুনার (রা) সাথে বাসর রাত পাপন করলেন এবং পরে মদীনায় ফিরে গেলেন। ইবনে হিশাম বলেনঃ আবু উবাইদার বর্ণনা মতে এই সফর শেষেই আয়াত নাযিল হয়, “আল্লাহ তাঁর রাসূলুরে স্বাপ্ন সত্যে পরিনত করেছেন। (স্বপ্নে তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে) তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারমে নিরাপদে ও নির্ভিকভাবে শাথা মুন্ডিয়ে বা চুল ছেঁেট প্রবেশ করবে। তোমরা যা জানতে পারনি আল্লাহর রাসূল তা জেনেছেন। অতঃপর তার অব্যবহিত পরেই নির্ধারিত রেখেছেন আসন্ন বিজয়।” (আল ফাতহ, শেষ রুকু)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *